#অভদ্র_প্রেমিক
#পর্বঃ২৬এবং শেষ
#Arshi_Ayat
আসাদ সাহেবকে দেখে নিশাত আর তিহান দুজনেই তার দিকে তাকালো।নিশাতের চোখেমুখে স্পষ্ট রাগ!আসাদ সাহেব অফিসারকে বলল”এই ছেলেটা আমার মেয়ের সর্বনাশ করেছে।ওকে নিয়ে… ”
আর কথা শেষ করতে পারলো না আসাদ সাহেব তার আগেই নিশাত রাগে চিৎকার করে বলল”স্টপ!”
নিশাতের চিৎকারে আসাদ সাহেব চুপ হয়ে গেলো।নিশাত আসাদ সাহেবের দিকে কঠিন দৃষ্টি দিয়ে বলল”কে আপনার মেয়ে?আমিতো আপনার মেয়ে নই।আপনি আমার বাবা নন।আপনি আমার মায়ের দ্বীতিয় স্বামী।তিহান জোর করে আমাকে বিয়ে করে নি আমি স্বেচ্ছায় তাকে বিয়ে করেছি।সে আমার স্বামী।”
নিশাত এটা বলে ফোন থেকে অফিসারদের কাবিনের ছবিটা দেখালো।আসাদও দেখলো।ছবিটা দেখে ওর ভেতরে ভয় চলে এলো।তবুও পরিস্থিতি সামলানোর জন্য বলল”নিশাত মা কি বলছো?আমিই তো তোমার বাবা।আর তুমি ভয় পাচ্ছো কেনো বলে দাও তিহান তোমাকে জোর করে বিয়ে করেছে।”
“ও জোর করার কে?আমার সম্মতি না থাকলে ও আমাকে জোর করলেও বিয়ে করতে পারতো না।আর বাংলাদেশের নিয়ম অনুযায়ী প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তিরা নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নেয়।সো আমি আমার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাকে বিয়ে করেছি।এখানে আপনি বলার কে?আপনিতো আমার বাবাও না।”
এবার আসাদ সাহেব ইন্সপেক্টরকে বলল”অফিসার ওই ছেলেটা আমার মেয়েকে মিথ্যা বলতে বাধ্য করছে।আপনি ওকে নিয়ে যান।”
নিশাত বলল “পারলে নিয়ে গিয়ে দেখান।আর আপনারা প্রমাণ ছাড়া কোন সাহসে আমার স্বামীকে নিয়ে যেতে এসেছেন।এই লোকটা যে তিহানের নামে এতো অভিযোগ এনেছে এগুলোর কি প্রমাণ আছে তার কাছে?সুষ্ঠ প্রমাণ নিয়ে তারপর আসবেন।”
ইন্সপেক্টর নিশাতের কথার মারপ্যাঁচে পড়ে আর কিছু বলতে পারলো না।তাই সে আসাদ সাহেবকে বলল”মিস্টার আসাদ মিসেস তিহান ভুল কিছু বলে নি।প্রমাণ ছাড়া আমরা কারো বিরুদ্ধে কোনো অ্যাকশন নিতে পারবো না।”
এবার নিশাত বাকা হেসে বলল”ইন্সপেক্টর এই লোকটাকে এরেস্ট করুন।এই লোকটা আমার সম্পত্তির জন্য আমাকে তার আগের বউয়ের ছেলের সাথে বিয়ে দিতে চেয়েছিলো।আমার কাছে এর প্রমাণ আছে।”
এই বলে নিশাত ঘরে চলে গেলো।আর ওর বেনারসি শাড়ির আচলের বাধনের সেই চিঠিটা নিয়ে ফিরে এলো।এটা ইন্সপেক্টরের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল”আমার মা মৃত্যুর আগে সব বলে গেছেন এই চিঠিতে।আর আপনি আমার আর এই লোকটার ডি এন এ চেক করতে পারেন।আর মিস্টার আসাদের ছেলে প্রান্ত উত্তরায় থাকে।আমি এড্রেস দিচ্ছি।”
নিশাত প্রান্তর এড্রেস দিয়ে দিলো।ইন্সপেক্টর আসাদ সাহেবকে এরেস্ট করে সেখান থেকে চলে গেলো।
★★★
এতক্ষণ সবকিছু নিশাত একাই করছিলো।তিহান একটা কথাও বলে নি।যেখান তার বউই সবাইকে নাজেহাল করে দিছে সেখান আর তার যাওয়ার দরকার নেই।তাই তিহান নিশ্চিন্তে দাড়িয়ে ফোন টিপছিলো।নিশাত তিহানকে ফোন টিপতে দেখে কপট রাগ দেখিয়ে বলল”ফোন টিপছো কেনে?এখনই তো তোমায় ধরে নিয়ে যেতো।”
তিহান হেসে বলল”কারো সাহস আছে নাকি আমাকে নিয়ে যাওয়ার!আমার মিসেস আছে না!”
তিহানের কথায় নিশাতও হেসে দিলো সাথে রুমিও।ওদের হাসির মাঝেই অয়ন এসে চিন্তিত কন্ঠে বলল”কি হয়েছে রে?”
এবার রুমি বলল”আহা!তোমার এপিসোড টা মিস হয়ে গেলো।ব্যাপার না আমি তোমাকে পরে বলবো।”
তারপর নিশাত আর তিহান ওদের থেকে বিদায় নিয়ে নিজেদের বাসায় চলে এলো।
★★★
তিহান আর নিশাত জোরে জোরে হাঁটছে।তা নাহলে ট্রেন মিস হয়ে যাবে।আজ দুজনই ঘুম থেকে উঠতে লেট করেছে তাই দেরি হলো।এই দশদিনে পুলিশি ঝামেলা সমাধান করে এখন কুষ্টিয়ার পথে যাত্রা হলো দুইজন।ইতিমধ্যে সবাই জানে বিয়ের খবর।কিন্তু কেউ মানে নি।তাদের কথা দাওয়াত ছাড়া বিয়ে মানি না।তিতির খানও বলেছেন কুষ্টিয়া আসতে ওদের বিয়ে আবার দেবেন।সেই উদ্দেশ্যেই কুষ্টিয়া যাত্রা।
আর সব প্রমাণের ভিত্তিতে আসাদ সাহেবকে তিনবছরের জেল দিয়েছে আদালত।আর প্রান্তকে ধরতে পারে নি সে পালিয়েছে।
ট্রেন স্টেশনে এসে দুজনই দৌড়াচ্ছে।ট্রেন ইতিমধ্যে ছেড়ে দিয়েছে।নিশাত আর তিহান দুজনে দুজনের হাত ধরে দৌড়াচ্ছে।কাধে দুজনের ব্যাগ।দৌড়াতে দৌড়তে তিহান ট্রেন ধরতে পারলো।নিজে উঠে নিশাতকেও টেনে উঠালো।ট্রেনে উঠে দুজনই দুজনকে জড়িয়ে ধরে হেসে দিলো।দুজনেরই হৃদপিণ্ড ফুল গতিতে ছুটছে।শেষ বগির দরজার সাথে তিহান হেলান দিয়ে আছে আর নিশাত ওর বুকে মাথা রেখে দাড়িয়ে আছে।বাতাসে দুজনের নিশাতের চুলগুলো উড়ছে।তিহান ঠিক করছে না প্রেয়সীর চুল কারণ এই অভদ্র চুলগুলোই তিহানের ভালো লাগছে।সবসময় ভদ্রতা মানায় না।
★★★
নিশাত তিহানের ঘরে বসে আছে বউ সেজে।একটু আগে তনয়,তিতির খান আর মেহের ওকে দিয়ে গেছে।আজ আবার তাদের বিয়ে হলো।খুব ধুমধামে।ঢাকা থেকে ফিরে তিতির খানের কথা রাখতে গিয়ে আবার বিয়ে হলো এছাড়াও তিহানের বন্ধুবান্ধবরাও চাইছিলো।তিহান এখনো আসে নি।বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে।আর নিশাত বসে বসে বোরিং হচ্ছে।আর বসে থাকতে ভালো লাগছে না।তাই বারান্দার গ্রিল ধরে দাড়িয়ে রইলো।আজ বাইরে চাদের আলোশ ঝলমল করছে!আজ বোধহয় পূর্ণিমা।হঠাৎ তিহান পিছন থেকে নিশাতকে জড়িয়ে ধরলো।নিশাত কিছুটা কেঁপে উঠলো।তিহান কানেকানে বলল”যাবি?”
নিশাত মৃদু কন্ঠে বলল “কোথায়?”
“বিশ্বাস আছে?”
“আছে।”
“তাহলে চল।”
তারপর নিশাত আর তিহান ফ্রেশ হয়ে একসাথে নানাজ পড়ে।কাপড় পাল্টে বেরিয়ে পড়লো।নিশাত এখনো জানে না সে কোথায় যাচ্ছে!তিহান নিশাতকে গরাই নদীর তীরে নিয়ে এলো।ঘাটে নৌকা বাধা।তিহান নিশাতের হাত ধরে বলল”নৌকায় ওঠ।”
নিশাত নৌকায় উঠলো।সাথে তিহান উঠলো।নিশাত ভ্রু কুচকে বলল”নৌকা চালাবা কে?”
“আজ এই নৌকার মাঝি আমি আর তুই মাঝির বউ।”
নিশাত হাসলো।পূর্ণিমার আলোয় ওর হাসিটা অপরুপ লাগছে তিহানের কাছে।গরাই নদীর বুক চিরে জোৎস্না বিলাস করছে এক জোড়া সুখপাখি।আসলেই ভালোবাসা অনিন্দ্য সুন্দর।তিহান নৌকা বাইতে বাইতে গান ধরলো
“ভালোবাসবো বাসবো রে বন্ধু
তোমায় যতনে।”
তাদের ভালোবাসাগুলো যেনো যত্নে থাকে।
সমাপ্ত
(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।কেমন লাগলো সম্পূর্ণ গল্পটা জানাবেন।সাইলেন্ট রিডার রাও জানাবেন।সর্বশেষে সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা। )