বেষ্ট_ফ্রেন্ড_নাকি_স্বামী পর্ব-০৪

0
2154

#বেষ্ট_ফ্রেন্ড_নাকি_স্বামী?
#part_4
#Written_By_Nilima_Zabin_Tanmona

রাফি রিধীর ঘাড়ে চুমু দিয়ে রিধীর পাশে শুয়ে পরলো। মাঝরাতে হঠাৎ রিধীর ঘুম ভেঙ্গে যায়। রিধী তাঁকিয়ে দেখে রাফি ওর পেটে হাত দিয়ে আছে আর মুখ ঘাড়ে দিয়ে আছে। রিধী তখন ভাবে রাফি আজকের দিনটা কি তুই ভুলে গেছিস? আজকের দিনেই তো তুই আমাদের বন্ধুত্ব টাকে শেষ করে দিয়েছিলি #আমি_তোকে_ভালবাসি এই ৩টা শব্দ উচ্চারণ করে। আমার উপর এখন তোর সম্পূর্ণ অধিকার আছে কিন্তু আমি তোকে সেই অধিকার দিতে পারছিনা। কেন করলি সেইদিন এমন??

“ফ্ল্যাশব্যাক”

যেইদিন রাফি ঢাকা থেকে ছুটে এসেছিল রিধীর কাছে। সেইদিন রিধীকে রাফি ছাদে আসতে বলে। রিধী ছাদে রাফিকে দেখে অবাক হয়ে যায়। ওদের কথার মাঝে রাফি হঠাৎ রিধীকে লিপ কিস করে দেয়। আর রিধীর গাল ধরে বলে

-এতদিনে কি তুই বুঝিস নি রাফি তোকে কতটা ভালবাসে?? আর তোর মন এখন ফালতু লিখন এর কাছে!!
-এইটা তুই কি করলি? (শান্ত গলায় রিধী)
-রিধী আমি কিছু জানি না কি করেছি? বাট আমি তোকে ভালবাসি। হ্যাঁ আমি তোকে ভালবাসি । আমার বউ হলে তুইই হবি নয়ত আর কেউ হবেনা। কত্তটা ভালবাসলে মানুষ পাগল হয় আমি জানিনা বাট রিধীতেই রাফি ডুবে রয়েছে। আমি চাইনা সেই রিধীর মনে অন্য কোনো পুরুষের ভাবনা আসুক। রিধী শুধু আমার!
-তুই আমার বড় নয়ত এই মুহুর্তে তোর গালে আমার ৫ আঙ্গুলের দাগ বসে যেত। বেরিয়ে যা আমার বাড়ি থেকে। জাস্ট গেট আউট ফ্রম হেয়ার। (চেঁচিয়ে রিধী)

রিধী রাফিকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই সেখান থেকে চলে এলো। রিধী বাসায় এসে তার মা বাবাকে বলল লিখনের সাথে যত তারাতারি সম্ভব রিধীকে বিয়ে দিতে। সেই অনুযায়ী রিধীর মা-বাবা রিধীর বিয়ের তারিখ এগিয়ে দিল। আর রাফি সেখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদছে। ভীষণ ব্যাথা হচ্ছে রাফির বুকে। সব কিছু এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। তার কিছুদিন পরেই রাফির মা বাবা রোড এক্সিডেন্ট এ মারা যায়। রাফি সম্পূর্ণ নিঃস্ব হয়ে পরে। রাফিকে সান্তনা দেওয়ার মত কেউ নেই এখন। রাফি একা চুপচাপ থাকে। বাইরে বের হয় না। মায়ের কাপড় জড়িয়ে ধরে কাঁদে। বাবার জামা কাপড় পরে পাগলের মত বিলাপ করে। এই রাফির সাথে আগের রাফির কোনো মিল পাচ্ছে না কেউ। মরা লাশের মত বেঁচে ছিল দেড় মাস রাফি। দেড় মাস পর রাফি আমেরিকা চলে যায় বাংলাদেশের সব কিছু বিক্রি করে। কাউকে সেই কথা জানায় না এমনকি রিধীকেও না। রিধী জানতে পারে রাফির ফ্রেন্ড এর মাধ্যমে। রিধী সেইদিন অনেক কেঁদেছিল। রাফিকে এই অবস্থায় দেখতে দেখতে রিধীও মানসিকভাবে ভেঙ্গে পরেছিল। তাই বাধ্য হয়ে রিধীর বিয়ের তারিখ এক বছর পেছানো হয়। আর লিখন সে ও এত তারাতারি বিয়ে করবেনা। সব মিলিয়ে বিয়ের তারিখ বেশ অনেক দিন পেছানো হয়।

এক বছর পর যখন রিধী সবে মাত্র ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে উঠেছে তখন রিধী একা একাই বাইরে চলাচল করত। কেউ রিধীকে কিছু বলার সাহস পেত না কারণ লিখনের হবু বউ। একদিন বিকেলে রিধী কলেজ থেকে ফেরার সময় পেছন থেকে ওর মুখ চেঁপে ধরে একটা প্রাইভেট কার এ উঠায় একজন। রিধী অজ্ঞান হয়ে যায়। যখন রিধীর জ্ঞান ফিরে তখন রিধী নিজেকে অর্ধনগ্ন অবস্থায় পায় আর শরীরে নখের দাগ। পাশে লিখন বসা। রিধীর মাথায় বেশ বড় রকমের বাজ পরে তখন। রিধী কাঁপা কাঁপা গলায় লিখনকে জিজ্ঞেস করে

-তুমি আমাকে…. (আর কিছু বলতে পারল না রিধী)
-হ্যাঁ আমি তোকে রেপ করেছি। কি ভেবেছিস? লিখন তোকে বিয়ে করবে? তোর মত কত সুন্দরীর সাথে লিখনের বিয়ে ঠিক হয়েছিল কিন্তু লিখন তাদের কাউকেই বিয়ে করেনি। তোর মত এমন হাল করে ছেড়েছে। (রিধীর চুলের মুঠি ধরে)
-বাহ রে জানোয়ার বাহ!! তোর মত ছেলেকে আমি ভালবেসেছিলাম! আমার সম্মান,,আমার সতীত্ব সব এইভাবে শেষ করে দিলি তুই?
-কেন তোর রাফি কিছু করে নাই? (ব্যঙ্গ করে)
-জানোয়ার চুপ কর!! ওই মুখে তুই ওর নাম নিবি না।

এরপর রিধী সেই অবস্থাতেই বাসায় চলে আসলো। এলাকার সবাই অদ্ভুতভাবে তাকাচ্ছে রিধীর দিকে। কিন্তু রিধীর সেইদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই। রিধী যেন কঠিন পাথর হয়ে গেছে। রিধীর মা-বাবা রিধীকে এই অবস্থায় দেখে কাঁদতে শুরু করে দেয় আর জিজ্ঞেস করে এমন অবস্থা কি করে হলো?

রিধী কিছু না বলেই ঘরের দরজা লাগিয়ে দেয়। কাশফি এসে দরজা খোলায় রিধীকে দিয়ে। রিধী চোখ মুখ মরিচের মত করে ফেলেছে। এরপর কাশফিকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে সব বলল রিধী। রিধীর মা-বাবা নিজেদের উপর থুতু দিচ্ছেন এই ভেবে যে লিখনের মত ছেলেকে কি করে তারা মেয়ের জামাই বানাতে চেয়েছিলেন? যে কিনা আজ রিধীর এই হাল করল!

এই শোক ভুলার কয়েকদিন পর আবার নতুন খবর আসলো রিধী প্রেগন্যান্ট। রিধীর কান্না ছাড়া তখন আর কোনো উপায় ছিলনা। দিন রাত রিধী মুখ গুঁজে ঘরে বসে বসে কাঁদত। রিধীর মা-বাবা,, বোনসহ পাগল হয়ে গেছে রিধীর এই অবস্থা দেখে। রিধীকে এবোর্শন করাতে চাইলে রিধী বলে
-এই বাচ্চা তো কোনো পাপ করেনি তাহলে ও কেন শাস্তি পাবে?? আর আমি ওকে নিয়েই সারাজীবন পার করে দিব। ওর বাবার পরিচয় লাগবেনা। আমিই ওর সব হব।

রিধীর এই কথার উপর কেউ আর কথা বলতে পারল না। রিধী নিজের খেয়াল রাখত আর লোক কথায় কান দিত না। লোক কথার ভয়ে রিধী কখনো বাড়ির বাইরেও যেত না কিন্তু লোকেরা তো আর থেমে নেই। রিধীর বাসায় এসে মা-বাবা কে কথা শুনিয়ে যায়। রিধী শুধু চেয়ে চেয়ে দেখে।

আর এইদিকে রাফির সাথে আর কোনো যোগাযোগ হয়না রিধীর। রিধীর এখন শুধু রাফির কথাই মনে পরে। রাফিকে মনে করেই রিধী বুক ভাসায়। একদিন হঠাৎ করে রাফি বাংলাদেশে আসে অর্থাৎ রিধী আর রাফির বিয়ের দিন। এরপরের কথা তো আপনারা জানেনই।

এসব ভাবতে ভাবতে রিধীর চোখের পানি গিয়ে রাফির চোখের উপর পরে। রাফি জেগে যায়। উঠে দেখে রিধী কাঁদছে আর রাফির দিকে একমনে তাঁকিয়ে আছে।

চ‌ল‌বে