#তোকেই ভালোবাসি
#লেখক – তানভীর হৃদয় নীল
##পর্ব -১৫
মামুন – সিলেট থেকে আসার পাথে। কারা যেন ইকরাম ভাই কে গাড়ির ভেতরে গুলি করে মেরে ফেলেছে। সেই জন্য ওখানকার থানার পুলিশ রবিন আর মেহেদী ভাইকে থানায় নিয়ে গেছে।সাথে আমাদের গাড়ির ড্রাইভারকে।
তানভীর – কী আবোল তাবোল বলছেন? আপনার মাথা কী নষ্ট হয়ে গেছে?কে ইকরাম ভাইকে মারবে?
মামুন – যা বলছি সেটাই সত্যি। কিছুক্ষণ আগে আমাদের লোকজন এসেছে।তারাই আমাকে খবরটা জানিয়েছে।তারা তো আর মিথ্যা কথা বলবে না।
তানভীর – আমাদের লোকজন চলে এসেছে মানে কি? ইকরাম ভাইয়ের লাশ কোথায়?ওরা মেহেদী আর রবিন ভাইকে থানায় রেখে চলে এসেছে কেন?(রেগে গিয়ে)
মামুন – ইকরাম ভাইয়ের লাশ তার মামারা এসে নিয়ে গেছে।
তানভীর – আপনি কী সত্যিই পাগল হয়ে গেছেন? সিলেটে ইকরাম ভাইয়ের মামা আসলো কোথায় থেকে? (রেগে গিয়ে)
মামুন – সিলেটেই তো ইকরাম ভাইয়ের মামার বাড়ি। ওনারা এসেই তো…..
তানভীর – ওনারা এসে কী হ্যাঁ? আপনাকে কে বলেছে ইকরাম ভাইয়ের মামার বাড়ি সিলেট? ইকরাম ভাইয়ের মামার বাড়ি ঢাকায়। আর ইকরাম ভাইয়ের মামার বাড়ির লোকজনদের সাথে গত উনিশ বছর ধরে কোনো রকম সম্পর্ক নেই।(ধমক দিয়ে)
মামুন – কিন্তু লোকজন তো বললো সিলেটে ইকরাম ভাইয়ের মামার বাড়ি। ওনারা এসে লাশ নিয়ে গেছে।
তানভীর – লোকজন বলবে কেন?এতো বছর একসাথে কাজ করছেন। আর এই সামান্য কথা জানে না?(ধমক দিয়ে)
মামুন – আমিই এইসবের কিছুই জানি না। কোনো দিন জিগ্গেস করা হয় নি। রবিন ভাইয়েরা মনে হয় জানে।
– ঠিক আছে। তুমি এখন ফ্যাক্টরিতে আসো। তারপর দেখছি কি করা যায়?
তানভীর – যারা সিলেটে গিয়েছিলো তাদের কাউকে বাসায় যেতে দিয়েছেন না। আমি যাওয়ার পর তারা যেন বাসায় যায়।
মামুন – ঠিক আছে। তুমি চলে আসো।
– ফোন কেটে দিয়ে তাড়াতাড়ি বাসা থেকে বের হয়ে । গাড়ি নিয়ে সোজা ফ্যাক্টরিতে চলে গেলাম। গাড়ি থেকে নেমে ফ্যাক্টরির ভেতরের গিয়ে দেখি সবাই দাঁড়িয়ে আছে।
– আমাকে দেখে মামুন ভাই আমার কাছে এসে বললো,এই নয়জন লোক সিলেটে গিয়েছিলো।এরাই এসে আমাকে খরবটা জানিয়েছে। ইকরাম ভাইয়ের মামার বাড়ি কোথায় সত্যিই আমি জানতাম না।
সিয়াম – রবিন ভাই কিংবা মেহেদী ভাই কেউই ইকরাম ভাইকে মারে নি। কিন্তু ওখানকার কিছু লোকজন মিথ্যা স্বাক্ষী দেওয়াতে। গাড়ির ড্রাইভার আর রবিন ভাইদের ধরে থানায় নিয়ে গেছে পুলিশ।
– আমরা অনেক চেষ্টা করেছিলাম ইকরাম ভাইয়ের লাশ নিয়ে আসার জন্য। কিন্তু ওনার মামার বাড়ির লোকজন দেয়নি। সোহেল ভাই ও বললো ওনারা নাকী ইকরাম ভাইয়ের মামার বাড়ির লোকজন।(মাথা নিচু করে)
তানভীর – কিসের জন্য তোমাদের সিলেট পাঠানো হয়েছিল? ইকরাম ভাইকে মেরে ফেললো। আর তোমারা কিছুই করতে পারলে না?(জোরে ধমক দিয়ে)
সিয়াম – আমরা তখন রবিন ভাইদের সাথে ছিলাম না। গাড়িতে কি যেন একটা সমস্যা হয়েছিলো?তার জন্য সোহেল ভাই গাড়ি থামিয়েছিলো। গাড়ি ঠিক হওয়ার কিছুক্ষণ পর।আমারা সামনে গিয়ে এই অবস্থা।
মামুন – গাড়ি নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো মানে কি? যাওয়ার সময় ভালো করে দেখে যাওনি?
তানভীর – এই যে সোহেল ভাই। আপনি কিভাবে ইকরাম ভাইয়ের মামার বাড়ির লোকজনদের চিনেন? ইকরাম ভাইয়ের মামার বাড়ি তো ঢাকায়। তাহলে সিলেট ইকরাম ভাইয়ের মামার বাড়ি হয় কিভাবে?(ধমক দিয়ে)
সোহেল – ওনারা এসেই তো ইকরাম ভাইয়ের মামার পরিচয় দিলেন। কেউ তো মিথ্যা পরিচয় দিবে লাশ নিয়ে যাবে না?
তানভীর – কেউ এসেই বললেই সে তার আত্মীয় হয় যার?(জোরে ধমক গিয়ে)
– সোহেল ভাই কিছু না বলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। আমি কিছু না বলে সোফায় গিয়ে মাথা নিচু করে বসে পড়লাম। পর পর তিনটা মিসকলের শব্দ শুনে মাথা তুলে তাকালাম। তাকিয়ে দেখি সোহেল ভাইয়ের মোবাইলে ফোন আসছে। কিন্তু ফোন না রিসিভ না করে।বার বার ফোন কেটে দিচ্ছে।
তানভীর – বার বার কে ফোন দিচ্ছে ? ফোন না ধরে কেটে দিচ্ছেন কেন?
সোহেল – আমার বন্ধু।
তানভীর – ফোন রিসিভ করে কথা বলেন।
সোহেল – আসলে তেমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ না।পরে কোনো সময় কথা বলে নিবো।
তানভীর – এতো কথা না বলে ফোন রিসিভ করেন।(কিছুটা রেগে)
সোহেল – ঠিক আছে। আমি বাহিরে গিয়ে কথা বলে আসছি।
তানভীর – বাহিরে যেতে বলেনি। এখানে দাঁড়িয়ে কথা বলেন।(ধমক দিয়ে)
মামুন – এতো রাতে কোন বন্ধু ফোন দিয়েছে। ফোন রিসিভ করে কথা বল। যাতে আমরা সবাই শুনতে পায়।
সোহেল – না এখন যাক। আমি ওর সাথে পরে কথা বলে নেবো।(ভয়ে ভয়ে)
মামুন – মোবাইল দে দেখি কে ফোন দিয়েছে?যার জন্য সবার সামনে কথা বলতে এতো ভয় পাচ্ছিল।(হাত থেকে মোবাইল এনে)
– মামুন ভাই মোবাইলটা আনার সাথে সাথে ফোন আসলো। ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে বললো, ধন্যবাদ ভাই আপনাকে। আমাদের কাজে সাহায্য করার জন্য।
– আজকে আপনার জন্যেই ইকরামকে মারতে আমাদের অনেকটা সুবিধা হয়েছে। আপনার বুদ্ধিতেই কিছু লোক ভাড়া করে। ইকরামের মামা সাজিয়ে ওর লাশ এনে।আমাদের লোকজন দিয়ে লাশ নদীতে ফেলে দিয়েছি।
– রবিনরা ইকরামের লাশ জীবনেও খুঁজে পাবে না। আর আপনার বিকাশে টাকা পাঠিয়ে দিয়েছি। পরবর্তী কোনো দরকার পড়লে ফোন দিয়ে জানাবো।ভালো থাকবেন ভাই।(বলেই ফোনটা কেটে দিলো)
মামুন – তোর সাথে রনির কিসের বন্ধুত্ব?
তানভীর – তার মানে রনিই লোক দিয়ে ইকরাম ভাইকে মেরেছে?
মামুন – রনির কথা শুনে তো তাই মনে হচ্ছে।
তানভীর – কত টাকার বিনিময়ে এই কাজ করেছিস?তোর কি ক্ষতি করেছিলো ইকরাম ভাই? যায় জন্য ভাইকে মারতে সাহায্য করেছিস?(প্রচন্ডভাবে রেগে গিয়ে)
সোহেল – (মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে)
মামুন – কি হলো কথা বলছিস না কেন?(ধমক দিয়ে)
তানভীর – এতো দিন এখানে থেকে খেয়ে পড়ে ভাইদের সাথেই বেইমানি করলি? তোর মতো বেইমানের বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই।(রেগে গিয়ে)
সোহেল – ছোট্ট ভাই আমাকে মাফ করে দাও।আর জীবনেও এমন ভুল করবো না। এবারের মতো মাফ করে দাও।(পা জড়িয়ে ধরে)
তানভীর – ভুলের ক্ষমা আছে। কিন্তু তোর মতো বেইমানদের না।তোকে ক্ষমা করলে ভাইয়ের আত্মার সাথে বেইমানি করা হবে। আর আমি সেটা কখনোই করবো না।
– বলেই লাথি দিয়ে ফ্লোরে ফেলে দিলাম। ফ্লোরে ফেলে দিয়ে সিয়াম ভাইয়ের কাছ থেকে রিভাল বার এনে। পর পর সোহেলের বুক বরাবর গুলি করলাম। সাথে সাথে ওইখানেই সোহেল মারা গেলো।
সিয়াম – সোহেলকে এখন মেরে ফেলা ঠিক হয় নি। ওর কাছ থেকে সবকিছু…..
তানভীর – আপনার কাছ থেকে কোনো কিছু জানতে চাইছি?(জোরে ধমক দিয়ে)
মামুন – ছোট্ট ভাই মাথা ঠান্ডা করো।
তানভীর – ওর লাশ নিয়ে নদীতে ফেলে দিয়ে আসেন। আমি এখন বাসায় চলে যাচ্ছি। কাল সকালে সিলেটে যাবো।
মামুন – ঠিক আছে। সাবধানে যেও।
– আর কিছু না বলে ফ্যাক্টরি থেকে বের হয়ে। গাড়িতে উঠে সোজা বাসায় চলে আসলাম। বাসায় সামনে গিয়ে দেখি দুইটা গাড়ি রাখা।এতো রাতে বাসার সামনে গাড়ি দেখে কিছুটা অবাক হয়ে গেলাম।
– আর কিছু না ভেবে তাড়াতাড়ি বাসায় ভেতরে গেলাম। বাসায় ভিতরে গিয়ে দেখি।আট দশ লোক দাঁড়িয়ে আছে। সামনে রনি সোফায় পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে।
– পাশে তাকিয়ে দেখি ভাবি, নুসরাত, রিয়া আর রাকিব হাত পা বাঁধা অবস্থায় ফ্লোরে পড়ে আছে। আমাকে দেখেই রনি আয় ভাই তোর জন্যই অপেক্ষা করছিলাম।
তানভীর – তুই এতো রাতে এখানে এসেছিস কেন? আর সবাইকে হাত পা বেঁধে ফ্লোরে ফেলে রেখেছিস কেন?(রেগে গিয়ে)
রনি – এসেছিলাম তোকে শেষ করার জন্য। কিন্তু ওরা বড্ড বেশি বাড়াবাড়ি করছিলো।তাই হাত পা বেঁধে ফ্লোরে শুইয়ে দিলাম।
তানভীর – ভালো চাস তো এখান থেকে চলে যা।তা না হলে কিন্তু….
রনি – তা না কি করবি তুই?(বলেই ধাক্কা দিয়ে ফ্লোরে ফেলে দিলো)
– আমি কিছু বলার আগেই দুজন লোক এসে আমার হাত বেঁধে ফেললো।
তানভীর – হাত খুলে দিতে বল।(ধমক দিয়ে)
রনি – হাত খুলে দেওয়ার জন্য তো হাত বাঁধে নি। আমি ওইদিন বাড়িতে ছিলাম না।সবার সামনে আব্বুকে অপমান করে এসেছিস। আমার বন্ধুদের কে মেরেছিস?(ঘুসি মেরে)
তানভীর – দোষ করেছি আমি।তার জন্য ওদেরকে কে শাস্তি দিচ্ছিস? নিজের বোনকেও হাত পা বেঁধে ফ্লোরে ফেলে রেখেছিস। ছিঃ কেমন ভাই তুই?তোর বেঁচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়া অনেক ভালো।
রনি – হুম মারার জন্যই তো এসেছি।
তানভীর – এখনও সময় আছে।ভালো চাস তো ওদের ছেড়ে দে।(রেগে গিয়ে)
রনি – ছেড়ে দেবো। কিন্তু তোকে মারার পর।
– বলেই আমার দিকে রিভাল বার তাক করলো।কিছু না বলে চোখ বন্ধ করে নিলাম।
চলবে।