পরিণয় পর্ব-১৭

0
1410

#পরিণয়
#লেখিকা- শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব- ১৭

– কী রে দাঁড়িয়ে পড়লি কেন?

পল্লবী আশালতার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে ঠাঁই দাঁড়িয়েই রইল। আশালতা পল্লবীকে একটা ধাক্কা দিয়ে বলল

– কী রে কথা বলছিস না কেন? কোনো সমস্যা?

পল্লবী এবারও আশালতার কথার জবাব দিল না। আশালতাকে রেখে সাামনের দিকে এগুতে লাগল। এগুতে এগুতে একদম পরশের কাছে এসে দাঁড়াল। পরশকে রুশির সাথে দেখে পল্লবী একটু চমকালো। কিছুটা চমকে গিয়ে পরশকে বলল

– অধরাকে রেখে রুশির সাথে শপিং মলে কী করছো তুমি? অধরা কী জানে তুমি শপিংমলে?

পরশ পল্লবীকে দেখে ঢুক গিলতে লাগল। রুশিও চমকালো। ঢুক গিলতে গিলতে বলল

– আপু আপনি এখানে কী করছেন?

– আমি এখানে কী করছি সেটা তো তোমার জানার দরকার নেই। তুমি অফিস টাইমে রুশিকে নিয়ে কী করছো? অধরা কী জানে তুমি রুশিকে নিয়ে শপিং মলে এসেছো?

পরশ পল্লবীর কথা শুনে একটু ভয় পেয়ে গেল আবার অবাক ও হলো তৃনাকে রুশি বলতেছে শুনে। পরশ কিছুটা ভয়ার্ত গলায় বলল

– আপু আপনি আমাকে যা করার করেন তবে অধরাকে এখনি কিছু বলবেন না দয়াকরে। তবে আগে এটা বলুন আপনি তৃনাকে রুশি কেন বলছেন?

পরশের প্রশ্ন শুনে রুশি একদম চুপসে গেল। পল্লবী পরশের কথা শুনে জবাব দিল

– এর নাম তৃনা কেন হবে? এর নাম তো রুশি। যে আমার সংসারটা নষ্ট করছে। সাহিলের বর্তমান বউ।

পরশ ক্ষাণিকটা অবাক হয়ে রুশির দিকে তাকিয়ে বলল

– তার মানে তুমি বিবাহিত? আর আমার কাছে পরিচয় পাল্টে আমাকে ফাঁসিয়েছো? ছিঃ এত নির্লজ্জ তুমি? এত বড় প্রতারণা আমার সাথে কী করে করলে তুমি? তোমার বিবেকে বাঁধে নি?

রুশি পরশের কথায় একদম নির্বাক। এদিকে পরশের কথার জবাবে পল্লবী বলল

– তোমার নিজের লজ্জা আছে তো? আরেকটা মেয়েকে নির্লজ্জ বলার আগে নিজের লজ্জার মাপকাঠি ঠিক করো।

– মানে?

– মানেটা খুব সোজা। আমাকে যেন কী বলেছিলে? আমি তোমার বউয়ের মাথা খেয়ে ফেলব সংসার নষ্ট করে ফেলব আরও কত কী। এখন কে সংসার নষ্ট করছে? নিজের ঘরে বউ রেখে অন্য একটা মেয়ের সাথে ঘুরতে লজ্জা লাগে না। তোমরা তো পুরুষ না পুরুষ নামে কাপুরুষ। রুশির তো মনে হয় এটা পেশা খুঁজে খুঁজে সবার সংসার নষ্ট করা। আর তোমার কী এটা? এটা নিছক তোমার চরিত্রের সমস্যার কারণে হয়েছে। নিজের সংসার অন্য কারও দ্বারা কখনও নষ্ট হয় না যদি না নিজে ঠিক থাকা যায়। গোড়াটায় তো নড়বড়ে আগা ঠিক করে কী করবে? আবার রুশিকে বলছো এত বড় প্রতারণা সে কীভাবে করল? তুমি অধরার সাথে কী করেছ? মানুষকে দুটো কথা শুনিয়ে দেওয়া সহজ। কিন্তু নিজেকে বিচার করা অনেক কঠিন। পর নারীর প্রতি আসক্ত নাকি হয় বউ ঝামেলা করলে তাহলে তুমি কেন হলে? তোমার বউ তো কোনো ঝামেলা করেনি। নিজের চরিত্র ঠিক করো। আমি অধরাকে অবশ্যই সবটা বলব। তারও সতর্ক হওয়া উচিত।

পরশ পল্লবীর কথা শুনে একটু ঘাবড়ে গেল। একদিকে রুশির মিথ্যা মায়া জালে ফেঁসেছে অন্যদিকে নিজের সংসার টিকে থাকবে কী না সে চিন্তায় চিন্তিত। সে কী করবে বুঝতে পারছে না। অপরদিকে পাশেই রুশি চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পরশ ঢুক গিলতে গিলতে আমতা আমতা করে বলল

– আপু আমার বড় ভুল হয়ে গেছে। বিচার বুদ্ধি লুপ পেয়েছিল। আমি রুশির মিথ্যা মায়া জালে ফেঁসে গেছিলাম। দয়াকরে আমাকে ক্ষমা করে দেন। অধরাকে কিছুই বলবেন না দয়াকরে।

বলেই পরশ হাত জোর করতে লাগল পল্লবীকে। পল্লবী পরশের কথার কোনো ভ্রূক্ষেপ না করে রুশিকে বলল

– একজনকে নিয়ে মন ভরতেছে না এখন আরও মেয়ের সংসার ভাঙ্গার চিন্তা করতেছ? সাহিল জানে তুমি যে পরশের সাথে ঘুরতে এসেছ?

রুশি পল্লবীর কথার কোনো জবাব না দিয়ে হনহন করে শপিংমল থেকে বের হয়ে গেল। এদিকে পরশ বারবার পল্লবীকে অনুরোধ করতে লাগল অধরাকে যেন কিছু না বলে। পরশের দিকে তাকিয়ে তার চোখে মুখে একটা অনুতাপের ছাপ লক্ষ্য করল পল্লবী। তাই পরশকে কিছুটা কড়া হয়ে বলল

– আজকে তোমাকে আমি অধরার কথা ভেবে ছেড়ে দিলাম। কিন্তু আমি যদি এরপর কোনো ঝামেলা টের পাই তাহলে তোমাকে সেদিন আমি ক্ষমা করব না। নিজের বউয়ের প্রতি একটু সদয় হও। পরবর্তীতে তার বিশ্বাস ভাঙ্গার আগে একটু বিবেক কে জাগ্রত করো। আর তোমার উপর আমার নজর থাকবে। আশাকরি নিজেকে শুধরে নেবে।

পরশ কাঁপা কাঁপা গলায় জবাব দিল

– এরপর আর এমন ভুল হবে না। আমার মনে থাকবে।

বলেই পরশ মাথাটা নুইয়ে হাঁটতে লাগল।পরশের ভেতরটা কেন জানি কাঁপতে লাগল।নিমিষেই তার মনে বিবেক জাগ্রত হলো। অধরাকে ঠকিয়েছে এটা ভেবেই তার ভেতরটা কাঁপতে লাগল। এমন কাজ কীভাবে করল সেটা ভেবেই নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে তার। আজকে যদি পল্লবী না থাকত তাহলে হয়তো এ অন্যায়ে সে ডুবে থাকত। সেদিন পল্লবীকে এত কথা শুনিয়েছে এটা ভেবেও তার বিবেকে নাড়া দিচ্ছে। পরশ পেছন ফিরে তাকাল আবার, দেখল পল্লবী দাঁড়িয়ে আছে এখনও। পরশ আবার পল্লবীর কাছে আসলো। পরশকে আসতে দেখে পল্লবী বলল

– কী ব্যপার আবার কী?

পরশ মাথা নুইয়ে বলল

– আপনাকে সেদিন এতগুলো কথা বলা আমার উচিত হয় নি। আমাকে ক্ষমা করে দেবেন।

– তুমি যে তোমার ভুলটা বুঝতে পেরেছ এটাই অনেক। ক্ষমা চাইতে হলে অধরার কাছে চেয়ে নিও। আমাকে যে আঘাত দিয়েছ সেটা আমি সময় বদলে যাওয়ার সাথে সাথে ভুলে গেছি।

পরশ মাথাটা নেড়ে আস্তে করে চলে গেল। এদিকে আশালতা এসবের কোনো মানেই যেন বুঝছে না। কিছুটা বিস্মিত চোখে তাকিয়ে পল্লবীকে জিজ্ঞেস করল

– কে ঐ ছেলেটা। আর হুট করে এভাবে ক্ষমা কেন চাইল? আর মেয়েটায় বা কে ছিল?

পল্লবী আশালতার কথাটা এড়িয়ে গিয়ে প্রসঙ্গ পাল্টিয়ে বলল

– তুই বুঝবি না এসব। অনেক বড় কাহিনি। অন্য একদিন সময় করে বলব। চল এবার। তোর প্রিয়তম যে বড় লিস্ট হাতে ধরিয়ে দিয়েছে সেগুলো কিনতে কিনতে অনেক দেরি হবে।

আশালতা মুচকি হেসে বলল

– চল যাওয়া যাক।

তারপর দুজন বেশ ঘুরে ঘুরে মনমতো সব শপিং করে নিল। শপিং করতে করতে বিকেল চারটা বেজে গেল। আশালতা এবার পল্লবীকে বলে উঠল

– আর কিছু বাকি থাকলে পরে কেনা যাবে।চল এবার কিছু খেয়ে নেয়া যাক। নাহয় তোর পুচকো সোনাটা না খেয়ে থাকতে থাকতে খালামনির উপর বিরক্ত হয়ে যাবে।

পল্লবী হালকা হেসে বলল

– আরে কিছু হবে না। আরও কিছু কেনা বাকি সেগুলো কিনে একেবারে খাব।

– দেখ পল্লবী। দরকার হলে ঐগুলো আর কিনব না।তবে এতক্ষণ তোকে না খাইয়ে থাকতে দেবো না। এখনি চল খাবি। আগে রেস্টুরেন্টে গিয়ে খাব তারপর যা কেনার কিনে সরাসরি বাসায় যাব।

পল্লবী আশালতার জোরাজোরিতে আর না করতে পারল না। সরাসরি রেস্টুরেন্টে গিয়ে খেয়ে নিল তারপর বাকি জিনিস গুলো কিনে নিয়ে বসায় ক্লান্ত হয়ে ফিরল। এভাবেই ব্যস্ততার মধ্যে পার করল ছয়টা দিন।

কালকে আশালতার এনগেজমেন্ট। আজকে বেশ গুছিয়ে নিচ্ছে পল্লবী নিজেকে। সকাল সকাল উঠেই আনায়নাকে নিয়ে আশালতার এনগেজমেন্টে চলে যাবে। তাই রাতেই সব গুছিয়ে নিতে লাগল। পল্লবীকে সব কিছু গুছাতে দেখে নুর জাহান বেগম এসে বলল

– কী রে এতকিছু গুছাচ্ছিস কেন?

– আরে মা বলো না কালকে আশালতা আর সাদেকের এনগেজমেন্ট। আমাকে তো আগে যেতে হবে। তাই রাতেই গুছিয়ে রাখছি সব।

পাশ থেকে নিরা বলল

– তুমি এ শরীর নিয়ে আর নিজেকে এত কষ্ট দিও না। কী করতে হবে আমাকে বালাে। আমি সব কিছু গুছিয়ে দিচ্ছি। এনগেজমেন্ট কালকে হলে বিয়ে কবে?

– তিনদিন আশালতার বাসায় থাকতে হবে। এনগেজমেন্ট কালকে আর বিয়ে পরশু দিন। পরদিন বউভাত। অনেক গুছগাছ বাকি।

নিরা ভরসা দিয়ে বলল

– এত চিন্তা কেন করতেছ আমি থাকতে। আমি সব গুছিয়ে দিচ্ছি। তুমি একটু রেস্ট নাও। শান্ত হয়ে বসো।

বলেই নিরা পল্লবীকে ধরে খাটে বসিয়ে দিয়ে সব গুছাতে লাগল। নুরজাহান বেগম , নিরা আর পল্লবীর মিল বন্ধন দেখে নিজের নয়ন জুড়াল।

পরদিন সকাল সকাল উঠেই পল্লবী আনায়নাকে সাজিয়ে নিল৷ আর নিজেকেও গুছিয়ে নিল এনগেজমেন্ট যাওয়ার জন্য। যখনই সে রওনা দেবে ঠিক তখনই পল্লবীর ফোনে একটা কল আসলো।