#দুই_হৃদয়ে_সন্ধি
#পর্বঃ১৯
#Nova_Rahman
“তরু সেই সাতসকাল থেকে মেক-আপ করা শুরু করেছে। আজকে তরু তার বাবার সাথে মেডিকেল যাবে। মেডিকেলে গিয়ে নীহারিকা সামনে নিজের আসল পরিচয়টা তরু দিবে। এতোদিন নীহারিকা তরুকে ছোটলোক বলে অপমানেই করে গেছে। আজ সময় এসেছে নিজেকে তুলে ধরার। আজকে বাবা তাতান চৌধুরীর সাথে, তরু মেডিকেলে যাবে একটা প্রোগ্রামে। তরু মেডিকেলে চান্স পেয়েছে। এই খুশিতে তরুর মন এমনিতেই বাক-বাকুম অবস্থা। মেডিকেলের ভর্তির প্রস্তুতি তরুর খুব ভালো ছিলো। তাই তরুকে চান্স পেতে এতো বেগ পোহাতে হয়নি। এই খুশিতে আজকে তাতান চৌধুরী তরুকে নিজ দায়িত্বে নিজের মেডিকেল নিয়ে যাবেন। ”
“তাই এতো আহামরি করে সাজগোছ করা।”
__সব খুশির মধ্যে তরু কোথায় যেনো একটা শূন্যতা অনুভব করে। তরু সময় নিলো। সময় নিয়ে ভাবলো। পরক্ষণেই মনে হলো, সেই শূন্যতা আর কিছুই না। মেহুই তরুর শূন্যতা। এই দুইটা বছর তরু কতবার মেহুদের বাড়িতে গিয়েছে। শুধুমাত্র প্রিয় সইকে একটা নজর দেখবার জন্য। কিন্তু বারাবরেই তরু হতাশ হয়ে ফিরে এসেছে। সইকে দেখার জন্য আজও তরুর চোখ দু’টো চাতক পাখির মতো এদিক সেদিক ঘুরে বেড়ায়। এই বুঝি প্রাণ প্রিয় সইকে দেখতে পেলো তরু। তখন তরুর চোখের পাশাপাশি মনেরও শান্তি মিলতো।__
মেহুরও খুব ইচ্ছে ছিলো। সে মেডিকেলে পড়ে ডাক্তার হবে। অসহায় মানুষদের সাহায্য করবে। তেজেরও ইচ্ছে ছিলো ডাক্তার হওয়ার। কিন্তু পরিস্থিতি আর কিছু বাধা বিপত্তির জন্য তার আর ডাক্তার হয়ে উঠা হয়নি। তেজ বর্তমানে নৌবাহিনীতে মেজর হিসাবে নিযুক্ত হয়েছে। নৌবাহিনীর মেজর হিসাবে থাকে সিলেক্ট করা হয়েছে। আর কয়দিন পর তেজ টেনিংয়ে চলে যাবে। তরু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
তেজ আর মেহুর ডাক্তার হওয়ায় স্বপ্নটা কেমন অদূরায় থেকে গেলো।
‘হাতের ঘড়ি ঠিক করতে করতে তাতান চৌধুরী নিচে আসলেন। তরুকে উদ্দেশ্য করে গলা উঁচিয়ে ডাকলেন। আম্মু তারাতাড়ি রেডি হয়ে নিচে আসো। আর কতক্ষণ লাগবে রেডি হতে।’
বাবার কথায় হুশ ফিরতেই। তরু চটজলদি রেডি হয়ে বেরিয়ে আসে রুম থেকে। তরু আজকে একটা সিলভার কালারের হাঁটু অব্দি লম্বা টপ্স পড়েছে। কোমরে কালো রংয়ের একটা চিকন বেল্ট পড়েছে। হাতে ছোট্ট একটা সিলভার কালারের হ্যান্ড ব্যাগ। ম্যাচিং করা কানের দোল। আর গলায় সিম্পল ডায়মন্ডের একটা চেইন। তরুকে দেখেতে আজ কোরিয়ান-দের মতো লাগছে। ’
বাবার ডাক কর্ণগোচরে পৌঁছাতেই তরু দ্রুত পা ফেলে নিচে আসলো। তাতান চৌধুরী হাত ঘড়ি থেকে চোখ সরিয়ে, অদূরে দাড়িয়ে তাকা তরুর দিকে দৃষ্টি তাক করলো। চোখ গুলো গোল গোল করে তরুকে আপাদমস্তক পর্যবেক্ষণ করলো। মেয়ে এই লুকে দেখে তাতান চৌধুরী অবাক হয়ে, বার কয়েক মাশাআল্লাহ বলল। তরু স্মান হেঁসে মাথার চুলগুলো হাতের সাহায্যে পিছনে ঠেলে দিলো।
তাতান চৌধুরী এবার তাড়া দিয়ে বলল,
তরু তারাতাড়ি চলো। আমাদের এক্ষুনি বেরোতে হবে। না হলে প্রোগ্রাম শুরু হয়ে যাবে। মেয়েকে কথাগুলো বলেই তাতান চৌধুরী পা রাখলো বাসার বাহিরে। তরু মায়ের থেকে বিদায় নিয়ে, নিজেও বেরিয়ে আসলো বাসা থেকে। তাতান চৌধুরী ততক্ষণে ডাইভিং সিটে গিয়ে বসে পড়েছেন। তরু চটজলদি গাড়ির দরজা খুলে ভিতরে বসলো। তরু এসে বসতেই, তাতান চৌধুরী গাড়ি স্টার্ট দিলেন। শো শো শব্দ করে। এক ঘূর্ণিপাক ধুলো উড়িয়ে গাড়ি চললো নিজ গন্তব্যে।
তেজ দু’হাতের মুঠোয় কপাল ঠেকিয়ে বসে আছে খাটের এক কোণে। মেহু জড়সড় হয়ে তার পাশেই চুপটি করে রয়েছে। আর ঠিক তাদের সামনেই শুদ্ধ, ত্বহা,ইরফান আর উল্লাস। শুদ্ধ একটু থমথমে মুডে, মেহুকে জিজ্ঞেস করলো__
কবে জানতে পারলে তোমার প্রেগন্যান্সির কথা। মেহু একটু ইতস্তবোধ করলো। পরক্ষণেই আমতাআমতা করে বলল,
পাঁচ মাস আগে!
মেহুর কথা শোনে তেজ থমথম খেয়ে বলল,
ওয়াট! আর ইউ ক্রেজি?
তেজের কথায় মেহু ভ্রু কুঁচকালো। কুচকানো ভ্রু নিয়েই মেহু তর্জনী আঙ্গুল উচিয়ে, তেজকে শাসিয়ে বলল_____
এই তেজ,
একদম ভালোমানুষ সাজার চেষ্টা করবি না। নিজে কাছে এসে। এখন নিজেই ভালো মানুষ সাজা হচ্ছে। আমি কি বলেছিলা কাছে আসো বেইবি? বলিনি তো! আমার প্রেম কি উথলিয়ে পড়েছিল? পড়েনি তো। তাহলে আমাকে দোষারোপ করছিস কেনো? আমি কিছু করেছিলাম বল। আমি তো কিচ্ছু করিনি। যা করেছিস তুই করেছিস। দোষ যদি থাকতে হয়। তাহলে দোষ তোর আছে। আমার নেই। তোর বন্ধুরা কি জানে,তুই চুড়ান্ত অশ্লীল একটা বেটা ছেলে।
মেহুর এমন বোমা বিস্ফোরণ করা কথা শোনে শুদ্ধ, ত্বহা,উল্লাস হতভম্ব হয়ে কথা বলতে ভুলে গেছে
ইরফান ঠোঁট টিপে হাসছে। তেজ বেচারা পড়ে গেছে মা/ইন/কার চিপাই। না পারছে নড়তে, না পারছে চলে যেতে। লজ্জায় তার মাথা কাটা যাচ্ছে। মনে হচ্ছে, বউকে ভালোবেসে অনেক বড় পাপ করে ফেলেছে। কি সাং/ঘা/তি/ক!
___ বিয়ের পর তেজ আর মেহু অনেকবার চেষ্টা করেছে। একে অপরকে তুই থেকে তুমি সম্মোধন করে ডাকার। কিন্তু যতবারই তুই থেকে তুমি বলেছে। ততবারই হেঁসে কুটিকুটি হয়ে একজন আরেক জনের গায়ে ঢ’লে পড়েছে। ইরফান রীতিমতো তাদের দু’জনকে তালিমও দিয়েছে। কিন্তু বরাবরই ফল শূন্য।__
শুদ্ধরা সবাই এবার বসা থেকে উঠে দাড়ালো। মেহুকে মাঝ কথায় থামিয়ে দিয়ে, তেজকে সাথে নিয়ে বেরিয়ে এলো বাসা থেকে। ত্বহা, উল্লাস আর ইরফান ও গেলো পিছন পিছন। ত্বহা পিছন থেকে পিঞ্চ মেরে তেজকে কথা শোনাতে লাগলো__
কি মামা! তুমি খুব ফাস্ট। ফাস্ট বলেই ছক্কা মেরে দিলে। নিজে বাবা হয়ে আমাদের কেউ মামা হওয়ার সুযোগ করে দিলে। আরে বাহ্ বাহ্! ধন্যবাদ।
পিছন থেকে উল্লাস তার উল্লাসিত কন্ঠে বলল__
এবার তো বাবা হয়ে, লুঙ্গি সামলানোর পাশাপাশি বাচ্চাকেও সামলাতে হবে। কি মামা! পারবে তো? উল্লাসের কথার বিপরীতে ইরফান চেচিয়ে বলল। আরে পারবে পারবে। বাচ্চা নেওয়ার কথা যখন কেউ শিখিয়ে দেয়নি। তখন বাচ্চা সামলানোর কথাও শিখাতে হবে। লুঙ্গি আর বাচ্চা দুইটাই তার। সো সামলানোর দায়িত্বও তার।
‘তেজকে নিয়ে মজা করতে করতে সবাই একসাথে হেহে করে হাসছে।’
তেজ চোখ রাঙিয়ে, দাঁত কিড়মিড় করে বলল,
দিন আমারও আসবে। তখন আমি এমন মজা নিতে পারবো। আজকে না হয় তোদের দিন। আর রইলো লুঙ্গি সামলানোর কথা। সে তো লুঙ্গি সামলানোর পাশাপাশি লুঙ্গি ডান্সও দিতে পারবো। এখন তোরা তোদের চিন্তা কর। তোরা তো নিজের আন্ডারওয়্যার টাও সামলাতে পারবি না। সেখানে লুঙ্গি তো বহুত দূরে।
তেজের কথার বিপরীতে সবাই কিছু বলতে যাবে, তার আগেই শুদ্ধ হাতের ইশারায় থামিয়ে দিল সবাইকে। শুদ্ধ চোখ ঘুরালো। তীক্ষ্ণ দৃষ্টি তাক করে তেজকে কঠিন কন্ঠে শুধালো __
মেহুর খেয়াল রাখবি। জীর্ণ শীর্ণ ভগ্নদশা প্রায় শরীরে অবস্থা। ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া হয়তো করে না মেয়েটা। এই সময়টাতে মেয়েরা হয়তো মায়ের কাছে থাকে। নয়তো শ্বাশুরির কাছে থাকে। মেহু তে কপাল পোড়া। একুল অকুল দুই কুলেও কেউ নেই। তাই তোকে বলছি। একটু খেয়াল রাখিস মেয়েটার। আর টাকার কথা চিন্তা করবি না। আমরা ব্যবস্থা করবো সব টাকার।
শুদ্ধ আর দাড়ালো না। দৃষ্টি ঘুরালো। অদূরো তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে, তেজের থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো নিজ গন্তব্যে। ইরাফন, ত্বহা আর উল্লাস ও গেলো শুদ্ধর পিছন পিছন। তেজও আর দাড়ালো না। দ্রুত পা ফেলে বাসায় আসলো। মেহু রুম ঝাড় দিচ্ছিলো। তেজ দ্রুত এসে এক হেঁচকা টানে মেহুকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে, দু’হাতে আষ্টেপৃষ্টে মেহুর ছোট্ট জীর্ণ শীর্ণ শরীরটাকে জড়িয়ে ধরলো নিজের বুকের মধ্যিখানে। আচমকা এমনভাবে জড়িয়ে ধরায়, কি থেকে কি হলো মেহু কিছু ঠাহর করতে পারলো না।
তেজ চোখ বন্ধ করে। স্থুল কন্ঠ কাঁধে নামিয়ে মেহুকে জিজ্ঞেস করলো__
পাঁচ মাস হয়ে গেলো! আর তুই আমাকে কিছুই বললি না মেহু। কেনো?
মেহু ভয় পেলো। জ্বিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে, খুবিই মিহি কন্ঠে তেজকে বলল,
কি করবো বল। আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। এমনিতেই তোর বন্ধুদের উপর ভরসা করে চলতে হয়। আর আমার একটা ভুলে জন্য ওদের দায়িত্ব আরো বেড়ে গেলো। তাই ভয় পেয়ে আমি কথাটা লুকিয়ে রেখেছিলাম।
তেজ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল__
এতো চিন্তা করে কোনো লাভ নেই। যে আসার সে আসবেই। দেখে রাখার দায়িত্ব আল্লাহ। সো চিন্তা বাদ দে। আর সাপের মতো মোচড়া মুচড়ি কার বন্ধকর। আমার অসুবিধা হচ্ছে। একটু শান্তি চাই। চুপচাপ দাড়িয়ে তাক।
মেহু মুখ ভেংচি মেরে বলল__
তোর আর কি! তুই তো চুড়ান্ত লেভেলের অসভ্য। নিজের বেস্ট ফ্রেন্ডকেও কুনজরে দেখিস। আমি জানিনা বুঝি। ছিহ!
তেজ মেহুকে চোখ টিপে বলল,
সে আমি কুনজরেই দেখি আর সুনজরেই দেখি। তাতে তোর কি? রোমান্স তো আমি আমার বউয়ের সাথে করি। মেহু আর কিছু বলল না। মেহুর কথা মতে, তেজের সাথে তর্ক করা। আর দেয়ালে মাথা ঠোকা একি ব্যাপার।
ব্যস্ত শহরের ধুলোবালি উড়িয়ে, গাড়ি এসে থামলো মেডিকেলের সামনে। পার্কিং স্পেসে গাড়ি পার্ক করে। তাতান চৌধুরী মেয়েকে নিয়ে গাড়ি থেকে চটজলদি বেড়িয়ে আসলেন। হাটতে হাটতে চলে এসেছে মেডিকেল গেইটের মূল ফটকে।
মেডিকেল গেইটের সামনে ফুলের তোড়া দিয়ে সিনিয়র ডাক্তারদের ওয়েলকাম জানাচ্ছে জুনিয়র ডাক্তাররা। গেলো বছর MBBS পাস করা স্টুডেন্টরাও এসেছে, এই পুনরায় মিলনায়তন অনুষ্ঠানে। তারাও অংশগ্রহণ করেছে বিভিন্ন কাজে। নীহারিকা নিজ হাতে সকল ডাক্তারদের ফুলের তোড়া দিচ্ছে।
সবশেষে এলো তাতান চৌধুরী পালা। নীহারিকা হাসি মুখে তাতান চৌধুরী দিকে একটা ফুলের তোরা বাড়িয়ে দিলো। পরক্ষণেই তরুকে দেখে নীহারিকা হাসিহাসি মুখটা চুপসে যায়। হঠাৎ করে নীহারিকা মুখের আকৃতি বদলে যাওয়া ফলে। তাতান চৌধুরী হতভম্ব হয়ে নীহারিকা কে প্রশ্ন করলো__
কি হলো নীহারিকা। আমার মেয়েকে দেখে তোমার মুখ এতো চুপসে গেলো কেনো? নীহারিকা অবাকের উপর অবাক হয়ে, তরুর দিকে আঙুল তাক করে বলল______
কি বললেন স্যার! এই মেয়েটা আপনার মেয়ে?
নীহারিকার এমন খাপছাড়া কথা শোনে। তাতান চৌধুরী কপাট রাগ দেখিয়ে বলল__
এই মেয়েটা এই মেয়েটা কি বলছো নীহারিকা। ও হচ্ছে চৌধুরী বাড়ির একমাত্র মেয়ে তরু চৌধুরী। বুঝলে।
তাতান চৌধুরী কথার বিপরীতে নীহারিকা আর কোনো কথা খুঁজে পেলো না। মাথা নত জানু করে দাড়িয়ে রইল এক পাশে। নীহারিকা উপলব্ধি করতে পারলো। মানুষের ঝলমলে, চকমকা লাইফস্টাই দেখে, তাকে জার্জ না করা। হতেও পারে সেই চকমকা স্টাইলের ভিতরে রয়েছে অন্যকিছু। আর কেউ অতি সাধারণভাবে চলে বলে, তাকে ছোটলোক বলে সম্মোধন করা বা জার্জ কারাও ঠিক না। এটাও একটা অপরাধ।
__তাতান চৌধুরী আর দাড়ালো না। দ্রুত মেয়েকে নিয়ে চলে আসলেন সেখান থেকে। পিছনে রেখে এসেছে কিছু থমকানো আর চমকানো দৃষ্টি। যারা তরুকে দেখে নিজের মনে আঙিনায় রং খেলছে। কিছু কিছু ছেলে তো বুকে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে। তরুর লুকটায় ছিল আজ, ছেলেদের তরু নামক অসুকে আক্রান্ত করার। তরু হাঁটতে গিয়ে হঠাৎ পিছন ফিরে তাকালো। আর একটা স্মাইল করলো। হাজার হৃদয়ে সন্ধির সূচনা হলো। কিন্তু তরুর সন্ধি তো সেই একজনেতেই সীমাবদ্ধ। রোদ!__
“তরু মেডিকেলে ঢুকতেই চোখগুলো লাগামহীন হয়ে পড়লো। তৃষ্ণার্ত বেয়াড়া লাগামহীন চোখগুলো কাউকে এদিক সেদিক খোঁজে বেড়াচ্ছে। তরু দৃষ্টি সরালো। তীক্ষ্ণ দৃষ্টি তাক করে অদূরে তাকালো। হঠাৎ করেই যেনো তরু চোখগুলো শুভদৃষ্টি হলো, দূরে দাড়িয়ে থাকা রোদকে দেখে।”
“তরু মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে দেখলো তার ডাক্তার সাহেবকে।”
’সেই প্রথমদিনের দেখা রোদকে আজ খোঁজে পেলো তরু।’
সেই সাদা এপ্রোন। গলায় স্টেথোস্কোপ। চোখে গোল চশমা পড়ে, সটান হয়ে দাড়িয়ে আছে তরুর সেই অনাকাঙ্খিত ওয়াও!
তরু আনমনে বলল। ডাক্তার সাহেব আপনি জাস্ট ওয়াও ওয়াও ওয়াও!
তরু দৃষ্টি ঘুরালো। পাশে তাকালো। নয়ন ঘুরিয়ে পর্যবেক্ষণ করলো রোদের পাশে দাড়িয়ে থাকা দু’টি মেয়েকে। রোদ কি সুন্দর হেঁসে হেসে কথা বলছে মেয়েগুলো সাথে। তরু ফোঁস করে উঠলো। দ্রুত পা ফেলে রোদের পিছনে গিয়ে দাঁড়ালো। তরু রোদের স্টাইলে রোদের মতো করেই রোদকে ডাকলো__
“এই শুনছো ছেলে!”
”এই ছেলে শুনছো।”
অনাকাঙ্খিত কারো ডাক কর্ণগোচরে পৌছাতেই চকিতে পেছন ফিরে তাকালো রোদ। তরুকে নিজের পিছনে দাড়িয়ে থাকতে দেখে, রোদ থমকালো। রোদ মেয়েগুলোর থেকে বিদায় নিয়ে তরুর সামনে এসে দাড়ালো। রোদ ভ্রু কুঁচকে তরুকে জিজ্ঞেস করলো। তা চলে এসেছেন ম্যাডাম। কখন আসলেন?
তরু এক হাত কোমরে রেখে, অন্য হাত উচিয়ে রোদকে শাসিয়ে বলল,
কখন আসলাম সে-সব বাদ দিন। আগে বলুন, আপনি মেয়েগুলো সাথে এতো হেহে করে কি বলছিলেন?
তরু কথা শোনে, রোদ একটু ঝুঁকে এলো তরুর দিকে। তরুকে চোখ টিপে রোদ বলল,
ম্যাডাম কি জেলাস?
তরু দাঁতে দাঁত চিপে কিড়মিড় করে, রোদের কলার ধরে বলল__
শোনেন ডাক্তার সাহেব!
আমার হওয়া এতে সহজ না। আমার হওয়া মানে আমার ই হওয়া। একটুও এদিক সেদিক অন্য কারো হওয়া যাবে না। যদি একবার আমি আমার বলে আপনাকে মেনে নেই, তাহলে সারাজীবনেই মানবো। দরকার হলে, হাত পা ভে/ঙ/গে হুইলচেয়ার বসিয়ে রাখবো। তবুও আমার করেই রাখবো।
আর রইলো জেলাসির কথা। I’m the most jealous Person in the world.
যেটা আমার সেটা শুধুই আমার। বুঝলেন।
আর আপনি হলেন আমার হাজার ফুলের মধ্যে একটি মাত্র ফুল। যার সাথে আামর সন্ধি হয়েছে। এইভাবে কিভাবে, আপনাকে কি করে অন্যদের সাথে সেয়ার করি। বলুন।
চলবে___ইনশাআল্লাহ