#গোধূলি_বেলায়_প্রেম
#ফাবিহা_নওশীন
|পর্ব-৩৬|
সময় চলে আপন গতিতে।ভালো সময় খারাপ সময় দুটোই প্রবহমান,কারো জন্য থেমে থাকেনা।আজ চারদিন ধরে রীতি ঘরবন্ধী।ঘরে শুয়ে বসে থাকতে থাকতে অসুস্থ হয়ে পড়ছে।ঘটনাগুলো ক্ষণে ক্ষণে মাথা চাড়া দিয়ে উঠে।মাথায় কেমন সব পোকার মতো কিলবিল করতে থাকে।নিজেকে পাগল মনে হয়।রীতি যেনো মানুষিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছে।
তাই রীতি আজ মাইন্ড ফ্রেশ করার জন্য বাইরে বেড়ুলো।ছাদে ওর যেতে একদম ইচ্ছে করে না।ছাদে গেলে মনে হয় অদৃশ্য কোনো শক্তি ওর গলা চেপে ধরছে।তাই রীতি ছাদে যাওয়ার অভ্যাস পরিত্যাগ করেছে।
রীতি গেটের বাইরে সরু রাস্তাটা দিয়ে একা একা হাটছে।আশেপাশের প্রতিবেশীদের সাথে দেখা হয়ে যাচ্ছে।রীতি মনের ব্যথা মনে চেপে রেখে জোরপূর্বক মুখে হাসি ফুটিয়ে সবার সাথে কুশল বিনিময় করছে।
তারপর আবার একা একা হাটছে।কতদিন গোধূলি দেখা হয়না।হটাৎ রীতির ফোন বেজে উঠলো।
রীতি ফোন রিসিভ করে কানে দিয়ে বললো,
—-“হ্যা বল।”
রাইসা ফোনের ওপাশ থেকে বললো,
—-“তোর ব্যাপার কি বলতো রীতি?ভার্সিটিতে আসছিস না কেন?”
—-“কারণ বলেছি।”
—-“হ্যা বলেছিস বাড়িতে শিফট করেছিস।কিন্তু হুট করে বাড়িতে কেনো শিফট করেছিস? কি হয়েছে? ”
—-“দেখা হলে বলবো।”
রাইসা বিরক্ত হয়ে বললো,
—-“দেখাটা হবে কবে?”
রীতি নির্লিপ্ত কণ্ঠে বললো,
—-“জানিনা।”
রাইসার বিরক্তির সাথে সাথে রাগ উঠে গেলো।
—-“জানিসটা কি হাহ?”
—-“ফোন রাখ।ভালো লাগছেনা।”
রীতি রাইসাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ফোন কেটে দিলো।
রাইসা ফোনের দিকে বড়বড় চোখ করে আছে।রীতি ওর সাথে এমন ব্যবহার করছে।রাইসাও অভিমান নিয়ে বসে রইলো।
.
রীতি ফোন কেটে আশেপাশে দেখলো।কথা বলতে বলতে অনেকটা রাস্তা এগিয়ে এসেছে।”আউট” চিতকার শুনে
রীতি মাঠের দিকে তাকালো।রীতি সারি সারি নারকেল গাছের সামনে দাড়িয়ে আছে।নারকেল গাছের পরে ছোট একটা পুকুর।আর পুকুরের ওই পাড়ে বড় একটা খেলার মাঠ।যেখানে ছোট বড় ছেলেরা ক্রিকেট খেলছে।রীতির আবারো পুরনো স্মৃতি চোখের সামনে ভেসে উঠছে।
ও বাড়িতেও বাগানে সাদিব ছোট বাচ্চাদের সাথে ক্রিকেট খেলতো।রীতি বারান্দা অথবা ছাদ থেকে দাড়িয়ে দেখতো আর হাসতো।
রীতির অস্থির লাগছে।যা ভুলে থাকার চেষ্টা করে তাই চোখের সামনে বারবার ভেসে উঠে।রীতির চোখ পানিতে ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে।রীতি ডান হাতে নারকেল গাছে ভর দিলো।ভালো লাগছেনা কিছু।
“শুদ্ধতম ভালোবাসায় শুদ্ধতম কষ্ট পেতে হয়।ভালোবাসা যতটা গাঢ় কষ্ট তার চেয়েও গাঢ়তর।”
রীতি এখানে আর এক মুহুর্ত দাড়াতে পারবেনা।
রীতি বাড়িতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো।বাড়ির পথে পা বাড়াতেই সামনে দাড়িয়ে থাকা মানুষটিকে দেখে রীতি চমকে গেলো।শুধু চমকেই যায়নি ভয় পাচ্ছে প্রচুর।রীতি ঢোক গিলে চোখ নামিয়ে নিলো।ডান হাতে ওড়না খামচে ধরে আছে।
রীতি আবারো চোখ তুলে তাকালো।সাদিব শান্ত দৃষ্টিতে রীতির দিকে চেয়ে আছে।যেনো চোখ জুড়িয়ে নিচ্ছে।রীতি আবারো চোখ নামিয়ে নিলো।ওই চোখের দিকে তাকিয়ে থাকার শক্তি রীতির নেই।
সাদিব নীরবতা ভেঙে বললো,
—-“কি করে পারলে,কি করে রীতি?”
রীতি ভয়ে ভয়ে আশেপাশে তাকালো।
তারপর বাড়িতে যাওয়ার জন্য সাদিবকে পাশ কাটিয়ে যেতে নিলে সাদিব রীতির হাত ধরে ফেললো।
রীতি ভয়ার্ত গলায় বললো,
—-“আমার হাত ছেড়ে দিন প্লিজ।কেউ দেখলে খারাপ হয়ে যাবে।ছোট থেকে এখানেই বড় হয়েছি।বুড়ো থেকে শুরু করে ছোট বাচ্চারা পর্যন্ত আমাকে চিনে।কেউ দেখলে বাবার কানে যেতে সময় লাগবেনা।এমনিতেই আমার জন্য বাবা অনেক অপমানিত হয়েছে।নতুন করে আর নয় প্লিজ।বাবা আর নিতে পারবেনা।”
সাদিব রীতির হাত ছেড়ে দিলো।মফস্বল এলাকা।আশেপাশে প্রচুর মানুষ।এছাড়া রীতির নিজের এলাকা।কেউ দেখলে ব্যাপারটা স্বাভাবিকভাবে নিবেনা।
হাত ছাড়া পেয়ে রীতি চলে যেতে নিলে সাদিব সামনে গিয়ে দাড়ালো।দুহাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে বললো,
—-“হাত ছেড়ে দিয়েছি বলে কি ছাড়া পেয়ে গেছো?হাত ছেড়েছি তোমাকে নয়।”
রীতি সাদিবের দিকে চেয়ে আছে।সাদিবের চোখে গোপন ব্যথারা রীতির চোখে ধরা দিচ্ছে।
রীতি আবারো চোখ নামিয়ে নিলো। সাদিবের বলার অপেক্ষায় আছে।
—-“আমি তোমার হাত ছেড়ে দিয়েছি।কোনো প্রকার সিনক্রিয়েট করবোনা বাট কিছু কথা বলতে চাই,শুনতে চাই।”
রীতি ফোনের স্কিন অন করে বললো,
—-“বাবা এক্ষুনি বাড়িতে আসবে।আমাকে যেতে হবে।আপনিও চলে যান।”
সাদিব অসহায় ভাবে বললো,
—-“রীতি আমার অপেক্ষা প্রহর কখন শেষ হবে?নাকি কখনো শেষ হবেনা?”
রীতি শক্ত গলায় বললো,
—-“মানে?”
সাদিব বললো,
—-“আমার অপরাধ আমি জানতে চাই।বলো আমার অপরাধ কি?”
রীতি নিজেও জানেনা সাদিবের অপরাধ কি।তাই চুপ করে আছে।
—-“আমার তোমার সাথে অনেক কিছু বলার আছে,জানার আছে।আমার সাথে একটু কথা বলো।আমি আজ চারদিন ধরে আমি তোমার এলাকায় ঘুরঘুর করছি।বুঝতে পারছো সাদিব ঘুরঘুর করছে।তোমার অপেক্ষায়,তোমাকে একটু দেখার আশায়,কথা বলার আশায়।তুমি তো আমার ফোন রিসিভ করোই না।আজ অবশেষে সেই সুযোগ পেয়েছি।”
—-“সাদিব আপনি চলে যান।এভাবে ঘুরঘুর করবেন না।আপনাকে মানায় না।আপনি যথেষ্ট ম্যাচুয়ুর একটা ছেলে।”
—-“রীতি!কিসের অভিমান এতো?কি করেছি আমি? আমাকে দেখতেই পারছোনা একদম।”
রীতি কিছুটা চিতকার করে বললো,
—-“কি করবো তাহলে? আপনার বাবা যা করেছে তার পরেও,,,”
রীতি থেমে গেলো।
সাদিব জিজ্ঞেস করলো,
—-“তার পরেও কি?”
—-“আমি এখন বলতে পারবোনা।আর আপনার জানার প্রয়োজনও নেই।”
সাদিব রীতির সামনে দাড়িয়ে জোরপূর্বক বললো,
—-“না জেনে যাবোও না।”
রীতি কাদো কাদো হয়ে আশেপাশে দেখছে।বুঝতে পারছে সাদিব নাছোড়বান্দা।
তারপর বললো,
—-“আমি এখানে আর এক মুহুর্ত দাড়াতে পারবোনা।আপনি আমার সাথে আগামীকাল দেখা করবেন।সময়,স্থান আমি মেসেজ করে জানিয়ে দেবো।এখন এখান থেকে যান।”
রীতি দ্রুত হাটা ধরলো।সাদিব ওভাবেই দাঁড়িয়ে আছে।রীতি অনেকটা দূরে গিয়ে পেছনে ঘুরে তাকালো।সাদিব যেনো এর অপেক্ষায়ই ছিলো।রীতি দাড়িয়ে গিয়ে আবারো ইশারা করলো চলে যেতে।
সাদিব মুচকি হেসে উলটো পথে হাটা ধরলো।
রীতিকে দেখেছে,রীতির সাথে কথা বলেছে এটুকুতেই সাদিবের শান্তি লাগছে।আগামীকাল আবারো দেখা হবে।এটা ভাবতেই সাদিবের মনে শিহরণ বয়ে গেলো।
.
রীতি আজ নীল শাড়ি,নীল চুড়ি,চোখে কাজল টেনে,ঠোঁটে হালকা লিপি পড়ে,খোলা চুলে আয়নার সামনে দাড়িয়ে আছে।নিজেকে খুটিয়ে খুটিয়ে নিজেকে ভালো করে দেখে নিচ্ছে।সব সময় শুনেছে মেয়েদের নীল শাড়িতে এমন লাগে,তেমন লাগে।ফেসবুকে কত মেয়ের পিক দেখেছে নীল শাড়ি পড়া।নীল শাড়ির প্রশংসায় পঞ্চমুখ কত ছেলেরা।রীতি নিজেও আজ ফাইনালি নীল শাড়ি পড়ে সেজেছে সাদিবের জন্য।
“আচ্ছা সাদিবও কি আমাকে দেখে মুগ্ধ হবে?প্রশংসায় পঞ্চমুখ হবে?অপলক আমার দিকে চেয়ে থাকবে? না নীরবতায় নিজের মুগ্ধতা প্রকাশ করবে?না মুচকি হাসবে?”
রীতি এসব ভাবতে ভাবতে আয়নার সামনে থেকে সরে দাড়ালো।
সাদিব সাদা টিশার্ট পড়ে হাত দিয়ে চুল ব্রাশ করতে করতে বাইকের চাবি নিয়ে বের হচ্ছে।রীতি গতকাল রাতে মেসেজ করে জানিয়ে দিয়েছে দেখার করার কথা।এড্রেস সেন্ড করে দিয়েছে।রীতিদের এলাকার স্থানীয় কলেজে সকাল ১০টায় দেখা করতে আসবে।সাদিব নয়টায় বের হচ্ছে।ওখানে পৌছাতে আধ ঘন্টা লাগবে বাইকে।আধ-ঘন্টা হাতে রেখে বের হবে।একটুও লেট করতে চায়না সাদিব।
সাদিব বের হতেই সাদিবের বাবা ভ্রু কুচকে সাদিবের দিকে চেয়ে বললো,
—-“কোথায় যাচ্ছো?”
—-“কাজ আছে।”(ব্যস্ততা দেখিয়ে)
সাদিবের বাবা অদ্ভুত ভাবে সাদিবকে দেখছে।তারপর বললো,
—-“তোমার কাজ পরে হবে।এখন আমার কথা শুনো।”
—-“সরি বাবা,আমার গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে।আমার যেতে হবে।তোমার কাজ পরে দেখা যাবে।”
সাদিব বাবাকে পাত্তা না দিয়ে চলে গেলো।সাদিবের বাবা চোখ বড়বড় করে সাদিবের যাওয়া দেখছে।
.
সাদিব রীতির কলেজে আধঘন্টা আগেই পৌছে গেছে।রীতির জন্য অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছে।এখানে রীতি উচ্চমাধ্যমিক পড়াশোনা করেছে।সাদিব আশেপাশে দেখছে।
সাদিব দূর থেকে দেখছে একটা মেয়ে নীল শাড়ি পড়ে আসছে।সাদিব চোখ সরিয়ে নিলো।অন্য মেয়েকে দেখতে চায়না সাদিব।
সাদিবের মনে হচ্ছে নীল শাড়ি পড়া মেয়েটা সাদিবের দিকে এগুচ্ছে।সাদিব মেয়েটার দিকে তাকালো।মেয়েটা আর কেউ নয় রীতি।সাদিব উঠে দাড়ালো রীতিকে দেখে।শাড়ি পড়ায় দূর থেকে চিনতে পারেনি।সাদিব হা করে রীতিকে দেখছে।রীতি তেমন সাজগোছ করেনি।তবুও রীতিকে গর্জিয়াছ লাগছে।মুগ্ধ করছে সাদিবকে।সাদিবের হার্টবিট বেড়ে গেলো।
রীতি সাদিবের দৃষ্টি দেখে নড়ে-চড়ে দাড়ালো।সাদিব নিজের কপালে দু আঙুল দিয়ে ঘষে মৃদু হেসে চোখ তুলে বললো,
—-“তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে।”
রীতি আলতো হেসে বললো,
—-“ব্রেকাপের দিন সবাইকেই সুন্দর লাগে।আর ব্রেকাপের পর তো আরো সুন্দর লাগবে।”
সাদিব রীতির কথা বুঝতে পারছেনা।সাদিব প্রশ্নবোধক চাহনি দিয়ে কাপা কাপা গলায় বললো,
—-“কি বললে তুমি? ব্রে,,কা,,পপপ!”
রীতি আবারো আলতো হাসলো।তারপর বললো,
—-“হ্যা,ব্রেকাপ।”
সাদিব দাতে দাত চেপে বললো,
—-“মাথা খারাপ হয়ে গেছে তোমার? কি বলছো তুমি? মজা করছো?”
রীতি সাদিবের থেকে রাগের পাওয়ার এক ধাপ বাড়িয়ে দিয়ে বললো,
—-“মজা করছি আমি? মজা করছি?আপনার মজা মনে হচ্ছে? এতোকিছুর পর ব্রেকাপ আপনার কাছে মজা মনে হচ্ছে?আপনার বাবা আমার বাবাকে যা বলেছে,যেভাবে সবার সামনে অপমান করেছে,গায়ে হাত তুলেছে তারপরেও মজা করবো? কোনো বাবার মেয়ে এমন হতে পারে?”
সাদিব রীতির কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে গেলো।ওর বাবা রীতির বাবার গায়ে হাত তুলেছে।
—-“কি বললে তুমি? বাবা আংকেলের গায়ে হাত,,,”
রীতি কাদতে কাদতে বললো,
—-“হ্যা,,আপনার বাবা ফ্ল্যাটের বাইরে দাড়িয়ে এত্তগুলো মানুষের সামনে আজেবাজে কথা বলেছে,কলার ধরে ধাক্কা মেরেছে।”
সাদিব রীতির কথা শুনে বসে পড়লো।ওর বাবা এরোগেন্ট জানতো কিন্তু এতটা নিচ কাজ করতে পারে ভাবতে পারেনি।
রীতি আবারো বললো,
—-“আমার বাবা আমাকে শিক্ষা দিয়েছে কিভাবে বড়লোক ছেলে পটাতে হয়।আমার বাবা লোভী।হিসেব-নিকেশ করেই আপনাদের বাড়িতে গিয়েছে।আপনাকে আমি বাবার কথায় ফাসিয়েছি।যাতে আমার বাবা আজীবন ফ্রিতে আপনাদের বাড়িতে থাকতে পারে।আমি থার্ডক্লাশ চিপ গার্ল।আমি নানাভাবে আপনাকে ইমপ্রেস করেছি।আমার বাবা লজ্জায় মাথা নিচু করে ওই বাড়ি থেকে বের হয়ে এসেছে।সেদিনের পর বাবা আজ পর্যন্ত আমার সাথে কথা তো দূরের কথা এক টেবিলে বসে খায়নি।”
রীতির কান্নার বেগ বেড়ে যাচ্ছে।
সাদিব কি করবে বুঝতে পারছেনা।কিভাবে রীতিকে শান্তনা দিবে।রীতিকে শান্তনা দেওয়ার মুখ ওর নেই।ওর বাবা রীতির বাবার সাথে এমন আচরণ করেছে।এর জন্য নিজেকে অনেক অপরাধী মনে হচ্ছে।
রীতি কান্না থামিয়ে বললো,
—-“সাদিব আমি জানি আপনার কোনো দোষ নেই কিন্তু আমার কিছু করার নেই।জানেন তো এক জনের দোষে ১০জন ভোগে।তেমনই একজনের জন্য আপনিও শাস্তি পাচ্ছেন।আপনি যদি বলেন আমি আপনার সাথে অন্যায় করছি,তো করছি।আমি সব মেনে নিচ্ছি।কিন্তু আপনার সাথে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব না।এতকিছুর পরেও আমি নিজের কথা ভাবতে পারবোনা।”
সাদিব রীতির কথা শুনে বললো,
—-“আর আমার কথা? আমার জন্য তোমার একটুও মায়া হচ্ছে না?মায়া না হোক আমাকে দেখে তোমার করুনা হচ্ছেনা?”(আকুতিভরা কন্ঠে বললো)
রীতি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
—–“আমার যা বলার বলে দিয়েছি।আপনি যেতে পারেন।”
সাদিব রীতিকে বললো,
—-“আমার দিকে তাকাও।তুমি পারবে তো আমাকে ভুলে যেতে।ভালো থাকতে।”
রীতি দৃষ্টি লুকিয়ে বললো,
—-“চেষ্টা তো করতে পারি।চেষ্টা করলে সব সম্ভব।”
(মুখ ভার করে আকাশের দিকে তাকিয়ে)
সাদিব রীতির গালে হাত দিতেই রীতি ছিটকে সরে গেলো।সাদিব হাত সরিয়ে হাত মুঠো করে নিলো।
—–“আমার প্রতিনিয়ত আপনার বাবার করা ব্যবহারগুলো চোখের সামনে ভেসে উঠে।এমনকি ঘুমের মাঝেও স্বপ্ন দেখি।জানেন তো আমি ঘুমাতে পারিনা।নিজেকে প্রচন্ড অপরাধী মনে হয়।আমি আর পারবোনা অপরাধী হতে।নিজের বিবেকের কাছে নিচু হয়ে যাচ্ছি।আমি নিচু মানুষ হতে পারবোনা।”
সাদিব আকুতি নিয়ে বললো,
—-“তাই আমাকে ছেড়ে দিচ্ছো?তুমি পারলেও আমি পারবোনা।আমি রীতি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবোনা।এই দেখো আমাকে দেখো আমার চেহেরার কি হাল হয়েছে।আমি চারদিন ধরে তোমার বাড়ির আশেপাশে পাগলা কুকুরের মতো ঘুরে বেড়িয়েছি শুধু তোমাকে একবার দেখার জন্য।তুমি আমাকে যা বলবে আমি তাই করতে রাজি আছি।তবুও প্লিজ।”
রীতি সাদিবের কথায় আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ছে।আবেগপ্রবণ হলে হবেনা।তাই চোখের কোন থেকে পানি মুছে সাদিবকে রেখেই চলে যাচ্ছে।সাদিবের হৃদপিণ্ড ছিড়ে যাচ্ছে।
সাদিব রীতিকে ডাকছে কিন্তু রীতি সাদিবের কোনো কথাই পাত্তা দিচ্ছে না।
“মনের ঘরে খিল দিয়েছি শক্ত করে।সেখানে আপনার আকুতি গিয়ে পৌছাবে না।আমাকে ক্ষমা করুন।”
রীতির গাল বেয়ে পানি পড়ছে।রীতি মুছার প্রয়োজন মনে করছেনা।
সাদিব উঠে দাড়ালো। ওর মাথায় আগুন জ্বলছে।ওর বাবার এতো অহংকার,এতো দাম্ভিকতা,এতো বর্বর মানুষ,এতো জঘন্য মানুষ জানা ছিলোনা।
আজ বাবার মুখোমুখি হবে সাদিব।সব প্রশ্নের জবাব চাই ওর।
চলবে…..!