#ভালোবাসি
#পর্বঃ৯
#Tanisha Sultana (Writer)
আজ তুলির এসএসসি পরিহ্মা। এই এক বছরে সব কিছু পাল্টে গেছে। শুধু পাল্টায়নি তুলি আর সায়ানের সম্পর্কটা। তুলি আর সায়ান দুজন দুই পান্তে।
তুলি খাচ্ছে আর বই পরছে। সায়ান খাচ্ছে আর আরচোখে তুলিকে দেখছে। খাওয়া শেষে তুলি স্কুল ড্রেস পরছে আর আয়না দেখছে
“ইশ মোটা হয়ে গেছি। সবাই পড়ার চাপে রোগা হয় আর আমি মোটা হই।
” আয়না দেখা শেষ হলে চল
সায়ানের কথায় তুলি আয়না ছেড়ে সায়ানের দিকে তাকায়
“সরি বুঝতে পারলাম না
” কালা না কি তুই? তোকে আজ আমি নিয়ে যাবো
“সূর্য মেবি আজ ওঠে নি তাই না
” এমন কেনো মনে হচ্ছে তোর
“না মানে এতোদিন তো কত বলতাম আপনি আমাকে ধমক দিয়ে বলতেন নিজের কাজ নিজে করতে শেখ। তো আজ এই পরিবর্তন কেনো?? ওহহহ বুঝতে পেরেছি এক্সাম শেষে তো আমি চলে যাবো তাই এখন নিয়ে যেতে চাইছো
” তুই এতো কথা বলিস কেনো? একটু চুপ থাকতে পারিস না
“আল্লাহ মুখ দিছে কথা বলার জন্য চুপ থাকবো কেন?
” অলরেডি নয়টা বারো বাজে। দশটায় তোর এক্সাম
“ওহহহ আমার হয়ে গেছে
ফাইলটা হাতে নিয়ে তুলি দৌড়ে বেরিয়ে যায়।
সায়ান তুলির হাত ধরে গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। সায়ানের বিহেব তুলির অবাক লাগছে। আজ এতো কেয়ার কেনো করছে।
সায়ান তুলিকে পরিহ্মার হলে পৌঁছে দিয়ে চলে যায়। এক্সাম শুরুর আগে রিক তুলির সাথে দেখা করে গেছে।
রিক আর সায়ান পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে
” ভাইয়া,কিছু বলবেন
“তুমি তুলিকে ভালোবাসো
” কেনো বলেন তো
“বলো না। সত্যি বলবে
” হুম বাসি
“আর তুলি
” ও বাসে না। আমাকে জাস্ট ফ্রেন্ড ভাবে
“বিয়ে করবে তুলিকে
” তুলি তো আপনার বউ
“হুম শুধু নামে। আমি কখনো তুলিকে ছুঁয়েও দেখি নি।
” আমি জানি
“আমর থেকে তুলি অনেক ছোট। আমার সাথে ওর যায় না। কিন্তু তোমার সাথে তুলিকে খুব মানাবে। তুমি আর তুলি পারফেক্ট জুটি।
” কিন্তু ভাইয়া
“ডিভোর্স পেপার রেডি করা আছে। তুলিকে দিয়ে সাইন করিয়ে নেবো
” আর আপনি
“আমি মায়াকে বিয়ে করে নেবো।
রিক সায়ানকে জড়িয়ে ধরে।
” ধনী ভাই। আমি তুলিকে ভীষণ ভালোবাসি
এক্সাম শেষে তুলি সায়ানের খোঁজে এদিকে এসেছিলো তাই ওদের সব কথা তুলি শুনে ফেলে। খুব কান্না পাচ্ছে তুলির। দৌড়ে বাড়ি চলে যায়।
সায়ান তুলিকে স্কুলে খুঁজে না পেয়ে বাড়ি ফিরে যায়। তুলির ঘরের দরজা বন্ধ। সায়ান কিছুখন ডাকাডাকি করে কিন্তু তুলি দরজা খোলে না। তুলির কোনো শারা না পেয়ে সায়ান চলে যায়
“আমাকে সায়ান ডিভোর্স দিয়ে দেবে এতে আমার এতো কান্না পাচ্ছে কেনো? দিক না ডিভোর্স তাতে আমার কি? উনি মায়া আপুকে বিয়ে করবে বলে আমাকে রিকের সাথে বিয়ে দিয়ে দেবে। আমি রিক কে বিয়ে করবো না। আমি চলে যাবো।
তুলির কান্নার বেগ বাড়িয়ে দেয়। মানুষ এতো স্বার্থপর কেনো হয়? সব সময় নিজের ভালোটা দেখে। চারপাশের মানুষদের নিয়ে ভাবার সময়ই নেই।
তুলি পরতে বসে। এক্সাম শেষ হলেই তুলি চলে যাবে। এই কয়দিন আর সায়ানের মুখোমুখি হতে চায় না তুলি।
রাত বারোটা সায়ান বেলকনিতে বসে সিগারেট খাচ্ছে। সিগারেটটা শেষ হলেই তুলির রুমে যাবে। প্রতিদিনই সায়ান তুলির রুমে যায়। তুলির ঘুমন্ত চেহারাটা দেখা সায়ানের অব্ভাস হয়ে গেছে। তুলি দরজা বন্ধ করে শুয়েছে তাই সায়ান বেলকনি দিয়ে তুলির রুমে যায়। চেয়ার টেনে তুলির পাশে বসে। কেনো বসে আছে সায়ান নিজেও জানে না।
ফোন বেজে ওঠে সায়ানের। ফোনের স্কিনে মায়া নামটা লেখা। ফোন হাতে নিয়ে নিজের রুমে চলে আসে সায়ান
” বলো
“কি করছো
” কিছু না
“শোনো না আমি তোমার বাসায় আসি
” এতো রাতে কেনো?
“বাবা,মা বাড়িতে নেয়। একা প্লিজ আসি না
” মায়া তুলি কি ভাববে
“পিচ্চি একটা,মেয়ে। ও কি ভাববে? আমি তুলিকে বুঝিয়ে বলবো
কলিং বেল বাজায় সায়ান দরজা খুলতে যায়। তুলি পানি খেতে উঠছিলো এতো রাতে কে এসেছে এটা জানতে উঁকি দেয়। দেখে মায়া এসেছে। সায়ান আর মায়া কথা বলছে। তুলি আবার দরজা আটকে ফেলে। কষ্টে তুলির বুকটা ফেটে যাচ্ছে।
আজ এক্সাম শেষ। সায়ান অফিসে গেছে। এই সুযোগে তুলি জামাকাপড় গুছিয়ে বেরিয়ে যায়। যাওয়ার আগে পুরো বাড়িটা একবার ভালো করে দেখে নেয়।
বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে আছে তুলি। হাতে দুটো ব্যাগ। কোন বাসটা মানিকগঞ্জ যাবে এটাই বুঝতে পারছে না তুলি। এদিকে ওদিকে তাকিয়ে খুঁজছে।অবশেষে একটা বাস পায় মানিকগঞ্জ টু ঢাকার।
তুলি এক দৌড়ে বাসে ওঠে। এই প্রথম একা একা এতোটা রাস্তা যাবে তুলি। একটু একটু ভয় করছে। তুলি একদম পেছনের ছিটের আগের ছিটে বসেছে। পেছনের ছিটে কে বসেছে দেখার জন্য উঁকি দেয় তুলি। দেখে তুলির বাবা বসে আছে আর তার সাথে তুলির থেকে বয়সে ছোট একটা ছেলে আর একজন মহিলা। তুলি সামনে তাকায়। তুলির বাবা তুলিকে দেখে নি।
বাড়িতে এসে কলিং বেল বাজাতেই সায়ানের মা দরজা খুলে দেয়।
” তুলি তুই
সায়ানের মা একটু জোরেই বলে। তুলির মা সায়ানের বাবা সায়ানের বোন রুহি আর দাদু চলে আসে। তুলি সায়ানের মা কে ঠেলে ভেতরে ঢুকে সোফায় বসে পরে। তুলির মা তুলির পাশে বসে। আরেকপাশে তুলির দাদু বসে। তুলির দাদু বলে
“তুমি একা কেনো? সায়ান কোথায়?
” জানি না
“জানিস না মানে কি তুলি?
” জানি না মানে জানি। তোমরা আমাকে কি পেয়েছো বলোতো সবাই মিলে সায়ান ভাইয়ার সাথে বিয়ে দিয়ে দিলে। সায়ান ভাইয়া আবার অন্য একটা ছেলে ঠিক করেছে আমাকে বিয়ে দেওয়ার জন্য। আবার আমার বাবা মানে তোমার ছেলে সে আবার বউ বাচ্চা নিয়ে সব সময় আমার সামনে দিয়ে ঘুর ঘুর করবে।
কি ভাবো বলোতো আমাকে তোমরা? আমি ছোট বলে যা খুশি করবে। আমি সায়ানের সাথে ফিরবো না ইনফেক্ট সায়ান ভাইয়া কে আমার চোখের সামনেও দেখতে চায় না
চিৎকার করে কথা গুলো বলে তুলি নিজের রুমে চলে যায়। উপস্থিত সবাই তুলির কথা শুনে চুপ হয়ে গেছে
আজ সায়ানের বাড়ি ফিরতে দেরি হয়ে যায়। ইমপটেন্ট একটা মিটিং ছিলো। বাড়িতে ঢুকে সায়ানের কেমন জানি ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। কারণ প্রতিদিন এই সময় বাড়ি ফিরে দেখে তুলি কার্টুন দেখছে আর খাচ্ছে। কিন্তু আজ তুলি নেই। সায়ান তুলির রুমে গিয়ে দেখে তুলি তো দুরের কথা তুলির একটা জামাও নেই।
সায়ান দৌড়ে গেটের কাছে এসে দারোয়ানকে জিজ্ঞেস করে
“চাচা তুলিকে দেখেছেন
” হহ তুলি আফামনি তে দুপুরেই ব্যাগপএ নিয়ে চলে গেছে
চলে গেছে শুনে সায়ানের বুকের ভেতর মোচর দিয়ে ওঠে। রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দেয় সায়ান। সিগারেট ধরায়। তুলি চলে গেছে শুনে তো খুশি হওয়ার কথা কিন্তু আমার এতো খারাপ লাগছে কেনো? কম তো কষ্ট দেই নি পিচ্চি টাকে।
নিজের মনে কথাগুলো ভাবছে সায়ান।
ফ্রেশ হয়ে খাবার টেবিলে বসে
“মা খেতে দাও
সাওনের মা তুলির জন্য খাবার নিয়ে আসে। তুলির সামনে রাখতেই তুলি খাওয়া শুরু করে
” সায়ান তোকে ভালোবাসে
তুলি খাওয়া থামিয়ে বলে
“নাহহ। মায়া আপু ফিরে এসেছে এখন আমাকে ডিভোর্স দিয়ে তাকে বিয়ে করবে
” কিহহহ
“হুম। তোমার ছেলে খুব খারাপ
ফুপিয়ে কেঁদে ওঠে তুলি। সায়ানের মা তুলিকে জড়িয়ে ধরে
“কাঁদিস না সোনা
” জানো আমাকে মেরেছে। একদিন পার্টিতে নিয়ে গিয়ে ফেলে এসেছিলো।
“তোকে আর সায়ানের সাথে থাকতে হবে না। ও চাইছে তো ডিভোর্স দিতে। ঠিক আছে আমি তোকে রাজপুত্রের মতো ছেলের সাথে বিয়ে দেবো
বিয়ে কথাটা শুনে তুলি সায়ানের মাকে ছেড়ে দেয়
” আমি কখনো বিয়ে করবো না
না খেয়েই উঠে পরে তুলি।
নিজের রুমে এসে দেখে দাদু বসে আছে
“দাদু তুমি
” এক্সাম কেমন হয়েছে
“ভালো
” তোমার বাবা তোমার সাথে কথা বলেছে
“ওনার বিষয়ে কিছু শুনতে চায় না
” ঠিক আছে
দাদু চলে যায়। তুলি দরজা আটকে দেয়।
চলবে