এক ফালি সুখ পর্ব-২৩+২৪

0
296

#এক_ফালি_সুখ🌼 |২৩|
#তাসনিম_জাহান_মৌরিন
আগন্তুক কে নিয়ে দু সেকেন্ড ভাবার ও প্রয়োজন মনে করলোনা মৌরিন। এমনিতেও আজ তার অনেক কাজ। বাচ্চা দুজনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরো পাঁচজন। প্রত্যেকের ই বয়স সাত এর নিচে। তাদের সবাইকে একে একে সবকিছু বুঝিয়ে দেওয়ার কাজটা মৌরিন এর কাঁধে এসেই পরলো। সে চাইলে এড়িয়েও যেতে পারতো,তবে যায়নি। সেটের সবাই মৌরিন কে এখন অনেকটা পছন্দ করছে, রুবেল তো অনেক ক্ষেত্রেই তাকে আলাদাভাবে নিজের কাজে সাহায্য ও করতে বলছে। মৌরিন সন্তুষ্ট এতে, তাই সেও খুশিমনে কাজ করছে।

প্রায় ত্রিশ মিনিট পর একটু বিরতি পেলো মৌরিন। এবার ঘটলো অন্য এক ঘটনা। ঐ বাচ্চাগুলোর মধ্যে একটা বাচ্চা ছুটে এসে মৌরিন এর হাতে একটা কাগজ ধরিয়ে আবারো শুটিং এর দিকে চলে গেলো। কিছুক্ষন ভ্রুকুঞ্চিত করে তাকিয়ে থেকে কাগজটা খুললো সে। ভিন্ন বিষয় কেবল একটাই। আজকের লেখাটা কালো কালিতে, বেশ স্পষ্ট অক্ষরে। আগেরটার সঙ্গে হাতের লেখা পুরোপুরি মিলছে না। আজ এই কাগজটাতে কেবল একটাও লাইন লিখা,
“মৌরিন,তুমি এমন কেন? অন্যরকম কেন নও?”

এবার কয়েক সেকেন্ড লেখাটার দিকে তাকিয়ে রইলো মৌরিন। এই প্রথমবার লেখাটা পড়ে কিঞ্চিত হাসি পেলো তার, কারণও আছে বটে। এই কথাটা সে প্রথমবার শুনছে না, এর আগেও ফ্রেন্ড সার্কেলের থেকে এই প্রশ্নটা শুনতে হয়েছে তাকে।
তবে হাসলো না মৌরিন, ভাজ করলো চিরকুট টা। দৃষ্টি সরিয়ে তাকালো একবার শুটিং চলতে থাকা স্থান এর দিকে। আগন্তুক এর পরিচয় জানার জন্য নয়, কোন বাচ্চাটা এটা দিয়ে গেলো তাকে দেখার জন্য।
আগন্তুক এর পরিচয় জানার ইচ্ছে হলোনা মৌরিনের। যে নিজের পরিচয় লুকিয়ে রাখতে চাইছে তার পরিচয় না জানাটাই ভালো।

আজ দুটো নয় বরং তৃতীয়বারের মতো আরো একটি চিরকুট এলো। এবারো নিয়ে এলো একটি বাচ্চা, সে বেশ ভালো করেই তা এগিয়ে দিলো মৌরিন এর দিকে। মৌরিন কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বলে,
_”কে দিয়েছে সেটা জানাতে হবেনা। তবে এরপর থেকে কেউ কিছু দিলে সেটা নিয়ে আসবেনা। ঠিক আছে?”

বাচ্চাটা মাথা নাড়ালো। তবে ফিরে যাওয়ার আগে চিরকুটটা মৌরিন এর হাতে গুঁজে ছুটে পালালো। বাচ্চাটার কাজে স্মিত হাসলো মৌরিন। চিরকুট খুলে দেখার ইচ্ছে হলোনা,তবুও খুললো।

“আসল মৌরিফুল কিন্তু দেখতে বেশ সুন্দর,তবে অনেকটাই অবহেলিত। তুমি তো দেখতে মোটেই সুন্দর নও, তোমার তো আরো বেশি অবহেলিত হওয়া উচিৎ। তবুও ইনডিরেক্টলি আমার দ্বারা তুমি প্রশংসিত হয়ে যাচ্ছ বারংবার। এটা ঠিক হচ্ছেনা মৌরিফুল, মোটেই ঠিক হচ্ছেনা..”

একটা জিনিস ভালো লাগলো মৌরিন এর। আগন্তুক সরাসরি বলে দিচ্ছে তুমি সুন্দর নও। মাথা দুদিকে সামান্য নাড়িয়ে পাশে তাকাতেই দেখলো তার ব্যাগের নিচে আরো একটা কাগজ। অদ্ভুত, এটা কখন এলো?
ব্যাগটা উঁচু করে কাগজটা হাতে নিলো মৌরিন। একটা বিষয় খেয়াল করলো, আজকে শেষের দুটি চিরকুট এবং বর্তমান টাও আগের গুলোর থেকে ভিন্ন। এই তিনটে চিরকুট লেখা হয়েছে কালো রঙের কালি দিয়ে,তবে তাড়াহুড়ো করে লেখা হয়েছে তা কিছুটা বোঝা যাচ্ছে। শেষ চিরকুট এ লেখা,
“তুমি তবুও হাসলে না, বিরক্ত ও হলেনা। বলা হয় নিরবতা সম্মতির লক্ষন, তোমার শান্ত রূপটাকে সম্মতি হিসেবে নিয়ে চাইলে আরো অনেক কিছু লিখতে পারতাম। তবে সেটা নিচ্ছি না। কারণ, তুমি মানুষটাই ভিন্ন। সাধারণ কোনো কথা তোমার সঙ্গে যায়না। আর এটাই আমার সহ্য হচ্ছেনা, তোমার মাঝে এতটুকু পরিবর্তন এলে এই চিরকুট টা দিতাম না। তুমি দিতে বাধ্য করছো, সব কথাগুলো তোমার নিকট পৌঁছে দিতে ব্যাকুল হয়ে উঠছি মৌরিফুল। ভালো লক্ষন নয় এগুলো, ইঙ্গিত করে অন্যকোনো অনুভূতির। বোকা নই আমি, যে নিজের অনুভূতি বুঝতে পারবো না। তবে তোমায় বলি, সাধারণ হতে শেখো মেয়ে। অসুন্দর মেয়েদের এমন অসাধারন হতে নেই।”

এর মাঝেই অন্য এক কাগজে আরো কিছু লিখা,

“দেখেছো, কাব্যিক হয়ে যাচ্ছি মৌরিফুল। তুমি চলে যাও তো,থেকোনা এখানে। আর কোনো কাজ নেই? এখানে কেন কাজ করতে হবে? আচ্ছা, আমার পরিচয় জানার কি একটুও ইচ্ছে নেই তোমার মধ্যে? লেখাগুলো পড়ে আন্দাজ করা যায়? আমি কিন্তু নিজের মতো করেই লিখেছি সবকিছু, লুকোতে চাইনি নিজেকে। বুঝে গেলে ভালো, না বুঝলে বলা যায়না। কোনদিন নিজে থেকেই পরিচয় দিয়ে বসি..”

ডাক পড়লো শুটিং এর জায়গায়। চিরকুটগুলো ভাজ করে সেদিকে পা বাড়ালো মৌরিন। আন্দাজ করতে পারলো কি এই চিরকুটদাতা কে? নাহ, চাইলোই না তাকে খুজে বের করতে। জানতে ইচ্ছে হলোনা তার পরিচয়।
সাধারণ শব্দটা মৌরিন এর সঙ্গে যায়না, এদিক থেকে আগন্তুক খুব একটা ভুল কথা বলেনি।

_______

সন্ধ্যাবেলা স্টুডেন্ট এর বাসায় এসেছে মৌরিন। তবে সেই স্টুডেন্ট নাকি তার আন্টির বাসায় গিয়েছে, আসবে দশমিনিট বাদে। তাই চেয়ারে বসে তার জন্যই অপেক্ষা করছে মৌরিন। ফোনটা হাতে, দৃষ্টিও ফোনের দিকেই আবদ্ধ। ঠিক সেই সময়ই ফেইসবুক এ একটা ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট এলো। আইডির নাম “Abraz Shah”, ফেইক আইডি কিনা সিওর হতে আইডির ভিতরে প্রবেশ করলো মৌরিন। নাহ,ফেইক আইডি নয়। শতভাগ আসল আইডি আবরাজ এর। কিছুক্ষন চিন্তা করে রিকুয়েস্ট এক্সেপ্ট করলো মৌরিন। যেহেতু পরিচিত, তাই রিকুয়েস্ট এক্সেপ্ট না করলে বিষয়টা খারাপ দেখায়।

মৌরিন এর আইডিতে অনেক প্রায় অনেকদিন আগের একটা স্ট্যাটাস দেওয়া ছিলো।
“সম্পর্ক যদি ভাবনার সাথে মিশে যায়,
তবে তা ভাঙা মু’শকিল!
আর যদি তা স্বার্থের সাথে মিশে যায়,
তবে তা টেকানো মু’শকিল!” _রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

মিনিট দুয়েক এর মাথায় আবরাজ সেই স্ট্যাটাস টা মৌরিন এর ইনবক্স এ শেয়ার করে বলে,
_”ওয়াও, দারুণ লেখো তো তুমি মৌ।”

মৌরিন স্বাভাবিকভাবে রিপ্লাই দেয়,
_”এটা আমার নয়, রবী ঠাকুর এর লেখা। উল্লেখ করা ছিলো তো,ভাইয়া বোধ হয় খেয়াল করেন নি।”

সঙ্গে সঙ্গেই অপর পাশ থেকে সঙ্গে সঙ্গেই রিপ্লাই এলো,
_”ওহ। কিন্তু তুমিও যথেষ্ট ট্যালেন্টেড,চাইলে নিজেও লিখতে পারো।”

রিপ্লাই করেনা মৌরিন, স্টুডেন্ট ও চলে এসেছে ততক্ষণ। তাই ফোনটা ব্যাগে রেখে পড়ানোতে মনোযোগ দেয় মৌরিন।

_____
তূর্যের হাতে তার ফোন,সেখানে দৃশ্যমান মৌরিন এর আইডি। ফ্রেন্ড লিস্ট পাবলিক করা,তার একদম শুরুতেই আবরাজ এর আইডি। মৌরিন নিশ্চিত ওকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট দেয়নি, আবরাজই দিয়েছে। আর ও এক্সেপ্ট ও করেছে? রাগ হলোনা তূর্যের, তবে অবাক হলো। আবরাজ কেন মৌরিন এর সঙ্গে এত ভালো ভালো কথা বলছে সেটা বুঝতে পারলো না তূর্য, এত ভদ্রলোক নয় আবরাজ। কারোর সঙ্গে এমনি এমনিই অত্যাধিক মিশুক তো সে হতে যায়না। সেখানে মৌরিন কে শুটিং সেট এ মৌ মৌ বলে ডাকছে,আবার ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট দিচ্ছে নিজে থেকে! কারণটা উপলব্ধি করতে ব্যার্থ হলো তূর্য।

#চলবে?

#এক_ফালি_সুখ🌼 |২৪| [বোনাস পর্ব]
#তাসনিম_জাহান_মৌরিন
বাথরুমে বেসিনের সামনে দাঁড়িয়ে কয়েকবার মুখে পানির ঝাপটা দিলো মৌরিন। চুলে বেণি করা,তবে সামনের ছোট চুলগুলো ভিজে গেছে কিছুটা। খানিকক্ষণ ওভাবেই দাঁড়িয়ে চোখ বন্ধ করে রইলো মৌরিন, নিজেকে পুরোপুরি শান্ত রাখার প্রয়াস চালালো সে। ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে ঘরে চলে এলো। বিছানার উপর ছড়ানো অনেকগুলো কাগজ। এখন পর্যন্ত আগন্তুক এর থেকে পাওয়া ছয়টি চিরকুট ই সেখানে রাখা আছে। তার পাশেই দুটো এ ফোর সাইজের কাগজ। মাঝ বরাবর কিছু লেখা। এগুলো শুটিং এর সময় লেখা হয়েছিলো, শুটিং এর প্রয়োজনে তূর্যকেই লিখতে হয়েছিল অল্পস্বল্প, আরো দুজন লিখেছিলেন সিন এর প্রয়োজনে। তার মধ্যে দুটো কাগজ স্ক্রিপ্ট এর সঙ্গে কোনোভাবে মৌরিন এর ব্যাগে চলে এসেছে।

কিছুক্ষন আগে,
আগামীকাল এর শুটিং এর স্ক্রিপ্ট বাড়িতেই নিয়ে এসেছিল মৌরিন,সবকিছু একে একে গুছিয়ে নেওয়ার সময় ব্যাগে থাকা চিরকুটগুলোর দিকে চোখ যায় তার। সবগুলোই একই জায়গায় রেখে দেওয়া, দ্বিতীয়বার পড়েনি মৌরিন। তবে ফেলে দেওয়া টাও হয়ে ওঠেনি। তবে ওগুলো ব্যাগে রাখার ইচ্ছে হলোনা, বের করলো ছিড়ে ফেলবে বলে। ঠিক তখনি স্ক্রিপ্টগুলোর মাঝে থাকা সেই দুটো কাগজ চোখে পরে মৌরিন এর। কিছু একটা খটকা লাগতেই সেটা হাতে তুলে নেয় সে, এরপর সেই আগন্তুক এর দেওয়া আজকের চিরকুটগুলোর মধ্যে একটা খুলে ধরে সে। দুটো কাগজ পাশাপাশি আনে মৌরিন,কয়েক সেকেন্ড পরখ করতেই নিশ্চিত হয়ে যায়, কাগজের উপরের হ্যান্ডরাইটিং এর সঙ্গে চিরকুট এর হ্যান্ডরাইটিং হুবহু মিলে যাচ্ছে। আর সেই হ্যান্ডরাইটিং আর কারোর নয়, ইলহাম আবসার তূর্যর।
নিজের গতানুগতিক ধারা থেকে বঞ্চিত হয়ে চমকালো মৌরিন। বিছানা থেকে সেই প্রথম দিনের চিরকুটটা এনে মিলালো, নাহ, এটার সঙ্গে মিল নেই। কাগজগুলো নামিয়ে ফেললো মৌরিন,বুঝতে পারলো তার জন্য স্থির থাকাটা কঠিন হয়ে পরছে।

মুখ মুছে পুনরায় বিছানায় গিয়ে বসে মৌরিন। হাতের লেখা না মেলার কারণটাও হয়তোবা বুঝতে পারলো। আগের দুদিন সময় নিয়ে অন্যরকম করে লিখেছিল। আজ সেটা হয়নি, আজ চিরকুটগুলো লেখা হয়েছে তাড়াহুড়োর মধ্যে, তাই নিজের আসল হাতের লেখাই প্রকাশ পেয়েছে সেখানে।

সবকিছু গুছিয়ে রেখে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো মৌরিন। বর্তমানেও সে অনুভূতি শূন্য। আগন্তুক কে চেনার চেষ্টা করলেও হয়তো তূর্যের নাম কখনো তার মাথাতেই আসতো না। বেশ খানিকক্ষণ ভাবার পর এমন চিরকুট দেওয়ার একটা কারণ আবিষ্কার করলো মৌরিন। তূর্য তাকে সহ্য করতে পারেনা, কথাটা শতভাগ সত্যি। বারবার অপমান করতে চাইলেও তাতে সক্ষম হয়নি তূর্য। তাই হয়তো রাগের কারণে এমন প্ল্যান করেছে সে। অনুভূতি খুব খারাপ একটা জিনিস, আর কিছু অনুভূতি মানুষকে কষ্টই দিয়ে যায়। তূর্য হয়তো তেমনটাই চেয়েছে।
এমনটা ভেবে থাকলে সে এখনো মৌরিনকে চিনতেই পারেনি। বাকিদের মতো নরম মনের মেয়ে নয় সে, তাকে ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়া অতটা সহজ নয়।
আর ভাবতে চাইলো না মৌরিন, এমনিতেই বেশি ভেবে ফেলছে। এত ভাবনা ভালো নয়, একটা বিষয় নিয়ে ভাবতে চাইলে তা নিয়ে আরো অধিক ভাবনা আপনাআপনি চলে আসে মাথায়। এ’ই হয়তো মস্তিষ্কের নিয়ম।

_______
চতুর্থ দিন এর শুটিং এ প্রায় সবাই ই এসেছে। দিয়া, তূর্য, আবরাজ সকলেই আছে। মৌরিন ও নিজের মতোই কাজ করছে, চিরকুটদাতাকে ধরে ফেলার পরও তার মাঝে কোনো ভাবান্তর নেই। এমনিতেও তূর্যের সঙ্গে খুব একটা কথা বলার প্রয়োজন হয়না, কারোর সঙ্গেই কথা বলতে হয়না সেভাবে। তাই সে অন্যদিনের মতোই রইলো, তূর্য বুঝতেও পারলো না সে ধরা পরে গেছে।

একটা অবাক করা ব্যাপার লক্ষ্য করলো সকলে, দিয়া আজ তূর্যের আশেপাশে ঘুরছে না, অন্যদিনের মতো তার গা ঘেঁষার চেষ্টা করছে না। কারণটা আবরাজ না জানলেও তূর্য বেশ ভালো করেই জানে। গতকাল দিয়ার উপর বিরক্ত হয়ে বেশ ভালোই ধমক দিয়েছিল তাকে, সেটা কারো নজরে আসেনি। দিয়াও তার জন্যই মনের কষ্টে আজ অভিমান প্রদর্শন করছে, সে হয়তো ভাবছে তূর্য তাকে মানাতে আসবে। তবে তেমনটা হলোনা, বরং তূর্য শান্তমনে চিরকুট লিখলো সকলের নজর এড়িয়ে।

সবাই আজ নতুন একটা বিষয় নিয়ে আলোচনা করছে। আগামী মাসেই বেশ বড়সড় একটা অ্যাওয়ার্ড শো আছে। সেখানে ছোট পর্দার বেস্ট অ্যাকটর হওয়ার দৌড় এ আবরাজ এবং তূর্য দুজনেই রয়েছে। তাদের সঙ্গে আরো একজন রয়েছে, তবে সকলেই জানে, হয় তূর্য নাহয় আবরাজ। এদের মধ্যেই একজন অ্যাওয়ার্ড পাবে। ফাইনাল নোমিনেশন প্রকাশ পেলো গতকাল,তাই আজ এ নিয়ে কথা হচ্ছে বেশি। আবরাজ আর তূর্য এসব কথার মাঝে এমনভাবে তাকাচ্ছে একে অপরের দিকে যেন এখনি অন্যজনের থেকে অ্যাওয়ার্ড ছিনিয়ে নেবে। এ যেন এক যুদ্ধক্ষেত্র,কে বিজয়ী হয় সেটাই জানার অপেক্ষা।

আগের দিনের মতোই মৌরিন এর ব্যাগ এর নিচে চিরকুট রেখে দেওয়া হলো, তূর্য শুটিং এ থাকলেও লুকিয়ে নজর রাখলো তার উপর। মৌরিন এলো কিছুক্ষন পর, চিরকুট এর দিকে তার চোখ পরলো আরো কিছুক্ষন পরে। ব্যাগ সরিয়ে সেটা হাতে নিলো ঠিকই,দু সেকেন্ড তাকিয়েও রইলো। তবে খুললো না চিরকুট টা,রেখে দিলো আগের জায়গায়। নিজে চুপচাও চেয়ারে বসে ফোন স্ক্রোল করলো কিছুক্ষন, এরপর উঠে অন্যদিকে চলে গেলো।

অবাক হলো তূর্য, তবে রাগ হলোনা তার। রাগটাও যেন আজকাল তার সঙ্গ দিচ্ছেনা, তার থেকে যথাসম্ভব দূরেই থাকছে। অস্থির হলো তূর্য, আবারো লিখলো চিরকুট, একটা নয় দুটো চিরকুট একসঙ্গে লিখলো। এবার তা ব্যাগের ভিতরেই রাখলো কারোর সাহায্যে। এরপর শুটিং এ ব্যাস্ত থাকায় আর মৌরিন এর দিকে নজর রাখতে পারেনি, সম্ভব হয়নি।

______
বাড়িতে এসে মৌরিন সেই দুটো চিরকুট পেলো ঠিকই,তবে পড়লোনা। নিজেকে নিয়ন্ত্রনে রাখছে সে। বলা তো যায়না, যতই কঠিন মনের হোক না কেন সর্বোপরি সে একজন মেয়ে। এটা এক চিরন্তন সত্য। প্রকাশ করতে না চাইলেও তার মাঝেও অনুভূতি নামক বস্তু রয়েছে, কোনোভাবে তাকে নিজের নিয়ন্ত্রনহীন হতে দিতে চায়না মৌরিন। আরো তূর্যের মতো অহংকারী ব্যক্তির জন্য কখনোই না। তাই সে চিরকুটগুলো পড়ছেই না।

রাত প্রায় বারোটা বাজে, কিছু কাজ শেষ করে সবে ফোনটা হাতে নিলো সে। মেসেঞ্জার এ ঢুকতেই দেখলো মেসেজ রিকুয়েস্ট এর সংখ্যা একটা বৃদ্ধি পেয়েছে। তা চেক করলো মৌরিন, একটা আইডি থেকে মেসেজ এসেছে ঠিকই, তবে আইডি টা বর্তমানে ডিঅ্যাক্টিভেট, নামটাও দেখতে পেলোনা মৌরিন। তবে মেসেজ টা চেক করলো। বেশ বড় একটা মেসেজ, বাংলিশ এ লেখা সেটা। মেসেজটা পড়তে লাগলো মৌরিন,

_”পরের দুটো চিরকুট ও পড়োনি তাইনা? জানিনা আমি, তবে মনে হলো। একটা যেহেতু পড়োনি, এরপর যাই দেই না কেনো পড়বেনা তুমি। এভাবেই কি নিজের বিরক্তির প্রকাশ করছো মৌরিন? আমি ভেবে রেখেছিলাম, তুমি বিন্দুমাত্র বিরক্ত হলে চিরকুট দেওয়া বন্ধ করে দেবো আমি। অথচ আমি কত সস্তা হয়ে যাচ্ছি! ভেবেও সেই কাজ করতে পারছিনা। রাগ ও করতে পারছিনা তোমার উপর, কষ্ট পাচ্ছি কিনা তাও জানিনা। ধরতে পেরেছো, আমি কে? জেনে গেলে অখুশি হবোনা, তবে আমার সামনে তা প্রকাশ করোনা ভুলেও। ইগো তে লাগবে আমার, ঐ একটা ক্ষেত্রে আমি একদমই অন্যরকম। তোমাকে ঠিক কি বলতে চাইছি, সেটাও বুঝতে পারছি না। আচ্ছা, আমার কি মায়ের সাথে কথা বলা উচিৎ? তোমার মতে তো,মায়ের কাছে সবকিছুর সাজেশন পাওয়া যায়। তাহলে তাই করি নাহয়, তবুও যদি একটু স্থির হতে পারি।
যদি না পড়ে থাকো তবে পড়োনা চিরকুটগুলো, ফিরিয়ে দেওয়া জিনিস আমি দুবার দিতে পছন্দ করিনা।
এতকিছু যে বলি আমি, তোমার ইচ্ছে করেনা প্রতিত্তর করতে? এতই অনুভূতিহীন? তবে তুমি কোনো উত্তর দিওনা,তাই চাই। একপাক্ষিক ভাবেই আমি কথা বলি, কেমন?”

#চলবে?