#বোনু
#Part_22
#Writer_NOVA
Time and tide wait for none. এই বিখ্যাত প্রবাদের অর্থ আমরা সবাই জানি।সময় ও স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করে না।সময় আমাদের জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ।সময় তার নিজ গতিতে চলবেই। কারো জন্য সে দেরী করবে না।দিন,মাস,বছর চোখের পলকে ছুটে যায়। আমরা চাইলেও সময় ও স্রোত বেঁধে রাখতে পারি না।তারা তাদের আপন গতিতে বয়ে চলে। জীবনে যে সময়কে গুরুত্ব দেয় সে জীবনে উন্নতি করতে পারে।তারপরও মাঝে মাঝে সময় থমকে যায় আমাদের কাছে।
মির্জা কুঠির…..
বেশ কিছুদিন কেটে গেছে এর মধ্যে। মির্জা কুঠিরটা স্তব্ধ হয়ে আছে।কারোর মুখে কোন কথা নেই। হাসি,খুশি নামক বস্তুটা এই বাড়ি ছেড়ে তার তিল্পিতল্পা নিয়ে পালিয়েছে।উষা সবসময় নিজেকে ঘরে বন্দী করে রাখতে পছন্দ করে। ইশাত ও ঈশান আগের মতো ঝগড়া করে না।সারাদিন বাড়িটা চুপ হয়ে থাকে।সবাইকে এই অবস্থায় দেখতে পারছে না অর্ণব,আদিল।বাড়িটা কেমন একটা গুমোট আবহাওয়া বিরাজ করছে । খাবার টেবিলে বসে প্লেটের খাবার নারছে আদিল।নুহা খাবার সার্ভ করছে।
অর্ণব কিছু একটা খুব মনোযোগ সহকারে ভাবছে।
অাদিলঃ কি ভাবছো ভাইয়া?
অর্ণবঃ হু। কোথায় কিছু না। (ভাবনা থেকে ফিরে)
আদিলঃ বোনুতো কয়েকদিন ধরে কিছু মুখে দিচ্ছে না। রুম থেকে বের হচ্ছে না। কারো সাথে কথা নেই। সবাই তব্ধ খেয়ে আছে।আমি ওদেরকে এভাবে মেনে নিতে পারছি না ভাইয়া।
অর্ণবঃ আমাদের কে ওদের সাথে কথা বলতে হবে।
আদিলঃ আমারও তাই মনে হচ্ছে। নুহা??
নুহাঃ জ্বী মেজু ভাইয়ু।
আদিলঃ খেতে বসে পরো আমাদের সাথে।
নুহাঃ আমি পরে খেয়ে নিবো।আপনারা খেয়ে নিন।
অর্ণবঃ তুমি বরংচ উষার সাথে খেয়ে নিও।
নুহাঃ আচ্ছা,আমি বোনের সাথে খেয়ে নিব।
এমন সময় বাইরের থেকে গাড়ির হর্ণের শব্দ ভেসে এলো।গাড়ি থেকে নামলো মাসফি ও তার চাচা আরাভ শিকদার।আরান ও জিকু কিছুদিনের জন্য সিলেট গিয়েছে। সেখানে তাদের কাজ আছে।সদর দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকলো দুজন।অর্ণব,আদিল খুব অবাক হলো আরাভ শিকদারকে দেখে। সচারাচর তিনি মির্জা বাড়ি আসেন না।
আদিলঃ আসালামু আলাইকুম চাচা।
আরাভঃ অলাইকুম আস সালাম। আরে আদিল বাবা যে।কি খবর? কেমন আছো?
আদিলঃ আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনি??
আারাভঃ আল্লাহর রহমতে ভালোই আছি।
মাসফিঃ কেমন আছেন অর্ণব ভাই?
অর্ণবঃ আল্লাহর দোয়ায় আছি কোন রকম।বেঁচে আছি, এটাই কি বেশি নয় মাসফি?
আরাভঃ কেমন আছো অর্ণব?
অর্ণবঃ বিশিষ্ট শিল্প পতি ও সমাজ সেবক আরাভ শিকদার আজ গরীবের কুঠিরে। কি মনে করে?
আরাভঃ বড়লোক কি আমি? তোমরা হচ্ছো দেশের নামকরা বিজনেস ম্যান।আমি গরীব সাধারণ মানুষ। বড়লোকের বাড়িতে কি গরীবের আসা মানা নাকি?
অর্ণবঃ তা হতে যাবে কেন? বড়লোক বলে লজ্জা দিবেন না।আপনি সাধারণত আমাদের বাড়ি আসেন না তাই বললাম।
আদিলঃ মাসফি,চাচা বসুন।
অর্ণবঃ দাড়িয়ে কেন বসুন আপনারা।নুহা বোন, নুহা।
নুহাঃ হ্যাঁ,ভাইয়া।
অর্ণবঃ মেহমানের নাস্তার ব্যবস্থা করো।
নুহাঃ ঠিক আছে ভাইয়া।
অর্ণব, আরাভ শিকদারের সাথে হাত মিলালো।তারপর সবাই একসাথে সোফায় বসলো।আরাভ শিকদার চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বাসা দেখতে লাগলো।
আরাভঃ অরূপের কথাটা শুনে অনেক খারাপ লাগছিলো।তাই না এসে পারলাম না।ছেলেটা বড্ড ভালো ছিলো।আজকাল ওর মতো ছেলে পাওয়া যায় না।নিজের ভাইয়ের দায়িত্ব অরূপ ঠিকমতো পালন করছে।বোনের জন্য নিজের জীবন বিলিয়ে দিলো।বোনকে কতটা ভালবাসলে একটা মানুষ নিজের জীবন তুচ্ছ করে বোনকে বাঁচায় তা অরূপকে দেখে বুঝলাম।
আদিলঃ সেই ছোট বেলা থেকে আমরা একসাথে বড় হয়েছি।কখনও ওকে নিজের ভাইয়ের থেকে অন্য চোখে দেখেনি।আমারা অরূপকে চিনতে ভুল করিনি।আমাদের ভাই-বোনের জন্য সবসময় নিজের জীবন বাজি রেখেছে ছেলেটা।আমাদের বোনুর জন্য ছিলো একটা ঢাল।ওর জন্য বোনুর দিকে কেউ তাকাতেও সাহস পেতো না।
অর্ণবঃ আমরা সবসময় মনে করতাম আমরা পাঁচ ভাই এক বোন।আমাদের মতো অরূপ বোনুকে ভীষণ ভালবাসতো।আমাদের থেকে বেশিই ভালবাসতো।নয়তো কেউ বোনুর জন্য নিজের জীবন বাজি রাখতে পারি নি।সেই কাজটা অরূপ করে দেখালো।নিজের বোনের দায়িত্ব পালন করতে নিজের জীবন শেষ করতে পারতো না।অরূপ মরে গিয়ে নিজেকে আদর্শ ভাই হিসেবে পরিচয় দিয়ে গেলো।আজ যদি অরূপ নিজের গায়ে গুলি না লাগাতো তাহলে আমাদের বোনু আমাদের মাঝে থাকতো না।
অর্ণব ও আদিল মুখ ঢেকে কান্না করতে লাগলো।নুহা ট্রলি ভর্তি খাবার এনে ওদের সামনে রেখে গেলো। মাসফির মনটাও খারাপ।আরাভ শিকদার আফসোস করছে অরূপের জন্য।
মাসফিঃ আপনার প্লিজ ভেঙে পরবেন না। কতটা ভালবাসলে নিজের জীবন তুচ্ছ করে এরকম কাজ করা যায় তা অরূপকে না দেখলে আমিও জানতে পারতাম না।সত্যি অরূপ মারা গিয়ে নিজেকে সার্থক করে গেলো।আমি কতবার ওকে কিনতে চেয়েছি কিন্তু টাকার লোভ ওকে আপনাদের থেকে দূরে সারাতে পারেনি।বরং আমার লোককে মেরে গুম করে ফেলেছে।
আরাভঃ আমার অরূপের মৃত্যুর খবর শুনে অনেক খারাপ লেগেছে।আহারে! অনেক ভালো ছেলে ছিলো।আল্লাহ ভালো মানুষকে বেশি দিন পৃথিবীতে রাখে না।খারাপ মানুষগুলোকে আল্লাহ দেরীতে নেই। অথচ ভালো মানুষকে এভাবে তারাতাড়ি নিয়ে যায়।দোয়া করি আল্লাহ যাতে অরূপকে জান্নাতে নসিব করে।
আদিলঃ আপনি ঠিক বলেছেন।ভালো মানুষকে আল্লাহ জলদী নিয়ে যায়।তবে খারাপ মানুষকে কেন নেয় না জানেন চাচা?আল্লাহ খারাপ মানুষকে এই জন্য খুব তারাতাড়ি নেন না কারণটা হলো আল্লাহ বিশ্বাস করেন তার বান্দা তার কাছে ক্ষমা চাইবে।সেই আশায় আল্লাহ তাদের দেরীতে নেয়।আমরা গুনাহ করতে করতে হাঁপিয়ে যাবো।কিন্তু আল্লাহ ক্ষমা করতে করতে হয়রান হবেন না।তিনি যে অসীম দয়ালু।তাই আমাদের উচিত আমাদের সকল খারাপ কাজ থেকে তোওবা করে, গুনাহ থেকে পানাহ্ চাওয়া।খারাপ পথ থেকে ভালো পথে ফিরে আসা।
অর্ণবঃ তুই একটা ভূল কথা বললি আদি।আমাদের যতদিন হায়াত আছে আমরা ততদিন বাঁচবো। একমিনিট বেশিও নয় কমও নয়।মৃত্যু কখনও বলে আসে না।আমরা জানি না কোথায় আমাদের মৃত্যু লেখা আছে।ভালো মানুষ পৃথিবীতে কম বাঁচবে, খারাপ মানুষ বেশি দিন বাঁচবে। এই কথা কোথায় লেখা বা বলা নেই ।তোর এসব ধারণা পাল্টানো দরকার।যেটা জানিস না সেটা নিয়ে কথা বলার দরকার নেই। তবে এটা সত্যি আল্লাহ উদগ্রীব হয়ে থাকে কখন তার বান্দা তার কাছে হাত তুলে মাফ চাইবে আর সে মাফ করে দিবে।নিশ্চয়ই আল্লাহ অসীম দয়ালু ও ক্ষমাশীল।
আরাভঃ কে বা কারা গুলি করেছে জানতে পেরেছো?
আদিলঃ এখনো জানতে পারিনি। তবে খুব শীঘ্র জানতে পারবো।আমার ভাইয়ের থেকে কষ্টদায়ক মৃত্যু তাকে উপহার দিবো।
অর্ণবঃ কাউকে ছাড়বো না। এর পেছনে যারা বা যার হাত আছে তাকে আমাদের বোনুর পেছনে লাগা ও আমাদের ভাইকে মারার সাহস বুঝিয়ে দিবো।তিলে তিলে শেষ করে দিবো তাকে।
আরাভঃ উষা মা-মণিকে যে দেখছি না।
মাসফিঃ ইশাত,ঈশান কোথায় ভাইয়া?
অর্ণবঃবোনু কয়েক দিন ধরে নিজেকে ঘরে বন্দী করে রাখে।ইশাত, ঈশান অনেক বড় একটা শক পেয়েছে। আসলে তিনজন প্রায় সমবয়সী ছিলো।একসাথে উঠা-বসা অরূপের সাথে। তাই এখনো ওর মৃত্যুর শোক কাটিয়ে উঠতে পারেনি।আর বোনুতো অরূপের শোকে পাথর হয়ে গেছে। আমি ওদেরকে এভাবে নিতে পারছি না।
আদিলঃ আপনারা খাবার নিচ্ছেন না কেন?মাসফি নেও।চাচা আপনিও নিন।
আরাভঃ আজ কিছু মুখে দিবো না। আজ উঠি। আমার আবার কিছু কাজ আছে।এতবড় একটা ঘটনা ঘটে গেলো যদি একবার না দেখা করতে আসি ব্যাপারটা ভালো দেখায় না।তাই জরুরি মিটিং পিছিয়ে তোমাদের সাথে দেখা করতে আসলাম।মাসফি দুই দিন ধরে বলছে। আমারও সময় হয়ে উঠেনি।আজকে একটু সময় পেলাম তাই চলে এলাম।
আদিলঃ সে কি কথা?তাই বলে না খেয়ে চলে যাবেন।বিষয়টা কি ভালো দেখায়?
আরাভঃ আজ নয় আরেকদিন এসে খেয়ে যাবো।
অর্ণবঃ তাই বলে কিছু একটা তো মুখে দিবেন।মাসফি তুমিও তো কিছু মুখে দিলে না।
মাসফিঃ না ভাইয়া আমার হাতে সময় নেই। অন্য দিন এসে খেয়ে যাবো।
আরাভঃ আসছি আদিল বাবা,অর্ণব বাবা।নিজেদের খেয়াল রেখো।উষা মায়ের যত্ন নিও।
গাড়ি পর্যন্ত আদিল,অর্ণব এগিয়ে দিয়ে আসলো।মাসফি গাড়িতে উঠার সময় ওদের দুজনের দিকে তাকিয়ে একটা রহস্যময় হাসি দিলো।মাসফির হাসির সাথে সাথে অর্ণব, আদিলও মুচকি হাসলো।যার মানে ওরা তিনজন ছাড়া কেউ বুঝলো না।
#চলবে