#অভদ্র_প্রেমিক
#পর্বঃ২৫
#Arshi_Ayat
“কি দেখছো এভাবে?” নিশাত হাসা বন্ধ করে বলল।
“আমার মায়াবিনীকে।” তিহান তৃপ্তির হাসি দিয়ে বলল।
তিহানের কথায় নিশাত লজ্জা পেয়ে অন্যদিকে তাকালো হাসলো।তিহান ওর মুখটা ঘুরিয়ে নিজের দিকে ফিরিয়ে নিয়ে বলল”যখন হাসবি তখন আমার দিকে তাকিয়ে হাসবি।”
“আমার লজ্জা করে।” নিশাত তিহানের বুকে মাথা রেখে বলল।
“আহারে আমার লজ্জবতি রে।” এটা বলে গাল টেনে দিলো।তারপর বলল”হুম এখন বল আসলি কিভাবে?আর সবটা জানলি কিভাবে?”
নিশাত তিহানের বুকে মাথা রেখেই শান্ত কন্ঠে বলতে লাগলো”প্রান্তরা আসায় সবাই ওদের নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে গেলো।আমি উঠে মায়ের রুমে গেলাম।কেনো জানি না মাকে খুব মনে পড়ছিলো।ওনার রুমে গিয়ে আলমারি খুলে মায়ের একটা শাড়ি নিলাম।যেটা আমি পছন্দ করে কিনে দিয়েছিলাম মাকে।এই শাড়িটা আম্মু প্রায়ই পড়তো।শাড়িটা বুকে জড়াতেই চোখ ফেটে জল আসতে লাগলো।কিন্তু বেশিক্ষণ থাকতে পারলাম না আমার একফ্রেন্ড এসে তাড়া দিতে লাগলো।আমি মায়ের শাড়িটা রেখে আলমারিটা বন্ধ করে যেতে নিলেই একটা খাম দেখতে পেলাম।কৌতুহল বশত খামটা উঠাতেই তার ওপর আমার মায়ের হাতের লেখা দেখতে পেলাম।খামের ওপর লেখা”’নিশাতের জন্য””।আমি চিঠিটা খুলে ফেললাম।তার পড়া শুরু করলাম।
বাবুই,
তুই এই চিঠিটা অবশ্যই পড়বি।আমার শরীর খুব খারাপ লাগছে।আমি হয়তো আর বাচবো না।তাই চিঠিটা লিখলাম।তোকে ফোন করলে তুই কেঁদে কেটে ভাসিয়ে ফেলবি তাই আর ফোন করি নি।তোকে আমি একটা কথা লুকিয়েছি।এটা আমার জীবনের সবচেয়ে বড়ভুল।সেটার খেসারত আমি আজ দিচ্ছি।পারলে আমাকে ক্ষমা করিস বাবুই।তোর বাবা তোর জন্মের ছয়মাস পরই মারা যায়।তোর বাবা মারা যাওয়ার পর আমি একবারে ভেঙে পড়ি।আমার অবস্থা দেখে তোর নানু আসাদের সাথে জোর করে আমাকে বিয়ে দেয়।আমি বিয়ে করতে চাই নি কিন্তু আমার কোনো কথাই শোনে নি তারা।এরপর আসাদকে বিয়ে করলাম।আসাদকে নিয়ে এই বাসায় থাকতে লাগলাম।ও কখনো ওর বাবা মার সাথে আমার দেখা করায় নি।জিগ্যেস করলে বলতো ওর নাকি বাবা মা নেই।প্রথম প্রথম এগুলো জিগ্যেস করলেও পরে আর জিগ্যেস করি নি।আসাদ তোকে মেনে নিয়েছিলো।আমাদের দিন ভালোই চলছিলো।আমি কখনো ভাবি নি যে তোকে তোর সম্পত্তির জন্য মেনে নিয়েছিলো।হ্যা তোর বাবা তোর নামে সম্পত্তির ৩০% আর তোর স্বামীর নামে ৭০% লিখে দিয়েছে।আর সেইজন্যই ও তোকে মেনে নিয়েছিলো ও তোকে ওর আগের বউয়ের ছেলের সাথে বিয়ে দিয়ে সম্পত্তি হাতিয়ে নিতে চেয়েছিলো।আমি কখনো ভাবতে পারি নি ও এমন করবে।আমি জানতামও না এসব কিন্তু কাল রাতে আমি ওর আর ওর ছেলের সব কথা শুনতে পাই।ও জানে না আমি যে সব জানি।বিশ্বাস কর মা আমি অনেক কষ্ট পেয়েছি।আমি এটা নিতে পারছিলাম না।আমার নিশ্বাস আটকে আসছিলো।আমি আর লিখতে পারছি না।এখন আমার ঘুম প্রয়োজন।এটাই হয়তো আমার শেষ ঘুম।আমি হয়তো আর ঘুম থেকে উঠবো না।কিন্তু আমি চাই তুই এই চিঠিটা পড় আর এটা যাতে কোনোভাবেই ওই জানোয়ারের হাতে না পড়ে।আর শেষে আরেকটা কথা বলবো,তুই তিহানকে বিয়ে করবি।ও তোকে অনেক ভালোবাসে।আমি ওর চোখে তোর জন্য ভালোবাসা দেখেছি।এই পৃথিবীতে আমার পর যদিও কেউ তোকে সত্যিকারে ভালোবাসে তাহলে সেটা তিহান!ভালো থাকিস।
ইতি তোর “মা”
নিশাত একটানে সবটা বলে থামলো।আর তিহান সবটা শুনে দীর্ঘশ্বাস ফেললো।একটা চিঠি কতো কিছু বদলে দিলো।যদি নিশাত এই চিঠিটা না পেতো তবে কি হতো!হয়তো ওপরওয়ালা এটাই ঠিক করে রেখেছিলো ওদের কপালে তা নাহলে বিয়ের আসর থেকে কোনো মেয়ে পালিয়ে এসে আরেকজনকে বিয়ে করে!
তিহান কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবার বলতে শুরু করলো”জানো ওই চিঠিটা পড়ে আমার অনেক কান্না পেয়েছিলো।আমি বসে পড়েছিলাম কাঁদতে কাঁদতে।বেশ কিছুক্ষণ হওয়ার পর আমি না যাওয়ায় মিরাজ ভাইয়া এসে বলল আমাকে নাকি ডাকছে।আমি মিরাজ ভাইয়ার হাতটা ধরে কাদতে কাদতে বললাম’ভাইয়া আমাকে বাচান!আমি এই বিয়ে করবো না।’মিরাজ ভাইয়া আমাকে স্বান্তনা দিয়ে আমার ঘরের বারান্দায় যেতে বললেন।আমি আমার ঘরের বারান্দায় গিয়ে দেখলাম মিরাজ ভাইয়া আমার বারান্দায় মই ধরে আছে।আমি মই ধরে দ্রুত নিচে নামলাম।এদিকটা কেউ ছিলো না তেমন তাই সমস্যা হয় নি।মিরাজ ভাইয়া বাড়ির পেছনের সাইটে নিয়ে এসে একটা ছোট গেট খুলে দিয়ে বললেন’যাও তুমি।আমি দেখছি এদিকটা।’
আমি মিরাজ ভাইয়াকে ধন্যবাদ দিয়ে রাস্তা ধরে দৌড়াতে লাগলাম।”
এতটুকু বলে নিশাত আবার থামলো।তিহান নিশাতের কপালে আরেকটা চুমু দিয়ে বলল”বাহ!আমার বউটা এতো সুন্দর করে পালালো।যাইহোক মিরাজকে একটা ট্রিট দিতেই হবে।”
নিশাত মুখ ভার করে বলল”আমাকে ট্রিট দিবা না?”
“আমি তো তোরই।”
নিশাত তিহানের কথায় হাসলো।আর বলল”পাগল।”
“পাগল তোর জন্যে রে পাগল এ মন।” এতটুকু বলে হাসলো।
এভাবেই দুজনে হাসাহাসি,ঝগড়া,খুনশুটি দিয়ে রাত পার করলো।সারা রাত কেউই ঘুমায় নি।তাই সকাল সকাল নামাজ পড়ে দুজনই ঘুমিয়ে পড়লো।
★★★
দেয়াল ঘড়িতে দশটা পয়তাল্লিশ বাজে।অনেক বেলা হয়ে গেছে।নিশাত চোখ কচলাতে কচলাতে উঠে বসলো।পাশে তাকাতেই দেখলো তার দিওয়ানা বর তার শাড়ির আচল নিজের হাতে বেধে রেখে ঘুমাচ্ছে।নিশাতের হাসি পেলো।যেনো নিশাত পালিয়ে যাবে তাই তিহান ওর শাড়ির আচল বেধে রেখেছে।নিশাত তিহানের মুখের ওপর ঝুকে টুক করে ঠোঁটে আলতো একটা চুমু দিয়ে চুলে হাত বুলিয়ে কানে কানে বলল”আমার দিওয়ানা বর এবার উঠুন।অনেক বেলা হয়ে গেছে।”
তিহানের সাড়াশব্দ নেই।নিশাত আরো কয়েকবার ডাকার পরও না ওঠায় ও আর না ডেকে নিজের আচলটা তিহানের হাত থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে তিহান এখনো ঘুমাচ্ছে।নিশাত এবার তিহানকে কাতুকুতু দিতে লাগলো।এতে কাজও হলো তিহান একটু নড়েচড়ে উঠলো।নিশাত উৎসাহ পেয়ে আরো দিতে লাগলো।তিহানের ঘুম ভেঙে গেলো।ও এক ঝটকায় নিশাতকে নিজের বুকের ওপর এনে ফেললো।তারপর বলল”আমাকে খুব মিস করছিস তাই না?”
“একদম না।আমিতো আমার অভদ্র প্রেমিকটাকে মিস করছিলাম।” নিশাত হেসে বলল।
তিহান দুষ্টু হেসে নিশাতের কোমড় জড়িয়ে ধরলো।তারপর বলল”আমি সারাজীবন তোর কাছে অভদ্র’ই থাকবো।”
“আমিও সেটাই চাই।” নিশাত চোখ মেরে বলল।
তিহান হাসলো।তারপর উঠে বসে নিশাতকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল”আমি যে কতোটা খুশী তোকে কিভাবে বলো বোঝাবো?”
নিশাত হেসে বলল”আচ্ছা এখন যাও ফ্রেশ হয়ে আসো।অনেক বেলা হয়ে গেছে।রুমি ভাবি কি মনে করবে বলো তো।”
তিহান ওয়াশরুমে যেতে যেতে বলল”কিছুই মনে করবে না।কাল আমাদের বাসর রাত ছিলো।যদিও বাসর হয় নি।”বলেই দুষ্টু একটা হাসি দিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।নিশাত দরজা খুলতেই দেখলো রুমি সোফায় বসে কার সাথে যেনো কথা বলছে।নিশাতকে দেখে ফোনটা রেখে দিয়ে মুচকি হেসে বলল”কি গো ঘুম ভাঙলো?”
নিশাত একটা লজ্জা মিশ্রিত হাসি দিলো।রুমি ওর মুখের দিকে তাকিয়ে জোরে হেসে দিয়ে বলল”লজ্জা পেয়ো না।আসো বসো নাস্তা করো।আর তিহান উঠেছে?”
“হ্যা ফ্রেশ হচ্ছে।”
“আচ্ছা আমি নাস্তা দিচ্ছি টেবিলে।তিহানকে নিয়ে আসো।”
তিহান ফ্রেশ আসতেই নিশাত আর তিহান নাস্তা করে উঠতে নিলেই কে যেনো দরজায় নক করলো।রুমি গিয়ে দরজা খুলতেই পুলিশ ঢুকলো ঘরে।ঘরে ঢুকেই বলল”তাশরীফ খান তিহান কি আছেন?”
নিজের নামটা কানে আসতেই তিহান ড্রাইয়িং রুমে এসে দেখলো পুলিশ।সাথে নিশাতও এলো।ওরা দুজনই অবাক পুলিশকে দেখে।তিহান কিছুটা বিষ্ময় কাটিয়ে বলল”জ্বি আমিই তাশরীফ খান তিহান।”
“আপনার নামে রেপ এবং কিডন্যাপিংয়ের মামলা করা হয়েছে।”
“কিন্তু আমি আমি তো এগুলো কিছুই করি নি।” তিহান বিচলিত হয়ে বলল।
“কিন্তু আপনার নামে আসাদ রহমান মামলা করেছেন।আপনি তার মেয়ে নিশাত রহমানকে করে কিডন্যাপ করে রেপ করেছেন।এমন অভিযোগ আনা হয়েছে আপনাদের বিরুদ্ধে।”
অফিসারের কথা শুনে নিশাত তিহান দুজনকেই চিন্তিত হয়ে গেলো।রুমি এই অবস্থা দেখে অয়নকে কল দিয়ে ইমার্জেন্সি আসতে বললো।ইন্সপেক্টর আবার বলল”আপনাকে আমাদের সাথে থানায় যেতে হবে।”
ইন্সপেক্টর কথা শেষ করতেই নিশাত বলল”আমিই নিশাত রহমান।আর তাশরীফ খান তিহান আমার স্বামী।তার ওপর আনা অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।কাল রাতে আমাদের বিয়ে হয়েছে।নিশাত নিজের ফোন থেকে অফিসারদের কাবিনা নামার ছবি দেখাতে যাবে এমন সময়ই ওখানে আসাদ সাহেব উপস্থিত হলেন।
চলবে….
(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।)