গোধূলি বেলায় প্রেম পর্ব-৪২

0
4011

#গোধূলি_বেলায়_প্রেম
#ফাবিহা_নওশীন

|পর্ব-৪২|

রীতি উদভ্রান্তের মতো দৌড়াচ্ছে।কোনো দিকে ওর হুশ নেই।চোখের কোন চিকচিক করছে পানিতে।খুশির জোয়ারে ভেসে যাচ্ছে।
রীতির মা রীতিকে পার্স আর মোবাইল হাতে ঝড়ের গতীতে বেড়িয়ে আসতে দেখে পেছনে পেছনে দ্রুত পা ফেলে রীতিকে ডাকছে।
রীতির মায়ের কথা গেটের সামনে গিয়ে কানে এলো।
রীতি পেছনে ঘুরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বললো,
“মা,সাদিবকে পাওয়া গেছে।আমি ওনাদের বাড়িতে যাচ্ছি।তুমি চিন্তা করোনা।চলে আসবো।”

রীতি ওর মাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে দ্রুত বেড়িয়ে গেলো।রীতির মা সাদিবের সন্ধান পাওয়ায় খুশি হলেও রীতির ও বাড়িতে যাওয়ার পর সবাই কি রিয়েকশন দিবে সেটা ভেবেই তার পিলে চমকে যাচ্ছে।সাদিবের বাবা যদি খারাপ আচরণ করে তবে?রীতিকে যদি আজেবাজে কথা বলে?

রীতির যেনো রাস্তা শেষ হচ্ছে।এক সমুদ্র পিপাসা নিয়ে সাদিবকে দেখতে যাচ্ছে।রীতির আবার অভিমানও হচ্ছে।সাদিব এতোদিন কোথায় ছিলো?কেনো যোগাযোগ করে নি?বাড়িতে ফিরে এসেছে তাহলে ওকে কেনো জানায়নি?
রীতির এতো কিছুর মাঝে এটা ভেবে ভালো লাগছে যে সাদিব বাবার সঙ্গে সব মিটিয়ে নিয়েছে।

রীতি সাদিবদের বাড়ির গেটের সামনে দাড়িয়ে আছে।প্রায় ৬মাস হবে এ বাড়ি ছেড়েছে।রীতি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে গেটের ভেতরে প্রবেশ করলো।সাদিবের নাম্বারে ফোন করেছে গাড়িতে বসে কিন্তু অফ এসেছে।তারপর সাবিহার নাম্বারে ফোন করেছে সাবিহা কেমন ভাবে যেনো কথা বলছিলো।মনে হচ্ছে কিছু লুকাচ্ছে।
বারবার বললো তুমি এসে দেখে যাও।

রীতি কাপা কাপা হাতে কলিং বেল বাজালো।কলিং বেল বাজাতেই দরজা খোলে গেলো।সাবিহা দরজা খোলেছে।সাবিহাকে দেখে মনে হচ্ছে ও যেনো দরজার সামনে দাড়িয়ে কলিং বাজার অপেক্ষায় ছিলো।বেল বাজার সাথে সাথে দরজা খোলে দিলো।

সাবিহা শুকনো হেসে রীতিকে ভেতরে আসতে বললো।সাদিবের বাবা-মা ড্রয়িংরুমে বসে ছিলেন।রীতিকে দেখে দাড়িয়ে গেলেন।
সাদিবের বাবা রক্তচক্ষু নিয়ে বললো,
—-“ও এখানে কি করছে?আমার ছেলের জীবনটা নষ্ট করে শান্তি হয়নি?আজ আবার কেনো এসেছে?নতুন করে আবার কি চায়?”

রীতি মাথা নিচু করে নিলো।রীতি সাদিবের বাবার সাথে মোটেও তর্ক করতে চায়না।ওর এখন সাদিবকে দেখা চাই,সাদিবের সাথে কথা বলা চাই।

সাবিহা বললো,
—-“বাবা প্লিজ।ভাইয়ার এই মুহুর্তে রীতি আপুকে প্রয়োজন।আমি আপুকে নিয়ে যাচ্ছি।”

সাদিবের বাবা বললো,
—-“ও এখন ঘুমিয়েছে,রীতিকে দেখলে আবার পাগলামি শুরু করে দিতে পারে।আমি আর সাদিবকে কষ্টে দেখতে পারবোনা।অনেক কষ্টে ওকে খোজে বের করেছি,ওকে বাড়িতে এনেছি।”

সাবিহা আকুতি নিয়ে বললো,
—-“ভাইয়ার সুস্থতার জন্যই রীতি আপুকে প্রয়োজন।”

—-“ওর জন্যই এই অবস্থা।ওকে দেখলে সুস্থ হবে?”

সাবিহা এতোক্ষণ বাবাকে বুঝানোর চেষ্টা করলেও এখন কিছুটা রাগ নিয়ে বললো,
—-“বাবা সত্যিই কি তাই?তোমার এখনো মনে হচ্ছে ভাইয়ার এই অবস্থার জন্য রীতি আপু দায়ী? তুমি এখনো নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে চাইছো?তুমি,আমি সবাই জানি আমাদের পরিবার আজ এই অবস্থায় কেন।নিজের দোষ অন্যের ঘাড়ের ওপর চাপিয়ে দিওনা।”

সাদিবের মা নীরবে চোখের পানি মুছছে।সাদিবের বাবা মেয়ের কথা শুনে তাজ্জব হয়ে যাচ্ছেন।
সাবিহা কাদতে কাদতে বললো,
—-“যে মেয়েকে এতো দোষারোপ করছো সে মেয়ের জন্য আজো সম্মানের সহিত
সমাজে মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে আছো।নয়তো আজ সবাই ছিহ ছিহ করতো একজন ধর্ষিতার বাবা বলে।”

সাবিহার বাবা আর মা দুজনেই সাবিহার দিকে চমকে তাকালো।সাবিহার বাবা সাবিহার মায়ের দিকে তাকালো।সাবিহার মায়ের চোখেও বিস্ময় দেখতে পাচ্ছে।
সাবিহার মা কাপা কাপা গলায় বললো,
—-“কি…হ.. কিহ বলছিস?ধর্ষিতা মানে?”

রীতি সাবিহার হাত ধরে বললো,
—-“বাদ দেও পুরনো কথা তুলে কি লাভ?”

সাবিহা বললো,
—-“না আপু বলতে দেও।ভাইয়ার জন্য এতোদিন বলতে পারিনি।ভাইয়া বারবার আটকে দিয়েছে।এই আমি আজ এতো সুন্দর লাইফ লিড করছি কার জন্য? সেদিন তোমরা না গেলে,ভাইয়াকে তুমি না জানালে কি হতো আমার?হয়তো আত্নহত্যা করতাম।আজ বাবা-মা এক সন্তান হারা হতেন।”

সাবিহার মা এসে সাবিহাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বললো,
—-“কি হয়েছে খোলে বল।”

সাবিহা কিছুটা ভয় পেলেও মাথা নিচু করে বললো,
—-“একটা ছেলে আমার সাথে ভালোবাসার নাটক করে আমাকে ফাসিয়ে ওর ফ্ল্যাটে নিয়ে গিয়েছিলো মিথ্যা বলে,,”

সাবিহার মা ভয় পেয়ে সাবিহাকে ছেড়ে দিলো।রীতি বললো,
—-“আন্টি আমি বলছি,ওকে আর ফোর্স করবেন না।সেদিন ওর কোনো ক্ষতি হয়নি।আমরা তার আগেই চলে গিয়ে ওকে রিস্কিউ করেছি।”

—–“এসব কবেকার কথা?”

—-“তখন আমরা এ বাড়িতে নতুন এসেছি।কাউকে চিনতাম না তখন।সাবিহা আর দিয়ার সাথে আমার প্রথম পরিচয় হয়েছিলো,বন্ধুত্ব হয়েছিলো।তখন আমি সাবিহার কাছ থেকে ওই ছেলের ব্যাপারে শুনেছি।ওই ছেলেকে অন্য মেয়ের সঙ্গে দেখেছিলাম।বুঝতে পেরেছিলাম ছেলেটা ভালো না।সাবিহাকেও বলেছিলাম ও বিশ্বাস করে নি।তাই সাদিবকে বলেছিলাম যার ফলশ্রুতিতে ওর জন্য বডিগার্ড রাখা হয় যে দূর থেকে ওকে সেফটি দিবে।তারপরেই ওই ঘটনা ঘটে।আমি আর সাদিব সময় মতো চলে যাই তারপর সাবিহাকে নিয়ে আসি।”

সাবিহার মা-বাবা দুজনেই হতবাক।এতোবড় ঘটনা ঘটে গেছে কেউই জানেনা।
সাদিবের বাবা ভাবছেন সেদিন কিছু হলে তার মেয়ের কি হতো?তার মেয়ে লজ্জায় আত্নহত্যা করতো।
তিনি চুপ করে সোফায় বসে পড়লো।
সাবিহা চোখের পানি মুছে রীতিকে ইশারা করলো।

রীতি মুচকি হেসে সাদিবের রুমের দিকে গেলো।দরজা খোলতেই বুক ঢিপঢিপ করছে।কতদিন পর দেখবে,কিভাবে দেখবে,কোন অবস্থায় পাবে।
রীতি দরজা খোলে কিছুদিন দাঁড়িয়ে থেকে জোরে নিশ্বাস নিয়ে ভেতরের দিকে তাকালো।
সাদিব ঘুমিয়ে আছে।রীতি পা টিপে টিপে বিছানার কাছে।বিছানার কাছে যেতেই রীতির বুক ছ্যাৎ করে উঠলো।মুখের হাসি মিলিয়ে গেলো।সাদিবের চোখগুলো গর্তে ঢুকে গেছে।দু-গাল যেনো ভেতরে ঢুকে গেছে।শরীর শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে।হার গুলো স্পষ্ট হয়ে গেছে।তারচেয়ে বড় কথা হাতে ব্যান্ডেজ করা।

রীতি যেনো সাদিবকে চিনতেই পারছেনা।রীতি সাদিবের অবস্থা দেখে কেদে দিলো।
তারপর বাইরে গিয়ে সাদিবের বাবার সামনে গিয়ে দাড়ালো।
—–“কি দোষ ছিলো সাদিবের?কোন অপরাধের শাস্তি পেলো?ভালোবাসার?নাকি শুধুমাত্র আমাকে ভালোবাসার?আমার প্রতি এতো রাগ আপনার? এতো ঘৃণা করেন আমাকে?কেমন বাবা আপনি? নিজের ইচ্ছার জন্য ছেলেকে ধ্বংসের মুখে ফেলে দিলেন।বাবা তো সেই হয় যে কিনা সকল বিপদ-আপদে মাথার উপর ছায়া হতে পারে।আমার বাবার আপনার মতো টাকা নেই কিন্তু আমরা তার কাছ থেকে সব পেয়েছি।তিনি সব সময় আমার মাথার উপর ছায়া হয়ে ছিলেন।সকল বিপদ আপদ থেকে আগলে রাখে।ঢাল হয়ে দাঁড়ায়।আমার জন্য আপনার করা সব অপমান মেনে নিয়েছে।কারণ তিনি একজন আদর্শ বাবা।আপনি কি করেছেন আপনার ছেলের জন্য? সাদিব আপনাকে কতটা ভালোবাসে,কতটা মিস করেছে সেটা আমি জানি।”
রীতি কাদতে কাদতে বসে পড়লো।ওর শরীর যেনো চলছেনা।
—-“শুধু টাকাকে বড় করে দেখেছেন।টাকার চেয়ে সম্পর্ককে বড় করে দেখেছেন।সেই টাকার জন্য সম্পর্কগুলোর আজ কি অবস্থা দেখুন।”

সাবিহা রীতিকে উঠিয়ে দাড় করালো।
তারপর সাবিহার কাছে সব জানতে পারলো।
“সাদিব ড্রাগ এডিক্টেড,নেশার ঘোরে কারো সাথে মারামারি করছিলো আর তাতেই হাত কেটে গেছে।সেখানে থেকে ওকে বাড়িতে আনা হয়েছে।ডাক্তার এসে ব্যান্ডেজ করে দিয়েছে।ঘুমের ইঞ্জেকশন দিয়েছে।তাতেই ঘুমিয়ে পড়েছে।না জানি ঘুম থেকে উঠে কি পাগলামি করে।”

রীতি সাদিবের ড্রাগ নেওয়ার কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে গেলো।
—-“এসব কিভাবে হলো?”

—-“রাসেল নামক ব্যক্তি ভাইয়াকে ড্রাগ দিয়েছে।কিন্তু এটাই বুঝতে পারছিনা ভাইয়া কেনো ড্রাগ নিলো?সে তো এমন নয়।আমার মনে হচ্ছে কোনো রহস্য আছে।”

রীতি চোখের পানি মুছে সাদিবের পাশে বসে সাদিবের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।ঘন্টাখানেক পরে সাদিব অনুভব করে কেউ ওর খুব কাছে।মাথায় হাত দিয়েছে।মনে হচ্ছে এখুনি গলা চেপে ধরবে।সাদিব চোখ বন্ধ অবস্থায় মাথার হাতটা ধরে মোচড় দিয়েই রীতি আহ করে চিতকার করে উঠে।সাদিব মেয়েলী কন্ঠ শুনে চোখ খোলে উঠে বসে রীতিকে দেখে।রীতি হাত ডলছে।হাতে ব্যথা পেয়েছে খুব।

সাদিব রীতিকে দেখে বললো,
—-“তুমি! সরি আমি বুঝতে পারিনি।তোমার খুব লেগেছে?কোথায় লেগেছে?”(রীতির হাত ধরে পাগলের মতো করছে)

রীতি সাদিবের এমন অদ্ভুত ব্যবহার দেখে আবারো কেদে দিলো।সাদিব রীতির কান্না দেখে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।
—-“তোমার খুব লেগেছে তাই না?আমি সত্যিই বুঝতে পারিনি?আমি ভেবেছিলাম অন্য কেউ আমার গলা চেপে ধরবে?”

রীতি বললো,
—-“না আমার লাগেনি।”

—-“তবে কাদছো কেনো?”

রীতি ঠোঁট ফুলিয়ে বললো,
—-“আপনি এতোদিন কোথায় ছিলেন? আমাকে কি ভুলে গেছেন?”

সাদিব মাথা নিচু করে নিলো।
রীতি আবারো বললো,
—-“ভুলে গেছেন?”

সাদিব মাথা ডানে-বামে বাড়িয়ে ইশারায় না করলো।
—-“ভুলিনি,তবে মনে রাখার মতো কাজ করিনি।তাই দূরে সরিয়ে রেখেছি।এই দেখো আমি আর সেই সাদিব নেই যাকে তুমি ভালোবাসতে?”

—-“ভালোবাসতাম না ভালোবাসি।আমি এখনো বাসি।সব সময় বাসবো।”

সাদিব রীতির কথা শুনে চোখ লাল করে বললো,
—-“চলে যাও।এখানে কেনো এসেছো?তোমাকে কে আসতে বলেছে?চলে যাও।তোমাকে যেনো এখানে না দেখি।”

রীতি সাদিবকে বললো,
—-“এমন করছেন কেনো?কি করেছি আমি?”

—-“তোমাকে এখন আমি আর ভালোবাসি না।এখন আমি ড্রাগ,সিগারেট আর মদকে ভালোবাসি।”

রীতি সাদিবের কথা পাত্তা না দিয়ে সাদিবকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
—-“আপনি না বাসলেও আমি বাসি।এটাই যথেষ্ট আমার জন্য।”

সাদিব রীতিকে অগ্রাহ্য করতে চাইলেও পারছেনা।রীতি কখনো সাদিবের এতো কাছে আসেনি আর না সাদিব কখনো রীতিকে এতো কাছে চেয়েছে।সাদিব নিজেও চোখের পানি ছেড়ে দিলো।ওর জীবনটা এমন না হলেও পারতো।
সাদিবও রীতিকে জড়িয়ে ধরলো।নিজের সাথে মিশিয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে।রীতিকে নিজের কাছে এমন ভাবে রাখতে ইচ্ছে করছে যাতে কেউ কেড়ে নিতে না পারে।

—-“রীতি আমি নষ্ট হয়ে গেছি।আমি আর তোমার যোগ্য নেই।আমি কেনো এমন হয়ে গেলাম রীতি?আমার জীবনটা ধ্বংস হয়ে গেছে।তোমার জীবনটা ধ্বংস করোনা।আমাকে ভুলে যাও।আমার সাথে নিজেকে জড়িও না।”

রীতি সাদিবকে ছেড়ে বললো,
—-“নিজেকে ভুলে যেতে পারি কিন্তু আপনাকে নয়।আপনি কালও আমার ছিলেন আজো আমার আছেন।”

রীতি সাদিবের চোখের পানি মুছে সাদিবের গালে হাত দিয়ে বললো,
—-“আপনার চোখে পানি মানায় না।আপনার ঠোঁটের কোনে সেই হাসি চাই। সব সময় আপনার ঠোঁটে যে মিষ্টি হাসি লেগে থাকতো সেই হাসি।”

সাদিব বললো,
—-“তা আর সম্ভব না।আমি নেশার জগতে তলিয়ে গেছি।”

—-“সব সম্ভব।চাইলেই সব সম্ভব।আপনি চেষ্টা করুন।পারবেন।আমার জন্য চেষ্টা করুন।”
রীতি আকুতি নিয়ে সাদিবের দিকে তাকিয়ে আছে।সাদিব রীতির গালে আচমকা ঠোঁট ছুইয়ে দিলো।রীতি সাদিবের কাজে বিষম খেলো।এর আগে সাদিব কখনো চুমু খায়নি হাতের পাতা ছাড়া।
—-“তোমার কি মনে হয় আমি পারবো?আর কিছুক্ষণ গেলেই আমার শরীর থরথর করে কাপবে ড্রাগের জন্য।নিজেকে পাগল মনে হবে।খুব ভয়ানক হয়ে উঠবো।সামনের মানুষকে আঘাত করতে পিছপা হবোনা।হিতাহিত বোধ হারিয়ে ফেলবো।”

—-“পারতে হবে আপনাকে।আপনি পারবেন।আমার বিশ্বাস আছে আপনার উপর।”

সাদিব রীতিকে আবারো জড়িয়ে ধরে বললো,
—-“আমি বাচতে চাই রীতি।আমি তোমার সাথে বাচতে চাই।আমাকে ছেড়ে যেওনা রীতি।”

—–“যাবোনা।কখনো যাবোনা।আমি এই কয়েকমাস আপনাকে পাগলের মতো খুজেছি।এখন পেয়েছি যখন আর হারাতে দেবোনা।”

.

রীতি সাদিবের জন্য খাবার এনে সাদিবকে খাইয়ে দিলো।সাদিবের অস্থির অস্থির লাগছে।রীতি ব্যাপারটা বুঝতে পেরে বললো,
—-“সিগারেটে চলবে?”
সাদিব কোনো উত্তর দিলো না।

রীতি আর সাদিব ছাদে দাঁড়িয়ে আছে।সাদিব সিগারেটের ধোয়া উড়াচ্ছে।রীতি ওর সাথে দাড়িয়ে আছে।রীতি কিছু একটা ভাবছে।সাদিবকে কিভাবে সুস্থ করা যায়।কি করবে এসব।বুঝতে পারছেনা কি করবে।
রীতি ভাবনা বাদ দিয়ে বললো,
“বিশ্বাস রাখুন আমার উপর।একদিন আমি আর আপনি সুস্থ গোধূলি দেখবো।”

সন্ধ্যা নেমে এসেছে।সাদিব রীতিকে কিছুতেই যেতে দিবেনা।পাগলামি শুরু করে দিয়েছে।রীতি সাদিবকে বুঝাতে পারছেনা।ওর বাবা বাইরে দাড়িয়ে আছে।ফোন করে যাচ্ছে।
সাদিব আমি আবার আসবো সত্যি বলছি।রীতি সাদিবকে বুঝিয়ে শুনিয়ে কপালে ঠোঁট ছুইয়ে দিয়েই বের হয়ে গেলো।সাদিব চুপচাপ বসে আছে রীতির ঠোঁট ছুয়ানো জায়গায় হাত দিয়ে।

রীতি বের হতেই সাদিবের বাবা বললো,
—-“রাত হয়ে যাচ্ছে।তুমি একা এতটা পথ যাবে কি করে?”

রীতি বললো,
—–“বাবা এসেছেন আমাকে নিতে।বাইরে দাড়িয়ে আছেন।”

সাদিবের বাবার মনে পড়ছে রীতির বাবাকে কি না বলেছিলো।

হতাশ এমন একটা শব্দ যা কাটিয়ে উঠতে না পারলে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যায়।শক্ত মানুষগুলোও অনেক সময় ভেঙে পড়ে।পরিবারের চাপে,তাদের অবহেলা,জোর করে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া তাদের সন্তানদেরকে বিপথে চালিত করে।কিছু মানুষ সব সময় ওত পেতে থাকে।সুযোগ খোজে।সুযোগ বুঝে তাদেরকে বিপথে নিয়ে আসে।আর সেই মানুষটি যদি মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে,দূর্বল হয়ে পড়ে তবে তো কথাই নেই।নিয়ে আসে মাদকের জগতে।মাদকাসক্ত হওয়ার অন্যতম কারণ কৌতুহল,হতাশা,বেপরোয়া জীবনযাপন।তবে হতাশা অন্যতম কারণ।
আজকাল মেয়েরা ভুল করলে ঘরবন্দী করে দেয় আর ছেলেরা কোনো ভুল করলে বাবা-মা বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে বলে।যারা রাগের বশে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায় তারা সেম ক্যারেক্টার নিয়ে বাড়িতে ফিরে আসেনা।অনেক চেঞ্জ চলে আসে তাদের মধ্যে।বাড়ি থেকে বের হয়ে তারা নিজেকে স্বাধীন ভাবে।যা খুশি তা করার ক্ষমতা,অদম্য ইচ্ছে তাদের মধ্যে চলে আসে।বাবা-মা ভাবে যখন পেটে টান পড়বে চলে আসবে।এই জেদ বজায় রেখে বসে থাকে কিন্তু পেটে টান পড়ে চলে আসার আগে তাদের সন্তান সর্বদিক দিয়ে নষ্ট হয়ে যায়,বিগড়ে যায়।বিভিন্ন বদ-অভ্যাস আর বদ-চরিত্রের অধিকারী হয়ে যায়।

চলবে….