#রঙীন ফানুস
#আফরিন ইভা
#পর্ব-১৬
__________________
“পরী লোকটার দিকে তাকিয়ে দেখলো মানুষটা সেই আগের মতোই আছে, মুখে একরাশ মুগ্ধতা যেনো লেগেই থাকে।
একসময় এ মানুষটার জন্য বড্ড তৃষ্ণা ছিলো মনে। কিন্তু মানুষটা তো পরী কে দূরদূর করে তাড়িয়ে দিয়েছিল।
একটুখানি পায়ে জায়গা চেয়েছিলো কিন্তু না, উনি কিছুতেই পরী কে রাখবেনা, যে উনার কোন কাজে আসবে না তাকে বউয়ের পরিচয়ে রাখতে তিনি নারাজ।”
“এ লোকটাও একসময় পরীর বুকে ঝড় তুলতো কিন্তু সে ঝড়ে কাঁপুনি পর্যন্ত ছিলো পরীর জারগা।”
” পরী কে প্রথম দেখায় এ মানুষট না-কি ভীষণ ভালোবেসেছিল, কিন্তু এ ভালোবাসা যে শুধু চাহিদা মেটাতে সীমাবদ্ধ পরী তা জানতোনা। ”
” পরী রাজের দিকে এক নজর,কথা বলা লোকটার দিকে আরেক নজর তাকালো।
দু’জনই দেখতে অনিন্দ্য সুন্দর, কেউ কারো থেকে কম নয় কোন কিছুতে , কিন্তু মনের দিক থেকে দু’জনের অনেক পার্থক্য।”
“লোকটি পরী কে আবার জিজ্ঞেস করলো, বেশ আছো দেখছি, আগে বললেই পারতে
নাগর জুটিয়ে রেখেছো, এতো বড় মিথ্যা না বললেও পারতে। ”
ছিহ ছিহ আমি বুঝতে পারছিনা মানুষ এতটা নিছ আর জগন্য হতে পারে। ”
“মানুষটার কথায় আজও স্পষ্ট মানুষটা পরী কে ভীষণ ঘৃনা করে। ”
” লোকটার কথায় রাগে রাজের হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে আসছে, রাজ অবাক হচ্ছে, লোকটা পরীর সাথে কেন এভাবে কথা বলছে। আর পরী ‘ই’ বা কেন এভাবে সহ্য করছে।
রাজের ইচ্ছে করছে লোকটাকে পিটিয়ে মাথা ফাটিয়ে দিতে।
কিন্তু আবার ভাবলো যদি পরী কষ্ট পায়।”
” পরী তুমি কথা বলবেই কি করে, কথা বলার মুখ আছে তোমার?”
তোমার মতো চরিত্রহীনরা এগুলোই পারে।
আজ এজন তো কাল আরেকজন।”
“রাজ পরীর দিকে তাকিয়ে দেখলো, পরীর দু-চোখ বেয়ে পানি পরছে। কেঁদে কেঁদে বুক ভাসিয়ে যাচ্ছে পরী।
রাজ আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারেনি।
লোকটার কালার চেপে ধরলো।”
” এগুলো দেখে পরী আর নিশ্চুপ থাকেনি, রাজ কে বললো,রাজ ছাড়ো, উনি আমার…
“রাজ কৌতুহলি দৃষ্টিতে পরীর মুখপানে তাকিয়ে রইলো কিছু শুনবার জন্য।পরীর মুখ দেখেই রাজ বুঝতে পেরেছে পরীর মনে কিছু একটা চলছে। ”
” কথাটা রাজের সামনে প্রকাশ করতে পরীর বেশ কষ্ট হচ্ছে। পরী মুখ ফুটে অস্ফুটে বলেই ফেলো উনি আমার হাজবেন্ড ছিলেন। ”
” পরীর মুখ থেকে কথাটা শুনে মুহুর্তেই রাজের মুখে একরাশ মেঘ এসে জমে গেলো।
মূর্তির ন্যায় রাজ তাকিয়ে রইলো পরীর দিকে ।
মুখের ভাষা যেনো হারিয়ে ফেলেছে রাজ। ”
” লোকটা আর কেউ নয় পরীর হাজবেন্ড সীমান্ত। রাজের আগে যিনি পরী কে ডিভোর্স দিয়েছিল। ”
” পরীর বুক ফেটে কান্না আসছে।
কেন দেখা হলো সীমান্তের সাথে।
পুরনো ব্যাথাটা কেন এসে লাগছে বুকে।
নিভু নিভু চোখে তাকালো পরী।
রাজের যে কিছু একটা হয়েছে পরী বেশ বুঝতে পারছে।
—” সীমান্ত পরী কে বেশ কিছু কটু কথা শুনিয়ে চলে গেলো।”
–” পরী কোনো দিকে তোয়াক্কা না করে রাজের কাছে এসে হাত ধরলো।
কিছু কথা বলবে বলে। ”
” কিন্তু রাজ নির্বিকার ভাবেই দাঁড়িয়ে রইলো। পরীর হাত ধরাতে কোন সাড়া দিলো না। ”
“পরীর মনে ভয় এসে ভিড়ে গেলো।”
“পরীর সাথে রাজ আর একটা কথাও বলেনি। দ্রুত গতিতে গাড়িতে গিয়ে বসলো।”
.
.
.
” “পরীর বুক টা কষ্টে চৌচির হয়ে যাচ্ছে।
পরী এক হাতে চোখের পানি মুছছে আর ভাবছে রাজও কী তাহলে সীমান্তের মতো, নারী পিপাসু লোক?
কথাটা ভেবে পরীর খারাপ লাগছিলো।
খারাপ লাগা শরীরটা যেনো আরো খারাপ হতে লাগলো। মাথাটা ঘুরতে লাগলো পরীর, সোজা হয়ে যেনো দাঁড়াতেই পারছে না আর, তবুও বহুকষ্টে সাহস করে দাঁড়িয়ে থাকলো।
আস্তে করে হেঁটে গাড়িতে গিয়ে বসলো।”
” পরী যে এসেছে রাজের ওদিকে কোন খেয়াল নেই।
রাজ ভাবছে পরী কে তো সব জেনেশুনে বিয়ে করেছে তাহলে ওর হাসবেন্ড কে দেখে এতো খারাপ লাগার কি আছে।
লোকটার কথাগুলো রাজ কে ভীষণ ভাবাচ্ছে। ”
” রাজ পরীর দিকে একনজর তাকিয়ে সামনের দিকে চোখ ফিরিয়ে নিলো।
সোজা হয়ে বসে ড্রাইভ করতে লাগলো। ”
“পরী শরীর কে আর ধরে রাখতে পারছে না, সিটে গাঁ এলিয়ে দিলো।
ভীষণ রকম ক্লান্ততা এসে দেহ ও মনে ভীরে গেল। মন যে আমাদের শরীরের সাথেই যুক্ত, মন ভালো তো সব ভালো,মন খারাপ তো শরীর খারাপ।
পরী সিটে মাথা রেখে বাহিরে তাকিয়ে আছে। বাহিরে প্রচন্ড বাতাস, কিন্তু তবুও যেনো পরীর নিঃশ্বাস আটকে আসছে।
পরী সীমান্ত কে বিয়ে করলেও সীমান্ত থেকে পেয়েছে রাশিরাশি কষ্ট, পেয়েছে ছলনাভরা ভালোবাসা। যে ভালোবাসায় ছিলো শুধু কাঁটা যুক্ত ব্যাথা।”
” বিয়ের প্রথম প্রথম সীমান্ত পরী কে খুব যত্ন করলেও কিছুদিন পর যখন পরীর সত্যটা জানতে পারে সীমান্ত পরী কে খুব অত্যাচার করে, মারধরও করতে শুরু করে।
ভাবলে এখনো কান্না পায় পরীর। ”
“না পরী আর অমানুষ টার কথা ভাবতে চায় না। ”
” “পরী রাজের দিকে অভিমানী চোখে তাকালো, রাজ যেভাবে ড্রাইভ করছিলো ঠিক একইভাবে ড্রাইভ করে যাচ্ছে । ”
.
.
.
” বাসার এসে হনহনিয়ে রাজ রুমে চলে গেলো।”
“রাজের মা পরী কে দেখে বললো, কিরে মা তোর মুখ টা এমন শুকনো লাগছে কেন?
তাহলে কি রাজ তোর খেয়াল রাখেনি।
দাঁড়া আমি এখুনি রাজ কে ডেকে জিজ্ঞেস করবো।”
” পরী মনে মনে চিন্তা করলো, না এখন কিছুতেই রাজের কাছে কাউকে যেতে দেওয়া যাবে না। নয়তো অনর্থক হয়ে যাবে।
পরী বললো না মা, উনি এখন ক্লান্ত।
আর তুমি এতো চিন্তা করছো কেন?
রাজ উনি আমার খুব খুব খেয়াল রেখেছে।
কথাগুলো পরী বলছে আর ঘামছে।
কথা শেষ করে পরী দ্রুত নিজের রুমে চলে গেল।”
রুমে গিয়ে পরী পুরো অবাক, রাজ কে তন্নতন্ন করে খুঁজে দেখলো, কিন্তু না কোথাও রাজ নেই।
“পরীর মনে অচেনা ভয় এসে ভিড় জমাতে লাগলো।
পরীর দু-চোখ শুধু রাজ কেই খুঁজে যাচ্ছে।
রাজ কে এক নজর দেখতে মন আজ মরিয়া হয়ে উঠেছে পরীর। ”
“পরী হতাশ হয়ে ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়ালো ।
পরী ভীষণ রকম চিন্তায় পড়ে গেলো ।
রাজ কোথায় যেতে পারে ভাবতে লাগলো?
পরীর মাথায় কিছুই ঢুকছে না।
হতাশ হয়ে আকাশের দিকে তাকালো পরী।
এই কষ্টের দিনে আল্লাহ ছাড়া আর কোন ভরসা নেই। পরী আল্লাহর কাছে মনে মনে প্রার্থনা করলো , রাজ যেখানেই থাক যেনো ভালো থাকে।
রাজের কথা মনে করে কষ্টে পরীর বুক টা ছিঁড়ে যাচ্ছে। ”
” হঠাৎ ছাদের কথা মনে পরলো পরীর।”
“পরী ভাবলো রাজ তো ছাদেও যেতে পারে।
যেই ভাবা সেই কাজ, পরী পরনের শাড়ি পড়ে-ই ছাদে গেলো।
একরাশ খুশি এসে মনে দোলা দিলো পরীর ।
রাজ ছাদের কর্ণারে দাঁড়িয়ে মুখ ভারী করে নিচে তাকিয়ে কি যেনো ভাবছে।”
–” পরী ভয়ে ভয়ে রাজের কাছে গেলো।”
“রাজের এ অবস্থার জন্য পরী নিজেকেই দায়ী করছে।
কাছে গিয়ে রাজের হাত আঁকড়ে ধরলো পরী।
টান টান উত্তেজনা নিয়ে বলতে লাগলো, কষ্ট লাগছে ভীষণ রাজ। আপনি কী আমার কথাগুলো শুনতে পাচ্ছেন। আমার চোখে তাকিয়ে দেখুন এ-ই চোখ দু’টি আপনাকে খুঁজে বার-বার। ”
“পরীর উপস্থিতি টের পেয়ে রাজ পেছন ফিরে তাকালো।
তাকিয়ে দেখলো পরী ভীষণ কাঁদছে।
কেঁদে কেঁদে চোখমুখ ফুলিয়ে ফেলছে। ”
“পরীর এই বিমর্ষ চেহারা দেখে রাজের বুক ধক করে উঠলো।
রাজ আর নিজেকে ধরে রাখতে পারে নি।
পরী কে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো।”
“পরী আমি পারি নি জবাব দিতে, খুব বেশি কষ্ট দিয়ে ফেললাম তোমাকে।আমি অপরাধী।
লোকটা তোমাকে এত কথা বলে গেলো, কিন্তু আমি বাঁধা দিতে গিয়েও দিতে পারি নি।
তুমি আর লোকটা কি বিষয়ে কথা বলেছো আমি জানি না, জানতেও চাই না।
তবে এটা ঠিক আমার খুব কষ্ট হয়েছিল, লোকটা কে যখন স্বামী হিসেবে পরিচয় দিয়েছিলে। লোকটা কি আদৌও কারো স্বামী হওয়ার যোগ্য! তা আমার জানা নেই।
লোকটা হয়তো খুব বাজে ছিলো।”
“রাজ পরীর গালে আলতো করে দু-হাত রেখে বললো,জানি লোকটা ভীষণ কষ্ট দিয়েছে তোমায়।
ঐ কষ্টগুলো হয়তো কখনো গুছবে না, কিন্তু কথা দিচ্ছি, দূর থেকে হলেও তোমাকে ভালোবেসে যাবো, কোন কষ্ট পেতে দেবো না। ”
” রাজের কথা শুনে পরীর ক্লান্ত মন যেনো শান্ত হলো।”
” পরী কখনো ভাবে নি রাজ পরী কে এসব বলবে?
পরী তো ভীষণ ভয় পেয়েছিল। ভেবেছিল রাজ হয়তো খুব রাগ করেছে।
আসলে সকল পুরুষ এক নয়।
কেউ ভালোবাসে মনকে, আর কেউ ভালোবাসে রক্তমাংসের দেহকে।
মনের ভালোবাসাই প্রকৃত ভালোবাসা, যাতে তৃপ্ত হৃদয়। ”
” পরী আজ নয়ন ভরে দেখছে রাজ কে।
ভাগ্যক্রমে পেয়েছে রাজকে।
রাজ থেকে বহুদূর গিয়েও রাজের ভালো টা-ই কামনা করবে পরী , রাজ ভালো থাক পরী এটাই চায়।
এই মানুষটার জন্য পরী বার-বার এ পৃথিবীতে কষ্ট পেতে চায়। হাজার বাহানায় খুঁজে পেতে চায় রাজ কে। ”
” কষ্ট দিয়েছি?
সরি বউ, আমাকে যা শাস্তি দেবে মাথা পেতে নিবো।
কিন্তু তোমাকে শাস্তি দিতেই হবে।
পরী অবাক চোখে তাকালো।
এ-ই না না শাস্তি দিতে হবে না চলুন নিচে চলুন।
“রাজ মানতে নারাজ, না পরী তা বললে হবে না। শাস্তি আমাকে পেতেই হবে।”
“পরী দুষ্টু হাসি দিয়ে রাজকে বললো, ঠিক আছে কানে ধরে ওঠবস করুন দশবার।”
“পরীর কথা শুনে রাজের গলা শুকিয়ে গেলো। কানে ধরবে তা-ও এই খোলা ছাঁদে।
রাজের কানে ধরা অন্য ছাদ থেকে দেখা যাবে নিশ্চয়। এ নিয়ে শঙ্কা পাচ্ছে রাজ।”
“রাজ আর কোন উপায় না পেয়ে দশবার ওঠবস করতে লাগলো।”
“রাজের দিকে তাকিয়ে পরী দুষ্টু হাসি হাসলো।রাজের চেহারাটা দেখার মতো হয়েছে একদম, ভীষণ মজা পাচ্ছিল পরী।
পরী মনে মনে আফসোস করলো,
আহা বেচারা।”
“রাজ পরী কে কোলে নিয়ে নিচে নামলো।”
“পরীর শাশুড়ি তা দেখে মুচকি মুচকি হাসলো।”
” তা দেখে অন্যকেউ জ্বলে যাচ্ছিলো।”
#চলবে—-