#ভুলিনি_তোমায়?
#Nishat_Tasnim
#পর্ব :২০
.
.
.
সেদিন ডাক্তারের কথামতো ডার্ক ব্লু কালারের জামা পড়া মানুষ নাকী চেয়েছিলেন আমি যেনো সবসময়ের জন্য হাসপাতালে চলে যাই,উনাদের জন্য আমি নাকী এক্সট্রা ঝামেলা। তখনই বুঝেছিলাম যে ফুফির পরিবারের ই কেউ এমন টা করেছিলো। সবাই নিজেদের মধ্যে এতটাই ব্যস্ত ছিলো যে কেউ আর খেয়াল ই করে নি যে কে ওই রং এর জামা পরেছিলো। এহসানের ভেতর তেমন কোনো পরিবর্তন দেখতে পেলাম না,,উনি স্বাভাবিকভাবেই ফিরে এসেছিলেন। এর মধ্যে কেটে গেছে দুইদিন,,এ দুইদিনে তেমন কোনো পরিবর্তন হয় নি।ভাইয়া আর আপু এখানেই লুকিয়ে থাকতেছেন।আশেপাশের সবাই উনাদের খোজখবর নিয়েছিলেন কিন্তুু পায় নি। এহসানের সাথে আমার সম্পর্ক মোটেও স্বাভাবিক হয় নি,,উনি আমার সাথে নানান ধরনের কথাবার্তা বলেন,আমাকে হাসানোর চেষ্টা করায় আবার কাঁদানোর চেষ্টাও করায়।উনি সবকিছু স্বাভাবিকভাবেই বলে ফেলেন। আশ্চার্যের বিষয়,সেদিন ঘুমানোর সময় উনি আমার থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখেছিলেন,,আমাকে বলেছিলেন,,”জানো,আমি না তোমার প্রতি কিছু একটা অনুভব করি।তোমাকে দেখলে আমার ভয়ংকর ইচ্ছা জাগে। ” আমি শুধু একদৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলাম। তবে একটা বিষয় খুব অবাক লাগে,,রাতে ঘুমানোর সময় যতই দূরত্ব থাকুক না কেনো সকালে উঠলে আমি নিজেকে উনার বুকে আবিষ্কার করি। কালকে আমি উনাকে প্রশ্ন করেই ফেলেছিলাম যে এমন টা কেনো হয়?উনি সোজাসাপ্টা জবাব দিলেন যে,, মাঝ রাতে নাকী আমি কান্না করি তখন উনি আমাকে জড়িয়ে ধরেন। “ব্যাস এটুকু বলেই উনি চলে গেলেন। আর আমি হা করে উনার যাওয়ার দিকে চেয়ে রইলাম।
এখন আর আগের মতো কান্না করি না খুব স্ট্রং হয়ে গিয়েছি।তবে যখনই উনাকে আমার সামনে ঘুরঘুর করতে দেখি তখনই খুব করে কান্না করতে মন চায়।উনাকে দেখলেই আমার অতীত বারবার চোখের সামনে ভেসে উঠে।মাঝে মাঝে নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করি,,”আচ্ছা, উনি কী আসলেও দেখতে সৌরভের মতো নাকী আমিই উনাকে সৌরভের মতো ভাবতেছি??” আমার ছোট্ট একটা জীবনে কত ঝড় বয়ে গেলো।সময়ের সাথে সাথে কত কিছুই না বদলে যায়।আচ্ছা এহসানকে কী আমার অতীত বলা উচিত?উনি তো আমার স্বামী,উনার তো পুরো অধিকার আছে আমার সম্পর্কে জানার।আমি জানি আমার এ অতীতের কারনেই উনার সাথে আমি এডজাস্ট করতে পারতেছি না।উনি তো অনেকবার প্রশ্ন করেছিলেন যে আমি কেনো উনার সাথে এডজাস্ট হতে পারতেছি না?তখন তো চুপ করে ছিলাম, আমার মনে হয় উনাকে সব বলে দেওয়া উচিত।কিন্তুু উনাকে সব বললে উনার রিয়েকশন কেমন হবে?উনি কী আমার সাথে উল্টা-পাল্টা কিছু করবেন?
মনে হাজারো ভয়ের পাহাড় নিয়ে উনার কাছে যাচ্ছিলাম সব কিছু বলবো বলে।আজকে উনাকে বলবোই আমার সমস্যা টা কোথায়। রুমে ডুকতেই দেখতে পেলাম উনি বিছানায় বসে ল্যাপটপে কী যেনো করতেছেন।গত দুইদিন থেকেই উনি অনলাইনে কাজ জোগাড় করছেন।আজকে সকালেই আমাকে বললেন, “বউ,দোয়া কইরো চাকরী টা যেনো হয়ে যায়..!!” আমি উনাকে প্রশ্ন করতেই উনি বলেছিলেন যে,বাড়ী থেকে যে টাকা উনাকে দেওয়া হয় তা নাকী উনার পড়ার খরচে চলে যায়,, তাই উনি অনলাইনে পার্ট টাইম জব খুজতেছেন।খুব খারাপ লাগলো উনি শুধু আমার জন্য কষ্ট করে চাকরী খুজতেছেন।আমি উনাকে কিছু বলতে নিচ্ছিলাম তখন উনি হাসিমুখে বলেছিলেন,,”আমি আমাদের টুনাটুনির সংসারের জন্য এমন করতেছি।আমি না খুব এক্সাইটেট আমাদের টুনাটুনির সংসার হবে।বিশ্বাস করো আমি কখনও ভাবতেও পারি নি যে এমনটা আমার রিয়েল লাইফে হবে।আমার ইটার্নি শেষ হতে আর তিন বছর আছে,এ তিন বছরে আমি আর তুমি টুনাটুনির সংসার করবো।এর ভেতর আমি নিজে প্রতিষ্ঠিত হবো এবং তোমাকে যোগ্য করে তুলবো যাতে আমার ফ্যামিলি তোমাকে রিজেক্ট করতে না পারে। আর তাপরেও যদি রিজেক্ট করে তাহলে উনাদের জন্য ৪/৫ টা নাতি/নাতনি নিয়ে যাবো তাহলে তো আর কিছুই বলতে পারবে না।”
উনার শেষ কথা শুনে আমি চোখ বড় বড় করে তাকাতেই উনি শয়তানী হাসি দিয়ে চলে গেলেন।আর আমি হা করে তাকিয়ে ছিলাম।লোকটাকে মাঝে মাঝে অনেক ভালো মনে হয় আবার মাঝে মাঝে বজ্জাতের হাড্ডি মনে হয়।
২ মিনিট হলো আমি উনার সামনে দাড়িয়ে আছি।উনি উনার মতো ল্যাপটপে মুখ গুজেই রয়েছেন আমার দিকে পাত্তাও দিচ্ছে না।উনি একটুপর পর মুখ কালো করে ফেলছেন আবার একটু পর পর খুশি হয়ে যাচ্ছেন।আচমকা উনি ইয়েএএ বলে চেঁচিয়ে উঠে আমাকে জড়িয়ে ধরে গালে একটা কিসি দিয়ে দিলেন।নিজে নিজে খুশিতে গদগদ হয়ে বলতে লাগলেন,,”ইয়েস চাকরী হয়ে গেছে।” আমি হা হয়ে উনার দিকে তাকিয়ে রইলাম,,, উনি আমার দিকে তাকাতেই বুঝতে পারলেন উনি কী করেছেন।সঙ্গে সঙ্গে উনি মুখটা পাংশুটে করে ফেললেন। উনি মুখটা ছোট করে ইতস্ত ইতস্ত করে বলতে লাগলেন,,”আসলে আমি ভেবেছিলাম রেদোয়ান।ও এতক্ষন এখানেই ছিলো,,ওর জায়গাতে কখন যে তুমি চলে এসেছো আমি খেয়াল ই করি নি।”
আমি উনার দিকে একবার তাকিয়ে নিচের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম।বিষয়টি বুঝতেই আমার গালে লজ্জার আভা ফুটে উঠলো। উনিও সুযোগ ছাড়লেন না, আমার কানের কাছে এসে বললেন,,”কী ব্যাপার আমার বউ লজ্জাও পাচ্ছে?আমি তো ভেবেছিলাম তোমার ভেতর লজ্জা নামক বস্তুটি নেই।লজ্জা পেতে দেখলে তো তোমাকে আরো সুন্দর লাগে, এখন আমার তোমাকে আরেকটা কিসি দিতে ইচ্ছে করছে।আরেকটা দেই??”
আমি উনার দিকে চোখ রাঙ্গিয়ে তাকাতেই উনি হেসে দিলেন। হটাৎ উনি কপাল কুচকে বললেন,,”কী ব্যাপার বলো তো,তুমি এখানে?না মানে আমি তো এ দুইদিনে একবারও তোমাকে নিজ থেকে আমার কাছে আসতে দেখি নি তা হঠাৎ তুমি?? কিছু কী বলবে??”
আমি মাথা নাড়িয়ে বললাম,,হুম।উনি ভ্রু কুচকে তাকাতেই আমি বললাম,,”একটু ব্যালকনিতে আসবেন আপনার সাথে আমি কিছু কথা বলতে চাই।” এ কথা বলে আমি ব্যালকনিতে চলে আসলাম।মনের ভেতর এক অজানা ভয় হতে লাগলো,, উনি কেমন রিয়েক্ট করবেন? আমি আসার একটু পরেই উনি আসলেন। উনার দিকে তাকাতেই দেখলাম উনি খুব খুশি।আমি জানি একটুপর সব শুনতেই মুখের রং বদলে যাবে।
—“বলো,কী বলতে চাও?”
আমি একপলক উনার দিকে তাকিয়ে বাহিরের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলতে লাগলাম,,”আপনি আমাকে সব সময় বলেন না যে আমার সমস্যা কোথায়?আমি কেনো আপনার সাথে কথা বলি না।সবার সাথে স্বাভাবিক হলেও কেনো আপনার সাথে স্বাভাবিকক হই না? কেনো আপনাকে দেখলে নিজেকে গুটিয়ে নেই?তাই না?”
উনি মাথা নাড়িয়ে বললেন,,”হ্যা,তো??”
আমি বললাম,,”আজ আমি বলবো আমি কেনো আপনার সাথে এমন করি।আপনার সব প্রশ্নের উত্তর দিবো।”
উনি ভ্রু কুচকে বললেন,,”মানে??না মানে তুমি তাহলে ইচ্ছে করে ওসব করতে আমি ভাবতাম তোমার সমস্যার কারনে এমন করতে।”
আমি মুখ কালো করে নিচের দিকে তাকালাম।উনি একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললেন,,”আচ্ছা বলো,কেনো তুমি এমন করতে?”
আমি কাপা কাপা গলায় বললাম,,”আমি যখন স্কুলে পড়তাম তখন একটা ছেলের সাথে আমার রিলেশন ছিলো।”এটুকু বলে আমি উনার দিকে তাকালাম উনার রিয়েকশন দেখার জন্য,আমি যা ভেবেছিলাম তা ই ঠিক।উনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না তাই তো উনি অবাক হয়ে তাকিয়ে রয়েছেন।
উনি কেমন রুডলি বললেন,,”তারপর বলো,,চুপ করে গেলে কেনো?”
আমি একটু চমকে গেলাম,মাথার কাপড় টা একটু টেনে নিচের দিকে তাকিয়ে এক এক করে সব বলতে লাগলাম।উনাকে এসব বলতে বলতে কখন যে আমার চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগলো খেয়াল ই করি নি। কান্নারত অবস্থায় উনার দিকে তাকাতেই দেখলাম উনার চোখেও পানি।
উনি চোখমুখ শক্ত করে হাত মুঠ করে বললেন,,”তার মানে ওই ছেলের জন্য ই তুমি সুইসাইড করতে চেয়েছিলে?আর ওই ছেলের জন্যই তুমি আমার সাথে এমন অস্বাভাবিক ব্যবহার করে ছিলে??”
.
.
.
চলবে???