Divorce Part-40+41 (Last Part)

0
3083

💔#Divorce💔
Writer: Tahmina Toma
Part: 40

জ্যোতিঃ (মেয়ের খাবার রেডি করছিলাম পেছন থেকে কেউ জড়িয়ে ধরলো,,,, খালি পেটে হাত রেখে চুলে মুখ গুঁজে দিয়েছে,,,,) একদম বিরক্ত করবেন না,,, মেজাজ খারাপ আছে এমনই,,,

তনয়ঃ কী হয়েছে আমার লক্ষী বউটার,,,,,??

জ্যোতিঃ আপনার মেয়ে আমার মাথা খারাপ করে দিয়েছে,,,, খাবার খাবে না আর শুধু ভ্যা ভ্যা করবে,,।

তনয়ঃ মায়ের মতো হয়েছে,,, (বিরবির করে)

জ্যোতিঃ কী বললেন,,,,?? (রেগে)

তনয়ঃ কই,,,, কিছু না তো,,,, আমার প্রিন্সেস কোথায়,,,,,?

জ্যোতিঃ রুমে বসে খেলছে,,,,

তনয়ঃ তুমি ওর খাবার নিয়ে আসো আমি দেখছি খায় কিনা,,,,,

(তনয় মেয়ের কাছে চলে গেলো,,,,)

তনয়ঃ আমার মা টা কী করে,,,??(তনয়া বেডের মাঝে বসে খেলনা দিয়ে খেলছে,,,, কেবল হামাগুড়ি দিতে শিখেছে একটু একটু,,,,, আর মা আর বাবাটা একটু বলতে পারে,,,,)

তনয়াঃ বা,,,বা,,,বা,,,,,,

তনয়ঃ(মেয়েকে কোলে তোলে নিলাম,,,,,) ওরে আমার মা কেমন করে ডাকছে,,,,,, মায়ের কথা শুনো না কেন মা,,,,,?? না খেলে তুমি আমার সাথে খেলবে কীভাবে শুনি,,,,,,

তনয়াঃ বা,,,বা,,,,বা,,,,,,

জ্যোতিঃ শুধু বাবা আর বাবা,,,, কেন রে মা কী নদীর জলে ভেসে এসেছে শুনি,,,,,???

তনয়াঃ বা,,,,,বা,,,,,বা

তনয়ঃ হাহাহাহা,,,,,,

জ্যোতিঃ হাসবেন না একদম,,,,, সারাদিন বাবা বাবা করে আর মন চাইলে দিনে একবার মা বলে,,, কষ্ট করে জন্ম দিলাম আমি,,,, সারাদিন খাওয়াই দাওয়াই আমি আর বলে শুধু বাবা ,,,(মুখ কালো করে,,,)

তনয়ঃ ( তনয়াকে জ্যোতির কোলে দিয়ে,,,, জ্যোতিকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলাম,,,,) তুমি কী একা জন্ম দিয়েছো,,,??(দুষ্টমি করে,,,)

জ্যোতিঃ সব সময় ফাজলামি করেন,,,?? (হালকা রাগ দেখিয়ে,,)

তনয়ঃ ওকে ওকে,,,, আমার কাছে একটা ভালো বুদ্ধি আছে,,,,

জ্যোতিঃ কী বুদ্ধি,,,,??? (আগ্রহ নিয়ে,,,)

তনয়ঃ তনয়া তো শুধু বাবা বাবা করে,,,,?? তনয়ার একটা ভাই আনার ব্যবস্থা করি যে শুধু মা মা করবে,,,

জ্যোতিঃ লাগবে না আমার মা মা করা,,,,

তনয়ঃ কেন কেন,,,,(না বোঝার ভান করে,,,)

জ্যোতিঃ আপনার মেয়েই আমার জীবন বাঁশপাতা করে দিয়েছে,,,, আর লাগবে না আমার,,,,

তনয়ঃ লাগবে না কেন শুনি,,,,,?? অবশ্যই লাগবে,,,, আমার তো আরো এক ডজন খানিক লাগবে,,,,, যাতে সারা বাড়ি ভরে থাকে,,,, এতবড় বাড়ি মাত্র তিনজন মানুষ ভালো লাগে বলো,,,,

জ্যোতিঃ তাহলে বরং এক কাজ করুন,,,,, আরো কয়েকটা বিয়ে করে নিন,,,, এমনই বাড়ি ভরে যাবে,,,,

তনয়ঃ না বাবা,,, এক বিয়েতে আমার জীবন ধনেপাতা কুচি হয়ে গেছে,,,, (বিরবির করে,,)

জ্যোতিঃ কী বললেন আপনি,,,?? আমি আপনার জীবন ধনেপাতা কুচি করে দিয়েছি,,,,?? তাহলে বিয়ে কেন করেছেন আমাকে,,,??

তনয়ঃ (কিছু না বলে তনয়ার চোখ হাত দিয়ে ঢেকে জ্যোতির ঠোঁটে টুপ করে একটা কিস করলাম,,, তারপর কোমর জড়িয়ে কাছে আনলাম,,, তনয়া জ্যোতির একপাশে কোলে,,,) এই বুকে অন্যকেউ ঘুমালে সয্য করতে পারবে তো,,,,??

জ্যোতিঃ তার আগেই দম বন্ধ হয়ে মরে যাবো,,,,

তনয়ঃ (জ্যোতির মুখ চেপে ধরলাম,,,) তোর কিছু হলে আমার কী হবে,,,,?? আমি বুঝি বেঁচে থাকবো,,,??

জ্যোতিঃ (দুজনে কপালে কপাল ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম কিছুক্ষণ,,,,)

তনয়াঃ ভ্যা,,,,,,,,,,

জ্যোতিঃ (তনয়ার কান্না দেখে দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে হেঁসে উঠলাম,,,, তনয়াকে বেডে শুইয়ে খাবার খাওয়াতে লাগলাম,,,,)

তনয়ঃ(বেডের সামনে সোফায় বসে জ্যোতির দিকে তাকিয়ে আছি,,,, কতটা কষ্ট করতে হয়েছে আমাকে,,, এই জ্যোতিকে আবিষ্কার করতে,,,, সেটা শুধু আমি জানি,,,। একবছর,,, পুরো একবছর জ্যোতি প্রয়োজন ছাড়া আমার সাথে কথা বলেনি,,,,, প্রথম বিবাহবার্ষিকীতে ওর বন্ধু হওয়ার দাবি করেছিলাম,,,, সেদিন ও আমাকে ফেরাতে পারেনি,,,,, ধীরে ধীরে বন্ধুত্বকে ভালেবাসায় রুপ দিয়েছি,,, জ্যোতিও হয়তো চেষ্টা করেছিলো নতুন করে শুরু করতে তাই আজকের দিন দেখতে পাচ্ছি,,,,, প্রথম ভালোবাসার রাতের চিহ্ন আমাদের তনয়া,,,,, আজ আমি সম্পূর্ণ একজন মানুষ,,,, যার একটা ভালোবাসায় ভরা পরিবার আছে,,,,,)

জ্যোতিঃ (তনয়ের দিকে চোখ যেতেই দেখি এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে,,,, চোখের ইশারায় জিজ্ঞেস করলাম কী হয়েছে,,,,?? বিনিময়ে উনি মাথা নেড়ে বুঝালেন কিছু না,,,, সাথে উনার সেই মুচকি হাসি,,,,। যে হাসি আমার মন ভালো করার জন্য যথেষ্ট,,,,

“বেশিরভাগ মানুষের জীবনেই দ্বিতীয় ভালোবাসা আসে,, কিন্তু তা কখনোই প্রথম ভালোবাসার মত পুরোটা ছুয়ে যেতে পারেনা,,,*হুমায়ুন আহমেদ*

কথাটা হয়তো সত্যি,,,। তনয়কে আমি ভালোবাসি তবু কখনো কখনো কেন যেন বুকের বা পাশে চিনচিনে ব্যথা করে,,, তবু বলবো তনয় আমাকে যতটা ভালোবাসে ততটা হয়তো কেউ বাসতে পারতো না,,,,। তনয়ের ভালোবাসার কাছে হেরে গেছি আমি,,,,,। এতটা নিঃস্বার্থ ভালোবাসা কীভাবে ফিরিয়ে দিতাম,,,?? তবে তনয়ের জায়গা আমি কাউকে দিতে পারবো না,,,, হয়তো রিয়াদ কেও না,,,। আমার জীবনে রিয়াদ আর তনয় দুজনের জায়গায় আলাদা,,,, কারো জায়গা কাউকে দেওয়া সম্ভব নয়,,,,। আর চাইলেও রিয়াদকে পুরোপুরি মুছে ফেলতে পারবো না আমি,,,,, তবে চাওয়ার চাইতেও অনেক ভালো আছি আমি,,,, এদের ঘিরেই আমার জীবন,,, তনয় আর আমাদের মেয়ে,,,,।)

তনয়ঃ কী ভাবছো,,,,,??(জ্যোতির পাশে শুয়ে পেট জড়িয়ে গলায় মুখ গুঁজে দিয়ে,,,)

জ্যোতিঃ মেয়েটা আছে তো,,,, মেয়ে বড় হচ্ছে একটু লজ্জা শরম করুন,,,,।

তনয়ঃ মেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে,,,, তাকিয়ে দেখো,,,,

জ্যোতিঃ (তাকিয়ে দেখি তনয়া খাওয়া শেষে ঘুমিয়ে পড়েছে,,,,) তো,,,, ঘুমিয়েছে তো কী হয়েছে,,,?? আপনার জন্য ঘুম ভেঙে যাবে,,,,

তনয়ঃ ভাঙবে না,,,

জ্যোতিঃ খাবার রেডি করতে হবে,,,, রাত হলো তো,,, খাবেন না,,,??

তনয়ঃ খাবো তো,,,, অনেক ক্ষিদে পেয়েছে,,,,

জ্যোতিঃ তাহলে এখন আমাকে ছাড়ুন,,, খাবার গরম করে দিচ্ছি,,,,,

তনয়ঃ উহুম,,,, এই ক্ষিদে পায়নি,,,,

জ্যোতিঃ তাহলে,,??(ভ্রু কুঁচকে,,)

তনয়ঃ(ওকে টান দিয়ে নিজের দিকে ঘুরালাম,,, ঠোঁটের দিকে ইশারা করে) মিষ্টির ক্ষিদে পেয়েছে,,, সেই সকালে খেয়েছি,,,, (মন খারাপের ভান করে,,)

জ্যোতিঃ ছাড়ুন তো,,, যত্তসব ঢং,,,,

তনয়ঃ সবসময় শুধু পালাই পালাই কেন করো,,,?? কখনো নিজের ইচ্ছে আমার কাছে আসো না,,,,। যাও কাজ করো গিয়ে,,,, (জ্যোতিকে ছেড়ে মুখ ঘুরিয়ে শুয়ে)

জ্যোতিঃ কথায় কথায় এতো রাগ ভালো লাগে কারো,,,??

তনয়ঃ,,,,,,,,,,,

জ্যোতিঃ (উনার গালে হাত রাখতেই হাত সরিয়ে দিলো,,,, আবার হাত রাখলে সরিয়ে দিতে চাইলে শক্ত করে ধরে নিজের দিকে করলাম,,,,৷ অন্যদিকে তাকিয়ে আছে,,, আস্তে করে ঠোঁটে একটা কিস করে দিলাম,,,,,)

তনয়ঃ(এবার ওর দিকে তাকালাম,,,,,। দুষ্টু হেসে দুগালে হাত রেখে ঠোঁটজোড়া দখল করে নিলাম,,,)
,,,,

অন্তরাঃ(ঘুমের মধ্যে দম বন্ধ হয়ে আসছে,,,,,এবার আর না পেরে চোখ খুললাম,,,,। কেউ খুব নিবিড়ভাবে আমার ঠোঁটের স্বাদ নিয়ে যাচ্ছে,,,, ধাক্কা দিয়েও লাভ হলো না,,,, অনেকসময় ছাড়ানোর চেষ্টা করে ক্লান্ত হয়ে শুধু মোচড়ামুচড়ি করতে লাগলাম,,,,)

হৃদয়ঃ (ঠোঁট ছেড়ে দিলাম,,,) কী হয়েছে সাপের মতো মুড়াচ্ছ কেন,,,,?? বিরক্ত করছো আমাকে,,,,

অন্তরাঃ আমি বিরক্ত করছি,,,?? নাকি আপনি,,,?? আপনার এই বদঅভ্যেস যাবে না,,,, ঘুমের মধ্যে কেউ এমন করে,,,??

হৃদয়ঃ ঘুমিয়ে থাকলে তোমার ঠোঁট দেখলে খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করে,,, আমার কী দোষ,,??

অন্তরাঃ আমি ডাইনিং টেবিলে ছিলাম,,, এখানে কীভাবে এলাম,,,,??

হৃদয়ঃ ঘুমিয়ে পড়েছিলে তাই নিয়ে এলাম,,,,।

অন্তরাঃ চলুন খাবার দিচ্ছি আপনার,,,,

হৃদয়ঃ খেয়ে এসেছি আমি খাবো না,,,,

অন্তরাঃ ওহ্ ( মন খারাপ করে,,,)

হৃদয়ঃ আচ্ছা ঘুমিয়ে পড়ো,,,,, আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি,,,,

অন্তরাঃ হুম,,,(উনি জানেন উনাকে ছাড়া আমি খাইনা,,,, একবার জিজ্ঞেসও করলো না,,,, আমি খেয়েছি কিনা,,,, আবার ভালোবাসা দেখাতে এসেছে,,, রাগ করে শুয়ে পড়লাম,,,,, সিয়াম ঠিকমতো ঘুমিয়েছে কিনা দেখা হলো না,,,, আবার ওঠে সিয়ামের রুমে গেলাম,,,, সিয়াম এখন অন্যরুমে ঘুমায়,,,, মাঝে মাঝে আবার আমার কাছে ঘুমায়,,,, সিয়ামের রুমের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লাম,,,, ভাইয়া সিয়ামের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে,,,,, হ্যাঁ রিয়াদ ভাইয়া,,,,৷ উনার কোনো চেঞ্জ হয়নি,,, আগের থেকেও গম্ভীর হয়ে গেছে,,,,, তবে রাতের আঁধারে নিজের ছেলেকে ভালোবাসতে ভুলেন না,,,,। বড়আব্বু ডাকে সিয়াম রিয়াদ ভাইয়াকে,,,,,,। মাঝে মাঝে শুধু সারার সাথে ভাইয়াকে একটু হাসতে দেখেছি,,,,। সারাকে অনেক ভালোবাসে ভাইয়া,,, এখন অফিসে কম থাকে,,, হৃদয়ই বেশি সামলায় অফিস,,,। ভাইয়া দিনদিন উপন্যাসের দিকে ঝুঁকে পড়ছে,,,,। দুটো বইও বের হয়েছে উনার,,,, ভালো সাফল্য পেয়েছেন,,, তবে উনার লেখাগুলো কেবল বিষাদে ঘেরা,,,,। আবার বিয়ে করানোর চেষ্টা সবাই ত্যাগ করেছে,,,,। উনাকে উনার মতো ছেড়ে দিয়েছে,,,, বাড়িতেও কম থাকে,,,,, মাঝে মাঝেই উধাও হয়ে যায় কয়েকদিনের জন্য,,,,। কাঁধে কেউ হাত রাখতেই চমকে উঠলাম,,,)

চলবে,,,,,,

💓#Divorce💓
Writer: Tahmina Toma
Part: 41_Last part

অন্তরাঃ (কাঁধে কেউ হাত রাখতেই চমকে উঠলাম,,,)

মাঃ এখানে কী করছো বৌমা,,,,??

অন্তরাঃ সিয়াম ঘুমিয়েছে কিনা দেখতে এসেছিলাম,,,।

মাঃ রিয়াদকে দেখে দাঁড়িয়ে গেছো,,,??

অন্তরাঃ হুম,,,,, ভাইয়া ভালো নেই মা,,,,

মাঃ এর থেকে ভালো রাখার উপায় আমার জানা নেই,,,, ওর সাথে জোর করে কোনো মেয়ের জীবন জড়ালে মেয়েটার জীবন নষ্ট হয়ে যাবে,,,,, এভাবেই থাকতে দাও ওকে,,,,,। যাও ঘুমিয়ে পড়ো গিয়ে,,, অনেক রাত হয়েছে,,,

অন্তরাঃ(মা চোখ মুছতে মুছতে চলে গেলেন,,, আমি আবার ভাইয়ার দিকে তাকালাম,,,, একটা মানুষ কীভাবে পারে কাউকে এতটা ভালোবাসতে,,,, একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নিজের রুমের দিকে যেতে লাগলাম,,,,)

হৃদয়ঃ কোথায় গিয়েছিলে,,,,??

অন্তরাঃ সিয়ামের রুমে,,,, ভাইয়া আছে তাই চলে এলাম,,,, (রুমের দরজা অফ করে ঘুরে তাকাতেই দেখি হৃদয় খাবার নিয়ে বসে আছে) আপনি না বললেন ক্ষিদে নেই,,,, আমাকে বলতেন আমি খাবার এনে দিতাম,,,,

হৃদয়ঃ (অন্তরার হাত ধরে টান দিয়ে কোলে বসিয়ে দিলাম,,,,) পাঁচটা বছর চলে গেলো এখনো তোমার বিশ্বাস অর্জন করতে পারলাম না,,,,,।।।

অন্তরাঃ কী বলছেন এসব,,,,?? আমি এমন কিছু কখন বললাম,,,??

হৃদয়ঃ আমি বললাম বাইরে থেকে খেয়ে এসেছি আর তুমি বিশ্বাস করে নিলে,,,?? আমি কখনো বাইরে থেকে খেয়ে এসেছি,,,??

অন্তরাঃ(উনার কথা শুনে মাথা নিচু করে ফেললাম,,, সত্যি তো আজ পর্যন্ত কোনোদিন বাইরে থেকে খেয়ে বাসায় ফিরেনি,,,)

হৃদয়ঃ আমি জানি আমার লক্ষী বউটা আমার জন্য না খেয়ে বসে আছে,,,,, তাকে ছেড়ে আমি কীভাবে বাইরে থেকে খেয়ে আসতে পারি,,,,(এক লোকমা খাবার অন্তরার মুখের সামনে ধরলাম) নাও হা করো এখন,,,,

অন্তরাঃ,,,,,,,,,,, (চোখ টলমল করছে পানিতে,,, না না কষ্টের পানি নয় এটা,,,, অতি সুখের,,,, এই পাঁচ বছরে সুখের পানি অনেকবার গড়িয়েছে চোখ থেকে,,,,কষ্টের নয়,,,)

হৃদয়ঃ ক,,,কী হয়েছে তোমার,,,?? কাদছো কেন,,? কেউ কিছু বলেছে,,,?? আমার কোনো কথায় কষ্ট পেয়েছো,,,?? (ব্যস্ত হয়ে)

অন্তরাঃ সরি,,, আমি আপনাকে কষ্ট দিলাম,,,

হৃদয়ঃ( বামহাত দিয়ে চোখের পানি মুছে দিলাম) ধূর পাগলি,,, আমিতো এমনই বলেছি,,,এখন চটপট খাবার মুখে নাও,,, আমারও ক্ষিদে পেয়েছে,,, (অসহায় মুখ করে,,)

অন্তরাঃ (উনার মুখ দেখে ফিক করে হেঁসে দিলাম,,, তারপর খাবারটা মুখে নিয়ে আমিও হাত ধুয়ে এসে উনাকে খাইয়ে দিতে লাগলাম,,,,,। উনিও তৃপ্তি নিয়ে খাচ্ছে,,,। উনার দিকে তাকিয়ে আছি,,,,। এই মানুষটা আমার দ্বিতীয় স্বামী ঠিকই,,, তবে প্রথম আর শেষ ভালোবাসা,,,, সারা যখন আমার পেটে ছিলো প্রতিটা মুহূর্তে উনি আমার খেয়াল রেখেছে,, উনার দিকে তাকিয়ে অতীতে হারিয়ে গেলাম,,,)
,,,,,

মাঃ কী হয়েছে অন্তরার,,,,??

অন্তরাঃ(বাড়ি ঢুকতেই মা ব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন,,,, উনি চুপচাপ হাতের রিপোর্ট মায়ের দিকে এগিয়ে দিলেন,, মা ভ্রু কুঁচকে রিপোর্ট হাতে নিয়ে দেখতে লাগলো,,, আমি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি,,,)

মাঃ এ,,,এটা সত্যি,,,??

হৃদয়ঃ হ্যাঁ মা,,, এটা একদম সত্যি,,, (চিৎকার করে,,, মাকে জড়িয়ে ধরে) আমিও বাবা হবো,,,,

অন্তরাঃ(উনার এই আনন্দ দেখে যেমন ভালো লাগছে তেমন অপরাধবোধ হচ্ছে,, আজ যদি সত্যি আমি মা হতে না পারতাম লাগলে উনি এই আনন্দ থেকে বঞ্চিত হতো শুধু আমার জন্য,,, চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়লো)

মাঃ এখন থেকে সবসময় সাবধানে থাকবে,,,(হৃদয়কে ছাড়িয়ে অন্তরার কাছে গিয়ে)

অন্তরাঃ হুম,,,,,,

মাঃ কিন্তু এটা কীভাবে সম্ভব,,,?? সেটা বুঝতে পারছি না,,,,

হৃদয়ঃ অন্তরার আগের রিপোর্ট ভুল ছিলো,,, হয়তো বানানো,,,, (চোখ মুখ শক্ত করে)

মাঃ একজন ডক্টর এমন একটা কাজ কী করে করতে পারে,,??

হৃদয়ঃ তার উত্তর উনি আগামীকাল নিজের মুখেই দিবে,,,

মাঃ ঠিক আছে,,, ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নে,,,, সিয়াম ঘুমিয়ে পড়েছে,,,

হৃদয়ঃ হুম,,,,, অন্তরা চলো,,,,,

অন্তরাঃ(সিঁড়ির কাছে যেতেই উনি আমাকে থামিয়ে দাড় করালেন,,,)

হৃদয়ঃ মা,,,,

মাঃ হ্যাঁ বল,,,,

হৃদয়ঃ আগামীকাল থেকে আমরা নিজের রুমে থাকবো,,, অন্তরার ডেলিভারির আগে পর্যন্ত,,,, আমার রুমের সব নিচের রুমে সিফট করার ব্যবস্থা করো,,,,

মাঃ ঠিক আছে,,, আমি সকালেই সব করার ব্যবস্থা করছি,,,,

অন্তরাঃ(অবাক হয়ে উনার দিকে তাকালাম,,,,,, এরপর উনি আমাকে কোলে নিয়ে উপরে উঠতে লাগলেন,,) কী করেছেন,,,,?? আমি পারবো,,,?? মা দেখছে তো,,,

হৃদয়ঃ আজ থেকে আগামী একবছর তুমি আমার কথা মতো চলবে,,,

অন্তরাঃ এক বছর কেন,,,?? আর ছয় মাস,,,,??

হৃদয়ঃ আমি যা বলছি তাই হবে,,,,

অন্তরাঃ(কিছু না বলে উনার দিকে তাকিয়ে থাকলাম,,,)

★পরেরদিন★

হৃদয়ঃ কী হলো এখন চুপ করে আছেন কেন,,?? উত্তর দিন আমার প্রশ্নের,,,??

অন্তরাঃ(সেই ডক্টরের কেবিনে দাড়িয়ে আছি,,,, প্রথমে সে আমাদের সাথে কথা বলতে না চাইলেও হৃদয়ের পরিচয় জানার পর চুপ করে আছে,,,,। আমাকে হৃদয় আনতে চাইছিলো না,,, আমি জোর করে এসেছি,,, কারণ আমিও জানতে চাই আমার সাথে এমন কেন করেছেন,,,,??)

হৃদয়ঃ কী হলো বলুন,,,,??

ডক্টরঃ,,,,,,

হৃদয়ঃ আপনি কিছু বলবেন,,,,?? নাকি আমি পুলিশকে ইনফর্ম করবো,,,,। মেয়ে বলে আপনি এখনো নিজের পায়ে দাড়িয়ে আছেন,,, নাহলে এতক্ষণে এই হসপিটালের বেডে থাকতেন,,, (রেগে ধমক দিয়ে)

ডক্টরঃ আ,,আমার ভুল হয়ে গেছে,,,, এমন কাজ আর করবো না কখনো,,,।

হৃদয়ঃ সেটা আমি পরে দেখে নিচ্ছি,,,, আগে বলুন কেন করেছেন এসব,,,??

ডক্টরঃ অ,,,অনেকগুলো টাকার অফার ছিলো তাই,,,, আর এতে উনার কোনো ক্ষতি করতে হয়নি তাই আমি রাজি,,,,

হৃদয়ঃ টাকা দেখে লোভ সামলাতে পারেননি,,,,। একটা মেয়ে হয়ে অন্য একটা মেয়েকে এমন পরিস্থিতিতে ফেলতে একবার বিবেকে বাঁধলো না,,??(ধিক্কার দিয়ে)

ডক্টরঃ,,,,,,,

হৃদয়ঃ কে টাকা দিয়েছিলো আপনাকে,,,,,??(রেগে)

ডক্টরঃ এ,,,,এ,,এটা আমি বলতে পারবো না,,,,

হৃদয়ঃ ওকে,,,, বলতে হবে না,,, পুলিশকে বলতে এমনই বাধ্য হবেন,,,,।

ডক্টরঃ ন,,না ন,,না পুলিশকে ইনফর্ম করবেন না,,,আ,,আমি সব বলছি,,,

হৃদয়ঃ হুম,,, বলেন,,,

ডক্টরঃ মিস ন,,নিলা টাকা দিয়েছিলো,,,, ভুল রিপোর্ট দেওয়ার জন্য,,,,।

হৃদয়ঃ ন,,,নিলা,,,,,,,,,??

ডক্টরঃ হুম নিলা,,,, উনি ভুল রিপোর্ট বানানোর জন্য টাকা দিয়েছিলো,,,, আর মিসেস অন্তরার যেন কোনো সন্দেহ না হয় তাই একটা মেডিসিন দেওয়া হয়েছিলো,,,,। মেডিসিনটা উনাকে প্রায় দুবছর খাওয়ানো হয়েছে,,,,,

হৃদয়ঃ ও মাই গড,,,,, মানুষ এতটা নিচে নামতে পারে কীভাবে,,,??

অন্তরাঃ(উনার কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছি,,, উনার একটা ভুল রিপোর্ট আমাকে প্রতিটা মুহুর্তে তিলেতিলে মেরেছে,,,, হৃদয় না থাকলে হয়তো এভাবেই এক সময় শেষ হয়ে যেতাম,,,)

হৃদয়ঃ এই মেডিসিনের জন্য ওর কোনো ক্ষতি হবে নাতো,,,??(ব্যস্ত হয়ে)

ডক্টরঃ না,,, মেডিসিনের এফেক্ট শেষ হয়ে গেছে,,, তাই উনি কনসিভ করেছেন,,,,

হৃদয়ঃ এই নিলাকে তো আমি ,,,,। তার আগে আপনার ব্যবস্থা করছি,,,,

ডক্টরঃ প্লিজ আমার কেরিয়ার শেষ হয়ে যাবে,,, এমন কাজ আর কখনো করবো না আমি,,, এবারের মতো ছেড়ে দিন,,,,

হৃদয়ঃ আপনাদের মতো কিছু ডক্টরের জন্য মানুষ ডক্টরকে ডাকাত মনে করে,,, জীবন বাঁচানোর জন্য মানুষ আল্লাহর পরে ডক্টরদের উপর ভরসা করে,,, কিন্তু আপনারা বাঁচানোর বদলে মানুষ খুন করেন,,, শুধুমাত্র কিছু টাকার জন্য,,,

ডক্টরঃ,,,,,,(মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে,,)

অন্তরাঃ উ,,উনাকে ছেড়ে দিন,,,,

হৃদয়ঃ চুপ,,,,(অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে) একদম চুপ,,, জোর করে এসেছো,,, তাই চুপচাপ শুধু দেখবে,,, এদের কিছু না বলে ছেড়ে দিলে আরো মানুষের ক্ষতি করবে,,,

অন্তরাঃ(উনি আমার কথা না শুনে এই ডক্টরকে পুলিশের কাছে দিয়ে দিলেন,,, এরপর আরিয়ানদের বাড়ির দিকে যেতে লাগলেন গাড়ি নিয়ে,,,) একটা কথা বলবো,,,??

হৃদয়ঃ হুম বলো,,(গম্ভীর গলায়)

অন্তরাঃ নিলা এসব না করলে হয়তো আমার কষ্টটা কম হতো এই তিন বছরে,,, কিন্তু আপনাকে পেতাম না,,,, তাই আমি নিলার কাছে কৃতজ্ঞ,,,,। নিলা আমাকে দোযখ থেকে বের করে বেহেশতে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে,,,,,

হৃদয়ঃ (অন্তরার কথা শুনে,,, অন্তরার দিকে তাকালাম,,, সত্যি তো এসব না করলে আরিয়ান হয়তো ডিভোর্স দিতো না,,, আর আমিও অন্তরাকে পেতাম না,,,,। যা হয় ভালোর জন্যই হয়,,,)

অন্তরাঃ বাদ দিন না,,, যেটা চলে গেছে সেটা নিয়ে ঘাটাঘাটি না করি,,,, আমি আর তাদের ফেস করতে চাই না,,,,(উনি কিছু না বলে গাড়ি ঘুরিয়ে নিলেন,,)
,,,,,

★বর্তমান★

হৃদয়ঃ এই কী এতো ভাবছো,,,?? এখনো এভাবেই বসে আছো,,,(খাবারের প্লেট নিচে রেখে এসে)

অন্তরাঃ কিছু না,,,,, ঘুমাবেন তো,,,,??

হৃদয়ঃ না,,, ছাদে চলো,,, অনেক সুন্দর চাঁদ উঠেছে আজ,,,,,

অন্তরাঃ সারা রুমে একটা থাকবে,,,?? ওঠে গেলে ভয় পাবে তো,,,,

হৃদয়ঃ ওকে আপাতত সিয়ামের পাশে শুইয়ে দিয়ে যাই,,,, পরে নিয়ে আসবো,,,,

অন্তরাঃ কিন্তু,,,,

হৃদয়ঃ চলোতো,,,,,

অন্তরাঃ(উনি সারাকে কোলে তুলে সিয়ামের পাশে শুইয়ে দিলো,,,, ছাদের সিঁড়ির কাছে যেতেই উনি আমাকে কোলে তুলে নিলেন,,,) এখনো কী সারা আমার পেটে,,,, তবে সারার ভাইবোন খুব তাড়াতাড়ি চলে আসবে এখানে তাই না,,,,।

হৃদয়ঃ আমার আর কাউকে লাগবে না,,,,,

অন্তরাঃ আমার লাগবে,,,,

হৃদয়ঃ তোমার কষ্ট হয় এমন কিছু আর হবে না,,,,।

অন্তরাঃ কিন্তু,,,,

হৃদয়ঃ চুপ,,, সিয়াম আর সারা আছে না,,??

অন্তরাঃ(উনার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিলাম,,, তারপর বুকে মাথা রাখলাম,,,, সারা যখন আমার পেটে ছিলো প্রতিটা মুহূর্তে উনি খুব ভয় পেতেন,,, যদি ভাবির মতো আমিও চলে যাই উনাকে ছেড়ে,,,,, এক মুহুর্ত একা ছাড়তো না,,,, ডেলিভারির দিন আমার কান্না দেখে নিজেও কান্না করে দিয়েছিলো,,,,, এতটা সুখ ছিলো ভাগ্যে কল্পনাও করিনি কখনো,,,,)
,,,,

রিয়াদঃ সিয়া,,,,,

সিয়াঃ হুম,,,,,,

রিয়াদঃ কেমন আছো,,,,??

সিয়াঃ ভালো,,,, তোমাকে ছাড়া ভালো লাগে না,,,,

রিয়াদঃ অপেক্ষা তো করতেই হবে,,,, আবার একসাথে থাকার জন্য,,,,

সিয়াঃ হুম,,,, তোমার অপেক্ষায় আছি,,,, ভালোবাসি,,,

রিয়াদঃ আমিও ভালোবাসি অনেকটা বেশি,,,,,,(সিয়া ধীরে ধীরে কুয়াশায় মিলিয়ে গেলো,,,,। ঘুম ভেঙে গেলো,,,। উঠে বসে একটা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লাম,,,। ডাইরি বের করে লিখতে বসলাম,,,, আমিও ভালো আছি,,, আমার সিয়ার সাথে কাটানো সুখের স্মৃতি বুকে আগলে,,,, বাকিটা জীবন সেই স্মৃতি নিয়েই কাটিয়ে দেবো,,,)
,,,,,

অন্তরাঃ(ছাদে এসে উনার কাঁধে মাথা রেখে চাঁদ দেখছি আর উনি আমার দিকে তাকিয়ে আছে,,,)

হৃদয়ঃ ভালোবাসি,,,,,,,,

অন্তরাঃ,,,,,,,,,,,

হৃদয়ঃ এখনো কী সেই জায়গাটা নিতে পারিনি,,?? বলতে ভয় পাও এখনো,,,,??

অন্তরাঃ ভালোবাসি,, (কানের কাছে ফিসফিস করে,,,,, উনি আমার কপালে একটা কিস করে বুকে জড়িয়ে নিলেন,,,,, বাকিটা জীবন এভাবেই কাটাতে চাই,,,, শেষ নিশ্বাসটাও যেন এই বুকেই ত্যাগ করতে পারি,,,,)

সমাপ্ত,,,,,