সাহেব_বিবি_গোলাম পর্ব-০৫

0
1452

#সাহেব_বিবি_গোলাম
#নুশরাত_জেরিন
#পর্ব:৫
,
,

রাগের মাথায় শুভর দিকে তেড়ে গেলাম আমি।যতো নষ্টের মূল এই ছেলেটা।
কে বলেছিলো আমায় রাগাতে?কে বলেছিলো পা য়ে পা দিয়ে ঝগড়া করতে?
ঝগড়া না করলে তো আর এই পরিস্থিতিতে পরতে হতো না।আমি তেড়ে গেলেও পরে চুপ হয়ে গেলাম।
শুভর মুখটাও চুপসে আছে।এমন কিছু হতে পারে সেও হয়তো বুঝতে পারেনি।
তাকে দেখে আমার যথেষ্ট মায়া লাগলো।
তার মুখ গোমড়া করা চেহারা দেখে আমিও ঠোঁট ফুললাম।
শুভর পাশের বেন্ঞ্চটায় বসে বললাম,

—এবার কি হবে?

শুভ আমার দিকে করুন চোখে তাকালো।
দোকানিকে উদ্দেশ্য করে উচ্চস্বরে বললো,

—মামা,আবার ক’টায় বাস আসবে?

দোকানি বললো,

—আইজকা আর কোনো বাস আসবো না।আবার কাইলকা ১০ টায় যাইবো।

আমি কথাটা শুনে আরও হতাশ হলাম।সাথে শুভও।
শুভ উঠে দাড়াতে বললো,

—তাহলে আর কি করার,চলো!

—কোথায়?

—তোমায় বেচে দিতে।

আমি চমকে উঠলাম।বিস্ফোরিত নয়নে তার দিকে তাকালাম।দেখি সে মিটিমিটি হাসছে।
নিশ্চিত বেটা আবার দুষ্টুমি করছে।
এমন একটা পরিস্থিতি পরেও শয়তানটার শয়তানি যায়নি?আমি ভ্রু কুঁচকে তাকালাম।
বললাম,

—ফাইজলামি বাদ দিয়ে বলুন কোথায় যাবো?

শুভ ও মুখটা সিরিয়াস করলো।হাটতে হাটতে বললো,

–হুমম ফাইজলামি বাদ।যদিও তোমায় বেচতে চাইলেও কেই বা কিনবে?
যে ঝগরুটে!

আমি তেড়ে যেতে গিয়েও থেমে গেলাম।
চোখ বন্ধ করে বড়বড় শ্বাস নিলাম।এই মূহুর্তে আমি ঝগড়া করতে চাচ্ছিনা।একদমই না।একটু আগেই ঝগড়ার ফলে বাস চলে গেছে।এখন না জানি আবার কি হয়।
তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি এই ছেলের কথায় আর রাগবো না।সব মনের ভেতর হজম করবো।

আমায় চুপ থাকতে দেখে শুভ এগিয়ে এসে বললো,

—ঝগড়াটে চুপ কেনো?

আমি মিষ্টি হেসে বললাম,

—কারন ঝগড়াটের ঝগড়া করার মুড নেই।

শুভ আমার কথার ধরন দেকে একটু বিস্মিত হলো যেনো।
আমার মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে সেও মিষ্টি হেসে বললো,

—তার মানে মানছো তুমি ঝগড়াটে?

আমি মাথা নাড়লাম।বললাম,

—হ্যাঁ মানলাম।এবার তো বলুন আমরা যাচ্ছি টা কোথায়?

শুভ হাটতে হাঁটতে নির্বিকার ভঙ্গিতে বললো,

—এখন তো কোন বাস নেই, তাই ভাবলাম আশেপাশের কোন হোটেল বুক করে তোমায় নিয়ে রাত কাটিয়ে আসি।

আমার পা আপনাআপনি থেলে গেলো।মুখ হা করে দাড়িয়ে পরলাম আমি।
আমাকে দাড়াতে দেখে শুভ পিছু তাকালো।ফিরে এসে বললো,

—কি হয়েছে?

—আপনি কি বললেন?

—কি বললাম?

একটু ভেবে বললো,

—ওহ এইকথা?আসলে কথার মাঝে একটা ওয়ার্ড স্কিপ করে গেছি,তুমি এড করে নাও।
কথাটা হবে,
হোটেলে রুম বুক করে দুজনে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে রাত কাটাবো।
এবার ঠিক আছে?

বলেই শায়তানি মার্কা হাসি হাসতে লাগলো।
আমি চোখ মুখ কুঁচকে দাড়িয়ে রইলাম।
সে আবার এক ভ্রু উঁচু করে বললো,
—তুমি কি ভেবেছিলে?

আমি চোখ গরম করে তাকালাম।দাঁতে দাত কিড়মিড় করে বললাম,

—দয়া করে মুখটা বন্ধ করুন প্লিজ।

শুভ কিছু বলতে গেলে আমি আবারও বললাম,

—প্লিজ!

শুভ থামলো।একটা আঙুল ঠোঁটের উপর দিয়ে আমায় ইশারায় বোঝালো,ঠিক আছে কিনা?আমি চোখ ফিরিয়ে নিলাম।
এতো কথা আমি জিবনে বলেছি কিনা সন্দেহ।
ঝগড়া করা দুরের কথা কারো সাথে তর্কাতর্কিতেও যাইনি কখনো।আর এখন কিনা?আমাকে বাড়ির সবাই নম্র ভদ্র মেয়ে বলেই জানে।আর এখানে এসে কিনা নাম পেলাম ঝগড়ুটে?
প্রিতম শুনলে কি ভাবতো?
ও তো হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেতো।
আচ্ছা তার মায়াবতীকে কেউ রাগাচ্ছে,ঝগড়া করছে এটা শুনলে প্রিতম কি করতো?
সে কি শুভর উপর রেগে যেতো?নাকি তার মায়াবতীর ঝগরুটে রুপ বাইরে বের করার জন্য শুভকে ধন্যবাদ দিতো?
আমি চিন্তায় পরে গেলাম খুব।
অন্ধকার রাস্তায় চারদিকে ভূতুড়ে পরিবেশ।
গাছপালার ছায়াগুলোও কেমন অদ্ভুত দেখাচ্ছে।
শুভর হাতে ফোনের টর্চ।
সে সামনে সামনে হাটছে।
তার পিছুপিছু প্রায় দৌড়াচ্ছি আমি।
তবুও শুভর সাথ ধরতে পারছিনা।ছেলেটা এতো জোরে হাটতে পারে?
এমন গা ছমছমে পরিবেশে নিজেকে ভয় পাওয়ার হাত থেকে বাঁচানোর জন্য প্রিতমের কথা ভাবতে লাগলাম।
হঠাৎ সামনের গলির মোড়ে কিছু মাতাল গোছের লোককে দাড়িয়ে থাকতে দেখে শুভ দাড়িয়ে পড়লো।
পিছু ফিরে আমার অবস্থান দেখে আমার কাছে এসে দাড়ালো।
পাশাপাশি হাঁটতে লাগলো।
আমিও মাথা না ঘামিয়ে তার পাশাপাশি হাটতে লাগলাম।
মোড়টা পেরোনোর সময় বুঝলাম শুভর হঠাৎ এমন কাজের কারন।
মাতাল লোকগুলো আমাকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো,

—উফফ্,রাত বিরাতে কে যায় রে,
কি খাসা শরীর।
যদি আইজকার জন্য পাওয়া যাইতো!

পাশ থেকে আরও কয়েকজনও সাথ দিলো।তারা বিশ্রী বিশ্রী ভাষা ব্যবহার করতে লাগলো।
আমি দ্রুত হাটতে চাইলাম কিন্তু পারলাম না।
শুভ আমার হাত ধরে দাড় করালো।
টেনে লোকগুলোর সামনে নিয়ে গেলো।
আমি ভীতু চোখে শুভর দিকে তাকালাম।লোকটার সাথে আমি যেরকম ঝগড়া করেছি আজ তার প্রতিশোধ নেবে না তো?
শুভ চোখ দিয়ে আশ্বস্ত করলো।বোঝালো আমি থাকতে তোমার কিচ্ছু হবেনা।
আমিও চোখের দিকে তাকিয়েই নিশ্চিন্ত হলাম।কেনো হলাম জানিনা।
শুভ আর আমাকে দেখে একটা লোক এগিয়ে আসলো।
আমার দিকে হাত বাড়াতে যেতেই শুভ হাত মুচড়ে ধরলো।
বললো,

—এ ফুলে হাত ছোয়ানোর অধিকার আমি ছাড়া আর কারো নেই।কেউ আসলে তাকে দুমড়ে মুচড়ে ফেলতেও আমি দ্বিতীয় বার ভাববো না।

তার লাল চোখের দিকে তাকিয়ে লোকগুলো তো দুরের কথা আমি নিজেও বেশ ভয় পেয়ে গেলাম।
ততক্ষণে বাকিদের মেরে তাদের অবস্থা বেহাল করে ফেলেছে শুভ।
আমি শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছি,হাসি খুশি দুষ্টু ছেলেটার এক অন্য রুপ।
আচ্ছা সত্যি এটাই কি তার আসল রুপ?নাকি অন্যটা?

,
চলবে……