গোধূলি বেলায় প্রেম পর্ব-৩২

0
3434

#গোধূলি_বেলায়_প্রেম
#ফাবিহা_নওশীন

|পর্ব-৩২|

রীতি নীল ড্রেস পড়ে নীল পরী সেজে কাধে লেডিস্ ব্যাগ নিয়ে গেইট দিয়ে বের হচ্ছে।গেইট দিয়ে নীল পরীকে বের হতে দেখে সাদিবের চোখ আটকে যাচ্ছে।হৃদয় স্পন্দন থেমে যাচ্ছে।রীতি মিষ্টি হেসে সাদিবের বাইকের পেছনে উঠে বসে।সাদিব তখনও থমকে আছে।ওর ঘোর যেনো কাটেনি।
রীতি সাদিবের কাধে হাত রাখতেই সাদিবের হুশ হয়।সাদিব মুচকি হেসে বাইক চালাতে শুরু করে।লুকিং গ্লাসে রীতিকে দেখছে বারবার।রীতির চুল হাওয়ায় এলোমেলো হয়ে উড়ছে।রীতি চুল সামলাতে ব্যস্ত।আজ হেলমেট পড়েনি তাই ভালো লাগছে খোলা হাওয়া।

অপরপ্রান্তে দিয়া ও আদনানের প্রেম জমে গেছে।দিয়া আদনানের প্রপোজ একসেপ্ট করে নিয়েছে প্রপোজের ১৫দিনের মাথায়।ওরা খুব ভালো আছে একে অপরের সাথে।দিয়ার এখন আর রীতির ভাগ্য দেখে হিংসে হয়না।মাঝেমধ্যে নিজের ভাগ্য দেখে নিজেরি হিংসা হয়।

রীতি বাড়িতে ফেরার পথেও হেলমেট লাগায়নি।সাদিবের কাধে হাত রেখে খোলা চুলে চোখ বন্ধ করে স্নিগ্ধ হাওয়া অনুভব করছে।ওর হাওয়ায় সাথে উড়ে যেতে ইচ্ছে করছে।তাড়াতাড়ি ক্লাস শেষ হয়ে যাওয়ায় আজ ওরা ঘুরে বেড়াবে।রীতি দুহাত মেলে চোখ বন্ধ করে আছে।সাদিব রীতির পাগলামি দেখে মুচকি মুচকি হাসছে।

সাদিব একটা ব্রিজির উপর বাইক থামালো।ভর দুপুর।সূর্যের তীব্র তাপ যেনো সব জ্বালিয়ে দিচ্ছে।কিন্তু ব্রিজের উপর শীতল হাওয়া বয়ে যাচ্ছে।ব্রিজের এক পাশে কলা গাছে আর আরেক পাশে বড় কড়ই গাছে।তাতে ফুল ফুটে আছে।ব্রিজের নিচে ছোট খালের পানির উপর অসংখ্য ফুল ভেসে আছে।
রীতি সাদিবের বাইক থেকে নেমে ব্রিজের কিনারে এসে দাড়ায়।তারপর পানির দিকে চোখ রাখে।হাওয়া বাড়ার সাথে সাথে ফুলের মাতাল করা ঘ্রাণ নাকে ভেসে আসছে।
রীতির চুলগুলো আবারো এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।আজ রীতির এলোমেলোই ভালো লাগছে।

সাদিব রীতির চুলগুলো একপাশে এনে বললো,
—-“এখান থেকে অনেক সুন্দর গোধূলি দেখা যায়।ওই দূরে আকাশে লালিমা রেখা ফুটে উঠে।সন্ধ্যায় এখানে মনোমুগ্ধকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়।তুমি দেখলে না মুগ্ধ হয়ে পারবেনা।একদিন তোমাকে নিয়ে আসবো।এখানকার স্পেশাল গোধূলি দেখাবো গোধূলি কন্যাকে।”

রীতি সাদিবের দিকে তাকিয়ে বললো,
—-“গোধূলি কন্যা? গোধূলি আমি?”

সাদিব প্রতিউত্তরে মৃদু হাসলো।
সাদিব রীতিকে একটা টং দোকানে নিয়ে গেলো।সাদিব আর রীতি দোকানের বাইরে পাতা বেঞ্চিতে বসে পড়লো।সাদিব চায়ের অর্ডার দিয়েছে।সাদিব বন্ধুদের সাথে এই দোকানের চা প্রায়ই খায়।আজ রীতিকে স্পেশাল লেবু চা খাওয়াবে।
রীতি চায়ের জন্য অপেক্ষা করছে।ওদের কথোপকথনে মাঝেই চা চলে এলো।সাদিব রীতির হাতে চায়ের কাপ দেয়।চায়ের কাপে ধোয়া উড়ছে।চায়ের রঙ আর ঘ্রাণ দুটোই রীতির মন কাড়ছে।রীতি গরম চায়ের ঘ্রাণ নিচ্ছে জোরে নিশ্বাস টেনে।

সাদিব ধোয়া উড়া চায়ে চুমুক দিয়ে বললো,
—-“ট্রাই করে দেখো চা পাগলী ভালো লাগবে।”

রীতি চায়ে চুমুক না দিয়েই বললো,
—-“আপনি আমাকে আর কত নাম দিবেন?”

সাদিব বললো,
—-“ভুলে গেলে কি বলেছিলাম? তোমাকে ভালোবেসে এখনো হাজারো নাম দিতে বাকি।”

চায়ে চুমুকের সাথে সাথে ওদের আড্ডা বেড়েই চলেছে।

.

রীতি বাড়িতে এসে ফ্রেশ হয়ে বের হতেই কলিং বেল বেজে উঠলো।রীতি দরজা খোলে ওর বাবাকে দেখতে পায়।রীতির বাবার মুখ থমথমে।চোখ কেমন লাল হয়ে আছে।মুখটা শুকিয়ে আছে।রীতির মনে হচ্ছে ওর বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েছে আবারো।রীতি বাবাকে এভাবে দেখে ঘাবড়ে গিয়ে মাকে চিতকার করে ডাকলো।

তারপর রীতি বাবাকে ধরে বললো,
—-“বাবা কি হয়েছে? শরীর খারাপ লাগছে?”

রীতির বাবা রীতির দিকে চোখ তুলে তাকালো।রীতির বাবার দৃষ্টি দেখে কলিজা শুকিয়ে গেলো।বাবার শরীর থেকে নিজের অজান্তেই হাত সরিয়ে নিলো রীতি।
রীতি আমতা আমতা করে বললো,
—-“বাবা কি হয়েছে?”

রীতির বাবা কোনো কথা না বলে রীতির গালে একটা চড় বসিয়ে দিলো।রীতির বাবা রাগে রীতিমতো কাপছেন।রীতির মা ইতিমধ্যে ওদের সামনে এসে দাড়াতেই এহেন ঘটনা দেখে স্তম্ভিত।
রীতি গালে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে নির্বাক দাড়িয়ে আছে।চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে।
যে বাবা ওর গায়ে ফুলের টুকাও দেয়নি আজ সে বাবা ওর গায়ে হাত তুলেছে।রীতির কারণ বুঝতে একটুও সমস্যা হয়নি।
রীতির মা রীতির বাবাকে কখনো দেখেনি মেয়ের সাথে চোখ গরম করে কথা বলতে,আজ সে মেয়ের গায়ে হাত তুলেছে।ব্যাপারটা হালকা ভাবে তিনি নিতে পারছেনা।নিশ্চয়ই রীতি ভয়ানক কোনো ঘটনা ঘটিয়েছে।তিনি এখন কি করবেন,কাকে কি বলবেন সেই জ্ঞানটুকু হারিয়ে ফেলেছেন।

রীতি গালে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে নীরবে চোখের পানি ফেলছে।
রীতির মা রীতির বাবাকে জিজ্ঞেস করলো,
—-“কি হয়েছে তোমার? এতবড় মেয়ের গায়ে হাত দিলে?কি করেছে রীতি?”

রীতির বাবা তখনো রাগে থরথর করে কাপছে।চিতকার করে বললো,
—-“জিজ্ঞেস করো ওকে কি করেছে?আমার উচু মাথা নিচু করে দিয়েছে।ছিহ! এই মেয়ে আমার নয়।ও যেনো আমাকে বাবা বলে না ডাকে।”

রীতির বাবা নিজের ঘরে চলে গেলেন।
রীতি বাবার কথা শুনে কান্নার গতি আরো বাড়িয়ে দিলো।
রীতির মা রীতির বাবার যাওয়ার দিকে চেয়ে থেকে রীতির দিকে তাকালো।উনার কপালে চিন্তার রেখা ফুটে উঠেছে।

রীতির মা রীতির কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
—-“কি করেছিস রীতি? তোর বাবার কি হয়েছে?”

রীতি কাদতে কাদতে বললো,
—-“আমি অনেক বড় অন্যায় করে ফেলেছি মা।বাবাকে অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছি।অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছি।”
রীতি ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদতে কাদতে নিজের রুমে চলে গেলো।

রীতির মা বুঝতে পারছেনা আসলে হয়েছেটা কি।রীতিকে জিজ্ঞেস করবে না রীতির বাবাকে জিজ্ঞেস করবে বুঝতে পারছেনা তাই কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাড়িয়ে আছেন।
রীতির সামনে বোম ফাটালেও রীতি হা শব্দ করবেনা।কিছুই বলবেনা।রীতির বাবাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি চিতকার চেচামেচি শুরু করবেন।তবুও হয়তো রাগারাগি করতে করতে রাগের মাথায় বলে ফেলবেন।তাই তিনি স্বামীর কাছে গেলেন।

রিমন নিথর হয়ে দরজা ধরে দাড়িয়ে আছে।বাবা সব সময় ওকে বকতো,রীতিকে কখনো বকতোনা।রিমন খুব করে চাইতো ওর বাবা একদিন হলেও ওর রীতি আপুকে বকুক।এর জন্য অনেক চেষ্টাও করেছে কিন্তু সফল হয়নি।আজ বাবা রীতি আপুকে মেরেছে তাতে রিমনের বুকে গভীর ব্যথার সৃষ্টি করেছে।রিমনের খুব কষ্ট হচ্ছে।বাবা ওকে মারলেও এতো কষ্ট পেতোনা যতটা কষ্ট রীতিকে মারায় পেয়েছে।
রিমনের মনে কু ডাকছে।মনে হচ্ছে কোনো সম্পর্কের ভাঙ্গন ধরতে যাচ্ছে।
রিমন রীতির রুমের দরজার সামনে গিয়ে দাড়ালো।রীতি কেদেই চলেছে।রিমন রীতির পাশে গিয়ে দাড়ালো।

তারপর বললো,
—–“বাবা কি সাদিব ভাইয়ের কথা জেনে গেছে?”

রীতি কাদতে কাদতে বললো,
—-“হ্যা বাবা সাদিবের কথাই জেনেছে আমি ১০০%শিওর।নয়তো বাবা আমার গায়ে হাত তুলতো না।”

রিমন কিছুক্ষণ ভেবে বললো,
—-“আপু আগেই মুখ খুলিস না।আগে আমি জানার চেষ্টা করি ব্যাপারটা কি।তারপর যা হওয়ার হবে।কিন্তু জানলো কিভাবে? কে বললো?”

—-“আমি জানি না,আমি কিচ্ছু জানি না।”

রিমন বাবা-মায়ের রুমের দরজার সামনে গিয়ে আড়ি পেতে দাড়ালো।ওর বাবা চিতকার চেচামেচি করছে।
—-“তুমি কি করো সারাদিন? রান্না করা ছাড়া তোমার তো দেখছি আর কোনো দিকে খেয়াল নেই।ছেলে-মেয়েরা কি করছে সে খবর রাখো?”

রীতির মা কপাল কুচকে জিজ্ঞেস করলো,
—-“আরে বলবে তো কি করেছে রীতি?”

রীতির বাবা দাতে দাত চেপে বললো,
—-“কি করেছে?তোমার মেয়ে প্রেম করে বেড়াচ্ছে।কার সাথে জানো?বাড়িওয়ালার ছেলে সাদিবের সঙ্গে।তোমার মেয়ে সাদিবের বাইকে ঘুরে বেড়াচ্ছে।এক সাথে চা খাচ্ছে,গল্প করছে।ছিহ!ছিহ!”

রীতির মা রীতির বাবার কথা শুনে অবাক না হয়ে পারলোনা।
—-“সাদিবের সঙ্গে? তুমি ঠিক দেখেছো?বাইকে করে গিয়েছে মানেই যে প্রেম করছে তা তো নয় তাই না?”

—-“তুমি আমাকে ডাউট করছো?আমার চুল কি হাওয়ায় পেকেছে?আমি ঠিক দেখেছি।তোমার মেয়ে সাদিবের সাথে প্রেম করছে।”

রীতির রিয়েকশন দেখে রীতির মায়ের আর কোনো ডাউট রইলোনা।রীতির মা খুশি হবে না মেয়ের উপর রাগ করবে বুঝতে পারছেনা।
—-“বুঝলাম রীতি ভুল করেছে।ভালো করে বুঝালেই তো হতো।না হয় একটু বকে দিতে।তাই বলে মারবে?মেয়েটা কত কষ্ট পেয়েছে?”

রীতির বাবা রীতির মায়ের দিকে চেয়ে অবাক হয়ে বললো,
—-“তোমার তো দেখছি ব্যাপারটা সামান্য মনে হচ্ছে।তুমি মেয়ের কষ্ট দেখছো?আর আমার?আমাদের পরিবারের সম্মানের কথা ভাবছো না?”

রীতির মা তাচ্ছিল্য করে বললো,
—-“কি অপরাধ করেছে?প্রেম করে বেশ অন্যায় করে ফেলেছে?এমন নয় পড়াশোনা সব লাটে উঠিয়ে দিয়েছে।মদ-গাজা খোর,চোর-ঢাকাতের সাথে তো প্রেম করেনি।আর না কোনো বাজে ঘটনা ঘটিয়েছে।রীতি যথেষ্ট বুদ্ধিমতী মেয়ে।আর সাদিবও যথেষ্ট ভালো,ভদ্র একটা ছেলে।তোমার সমস্যাটা কোথায়?”

রীতির বাবা রাগান্বিত সুরে বললো,
—-“সাদিব ভালো ছেলে হলেও সাদিবের বাবা দাম্ভিক লোক।উনাকে চিনোনা তুমি? উনার টাকার কত গরম?উনি উনার ছেলের বিয়ে আমার মেয়ের সাথে দিবেন?তোমার তা মনে হয়?রীতির জীবন আমি কোনো অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দিতে পারিনা।”

রীতির মা চুপ করে গেলেন।কারণ রীতির বাবার কথা ফেলে দেওয়ার মতোনা।কেননা সাদিবের বাবা অহংকারী মানুষ।তিনি নিচতলার মানুষকে পাত্তা দেন না।রীতিকে কি তার ছেলের বউ করতে রাজী হবেন?
রীতির মা এসব ভাবতে ভাবতে বসে পড়লো।

রিমন এসব কথা শুনে নিশ্চিত হলো সাদিবের ব্যাপারেও জেনে গেছে।রিমন কি করে রীতিকে গিয়ে এসব বলবে ভাবতে পারছেনা।এসব ভেবেই একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।

.

রাত ১১টা।রীতির ফোন বেজেই চলেছে।সেদিকে রীতির হুশ নেই।রীতি পাথর হয়ে বসে আছে।ওর চোখের পানি শুকিয়ে গালে দাগ বসে গেছে।চোখের পাপড়িগুলো এখনো আংশিক ভেজা।রীতির মা অনেকবার খাওয়ার জন্য ডেকে গেছে কিন্তু রীতি এক ছিটেও নড়েনি।
সাদিব রীতিকে ফোন করতে করতে পাগল হয়ে যাচ্ছে।আজ বিকেলেও ছাদে আসেনি।সাদিব ভেবেছে হয়তো ব্যস্ত আছে।কিন্তু এখন ফোন রিসিভ করছে না তাই চিন্তা হচ্ছে।সাদিব বারান্দায় পাইচারি করছে আর রীতিকে ফোন করে যাচ্ছে।কিন্তু রীতি ফোন তুলছে না।সাদিবের এখন কিছুটা রাগও হচ্ছে।সাদিব নিজেদের ফ্ল্যাটের বাইরে এসে দাড়ালো।তারপর গুটিগুটি পায়ে তিনতলায় গেলো।রীতিদের দরজার সামনে গিয়ে কিছুক্ষণ দাড়িয়ে আবার চলে এলো।এতো রাতে নক করলে রীতির বাবা-মা কি ভাববেন?তাছাড়া সাদিব কি রিজন দেখাবে?
সাদিব আবারো ফিরে গেলো।
বাগানে গিয়ে একা একা হাটছে।আর বারবার রীতির বারান্দার দিকে তাকাচ্ছে।রীতির রুমের আলো জ্বলছে না।সাদিবের মনে হচ্ছে রীতি হয়তো ঘুমিয়ে পড়ছে।সাদিব আর কিছুক্ষণ বাগানে হেটে নিজের রুমে গিয়ে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে শুয়ে পড়লো।

.

~পরেরদিন~
আরো একটা দিন কেটে গেছে।রীতির দেখা নেই।সাদিব রীতিকে ফোন করে পাচ্ছেনা।না রীতি ভার্সিটির জন্য বেড়িয়েছে,না বারান্দায় এসেছে আর না ছাদে এসেছে।সাদিব গলা কাটা মুরগির মতো ছটফট করছে।রীতির কি হয়েছে সেটা ভেবেই সাদিবের চিন্তায় মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে।
সাবিহাকে পাঠিয়েছিলো।সাবিহার রীতির সাথে দেখা হয়নি।রীতির মা বলেছে রীতির শরীর একটু খারাপ লাগছে তাই ঘুমিয়ে আছে।সাবিহা নিরুপায় হয়ে ফিরে এসেছে।সাদিব এখন রিমনের জন্য অপেক্ষা করছে।রিমন স্কুল থেকে ফিরলেই যদি কিছু জানা যায়।

সাদিব নিচতলায় দাড়িয়ে আছে।রিমন স্কুল থেকে ফিরে সাদিবকে দাড়িয়ে থাকতে দেখেই বুঝতে পারছে সাদিব ওকে কি জিজ্ঞেস করবে।রিমন এক পা দু পা করে এগিয়ে যাচ্ছে।সাদিব রিমনকে দেখে কিছুটা শান্ত হলো।

রিমনের কাছে গিয়ে বললো,
—-“রীতির কি হয়েছে? ফোন তুলছেনা কেনো?শরীর খুব খারাপ নাকি?”

রিমন কিছু বলছেনা।চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে।রিমনকে চুপ দেখে সাদিবের ব্যাপারটা ঠিক লাগছেনা।
—-“রিমন!”

রিমন নড়েচড়ে শুকনো মুখে সাদিবের দিকে তাকালো।তারপর বললো,
—-“আপুকে বলবো আপনার ফোন রিসিভ করে নিতে।”

রিমন চলে যেতে নিলে সাদিব আটকে দিয়ে বললো,
—-“রিমন কি হয়েছে? সত্যি করে বল।”

রিমন আমতা আমতা করছে।সব বলবে কিনা,বলা উচিত হবে কিনা কিছুই বুঝতে পারছেনা।সাদিবের জোরাজুরিতে এক প্রকার বাধ্য হয়েই রিমন সাদিবকে সব খোলে বললো।সাদিব সবটা শুনে স্তব্ধ হয়ে গেলো।

.

রীতি নিজের ফোন চেক করে সাদিবের ১০০+ কল আর মেসেজ দেখতে পেলো।সাদিবকে কল করলো রিমনের কথা মতো।সাদিব অপর পাশ থেকে হাজারো কথা বললেও রীতির মুখ দিয়ে একটা কথাও বের হচ্ছেনা।গলায় আটকে আছে মনে হচ্ছে।
রীতি ফোন কেটে দিয়ে মেসেজ করে বললো,”আজ দেখা করবো ছাদে।দেখা করার আগে মেসেজ করে জানাবো।”

রীতির বাবা সন্ধ্যা ৭টায় টিউশনি পড়াতে যায়।রীতি সেই অপেক্ষায় আছে।রীতি বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে।রীতির বাবা বের হওয়ার পরেই রীতি বারান্দা থেকে দৌড়ে বের হয়ে যায়।সিড়ি বেয়ে ছাদে উঠে।তবে কেমন শরীরে শক্তি পাচ্ছেনা।
সাদিবের সময় যেনো কাটছেনা।পাইচারী করছে ছাদ জুড়ে আর বারবার কয়েক সিড়ি নিচে নামছে।মনে হচ্ছে আজ হাজার বছর পর রীতির সাথে দেখা হবে।
সাদিব বারবার ফোনের স্কিনে তাকাচ্ছে।দম বন্ধ হয়ে আসছে।
হটাৎ সিড়িঘরের দরজায় রীতিকে দাড়িয়ে থাকতে দেখলো।রীতি এক দিনেই শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে।ওর মুখের দিকে তাকালো যাচ্ছে না।চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে।চোখ-মুখ শুকনো।চুলগুলো উসকোখুসকো।কেমন দূর্বল লাগছে।মনে হচ্ছে নিজের পায়ে শরীরের ভার বহন করতে পারছেনা।নির্জীব হয়ে আছে।

সাদিব রীতির দিকে এগিয়ে গিয়ে রীতির দু-বাহুতে হাত রেখে বললো,
—-“রীতি আ’ম সরি।আমার নিজেকে অনেক অপরাধী লাগছে।আমি জানি তুমি কতটা কষ্ট পেয়েছো।আংকেল কখনো তোমার গায়ে হাত তুলেনি।কিন্তু…

রীতি শুকনো কন্ঠে বললো,
—-“হ্যা অপরাধী।আজ ভালোবেসে আমরা দুজনেই অপরাধীর খাতায় নাম লিখিয়েছি।সবাই আমাদের কাঠগড়ায় দাড় করিয়ে দিয়েছে ভালোবাসার অপরাধে।হয়তো ফাসিতেও ঝুলিয়ে দেবে।”
রীতি কাদতে কাদতে ছাদের মেঝেতে বসে পড়লো।

চলবে..