#এক_ফালি_সুখ🌼 |১৭|
#তাসনিম_জাহান_মৌরিন
দীর্ঘ ত্রিশ মিনিট যাবৎ অপেক্ষা করছে তূর্য,তবে মৌরিন তার ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট এক্সেপ্ট করলো না। যদিও এটা ফেইক আইডি, অচেনা ব্যক্তির রিকুয়েস্ট অনেকেই এক্সেপ্ট করেনা এটাই স্বাভাবিক। তবে বিষয়টা তূর্যের ইগোতে লাগলো, নিজের উপর রাগ পোষণ করেই ছাঁদ থেকে সোজা ঘরে চলে এলো সে। ভাবতেই অবাক লাগছে, মৌরিন এর সাথে কথা বলার জন্য কিনা ফেইক আইডি খুললো,কিন্তু সেই মৌরিন ই তার রিকুয়েস্ট এক্সেপ্ট করলো না।
ফোনটা বিছানার উপর ছুড়ে ফেলে কিছুক্ষন এদিক ওদিক পায়চারি করলো তূর্য,কপালের ভাজগুলোতে রাগের আভা স্পষ্ট,মুখভঙ্গি গম্ভীর। না চাইতেই নিজেকে আবারো বোঝালো,”হয়তো মৌরিন অনলাইন এই আসেনি”।
আবারো খানিক বাদে ফোনটা হাতে নিলো তূর্য। নাহ, এখনো এক্সেপ্ট হয়নি রিকুয়েস্ট টা। তবে খেয়াল করলো মৌরিন এর আইডিতে ফ্রেন্ডস এর সংখ্যা দুজন বেড়ে গেছে,ফলোয়ার সংখ্যা বাড়েনি। অর্থাৎ মৌরিন নিজে কিছুক্ষনের মধ্যে এই দুজনের ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট এক্সেপ্ট করেছে,কিন্তু তূর্যের সেই ফেইক আইডি থেকে দেওয়া রিকুয়েস্ট সে এক্সেপ্ট করলো না!
রাগটা টগবগ করে বেড়ে গেলো,নাক ফুলিয়ে কয়েকবার নিঃশ্বাস ছেড়ে আইডি থেকে বেরিয়ে এলো তূর্য। এই মুহূর্তে তার অকারণেই রাগ হচ্ছে মৌরিন এর উপর। তার মনে হচ্ছে মৌরিন ভাব দেখিয়ে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট এক্সেপ্ট করছে না।
_”না করুক,আমার কি!”
কথাটা ভেবেই নিজের আসল আইডি তে ঢুকলো তূর্য। নোটিফিকেশন এর কারণে আইডি হ্যাং হওয়ার পালা, এই আইডিটা তূর্যের আসল নামেই। নোটিফিকেশন চেক করতে গিয়ে তূর্যের সামনে এলো আবরাজের সেই ক্লিপ, ইনডিরেক্টলি সে তূর্যকে অপমান করেছে সেখানে। কমেন্ট বক্সে অনেকে মেনশন দিয়েছে তূর্যকে। কিছু কমেন্টস চেক করে বাঁকা হাসলো তূর্য, তার সব ফ্যান ফলোয়ারস রা একপ্রকার ঝড় তুলে ফেলেছে সেখানে। মাথার পিছনে হাত দিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো তূর্য। চোখ বন্ধ করে মুখ খুলে বড় নিঃশ্বাস ছাড়লো। নিজের মনকে শান্ত করে ভাবতে চাইলো,
_”ইউ আর দা বেস্ট তূর্য, আমার পথে কাটা এলে তা নিজেই উপড়ে পরবে। বাট আই ওয়ান্ট মোর এন্ড মোর এন্ড মোর… দুদিনের মেয়েকে নিয়ে চিন্তা করা আমার সঙ্গে যায়না,একদমই যায়না..”
______
জ্বরে কাবু হয়ে বিছানায় শুয়ে আছে নির্ঝর, এই ফ্ল্যাটে মূলত সে আর তার এক বন্ধুই থাকে। সেই বন্ধু আবার দুদিন আগে নিজের বাড়িতে গেছে,তাই ফ্ল্যাটে একাই ছিলো নির্ঝর কিছুক্ষন আগে পর্যন্ত। তবে এই আধাঘণ্টা আগেই বাসায় উপস্থিত হয়েছে জ্যোতি এবং তার মা। সিলেটের বাড়ি খালি রেখে জ্যোতির মা বাবা মেয়েকে সঙ্গ দিতে দু বছর হলো ঢাকাতেই থাকছেন। নির্ঝর কে জন্ম থেকে দেখছেন তিনি,ভীষণ স্নেহ করে তাকে,নিজের ছেলে না থাকায় নির্ঝর কেই ছেলের চোখে দেখে। এত জ্বর নিয়ে ছেলেটা একা বাসায় থাকবে তা আর হতে দেননি তিনি, তাইতো রাতে রান্না করেই জ্যোতিকে নিয়ে চলে এসেছেন। আজকে তারা এখানেই থাকবে।
কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে ছিলো নির্ঝর, একটু আগেই জ্বরটা কম ছিলো বলে কিছু খেতে পেরেছে। এখন আবার সেই গা কাপানো জ্বর। এমনটাই হয় তার ক্ষেত্রে,জ্বর দুদিন থাকলে সেই দুদিনেই ভুগিয়ে ছাড়বে।
মুখের উপর থেকে কেউ কম্বলটা সরিয়ে নিতেই চোখ মুখ কুঁচকে নেয় নির্ঝর। বিরক্তি নিয়ে চোখ খুলতেই সামনে বুকে হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে জ্যোতিকে।
_”সমস্যা কি? সরালি কেন এটা?”
জ্যোতি বিছানায় বসে বলে,
_”ওমা,তুমি জানোনা? জ্বর হলে এমন কম্বল পেঁচিয়ে রাখতে হয়না। আরো ফ্যান ছেড়ে দিতে হয়, ফ্যানটা ছেড়ে দেই?”
এমন সময় জ্যোতির মা জেসমিন হাতে একটা বোলে পানি নিয়ে ঘরে প্রবেশ করতেই নির্ঝর তার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
_”মামনি তোমার মেয়েকে কেন আনতে গেলে বলতো? ও তো আমায় সুস্থ করার বদলে আরো অসুস্থ বানিয়ে দেবে।”
জ্যোতি বিপরীতে গিয়ে বলে,
_”আমি কি ভুল কিছু বলেছি আম্মু?”
জেসমিন বোল টা রেখে বললো,
_”এই ব্যাপারে কিন্তু জ্যোতি ভুল কিছু বলেনি নির্ঝর,এটা মানতে হবে।”
নির্ঝর কোনো উত্তর না দিয়ে চোখ বন্ধ করে রইলো। জেসমিন জ্যোতির উদ্দেশ্যে বললেন,
_”ওর মাথায় জলপট্টি দিয়ে দে তো। শুধু ঔষধে জ্বর নামবে বলে মনে হচ্ছেনা,আমি একটু প্লেট গুলো গুছিয়ে রেখে আসি।”
চলে গেলেন জেসমিন। নির্ঝর মাথায় হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে ছিলো। জ্যোতি পানিতে রুমালটা হালকা ভিজিয়ে প্রথমেই নির্ঝর এর গালে চেপে ধরতে গেল,তবে নির্ঝর ঠিক তার আগেই ওর হাত চেপে ধরে বলে,
_”হয়েছে,তোর আর সেবা করতে হবে না। যা তো এখান থেকে,ঘুমোতে দে আমাকে।”
জ্যোতি হাতটা ছাড়িয়ে রুমালটা চেপে নিয়ে নির্ঝর এর কপালে ঠিককরে লেপ্টে দিয়ে রাগী ভাব নিয়ে বলে,
_”তা আর করবো কেন? তোমার দিয়া এসেতো সেবা করে দিয়ে যাবে তাইনা? তা এইযে জ্বরে বেহাল অবস্থা, সে খোজ নিয়েছে একবারো? নেবেও না, ঐ শেষ পর্যন্ত আমার কাছেই ফিরতে হবে।”
নির্ঝর ভ্রু কুঁচকে বলে,
_”তার মানে?”
_”কিছুনা।”
ছোট করে উত্তর দেয় জ্যোতি। নির্ঝর কপাল থেকে রুমালটা সরিয়ে বিছানায় হেলান দিয়ে বসে বলে,
_”চশমাটা দে তো।”
জ্যোতি পাশ থেকে চশমাটা নিয়ে নির্ঝরের হাতে দিয়ে বলে,
_”চশমা দিয়ে কি করবে এখন?”
নির্ঝর চশমাটা চোখে দিয়ে আবারো জ্যোতির দিকে তাকিয়ে বলে,
_”টেবিলের ড্রয়ারে একটা জিনিস রাখা আছে,নিয়ে আয়।”
জ্যোতি ভ্রু কুঁচকে টেবিলের ড্রয়ার থেকে সেই বাক্সটা নিয়ে এসে বলে,
_”আমাকে কি চাকর মনে হয় নাকি?”
_”খুলে দেখ ওটা।”
জ্যোতি একবার তাকায় হাতে থাকা বাক্সটার দিকে, কোনো ঘড়ির বক্স মনে হচ্ছে। নির্ঝর এর কথায় সেটা খুলতেই ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে জ্যোতির। নির্ঝর এর দিকে তাকিয়ে বলে,
_”এটা আমার?”
_”নাহ,দিয়ার। তোর হাতে পরিয়ে চেক করাচ্ছি আরকি।”
ভেঙচি কেটে হাসিমুখে ঘড়িটা হাতে পরে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখতে থাকে জ্যোতি। প্রতিবার নির্ঝর ওকে জন্মদিন এর এক সপ্তাহ আগেই কিছু না কিছু গিফট দিয়ে দেয়, তবে এবার না দেওয়ায় একটু মন খারাপ ও হয়েছিল তার।
_”দুদিন আগেই দিয়ে দিলাম, এবার আর খ্যাঁচখ্যাঁচ করবি না আমার সাথে।”
_”ভালোই তো দিনক্ষণ মনে রাখছো, প্রেমে টেমে পরলে নাকি আমার?”
দু সেকেন্ড জ্যোতির দিকে তাকিয়ে থেকে দম ফাটিয়ে হাসতে লাগলো নির্ঝর,জ্যোতি সরু চোখে তাকিয়ে রইলো তার দিকে। অনেক্ষন বাদে নির্ঝর হাসি থামিয়ে বললো,
_”দারুণ ইন্টারটেইনমেন্ট দিলি কিন্তু। এবার যা তো এখান থেকে, ঘুমোতে দে।”
কম্বল টা টেনে নিয়ে আবারো শুয়ে পরলো নির্ঝর। জ্যোতি কিছুক্ষন বসে বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে, এটা নতুন কিছু নয়। নির্ঝর সবকিছুই যেন মজা হিসেবে নেয়। তবে বর্তমানে তার থেকে হাতের ঘড়ির উপরই বেশি মনোযোগ দিলো জ্যোতি। নিজের ফোনটা হাতে দিয়ে কয়েকশো ছবি তুলতে লাগলো ঘড়িটার সঙ্গে।
_______
বিছানায় বসে নিজের চুল বেধে নিচ্ছিলো মৌরিন,চুল খোলা রেখে তার শোয়ার অভ্যেস নেই। ফোনটা পাশেই রাখা ছিলো। চুল বেধে চিরুনি রেখে এসে ফোনটা হাতে নিতেই সেখানে রিমির কল আসে। মৌরিন এর মনে পরলো রিমি তাকে সকালেও দুবার কল করেছিল, শুটিং সেটে থাকায় তখন আর কল রিসিভ করেনি। আর দেড়ি না করে ফোনটা রিসিভ করতেই রিমি একনাগাড়ে বলতে লাগলো,
_”ফোন কই রাখিস তুই বইন? মানে মানুষ ম*রে গেলেও তো বোধ হয় তোকে পাওয়া যাবে না।”
_”কাজে ছিলাম জানিস ই তো।”
_”তাহলে কল ব্যাক তো করবি অন্তত।”
_”মনে ছিলোনা রে,নাহলে তো করতাম ই। কিন্তু তুই এত রেগে যাচ্ছিস কেন? হয়েছে টা কি?”
_”কি হয়েছে সেটা বললে তোর মাথায় বাজ পরবে।”
_”হেঁয়ালি না করে কি হয়েছে বল।”
বিরক্তি নিয়েই শেষ কথাটা বলে মৌরিন। তবে রিমির পরবর্তী কথা শুনে চুপ করে যায় সে।
#চলবে?
#এক_ফালি_সুখ🌼 |১৮|
#তাসনিম_জাহান_মৌরিন
যেকোনো পরিস্থিতি তে নিজেকে শান্ত রাখার বেশ ভালোই অভ্যাস রয়েছে মৌরিন এর। দু সেকেন্ড এর জন্য সেই চিরচেনা রূপ থেকে বেরিয়ে এলেও মুহূর্তেই নিজেকে সামলে নেয় মৌরিন। অন্যদিকে মৌরিন এর থেকে প্রতিত্তর না পেয়ে রিমি আবারো বলে,
_”মৌ? শুনতে পাচ্ছিস তুই? নাহিদ ভাইয়া ভার্সিটি অবধি চলে এসেছিলো।”
মৌরিন চোখ বন্ধ করে কয়েকবার বড় বড় নিঃশ্বাস নিয়ে বললো,
_”তো? আসতেই পারে,নিজের শহরে ফিরেছে,যে কোনো জায়গায় যেতেই পারে।”
_”মৌরিন তুই বুঝতে পারছিস না,উনি তোর খোজ করতে এসেছিলো। আমি যতটা খেয়াল করেছি তাতে হয়তোবা এখনো কিছু জানতে পারেনি,তবে জানতে কতক্ষন?”
_”ওয়েট ওয়েট রিমি, তুই কি ভাবছিস আমি কারো থেকে পালাতে এখানে এসেছি? আমি ভয় পাই কাউকে?”
_”আমি সেটা বলতে চাইনি মৌ।”
_”তাহলে কি বলতে চাইছিস? একটা কথা ভালো করে জেনে রাখ, আমি কখনো কোথাও পালিয়ে যাইনি আর যাবোও না। আমি কেবল একটুখানি শান্তি চেয়েছি, আর তার জন্যই কাউকে আমার বর্তমান ঠিকানা জানাতে চাইনি আর চাচ্ছি ও না। তবে কেউ যদি জেনেও যায়, তাতে আমার কিচ্ছু যায় আসেনা।”
_”মন থেকে বলছিস তো? নাহিদ ভাই তোর সামনে গিয়ে দাড়ালে ব্যাপারটা ভালো হবে?”
তাচ্ছিল্যের সুরে হেসে মৌরিন বলে,
_”একজন রাস্তার লোক আমার সামনে এলো বা না এলো, তাতে আমার কি?”
_”মৌরি…!”
অবাক হয়ে বলে রিমি। মৌরিন জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। শরীরে জড়িয়ে রাখা ওড়নাটা একদিকে সরে যায়। চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষন শীতল বাতাস অনুভব করে মৌরিন। জানালায় পিঠ ঠেকিয়ে বলে ওঠে,
_”অবাক হওয়ার কি আছে? আমি তাকে রাস্তার লোকই মনে করি, এমনকি সে তার চেয়েও নিকৃষ্ট।”
_”সে তো নিজের ভুলটা বুঝতেও পারে মৌ।”
_”ভালো তো, ভুল বুঝতে পারা ভালো। তবে ভুল শুধরে নেওয়া সোজা নয়,এক্ষেত্রে সম্ভব ও নয়। আর না আমি তা চাই।”
_”তার জন্য বিন্দুমাত্র অনুভূতি ও কি তোর মধ্যে নেই মৌ?”
_”নাহ,নেই। ছিলোই না কখনো।”
_”তুই সিওর?”
_”হান্ড্রেড এন্ড টেন পার্সেন্ট, আর কিছু?”
চুপ করে রইলো রিমি। খানিক বাদে অসহায় কণ্ঠে বললো,
_”মৌ, কোনোভাবে কি ফিরে আসা যায়না?”
_”যায়না।”
_”কেন যায়না? আমি জানি তুই কারোর কথার ধার ধারিসনি কখনো, তাহলে কেন অন্যদের জন্য..”
_”কারোর জন্য নয়,নিজের জন্য।”
হাতের সাহায্যে জানালার গ্রিল ছুঁইয়ে চোখ বন্ধ করে নেয় মৌরিন। শান্ত কণ্ঠে বলে,
_”আমায় কেউ দূর্বল করতে পারবেনা রিমি। তবে ঐ শহর আমায় দূর্বল করে দিচ্ছিল, ক্লান্তি অনুভব করছিলাম আমি, মনে হচ্ছিল নিজের জোর হারিয়ে ফেলছি। আমি পরিক্ষার মুখোমুখি হতে পছন্দ করি,কঠিন থেকে কঠিনতর পরিক্ষাও আমি দিতে প্রস্তুত। নিজের উপর বিশ্বাস আছে আমার, আমি চাইলে সব করতে পারি। তবে আমার চিন্তাধারা বদলে যাচ্ছিলো। ঐ কাঁটা বিছানো পথটা আমি চাইলেই পারি দিতে পারতাম,তবে আমি সেটা চাই নি। বলতে পারিস,এই ক্ষেত্রে একটু স্বার্থপরতা করলাম। নিজের জন্য,কঠিন এই পথটাকে ইষৎ সহজ করলাম নিজ দায়িত্বে। আমার চলার পথটা ফুলে সজ্জিত নয়, বিষাক্ত কাটার মাঝে সরু পথে হেটে যেতে হবে আমায়,আর তা নিজ বুদ্ধিতেই। নিজের বুদ্ধির প্রশংসা করি আমি, তবে যেই বস্তু আমার বুদ্ধি লোপ পাওয়ার কারণ হবে, তা আমার জীবন থেকেও বিতাড়িত হবে।”
দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো রিমি। মৌরিনের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুড়লো,
_”যদি তা কোনো ব্যক্তি হয়?”
ঠোঁট প্রশস্ত করে হাসে মৌরিন। প্রশ্নের উত্তরে বলে,
_”তা হবেনা। নিজেকে চিনি আমি, আব্বু ব্যাতিত কোনো ব্যক্তি আমায় আজ পর্যন্ত দুর্বল করতে পারেনি, পারবেও না।”
_”যদি পারে?”
_”যদির কথা আমি বলতেই চাইছিনা। যদি বলতে কোনো শব্দই আমি ভাবতে চাইনা।”
_”দোয়া করি মৌ। কোনো ব্যক্তি তোর দূর্বলতা হয়ে না আসুক, সে আসুক তোর শক্তি হয়ে,সাহস হয়ে,তোর ছায়া হয়ে।”
_”চাইছিনা ছায়া, অন্ধকারে কিন্তু সেই ছায়াও আমাদের কিঞ্চিত ভয় পাইয়ে দেয়।”
_”কথায় পারবো না তোর সঙ্গে।”
মৃদু হাসে মৌরিন। মায়ের পরে কাউকে নিজের বেস্টফ্রেন্ড হিসেবে দাবি করলে সেটা হবে রিমি। এই মেয়েকে না চাইতেও অনেক কিছু বলে ফেলে,আর রিমি ওর সবকথা শোনে। সে বলে, “তোর কথাগুলো অনেক মোটিভেশন দেয় আমায়, মোটিভেশনাল স্পিকার হয়ে যেতে পারিস কিন্তু।”
এখন রিমির সাথেসাথে রাতুলও মাঝেমধ্যে এই কথা বলে। দুদিন আগেই তো বলছিলো, “তুমি কিন্তু কথা দিয়েই মানুষের মনে দাগ কেটে দিতে পারবে মৌরিন।”
আরো কিছুক্ষন কথা বলে ফোন কাটে মৌরিন। জানালার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে বেশ ভালোই লাগছে। নিজের দু একজন শুভাকাঙ্ক্ষীদের কথা শুনে মাঝেমধ্যে হাসি পায় মৌরিন এর। কি এমন কথা বলে সে? খুব একটা ভেবেচিন্তে ও তো বলেনা কিছু, তবে একদম মুখে এলেই বলে দেয় এমনটাও নয়।
মৌরিন খেয়াল করে দেখলো তার অর্ধেক বেণি করে রাখা চুলগুলো এখন পুরোটাই খুলে গেছে। ছোট করে নিঃশ্বাস ফেলে আবারো নিজের বিনুনি করাতে মনোনিবেশ করে সে।
________
ছয়দিনের শেষে কাঙ্ক্ষিত নাটকের শুটিং এর সমাপ্তি ঘটলো। টানা শুটিং চলেছে ছয়দিন,ফলে সকলেই ক্লান্ত। এমনকি তন্নির একসঙ্গে দুটো নাটকের শুটিং এর কাজ চালাতে হয়েছে, যথেষ্ট পরিশ্রমী মেয়ে না হলে এতটা ধকল নিয়ে হয়তো অসুস্থই হয়ে পরতো।
রাতুলও নিজেকে সুস্থ মনে করে আর শুটিং সেটে এসেছে। শেষদিনের শুটিং, না এলে নিজের কাছেই খারাপ লাগবে। তাছাড়া হাতের ব্যাথাটাও এখন খুব একটা গাঢ় নয়। তবুও তন্নি এখন অবধি দশ বারোবার জিজ্ঞেস করেছে এসে। শুটিং এর চেয়ে রাতুল এর প্রতিই যেন তার মনোযোগ বেশি। সবশেষে শুটিং শেষ করে সকলে একত্রিত হয়ে গোল হয়ে বসে আছে। রুবেল,রাতুল,তন্নি,তূর্য,মৌরিন সহ আরো চার পাঁচজন উপস্থিত আছে সেখানে। মৌরিনকে তন্নিই নিজের পাশে এনে বসিয়েছে। মৌরিনকে খুব ভালোলাগে তার, খুব চুপচাপ তবে নার্ভাস নয়। অনেকেই প্রথম প্রথম সেটে এলে অস্থির হয়ে যায়,তবে মৌরিন এর ক্ষেত্রে তেমনটা হয়নি। তাকে আজ অবধি এতটুকুও নার্ভাস হতে দেখেনি তন্নি,আর এই বিষয়টাই তার বেশি পছন্দের,আত্মবিশ্বাসে ভরপুর মৌরিনকে তাই বেশ পছন্দ হয়েছে তন্নির।
রাতুল ফোনে কথা বলা শেষ করে বলে,
_”আম্মা অনেক জেদ করছে, মনে হয় এবার সিলেট যেতেই হবে কদিনের জন্য।”
তন্নি উৎসাহিত হয়ে বলে,
_”ভালো তো, আমিও অনেকদিন কোথাও ঘুড়তে যাচ্ছিনা। আর সিলেট তো গিয়েছি সেই দু বছর আগে। আরেকবার যাওয়া উচিৎ।”
তন্নি তূর্যকে হালকা ধাক্কা দিয়ে বলে,
_”এই তূর্য,চলনা সবাই মিলে সিলেট যাই টুরে। নির্ঝর কেও সাথে নিয়ে যাবো।”
নির্ঝর এর কথা শুনে রাতুল বললো,
_”বেচারা নাকি জ্বরে পরেছে। তাহলে ওর সঙ্গে তো দিয়াকেও নিয়ে যাওয়া যায়।”
তূর্য চোখ বড়বড় করে বলে,
_”মাফ চাই ভাই, আমার ঢাকা শহরই যথেষ্ট সুন্দর। আর কোথাও যেতে হবেনা।”
রুবেল ও এবার মজার ছলে বলে,
_”ভাবা যায়! তূর্যও কিনা এখন দিয়াকে ভয় পাচ্ছে!”
সবাই একসঙ্গে হাসতে লাগলো,যা দেখে বিরক্ত হলো তূর্য। রাতুল হাসি থামিয়ে মৌরিন এর উদ্দেশ্যে বললো,
_”ভালো কথা মৌরিন, রিমিও তোমার কথা বলছিল অনেকবার। একবার গিয়ে কিন্তু ঘুরে আসতে পারো, আম্মুও খুশি হবে,আর রিমি তো লাফাবে।”
মৌরিন স্মিত হেসে বলে,
_”ইচ্ছে নেই ভাইয়া।”
তন্নি মৌরিন এর দিকে তাকিয়ে বলে,
_”কেন গো? কি সুন্দর শহর! তোমার মন খারাপ হয়না বুঝি?”
মৌরিন হাসির মাত্রা বাড়িয়ে বললো,
_”হয়না তো।”
তূর্য দৃষ্টি স্থাপন করলো মৌরিন এর দিকে। গতকাল নিজেকে অনেক বুঝিয়েছে, মৌরিন এর ব্যপারে আর ভাববে না ঠিক করেছে। তবুও কয়েক ঘণ্টার ব্যাবধানে আবারো সৃষ্টি হচ্ছে সেই কৌতূহল। যার মাত্রা ক্রমশ বেড়েই চলেছে,কমার কোনো নামই নিচ্ছে না।
#চলবে?