#এক_ফালি_সুখ🌼 |১৫|
#তাসনিম_জাহান_মৌরিন
রাতুল খানিকক্ষণ তাকিয়ে রইলো তন্নির হাতের দিকে। এরপর তন্নি চোখের ইশারা করলে খাবারটা মুখে নেয় রাতুল,তবে তার দৃষ্টি সম্পূর্নরূপে তন্নির দিকে আবদ্ধ। তার ফর্সা কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম এসে জমা হয়েছে, মুখশ্রী তে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট। খুব মনোযোগ সহকারে রাতুলকে খাইয়ে দিচ্ছে সে, এমনভাবে মাছ বেছে দিচ্ছে যতটা রাতুল নিজেও জীবনে বাছেনি।
তন্নি একহাতে প্লেট ধরে অন্যহাতে খাইয়ে দিচ্ছে। তবে তাকে এই মহামূল্যবান কাজে বিরক্ত করছে কিছু অবাধ্য চুল। সেই সকালে বিনুনি করেছিল,তাই সামনে থেকে অনেকটা চুল এলোমেলো হয়ে চোখের উপর এসে পরছে। হাতের সাহায্য ব্যতীত তা সরাতেও পারছে না তন্নি। যার দিকে অনেকক্ষন তাকিয়ে একটা অদ্ভুত কাজ করে বসলো রাতুল। নিজের বামহাত বারিয়ে তন্নির কপালে এসে পরা চুলগুলো অতি যত্নসহকারে কানের পিছনে গুঁজে দিলো সে।
মুহূর্তেই হাত থেমে গেলো তন্নির,বিস্মিত চোখে তাকালো রাতুল এর দিকে। খাবার প্রায় শেষ তখন, তন্নিকে এভাবে তাকাতে দেখে থতমত খেয়ে যায় রাতুল। দ্রুত নিজের হাত সরিয়ে নেয় সে,তন্নি এখনো ওভাবেই তাকিয়ে আছে।
রাতুল কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে গলা ঝেড়ে বলে,
_”আই থিংক ইউ আর টায়ার্ড, তোমার বাড়ি গিয়ে রেস্ট নেওয়া উচিৎ।”
_”আপনি কি করে বুঝলেন আমি টায়ার্ড?”
একইভাবে তাকিয়ে কথাটা বললো তন্নি। রাতুল তাকালো তার দিকে, একটু আগে থাকা ক্লান্তির ছিটেফোঁটাও নেই তার মুখে,বরং যেন অত্যাধিক প্রফুল্ল লাগছে তাকে। রাতুল স্মিত হেসে বলে,
_”ওটাতো এমনিতেই বোঝা যায়।”
_”এমনিতেই বুঝে গেলেন?”
চুপ করে যায় রাতুল। তন্নি এবার আর তাকে অপ্রস্তুত করতে চাইলো না,তাই প্লেটটা টেবিলের উপর রেখে বললো,
_”যাকগে, রাতের খাবার ও এখানেই রাখা আছে। শুধু গরম করে খেয়ে নেবেন কেমন?”
মাথা নাড়ায় রাতুল। তন্নি চেয়ার থেকে উঠে বেসিনে গিয়ে নিজের হাত ধুয়ে নেয়। রাতুলও স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে পাশ থেকে নিজের ফোনটা হাতে নেয়। স্ক্রোলিং করতে গিয়ে একটা নিউজ এ চোখ আটকে যায় তার। তন্নিও এতক্ষনে তার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। রাতুল একবার ফোনের দিকে আরেকবার তন্নির দিকে তাকাচ্ছে। তা দেখে ভ্রু কুঁচকে নেয় তন্নি। জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে রাতুলের দিকে তাকাতেই সে ফোনটা এগিয়ে দেয়। তন্নি ফোনটা হাতে নিতেই স্ক্রিনে তূর্য আর তার একটা ছবি ভেসে ওঠে, নাটকেরই একটা শুট এর ছবি। কোনো একটা ফেইসবুক পেইজ থেকে পোস্ট করা হয়েছে। ক্যাপশন এ লিখা, “তবে কি এবার সত্যি সত্যিই প্রেমের সম্পর্কে জড়ালেন ছোট পর্দার জনপ্রিয় মুখ তন্নি এবং তূর্য? এ যেন রাবনে বানাদি জোড়ি।”
রাগে ফুঁসতে শুরু করে তন্নি,নিজের ফোন হলে বোধ হয় এখনি ছুড়ে মারতো। তার উপর এমন বানোয়াট নিউজ রাতুলের সামনেই পরলো? যদি রাতুলও এমন কিছু ভেবে নেয়? তন্নি রাতুলের দিকে তাকিয়ে রেগেমেগে বলতে থাকে,
_”এদের না কচু গাছের সাথে গলায় দড়ি দেওয়া উচিৎ। কিসব বানোয়াট নিউজ বানিয়ে রেখেছে! নাটকের একটা সিন এমনভাবে ক্যাপশন দিচ্ছে যেন…। এই পেজ যদি আমি নষ্ট না করে দিয়েছি! শেষ পর্যন্ত তূর্য! আরে তূর্য তো আমার ভাই এর…”
এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলেই যাচ্ছে তন্নি। রাতুল উঠে দাঁড়িয়ে তাকে থামিয়ে বলে,
_”আরে এত হাইপার হচ্ছো কেন? ওদের তো কাজই এমন নিউজ বানানো, তূর্য আর তোমার রিলেশন কেমন তা তো আমরা সবাই ই জানি।”
_”তবুও ওরা এমন নিউজ করবে কেন?”
রাতুল হাসতে লাগলো এবার। তন্নির হাত থেকে ফোনটা নিয়ে আরেকটু নিচে গেলো স্ক্রোল করে। আরেকটা নিউজ দেখে আরো জোরেজোরে হাসতে শুরু করে রাতুল। নিউজটাতে আবরাজ আর তূর্যের একটা মুখোমুখি ছবি এডিট করা,ক্যাপশন এ দেওয়া,”দ্বিতীয়বারের মতো একসঙ্গে কাজ করছেন বর্তমানে মেয়েদের দুই হার্টথ্রোব ইলহাম আবসার তূর্য এবং আবরাজ শাহ। তবে কি আরো এক ধামাকার অপেক্ষা?”
তন্নিও এবার হাসতে শুরু করলো,রাতুলের দিকে তাকিয়ে বললো,
_”এরা একটা জিনিস মিস করেছে, তূর্য আর আবরাজ ভাই এর সঙ্গে দিয়াও আছে এই নাটকে। সেইরকম একটা মজা হবে তাইনা?”
_”একদম”
_______
_”আর যাওয়া যাবেনা, সামনে রাস্তা বন্ধ।”
_”আমিতো একটু আগেও এলাম,তখন তো বন্ধ ছিলোনা।”
_”কি জানি আফা, আপনেই দেখেন। এই জায়গা দিয়ে যাওয়া সম্ভব?”
সামনের দিকে তাকায় মৌরিন,আসলেই যাওয়া সম্ভব নয়। অনেক মানুষ জড়ো হয়ে আছে,ক্যামেরা,লাইটিং এ ভর্তি। ছোট করে নিঃশ্বাস ছেড়ে রিক্সা থেকে নেমে গেলো মৌরিন, একটা শপিং কমপ্লেক্স এর সামনে জায়গাটা। রিক্সা ভাড়া মিটিয়ে সামনে এগিয়ে যায় মৌরিন,এখন কিছুটা সামনে এগিয়ে আবার নতুন রিক্সা নিতে হবে। কাঠফাটা রোদের মধ্যে এই বারতি ঝামেলায় বিরক্ত হয় মৌরিন। ভিড় এর মধ্যে গিয়ে কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই মৌরিন এর, বোঝাই যাচ্ছে কোনো সেলিব্রিটি আছে এখানে। মৌরিন পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলেই তার কানে আসে কিছু কথা।
_”রিসেন্টলি আপনার নতুন কাজের খবর পেলাম, খুব দ্রুতই নাকি শুটিং শুরু হচ্ছে। আবারো আপনাকে আর তূর্যকে একসঙ্গে দেখতে পাবে শুনে কিন্তু মেয়েরা ভীষণ এক্সাইটেড। আপনি কতটা এক্সাইটেড এই কাজ নিয়ে?”
_”খুব বেশি এক্সাইটেড বলা যায়না, আমার কাছে এগুলো খুব বেশি ম্যাটার করেনা। আর আমি অলওয়েজ নিজের কাজের দিকে নজর দেই, বাকিরা কারা থাকলো না থাকলো তা নিয়ে আমি ভাবিনা।”
_”অনেক ক্ষেত্রে শোনা যায়, আপনি নাকি তূর্যকে হিংসে করেন। এই কথা কতটা সত্য?”
_”হু ইজ তূর্য ম্যান? ও ইন্ডাস্ট্রি তে এসেছে কতদিন? ওর সাথে আমি হিংসে কেনই বা করবো? বাট আই থিংক, সিনিয়র অ্যাকটর দের সাথে সবার বিহেভিয়ার টা ঠিক করা উচিৎ।”
_”কথাটা কি ইনডিরেক্টলি তূর্যকে বললেন?”
_”সবাইকেই বললাম, নতুন এসে আবার অনেকে নিজেদের বড় ভাবতে শুরু করে দেয়। আই ডোন্ট ওয়ান্ট টু টক আবাউট দিস,অ্যানাদার কুয়েশ্চেন?”
ভিড় থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হলো মৌরিন। চোখে না দেখলেও টুকটাক কথা শুনে বুঝলো এখানে সেই আবরাজ ই এসেছে। মনে মনে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো মৌরিন। কেমন মানুষ এরা? জনসম্মুখে ইন্ডাস্ট্রির অন্য একজনকে নিয়ে এমন কথা বলছে!
অবশ্য অবাক হওয়ার কিছু নেই, তূর্যও এমন ই করবে তা নিয়ে মৌরিন এর মনে কোনো সন্দেহ নেই। অহংকার পতনের মূল জানা সত্ত্বেও এরা নিজেদের নিয়ে অহংকার করতে ব্যস্ত,নিজে উপরে যেতে ব্যাস্ত,অন্যকে ছোট করতে ব্যস্ত। অথচ এরা বুঝতেই পারছে না, অন্যকে ছোট করে কখনো নিজে বড় হওয়া যায়না।
মৌরিন অবাক হলো কেবল একটি বিষয়ে, পাবলিকলি শত্রুতা প্রকাশ করা দেখে। সহসা এমনটা হয়না, এসব ক্ষেত্রে অনেকের মাঝেই শত্রুতা থাকে তবে গোপনে, তারা এগুলো কখনই মিডিয়ার সামনে প্রকাশ করেনা খুব একটা। তবে এখানে শুধু গোপনে নয়, প্রকাশ্যে দ্বন্দ্ব হচ্ছে দুজনের মাঝে। শুটিং শুরু হওয়ার আগেই এমনটা হচ্ছে, তাহলে এর পর কি কি হবে?
#চলবে?
#এক_ফালি_সুখ🌼 |১৬|
#বোনাস_পর্ব
#তাসনিম_জাহান_মৌরিন
_”তূর্য? আসবো বাবা?”
বিছানায় পা দুলিয়ে বসে হাতে ফোনটা নিয়ে রাগী দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে ছিলো তূর্য। দরজা খোলাই রেখেছে, ইলমার কণ্ঠ শুনে দরজার দিকে তাকিয়ে ফোনটা পাশে রেখে ছোট করে উত্তর দেয়,
_”এসো।”
হাতে থাকা ট্রে টা নিয়ে ঘরে প্রবেশ করলেন ইলমা। কখন ছেলের মাথায় কি চলে তিনি নিজেই বুঝতে পারেন না, তাই ঘরে ঢোকার আগে জিজ্ঞেস করে নেন। ট্রে টা টেবিলের উপর রেখে তাতে থাকা বাটিটা হাতে তুলে নেন ইলমা। হাসিমুখে তূর্যের পাশে বসে বলে,
_”দেখ,তোর পছন্দের কাস্টার্ড বানিয়েছি।”
আবরাজ এর সেই ইন্টার্ভিউ টা দেখে মেজাজ বিগড়ে আছে তূর্যের,কাস্টার্ড যদিও তার ভীষণ পছন্দ তবে এখন মোটেই খেতে ইচ্ছে করছেনা। তাই অন্যদিকে মাথা ঘুরিয়ে বলে,
_”খাবোনা,নিয়ে যাও।”
চিন্তিত হন ইলমা। বাটিটা পাশে রেখে তূর্যের পিঠে হাত বুলিয়ে বলে,
_”কেন খাবিনা? একটু আগে তো ঠিকই ছিলি,হঠাৎ কি হলো?”
_”এত প্রশ্ন..”
মায়ের চিন্তিত মুখের দিকে তাকিয়ে থেমে যায় তূর্য। কপালের ভাজ সরে যায় তার। অদ্ভুতভাবে মনে পরে যায় পরশুদিন এর একটি ঘটনা। সেটে সবাই বসে টুকটাক কথা বলছিল, মৌরিন ও বসেছিল পাশেই। খুন বেশি কথা না বললেও টুকটাক সাড়া দিচ্ছিল। এমন কথার মাঝেই তন্নি মৌরিন কে জিজ্ঞেস করেছিল,
_”আচ্ছা মৌরিন,তোমার বেস্টফ্রেন্ড কে বলতো?”
সময় নেয়না মৌরিন। মুচকি হেসে সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দেয়,
_”আমার মা।”
_”মা তোমার বেস্টফ্রেন্ড?”
_”হুম, মা’ই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। কারণ মায়ের সাথেই আমি নিজের সব কথা শেয়ার করতে পারি,ভালো-মন্দ সব কিছু। আমার মতে মা হলো আমার বেস্ট পথপ্রদর্শক। মায়ের কথা শুনে চলাটাই শ্রেয়। ছোট বেলা থেকে আমার যেকোনো সমস্যার সলিউশন মায়ের কাছেই চেয়েছি। বেশি রাগ হলেও মা’কে বলেছি, খুব খুশি হলেও মা’কে বলেছি। তাই মা’ই হলো আমার সেরা বন্ধু।”
ইলমার ডাকে ভাবনা থেকে বেরিয়ে এলো তূর্য,হঠাৎ মৌরির এই কথাটা মনে করার কারণটা ধরতে না পারলেও হুট করেই যেন ইলমার প্রতি অদ্ভুত ভালোবাসা জেগে উঠলো তার। শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো মায়ের দিকে। মৌরি কি ঠিক বলেছে? মা’ই কি সবচেয়ে সেরা বন্ধু? তূর্য একটু বড় হওয়ার পর থেকে কখনোই নিজের কোনো কথা ইলমার সাথে শেয়ার করেনি, বরং তিনি কিছু জিজ্ঞেস করলে দু একটা ধমক দিয়ে বসিয়ে রেখেছে,বাবাও এই নিয়ে কিছু বলেনি। তবুও ইলমা জিজ্ঞেস করেছেন, তূর্যকে অস্থির হতে দেখলে তিনি নিজেও অস্থির হয়ে বারংবার জানতে চেয়েছেন। মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করেছে, “কি হয়েছে বাবা?”
আজ ও তেমনটাই হলো। ইলমা তূর্যের মাথায় হাত বুলিয়ে আদুরে স্বরে জিজ্ঞেস করলেন,
_”কি হয়েছে বাবা?”
প্রতিবার এর উত্তরে ধমক দিলেও আজ আর ধমক দেওয়া হলোনা তূর্যের। ইলমা তাতে খুব একটা খেয়াল না করে বাটিটা আবার হাতে নিয়ে বলেন,
_”ঠিক আছে,বলতে হবেনা। কিন্তু এটা খেয়ে নে, মা কত ভালোবেসে বানিয়েছি বল তো? তোর বাবা বলেছে খুব মজা হয়েছে, তুই খেয়ে দেখ এবার।”
ইলমার হাতে থাকা বাটিটার দিকে তাকালো তূর্য। কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে ইলমার উদ্দেশ্যে বলে বসলো,
_”তুমি খাইয়ে দাও।”
বিস্মিত চোখে তূর্যের দিকে তাকালো ইলমা,ঠোঁটজোড়া তার আপনা আপনি পৃথক হয়ে গেলো। একটি বড় হওয়ার পর থেকেই তূর্য কারো হাতে খেতে চায়না। অসুস্থ হলেও সে নিজের হাতেই খাবে। একবার ভীষণ জ্বর হওয়ায় ইলমা জোর করে খাইয়ে দিয়েছিল তাকে,তখন ও সে নিজ হাতেই খেতে চেয়েছিল কিন্তু সেই অবস্থাতে ছিলো না।
একহাত নিয়ে তূর্যের কপাল স্পর্ষ করে দেখলেন ইলমা। অবাক হয়ে বললেন,
_”কি হয়েছে তূর্য? জ্বর তো নেই,তাহলে?”
অযথাই হাসি পেলো তূর্যর,অথচ কয়েক মিনিট আগেই তার মাথা গরম ছিলো। তূর্য ঠোঁটজোড়া প্রশস্ত করে হেসে বললো,
_”খাইয়ে দিলে দাও,নাহলে নিয়ে যাও ওটা।”
ইলমা ব্যতিব্যস্ত হয়ে বললেন,
_”ওমা,দেবোনা কেন? অবশ্যই দেবো, কতদিন বাদে তুই আমার হাতে খেতে চেয়েছিস! আর আমি খাইয়ে দেবোনা?”
খুব যত্ন করে ছেলেকে কাস্টার্ড খাইয়ে দিলেন ইলমা। কয়েক চামচ খাইয়ে বললেন,
_”ভালো হয়েছে?”
_”হুম,ভালোই হয়েছে।”
আরো খুশি হলেন ইলমা, চোখেমুখে তার আনন্দের আভা ফুটে উঠলো। তূর্যও চুপচাপ খেয়ে নিলো পুরোটুকু। অন্যদিনের চেয়েও যেন একটু বেশিই মজা হয়েছে। সত্যিই কি তাই? নাকি মা খাইয়ে দিচ্ছে বলে অন্যরকম শান্তি লাগছে? এই ভাবনাগুলো আগে তো কখনো তূর্যের মাথায় আসেনি,ভাবতেই চায়নি। তাহলে আজ কেন আসছে? বেশি করে ভাবতে ইচ্ছে করছে কেন? মৌরিন এর শান্ত কণ্ঠে বলা কথার কি এতই জোর?
_”আরেকটু নিয়ে আসি?”
মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায় তূর্য। ইলমা তৎক্ষণাৎ গিয়ে আরো এক বাটি কাস্টার্ড নিয়ে এসে খাইয়ে দিতে লাগলেন তূর্যকে। এর মাঝেই জিজ্ঞেস করলেন,
_”হুট করে রেগে গিয়েছিলি যে? সব ঠিক আছে তো?”
তূর্যও সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিলো,
_”আমার ট্যালেন্ট অনেকে স্বিকার করতে পারছেনা আম্মু, আমার পপুলারিটি দেখে হিংসে হচ্ছে তাদের।”
ইলমা অতি শান্তভাবে মৃদু হেসে বললেন,
_”এটাতো জগতের নিয়ম, কেউ কাউকে উপরে যেতে দেখতে পারেনা। তাকে টেনে নিচে নামানোর চেষ্টা করে। তবে জয়টা শেষ পর্যন্ত পরিশ্রম এরই হয়। সবাইকে সম্মান করলে দু একজন এর কটূক্তি কানেই নিতে হবেনা বুঝলি?”
তূর্য বাঁকা হেসে বলে,
_”সম্মান? হাহ, সম্মান মাই ফুট। আমি শুধু একটা কথাই জানি, আই নিড টু গো অন দা টপ। আর আমার সেই যোগ্যতা আছে অভিয়াসলি, সবার উপরে আমিই থাকবো।”
তূর্যর এই কথাটা খুব একটা পছন্দ না হলেও কিছু বললেন না ইলমা। এই এক জিনিস, এই অহংকার জিনিসটা ছোটবেলা থেকেই বাসা বেধেছে তূর্যর মনে। সে নিজেই মনে করে,সে সকলের থেকে বেস্ট,সবার উপরে থাকার অধিকার একমাত্র তারই আছে। ইলমাও নিজের ছেলেকে উপরে উঠতে দেখতে চান,তবে এই অহংকার টা যদি বাদ দিতে পারতো তূর্য!
এই নিয়ে মাথা ঘামালেন না ইলমা,সে আজ ভীষণ খুশি। তাই অন্য কথা ভেবে চিন্তা করার কোনো দরকার নেই।
_______
আবারো সেই গতদিনের মতো ছাঁদের দোলনায় বসে আছে তূর্য। সঙ্গে ফোনের স্ক্রিনে ঘুরছে মৌরিন এর আইডি। একবার উপরে যাচ্ছে তো একবার নিচে। মেয়েটার কথাবার্তা কেমন অদ্ভুতভাবে আঘাত করে তাকে, এত ধারালো কেন তার কথাগুলো? প্রতিটা কথাই যেন গাম্ভীর্যতাপূর্ণ,একবার কানে গেলে তা পারবার মনে পরতে বাধ্য। এটাকি বাকি সবার ক্ষেত্রেও হয়েছে? নাকি কেবল তূর্যের ক্ষেত্রেই এমনটা হচ্ছে?
আপাতত সেসব ভাবার ইচ্ছে নেই তূর্যের। বর্তমানে তার ইচ্ছে কেবল একটাই, মৌরিন কে জানা। তবে সামনাসামনি তার সঙ্গে কথা বলতে চাওয়া অসম্ভব। একটা প্রেস্টিজ আছে তূর্যের,সঙ্গে তার মধ্যকার ইগো নামক বস্তুটিও প্রখর। কখনোই সে মৌরিন কে সামনাসামনি কিছু জিজ্ঞেস করতে পারবে না, এটা তার ইগোতে লাগবে।
তাই বাধ্য হয়ে বেছে নিলো ভার্চুয়াল পন্থা। তবুও নিজের আইডি থেকে মৌরিন এর সঙ্গে কথা বলতে দ্বিধাবোধ করলো তূর্য, কোনোভাবে মৌরিন যদি বুঝতে পেরে যায়? সেটা কোনোভাবেই হতে দেওয়া যাবেনা, তাই নিজের সেকেন্ড আইডি থেকেও মৌরিনকে মেসেজ দিলোনা তূর্য। নতুন নামে খুললো একটি ফেইক আইডি। তার দ্বারাই মৌরিন কে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠালো তূর্য।
#চলবে?