হে_সখা_মম_হৃদয়ে_রহো পর্ব-২১+২২

0
324

#হে_সখা_মম_হৃদয়ে_রহো
#মুগ্ধতা_রাহমান_মেধা
#পর্ব ২১ (১৮+ এলার্ট)

সংকল্প নড়চড় করলে প্রতিজ্ঞা দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয়।চেহারায় কাঠিন্যতা ধরে রাখে।নতমস্তকে আগের জায়গাতেই বসে থাকে।সংকল্প আড়মোড়া ভেঙ্গে উঠে বসে।তার লাল টকটকে চোখগুলো বিনিদ্র রাত্রীযাপনের স্বাক্ষী।প্রতিজ্ঞাকে থম মে*রে বসে থাকতে দেখে বাঁকা হাসে।গা ঘেঁষে দুষ্টুমি করে বলে,
“গুড মর্ণিং,বউ!”

প্রতিজ্ঞা থতমত খায়।সরে যায় সে।প্রথম দেখায় সংকল্প থেকে এমন প্রতিক্রিয়া সে আশা করে নি।বড্ড বেশিই অবাক হয়েছে সে।তবে মুখে প্রকাশ করলো না।সোজা তাকালো সংকল্পের চোখের দিকে।সংকল্প চোখ ফেরালো না।অপলক চেয়ে রইলো।প্রতিজ্ঞা কাঠিন্যতা বজায় রেখে শক্ত গলায় শোধালো,
“আমি এখানে কেনো?”

সংকল্প ঠোঁট উল্টিয়ে বলে,
“বউ স্বামীর পাশে থাকবে,এটাই তো নিয়ম।আমার বউ আমার পাশে থাকবে না তো কোথায় থাকবে?তুমি কি অন্য কাউকে আশা করেছিলে বউ?”

প্রতিজ্ঞা থতমত খায়।কাশতে থাকে।তার মনে হচ্ছে সে প্যারালাল ইউনিভার্সে আছে।সংকল্পের আচার-আচরণে এতো পরিবর্তন,তার বিশ্বাসই হচ্ছে না।সে রাগ করবে কি!অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে আছে।

সংকল্প চোখ ছোট ছোট করে বলে উঠলো,
“বউ কি দেখছো?আমি কি আগের থেকে বেশি সুন্দর হয়ে গেছি?ক্রাশ খেয়েছো?প্রতিদিন অনেক মেয়েরাই খায়।”

প্রতিজ্ঞা কপট রাগ দেখিয়ে দাঁত কিড়মিড়িয়ে বলে,
“ফাইজলামি করছেন আমার সাথে?”

সংকল্প কপাল কুঁচকে বললো,
“তোমার সাথে ফাইজলামি করবো না তো কি পাশের বাসার ভাবীর সাথে করবো বউ?তুমি অনুমতি দিলে করতে পারি।পাশের বাসার সামিয়া ভাবী আমার উপর নজর রাখেন।একটু পরপর এসে খোঁজখবর নিয়ে যান,খাওয়ার সময় খেয়েছি কিনা জিজ্ঞাসা করেন,বিভিন্ন সময় খাবার দিয়ে যান।অনেক কেয়ার করেন আমার।তুমি অনুমতি দিলে তার সাথে ফাইজলামি করতেই পারি।দিবা?”

প্রতিজ্ঞার রাগ তরতর করে বাড়ছে।কিন্তু প্রকাশ করতে পারছে না।দাঁত কিড়মিড়িয়ে বলে,
“যত্তসব পাবনাফেরত পা গল।”
“ভুল বললে বউ,আমি কানাডাফেরত!”

ঠোঁট উল্টিয়ে বলে সংকল্প।
প্রতিজ্ঞা এবার রাগ দমাতে পারে না।চেঁচিয়ে বলে উঠে,
“অসহ্যকর।”
সংকল্প শান্ত দৃষ্টিতে প্রতিজ্ঞার দিকে তাকায়।ভরাট কন্ঠে বলে,
“আমি তোমাকে অসম্ভব,অসহ্যকর রকমের ভালোবাসি বউ।”

শব্দগুচ্ছ কর্ণপাত হতেই প্রতিজ্ঞার বুকটা ধ্বক করে উঠে।তড়িৎগতিতে দৃষ্টি ফেলে সংকল্পে।এই শব্দগুচ্ছ শোনার জন্য কত কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে তাকে। এখন এই লোক এমন করলে সে রাগ করবে কিভাবে!শাস্তি দিবে কিভাবে!নিজেকে সামলানো বড্ড দায়।নিজেকে সামলাতে হবে।এতো সহজে গলে গেলে হবে না।নিজেকে ধাতস্থ করে চোখে চোখ রেখে দাঁত কিড়মিড়িয়ে বলে,

“আই হেইট ইয়্যু।”
“আই লাভ ইয়্যু ইনফিনিটি।”

প্রতিজ্ঞা রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।সংকল্পের ঠোঁটে হাসির রেখা ফুটে আছে।বউয়ের এমন অবস্থা দেখে সে মজা পাচ্ছে।সে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়।
প্রতিজ্ঞা তাকায় তার দিকে।শান্তস্বরে জিজ্ঞাসা করে,
“আমি এখানে কিভাবে এলাম?”
“আমি নিয়ে এসেছি।”
স্বাভাবিক, স্পষ্ট জবাব সংকল্পের।

প্রতিজ্ঞা কঠিন স্বরে জিজ্ঞাসা করে,
“কেনো?”
সংকল্প এবার তাকায় প্রতিজ্ঞার দিকে।বলে,
“তোমার তো আমার সাথেই থাকার কথা। তাই না?”

প্রতিজ্ঞা প্রলম্বিত শ্বাস ফেলে।অন্যদিকে ফিরে বলে,
“পরিস্থিতিটা আলাদা!”
“এখন থেকে সব ঠিক হবে।আমি ঠিক করে দিবো।”

সংকল্পের স্বাভাবিক স্বরের বিপরীতে প্রতিজ্ঞা রাগ দেখিয়ে বলে,
“আমি থাকবো না আপনার সাথে।”

সংকল্প তাকায় প্রতিজ্ঞার দিকে।শক্ত গলায় বলে,
“থাকতে তুমি বাধ্য!”
“আপনার মনমতো সব হবে না।”

সংকল্প এগিয়ে আসে প্রতিজ্ঞার কাছে।দূরত্ব কয়েক আঙ্গুলের।সংকল্পের গরম নিঃশ্বাস আছড়ে পড়ছে প্রতিজ্ঞার মুখের উপর।সংকল্প দৃঢ় কন্ঠে বলে,

“যা হয়েছে সব ভুলে যাও।তোমার সব কষ্ট আমি শুষে নিবো।তুমি আমার আকাশে উড়ন্ত একমাত্র ঘুড়ি।যা খুশী তাই করো।কিন্তু অন্য আকাশে উড়তে গেলে ভোকাট্টা।ভুলে যেও না লাটাই আমার হাতে।ঘুড়ি কিভাবে সামলাতে হয় আমার জানা আছে।হয় ঘুড়ি আমার,নাহয় কারোর না।মাইন্ড ইট!”

বলে সংকল্প ওয়াশরুমে চলে যায়।প্রতিজ্ঞা অপলক তাকিয়ে থাকে সে দিকে।যেই ভালোবাসা সে এতোবছর চেয়ে এসেছে,সেই ভালোবাসা এখন তার কাছে ধরা দিচ্ছে।ভাবতে ভাবতেই নজর যায় নিজের পরিহিত কাপড়ের উপর।চোখ গোল গোল করে তাকিয়ে আছে সামনে থাকা ড্রেসিং টেবিলের আয়নার উপর অবস্থিত নিজের প্রতিবিম্বের উপর।কাপড় পরিবর্তন করা!মাথায় কত কি চিন্তা আসছে।সে চিৎকার করে সংকল্পকে ডাকতে থাকে।একবার,দুইবার,তিনবারের মাথায় সংকল্প বেরিয়ে আসে।কিছুই হয় নি,এমন ভঙ্গিমা করে বলে,

“কি হয়েছে বউ?ডাকছো কেনো?বেশি মিস্ করছিলে আমায়?বললেই পারতে।তাহলে তুমি,আমি একসাথে শাউয়ার নিতাম।…”

কথা শেষ করতে পারলো না সংকল্প।প্রতিজ্ঞা রাগে গিজগিজ করতে করতে বলে,
“আমার ড্রেস কে চেঞ্জ করছে?”

সংকল্প ফটাফট বলে উঠে,
“ঐতো পাশের বাসার ভাবীর হাসবেন্ড চেঞ্জ করেছে।”

প্রতিজ্ঞা বিস্ফোরিত নয়নে তাকিয়ে আছে।অবাক হয়ে বলে,
“হোয়াট?হ্যাভ ইয়্যু গোন ম্যাড?”

সংকল্প এবার প্রতিজ্ঞার পানে পূর্ণ দৃষ্টি স্থাপন করলো।স্বাভাবিকভাবে বললো,
“তুমি পা গল হয়ে গিয়েছো।আমি ছাড়া কে চেঞ্জ করবে?আর কেউ আছে?বোকার মতো প্রশ্ন করো কেনো!”

প্রতিজ্ঞা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে।কত স্বাভাবিকভাবে লোকটা কথাটা বললো।যেনো তেমন কিছুই না। দাঁতে দাঁত ঠেকিয়ে বললো,
“আপনি কেনো চেঞ্জ করবেন?কে অধিকার দিয়েছে আপনাকে?”
সংকল্প স্বাভাবিকভাবেই বললো,
“বমি করে তো নিজেকেসহ আমাকে ন ষ্ট করে দিয়েছিলে।ঐভাবে ফেলে রাখলে ভালো হতো?আর অধিকার?তুমি দিয়েছো।মাথায় রিভলবার ঠেকিয়ে বিয়ে করেছো।ভুলে গেছো নাকি!”

কথার বিপরীতে প্রতিজ্ঞা আমতাআমতা করে বললো,
“সেটা অন্য ব্যাপার।”

সংকল্প বাঁকা হেঁসে বলে,
“এমন ভান করছো যেনো আমি পরপুরুষ।তোমাকে আমি দেখিনি আগে।তোমাকে আমার দেখা শেষ!”

কর্ণকুহরে পৌঁছাতেই প্রতিজ্ঞার কান দিয়ে গরম ধোঁয়া বের হতে লাগলো।লজ্জায় তার চেহারায় লাল আভা দেখা দিয়েছে।সে ভাবছে,এই নির্লিপ্ত মানুষটার এতো পরিবর্তন!শুধু তার জন্য?তাহলে কি দূরত্বটা ভালোর জন্যই হয়েছিলো!দূরত্ব ভালো কিছু এনে দিয়েছে।

প্রতিজ্ঞা মেকি রাগ দেখিয়ে বলে,
“ছিহ!অ সভ্য লোক!”

সংকল্প শব্দ করে হেঁসে ফেলে।সকালের খাবার তৈরী করার জন্যে বের হয়ে যায় রুম থেকে।
প্রতিজ্ঞা ধপাশ করে বসে বিছানায়।লজ্জারা তাকে ঘিরে ধরেছে।তার মনে পরে যায় তাদের বিয়ের দিন রাতের কথা…

রাত এগারোটা।ঘরজুড়ে অন্ধকারের রাজত্ব।সংকল্প বিছানার এক পাশে চুপ করে শুয়ে আছে।তার দৃষ্টি সিলিং ফ্যানটার দিকে।আরেক পাশে প্রতিজ্ঞা হাটু ভেঙ্গে হেলান দিয়ে বসে আছে।একটু পরপর সংকল্পকে দেখছে সে।কিন্তু সংকল্পের তাতে মাথা ব্যাথা নেই।সে আজকের দিনটা নিয়ে ভাবনায় মত্ত।হুট করে ঝোঁকের বশে বিয়ে করে ফেললেও প্রতিজ্ঞার বড্ড মন খারাপ। তখন তো বলেছিলো সে সংকল্পকে আটকাবে না।কিন্তু এখন বড্ড কষ্ট হচ্ছে।বুক ফেঁটে কান্না আসছে।কথারা দলা পাকিয়ে যাচ্ছে।
সাহস সঞ্চয় করে নরম স্বরে সংকল্পকে ডাকলো,

“স্যার!”
“হুম!”
“না গেলে হয় না?”
“তোমার প্রতি অন্যায় হয়ে যাবে যে!”
“আমি সব সহ্য করে নিবো।শুধু আপনি থেকে যান।”
“তুমি একটা অমূল্য রত্ন প্রতিজ্ঞা।তোমাকে এতো সহজে পেয়ে গেলে যে তোমার প্রতি বড্ড অন্যায় করা হবে।আমি তোমার যোগ্য নই,তবুও তুমি আমার।যখন নিজেকে নিজের কাছে তোমার যোগ্য মনে হবে তখন ফিরবো।”
“কবে ফিরবেন?”
“যখন আমার প্রায়শ্চিত্ত শেষ হবে!”

তারপর কেউ কোনো কথা বললো না।অন্ধকারে চোখ সয়ে এসেছে।দু’জনেরই ভেতরে উথাল-পাতাল ঢেউ বইছে।ভালোবাসার মানুষ কাছাকাছি, তবুও আলাদা হয়ে যাবে।এখন যেনো প্রতিজ্ঞার আফসোস হচ্ছে।কে বলেছিলো এতো ভালোবাসতে?কেনো সে এতো ভালোবেসেছে? এর জন্যই তো সংকল্প এখন তার চোখে চোখ রাখতে পারছে না।নিজেকে ছোট মনে করছে।প্রতিজ্ঞা নিজেকে ধাতস্থ করলো।হাতের উল্টোপিঠে চোখ মুছলো।ঢোক গিলে শান্ত গলায় ডাকলো,
“সংকল্প!”

নিরব নিস্তব্ধ ঘরে এই শব্দটা যেনো বারবার প্রতিধ্বনিত হতে লাগলো।
সংকল্প ছোট্ট করে বললো,
“বলো!”
“আজকে সারাটা রাত আমাকে দিবেন,প্লিজ?”
সংকল্প এবার প্রতিজ্ঞার পাশ ফিরলো।চোখে-মুখে প্রশ্নের আভাস।অবাক হয়ে শোধালো,
“মানে?”
“আমাকে একটু আদর করবেন?”

সংকল্প আঁতকে উঠল। সে আবার সোজা হয়ে শুয়ে পড়লো।সিলিং এর দিকে নজর দিয়ে থমথমে গলায় বললো,
“এটা হয় না।”
প্রতিজ্ঞা এবার উঠে বসে পড়লো।করুণ কন্ঠে একটু রাগ দেখিয়েই বললো,
“কেনো হয় না?আমি আপনার স্ত্রী।”
“আমি তোমার যোগ্য নই।”
থমথমে গলায় উত্তর।
প্রতিজ্ঞা রাগলো নাকি কষ্ট পেলো কে জানে!কান্নামিশ্রিত কন্ঠে বললো,
“অনেক তো যন্ত্রণা সহ্য করেছি।ভালোবাসার অনলে দগ্ধ হয়েছি।ভেতরটা জ্বলছে অনেক ।একটু যন্ত্রণা কমিয়ে দিন না!কাল তো চলেই যাবেন।”

কি করুণ আকুতি!নির্লিপ্ত সংকল্প আর নির্লিপ্ত থাকতে পারলো না।বসে থাকা প্রতিজ্ঞার বা হাতটাকে নিজের ডান হাতের মাধ্যমে হেঁচকা টানে নিজের বুকের উপর ফেলে দিলো।আচকমা টানে প্রতিজ্ঞা মুখ থুবড়ে পড়লো সংকল্পের বুকের মধ্যিখানটায়।সংকল্পের হৃদস্পন্দন শুনতে পাচ্ছে প্রতিজ্ঞা।প্রতিজ্ঞা টের পেলো সময়ের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি হারে সংকল্পের হৃদযন্ত্রটা স্পন্দিত হচ্ছে।তারপর নিজের হৃদস্পন্দন অনুভব করলো।তার হৃদযন্ত্রটাও একই গতিতে স্পন্দিত হচ্ছে।তার কোমড় সমান চুলগুলো আছড়ে পড়লো সংকল্পের সারা বদনে।সংকল্প বা হাতে চুল গুলো সরালো।তারপর প্রতিজ্ঞার মুখের উপরে চুল গুলো সরিয়ে কানের পেছনে গুঁজে দিলো।সংকল্পের প্রতিটা স্পর্শে প্রতিজ্ঞা শিউরে উঠলো।তার প্রাণপুরুষের স্পর্শ, অধিক প্রতিক্ষিত সেই স্পর্শ,সেই মুহুর্ত। চোখ বুঝে অনুভব করলো প্রতিজ্ঞা।

সংকল্প গাঢ় কন্ঠে বললো,
“অন্যায় করতে বাধ্য করছো কিন্তু!
“অন্যায় যদি যন্ত্রণা কমায়,খা খা বুকের তৃষ্ণা মেটায় তাহলে অন্যায়ই সই!”

তারপর নিঃশ্বাসের আওয়াজ ব্যতীত আর কোনো কথার শব্দ পাওয়া গেলো না।সংকল্প প্রতিজ্ঞার কোমড় আঁকড়ে ধরে পাশে শুইয়ে দিয়ে নিজে প্রতিজ্ঞার দিকে ঝুঁকে গেলো।প্রতিজ্ঞার কপালে কপাল ঠেকালো।প্রতিজ্ঞা এক হাত দিয়ে সংকল্পের এক হাত ধরে আছে,অন্য হাত দিয়ে সংকল্পের টি-শার্ট খামচে ধরেছে।যেনো ছেড়ে দিলেই সংকল্প পালিয়ে যাবে।

সংকল্প অনেকক্ষণ চোখ বন্ধ করে প্রতিজ্ঞার কপালে কপাল ঠেকিয়ে রাখলো।তারপর অনেকসময় নিয়ে প্রতিজ্ঞার কপালে নিজের পুরু ঠোঁটের উষ্ণ স্পর্শ দিলো।তারপর ধীরে ধীরে স্পর্শ প্রতিটা রন্ধ্রে রন্ধ্রে পৌছালো।অন্যায়ের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলো।প্রতিজ্ঞার যন্ত্রণা খানিকটা কমলো হয়তো।প্রতিজ্ঞা টের পেলো কেউ একজন তাকে খুব যত্ন করে ভালোবাসছে,নিজের ভালোবাসার জানান দিচ্ছে।প্রতিজ্ঞার খা খা বুকে এক পশলা বৃষ্টি নেমে এলো।প্রতিজ্ঞার হৃদয়ে থাকা সেই মানব এখন দুটি হৃদয়ের মিলন ঘটাতে ব্যস্ত।প্রতিজ্ঞার মনে হলো তার ভালোবাসা সফল।তার হৃদয়জুড়ে অবস্থান করা সেই সখার হৃদয়ের সাথে তার হৃদয়ের মিলন ঘটেছে।মিলে মিশে একাকার হয়ে গিয়েছে।প্রতিজ্ঞার চোখ বেয়ে নেমে পড়লো সুখের,প্রাপ্তির অশ্রু।এই অশ্রুও সে মানব শুষে নিলো।সত্যি সত্যি সংকল্প সেই পুরোটা রাত প্রতিজ্ঞাকে দিয়েছে।

সারারাতে সংকল্প প্রতিজ্ঞাকে তিনটে বাক্য একের অধিকবার বলেছে।যার একটি শুনে প্রতিজ্ঞা থমকেছে।বহু প্রতীক্ষার পর সেই বাক্য,
“আমি তোমাকে ভালোবাসি,প্রতিজ্ঞা।”

এই বাক্য কর্ণগোচর হওয়ার সময় প্রতিজ্ঞা সংকল্পের চোখের জল টের পেয়েছিলো।ফিসফিস করে কাঁধে মুখ ডুবিয়ে বলার সময় কয়েক ফোঁটা অশ্রু প্রতিজ্ঞার কাঁধে পড়ে ছিলো।জানান দিয়েছিলো মানুষটার ভালোবাসার সাথে অনুতপ্ততা।সংকল্পের বলা আরো দু’টি বাক্যও অনুতপ্ততা প্রকাশ করেছে।
“আমি তোমার সাথে অন্যায় করেছি, প্রতিজ্ঞা ।আই অ্যাম স্যরি ফর এভ্রিথিং,এভ্রিথিং এন্ড এভ্রিথিং।”

#চলবে..

#হে_সখা_মম_হৃদয়ে_রহো
#মুগ্ধতা_রাহমান_মেধা
#পর্ব ২২

সংকল্প নিজ হাতে সকালের খাবার রান্না করেছে।রান্না শেষে ঘরে আসে প্রতিজ্ঞা কি করছে দেখার জন্য।দেখা গেলো,প্রতিজ্ঞা অন্যমনস্ক হয়ে আছে।সে এক ধ্যানে কিছু ভাবছে।তার চেহারায় লজ্জার আভা,গাল দুটি লাল হয়ে গেছে,কমলার কোয়ার মতো ঠোঁটগুলোয় লজ্জামাখা হাসি।সংকল্প ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো প্রতিজ্ঞার কাছে।সরু চোখে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ।প্রতিজ্ঞার তাতে খেয়াল নেই।প্রতিজ্ঞার চোখের সামনে তুড়ি বাজিয়ে তার ভাবনার সমাপ্তি দাগ টানে সংকল্প।প্রতিজ্ঞা থতমত খায়।গোল গোল চোখে তাকিয়ে থাকে।ব্যাপারটা বুঝতে তার সময় লাগে।
সংকল্প ভ্রুজোড়া সরু করে বাঁকা হেসে দুষ্টুমির স্বরে শোধায়,

“কি ব্যাপার বউ?কি ভাবছো?আমার আদরের কথা ভাবছো?ভেবে আধ নষ্ট মস্তিষ্কটাকে কষ্ট দেওয়ার কি দরকার বউ।আমাকে বললেই তো আমি এতো এতো আদর দেই তোমাকে।”

প্রতিজ্ঞা রাগী চোখে তাকিয়ে আছে সংকল্পের দিকে।চোখে রাগ থাকলেও চেহারায় বিস্ময়।তবে রাগ,বিস্ময় উভয়ের প্রচেষ্টাতেও চেহারার লজ্জার আভা ঢাকা পড়ে নি।সংকল্প দুষ্টুমি করে বললো,
“বউ,তুমি লজ্জা পেলে তোমার গাল দুটো পুরাই টমেটোর মতো হয়ে যায়। ইচ্ছে করে এক কা*ম*ড়ে খেয়ে ফেলি।”

প্রতিজ্ঞা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়।কি আশ্চর্য, তার একটুও রাগ লাগছে না।তার তো রাগ করার কথা,অভিমান৷ করে বসে থাকার কথা।কিন্তু সংকল্পের সংস্পর্শে এসে অভিমানেরা কেমন যেমন হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো।পাখির মতো উড়ে গেলো যেনো।যে পাখি কখনো নীড়ে ফেরে না।অভিমানেরা কেমন যেনো!দূরে গেলে ঘিরে ধরে,কাছে এলে হাওয়ায় মিলিয়ে যায়।প্রতিজ্ঞা মেকি রাগ দেখালো।দাঁত কিড়মিড়িয়ে বললো,
“যত্তসব পাবনা ফেরত পা গল।”
বলে ওয়াশরুমের দিকে হাঁটা শুরু করলো।
সংকল্প চোখ পিটপিট করে ঠোঁট উল্টিয়ে বলে,
“তুমি আবার ভুল বললে বউ। আমি কানাডা ফেরত।”

প্রতিজ্ঞা রাগী চোখে তাকিয়ে আছে।যেনো এখনই ভস্ম করে দিবে সংকল্পকে।ঠাস করে শব্দ করে ওয়াশরুমের দরজাটা ভেতর থেকে বন্ধ করে দেয় প্রতিজ্ঞা।বাহির থেকে শুনতে পায় পুরুষালী ভারী কন্ঠের হাসির উচ্চশব্দ।হাসির শব্দটা যেনো প্রতিজ্ঞার নিঃশ্বাস বন্ধ করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। সে বুকে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে রইলো।

প্রতিজ্ঞা ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে দেখলো সংকল্প ঘরে নেই।সে যেনো হাপ ছেড়ে বাঁচলো।কিন্তু চোখ সরানোর পূর্বেই সংকল্প হাতে দু’টো খাবারের প্লেট নিয়ে ঘরে এলো। প্রতিজ্ঞাকে একটা সুন্দর হাসি উপহার দিলো।বললো,
“এসো খেয়ে নাও।”
প্রতিজ্ঞা গলায় কাঠিন্যতা বজায় রেখে বললো,
“আমি খাবো না।বাড়িতে যাবো।”

সংকল্প যেনো জানতো প্রতিজ্ঞা এই কথা বলবে।তাই তেমন প্রতিক্রিয়া দেখালো না।হাসি বজায় রেখেই বললো,
“বাড়ি যাবে মানে?এটাই তোমার বাড়ি,এখানেই থাকবে।আমার সাথে থাকবে।”

প্রতিজ্ঞা রাগান্বিত হয়ে শক্ত গলায় বলে,
“সবসময় ফাজলামো ভালো লাগে না।আপনি যতটা নরমালি সবটা নিতে পারছেন,আমি পারছি না।সত্যিই পারছি না।আমার কষ্ট হচ্ছে,অসহ্য লাগছে।আমি এখন, এই মুহুর্তে বাড়ি যাবো।”

সংকল্প গাল ফুলিয়ে তপ্ত শ্বাস ফেললো।স্বাভাবিকভাবেই বললো,
“আচ্ছা, ফাজলামো করবো না।বাড়ি যাবে,তবে এখন না।কয়েকদিন পরে।”

প্রতিজ্ঞা যেনো সংকল্পের স্বাভাবিকতা মেনে নিতে পারলো না।রাগ তরতর করে বেড়ে উঠলো।রাগান্বিত হয়ে বললো,

” সবসময় আপনার কথা কেনো শুনতে হবে আমার?আপনি কে?আমি কষ্ট ছাড়া আর কি পেয়েছি আপনার কথা শুনে?আমাকে আপনার হাতের খেলনা মনে হয়?আপনি যা বলবেন তাই?দু’বছর আগে চলে গেলেন।দু’বছর আমার খোঁজ নিয়েছেন?কোনোদিন জানতে চেয়েছেন আমি কেমন আছি?কি করছি?আমি কি চাই?আপনার ইচ্ছেকে প্রাধান্য দিয়েছেন।আমার কোনো গুরুত্ব ছিলো না আপনার কাছে। আর না এখন আছে।আমি ইচ্ছে পুতুল? যেভাবে ইচ্ছে পুতুলের মতো নাচানো যায়?খেলা যায়?আজ্ঞে না!ভালোবাসায় অন্ধ ছিলাম,কিন্তু এখন ভালোবাসারা ম রে গেছে।গলা টিপে মে রে ফেলেছি আমি, ভালোবাসা নামক সেই অদৃশ্য জিনিসটাকে।”

সংকল্প এতেক্ষণ নতমস্তকে সব কথা শুনছিলো।শেষের কথাগুলো কর্ণকুহরে প্রবেশ করতেই শান্ত চোখে তাকালো প্রতিজ্ঞার দিকে।প্রতিজ্ঞা এতক্ষণ সংকল্পের দিকে তাকিয়েই কথাগুলো বলছিলো।কিন্তু সংকল্পের শান্ত দৃষ্টি নিক্ষেপণের বিপরীতে আর কিছু বলতে পারলো না।চোখের দৃষ্টি সরিয়ে নিলো।ঐ শান্ত দৃষ্টিতে অসহায়ত্ব ধরা দিচ্ছিলো।এক সাগর পরিমাণ অসহায়ত্ব আর ভালোবাসা।এর বিপরীতে কথা বলার সাধ্য প্রতিজ্ঞার নেই।সে চুপ করে গেলো।কথাটা গলবিল অব্ধি এসে অনশনে বসেছে।অবরুদ্ধ মিছিল করছে।তারা বের হবে না।হতে চাইছে না।

সংকল্প ধীর পায়ে প্রতিজ্ঞার কাছে এলো।নিঃশব্দে অসহায়ত্ব লুকিয়ে ফেললো।প্রতিজ্ঞার কাঁধে দু’হাত রাখলো।ঠান্ডা গলায় বললো,
“আচ্ছা,আমার কথা শুনতে হবে না।থাকতে হবে না এখানে, আমার সাথে।শুধু অনুরোধ করবো একটা।আশা করি ফেরাবে না আমায়।”

প্রতিজ্ঞা তাকালো সংকল্পের দিকে।একটু আগেও যে চোখগুলোর দিকে তাকালে অনেক কিছু বুঝা যেতো,এখন সেই চোখগুলো নিরব-নিস্তব্ধ।শান্ত নদীর মতো বয়ে যাচ্ছে,তবে কোনো প্রতিক্রিয়া বোঝা যাচ্ছে না।সংকল্প প্রতিজ্ঞার দৃষ্টিতে দৃষ্টি মেলালো।ঠান্ডা স্বরে বললো,

“আজকের দিনটা থাকো আমার সাথে।আদেশ নয়, অনুরোধ। আশা করি রাখবে।কাল সকালে আমি নিজে তোমাকে দিয়ে আসবো।এখন এসো খেয়ে নাও।”

বলে প্রতিজ্ঞাকে নিয়ে বিছানায় বসালো।নিজেও পাশে বসলো।প্রতিজ্ঞা কিছু বললো না।ঠান্ডা স্বরের আড়ালে লুকিয়ে থাকা করুণ আকুতি সে টের পেয়েছে।বুঝতে পেরেছে।প্রাণপুরুষের আকুতি ফিরিয়ে দেওয়ার সাধ্যি তার নেই।তার তো উল্টো ইচ্ছে করছে প্রাণপুরুষের বুকে আছড়ে পড়তে।জাপটে ধরতে ইচ্ছে করছে প্রাণপুরুষকে।কিন্তু ইচ্ছেকে প্রকাশের ইচ্ছে করলো না।ইচ্ছে প্রকাশের আগেই গলাচাপা করে দিলো। তার ভাবনার রেশ কাটে মুখের সামনে খাবারের লোকমা দেখে।সংকল্প খাবারের লোকমা বাড়িয়ে রেখেছে।প্রতিজ্ঞা সংকল্পের দিকে তাকালো।সংকল্প ইশারা করলো খেয়ে নেওয়ার জন্য।মুখে বললো,

“খেয়ে নাও।খাবারের সাথে রাগ দেখিও না।আমার সাথে দেখাও।তোমার রাগের ভাগও আমি অন্য কাউকে দিতে নারাজ,বউ।তুমি আমার,গোটাটাই আমার।তোমার রাগ আমার,তোমার দুঃখ আমার,তোমার কষ্ট আমার,তোমার আনন্দ আমার,তোমার হাসি আমার,তোমার ভালোবাসা আমার।তুমি আস্তো মানুষটাই আমার।আমি তোমার ভাগ কোনো মানুষ তো দূর,কোনো বস্তুকেও দিবো না।”

প্রতিটা শব্দ, বাক্য প্রতিজ্ঞার মস্তিষ্কে আন্দোলিত হতে শুরু করলো।ঢেউয়ের মতো বইছে।শরীর বেয়ে নেমে গেলো প্রশান্তির শিহরণ।সে খাবার খেয়ে নিলো চুপচাপ।সংকল্প খাইয়ে দিলো তাকে।

আঁধারিয়া মেঘ নিজ গতিতে ছুটে চলেছে অজানা গন্তব্যে।কোথায় এই মেঘেদের শেষ গন্তব্য! ছুটে চলাই কি এদের কাজ!এদের সৃষ্টি কি শুধুই আকাশ থেকে আকাশে ছুটে চলার জন্য!চাঁদের আলোয় সাদা মেঘগুলোকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।কত দ্রুত ছুটে যাচ্ছে তারা।কত তাড়া তাদের।ঘড়ির কাঁটায় তখন রাত বারোটা।প্রতিজ্ঞা বেলকনিতে দাঁড়িয়ে চন্দ্রবিলাস করছে।চন্দ্রবিলাস বললে ভুল হবে,চন্দ্রের উপস্থিতিতে দুঃখবিলাস করছে।উদাসী দৃষ্টিতে চেয়ে আছে রাতের আকাশে।মস্তিষ্ক শুণ্য!সারাদিন সংকল্প তাকে আর বিরক্ত করে নি।পাশের রুমে থেকেছে।এখনো পাশের রুমেই আছে সংকল্প।হয়তো প্রতিজ্ঞাকে একা থাকতে দিচ্ছে।খাবার সময় এসে ডেকে গেছে।খাবার টেবিলেও কোনো কথা হয় নি দু’জনের।প্রতিজ্ঞার দুঃখবিলাসে ব্যাঘাত ঘটে পেছন থেকে আসা পুরুষালী ভারী কন্ঠে।কন্ঠে আকুলতা স্পষ্ট।

“অভিমান ভুলে থেকে যাওয়া যায় না আমার সাথে?”

প্রতিজ্ঞা তাকালো পেছনে।বেলকনির আলো জ্বালানো থাকায় প্রতিজ্ঞার চোখে ধরা দিলো এক এলোমেলো মানব।চোখগুলো রক্তলাল,চুলগুলো উষ্কখুষ্ক, চেহারায় মলিনতা, ব্যাকুলতার ছাপ।প্রতিজ্ঞার চোখ দু’টো পুরো মানবকে অবলোকন করতে গিয়ে দৃষ্টি আটকালো সংকল্পের ডান হাতে।হাতের অবস্থা খুউউবই বাজে।রক্ত ঝরছে একটু একটু।চামড়া ছিলে গেছে।প্রতিজ্ঞার বুঝতে সময় লাগলো না সংকল্প দেয়ালে ঘুষি দিয়ে হাতের এমন বেহাল দশা করেছে।চিত্ত মোচড় দিয়ে উঠলো তার।একটু আগেও তো লোকটা পরিপাটি ছিলো।শেষ দেখা হয়েছিলো তিন ঘন্টা আগে খাবার টেবিলে। আর দেখা হয় নি। তিন ঘন্টার ব্যবধানে নিজের কি হাল করেছে লোকটা নিজের।
এরমধ্যেই আবার কানে ভেসে এলো করুণ কন্ঠস্বর।

“বলো না,থেকে যাওয়া যায় না আমার সাথে?”

প্রতিজ্ঞা আবার পিছ দিয়ে দাঁড়ালো।তার চোখ ঝাপসা হয়ে এসেছে।কান্নারা বেরিয়ে আসতে চায়ছে।নিজেকে দূর্বল করা যাবে না এই মুহুর্তে।ঢোক গিলে ধাতস্থ করলো নিজেকে।দীর্ঘশ্বাস ফেলে শান্ত স্বরে ছোট্ট করে বললো,
“নাহ!”

সাথে সাথেই সংকল্প এগিয়ে এলো।প্রতিজ্ঞার পিঠ পিছে দাঁড়িয়ে অস্থির চিত্তে বলে উঠলো,
“কেনো থাকবে না?কি করেছি আমি?পরিস্থিতিটা ভুলে গেছো তুমি?পরিস্থিতিটা কেমন ছিলো আমার জন্য?তুমি সব জানতে না?জেনে বিয়ে করেছো।তাহলে এখন কেনো এমন করছো?”

নিজের পেছনে প্রাণপুরুষের লাগোয়া দূরত্বের অনুভূতি অকথ্য প্রতিজ্ঞার।নিজেকে সামলানো কঠিন।সে পিছু না ফিরেই কঠিন গলায় বললো,
“পরিস্থিতি যেমনই হোক।আমার সাথে যোগাযোগ করা যেতো না?কত দিন,কত রাত আপনার একটা কল,একটা মেসেজের অপেক্ষা করেছি,জানেন?জানেন না আপনি।কতবার নিজেকে ভেঙ্গেছি,কতবার জোড়া লাগিয়েছি, ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে গুড়িয়েছি নিজেকে।শুধু আপনার জন্য, আপনার অপেক্ষায়।আপনি আসেন নি,আসেন নি আপনি।এখন দু’বছর পর এসে আপনি নিজ ইচ্ছায় ফিরে এলেন, নিজ থেকে সংসার করতে চাচ্ছেন।আমাকে রাখতে চাচ্ছেন।এখানে আমার মূল্যটা কোথায়?নেই আমার মূল্য, কোথাও নেই।”

বলে পাশ কাটিয়ে চলে গেলো প্রতিজ্ঞা।সংকল্প রেলিং এর কাছটায় দাঁড়িয়ে রইলো।নিজের দিকটা বুঝানোর ইচ্ছে হলো না।স্পৃহা জাগলো না।নিরবতা পালন করলো,দৃষ্টি আকাশে নিবদ্ধ।

প্রতিজ্ঞা বিছানায় পাশফিরে শুয়ে পড়লো।চোখের প্রান্ত দিয়ে গড়াচ্ছে অশ্রু নামক শিশিরবিন্দু।বারবার চোখ মুছেও লাভ হচ্ছে না।তারা বাঁধ ভেঙ্গেছে।অনেকসময় পর কানে ভেসে এলো করুণ কন্ঠের সুর,

“সে সব বুঝে তবুও দেখে না
লুকিয়ে থাকে আড়ালে,
তাকে দেখেও চেনা যায় না,
ধূসর স্বপ্নে সে এলে।
আমি অবেলায় খুঁজে বেরাই
তবুও দেখা পাই না।
ফিরে আয় না, ফিরে আয় না
তুই ছাড়া ভালো থাকা যায় না।
তোর বায়না সব বায়না,
সব ভুলে ফিরে চলে আয় না।”

প্রতিজ্ঞার চোখ দিয়ে অশ্রুরা গড়িয়ে পড়ছে।থামার নাম নেই।হঠাৎ টের পেলো সংকল্প বেলকনি থেকে ঘরে আসছে।ঘরে আলো নেই,অন্ধকারাচ্ছন্ন।সংকল্পের উপস্থিতি টের পেয়ে প্রতিজ্ঞা চোখ বন্ধ করে ফেললো।ঘুমের অভিনয় করতে শুরু করলো।সংকল্প এসে প্রতিজ্ঞার পাশে খাটের সাথে পা ভাজ করে মেঝেতে বসলো।ঘর জুড়ে পিনপতন নিরবতা।সংকল্প প্রতিজ্ঞাকে ডাকলো কয়েকবার।কোনো সাড়াশব্দ পেলো না।বুঝে নিলো প্রতিজ্ঞা ঘুমোচ্ছে।সে প্রতিজ্ঞার নরম, মসৃণ হাতটা নিজের পুরুষালি শক্ত হাতে মুঠোবন্দি করলো।মাথা ঠেকালো তাতে।
নরম সুরে বলতে লাগলো,
“সব ভুলে যাও প্রতিজ্ঞা।আমার ঐ অবস্থা,পরিস্থিতি তুমি বুঝবে না।যতটা কষ্ট তুমি পেয়েছো,আমি হয়তো ততটা পাই নি।তবে কমও পাইনি।ভালোবাসার মানুষকে অনিচ্ছায় দূরে রাখার কষ্ট কতটা তুমি বুঝবে না।নিজের করে পেয়েও তাকে দূরে রেখেছি।প্রতিনিয়ত প্রণয়ের দহনে পু*ড়েছি,ছাই হয়েছি।রাতের পর রাত বিনিদ্র কাটিয়েছি।শূন্য বুকে ছটফট করেছি।কত ইচ্ছে করেছে ছুট্টে চলে আসি তোমার কাছে।কিন্তু অপরাধবোধ আটকে দিয়েছে। তোমার সাথে যোগাযোগ করি নি,কিন্তু তোমার প্রতিটা খবর আমার নখদর্পনে ছিলো।তুমি বুঝবে না,তুমি জানবে না।বুঝাতেও চাই না,জানাতেও চাই না।আমি তোমাকে ভালোবাসি প্রতিজ্ঞা,অনেক ভালোবাসি……।”

এভাবে বিড়বিড় করতে করতে অনেকসময় পর ঐ অবস্থাতেই প্রতিজ্ঞার হাতের উপর ঘুমিয়ে পড়লো সংকল্প।সংকল্পের সাড়াশব্দ না পেয়ে চোখ খুললো প্রতিজ্ঞা।তার চোখ জলে টইটম্বুর।সে সাবধানে উঠে বসলো।নেমে গেলো বিছানা ছেড়ে।পুরো ফ্ল্যাট খুঁজে কা*টাছেঁ*ড়ার মলম খুঁজে বের করলো।আলতোভাবে সংকল্পের হাতে লাগিয়ে দিলো।তখনই দপ করে চোখ মেলে সংকল্প।চোখগুলো রক্তলাল হয়ে আছে।প্রতিজ্ঞা তাকে ধরে উঠিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিলো।সংকল্প প্রতিক্রিয়া করলো না।সে চুপচাপ দেখে গেলো প্রতিজ্ঞাকে।

#চলবে….