#অভদ্র_প্রেমিক
#পর্বঃ১৫
#Arshi_Ayat
মেহের আর কিছু বলতে পারলো না তার আগেই কে যেনো দরজা নক করলো।ওদের দুইজনের কথা এখানেই অফ করে মেহের দরজা খুলে দেখলো ওর ভাবী দাড়িয়ে আছে।ভাবীকে দেখে মেহের ভেতরে নিয়ে এলো।ওর ভাবী এসে বলল”তোমরা দুইজন কি কথা বলছো?”
“ওইতো পড়াশোনা নিয়ে।” মেহের মেকি হেসে বলল।
“ওহ!আচ্ছা চলো তোমার ভাইয়ারা বসে আছে।একসাথে বসে আড্ডা দেই।”
“আচ্ছা ঠিকাছে তুমি যাও আমরা আসছি।”
মেহেরের ভাবী চলে যাওয়ার পর নিশাত মেহেরের হাত ধরে বলল”মেহু আমি পারবো না তার সামনে বসে কথা বলতে।লজ্জা করছে ভিষণ।”
“আহারে!তাহলে বিয়ের পর কি করবা?”মেহের মুখটিপে হেসে বলল।
“সেটাই তো এখনিতো লজ্জায় মরে যাচ্ছি।”
“থাক এতো লজ্জা পেতে হবে না।আর তিহান ভাইয়া তো জানে না যে তুমি সব জানো।সো রিল্যাক্স।”
“হুম কিন্তু এখন তারে কি গিফট দেওয়া যায় বলো তো।”
“তুমি যে প্রপোজ করবা এটাই তো সবচেয়ে বড়ো গিফট।”
“হুম তবুও কিছু একটা দিতে ইচ্ছে করছে।”
“তাহলে একটা রিং দিয়ে দিও।”
“আইডিয়াটা ভালো তবে আমার কাছে আপাতত অতো টাকা নাই।”
“তাতে কি আমার কাছে আছে।আমি তোমাকে হেল্প করবো।”
নিশাত খুশীতে মেহের কে জড়িয়ে ধরলো।তারপর ছেড়ে দিয়ে দুজনই হাসলো।এরপর বেরিয়ে রিয়াদ আর তিহানের কাছে গেলো।ওর ভাবী নাস্তা আনতে গেছে।দুজনকে একসাথে হাসতে দেখে রিয়াদ বলল”কি রে দুজনের মধ্যে কি কথা চলছে যে এতো হাসছিস।”
“বলবো না সিক্রেট কথা।” মেহের মুখ ভেঙচিয়ে বলল।
মেহেরের কান্ডে সবাই হেসে দিলো।তারপর সেখানে একটু আড্ড দিয়ে তিহান আর নিশাত বেরিয়ে পড়লো।যাওয়ার আগে মেহের আর নিশাত প্ল্যান করেছে কাল সকালে ওরা শপিংমলে যাবে।
রিয়াদের বাসা থেকে বেরিয়ে দুজনে বাসায় চলে এলো।বাসায় আসতে আসতে আধো সন্ধ্যা হয়ে গেছে।নিশাত বাসায় এসে শাড়ী চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে নিলো।আর তিহান ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়ে ল্যাপটপটা নিয়ে বসলো।নিশাত ফ্রেশ হয়ে তনয়ের ঘরের গিয়ে দেখে ও এখনো ঘুমাচ্ছে।নিশাড ওকে থাপ্পড় আর কিল টিল দিয়ে ঘুম থেকে উঠালো।তনয় চোখ ডলতে ডলতে উঠে বলল”কি হইছে এমন করতাছিস কেনো?”
“এখনো ঘুমাচ্ছিস কেনো?মেহের কল দিতে দিতে পাগল হয়ে যাচ্ছে।”
তনয় চট করে ফোনটা হাতে নিয়ে এতোগুলো কল দেখে বলল”ওহ শিট!”
নিশাত হাসতে হাসতে বলল”আজকে তোমার খবর আছে।”
তনয় কল ব্যাক করতেই মেহের কল রিসিভ করে বলল”হ্যালো কে বলছেন?”
“সরি মেহের।আসলে ঘুমিয়ে ছিলাম তো তাই ধরতে পারি নি কল।”
“বললাম তো আমি আপনাকে চিনি না।এখন রাখুন।বাই।”
ওদের কথার মাঝখানে না দাড়িয়ে থেকে নিশাত তিহানের রুমে গিয়ে উঁকি দিলো।তিহান ল্যাপটপে কি যেনো করছে।নিশাত একবার উঁকি দিয়ে নিজের ঘরে চলে এসে মুচকি হেসে নিজে নিজেই বলল”কি হলো আমার আমি এমন করছি কেনো?”
তারপর আবার নিজে নিজেই বলল”তুমি প্রেমে পড়েছো নিশাত।”
এটা বলে দুইহাত মুখ ঢাকলো।
আসলেই ভালোবাসার অনুভূতিগুলো হয়তো এমনই।যা ধরা যায় না ছোয়া যায় না শুধু অনুভব করা যায়।
★
নিশাত খুশীর চোটে ওড়ানার আচল নাড়িয়ে নাড়িয়ে গান গাওয়া শুরু করলো।
“ও হে তিহান তোমারে আমি
নয়নে নয়নে রাখিবো
অন্য কোনো ডাইনিরে না আমি চাইতে দেবো
ও হে তিহান তোমারে আমি
নয়নে নয়নে রাখিবো
অন্য কোনো ডাইনিরে না আমি চাইতে দেবো
প্লাস্টিকের ফুল তুমি তুলি আইনাছি আমি
ব্রেসলেট বানিয়ে হাতে পরিবো
অন্য কোনো ডাইনিরে না আমি চাইতে দেবো
ও হে তিহু🙈…”
নিশাতের গানের মাঝেই মেহের কল দিলো।নিশাত ফোন রিসিভ করতেই বলল”কাল কয়টায় বের হবে?”
“জানি না তিহান ভাইয়া বাসা থেকে বের হলেই চলে আসবো।”
“ওকে আসার সময় আমায় একটা কল দিও।”
“আচ্ছা।”
তারপর নিশাত ফোন রেখে তিহানের রুমে গিয়ে দেখে বসে বসে ফোন টিপছে।নিশাত গিয়ে ওর সামনে বসলো।নিশাতকে দেখে তিহান ফোনটা রেখে বলল”কিছু বলবি?”
নিশাতের আগেই দুষ্ট বুদ্ধি মাথায় ভর করে রেখেছে।তাই সেই প্ল্যান মতো বলল”জানো তিহান ভাইয়া আমি না একটা ছেলেকে ভালোবাসি।”একটু লজ্জা পাওয়ার অভিনয় করে বলল।
“কোন ছেলে?” তিহান তীক্ষ্ণ গলায় বলল।
নিশাত মনে মনে বলল’তাশরীফ খান তিহান’কিন্ত তিহানের কথার জবাবে বলল”ওই যে মেহেরের এক ফ্রেন্ডের দেবরের খালাতো ভাইয়ের ফুপাতো বোনের জামাইর শালার বড় ভাইয়ের মামাতো বোনের ননদের জামাইর ভাইকে🐸।”
“ও তাই নাকি।ভালোই হলো।যাক ছেলেটা ভালো আছে তোকে সুখে রাখবে?” তিহানও মজা করে বলল।কারণ ছেলের গোষ্ঠীর বর্ণনা শুনেই তিহান বুঝে গেছে নিশাতে ফাইজলামি শুরু করছে।
এবার নিশাত ভ্যাবাচেকা খেয়ে মনে মনে বলল”আসলেই কি এমন কেউ আছে নাকি?”তবেও মনে কথা চেপে বলল”হ্যা আসলেই ভালো ছেলে।”
“হুম।বয়স ৩৫ হয়ে গেছে তবুও কতো স্মার্ট।ওই কানে একটু কম শোনে।ব্যাপার না কানে শোনে না এমন মানুষও প্লেন চালিয়েছে।উদাহরণঃদৈনিক স্টার জলসা”
নিশাত এবার কৌতুহল দমাতে না পেরে বলল”আসলেই এমন কেউ আছে?আর ওই লোকটা কি আসলেই কানে কম শোনে?”
এবার তিহান হেসে বলল”তোর ই তো ভালো জানার কথা।তুই না তাকে ভালোবাসিস।”
“😒 সরি।মজা করছিলাম”
“তো তোর কি মনে হয় আমি সিরিয়াসলি বলছিলাম নাকি?” এটা বলেই আবার হাসা শুরু করলো তিহান।এবার নিশাত রেগে তিহানের চুল টেনে দিলো।তিহান “আহ!” করে শব্দ করে মুখ কুঁচকে বলল”আমার চুল সব ছিড়ে ফেলবি নাকি?”
“তুমি আমার সাথে মজা করছো কেনো?”
“হ্যা তুমি ট্যাম্পু চালাইলে দোষ নাই আর আমি বসলেই হরতাল।”
এভাবেই দুজনে হাসাহাসি,কিলাকিলি করলো।তারপর রাতের খাবার খেয়ে নিশাত শুয়ে পড়লো।আর তিহান জেগে রইলো।কারণ রাত বারোটা বাজলেই মেসেজ,কল এগুলো সামলাতে হবে।জন্মদিন বলে কথা!আর এদিকে নিশাত শুয়েও ঘুমাতে পারছে না।ইচ্ছে করছে সবার আগেই উইশটা করতে কিন্তু সারপ্রাইজটা তো দেওয়া হলো না।তাই সারপ্রাইজ দেওয়ার লোভে উৎকন্ঠা টা হজম করে নিলো।
★
সকালে নাস্তা সেরেই তিহান বেরিয়ে পড়লো।বন্ধু মহলে আজ ওর বার্থ ডে সেলিব্রিট হবে।তাই যেতেই হবে।সারাদিন আড্ডা চলবে আর রাতে পার্টি।তিহান চেয়েছিলো নিশাতকে নিয়ে যেতে নিশাত মাথাব্যথার বাহানা দিয়ে রেহাই পেলো।তবুও তিহানের কড়া আদেশে মাথাব্যথা বেশি হলে ঔষধ খেতে আর ওকে কল করতে।
তিহান যাওয়ার পরই নিশাত রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়লো।তিতির খানকে বলল মেহেরদের বাসায় যাবে তাই আর উনি না করেন নি।নিশাত বেরিয়েই মেহেরকে কল দিলো।মেহের রিসিভ করে বলল”বের হইছো?”
“হ্যা তুমি রেডি তো?”
“হ্যা পাক্কা।চলে আসো।তুমি আসলেই বের হবো।”
“ওকে।”
নিশাত মেহেরের বাসায় পৌঁছাতেই দুজনে মিলে শপিং মলে গেলো।দুজনে মিলে গোল্ডের মধ্যে পাথর বসানো একটা সিম্পল রিং কিনলো।তারপর মল থেকে বেরিয়ে রিকশায় উঠলো।রিকশায় বসে মেহের বলল”কিভাবে দিবা?মানে প্ল্যান কি?”
“প্ল্যান হলো তনয়কে সব বলবো।ও আমাকে হেল্প করবে।আমি ছাদের ওপর সবকিছু ঠিক করে রাখবো।শুধু তনয়ের ছাদে আনার দায়িত্ব।”
“ইশ!আমিও যদি থাকতে পারতাম।” মেহের আক্ষেপ করে বলল।
“তাহলে এক কাজ করো তুমি আজ আমাদের বাসায় থাকো।”
“না গো।আজকে বিকেলে ভাবীদের বাসায় যেতে হবে।”
“আচ্ছা ঠিকাছে আমি তোমাকে সবকিছু বলবো পরে”
“ওকে।”মেহের মৃদু হেসে বলল।
তারপর নিশাত আর মেহের যে যার যার বাসায় চলে গেলো।বাসায় এসে তনয়কে বলার জন্য রুমে আসতেই তনয় বিছানায় শুয়ে শুশে বলল” থাক কিছু বলা লাগবো না মেহের বলছে আমারে।তা মাঝেমধ্যে আমারেও এমন সারপ্রাইজ দিলে আমি রাগ করমু না।”
“আমি মেহেরের তে কমু?”
“না থাক পরে সারপ্রাইজের খাতায় আগুন লাগায় দিবো।শাঁকচুন্নি একটা।”
নিশাত তনয়ের কথায় হেসে দিলো।
★
সব প্রস্তুতি শেষ।এখন শুধু তিহানের আসার পালা।নিশাত ছাদে দাড়িয়ে ওর অপেক্ষা করছে।আর মৃদু হাসছে।একটা টেবিলের ওপর মোমবাতি দিয়ে লাভ শেপ আকানো।পাশে কেক।আর আংটিটা নিশাতের হাতে।এমুহূর্তে ভিষণ লজ্জা লাগছে।কিভাবে তাকে প্রপোজ করবে সেটা নিয়েই বুকের মধ্যে তোলপাড় সৃষ্টি হচ্ছে।ইশ!তার সেই অভদ্র চাহনীর দিকে তাকাবে কিভাবে?ওই চাহনীটাই নিশাতকে এফোড় ওফোড় করে দেবে।
হঠাৎ নিশাতের কল বেজে উঠলো
নিশাত রিসিভ করে কানে দিতেই যা শুনলো তাতে ও আর দাড়িয়ে থাকার শক্তি পেলো না।ঠাস করে ফোনটা নিচে পড়ে গেলো।আর নিশাতও বসে পড়লো।
চলবে…..
(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।কেমন লাগলো জানাবেন।)