আমার_একটাই_যে_তুই পর্ব-৪১

0
5612

#আমার_একটাই_যে_তুই❤️
#সুরাইয়া_সাত্তার_ঊর্মি
#পর্ব_৪১

কুহু রুমে পায়চারী করছে। তখন তেমন কেন নাটক করলো? বুঝেই উঠতে পারছে না সে! পুড়োটাই বাংলা সিনেমার কাহিনী হয়ে গেছে। এবার তো ইউসুফ ওরে চিবিয়েই খাবে। ভেবেই কুল কুল ঘামচ্ছে।হয়তো ইউসুফ ভাই এসেই বলবেন,,

–“তখন নেকামি কেন করলি? যা বের হয়ে যা এবার আমার রুম থেকে! এমন ন্যাকামি মার্কা বউ কোনো প্রয়োজন নেই আমার সো গেট লষ্ট..!”

তখন কই যাবে কুহু?এসব ভাবার মাঝেই রুমে খাবার প্লেট হাতে প্রবেশ করে মিশু। মুখটি তার অন্ধকারে ছায়া।কুহু তাকে দেখে থেমে গেল। মায়া মায়া চোখে মিশুর দিক তাকিয়ে রইলো। এ মানুষটি এক কালে তার কত আপনি না ছিল?কত রাত কোলে মাথা পেতে ঘুমিয়েছে।কত গল্প করছে। ইউসুফ ভাইয়ার বকার হাত থেকে কত বার বাঁচিয়েছে হিসেব নেই। আর আজ সেই মানুষটি তার উপর রাগ-অভীমান করে! কি করবে সে? কান্না পাচ্ছে কুহুর খুব। সে যে চেপে রাখতেই পারছে না তার নয়নজল। কুহু আচানক ভাবে মিশুকে ঝাপটে ধরে হু হু করে কেঁদে উঠলো। মিশু হকচকিয়ে গেল।তার বুকেও ধক করে উঠলো। হুট করেই বিচলিত হয়ে বলল,,

–” কি হলো কুহু কান্না করছিস কেন? এনি থিং রং? ভাইয়া কি আবার কিছু বলেছে?”

কুহু মাথা তুলে ভাঙ্গা গলায় বলল,,

–” মিশুপি! প্লীজ আর রাগ করে থেকো না! আমি আমার সেই মিশুপিকে চাই। যার কোলে মাথা রেখে রাতের পর রাত জেগেছি।(মিশুর দু হাত তুলে সেখানে গাল ছুয়ে বলল)এ দু হাতে কত খাবার খেয়েছি। প্লীজ আপি সব ভুলে যাও। আবার নতুন করে শুরু করি। প্লীজ আমার সেই মিশুপিকে ফিরিয়ে দাও।জানো হস্টেলে যখন একা রাতে ঘুুমতে যেতাম তোমার কথা মনে পড়তো খুব মন চাইতো ছুটে চলে আসি তোমার কাছে। তোমার কোলে মাথা রেখে ঘুমোই একটু শান্তির ঘুম। কিন্তু তা সম্ভব ছিলোই না।”

কুহু হাউ মাউ করে কান্না করতে লাগলো।মিশুরো খুব খারাপ লাগচ্ছে। সেও মূলত্য সব ঠিক করতেই এসেছে। ইউসুফ ভাই তার ভুল আজ ভেঙ্গে দিয়েছে। কুহুর কান্নায় তারও আজ চোখের জল উপচে পড়ছে। সত্যি সে এই বাচ্চা মেয়েটির সাথে অন্যায় করেছে। যেখানে তার কোনো দোষ ছিল না। মিশু কুহুর মাথায় পরম যত্নে হাত বুলালো বললো,

–” কাদিস না। আমিও অনেক ভুল করেছিরে আমাকে ক্ষমা করে দিস”

মিশুও কাঁদতে লাগলো। দুজনে আজ একে অপরকে ঝাপটে ধরে কাঁদছে। আজ এত বছরের বিচ্ছেদ যেন ভেঙ্গে গুড়িয়ে চুরমার হয়ে গেল। তারা অনেক গল্প করলো। পেটের ভিতর যা ছিল একে ওপর সব ঝেড়ে ফেললো। মিশু নিজ হাত আজ কুহুকে খাইয়েও দিল। খাওয়া শেষে ওকে নিয়ে ইউসুফের রুমে বসিয়ে দিল। যাওয়ার আগে মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,,

–” ভাইয়াকে পাঠাচ্ছি। ওল দ্যা বেষ্ট।”

বলে চোখ টিপলো মিশু। তা দেখে লজ্জায় লাল-নীল হয়ে উঠলো তার চাঁদমুখ খানা। কি লজ্জা? মিশু চলে গেল। কুহু গুটি শুটি মেরে খাটের এক পাশে বসে আছে। মনের মাঝে অচেনা-অজানা ভয় আঁকড়ে ধরছে। ইন্টারেস্টিং বিষয় হচ্ছে এ ভয় পেতে ভাল লাগচ্ছে। মন পাড়ায় হচ্ছে মিষ্টি মিষ্টি অনুভতি।

ইউসুফের ঘরে আগে বহুত এসেছে সে। কিন্তু আজ অন্য রকম লাগচ্ছে। জানলার নীলাভ পর্দা গুলো এলো মেলো ভাবে দোল খাচ্ছে।বারান্দা থেকে অপরিচিত কোনো ফুলের গন্ধে ঘর জুড়ে মো মো করছে। মাথার উপর ফ্যানটি ফুল স্প্রীডে ঘুড়চ্ছে। তারপরও কুলকুল ঘামছে সে। চারিদিকের সব কিছু যেন রোমাঞ্চকর হয়ে উঠেছে।তাতে যেন অস্বস্তি
বাড়চ্ছে কুহুর..!

কুহুর এসব ভাবনার মাঝে দরজায় খট খট শব্দ ভাবনার ফোড়ন কাঁটে। সে অধির আগ্রহ নিয়ে দরজার দিক তাকিয়ে আছে। এ বুঝি এলো তার ইউসুফ ভাই।ইউসুফ দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকলো। তাকে দেখে কুহু বিস্মিত। তার চোখ কঁপালে উঠে গেছে। তনের মাঝে এক গাদা ভয় জমা হয়ে গেছে। এ ভয় মোটেও তখনকার মতো ভাল লাগার না। এটা সত্যি সত্যি বিড়াল দেখে ইঁদুর যেমন ভয়ে ছুটাছুটি করে? ঠিক তেমন ভয়! পার্থক্য কুহুর পা সেটে গেছে মাটির সাথে।কারণ কুহুর হাতে মোটা ধরি! কপ করবব সে দড়ি দিয়ে? তখনের ন্যাকামো করার জন্য বেঁধে-টেধে রাখবে না তো? কুহু শুকনো ঢুক গিললো। ইউসুফকে উদ্দেশ্য করে বলল,,

–” এটা কি?”

ইউসুফের ভাবলেশহীন উত্তর,,

–“দড়ি!(ভ্রুকুটি কুচকে বললো) জীবনে দেখিসনি?”

কুহু এবারো শুকনো ঢুক গিললো। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল,

–” কি ক–রবেন?”

ইউসুফ বাঁকা হেসে বলল,,

–” বাঁধবো!”

কুহু চোখ বড় বড় করে চকিতে বলল,,

–“কিহ্!”

ইউসুফ হেসে দু কদম পিছিয়ে গিয়ে খাটের এমাথা থেকে ও মাথা পর্যন্ত বেঁধে দিলো মাঝবরাবর দড়িটি! তারপর কুহুর ব্যাগ থেকে নানা রঙ্গের ওড়না বের করে মেলে দিলো দড়িতে। কুহু যেন বেয়াক্কেল বনে গেল। ইউসুফ তার কাজ শেষ করে ওপর প্রান্তে মুখ করে শুয়ে পড়লো। কুহু আশা হত হলো। সব ধরতে পেরে ইউসুফের পাশে বসে দুঃখী দুঃখী গলায় বলল,,

–” এসব কি?”

ইউসুফ সেদিক ফিরেই রইলো উত্তর দিলো না। কুহুর এবার রাগ লাগলো। খাঁটাশ বেঁটা একটা কি সুন্দর সুসজ্জিত রুমটিতে একটি ওড়না দেয়াল বানিয়ে দিলো। এটা কি ঠিক? আজ না তাদের বাসর রাত? এ রাতে প্রতি স্বামী-স্ত্রী কত না খুশুর ফুশুর করে গল্প করে? আর এ বেটা? কুহু রাগে ধাক্কাতে লাগলো ইউসুফকে। ইউসুফ রাগী রাগী মুখ করে আসন করে বসে বলল,,

–“হোয়াটস ইউর প্রবলেম? এম ধাক্কাচ্ছ কেন? হোয়াই?”

ইউসুফের রাগী মুখ দেখে কুহুর রাগ উবে গেল। সে অসহায় মুখ করে বলল,,

–“এমন করছেন কেন? আজ না আমাদের বাসর রাত! সবাই কত গল্প গুজব করে?”

কুহুর কথায় ইউসুফ কটমট করে তাকালো তার দিক। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,,

–” নিচে সেই তামাশাটা করার সময় মনে ছিল না? এমন ভাব করছিলি মনে হচ্ছিল গাব্বার সিং আমি। কারো বাসন্তিকে তুলে এনে বিয়ে করছি। সে কেঁদে কেঁটে গাঙ্গ ভাসচ্ছে। ননসেন্স!”

কুহু কাঁদো কাঁদো মুুখ করে বললো,,

–” আমি কি করবো? আমার ঠেলে ঠুলে কান্না আসচ্ছিল। এই যে এখনো আসচ্ছে। ভ্যাাাা।”

ইউসুফের রাগ সেই কখন ছু মন্তর হয়ে গেছে।কিন্তু সে কুহুতে জ্বলাবে ভেবেই এসেছে। কিন্তু এ মুহূর্তে কুহুর মুখ দেখে তার পেটে ফেটে হাসি পাচ্ছে। কিন্তু হাসলে চলবে না। সে নিজেকে সামলে ধমক দিয়ে বলল,,

–” একদম কাঁদবি না ছিঁচকাঁদুনে মেয়ে? চুপ চাপ ঘুমা আর আমাকেও ঘুমুতে দে। হুহ!”

বলে আবার ওপাশ ফিরে শুয়ে পড়লো। কুহু এবার নিঃশব্দে কেঁদে চলেছে। ইউসুফ আবার ধমকাতেই সে অন্যপাশে গুটিশুটি মেরে শুয়ে পড়লো। এবং কাঁদতে লাগলো। এবার শব্দহীন কান্না তার। এভাবে অনেকক্ষণ কেঁটে যাওয়ার পর ইউসুফ কুহুর দিক ফিড়লো সে। কুহুর শরীর কেঁপে কেঁপে উঠছে। মানে এখনো কাঁদচ্ছে। ইউসুফ কুহুকে ঘুমের ভান করে ঝাপটে ধরলো। কুহু প্রথমে হকচকিয়ে গেল ইউসুফকে ঘুমন্ত দেখে বুঝতে পাড়লো সে ঘুমের মাঝে তাকে ঝাপটে ধরেছে। কুহু নড়লো না। তার দিক তাকিয়ে রইলো মায়া মায়া চোখে। লাষ্ট পর্যন্ত এই কিউট বিলাই চোখ ওয়ালা তার অর্ধাঙ্গ। ভাবতেই আনন্দে পটল তুলতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু এসব সে মোটেও করবে না। সে বাঁচতে চায়। এভাবেই ইউসুফের বুতে থাকতে চায়। জন্ম-জন্মান্তর। কুহু তার ডান হাতে আলতো করে ইউসুফের কাঁপালে ছড়িয়ে পড়ে থাকা হালকা কোঁকড়ানো সিল্কি চুল গুলো এলো মেলো ভাবে পড়ে আছে।তা ঠিক করে সেখানে আলতো করে চুমু খেলো। তার বুকে মুখ গুঁজে সেও গভীরতা ডুব দিল। এদিকে ইউসুফ ঠোঁটে কিঞ্চিৎ হাসির রেখা ফুটে উঠলো। সেও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল লাষ্ট পর্যন্ত তার বাবুইপাখি তার বুকে। ভেবেই শান্তি লাগছে তার।সেও ঘুম দিল। তলিয়ে গেল একে অপরের অতল গহ্বরে। ❤️

চলবে,

ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। রি-চেক দি নাই।