অন্তরালে তুমি Part -01

0
5998

#অন্তরালে_তুমি
#Part_01
#Writer_Asfiya_Islam_Jannat

কাজী অফিসে বসে আছে ইহান। সামনেই তার কাবিনের কাগজ আর পিছনে আরিহার বডিগার্ড ওর মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে দাড়িয়ে আছে। পাশেই আরিহা পৈচাশিক হাসি হাসছে। আরিহা এইবার ইহানের গালে হাত রাখে বলে উঠে,

— সাইনটা করো ইহান বেবি। সাইন করা ছাড়া তোমার কাছে আর কোন পথ নেই। বাঁকা হেসে।
.
ইহান এক ঝাটকায় আরিহার হাত সরিয়ে দিয়ে ওর দিকে রক্তিম বর্নে চোখে তাকায়। আর হুংকার দিয়ে উঠে,
.
— আমি তোমায় কখনোই বিয়ে করবো না। তোমার যা ইচ্ছা তুমি করতে পারো আই হ্যাভ নো প্রবলেম। বলে মুখ ঘুড়িয়ে নেয়।
.
তখনই পাশে বসা আজমির সাহেব তেতে উঠে বলে,
— এইখানে তোকে তোর মর্জি জানার জন্য আনা হয় নি। আমার মেয়ে যা চাইবে ঠিক তাই হবে। তাই বিয়ে তো তোকেই করতেই হবে।
.
তিনি আর কিছু বলতে নিবেন এর আগেই আরিহা চোখের ইশারায় আজমির সাহেবকে চুপ থাকতে বলে। আরিহা এইবার বাঁকা হেসে বলে,
.
— ইহান বেবি তুমিও না ঠিক আমার মতই ঘাড়ত্যাড়া। সহজে কোন কথা বুঝতেই চাও না। কিন্তু যেমন সব সমস্যার সমাধান আছে ঠিক আমার কাছেও তোমার এই “না”কে হ্যাঁ করার ফরমুলা আছে। ওয়েট দেখাচ্ছি!
.
এই বলে আরিহা নিজের মোবাইলে কি যেন ঘাটতে থাকে। ইহান এইবার সন্দেহ দৃষ্টিতে আরিহার দিকে তাকায়। আরিহা একটা ভিডিও অন করে ইহানের সামনে ধরে বলে,
.
— এখনো কি তোমার উত্তর না বেবি? পৈচাশিক হাসি হেসে।
.
.
.
?
.
ইহানের একেক পর এক জিনিস ভেঙ্গেই চলেছে। যার ফলে রুমের অবস্থা প্রায়ই নাজেহাল। গায়ে থাকা লেমন কালারের শার্টটি ঘামে ভিজে শরীরে সাথে লেপ্টে গিয়েছে। চুলগুলো একদম এলোমেলো হয়ে আছে। মুখটা লাল বর্ণ হয়ে এসেছে। চোখ দিয়ে যেন অগ্নির শিখা বের হচ্ছে। তার এইটা ভাবতেই রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে যে কিছুক্ষণ আগেই তার বিয়ে হয়ে গিয়েছে তাও আবার তার সাথে যাকে কিনা ইহান সবচেয়ে বেশি ঘৃণা করে।
ইহান এইবার আয়নার সামনে দাড়িয়ে থাকা আরিহার দিকে তার সেই অগ্নিময় দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। যেন এখনই এই চোখ দিকে আরিহা নামক মানবকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাড়খাড় করে দিবে।
কিন্তু তাতে আরিহার কোনই হেলদোল নেই। সেই আপন মনে নিজেকে আয়নায় দেখেই চলেছে। পড়নে তার সাদা লেহেঙ্গাটি বার বার খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। যেন এইটি এখন তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। অন্যদিকে তাকানোর বিন্দু মাত্র সময় পর্যন্ত নেই।
আরিহার এমন খামখেয়ালিভাব দেখে ইহানের রাগ যেন অষ্টম আকাশে পৌঁছে যায়। সে মুষ্টি বদ্ধ করে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করতে থাকে। ঠিক এমন সময় আরিহা ইহানের সামনে এসে ওর গলা জড়িয়ে ধরে মিষ্টি কন্ঠে বলে,
.
— আমাকে আজ সেই লাগছে তাই না? একদম আসমান থেকে নামা কোন হুরের মত?
.
ইহান এইবার নিজের রাগ সংযত রাখতে না পেরে আরিহাকে স্বজোরে ধাক্কা দেয়। আরিহা তাল সামলাতে না পেরে কিছুটা পিছে চলে যায় আর নিচে পড়া থাকা গ্লাসের টুকরাটা ওর পায়ে গেঁথে যায় কিন্তু অবাক করার বিষয় হলো আরিহা টু শব্দ পর্যন্ত করলো না। ওর মুখে তখনো একটা মিষ্টি হাসিই ঝুলে আছে। ইহান চেঁচিয়ে বলে,
.
— আই ওয়ান্ট ডিভোর্স। তোমার মত মেয়ের সাথে এক ছাদের নিচে থাকার আমার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই। আমি আমার বাসায় যেতে চাই। সো আ’ম গোয়িং বায়।
.
ইহান এগুতেই নিবে তখন আরিহা মুচকি হেসে বলে,
— তা আর হচ্ছে না ইহান বেবি। তোমার না চাওয়া সত্তেও তোমায় এখন আজীবনের জন্য আমার সাথে থাকতে হবে আর এইখানেই থাকতে হবে। তুমি যে আরিহার জালে ফেঁসে গিয়েছো।
.
— মানে? অবাক করা চোখে।
.
— মানে হচ্ছে তুমি কাবিননামার সাথে একটা কন্ট্রাকে সাইন করেছো যে আমি তোমায় না ছাড়া আগ পর্যন্ত তুমি আমায় ছাড়তে পারবে না। এমনকি তুমি যদি আমার থেকে দূরেও যাওয়ার চেষ্টা করো তখন আমি তোমার একমাত্র প্রিয় বোনের সাথে যা ইচ্ছা তা করতে পারি।
আই নো এখন তুমি প্রমাণ চাইবে তাই আগে থেকেই সব রেডি করে রেখেছি। জাস্ট আ মিনিট।
.
এই বলে আরিহা বিছানায় পড়ে থাকা ব্যাগ থেকে একটা কাগজ বের করে ইহানের সামনে ধরে। ইহান দ্রুত সেই কাগজ হাতে নিয়ে পড়তে শুরু করে। পড়া শেষে ইহান কিছু বলতে যাবে তার আগেই আরিহা বলে উঠে,
.
— আই নো এখন তুমি ষাঁড়ের মত চেঁচাবে তারপর এই কাগজ ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলবে। আর বলবে প্রমাণ নেই। তাই তো!
যা ইচ্ছা করতে পারো আই ডোন্ট কেয়ার বিকোজ আই এম নোট ডাম্বো ওকে। আই হ্যাভ দ্যা অরিজিনাল ওয়ান। সো ইউ ক্যান কেরি অন।
বাই দ্যা ওয়ে আমার এখন শাওয়ার নেওয়া উচিৎ সো আই এম গোয়িং। বায়!
.
এই বলে আরিহা নিজের জামা কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে আর ইহান এইদিকে রাগে ফুসতে থাকে। হাতে থাকা কাগজটা দুমড়ে মুচড়ে ছুড়ে মারে৷
.

“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
.
?
.
আরিহা ওয়াশরুম থেকে আসতেই ইহান আরিহাকে দেয়ালের সাথে চেঁপে ধরে আর কটমট করতে করতে কিছু বলতে নিবে তার আগেই আরিহা ইহানের কলার টান দিয়ে ধরে নিজের মুখের একদম সামনে এনে বলে,
.
— বাহ বেবি তুমি দেখি বেশ রোমেন্টিক মুডে আছো? বউকে কাছে পেয়ে বুঝি তোমার আর সইছে না? ইশ! কত ভালবাসো আমায়। আমি তো জানতামই তুমি আমায় অনেক বেশি ভালবাস তাই তো এখন তুমি আমার এত কাছে। দুষ্টু হাসি দিয়ে।
.
আরিহার কথায় যেন ইহানের শরীরে আগুন জ্বলে উঠে। সে রাগে আরিহাকে পাশ দিয়ে ধাক্কা মেরে চেঁচিয়ে বলে উঠে,
.
— আমি তোকে ভালবাসি না এইকথা কি তোর মাথায় ঢুকে না? আগেও বলেছি এখন আবারও শেষ বারের মত বলছি আমি যা করেছি শুধু মাত্র প্রতিশোধ নিতে। তোর জন্য আমার মনে বিন্দু মাত্র জায়গা নেই বুঝলি। তুই যাই কর না কেন কোনদিন আমার মনে জায়গা করতে পারবি না। বিকোজ আই জাস্ট হেট ইউ।
.
কথাটি বলেই ইহান গটগট করে রুম থেকে চলে যায়। আরিহা ইহানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে এক রহস্যময় হাসি দেয়। সেই রহস্যময় হাসি মুখের মধ্যে বিরাজমান রেখেই বলে,
.
— কথায় আছে, ” ভালবাসা দিয়ে ভালবাসতে শিখাতে হয়।” কিন্তু আমি ঘৃণা দিয়ে ভালবাসার সেই বিষাক্ত বীজটি বুনবো। মুচকি হেসে।
.
আরিহা এইবার রকিং চেয়ারে বসে হেলান দিয়ে শুয়ে পড়ে। চোখে তার এক অন্য রকম চাহনি। সেই চাহনিটি বুঝা বড় দায়। ঠোঁটে এক রহস্যময় হাসি।আরিহা সেই হাসি ঠোঁটে বিরাজ রেখে বলতে থাকে,

– আমি তোমাকে আমার জীবনের সাথে জড়াই নি বরং তুমি স্বেচ্ছায় এসে আমার জীবনের সাথে নিজেকে জড়িয়েছ। আমার মনে ভালবাসা নামক বিষাক্ত বীজটি বোপন করেছ। আমার #অন্তরালে_তুমি নামক বস্তুটিকে বসিয়েছ। যেই তুমি এত কিছু করেছ এখন সেই তুমি আমার থেকে দূরে যেতে চাচ্ছো?
নাহ! এইটা তো আমি হতে দিতে পারি না। কেন না যে তোমার সাথে যে আমার আরও অনেক হিসাব বাকি আছে। তুমি যা করেছ তার শাস্তি তো তোমায় পেতেই হবে ইহান। তাও আবার আমার স্টাইলে। সেই শাস্তিতে না পাবে তুমি আমার ক্ষমা, না পাবে আমার ভালবাসা, না পাবে আমার ঘৃণা। শূন্যহীন অনুভূতি নিয়ে বাঁচবে তুমি।
তখন তোমার অন্তরালে ঠিকই আমি রয়ে যাব। কিন্তু আমার #অন্তরালে_তুমি আর থাকবে না। গেট বি রেডি মি. ইহান মাহমুদ এক ঘৃণাময় বিষাক্ত ভালবাসার জন্য।
এই বলে আরিহা অট্টহাসিতে মেতে উঠে। আরিহা হাসতে থাকলেও এই হাসির পিছে লুকিয়ে আছে না বলা শত শত কষ্ট। যেই কষ্টের কোন তীরসীমানা নেই।
.
.
.
?
.
সূর্য হেলে পড়েছে পশ্চিম আকাশে। লাল আভাটিও যেন দ্রুত গতিতে ফুড়িয়ে আসছে। বেশ গতিতে বাতাস বইছে। হয়তো বৈশাক মাসের প্রথম ঝড়টা আজই হানা দিবে। আকাশেও ধীরে ধীরে মেঘ জমতে শুরু করেছে। অসহ্য জ্বালাকে নিরাময় করতেই হয়তো আজ তার আগমন।
ইহান ছাদের এক কোনে দাড়িয়ে আছে। বা হাতের দুটি আঙ্গুলের ফাঁকে একটি জ্বলন্ত সিগারেট। একটুখানি পরপরই ইহান তা ওষ্ঠ দুইটির মাঝে চেঁপে ধরছে টান দিচ্ছে আর বাতাসের সাথে সেই বিষাক্ত নিকোটিনের ধোঁয়া উড়িয়ে দিচ্ছে। চোখ দুটো ভীষণ লাল।
ইহানের চোখে বিকেলের ঘটনাটি ভাসতে থাকে যে, কিভাবে আরিহা ওকে বিয়ের জন্য বাধ্য করেছে?
.
.
?
.
আরিহা তখন মোবাইল স্ক্রিনে কিছু বের করে ওর সামনে ধরে। ও মোবাইল স্ক্রিনের দিকে তাকাতেই আঁতকে উঠে। মোবাইলে দেখা যাচ্ছে যে ওর ইন্টার পড়ুয়া বোন এরিনাকে কিছুলোক একটা ঘরে বন্দী করে রেখেছে। হাত, পা ও চোখ বাঁধা অবস্থায় সে বার বার “ভাইয়া! ভাইয়া!” বলে সম্মোধন করেই চলেছে। যা দেখে ইহানের চোখে আতঙ্কের ছাঁপ স্পষ্ট ফুটে উঠে। ইহানের কোন দূর্বলতা নেই একমাত্র তার বোন এরিনা বাদে। নিজের থেকে বেশি ভালবাসে ওকে। কিন্তু ইহান এইটা ভেবেও অবাক হচ্ছে যে আরিহা কিভাবে এরিনার কথা জানতে পারলো? সে তো কখনো এরিনার কথা ওকে বলে নি। তাহলে?
.
আরিহা ইহানের হাব-ভাব বুঝতে পেরে বলে,
.
— মি. ইহান মাহমুদ আপনি হয়তো ভুলে যাচ্ছেন আমি ঠিক কে? আমার কাছে যে কাউরো ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড বের করা কোন ব্যপারই না। আর সেখানে আমার একমাত্র ননদিনীর খোঁজ পাবো না। অসম্ভব!
.
— ইউউউউ!!
.
— ডোন্ট ইউ ডেয়ার টো রাইস ইউর ভয়েস। গোট ইট! দেখ আমার এত মেলোড্রামা পছন্দ না তাই
জলদি কাবিননামায় সাইন করে দাও তা না হলে.. ইউ নো হোয়াট আই মিন! সাইন করো নিজের বোনকে ছাড়িয়ে নাও। বাঁকা হেসে।
.
— কাজটা তুমি ঠিক করলে না। ইউ হ্যাভ টু পে ফোর দিস। রাগে ফুসতে ফুসতে।
.
— নাও সাইন প্লিজ! বিরক্তিকর একটা ভাব নিয়ে।
.
ইহান ভালো করেই জানে আরিহা একবার যা বলে ঠিক তাই করে। আর এখন আপাতত ইহানের কাছে এরিনার জীবনটাই সবচেয়ে বেশি ইমপোর্টেন্ট। ইহান এইবার বাধ্য হয়ে কাবিন নামায় সাইন করে দেয়। আর আরিহার মুখে ফুটে উঠে বিশ্বজয়ের হাসি।
.
.
?
.
ফোনের আওয়াজে ইহানের ধ্যান এইবার ভাঙ্গে। ফোন হাতে নিতেই দেখে রাহুল ফোন করেছে। ইহান ফোনটা ধরে এইবার কানের সামনে ধরে সাথে সাথে রাহুল উৎফুল্ল সুরে বলে উঠে,
.
— এইসব কি শুনছি ইহান তুই বিয়ে করে ফেলেছিস। তাও আবার ওই আরিহাকে? মানে কেন?
.
— এক মিনিট তুই কিভাবে জানলি আমি বিয়ে করেছি?
.
— এইটা শুধু আমি না বরং পুরো ঢাকা শহর জানে। প্রত্যেকটা নিউজে তোর আর আরিহার বিয়ের নিউজ টেলিকাস্ট হচ্ছে। আর হেডলাইনটা উঠছে যে, ” দ্যা গ্রেট ইউটুবার ইহান মাহমুদ গোট মেরিড টু দ্যা বেস্ট ফ্যাশন ডিজাইনার আরিহা আহমেদ।”
তুই এখন সব জায়গায় ভাইরাল ব্রো।
.
— জাস্ট শাটআপ ইয়ার। এইগুলা কে করেছে তা আগে বল।
.
— আর কে তোর গুনধর বউ আরিহা আহমেদ।
.
ইহান আর কিছু না বলে ফোন কট করে কেটে দিয়ে রাগে ফুসতে ফুসতে আরিহার রুমের দিকে চলে যায়। রুমে ঢুকে সে কিছু বলতে নিবে তার আগেই যা দেখে তাতে আঁতকে উঠে। সে দেখে আরিহা ওর দিকে গান পোয়েন্ট করে দাড়িয়ে আছে মুখে তার বাঁকা হাসি। ইহান কিছু বলতে নিবে তার আগেই……
.
.
[ ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমার চোখে দেখবেন।]