এক ফালি সুখ পর্ব-১৯+২০

0
277

#এক_ফালি_সুখ🌼 |১৯|
#তাসনিম_জাহান_মৌরিন
সকাল থেকে আর জ্বর আসেনি নির্ঝর এর,এবার বোধ হয় একটু আগেই সুস্থ হয়ে গেলো। ভালোই হয়েছে,এবার দিয়াকে কনভিন্স করতে পারবে ঠিক করে। সেই উদ্দেশ্যেই ফ্রেশ হয়ে এসে কল করলো দিয়াকে। দু’বার রিং হতেই কলটা রিসিভ করলো দিয়া। নির্ঝর হাসিমুখে বললো,
_”গুড মর্নিং ডিয়ার”

দিয়া বিরক্ত হয়ে উত্তর দেয়,
_”মর্নিং তুমি গুড হতেই তো দিচ্ছো না। কত সুন্দর ঘুমোচ্ছিলাম,দিলে তো ঘুমটা ভাঙিয়ে! হোয়াট’স ইয়োর প্রবলেম নির্ঝর?”

_”আরে আরে রাগ করছো কেন? আমিতো তোমার খবর নিতেই কল করলাম।”

_”আমার অতো খবর নিতে হবেনা। আর শুনে রাখো, আমাকে সান্ত্বনা দেওয়ার ও কোনো দরকার নেই।”

_”বাহ,তার মানে তুমি তূর্যর শোক থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছো? দ্যাটস গ্রেইট!”

_”একদমই না। তূর্যকে আমি এত সহজে হাতছাড়া হতে দেবো নাকি? ওকে তো আমি বিয়ে করবোই।”

নির্ঝর হতাশ হয়ে বলে,
_”কি দরকার বলতো? তুমি তূর্যের কাছে যাবে,ও আবার তোমাকে অপমান করবে। তোমাকে এভাবে অপমানিত হতে দেখে কি আমার ভালো লাগে বলো?”

দিয়া কিছুটা ঢং এর সুরে বলে,
_”তূর্যের অপমানই তো আমার কাছে ভালোবাসা। উফ, হিজ ভয়েস! ওর ঐ রাগী লুক! হায়,জাস্ট অসাম।”

বিরক্ত হয় নির্ঝর,এই মেয়েকে কিছুতেই বোঝাতে পারছে না। সে তূর্যের জন্যই জান প্রাণ দিয়ে দিচ্ছে।
কান থেকে কেউ ফোনটা কেড়ে নিতেই নির্ঝর ভ্রু কুঁচকে তাকায় সেদিকে। জ্যোতি ততক্ষনে ফোনটা কেটেও দিয়েছে। নির্ঝর উঠে দাড়িয়ে বলে,
_”কাটলি কেন কলটা?”

_”তোমার অধঃপতন দেখে অবাক হচ্ছি আমি। কেমন প্লে বয় দের মতোন কাজ করছো তুমি!”

_”এই এই, কি বললি তুই? সাহস তো কম না! জীবনে এই একটামাত্র মেয়ের প্রেমে পড়লাম,আর তুই বলছিস কিনা প্লে বয় দের মতো বিহেভ করছি?”

জ্যোতি বিছানায় বসে বলে,
_”তুমি না দিয়ার প্রেমে পরোনি বুঝলে? শুধুশুধুই নির্লজ্জের মতো ওর পিছনে ঘুরে বেরাচ্ছো।”

_”তোকে কিছু জিজ্ঞেস করেছি আমি? একবার সাজেশন চাইলাম,তখন তো কিছু বলিসনি! আর এখন আমার কান ভাঙাচ্ছিস? সারাজীবন কি আমাকে সিঙ্গেল থাকতে বলছিস তুই?”

জ্যোতি পাশে তাকিয়ে বলে,
_”তা কেন চাইবো? একটা ভালো মেয়ে পছন্দ করলে তো কিছু বলতাম না।”

নির্ঝর ওর পাশে বসে কোমড়ে হাত দিয়ে বলে,
_”আচ্ছা? তা কোথায় পাবো সেই ভালো মেয়ে?”

_”সামনে,পিছনে,ডানে,বামে তাকালেই তো পেয়ে যাবে। চোখটাকে একটু কাজে তো লাগাও। চারচোখ থেকে লাভটা কি যদি নিজের উপযুক্ত মেয়ে খুজেই বের করতে না পারো?”

_”হয়েছে তোর বলা? এবার বের হ তো এখান থেকে, আমি আমার উপযুক্ত মেয়ে খুজে নিয়েছি।”

খানিকক্ষণ করুণ চোখে নির্ঝর এর তাকিয়ে রইলো জ্যোতি। উঠে দাঁড়িয়ে আরো কিছুক্ষন দাঁত কিড়মিড় করে তাকালো তার দিকে। পরবর্তীতে নির্ঝর এর মুখে আর কিছু না শুনে ঘর থেকেই বেরিয়ে এলো জ্যোতি। মনে মনে কিছু পরিকল্পনা কষলো। নির্ঝর কে একটা শিক্ষা দেওয়ার খুবই প্রয়োজন।

_____
দুদিন বাদেই সেই কাঙ্ক্ষিত ক্ষন চলে এলো। আজ থেকেই সেই নতুন নাটকের শুটিং শুরু হবে। আজকের শুটিং একটা ডুপ্লেক্স বাড়িতে হবে। সবাই সেখানেই উপস্থিত হয়েছে কেবল দিয়া বাদে। এখন পর্যন্ত কোনো ঝামেলা সৃষ্টি হয়নি কেননা তূর্য আর আবরাজ একে অপরের সঙ্গে কথাই বলেনি, দেখা হওয়ার পর শুধু একবার হাত মিলিয়েছিল। তারপর নিজেদের মতো বসে আছে। মৌরিন নিজের মতোই টুকটাক কাজ করছে। সবাই এখন অপেক্ষা করছে দিয়ার জন্য,সবজায়গায় তার দেড়িতে আসার অভ্যাস হয়ে গেছে।
আরো মিনিট পাঁচেক পরেই বাড়িতে প্রবেশ করলো দিয়া। পরনে একটা টাইট টপস এবং জিন্স,চোখে সানগ্লাস সঙ্গে মুখে কয়েক কেজি মেকআপ এর প্রলেপ, হাতে ব্রান্ডেড ঘড়ি এবং পার্স। দিয়া প্রবেশ করতেই আবরাজ নিজের সানগ্লাস টা খুলে তার দিকে হা করে তাকিয়ে রইলো, চেয়ার থেকে উঠে তার কাছে গিয়ে বললো,
_”ওয়াও দিয়া! ইউ আর লুকিং সো গর্জিয়াস।”

দিয়া কিছুটা ভাব নিয়ে “থ্যাংকস” বলেই আশেপাশে নজর দিলো। একটু পিছনে তূর্যকে দেখতে পেয়েই সে দাঁত বের করে হেসে দ্রুত পায়ে তূর্যর দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বলে,
_”তূর্য…..”

তূর্য ফোনের মধ্যেই ডুবে ছিলো,তাই দিয়ার আসা টা খেয়াল করেনি। তবে দিয়া এমন লম্বাকরে ডাক দিতেই চোখ বড়বড় করে তার দিকে তাকায় তূর্য। দিয়া দৌড়ে এসে ওকে জড়িয়ে ধরলে চাইলেই তূর্য আগে থেকে হাত বাড়িয়ে তাকে আটকে দেয়। থেমে যায় দিয়া, হাসিমুখেই বলে,
_”হায় তূর্য।”

তূর্য ফোনের দিকে দৃষ্টি স্থাপন করে বিরক্তিভরা কণ্ঠে উত্তর দেয়,
_”হ্যালো।”

দিয়া তূর্যের সামনে ঘুরেফিরে নিজের চুল ঝাপটা মেরে জিজ্ঞেস করে,
_”আমায় ভালো লাগছে তূর্য?”

তূর্য না তাকিয়েই বলে,
_”হুম”

পিছনে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে আবরাজ। রাগে শরীর জ্বলছে তার। তূর্যকে মোটেই সহ্য করতে পারেনা ও। এইতো,দু তিনবছর আগেও মেয়েদের সবচেয়ে বড় হার্ট থ্রোব ছিলো আবরাজ। তবে তূর্য এই ইন্ডাস্ট্রি তে আসার পর থেকে নিজের জায়গাটা একটু একটু করে দূর্বল হয়ে পরছে। যদিও আবরাজ এর ফ্যান ফলোয়ারস এখনো অনেক,তবে সেগুলো অর্জন করতে তার ছয় বছরের বেশি সময় লেগেছে। সেখানে তূর্য প্রায় সমপরিমাণ ফলোয়ারস পেয়েছে মাত্র দু আড়াই বছরে।

দিয়ার মতোন সুন্দরি মেয়েকে যে কেউ এক দেখাতে পছন্দ করবে, আবরাজের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। একটা অ্যাড এ মডেল হিসেবে দিয়ার সঙ্গে কাজ করেছিল আবরাজ। সেই থেকেই দিয়াকে পছন্দ হয়ে গেছে তার, ইগোর জায়গা থেকে সরাসরি বলতেও পারছে না। আর দিয়া তাকে খুব বেশি পাত্তাও দিচ্ছে না। অন্যদিকে সে তূর্যর পিছনে পরে আছে, যে কিনা ওর দিকে ফিরেও তাকায় না। নিজের মানসম্মানে লাগলো বিষয়টা। তূর্য সবদিক থেকে আবরাজ এর উপরে যেতে চাইছে, যা আবরাজ কখনোই হতে দেবেনা।

শুটিং শুরু হলো, আজ প্রথম দিন রুবেল সবাইকে এই নাটক সম্পর্কে ধারণা দিচ্ছে যেন তারা কাজটা ভালো করে করতে পারে। আর যাই হোক, কাজের ক্ষেত্রে দিয়া ব্যাতীত এখানে বাকিরা সবাই মনোযোগী। তাই সকলেই মনোযোগ দিয়ে শুনছে রুবেল এর কথা, তবে দিয়ার আসল মনোযোগ এখন তূর্যের দিকে। তা অবশ্য খেয়াল ও করেছে রুবেল,তবে সে আর কিছু বলেনি। দিয়াকে বুঝেশুঝেই এই কাজে নেওয়া হয়েছে,কেননা এখানে একজন সুন্দরি ন্যাকা মেয়েই দরকার ছিলো। আর ইন্ডাস্ট্রি তে বর্তমানে নতুন এর মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর দিয়াকেই বলা যায়। যদিও তন্নিও ভীষণ সুন্দর,তবে তাকে অমন ন্যাকা ক্যারেক্টার এ মানায় না। সে তেমন ক্যারেক্টার এ কাজ করবেও না।

প্রথম দিনের শুটিং ঠিকভাবেই শেষ হলো। তূর্য আর আবরাজের একে অপরের সঙ্গে কথা বলার প্রয়োজন হয়নি কারণ আজকে দুজনের আলাদা আলাদা শুট ছিলো,একসঙ্গে কিছুই করতে হয়নি। তবে দিয়ার সঙ্গে শুট ছিলো তূর্যের, দিয়া তো তাতেই মহাখুশি। পারলে সে শুটিং এর মধ্যেই তূর্যের কোলে চড়ে বসে থাকে।
সবাই নিজেদের ড্রেস চেঞ্জ করে নিলো,বেরোনোর জন্য প্রস্তুতি ও নিলো। তূর্য নিজের শার্ট এর হাতা কনুই অবধি গুটিয়ে রেখেছে, চোখেমুখে পানি দিয়ে এসেছে মাত্র। চুলের সামনের অংশও সামান্য ভিজে আছে। দূর থেকেই তূর্যকে দেখতে পেয়ে কিছুক্ষন হা করে তাকিয়ে রইলো দিয়া, মুখ থেকে একটা কথাই বেড়োলো তার, “হাউ হ্যান্ডসাম!”

একটা বুদ্ধি এলো দিয়ার মাথায়, পায়ে তার হিল জুতো ছিলো। ইচ্ছে করে তূর্যর সামনে দিয়ে হাটতে লাগলো সে। তূর্যের নজর ফোনের দিকে তাই সে দিয়াকে খেয়াল করলো না। হুট করে দিয়ার সঙ্গে ধাক্কা লাগতেই হাত থেকে ফোনটা পরে যায় তূর্যের,মেজাজ টা বিগড়ে যায় সঙ্গে সঙ্গেই। দিয়া ইচ্ছে করে পরে যাওয়ার অভিনয় করতেই তূর্য তার একহাত ধরে দাড় করিয়ে রাগী গলায় বলে,
_”সমস্যা কি দিয়া? চোখে দেখতে পাওনা তুমি?”

কষ্ট পেলো দিয়া। সে তো ভেবেছিল একটা রোম্যান্টিক মোমেন্ট তৈরি হবে,কিন্তু হলো তো উল্টোটা। ফোনটা তুললো তূর্য,ঠিকই আছে এখনো। দিয়ার কথার অপেক্ষা না করেই আবারো ফোনের দিকে তাকিয়ে হাটতে লাগলো সে।
ঠিক সেই সময় অপর দিক থেকে মৌরিনও হাতে স্ক্রিপ্ট নিয়ে এগোচ্ছিলো,তার নজর ছিলো স্ক্রিপ্ট এর দিকে,ফলে তূর্যকে দেখতে পায়নি সে। ফলস্বরূপ তূর্যের কাঁধের সঙ্গে হালকা ধাক্কা খেলো মৌরিন। নিজে না পরলেও হাত থেকে স্ক্রিপ্টগুলো পরে গেলো তার। একনজর তূর্যের দিকে তাকিয়ে দ্রুত স্ক্রিপ্টগুলো তুলে নিলো সে। এরপর উঠে দাঁড়িয়ে বললো,
_”সরি,আমি খেয়াল করিনি।”

কপাল কুঁচকে তার দিকে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে রইলো তূর্য। এরপর ছোট করে উত্তর দিলো,
_”ইটস ওকে।”

পাশে দাঁড়িয়েই সম্পূর্ন বিষয়টা লক্ষ্য করলো আবরাজ। খটকা লাগলো তার। একই ঘটনায় তূর্য দিয়াকে ধমক দিলো আর মৌরিন কে বললো ‘ইটস ওকে’। নাহ, ব্যাপার টা নিয়ে ভাবতে হচ্ছে!

#চলবে?

#এক_ফালি_সুখ🌼 |২০|
#তাসনিম_জাহান_মৌরিন
বৃষ্টির কারণে শুটিং বন্ধ ছিলো দুদিন। অবশেষে আজ আবারো শুটিং সেটে হাজির হয়েছে সকলে। দিয়া নেই আজ, আছে আবরাজ,তূর্য আর বাকি সহকর্মীরা। আজকের শুটিং এ তূর্যকে কিছুটা ভিলেইন টাইপ লুক দেওয়া হবে, আবরাজ থাকবে স্বাভাবিক। তূর্য এমন চরিত্রে খুব একটা অভিনয় করেনা, তবে এটা অনেকটা বড় বাজেটের নাটক। রুবেল ও জোর করছিলো বলে রাজি হয়েছে তূর্য। পরবর্তীতে ভাগ্যক্রমে আবরাজও যুক্ত হয়েছে এই কাজে।
মৌরিন বরাবরেই সময়ের ব্যাপারে সচেতন,তাই সে আগেভাগেই এসে সবার স্ক্রিপ্ট গুছিয়ে নিচ্ছে। এমনকি সে এখন রুবেল কেও কিছুকিছু বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে থাকে।
তূর্য আজ দেড়ি করে আসছে, তবে আবরাজ আগেই এসেছে। মৌরিন তার কাছে স্ক্রিপ্ট নিয়ে গিয়ে বলে,
_”স্যার এটা আপনার আজকের স্ক্রিপ্ট, একটু দেখে নেবেন।”

আবরাজ স্ক্রিপ্টটা নিতেই মৌরিন চলে আসতে নেয়। তবে তাকে আটকে দেয় আবরাজ। সে উঠে দাঁড়িয়ে হাসিমুখে বলে,
_”আরে আমাকে স্যার ডাকছো কেন? ভাইয়া ডাকলেই পারো।”

মৌরিন সৌজন্যমূলক হেসে মাথা নাড়ায়। আবরাজ আবারো তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে,
_”তুমি মৌরিন?”

_”জি ভাইয়া।”

_”নাইস নেইম। কিন্তু আমি খুব অলস, মৌ বলেই ডাকি?”

_”আপনার যা ইচ্ছে।”

আর অপেক্ষা করেনা মৌরিন। অন্যান্য আর্টিস্ট দের স্ক্রিপ্ট দিয়ে দেয়। তূর্যও চলে এসেছে খানিকক্ষণ আগেই। মূলত তার ঘুম থেকে উঠতে দেড়ি হয়ে গেছে। সেটে এসে চেয়ারে বসতেই আবরাজ তাকায় তার দিকে। পায়ের উপর পা তুলে স্ক্রিপ্ট দেখতে দেখতে বলে,
_”ভালো অ্যাকটর হতে গেলে টাইম মেইনটেইন করা উচিৎ। তা না করেই কিছু মানুষ আবার নিজেকে বেস্ট অ্যাকটর দাবি করে,হাহ..”

তেতে ওঠে তূর্য। আবরাজ এর দিকে ঘুরে বলে,
_”অন্যের দিকে নজর না দিয়ে নিজের চরকায় তেল দেওয়া উচিৎ। কে কখন আসলো তার চেয়ে বেশি ম্যান্ডেটরি হলো কে কেমন অ্যাকটিং করলো,মাইন্ড ইট।”

আবরাজ স্ক্রিপ্ট এর থেকে চোখ সরিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলে,
_”এই এই, তুই আমার অ্যাকটিং নিয়ে কথা বলার সাহস পাশ কোত্থেকে রে? দুদিন এসেই ভাব দেখাস না এতো।”

তূর্যও আবরাজের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বুকে হাত গুঁজে বলে,
_”দুদিন হোক আর দশদিন, দর্শক কাকে এক্সেপ্ট করে সেটা তো পরিষ্কার দেখাই যাচ্ছে।”

আবরাজ দাঁত কিড়মিড় করে তাকায় তূর্যের দিকে। তূর্য কিছুটা ভাব নিয়ে চেয়ারে গিয়ে বসে। পায়ের উপর পা তুলে বসে রুবেল কে উদ্দেশ্য করে বলে,
_”খেয়াল রাখবেন রুবেল ভাই, নাটকে হিরোর বদলে আবার ভিলেইন কে যেনো দর্শক পছন্দ করে না বসে।”

অপমানিত বোধ করে চেয়ারে একটা লাথি মেরে অন্যদিকে চলে যায় আবরাজ। রুবেল কিছু না বলে কেবলই ছোট করে নিঃশ্বাস ছাড়লো, এদের এসব কেচ্ছা এর আগেও দেখেছে সে। মৌরিন ও সবটাই লক্ষ্য করলো, খুব একটা পাত্তা দিলোনা। সে নিজের কাজেই দৃষ্টি রাখছে, অন্যরা কি করলো না করলো তা নিয়ে ভাবা তার পছন্দ নয়।

সেই বাড়িতেই একটা রুমে তৈরি হচ্ছিল সবাই। কেউকেউ মেকআপ এ ব্যস্ত, কেউ আবার স্ক্রিপ্ট দেখছে। আপাতত ঘরে তূর্য,আবরাজ আর অন্য দুজন লোক রয়েছে। মৌরিন সেখানে এলো হাতে এক কাপ কফি নিয়ে, আবরাজ চেয়েছে এটা। মৌরিন সেটা আবরাজ এর সামনের টেবিলে রাখতেই আবরাজ মুচকি হেসে কফিতে চুমুক দিয়ে বেশ উৎসাহিত হয়ে বলে,
_”দারুণ হয়েছে তো মৌ, তুমি বানালে বুঝি?”

মৌরিন স্বাভাবিক ভাবেই উত্তর দেয়,
_”আমি কেন বানাতে যাবো? আমিতো শুধু দিয়ে গেলাম।”

_”ওহ আচ্ছা।”

আবরাজের এমন ‘মৌ’ সম্মোধন এ ভ্রু কুঁচকায় তূর্য। এরা আবার এমন সখ্যতা গড়লো কখন? তূর্য সেদিকে না তাকিয়েই মৌরিন কে ডাক দেয়। মৌরিন ও তার পাশে এসে বলে,
_”জি স্যার বলুন।”

_”চুলটা সেট করে দিয়ে যাওতো।”

কোনোরূপ বিস্মিত হলোনা মৌরিন। বরং শান্ত কণ্ঠে উত্তর দিলো,
_”সরি স্যার,এটা আমার কাজ নয়। আমি মেকআপ আর্টিস্ট কে বলে দিচ্ছি।”

থতমত খেয়ে গেলো তূর্য। আবরাজ এর দিকে তাকিয়ে দেখলো সে ঠোঁট চেপে হাসছে।
তূর্যকে থতমত খেতে দেখে বেশ মজাই পেলো আবরাজ, সে হাসিমুখে মৌরিনকে ডেকে পাশে থাকা ড্রেসগুলো দেখিয়ে বললো,
_”দেখো তো মৌ, কোনটা তে মানাবে?”

মৌরিন এবার আগের ন্যায় স্মিত হেসে উত্তর দেয়,
_”এটাও আমার কাজ নয় ভাইয়া। কসটিউম সিলেক্ট করার জন্য অন্য লোক আছে। আমি ডেকে দিচ্ছি।”

মৌরিন স্বাভাবিক,তবে মুখভঙ্গি অস্বাভাবিক হলো আবরাজ আর তূর্যের। মৌরিন যে একই সঙ্গে দুজনকেই হুইল পাউডার দিয়ে ধুয়ে দিলো তাতে দুজনের ই মুখ বন্ধ হয়ে গেলো। মৌরিন চলে গেলো সেখান থেকে, আবরাজ আর তূর্য একে অপরের দিকে একনজর তাকিয়ে নিজেদের কাজে মনোনিবেষ করলো। ঘরে থাকা বাকি দুজনের মিটিমিটি হাসি কারোর ই চক্ষুগোচর হলো না। কি একটা অবস্থা, শেষ পর্যন্ত কিনা দুজনকে একসঙ্গে লজ্জায় পরতে হলো!

______
শুটিং চলছে এখনো,তবে মৌরিন এর কোনো কাজ নেই। সে একপাশে বসে আছে,ফোনটা হাতেই ছিলো। একটা আননোন নম্বরে কল আসতেই মৌরিন কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো নম্বরটার দিকে,তবে এই নম্বর আগে দেখেছে বলে মনে পরলো না। ফলে ফোনটা রিসিভ করে বললো,
_”আসসালামু আলাইকুম। কে বলছেন?”

_”তাসনিম?”

জিজ্ঞাসু কণ্ঠে প্রশ্ন করলো অপর প্রান্তে থাকা ব্যক্তি। তাকে চিনতে পারলো মৌরিন, এই ভালো নামে তাকে কিছু নির্দিষ্ট মানুষই ডাকে।
স্তম্ভিত হলোনা মৌরিন, স্বাভাবিক থাকাটা যেন তার রন্ধ্রে মিশে আছে। অবশ্য সে আগে থেকেই আন্দাজ করেছিল। এই লোকের কল আসবে তার কাছে, আন্দাজ না করলেও অবশ্য কিছুই হতোনা তার।

_”বলছি।”

অপর প্রান্তে থাকা ব্যক্তি উৎকন্ঠা কন্ঠে বললো,
_”তুমি ফোন নম্বর চেঞ্জ করেছো? জানো, কত বেগ পেতে হয়েছে তোমার নম্বর জোগাড় করতে?”

_”কোনো কথা থাকলে বলো, নাহলে কেটে দিচ্ছি কলটা।”

_”না না তাসনিম,প্লিজ। আমার কথাটা একটু শোনো।”

_”শুনছি তো, বলো কি বলবে।”

_”তাসনিম আমি দেশে ফিরেছি, আমার সঙ্গে একবার দেখা করবে প্লিজ? আই ওয়ান্ট টু টেল ইউ সামথিং।”

_”বাব্বাহ! আমার সঙ্গে তোমার কথা আছে মিস্টার নাহিদ শেখ? বাট আনফরচুনেটলি তোমার অনুরোধ রাখতে পারছি না।”

_”আমি নিজের মধ্যে ছিলাম না তাসনিম।”

_”কিন্তু আমি সম্পূর্নভাবে নিজের মধ্যে ছিলাম, আর এখনো নিজের মধ্যেই আছি।.. কলটা রাখলে খুশি হবো।”

_”তাসনিম..”

নাহিদ আর কিছু বলার আগেই মৌরিন বলে ওঠে,
_”আমার মায়ের ফোনে কল করে বিরক্ত না করার অনুরোধ রইলো।”

মৌরিন নিজেই কেটে দিলো কলটা। তার মন মেজাজ ঠিক ই আছে। পানির পিপাসা পেয়েছে খুব। তাই উঠে গিয়ে পাশে টেবিলে থাকা নিজের ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে সে। পরবর্তীতে বোতলটা রাখতে গিয়েই তার চোখ যায় ব্যাগে থাকা একটা সাদা রঙের ছোট্ট কাগজের দিকে। ভ্রু কুঁচকে কাগজটা বের করে মৌরিন। দুটো ভাজ খুলতেই কমলা রঙে লেখা কিছু লাইন দৃশ্যমান হয়। কমলা রঙ দিয়ে কে কি লিখলো? লেখাটুকু এমন ছিলো,

মৌরিফুল,
মানুষের চেহারা অনেক ধরণের হয়। অনেকের গায়ের রঙ সুন্দর হয়, আবার অনেকের চেহারার গঠন সুন্দর হয়। অনেক ক্ষেত্রে বলা হয়, গায়ের রঙ চাপা হলেও মুখে মায়াবী ভাব। আনফরচুনেটলি তোমার মধ্যে এর একটাও নেই। তবুও কপালের মাঝে সেই কালো রঙের ছোট্ট টিপটা তোমার ক্ষেত্রে এতটা মানানসই কি করে হলো?

ইতি
আগন্তুক

চোখেমুখে ইষৎ বিরক্তি ফুটে ওঠে মৌরিন এর। এক মুহূর্ত অপেক্ষা না করে চিরকুট টা নিয়ে যায় রুবেল এর নিকট। শুটিং ততক্ষণে শেষ হয়েছে। রুবেল মৌরিন কে এভাবে আসতে দেখে বলে,
_”কি হয়েছে মৌরিন? কিছু বলবে?”

মৌরিন চিরকুট টা রুবেল এর সামনে ধরে বলে,
_”কিছুক্ষন আগে পর্যন্ত এটা আমার ব্যাগে ছিলোনা। তারমানে এখানকার কেউই নিশ্চই এটা লিখে আমার ব্যাগে রেখে গেছে। কে লিখেছে জানিনা, তবে শুটিং সেটে এভাবে ব্যাগে চিরকুট রেখে দেওয়াটা আমি পছন্দ করছিনা ভাইয়া। অনুগ্রহ করে সবার উদ্দেশ্যে বলবেন, সেটে কারোর সঙ্গেই এমনটা না করতে।”

#চলবে?