#রঙীন ফানুস
#আফরিন ইভা
#পর্ব-১২
__________________
—-“এমন সময় এমন কেউ আসবে রাজ কখনো ভাবেনি।”
কেউ একজন প্রচন্ড আবেগে রাজ কে জড়িয়ে ধরলো।”
“এমন হুটহাট জড়িয়ে ধরা রাজ কখনো আশা করেনি।”
“ওহ্ ডিয়ায় তুমি জানো আমি তোমাকে কতটা মিস করেছি?
তুমি তো আমার কোনো খবরই নাওনা।
আমি কিন্তু তোমার সব
খবর ঠিকই রাখি।
সে যাই হোক, শুনলাম তুমি না-কি বিয়ে করেছো?”
“পরী মেয়েটার দিকে তাকালো।
বেশ সুন্দরী বটে, খুব বেশিই আধুনিক ড্রেস দেখেই বুঝা যায়। কাজল কালো চোখ, মায়াবী লাগছিল মেয়েটাকে। সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মেছে দেখেই বুঝা যায়। পরী
মেয়েটার থেকে চোখ সরিয়ে রাজের পানে তাকালো।”
“রাজ কে জড়িয়ে ধরা, রাজের মায়ের খুব একটা ভালো লাগে নি।”
” রাজের কাছেও ব্যাপার টা খুব অস্বস্তিকর লাগছে। রাজ ইতু কে গলা থেকে সরিয়ে নিলো।
ইতু কে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো।”
“ইতু হচ্ছে রাজের বান্ধবী।
লন্ডনে থাকাকালীন রাজের সাথে ইতুর পরিচয়। ”
“রাজের মা পরীর দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভাবলো।
রাজের মা কাজের মেয়ে কে দিয়ে ইতু কে পাঠিয়ে দিলো ফ্রেশ হতে।”
“পরী নিরব দর্শকের ন্যায় সব দেখছে।
মুখে টুঁশব্দ টুকুও করেনি।
পরীর কাছে সব যেনো স্বপ্ন লাগছে। ”
“রাজের বুক টা কাঁপছে ভীষণ রকম কাঁপছে। রাজ পরীর সাথে যা একটু সহজ হতে যাচ্ছে ততোধিক বাঁধা এসে থামিয়ে দিচ্ছে। রাজের বিশাল আকাশে কালো মেঘ এসে বার-বার শুভ্রতা কে আঁধারে ঢেকে দিচ্ছে। রাজ জানে না কি হবে, কিছুই বুঝতে পারছেনা।
ক্লান্ত চাহনিতে পরীর দিকে তাকালো রাজ।
পরীর মুখ খানা দেখে রাজের বুকে হাহা কারের ঝংকার বেজে উঠল।
বিধাতার চরম লিলাখেলা। ”
“যাকে চাই এ প্রাণ ভরে
থাকিতে পারি না তাঁহার তরে
রঙীন আকাশে কালো ছায়া
ভয় করছে আজ অজানা।”
“রাজ পরীর হাত ধরলো।
” পরী ভেজা-ভেজা চোখে রাজের দিকে তাকালো। চোখে আজ হাজারো আকুতি। পরী ভাবছে সব কথা যদি চোখের ভাষায় বুঝানো যেতো তাহলে পৃথিবীটা আজ এতো রহস্যময় হতো না।
রহস্যময় জীবন যে কতটা কষ্টের পরীর তা খুব করেই জানা আছে।
রাজের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসি হাসলো পরী।”
“পরীর মুখ ভরা হাসিতে রাজের বুকে যেনো প্রশান্তি ছেয়ে গেলো।
রাজ ইশারায় পরী কে খেতে বললো।”
“পরীও বাধ্য মেয়ের মতো খেতে লাগলো।
খাচ্ছে বললে ভুল হবে, খাওয়ার চেষ্টা করছে। খেতে গিয়েও যেনো গলায় আঁটকে যাচ্ছে পরীর।
রাজকে এভাবে কোন মেয়ের জড়িয়ে ধরা পরী কে ভীষণ জ্বালাচ্ছে।
পরীর বুকে যেনো বিশাল পাথর চাপা পড়েছে।
পরী নিজেই জানে না এতটা ছাপা কষ্টের কি আছে। ”
“রাজ পরী কে ভাত খেতে বলে নিজেও খাওয়ার চেষ্টা করছে। খাবার কিছুতেই যেনো গলা দিয়ে নামছে না।
রাজ নিজেও জানে, পরী, মম ব্যাপারটা খুব একটা ভালো চোখে নেননি।
আর পরী যে খুব কষ্ট পাচ্ছে তা পরীর চোখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে।
রাজের মম ইতু কে দেখতে গেলে রাজ পরীর কাছে আসলো। পরীর কাছ থেকে প্লেট টা নিয়ে পরী কে কোমল স্বরে বললো,”পরী দাও আমি খাইয়ে দিচ্ছি। সেই কখন থেকেই নাড়াচাড়া করে যাচ্ছো,?”
“খুশিতে পরীর চোখ মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো।পরী অতি আনন্দে কিছুক্ষণের জন্য ব্যাপারটা ভুলে গেলো।”
–“রাজ পরম যত্নে পরী কে খাইয়ে দিলো।”
.
.
.
— ” পরী ভাবতেই পারছেনা পরীর কপলেও হৃদয়ের অতল গহ্বরের এতোটা ভালোবাসা অপেক্ষা করছিলো।”
পরীও নিজ হাতে রাজ কে খাইয়ে দিলো।
.
.
.
“বাহিরে ঝিরিঝিরি বাতাস, রাতের আকাশে হাজারো তারকার মেলা, চাঁদ মামা উঁকি মেরে লুকোচুরি খেলছে, জোনাকি পোকাড়া দল বারি করে জ্বলজ্বল করে উড়ে বেড়াচ্ছে। তা দেখে প্রেমিক হৃদয় আজ মরিয়া হয়ে উঠেছে। ”
“বেলকনিতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবছে পরী। প্রতিটা সৌন্দর্যের মাঝে খুঁত থাকে। এই চাঁদ চাঁদেরও কলঙ্ক আছে হয়তো, জোনাকিরা জ্বলজ্বল করে আলোকিত করার ক্ষমতা রাখলেও ওদেরও একটা কমতি আছে।
পরীর নিজেরও দূর্বলতা আছে।
পরী ভাবছে রাজ কে খুব শীঘ্রই বলে দিবে।
পরী ভাবছে রাজ সব জানতে পেরে যদি পরী কে ছেড়েও দেয় তাতে পরীর কোনো রকম আপত্তি থাকবে না। তবুও পরী সত্যিটুকু জানাতে চায়।”
“হঠাৎ পেছন থেকে কেউ এসে পরীর হাত ধরলো। ”
“কি ব্যাপার এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি ভাবছো?”
“পরী মৃদু হেসে জবাব দিলো, ” ভাবছি আপনাকে নিয়ে। ”
–” বলো কি আমার বুঝি এতটা ভাগ্য আছে,? ভুল করে আকাশের চাঁদ বুঝি আমার ঘরে আসলো?
আমার পরী আমাকে নিয়ে ভাববে তা আমি ভাবতেও পারছি না । ”
–“পরী রাজের দিকে নেশা ভরা নয়নে তাকালো।
রাজের চোখে এক অপরূপ মায়া যেনো আলোকময় করে রেখেছে।
রাজ ঠোঁটগুলো চেপে ধরে রেখেছে।
রক্তিম ঠোঁটগুলো গোলাপের পাপড়ির ন্যায়,সৌন্দর্যের ঘোরে যেনো কাছে টানছে।
পরীর ইচ্ছে করছে রাজের কালো তিল টায় হাত বুলিয়ে দিতে।”
“পরী অভিমানী চোখে রাজের দিকে তাকিয়ে বললো,” কেনো আমি বুঝি আপনাকে নিয়ে ভাবতে পারি না। সব ভাবনা বুঝি আপনার,?”
–” পরী এ চোখে তাকিয়ো না, আমি যে নিজেকে ধরে রাখতে পারি না।
তোমার চোখে যে আমি আমার সর্বনাশ দেখতে পাই, তোমার ঠোঁটের স্পর্শ পেতে আমি বড্ড তৃষ্ণার্ত,তা কি বুঝবেনা? ”
–” রাজের চোখে পরী কে কেমন যেনো বিচলিত দেখালো।
রাজ পকেট থেকে রুমাল বের করে পরীর মুখ মুছিয়ে দিলো।”
“দরজা ধাক্কানোর বিকট শব্দে রাজ, পরী দু’জনই বেশ চমকালো, একে অন্যের মুখপানে অবাক দৃষ্টিতে তাকালো।
রাজ পরী কে অভয় দিয়ে দরজা খুলে বেশ চমকালো।”
“ইতু শর্টস প্যান্ট,শর্টস গেঞ্জি পড়ে হন্তদন্ত হয়ে রুমে প্রবেশ করলো।
রুমে এসে রাজের হাত ধরলো।
রাজ কে রিকোয়েস্ট করতে লাগলো, রাজ আমি ঐ ঘরে থাকবো না, বড্ড ভয় লাগছে। আমার বুকে হাত দিয়ে দেখ হার্টবিট কতো দ্রুত চলছে। আমার কথাগুলো তোর বিশ্বাস হচ্ছে না বলে ইতু রাজের হাত টা টেনে বুকে রাখলো।”
–” ইতুর কন্ঠস্বর শুনে পরী রুমে প্রবেশ করে যা দেখলো, কাঁচের টুকরোর ন্যায় পরীর হৃদয় ভেঙে গেলো।
পরী কল্পনাও করেনি এমন কিছু দেখবে। ”
—” রাজ পরী কে দেখে নিজের হাত টা সরিয়ে নিলো।”
রাজ স্বাভাবিক ভঙ্গিতে ইতু কে ডেকে বললো ইতু ও আমার ওয়াইফ, তোর সাথে তো আলাদা করে পরিচয় করানো হয়নি।
ইতুর সাথে পরী কে পরিচয় করানোর একটাই মানে তা হলো ইতু যেনো মার্জিতভাবে চলাফেরা করে রাজের সাথে ।
রাজ অবাক ভঙ্গিতে ইতু কে বললো,সে কি রে এখানে ভয়ের কি আছে?
আর তুই তো লন্ডনে একা একাই থাকতি!”
–” ইতু মুখ টাকে ভয়ার্ত করে জবাব দিলো, নারে লন্ডন আর বাংলাদেশের মধ্যে অনেক ডিফারেন্স আছে।
তুই তো লন্ডন কে রেখে বাংলাদেশ কে-ই বিয়ে করলি। তাহলে বুঝ কতোটা ডিফারেন্স?
আচ্ছা বলতো ভাবির মধ্যে যা আছে লন্ডনী মেয়েদের মধ্যে কিসে কমতি বলতো আমায়? ”
“পরী ইতুর কথা বুঝতে পারে। খোঁচা মেরে কথাটা পরী কেই বলা হয়েছে। ”
–” রাজ পরীর মুখের দিকে তাকিয়ে ইতুর উদ্দেশ্যে বললো,” সে তুই বুঝবি না, তোকে আরেক দিন বুঝিয়ে বলবো।
চল তোকে রুমে দিয়ে আসি। ”
—” না—- বলে ইতু চিৎকার দিলো।
রাজ আমি যাবনা, আজ আমি তোদের সাথেই ঘুমবো বলে ইতু বেডে শুয়ে গেলো।”
–” পরী রাজ কে চোখের ইশারায় আশ্বাস দিলো।”
— ” পরীর আশ্বাস পেলেও রাজের কিছুই ভালো লাগছে না। এদিকে ইতু কেও কিছু বলতে পারছে না।
শত হোক ইতু তো রাজের ফ্রেন্ড।”
—” রাজ সোফায় গিয়ে শুয়ে পরলো।”
—” পরীও ইতুর পাশে গিয়ে শুয়ে গেলো।
পরী এপাশ-ওপাশ করছে কিন্তু কিছুতেই ঘুম আসছে না।
পরী, রাজের সাথে ঘটে যাওয়া সব কিছু নিয়ে ভাবছে পরী। রাফি চলে যাওয়া, ইতু ফিরে আসা।
এতো বাধা কেনো?
বিধাতা কি সত্যি রুষ্ট পরীর প্রতি?
এই পৃথিবীর সুখ হয়তো পরীর জীবনে সইবে না।
পরীর যে এতো কষ্ট তা একমাত্র বালিশ সাক্ষী।কতো রাত নির্ঘুম কাটিয়ে কাটিয়ে বালিশ ভিজিয়েছে তা একমাত্র বিধাতাই জানে।”
–” আর এদিকে রাজ,রাজের চোখেও কোনো ঘুম নেই। পরী কে পাশে নিয়ে ঘুমোতে ঘুমোতে রাজের যেনো নেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঘুম গুলো বড্ড অভিমান করেছে পরীর মতো। কতোক্ষণ কাছে টানে, কতোক্ষণ দূরে সরিয়ে রাখে।
রাজ পরীর মিষ্টি হাসির মুখ টার কথা মনে করে মিষ্টি করে হাসলো।
অনেক প্রতিক্ষার পর পেয়েছি তোমায়, তোমার মন ভুলানো হাসি বড্ড কাছে টানে পরী।
তোমাকে চেয়ে চেয়ে দেখে হাজার পথ পাড়ি দিতে রাজি আমি।
আনমনে পরী কে নিয়ে ভাবতে ভাবতে রাজ ঘুমিয়ে পরলো।”
–” খুব সকাল সকাল রাজের মম রাজের ঘরে আসলো। এসে দেখলো রাজ সোফায়, ইতু বেডে শুয়ে আছে বেশ খোলামেলা ভাবে।
সকাল সকাল এসব দেখে উনি রেগে গেলেন।”
পরী সবেমাত্র ওয়াশরুম থেকে বের হয়েছে।
শ্বাশুড়ি কে এতো সকাল নিজেদের রুমে দেখবে পরী ভাবেনি। ”
“পরী মা বলে কিছু বলতে যাবে, পরীর শ্বাশুড়ি হাত দিয়ে থামিয়ে দিলো।”
“পরী ভয় পেয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো।”
“রাজের মা রাজকে ডাকলো।
মায়ের ডাকে রাজ চোখ মেলে তাকিয়ে বললো, ওহ্ মম আর একটু ঘুমাই এতো সকাল সকাল ডাকছো কেন,?”
” রাজের মা চেঁচিয়ে উঠলো, রাজ উঠতে বলছি, আমার কিছু কথা আছে। ”
“রাজের মায়ের চিৎকারে ইতুও চোখ ঢলতে ঢলতে উঠে বসলো।
ইতু যেনো সব ঝাপসা দেখছে।
সব কিছু বুঝতে ইতুর একটু সময় লেগেছিল।”
“রাজ বিরক্তি ভাব নিয়ে উঠে বসলো। ”
“রাজের মা চোখমুখ শক্ত করে রাজ কে জিজ্ঞেস করলো, ” রাজ এগুলো কি,?”
“রাজ মায়ের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে জবাব দিলো কোনগুলো? ”
“তোদের স্বামী স্ত্রীর রুমে ইতু কি করছে? ”
“রাজ কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। ”
“রাজের চিন্তিত মুখ দেখে পরী এগিয়ে আসলো।”
-#চলবে—–
.
.