গোধূলি বেলায় প্রেম পর্ব-২১

0
3618

#গোধূলি_বেলায়_প্রেম
#ফাবিহা_নওশীন

|পর্ব-২১|

রীতি নিজের ব্যাগপত্র গুছিয়ে নিয়েছে।১৫দিনের জন্য মামা বাড়ি যাচ্ছে।অনেক জামাকাপড় নিয়েছে।দুটো ব্যাগ জামাকাপড় ভর্তি করে রীতি বিছানা থেকে উঠে দাড়ালো।কোমড়ে দুহাত রেখে জোরে শ্বাস নিয়ে বললো,
—-“উফফ,বাচলাম।এখন কিছু বইপত্র নিতে হবে।আর ডায়েরিটা,আর কি নিবো?”

রীতি এসব ভাবতেই দরজায় চোখ পড়ে।রিমন দরজায় দাড়িয়ে উঁকি মারছে।
রীতির চোখে চোখ পড়তেই রিমন দাঁড়িয়ে গিয়ে দাত কেলিয়ে হাসি দিলো।
রীতি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বললো,
—-“কিরে ফুটবল,চোরের মতো উকি দিচ্ছিস কেনো?মতলব কি তোর,হু?”

রিমন হাসি আরো প্রসারিত করে বললো,
—–“কিছুনা,এমনিতেই দেখছিলাম।তা কয়দিনের জন্য যাচ্ছো?এত্ত গাট্টি বাধছো যে?”

গাট্টি শব্দটা শুনে বললো,
—-“গাট্টি মানে কি হা?১৫দিন থাকবো।এটুকু তো নিতেই হবে।”

রিমন মাথায় হাত দিয়ে বললো,
—-“এটুকু?দুই গাট্টি জামাকাপড় নিয়ে এটুকু বলছো?মনে হচ্ছে মামাবাড়ি না রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যাচ্ছো আজীবনের জন্য।”

রীতি রিমনের কথা শুনে চোখ বড়বড় করে তাকালো।
—-“রোহিঙ্গা? আমি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যাবো কেনো?”

—-“কারণ তুমি একটা রোহিঙ্গা।”
রিমন রীতিকে রোহিঙ্গা বলেই দৌড়।নয়তো রীতি যে ওর হাড় ভেঙে দেবে সে ওর জানা আছে।
রীতি তখনও বিস্ময় নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।কিছুক্ষণ পর বিস্ময় কাটাতেই রীতি রিমনের খোজ করে।কিন্তু রিমন বাড়িতে নেই।রীতি মেইন ডোর খোলে বাইরে যায়।সিড়ির কয়েক ধাপ নামতেই সাদিবের কন্ঠস্বর শুনতে পায়।সাথে রিমনের।
রীতি আরো কয়েক ধাপ নিচে নামে।সেখানে দেখে সাদিব নিজেদের ফ্ল্যাটের দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে।রিমন ওর সামনে।সাদিব রিমনকে চকলেট দিচ্ছে।রিমনও খুশি মনে চকলেটগুলো নিচ্ছে।সাদিব চকলেট দিয়ে ভেতরে ঢুকে গেলো আর রিমন তখনও সেখানে দাঁড়িয়ে আছে।রীতি তখনও ঠায় দাঁড়িয়ে আছে বিস্ময় নিয়ে।রীতি আজ রিমনকে ধরবে আর ইচ্ছে মতো পেটাই করবে।সাদিবের থেকে চকলেট কেনো নিচ্ছে।চকলেট দিবে আর ও নিয়ে নিবে?
রীতি নিচে নামতে যাবে তখনই সাদিব আবারো বেরিয়ে এলো ফ্ল্যাট থেকে।তবে খালি হাতে না।হাতে একটা সেভেন আপ এর বোতল।
রিমনের দিকে হাত বাড়িয়ে দিতেই রিমন দাত কেলিয়ে হাসছে।সাদিব রিমনের গাল টেনে পিঠে চাপটে কিছু একটা বলছে কিন্তু রীতি শুনতে পায়নি।রিমন সেগুলো নিয়ে নিচে চলে গেলো।রীতি কিছুই বুঝতে পারছেনা ঘটনা।
তবে এটুকু বুঝতে পারছে এই যে এতোদিন রিমনকে কোল্ড ড্রিংকস, চকলেট,আইসক্রিম খেতে দেখতো সেগুলো সাদিব দিতো।
“আর সেদিন যে আমাকে রিমন চকলেট দিলো সেটাও কি সাদিব দিয়েছিলো?আমি সাদিবের দেওয়া চকলেট খেয়েছি?রিমনের বাচ্চা আমাকে মিথ্যা বলেছে?”
তারপর রীতির মাথায় আরেকটা প্রশ্ন উকি দিলো সাদিব কেনো রিমনকে এগুলো দেয়?এমনিতেই ভালোবেসে না অন্য কারণ আছে?অন্য কি কারণ থাকবে?
ডাক্তার রিমনকে এসব খেতে নিষেধ করেছে আর উনি রিমনকে এসব খাওয়াচ্ছে?
রীতি ঠিক করলো রিমনকে আচ্ছামত ধোলাই করবে আর সাদিবকেও হুশিয়ার করে দেবে যাতে রিমনকে এসব না দেয়।
কিন্তু এই মুহুর্তে রিমন আর সাদিব দুজনেই হাত থেকে ফস্কে গেছে।বিকেল হলেই সাদিবকে ছাদে পাওয়া যাবে।

রীতি আপাতত দুজনকে ছেড়ে দিয়ে নিজের কাজে লেগে গেলো।সব কিছু গুছিয়ে নিলো।আগামীকাল সকালে বাবা দিয়ে আসবে।

.

গুটিগুটি পায়ে রীতি ছাদে গিয়ে দাড়ালো।ছাদের সিড়ি ঘরের দরজার সামনে দাড়াতেই সাদিব আর দিয়াকে দেখতে পেলো।দিয়া হাত নাড়িয়ে কিছু একটা বলছে মাঝেমধ্যে মুচকি হাসছে।সাদিব একমনে ওর কথা শুনছে।মনে হচ্ছে ওর গুরুত্বপূর্ণ কিছু নিয়ে কথা বলছে।দিয়া সাদিবকে কোনো মাসোয়ারা দিচ্ছে।দিয়ার কথা শুনে সাদিবের দৃষ্টি উঠানামা করছে আর মাঝেমধ্যে ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটছে।
হুট করে দিয়ার হাসির পরিমাণ বেড়ে গেলো।রীতির গায়ে জ্বালা ধরিয়ে দিচ্ছে দিয়ার হাসি।
রীতি স্থির দৃষ্টিতে ওদের দেখছে।রীতি যে এতক্ষণ যাবত এখানে দাঁড়িয়ে আছে সেদিকে ওদের কারোরই খেয়াল নেই।
রীতি আর দাড়িয়ে থাকতে পারছেনা।কেউ দেখার আগেই দৌড়ে ছাদ থেকে নেমে গেলো।
দিয়া সিড়ি ঘরের দরজার দিকে তাকালো।সেখানে দাড়িয়ে থাকা ছায়ামূর্তিটি দৌড়ে চলে গেছে সেটা ওর চোখ এড়ায়নি।সাদিবের অগোচরে দিয়ার ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটলো।দিয়ার প্ল্যান সাকসেস হচ্ছে কিছুটা।

রীতি বিছানার চাদর খামচে বসে আছে।আর রাগে ফুসছে।নিজের উপর ওর প্রচন্ড রাগ হচ্ছে।কেনো বারবার নিজেকে নিজেই আঘাত করছে?কেনো বেহায়ার মতো বারবার ছুটে যাচ্ছে।কেনো নিজের কষ্টটা বাড়াচ্ছে?কেনো?”কেনো” এর উত্তর ও খুজে পাচ্ছেনা।হয়তো পাবেওনা।সব “কেনো” এর উত্তর পাওয়া যায়না।পাওয়া গেলেও আরেকটা “কেনো” শব্দের সৃষ্টি হয়।
মাত্র কয়েক বছরের জন্য এ বাড়িতে এসেছে তারপর আবারো নিজের বাড়িতে ফিরে যাবে।অথচ এই বাড়ি রীতির উপর কত প্রভাব ফেলছে।রীতি কখনো যা করে নি, ভাবেনি তাই হচ্ছে।রীতি এই বাড়িতে এসে প্রেমে পড়েছে।
রীতি এসব ভেবে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।

.

বাইরে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছে।সকাল থেকেই ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছে।থামার নাম নেই।রাস্তাঘাট কর্দমাক্ত হয়ে গেছে।পাতায় পাতায় বৃষ্টির ফোটা পড়ছে।রীতি বারান্দায় দাঁড়িয়ে বাইরে হাত দিয়ে বৃষ্টির পানিতে হাত ভেজাচ্ছে।আর জোরে শ্বাস টেনে বৃষ্টির ঘ্রাণ নিচ্ছে।আজ বৃষ্টিতে ভিজতে ইচ্ছে করছে কিন্তু মামা বারণ করে দিয়েছে ভিজতে।এমনিতেই ঠান্ডা পড়েছে,বৃষ্টিতে ভিজে জ্বর-ঠান্ডা লেগে যাবে।তাছাড়া এখন রাত।
রীতি আজ ৭দিন হয়েছে মামা বাড়িতে এসেছে।সকাল থেকেই বৃষ্টি পড়ছে।বৃষ্টি দেখে বড় মামী রাতে খিচুড়ি রান্না করেছেন।
রীতির ছোট মামী পেছনে থেকে রীতির কাধে হাত রাখলো।
রীতি ঘুরে তাকালো।

রীতির মামী বললো,
—-“রীতি,চলো খেতে যাবে।”

রীতি বাইরে থেকে হাত ভেতরে এনে বললো,
—-“হুম আসছি,তুমি যাও।”
রীতি, ওর মামীর পেছনে পেছনে খেতে চলে গেলো।
রাতের খাবার খেয়ে রীতি আবারো বারান্দায় এসে দাড়ালো।আর নিজ মনে বলছে,
“আপনার কি আমার কথা মনে পড়ে না?আমার তো আপনার কথা খুব মনে পড়ে।”
রীতি ফোন বের করে সার্চ লিষ্ট থেকে সাদিবের ফেসবুক আইডিতে যায়।
সাদিব কয়েকঘন্টা আগে একটা হাসোজ্জল পিকচার আপলোড করেছে।রীতি সাদিবের হাসোজ্জল পিকচারের দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে রইলো তারপর মুচকি হাসি দিলো।

তারপর বলতে শুরু করলো,
“জানেন তো,আপনার জন্য আমার মন খারাপ হয়,ভিষণ মন খারাপ হয়।আপনাকে আমি খুব মিস করছি।আপনার হাসি,কথা,গান সব মিস করছি।কত সুন্দর ছিলো সেই দিনগুলো।সেই দিনগুলো আমি খুব মিস করছি।আপনি কি বুঝতে পারছেন কেউ একজন তার মামাবাড়িতে বসে আপনাকে মিস করছে?আমার মন খারাপ,আমি আপনাকে মিস করছি সেটা বুঝতে পারছেন?পারবেন কি করে?আপনার মনে তো অন্যকারো বসবাস।
আমি পুরো শহরের আনাচে কানাচে সব বিলবোর্ডে লিখে দেবো আপনাকে আমি মিস করছি।তবেই যদি আপনার চোখে পড়ে।”
রীতি অভিমানে গাল ফুলিয়ে রাখলো।কিন্তু ওর অভিমান ভাঙানোর সেই মানুষটি নেই।

রীতি সকাল সকাল ব্যাগ গুছিয়ে নিলো।থাকবে না আর এখানে বাড়িতে চলে যাবে।ভালো লাগছেনা।কিসের জন্য এসেছে এখানে?সাদিবের থেকে দূরে থাকতে।কিন্তু ফিলিংস থেকে দূরে থাকতে পারছে?পারছেনা।তাই বাড়িতে থাকাই ভালো।

.

রীতি রিকশা থেকে গেটের সামনে নামলো।রিকশা থেকে নেমে কাপড়ের ব্যাগ দুটো নিচে নামিয়ে কাধের লেডিস্ ব্যাগ থেকে টাকা বের করে ভাড়া মিটিয়ে দিলো।তারপর ব্যাগ দুটো দুই হাতে নিয়ে গেটের ভেতরে ঢুকলো।ব্যাগগুলো টেনে বাগান পাড় করে বিল্ডিংয়ের সামনে গিয়ে দাড়িয়ে গেলো।এটুকুতেই হাপিয়ে গেছে।রীতি বুঝতে পারছে ওর মতো নাজুক মেয়ের পক্ষে তিনতলা অব্ধি ব্যাগ টেনে নেওয়া পসিবল না।রীতি ব্যাগ থেকে ফোন বের করে মাকে ফোন করলো।কিন্তু ফোন ধরছেনা।রীতির কপালে বিরক্তির রেখা ফুটে উঠেছে।কপাল কুচকে বিরক্তি প্রকাশ করে ফোন কেটে রীতি আবারো মায়ের নাম্বারে ডায়েল করলো।
রীতি হটাৎ বাইকের শব্দ পেয়ে কানে ফোন নিয়ে বিরক্তি ভাব নিয়ে একপাশ করে পেছনে তাকালো।সাদিব বাইকে বসে হেলমেট খোলে বাইকের উপরে রেখে চুলগুলো হাত দিয়ে ব্রাশ করছে।রীতি সাদিবকে দেখে মুখ ঘুরিয়ে নিলো।
সাদিব সামনে তাকাতেই রীতিকে দেখতে পেলো।রীতি এক হাত কোমড়ে দিয়ে আরেক হাতে ফোন কানে নিয়ে দাড়িয়ে আছে।মেঝেতে দুটো ব্যাগ।
সাদিব বাইকের চাবি নিয়ে আঙুল দিয়ে ঘুরাতে ঘুরাতে রীতিকে দেখেও না দেখার ভান করে রীতির পাশ কাটিয়ে সিড়িতে উঠে বাকা একটা হাসি দিলো।
রীতির বিষয়টি বেশ অদ্ভুৎ লাগলো।সাদিবের উচিত ছিলো রীতিকে হেল্প করার কথা বলা।রীতি ভেবেছিলো অন্তত সাদিব হেল্প করতে চাইবে।কিন্তু না সাদিব ওকে ভুল প্রমাণ করে উপরে উঠে গেলো।
অবশেষে রীতি মাকে ফোনে পেলো।রীতি মাকে বলেছে নিচে এসে রীতিকে হেল্প করতে।

রীতি দুদিন যাবত বের হয়না ঘর থেকে।ছাদে যায়না,বারান্দায়ও তেমন যায়না।বাবা বই এনে দিয়েছে।শুয়ে শুয়ে সেগুলো শেষ করছে।কিচেনে গিয়ে চা-কফি বানাচ্ছে,টিভি দেখছে,ফেসবুকে সময় কাটাচ্ছে আর বই পড়ছে।রাত গভীর হলে বারান্দায় গিয়ে রাত উপভোগ করে বেশ চলছে দিনকাল।
সাদিব ঘন্টার পর ঘন্টা বাগানে সময় কাটায়,ছাদে রোদের মধ্যে বসে থাকে কিন্তু রীতির খবর নেই দুদিন।
সাদিবের প্রচুর রাগ হচ্ছে।হালকা অভিমান জমে জমে গাঢ়তর হচ্ছে।সাদিবের অভিমানেরা এখন রাগে পরিণত হচ্ছে।

.

রীতি শুয়ে পা উচু করে পা ঝুলিয়ে ঝুলিয়ে বই পড়ছে।আর তখনই রীতির মা রীতিকে বললো ছাদ থেকে কাপড় নিয়ে আসতে।রীতি বিরক্তি নিয়ে বললো,
—-“সরি মা,আমি এখন যেতে পারবোনা।বই পড়ছি।আর এমন জায়গায় আছি ছেড়ে যেতেও পারবোনা।দেখা গেলো সিড়িতে গিয়েই ফিট হয়ে গেলাম।তাই বলছি পড়তে দেও।তুমি গিয়ে নিয়ে এসো।”

রীতির মা চেচিয়ে বললো,
—-“পারবিনা মানে?সারাদিন খাটুনি খাটছি আর উনি নবাবজাদী ছাদে গিয়ে কাপড় আনতে পারবেনা।শুয়ে শুয়ে শুধু বই পড়বে।সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে।তাড়াতাড়ি যা নিয়ে আয়।”

রীতি মায়ের চিল্লানি খেয়ে বাধ্য হয়েই ছাদে গেলো।রীতি বিরবির করছে আর জামাকাপড় তুলছে।
তখনই রীতির কানে সাদিবসহ কিছু ছেলের কন্ঠস্বর ভেসে এলো।রীতি জামাকাপড় নিয়েই ছাদের অন্যপাশে গিয়ে উকি দিলো।
ওরা কিছু বলাবলি করছে।একজন সাদিবকে বললো,
—–“ভাই কি রীতির প্রেমে পড়েছো নাকি?”

এই লাইনটা শুনে রীতি চমকে গেলো সাথে সাদিবও।রীতি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে সাদিব কি জবাব দেয় জানার জন্য।রীতির বুক ঢিপঢিপ করছে।
সাদিব ওদের দিকে বিরক্তিকর দৃষ্টি দিয়ে বললো,
—-“পাগল নাকি?আমি প্রেমে পড়বো ওই চশমা পড়া মেয়ের?হোয়াট এ জোক!মেয়ের অভাব নাকি?”

সাদিবের উত্তর শুনে রীতি স্থির থাকতে পারছেনা।পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যাচ্ছে।শরীরে শক্তি পাচ্ছেনা।চোখ থেকে এক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো রীতির অজান্তেই।
রীতি সেখানে আর দাড়িয়ে থাকতে পারলোনা।দৌড়াচ্ছে তো দৌড়াচ্ছে।কোথায় যাচ্ছে বুঝতে পারছেনা।
সাদিবের করা অপমান সইতে পারছেনা।
রীতি নিজের রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে ডুকরে কেঁদে উঠলো।চিতকার করে কাদতে ইচ্ছে করছে।
রীতি কাদতে কাদতে বললো,
—-“আপনি আমাকে এভাবে অপমান করতে পারলেন?ভালোবাসেন না ঠিক আছে তাই বলে এতটা তুচ্ছ ভাবে উপস্থাপন করলেন?আমি এতটা তুচ্ছ? আমি এতটা অযোগ্য? আমার অযোগ্যতা এভাবে সবার সামনে আঙুল তুলে দেখিয়ে দিলেন?”
রীতি রাগে,ক্ষোভে,অপমানে চোখ থেকে চশমা খোলে সেটা দেয়ালে ছুড়ে মারলো।
“চশমা!! একটা চশমার জন্য এভাবে সবার সামনে অপমানিত,অবহেলিত হতে হচ্ছে?এই চশমার জন্য? পড়বোনা আমি আর এই চশমা।কখনো পড়বোনা।”
রীতি চশমা তুলে হাতে নিয়ে ভেঙে কয়েক টুকরো করে ফেললো।
রীতি রাগে গজগজ করছে।আর বলছে,
“এতদিন আপনি আমার প্রতিবেশী ছিলেন আজ থেকে সেটাও নন।আপনি আজ থেকে আমার কেউ না।”

এরপর থেকে রীতি আর চশমা পড়েনি।বাড়ি থেকে বের হয়নি।প্রয়োজনে বের হলেও সাদিবের সাথে দেখা হয়ে গেলেও এড়িয়ে যেতো,দেখেও না দেখার,চেনার ভান করতো।এই বিষয়গুলো সাদিবকে আহত করছে খুব।

.

রীতির মা বাড়িতে নেই।রীতি চা বানিয়ে আপন মনে চুমুক দিচ্ছে।রিমন এসে হাপাতে হাপাতে বললো,
—-“আপু তাড়াতাড়ি ছাদে যাও।দিয়া আপু পড়ে গেছে ছাদে।পায়ে খুব ব্যথা পেয়েছে।”
তারপর রিমন জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে।
রীতি রিমনের কথা শুনে এক মুহুর্ত দেরী করলোনা,চায়ের কাপ রেখেই দৌড়ে ছাদে যাচ্ছে।মাগরিবের আজান কানে ভেসে আসছে।রীতি ছাদে উঠে হাপাতে লাগলো কিন্তু কাউকে পেলোনা।পুরো ছাদ ফাকা।রীতি দিয়ার নাম ধরেও ডাকলো কয়েকবার।কিন্তু দিয়ার পাত্তা নেই।রীতি চিলেকোঠার ঘর থেকে কেমন মৃদু শব্দ পাচ্ছে।
রীতি চিলেকোঠার ঘরের দরজা হালকা ফাক কর‍তেই হেচকা টান অনুভব করলো।পুরো ঘর ঘুটঘুটে আঁধারে ঢেকে রয়েছে।জানালাগুলো বন্ধ,লাইট অফ।দরজাটাও বন্ধ করে দিয়েছে।একটা শক্ত হাত রীতির দুহাত চেপে ধরে রেখেছে।ভয়ের চুটে রীতি রিয়েকশন করতে ভুলে গেছে।রীতি শুধু ঢোক গিলছে।রীতি চিতকার করার জন্য ঠোঁট ফাক করতেই অপর একটা হাত ওর মুখ চেপে ধরলো।
রীতি রীতিমতো ঘামছে ভয়ে।নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে,মুখ দিয়ে গোঙ্গানি দিচ্ছে ছাড়া পাওয়ার জন্য।ততই হাতগুলো আরো শক্ত করে চেপে ধরছে।এটা কোনো মেয়ের হাত নয়,একটা ছেলের হাত।
রীতি মুখের উপর গরম নিশ্বাস অনুভব করতে পারছে।
রীতি অন্ধকারে আবছা একটা অববয় দেখতে পাচ্ছে।অববয়টা আরো কাছে আসছে।রীতির কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,
—–“হিসসস!”

এই হিসসস শব্দ রীতির গায়ে কাটা দিয়ে উঠলো।কেমন ভৌতিক লাগছে ব্যাপারটা।রীতির শরীর অসার হয়ে আসছে।কে হতে পারে,কি হতে পারে এসব ভেবেই রীতির হাত-পা জমে যাচ্ছে।সন্ধ্যা বেলায় ছাদের মধ্যে ভূতপ্রেত আসা যাওয়া করে গল্পের বইয়ে পড়েছে।তাহলে আজ কি ওর সাথে সেটাই হতে যাচ্ছে।এটা কি ভূত?এই ভূত কি ওর ঘাড় মটকে দেবে?
রীতির মনে হচ্ছে জ্ঞান হারাচ্ছে।নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টাও করছে না।কেমন ঢুলে পড়ে যাচ্ছে।

ভারী একটা পুরুষালী কন্ঠস্বর বললো,
—-“আমি সাদিব।চিতকার করোনা প্লিজ।”

চলবে…..!