অন্তরালে তুমি পর্ব-১৯

0
2312

#অন্তরালে_তুমি
#Part_19
#Writer_Asfiya_Islam_Jannat
?
— ও মাগো মেরা টুরু সতিন!!!

জিসানের এমন কথায় ইহান আহাম্মক বোনে যায়। ইহান ফ্যালফ্যাল করে জিসানের দিকে তাকিয়ে আছে। জিসানের কথাটা যে ওর মাথার উপর দিয়ে গিয়েছে তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। ইহান এইবার অপ্রস্তুত সুরে বলে,

— সতিন মানে? আমাকে কি মেয়ে মনে হয়?

ইহানের এমন প্রতিক্রিয়া আর এমন কথা শুনে দেখে আরিহা আর জিসান কতক্ষণ দুইজন দুইজনের মুখ চাওয়া-চাওয়ি করে অতঃপর দুইজনই একই সাথে হেসে উঠে। আরিহা এইবার হাসি মুখেই বলে,

— জিসান ইউ আর টু মাচ। আসতে না আসতে ফাইজলামি শুরু করে দিয়েছিস?

জিসান দাঁত কেলিয়ে বলে,
— ইহা ফাইজলামি না গো বিবাহিত বালিকা ইহা শত ভাগ সত্য কথা।

আরিহা এইবার হাল্কা হেসে উঠে বলে,
— যখন আমার অতি পছন্দের বন্দুকটা দিয়ে গুলি চলবে না তখন বুঝা যাবে এই সত্যিটা কত ভাগ সত্যি হয়।

জিসান এইবার মুখ কালো করে বলে,
— তুই আমায় একটুও ভালবাসিস না তাই না? হুহ! থাকবো আমি তোর সাথে। আবার চলে গেলাম আমি আমার বিলাতের নীড়ে।

আরিহা এইবার শান্ত গলায় বলে,
— দরজা খোলা আছে তুই যেতে লারিস আর হ্যাঁ যাওয়ার আগে দরজাটা লক করে যাস।

জিসান এইবার এক পা ফেলে বলে,
— গেলাম কিন্তু! এইবার গেলে কিন্তু আর আসবো না।

আরিহা এইবার রান্না ঘরের দিকে যেতে যেতে বলে,
— না আসলেই আমার সুবিধা। আমার আর কোন পিছুটান থাকবে না।
আর যদি মনে করিস সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হয়েছে তাহলে নিজের রুমে চলে যা। চাবিটা আমার রুমে পেয়ে যাবি।

জিসান এইবার মুখ ভার করে বলে,
— প্রথম কথা জিসানের একদম পছন্দ হয় নি। তাই আরিহা ইজ ভেরি ব্যাড।
দ্বিতীয় কথা জিসানের পছন্দ হয়েছে তাই আরিহা ইজ কিউটি।

ইহান এতক্ষণ হতবাকের মত তাকিয়ে আছে। প্রথমত আরিহার হাসি দেখে থমকে গিয়েছিল। এই প্রথম সে আরিহাকে মন খুলে হাসতে দেখেছে। এই হাসিতে কোন কৃত্রিম স্পর্শ ছিল না। শুধু ছিল স্নিগ্ধয়া। কিন্তু অতঃপর আরিহা আর জিসানের কথা বার্তা শুনে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে।
অতঃপর আরিহার ডাকে সে নিজের দৃষ্টি পরিবর্তন করে। আরিহা ইহানের দিকে এক কাপ কফি এগিয়ে দিয়ে বলে,

— জিসানের কথা বার্তা কিছুটা এমনই। ওর কথাগুলো নিয়ে এত ভাবার প্রয়োজন নেই।

এই বলে আরিহা ইহানের হাতে কফি ধরিয়ে দিয়ে নিজের ল্যাপটপ নিয়ে রুমে চলে যায়। আর ইহান মনে মনে বলে,

— তা না হয় না ভাবলাম। কিন্তু আরিহার এমন আচরণ যে আমার কাছে নতুন। পদে পদে আরিহার নতুন নতুন রুপ দেখছি। আচ্ছা আমি আদো আরিহাকে বুঝতে পেরেছি?

?

ডাইনিং টেবিলে বসে আছে ইহান। পাশেই আরিহা খাবার পরিবেশন করছে। ইহান বার বার আড় চোখে আরিহাকে দেখছে। কিন্তু তাতে আরিহার হেলদোল নেই সে নিজের মত কাজ করে চলেছে। এমন সময় হুট করে জিসান এসে চেয়ার টেনে বসে পড়ে। তারপর ইহানের দিকে তাকিয়ে বলে,

— বাহ! আমার সতিন দেখি আমাকে রেখেই আগেই খেতে বসে গিয়েছে। তা সতিন মশাই আমার জন্য একটু অপেক্ষা তো করবেন নাকি?

ইহান এইবার ভ্রু কুটি একত্রিত করে জিসানের দিকে তাকায়। তার কাছে জিসানের প্রত্যেকটা কথা যেন বিরক্তিকর লাগে। ইহান বিরক্তিকর একটা ভাব নিয়ে বলে,

— হোয়াট ইজ সতিন মশাই? আর ছেলেদের কবে থেকে সতিন হওয়া শুরু করলো শুনি? সতিন মেয়েদের হয় ছেলেদের না।

জিসান এইবার মাথা চুলকিয়ে আরিহার দিকে বলে,
— তাহলে সতিনের মেইল ভার্সন কি? ওই আরু সতিনের মেইল ভার্সন কি রে?

আরিহা এইবার সুরু চোখে তাকিয়ে বলে,
— নিজের কাজ নিজে কর আর এখন বেশি কথা না বলে তারাতারি খেয়ে নেয়। পরে কিন্তু তোর সাথে কথা আছে।

অতঃপর জিসান কিছু না বলে চুপচাপ খাওয়ায় মন দেয়। ইহানও আর কিছু না বলে খেয়ে নেয়৷ খাওয়া শেষে আরিহা সব গুছিয়ে জিসানের রুমে যায়। জিসানের সাথে ওর কিছু কথা আছে বলে।
তাই ইহান নিজের রুমে বসে আরিহার অপেক্ষা করতে লাগলো। বেশ দেরি হচ্ছিল বলে সে নিজের ল্যাপটপ নিয়ে বসে পড়ে হাল্কা পাতলা কাজ করার উদ্দেশ্য। দেখতে দেখতে ২ ঘন্টা পার হয়ে গেল কিন্তু আরিহার আসার নাম গন্ধই নেই। ইহান এইবার অস্থির হয়ে উঠে। আরিহা এখনো কেন আসছে তা বুঝে উঠতে পারছে না সে। ইহান এইবার নিজের জায়গায় ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় আর জিসান যেই রুমে আছে ওই রুমে যায়। রুমের সামনে গিয়েই দেখে জিসান আরিহার সাথে কি যেন কথা বলছে আর আরিহা মুচকি মুচকি হাসছে৷ তা দেখে ইহানের মোটেও ভালো লাগলো না। ইহান এইবার বিরবির করতে থাকে,

— এই জন্মে তো ওর মুখে হাসির “হ” ও দেখলাম আর এখন হাসির পুরো স্টিকার যেন মুখের মধ্যে লেগে আছে।

ইহান কিছু না বলেই হুট করে জিসানের রুমে ঢুকে পড়ে আর আরিহার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। ইহানের উপস্থিতি টের পেয়ে আরিহা মুখ তুলে তাকায়। আরিহার মুখ ভঙ্গিতে জিজ্ঞাসুক ভাবটা ফুটে উঠে। ইহান তা দেখেও না দেখার ভান করে বলে,

— ঘুমাবো!

ইহানের এমন কথায় আরিহা ভ্রকুটি কুঞ্চিত তাকায় আর বলে,
— তো ঘুমাও গিয়ে। আমি তো আর তোমায় বেঁধে রাখি নি।

ইহান এইবার বিরক্তিকর একটা ভাব নিয়ে বলে,
— ঘুমাবো মানে আম একা ঘুমাবো না তুমিও আমার সাথে ঘুমাবে৷ চল!

এই বলে ইহান আরিহাকে এক প্রকার টেনে জিসানের রুম থেকে নিয়ে আসে। রুমে এসে ইহান কিছু না বলে আরিহাকে বিছানায় বসিয়ে দেয়। অতঃপর লাইট অফ করে আরিহাকে নিজের বুকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। ইহানের এইসব কর্মকান্ডে আরিহার ভ্রু দুটো আরও কুঞ্চিত হয়ে আসে। আরিহা এইবার তিক্ত গলায় বলে,
— এইসব কি হচ্ছে?

ইহান ডোন্ট কেয়ার একটা ভাব নিয়ে বলে,
— ঘুমাচ্ছি তা তো দেখতেই পারছো।

— ঘুমাচ্ছো ভালো কথা কিন্তু আমাকে জড়িয়ে ধরে কেন? এইভাবে তো আমার ছাঁয়াও তোমার সহ্য না সেখানে আজ তুমি নিজ থেকে তোমার বুকে জায়গা দিচ্ছো?

ইহান মুচকি হেসে বলে,
— নিজেকে আমার বদভ্যাসে পরিনত করে বলছো এমন কেন করছি? একটা কথা তো জানোই বদভ্যাস চাইলেও পরিবর্তন করা যায় না।

আরিহা এইবার শান্ত কন্ঠে বলে,
— তাহলে তো এইটাও জানার কথা যে বদভ্যাস খুব ভয়ংকর জিনিস। না এইটা ছাড়া যায়, না এইটাকে আজীবন আঁকড়ে ধরে রাখা যায়। মাঝ পথে যখন এইটি ছুটে যাই তখন সবচেয়ে বেশি আঘাত প্রাপ্ত হতে হয়।
তাই সাবধান আপনার বেলায় যাতে এমন না হয়।

প্রতিউত্তরে ইহান কিছু বলে নি শুধু চুপ করে ছিল। হয়তো উত্তরে কিছু বলার পায় নি তাই।

#চলবে