অভদ্র_প্রেমিক পর্ব-১৭

0
3312

#অভদ্র_প্রেমিক
#পর্বঃ১৭
#Arshi_Ayat

তিহান নাস্তার প্লেট টা সাইডের টেবিলের ওপর রেখে দৌড়ে আসাদ সাহেবের রুমে গেলো।কারণ ওইখানেই এবাড়ির প্রত্যেকটা রুমের এক্সট্রা চাবি আছে।তিহান দ্রুত গিয়ে চাবির গোছাটা নিয়ে আসলো।আর ঝটপট ওর দরজার লকটা খুলে ভেতরে গিয়ে এলোমেলো হয়ে ফ্লোরে পড়া নিশাতকে কোলে করে বিছানায় শুইয়ে দিলো।একমুহূর্তের জন্য তিহান ভেবেছিলো নিশাত হয়তো কিছু করে ফেলেছে এখন অস্থিরতা কম লাগলেও ওর জ্ঞান ফিরাতে হবে।তিহান পাশের পানির গ্লাসটা হাতে নিয়ে কয়েকবার ওর মুখে পানির ছিটা দিলো।নিশাত আধো আধো চোখে তিহানের দিকে চাইলো।তিহান ওকে ধরে বালিশের সাথে হেলান দিয়ে বসালো।তারপর বিধস্ত মুখের তিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ওর গালে হাত রেখে বলল”আমি নাস্তা আনছি খেয়ে নে।”

বলে উঠে যেতে নিলেই নিশাত তিহানের হাত বাধা দেয়।তিহান ওর দিকে চাইতেই নিশাত টলমল চোখে বলল”আ..আমি…. ”

তারপর আর কিছুই মুখ দিয়ে বের হলো না আবার জ্ঞান হারিয়ে ঢলে পড়লো তিহানের বুকে।তিহান ওকে শুইয়ে দিয়ে অয়নকে কল করলো।

“হ্যা দোস্ত বল।”

“ভাই একটু নিশাতদের বাসায় আসতে পারবি?ওর অবস্থা খুব খারাপ বারবার জ্ঞান হারাচ্ছে।”

“কেনো?” অয়ন চিন্তিত কন্ঠে বলল।

“খালামনি কাল রাতে মারা গেছেন।নিশাত সিচুয়েশন টা নিতে পারছে না।প্রচুর স্ট্রেসে আছে।”তিহান ধরা গলায় বলল।

” আচ্ছা আমি আসছি।”

অয়ন ঢাকাতেই ছিলো।কয়েকটা জরুরী অপারেশনে এটেন্ড করতে হবে তাই।তিহানের কথা শুনে একমুহূর্তও সময় নষ্ট না করে হাসপাতালে বলে নিশাতদের বাড়ির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লো।

তিহান নিশাতের পাশে বসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর ওর করুণ মুখের দিকে তাকিয়ে ভাবছে ‘সবসময় এই মেয়েটাই কেনো কষ্ট পায়?এতো ছোট বয়সে এতো কষ্ট আল্লাহ ওকে কেনো দিলেন?পৃথিবীতে বাবা মাই সব থেকে আপন হয় সন্তানের জন্য।”বাবা,মা”এই দুটো শব্দে জড়িয়ে থাকে হাজারো অনুভূতি আর ভালোবাসা।একবারে জীবনের প্রথম দিন থেকে এরা আমাদের পাশে থাকে।জীবনের কতখানি জায়গা দখল করে আছে তারা এটা প্রত্যেকটা সন্তানই জানেন।

অয়ন বাসার সামনে এসে তিহানকে কল দিলো।অয়নের কলে তিহানের ধ্যান ভাঙলো।ফোন রিসিভ করে বলল”হ্যা বল।”

“বাসার সামনে আছি।তুই একটু নিচে আয়।”

“আচ্ছা দাড়া আমি আসছি।”

তিহান চোখ মুছে নিশাতের রুমে দরজাটা ভেজিয়ে নিচে চলে গেলো।তারপর অয়নকে নিয়ে নিশাতের রুমে গেলো।ওদের পিছনে পিছনে তিতির খান আর তনয় আর আসাদ সাহেবও এলো।অয়ন নিশাতের পালস চেক করলে তারপর প্রেশার মেপে বলল”অতিরিক্ত স্ট্রেসের ফলে এমন হচ্ছে।ও একটা বড় ধরনের ট্রমা তে চলে গেছে।ওর মস্তিষ্ক মৃত্যুটা মেনে নিতে পারছে না।যতোবারই মনে পড়ে ততবারই ব্রেনে প্রেশার পড়ে আর ও জ্ঞান হারায়।”

তিহান কিছু বলবে তার আগেই আসাদ সাহেব কান্না কন্ঠে বলল”ওকে কি ভালো করা সম্ভব না?”

অয়ন বলল”দেখুন এই ট্রমা থেকে বের হতে অনেক সময় লাগবে ওর।আর এই সময়টা খুব ডেঞ্জারাস।অনেক কিছু হতে পারে।হয়তো মানসিক চাপের ফলে স্মৃতি হারিয়ে ফেলতে পারে।অথবা সুইসাইড এর মতো কাজও করতে পারে।এখন একটাই করণীয় ওকে আলাদা থাকতে দেওয়া যাবে না।খাওয়া দাওয়ার যত্ন নিতে হবে এবং সর্বক্ষণের জন্য একজনের সঙ্গ প্রয়োজন।”

অয়ন কথা শেষ করতেই তিহান বলল”দোস্ত এখন ওকে কি করবো?ও যে বারবার জ্ঞান হারাচ্ছে।”

“ওর এখন জ্ঞান ফেরানোর দরকার নেই কারণ এখন জ্ঞান ফেরালে ও আবার জ্ঞান হারাবে তার চেয়ে বরং আমি একটা স্যালাইন সেট করে দিচ্ছি।ওর জ্ঞান যখন ফিরবে সবাই ওর সাথে স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করবেন।কান্নাকাটি করবেন না।”

অয়ন আরো কিছুক্ষণ কথা বলে চলে গেলো।

নিশাতের জ্ঞান ফিরেছে দুপুরে।শোয়া থেকে উঠে হাতে স্যালাইন দেখে ভ্রু কুচকে চিল্লিয়ে উঠলো”মা মা কই তুমি?আমার হাতে এগুলা কেনো?”

নিশাতের চিৎকার শুনে তিহান আর তিতির খান দুজনেই এলো।ওদের দেখে নিশাত বলল”আমার মা কই?”

“আসছে তোর মা।”তিতির খান মাথায় হাত বুলিয়ে বলল।

” কই আসছে না কেনো?আমার হাতে এগুলা কি?”

“আরে তুই একটু অসুস্থ ছিলি তো তাই ডাক্তার এগুলো দিয়েছে।”তিহান বলল।

তিহান আর তিতির খান দুজনেই স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করছে।হঠাৎ নিশাতের দেয়ালের দিকে চোখ গেলো।নিহিতা বেগম আর নিশাতের একটা ফটো ঝুলছিলো।নিশাত ওটার দিকে তাকাতেই সাদা কাফনে মোড়ানো মায়ের মুখটা চোখের সামনে স্পষ্ট হতেই নিশাত আবার জ্ঞান হারালো।

ওর এই অবস্থা দেখে তিতির খান ঢুকরে কেঁদে উঠলো।আর তিহান অয়নকে আবার কল দিলো।

” হ্যা দোস্ত বল।কি অবস্থা ওর?”

“ভাই আমি কি করবো বল?মাত্রই জ্ঞান ফিরলো তারপর আবার জ্ঞান হারালো।”

“দোস্ত আমার মনে হয় না আর বাসায় রাখা ঠিক হবে ওকে।হসপিটালে এডমিট করতে হবে।দেরি করলে ক্ষতি হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।”

“আচ্ছা আচ্ছা আমি ওকে এক্ষুনি নিয়ে আসছি।”

তিহান ফোর রেখে নিজের মাকে সবটা বলল।তারপর আসাদ সাহেবকে জানালো।সন্ধ্যার দিকে নিশাতকে হসপিটালে ভর্তি করা হলো।

টানা চারদিন নিশাত বারবার জ্ঞান হারিয়েছে।আর যখনই জ্ঞান ফিরেছে তখনই চিল্লা চিল্লি করছে।হাত থেকে স্যালাইনের সুই খুলে ফেলছে।পাগলের মতো করছে আর সাথে সাথে জ্ঞান হারাচ্ছে।নিশাতের অজ্ঞানরত শুকিয়ে যাওয়া মুখটার দিকে তাকিয়ে তিহানের যে কি কষ্ট হয় সেটা তিহানই জানে।চোখের সামনে ভালোবাসার মানুষের কষ্ট সহ্য হচ্ছে না তিহানের।কিন্তু কিচ্ছু করতে পারছে না।

নিহিতা বেগম মারা গেছেন বিশদিন হলো।সবকিছু মোটামুটি স্বাভাবিক হয়ে গেছে।নিশাতকে এক সপ্তাহ পরেই বাসায় আনা হয়েছিলো।চেহারাট চঞ্চলতা সরে গিয়ে জায়গা দখল করেছে একরাশ বিষন্নতা।এখন জ্ঞান না হারালেও খুব বিষন্ন থাকে।দিনের বেলায়ও দরজা জানালা অফ করে রাখে।কারো সাথে কথা বলে না।শুধু তিহান ছাড়া।তবুও তিহানের একশটা কথার মাত্র একটা উত্তর পাওয়া যায়।নিশাত একরকম গুটিয়ে নিয়েছে নিজেকে।এখন আর কিছু ভালো লাগে না।ভার্সিটিতেও যায় না।সারাদিন দরজা জানালা বন্ধ করে ঘরে বসে থাকে।আর আসাদ সাহেব নিজের মতোই আছে।এই মৃত্যুতে তার কিছু আসে যায় না।তিহানের সন্দেহ হয়েছিলো মৃত্যুটা নিয়ে তবে মেডিকেল রিপোর্টে
স্পষ্ট ভাবে “ব্রেইন স্ট্রোক” লেখাটা পড়ার পর আর কিছুই বলার থাকে না।

সময় বহমান নদীর মতো।এর মধ্যে আরো ছয়দিন চলে গেছে।সবকিছু স্বাভাবিক হলেও নিশাত এখনো তেমনই আছে।তবে তিহানের চেষ্টার কোনো কমতি নেই ওকে স্বাভাবিক করার।তবুও কিছুতেই কিছু হচ্ছে না।তিতির খান আর তনয় ফিরে গেছে কুষ্টিয়া।

অয়নের সাথে দেখা করে আসতে আসতে আজকে দেরি হয়ে গেছে তিহানের।বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে নিশাতের ঘরে গিয়ে দেখলো ফ্যানের সাথে কেউ একজন ঝুলছে।পুরো রুম অন্ধকার।

চলবে…

(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।)