#ভুলিনি_তোমায়?
#Nishat_Tasnim
#পর্ব :২১
–“ওহ্,,আচ্ছা..!!তার মানে তোমার এক্স-বয়ফ্রেন্ডের জন্য আমার সাথে এমন করেছো?কথাটা শুনে খুব ভালো লাগলো।জানো আমি মনে করতাম তোমার সাথে আমার এক্সিডেন্টলি বিয়ে হয়েছে তাই তুমি আমাকে মেনে নিতে পারো নি। আবার ভাবতাম তুমি যে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়তো তাই মেনে নিতে পারো নি।কিন্তুু আমি কখন মনের ধারে কাছে এটা আনি নি যে তুমি তোমার প্রাক্তনের জন্য আমার সাথে এমন বিহেভ করতে।না,ঠিক আছে,,খুব ভালো লাগছে।”
কথাগুলো বলার সময় উনার গলা কেমন ধরে আসছিলো।উনি কোনোরকম কথাগুলো বলে উঠে রুমে চলে গেলেন।উনার এমন বিহেভিয়ারে আমার খুব খারাপ লাগলো,,কেনো যেনো কান্না পাচ্ছে।আমি ভেবেছিলাম উনি হয়তো আমাকে বুঝবেন,আমাকে হয়তো বলবেন, “যা হয়েছে ভুলে যাও,আমরা নতুন করে সব শুরু করবো।”কিন্তুু উনি তো এমন কিছুই বললেন না।বারান্দায় বসে হাটুতে মুখ গুজে কান্না করতে লাগলাম।
প্রায় ঘন্টা খানেক বসে বসে কান্না করলাম,এরমধ্যে উনি একবারও আসেন নি।আমি ভেবেছিলাম উনি এসে আমাকে রুমে যেতে বলবেন।একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বসা থেকে দাড়িয়ে চোখ-মুখ মুছে রুমের দিকে পা বাড়ালাম। রুমে ডুকতেই দেখলাম উনি জানালার পাশে বসে আছেন,আমি উনার দিকে একবার তাকালাম।উনাকে দেখে মনে হচ্ছে উনি গভীর কিছু চিন্তা করতেছেন।বিছানায় যেতেই উনি কর্কশ গলায় বললেন,,”প্রতিদিন কী ঔষদ খাওয়ার কথা বলতে হবে??”
আমি চুপচাপ গিয়ে টেবিল থেকে ঔষধ নিয়ে খেয়ে নিলাম।বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করতে লাগলাম,,একটুও ঘুম আসতেছে না।হঠাৎ কেউ রুমের দরজায় কড়া নাড়লো।আমার আগেই উনি দরজা খুলে দিলেন,, দরজা খুলতেই হুড়মুড় করে ঢুকে গেলেন রেদোয়ান ভাইয়া।হাপাতে হাপাতে বলতে লাগলেন,,”দোস্ত,,কী করবো বল??”
উনি ভ্রু কুচকে অবাক হয়ে বললেন,,”কী হয়েছে?”
রেদোয়ান ভাইয়া একটু দম নিয়ে বললেন,,”পুরো পল্টন জেনে গিয়েছে যে আমি আর তুই বিয়ে করেছি।এখন সবাই নাকী কালকে আসবে।আমার তো টেনশন হচ্ছে,,!!”
উনি অবাক হয়ে বললো,,”ওরা কীভাবে জানলো?”
রেদোয়ান ভাইয়া দাত কটমট করে বললেন,,”ব্যাটা এপ্লিকেশনের মধ্যে ম্যারিড লিখছিস ক্যান?ওরা ওটা দেখেই সিসি ক্যামেরার মতো সব খবর বের করে ফেলেছে।মোবাইল অন কর তো দেখবি ওরা সবাই কী কী পাঠাইছে।”
ভাইয়ার কথা শুনে উনি জিহ্বা কামড় দিয়ে বললেন,,”এখন কী হবে?”
রেদোয়ান ভাইয়া ঠোঁট উল্টিয়ে বললনে,,”ভাই,প্লিজ আমি কিছু করতে পারবো না।তুই সামলা,,আমারর বউ এমনিতে ক্ষেপে আছে এখন যদি ওকে আমি কিছু করার কথা বলি তাহলে আমার সংসার শেষ।”
উনি রেদোয়ান ভাইয়াকে ধাক্কা দিয়ে রুম থেকে বের করে দিয়ে বলতে লাগলেন,,”শালা,ফুট এখান থেকে..!!যা গিয়ে বউ এর আঁচলের নিচে লুকিয়ে বসে থাক।”
বলেই উনি দরজা টা লাগিয়ে দিলো। উনি পিছনে ফিরে আমার দিকে তাকাতেই আমি কাঁথার নিচে মুখ লুকিয়ে ফেললাম। উনি বিরবির করে বলতে লাগলেন,,”কাল ওদের কী বলে সামলাবো??নিশ্চিত সকাল সকাল সবগুলা রওনা দিবে।বন্ধু-বান্ধব আসলেই প্যারা।না এখন ঘুমিয়ে যাই সকালে উঠে আবার ওদের জন্য রান্না করতে হবে।”
কথাগুলো নিজে নিজে বলেই উনি ঠুস করে এসে শুয়ে পড়লেন।উনি শুয়ে পড়তেই আমি উনার দিকে একটু চাপলাম।ধীরে ধীরে একদম উনার গা ঘেষে গেলাম।উনি সাথে সাথে আরো সরে গেলেন আমিও আরো চাপলাম।এবার উনিও আরো সরে গেলেন সঙ্গে সঙ্গে আমিও উনার দিকে আরো চাপলাম। এবার উনি মুখ বের করে বললেন,,”কী সমস্যা?এমন করতেছো কেনো?ওইদিকে সরে ঘুমাও।গায়ে উঠতেছো কেন?”
উনার কথা শুনে আমার মনের ভেতর চাপা কষ্ট অনুভব করলাম।ছলছল চোখে আমি একদম সরে ওপাশে চলে গেলাম। কাঁথা মুড়ি দিয়ে ফুফিয়ে কান্না করতে লাগলাম।একটুপর অনুভব করলাম উনি কাঁথার উপর হাত দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন।উনি জড়িয়ে ধরতেই আমি কেঁপে উঠলাম।
উনি ধমকের সুরে বলে উঠলেন,,
–“পাঁচ মিনিটে যদি না ঘুমাও তাহলে আজকে তোমার খবর আছে।”
আমিও উনার বুকের সাথে ঘাপটি মেরে মিশে ঘুমাতে লাগলাম। এত কিছু ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম খেয়াল ই করি নি।
ভোর বেলা পাখির কিচিরমিচির শব্দে ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো।চোখ মেলতেই চোখের উপর সূযের আলো এসে পড়লো,তড়িঘড়ি উঠতেই দেয়াল ঘড়িতে দেখতে পেলাম ৮:৪৯ বাজে।মাথায় হাত দিয়ে ভাবতে লাগলাম এত দেরী। তার মানে উনি আজকে আমাকে ডেকে তুলেন নি।আশেপাশে তাকিয়ে উনাকে খুঁজতে লাগলাম, কিন্তুু রুমের কোথাও উনাকে চোখে পড়লো না।ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে উনাকে খুঁজতে লাগলাম।সব চেক করে কিচেনে যেতেই দেখলাম উনি চুলায় কি যেনো করছেন।আমি ডুকতেই বিরিয়ানীর স্মেল পেলাম।আহ কি ঘ্রান! আমি ধীর পায়ে উনার পিছনে গিয়ে দাড়ালাম।উঁকি দিয়ে দেখতেই দেখতে পেলাম উনি পাতিলে বিরিয়ানি রান্না করছেন।উনি আচমকা পিছনে ফিরতেই আমার সাথে ধাক্কা খেলেন।আমি পড়ে যেতে নিলেই উনি আমাকে ধরে সোজা দাড় করিয়ে দিয়ে পাশ কেটে চলে গেলেন।আমি হা করে চেয়ে রইলাম কারন উনি একবারও আমার দিকে তাকায় নি। আচ্ছা উনি কী আমার উপর রেগে আছেন?কিন্তুু আমার দোষ কী?
আমি সোজা গিয়ে উনার সামনে দাড়িয়ে বললাম,,”কী সমস্যা?আপনি এমন কেনো করছেন?”
উনি সোজাসাপ্টা বললেন,,”কেমন করছি?”
আমি বিরক্তি নিয়ে বললাম,,”কেমন করছি মানে?আপনি বুঝতেছেন না আপনি কেমন করছেন?”
উনি আমার দিকে ঝুঁকে বললেন,,”না,বুঝতেছি না।বোঝালে তো বুঝবো..!!আমি কী করেছি?”
এবার আমি ভাবতে লাগলাম সত্যি তো উনি কী করেছেন?
উনি আমার চোখের সামনে তুড়ি বাজিয়ে বললেন,,”তোমার ভাবনা চিন্তা হয়ে গেলে বলো,এখন সরো আমার ফ্রেন্ডসরা আসবে।সব কিছু ঠিকঠাক করতে হবে না হলে ওরা আমার জান খেয়ে ফেলবে।”
এ বলে উনি আমাকে পাশ কাটিয়ে সব কিছু প্লেটে সাজাতে লাগলেন।আমিও গিয়ে উনার মতো সাজাতে লাগলাম।আশ্চর্যের বিষয় উনি একবারও আমাকে কিছু বলেনও নি আবার আমার দিকে তাকায়ও নি।কেনো যেনো আমার কাছে বিষয়টা খুব খারাপ লাগলো। সবকিছু রেডী করে নিয়ে টেবিলে রাখতেই আপু আর ভাইয়া উঠে আসলেন।আমি উনাদের সামনে ঘেকে সরে রুমে চলে আসলাম।আমি নিজেও জানি না কেনো এহসানের স্বাভাবিক ব্যবহার আমার ভালো লাগছে না।আমি তো এটাই চাইতাম যে উনি যেনো আমার সাথে এমন ব্যবহার করুক।
একটুপর এহসান রুমে ডুকে বিছনায় একটা ব্যাগ রেখে ওয়াশরুমে চলে গেলেন।আমি উঁকি দিয়ে দেখলাম ব্যাগে কী আছে?কিন্তুু র্যাপিং করা ছিলো তাই আর দেখতে পাই নি। আমি মুখ ফুলিয়ে বারান্দায় চলে গেলাম।
—“নায়লাআ,নায়লাআ..!!”
এহসানের আওয়াজ শুনে আমি প্রায় দৌড়ে রুমে ডুকলাম।আমি যেতেই উনি আমার হাতে ব্যাগটা ধরিয়ে দিয়ে বললেন,,”নেও,এটা পরো। সারাদিন তো সাদা জামা-কাপড় পড়ে থাকো যে, যে কেউ দেখলে বলবে মেয়েটা মনে হয় বিধবা।ওহ্, তোমার দৃষ্টিতে তো আবার তুমি বিধবা,, না মানে আমাকে তো মানতেই পারো নি।একটা অনুরোধ আজকে আমার বন্ধুদের সামনে দেখানোর জন্যও হলেও এটা পরো।তারপর নাহয় সবসময়ে বিধবার জামাকাপড় পরো..!!”
কথাগুলো বলে উনি আমার হাতে প্যাকেট টা ধরিয়ে দিয়ে চলে গেলেন। আমি ছলছল নয়নে উনার যাওয়ার দিকে চেয়ে রইলাম।উনি এমন রুডলি কেনো কথা বললেন?উনি কখনও আমার সাথে এমনভাবে কথা বলে নি।প্যাকেট খুলতেই দেখতে পেলাম,,একটা বেবী পিংক কালারের গোল রাউন্ড ফ্রগ। হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখের জল মুছে প্যাকেট টা নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলাম তৈরী হতে। ১০ মিনিটে তৈরী হয়ে নিলাম।আয়নার সামনে দাড়িয়ে হালকা সাজলাম,,উনি বললেন না আমি বিধবার মতো থাকি এবার থেকে আমি সেজেগুজে থাকবো। বিয়ের পর এ প্রথম আমি সাঁজলাম।
অনেকটা ভয় নিয়ে আমি ডাইনিং রুমের দিকে এগোতে লাগলাম।অনেক শোরগোলের আওয়াজ আসতে লাগলো, তার মানে উনাীা সবাই এসে গেছেন।আমি ভালো করে মাথায় ঘোমটা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই দেখলাম একটা মেয়ে উনার গাল টেনে কী যেনো বলতেছে।আমাকে দেখে সবাই আমার দিকে তাকালো,আমি সঙ্গে সঙ্গে চোখ নামিয়ে নিলাম।
উনারা প্রায় ১০/১২ জন।তিনজন মেয়ে বাকিরা সব ছেলে।উনাদের মধ্যে একজন বলে উঠলো,,”দোস্ত ভাবী তো মাশাল্লাহ।”
আরেকজন বলে উঠলো,,”তাই তো বলি এহসান ঘর থেকে কেনো বের হচ্ছে না,,ঘরে এমন সুন্দরী বউ থাকলে কেউ কীভাবে বের হবে?তাই বলে আমাদের দেখাবি ও না?আমরা কী নিয়ে যেতাম নাকী?”
একজন কেমন বাজে দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,,”বাহ্ কী সাইজ?দেখে তো একদম তাজা মনে হচ্ছে..!!”
সবাই উনাদের দিকে তাকাতেই উনি মেকী হেসে বললেন,,”আরে আমি এই ফলগুলো কথা বলছি।” এ কথা বলে উনি টেবিল থেকে আপেল নিয়ে খেতে লাগলেন।
আমি ঠিকই বুঝেছি,,লোকটি কথাটা ফলগুলোকে নয় আমাকেই বলেছে।”
আমার ভেতর রাগে ফেটে পড়লো।আমি উনার দিকে তাকাতেই দেখলাম উনি অন্যদিকে তাকিয়ে আছেন। আমি পানির বাহানা দিয়ে কিচেনে চলে আসলাম। একটুপর দেখলাম উনি জগ নিয়ে আসতেছেন।উনি আসতেই আমি উনার সামনে গিয়ে বললাম,,”ওই লোকটি কথাটা আমাকেই বলেছে।”
উনি আমার উপর থেকে নিচ পর্যন্ত একবার তাকিয়ে বললেন,,”তো?ও কী মিথ্যা কিছু বলেছে নাকী?”
আমি অবাক হয়ে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,,”আপনি এসব কী বলছেন?”
উনি মুহূর্তে রেগে গিয়ে আমাকে ওয়ালের সাথে চেপে ধরে বললেন,,”কী বলছি,তুমি বুঝো না?এমন সেজেছো কেনো?কোনোদিন তো সাজতে দেখি নি,,,সবসময় বিধবা সেজে থাকতে।নিশ্চয় ওদের কাছ থেকে তোমার রুপের প্রশংসা শুনতে এমন সেজেছো তাই না?”
.
.
.
চলবে???