প্রিয়_ভালোবাসা পর্ব-০৮

0
3070

#প্রিয়_ভালোবাসা
#নিশাত_তাসনিম
#পর্ব:৮

আজ যখন জানলাম আমার স্বামী তার প্রাক্তন প্রেমিকাকে বাঁচাতে আমাকে বিয়ে করেছে,তখন হতভম্ভ হয়ে গিয়েছিলাম।আমার বিরুদ্ধে এত ষড়যন্ত্র করা হয়েছে অথচ আমি জানতেই পারিনি।আমি ভেবেছিলাম বিয়েটা আমার মতের কারনেই হয়েছে কিন্তুু না আমি ভুল ছিলাম।আমাকে ইমোশনাল করা হয়েছিলো যাতে আমি বিয়েটা করি।

এসব শুনে আমি অনুভূতিহীন হয়ে গেছি।মানুষ এতোটা খারাপ কী করে হতে পারে?যা দেখা যায় তা হয় না,আর যা হয় তা দেখা যায় না।কথাটা একদম বাস্তব,উনাদের না দেখলে বুঝতামই না।

আজ মামাকে খুব মনে পড়ছে,মামা যখন মাথায় হাত দিয়ে বলেছিলো,”মা রে তুই বিয়েটা করিস না,পরে পস্তাবি।”আমি তখন মামাকে হাসি মুখে বলেছিলাম মামা যেনো দোয়া করে।আমি ভাবতেই পারি নি কথাটা এতোটা সত্যি হবে।যদি উনাদের কথা না শুনতাম তাহলে আজও বুঝতে পারতাম না যে এরা সবাই এত বড় ষড়যন্ত্র করছে।

সেদিনের হাত কাঁটার ঘটনার পর আজ সাতদিন হয়ে গেলো অথচ আমি কোনো কিছু জানতে পারি নি।আমাকে কঠিনভাবে শাসানো হয়েছিলো আমি যেনো উনাদের পরিবার নিয়ে ঘাটাঘাটি না করি।আমিও মুখ দিয়ে হ্যা বলেছিলাম।কিন্তুু হাল ছাড়ি নি চুপিচুপি সব জানতে চাইতাম।এতে বিশেষ কোনো লাভ হয় নি,কারন আমার উপর ২৪ ঘন্টা নজর রাখা হত।কারো সাথে দেখা করতে দেওয়া হতো না, আর না কারো সাথে কথা বলতে দিত।আশ্চর্যের বিষয় কেউই আমার সাথে দেখা করতো না আর না কেউ এ বাড়ীতে আসতো।

দম বন্ধ হয়ে আসতো যখন কারো সাথে মন খুলে কথা বলতে পারতাম না।দিনদিন কেমন শুকিয়ে যেতে লাগলাম।সব মেনে নিতে পারলেও উনার অত্যাচার মেনে নিতে পারতাম না।আমার সামান্যতম ভুল হলে আমাকে শাস্তি দিতে উনার হাত কাঁপতো না।কেনো যেনো মনে হত উনি আমাকে প্রচন্ড ঘৃনা করে।রাতদিন আমাকে আতংকের মধ্যে রাখতো।ধীরে ধীরে বুঝতে পারলাম উনি আমাকে ভয়ের মধ্যে রাখতে চাচ্ছে।

একটু আগে যখন পানি খেতে নিচে নামছিলাম তখন সিড়ির কাছে যেতেই শুনতে পেলাম।

একজন পাতলা,রোগা টাইপ ছেলে উনাকে হন্তদন্ত হয়ে বলছে,,,

—“স্যার, ইশিকা মেম বলেছেন আপনি যেনো দ্রুত সেঁজুতি মেম এর ব্যবস্থা করেন।”

উনি ছেলেটার দিকে তাকিয়ে শার্টের কলার ঠিক করতে করতে বললেন,,

—“হ্যা,আমি ব্যবস্থা করে ফেলেছি।ও আমার কথামতো সব করবে আর না করলে আরো উপায় আছে।”

ছেলেটা এবার একটু ভয়ে ভয়ে বললো,,

—“কিন্তুু স্যার ইশিকা মেম বলেছেন, আপনি যেনো দ্রুত করেন।”

ছেলেটার কথা শুনে উনি রেগে চোখ রাঙ্গিয়ে বললেন,,,,

—“আমি কারো ওর্ডার ফলো করি না,আমি আমার নিয়মে চলি।আমি জানি আমাকে কখন কী করতে হবে।সো তোমার মেমকে বলে দিও সেঁজুতি এখনও আমাদের মিশনের জন্য তৈরী নয়,আরো সময় লাগবে।”

ছেলেটা ইতোস্ত হয়ে বললো,,,

—“ওকে স্যার।”

ছেলেটা কয়েক কদম যেয়ে আবারো পিছনে ফিরে এসে উনার সামনে দাড়িয়ে রইলো।হয়তো কিছু বলতে চাচ্ছে বাট বলতে পারছে না।

উনি ওর দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বললেন,,,

—“কি হলো দাড়িয়ে আছো কেনো? কিছু বলবে?

ছেলেটি এবার আমতা আমতা করে বললো,,,

—“স্যার আপনি যদি কিছু মনে না করেন তাহলে একটা প্রশ্ন করার ছিলো।”

উনি ছেলেটার দিকে বিরক্তিকর চাহনী নিয়ে বললো,,,

—“কী?”

ছেলেটা এবার চোখ বন্ধ করে এক দমে বলে ফেললো,,,

—“স্যার আপনি তো ইশিকা মেমকে ভালোবাসেন তাহলে সেঁজুতি মেমকে কেনো বিয়ে করেছেন?

উনি ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বললো,,

—“রাফি, আজকাল তোমার মুখটা বেশি চলে।”

ছেলেটা এবার হাত মুচড়াতে মুচড়াতে বললো,,

—“ইয়ে মানে স্যার।”

উনি এবার সোফায় বসে পায়ের উপর পা তুলে আরাম করে বসে বললে,,,

—“ইয়ে কী?রাফি তুমি আমার বিশ্বস্ত কর্মচারী।আমার লাইফের অনেক কিছুই তুমি জানো,তাও কেনো এমন প্রশ্ন করেছো জানি না?বাট তোমার কৌতূহল মিটাতে বলতেই পারি।

“আই এম হেল্পলেস,ইশিকাকে বাঁচাতে হলে সেঁজুতিকে দরকার।”

ছেলেটি এবার আক্ষেপের স্বরে বললো,,,

—কিন্তুু স্যার তাই বলে, সেঁজুতি মেমের সাথে এমন করবেন?মেম তো নির্দোষ, উনি তো কোনো দোষ করে নি তাহলে কেনো উনার সাথে এমন করবেন?ইশিকা মেম কত ভয়ংকর আর সেঁজুতি মেম কত নিষ্পাপ। উনার সাথে এমন করাটা কী ঠিক হবে?

ছেলেটির কথায় উনি বাঁকা হেসে বললো,,,

—“ভালোবাসা এবং যুদ্ধে সব জায়েজ।”

উনাদের কথা শুনে হতভম্ভ হয়ে গিয়েছিলাম।তার মানে আমার বিয়েটা প্লান ছিলো।উনি উনার প্রেমিকার জন্য আমাকে বিয়ে করেছে,কিন্তুু আমাকেই কেনো?

____________________________

রুমে বসে বসে হিসাব মিলাতে লাগলাম,কিন্তুু কোনো কিছুই মিলাতে পারতেছি না।এক মিনিট সেদিন রিয়া আপু আমাকে দেখে বলেছিলো ইশিকা,তার উপর আমাকে কারো সাথে দেখা করতে দেওয়া হয় না।ইশিকার সাথে কি কোনো ভাবে আমার চেহারার মিল রয়েছে?

যেভাবেই হোক এসব রহস্য আমাকে বের করতে হবে,এরা সবাই আমাকে মানসিক ভাবে অসুস্থ করতে চাচ্ছে। উনি রুমে আসতেই আমি উনার সামনে গিয়ে বললাম,,”আমি আপনার আর ইশিকা আপুর প্রেম সম্পর্কে জানতে চাই।”

উনি আমার কথা শুনে আমার পা থেকে মাথা পর্যন্ত তাকিয়ে বললেন,,,”এখন আমার মুড নেই।”

উনার কথা শুনে বুঝলাম উনি কিছু বলবেন না।তাই আমি দ্রুত গিয়ে ওই ছুড়িটা নিয়ে আমার গলায় ধরে বললাম,,,”আমি জানি আমার জীবন আপনার কাছে খুব প্রিয়।কারন আপনার প্রেমিকাকে বাঁচাতে হলে আমাকে প্রয়োজন, আপনি যদি আমাকে সবকিছু না বলেন তাহলে আমি আমার জীবন শেষ করে দিবো।”

উনি আমার দিকে এগিয়ে আসতে নিলে আমি না করে দিলাম,বললাম উনি কিছু করলে আমি সত্যি সত্যি কিছু করে ফেলবো।উনি অস্থির হয়ে বললেন আমি যেনো এমন কিছু না করি,উনি সব বলবেন।

উনি বললেন আমি যেনো ছুরিটা নামাই,তাহলে উনি বলবেন।আমি বললাম, না, উনি না বলা পর্যন্ত আমি ছুরি সরাবো না।

উনি আমার হাতের দিকে অসহায় ভাবে তাকিয়ে সব বলতে লাগলেন।উনার কথা শুনে আমি আকাশ থেকে পড়লাম।

চলবে,,,