পরিণীতা পর্ব-০২

0
3533

#পরিণীতা
#নাহিদা ইসলাম
পর্ব ২

৪.
চোখ খুলে নিজে হাসপাতালে আবিষ্কার করলাম। হাত পা নাড়াতে পারছিনা।শরিরে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব হচ্ছে। পাশ ফিরে তাকাতেই দেখলাম আমার থেকে বয়সে একটু বড় হবে একটা মেয়ে।আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো, কেমন লাগছে এখন।
আমি এখানে আসলাম কেমন করে।

আরে রিলাক্স এতো উত্তেজিত হচ্ছো কেনো। মুহুর্তে ই একটা নার্স এসে বললো আপনার বোনকে বাসায় নিয়ে যেতে পারেন উনার তেমন কোনো বড় ধরনের ক্ষতি হয়নি। ডক্টর ঔষধগুলো লিখে দিচ্ছে আপনি একটু ঠিকমত খাইয়ে দিবেন।

নার্স চলে যাবার পর মেয়েটা আমার পাশে। আমার নাম ইলা। তুমি উপর থেকে গাছের ডাল ভেঙ্গে আমার গাড়ির উপর পড়লে।সুইসাইড করতে গেছিলে বুঝি। আত্মহত্যা মহা পাপ জানো তো। আর নিজেকে শেষ করে দিলো তো কোনো সমস্যা ই সমাধান হতো না।

উনার এমন প্রশ্ন কী বলবো বুঝতে পারছি না। আমাকে এতো ভাবতে দেখে কথা অন্যদিকে নিয়ে গেলো।

আমাকে উনার ফোন এগিয়ে দিয়ে বললো তোমার বাবা মাকে কল দেও।

এবার নিজেকে আর কন্ট্রোল করতে পারিনি। জোরে কেঁদে উঠলাম।

আমার পৃথিবীতে কেউ নাই।

আরে তুমি কান্না করছো কেনো। আজ থেকে তুমি আমার সাথে ই থাকবে। ছোট বোন হয়ে আমার ও বাবা মা কেউ নাই। আমি তোমার সব। হসপিটালের ই কী সব কথা শেষ করে ফেলবে নাকি চলো বাসায়।

সব ঔষধ কিনে। ডক্টরের সাথে কথা বলে নেয় ইলা। পরীকে নার্স কিছু ঔষধ খাইয়ে দেয়। ব্যাথা অনেকটা কমে গেছে।

৫.
পরী গাড়ি থেকে নেমে দেখলো বিশাল রাজপ্রাসাদ এর মতো বাড়ি।খুব সুন্দর করে ভেতরটা সাজানো, বাড়িতে যাওয়ার সাথে সাথে কাজের লোকগুলো এসে আমাকে একটা রুমে নিয়ে আসলো। সাথে ইলা আপু ও এসেছে।

আচ্ছা শুনো। তোমার নামটা ই তো জানা হলো না। আমার নাম পরিণীতা সবাই পরী বলে ই ডাকে।

তুমি তো বললে তোমার কেউ নেই। আচ্ছা যা ই হক আমি রহিমা আর অনিমেষ কে বলে দিবো তোমার সব খেয়াল রাখতে।

আমি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালাম। উনি চলে গেলো।যতটুকু বুঝলাম রহিমা আর অনিমেষ কাজের লোক। আমার খুব চিন্তা হচ্ছে আমি তো বেচে গেলাম কিন্তু আমার বাচ্চাটা ঠিক আছে তো। আমার ভালোবাসার শেষ অস্তিত্ব। যদি বাচ্চাটার কিছু হয়ে যায় আমি বা বেচে থেকে কী করবো। নিজের যা ই হক একটা ঠিকানা পেলাম। এখন কী আপুকে বলা ঠিক হবে আমি প্রেগন্যান্ট ছিলাম।পরে যদি আমাকে বাসা থেকে বের দেয় সবার মতো আপু ও ভুল বুঝে। এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে গেলো পরী।

সকালে কারো চিৎকার শুনে ঘুম ভেঙ্গে গেলো। উঠে গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে গিয়ে দেখলাম। খুব সুন্দর একটি ছেলে। পড়নে একটা পেন্ট নেভি কালারে শার্ট চুলগুলো খুব সুন্দর করে এক সাইড করে রেখেছে। দেখতে লম্বা বেশ। আমার দিকে তাকিয়ে ই চুপ হয়ে যায়। একনজরে তাকিয়ে আছে।কে তুমি অপরুপসী।

অর্ণব ও পরী কালকে ওর কথা ই তোকে বলেছিলাম। আর পরী ও হচ্ছে আমার ভাই অর্ণব পড়ালেখা শেষ হয়েছে আমার সাথে অফিস দেখাশুনা করছে।।।

অহ আচ্ছা। তুমি ড্রেস চেঞ্জ করোনি কেনো পরী।
আসলে আপু আমার সাথে তো কোনো ড্রেস নাই। ওহ আচ্ছা তাহলে আমার ড্রেস পড়ো। আমি রহিমাকে বলে দিচ্ছি।

শাড়িতে ই কিন্তু উনাকে সুন্দর লাগে আপু। এটা বলে অর্ণব চলে গেলো। ইলা আপু ও হাসতে হাসতে নিজের রুমে চলে গেলো।

রহিমা খালা আমাকে আপুর ড্রেস দিয়ে গেছে। কিন্তু বসে আছে শাড়িটা খুলতে ইচ্ছে করছে না। এতে যে আমার আদির স্পর্শ আছে। যাকে আমার নিজের জীবনের থেকে ও বেশি ভালোবাসি। আদির কথা মনে হতে ই আমার দুনিয়াতে আবার ঝড় উঠতে শুরু করলো। ফোনটা নিয়ে আদির নম্বরে কল করলাম। কয়েকবার কল করতে ই রিসিভ করলো,

আমি আর আমার হাসবেন্ড খুব সুখে আছি।তুই মাঝখানে ডিস্টার্ব না করলে খুব খুশি হবো। তুমি কী কথা বলো আমাকে দেও। ইরা আপুর কাছ থেকে আদি ফোনটা নিয়ে বলে। তোর মতো মেয়েকে আমি কখনো ভালোবাসিনি আমার রুচি এতেটা খারাপ না। যার বাবা মা নাই, যার কোনো নিজস্ব পরিচয় নাই তাকে বিয়ে করবো আমি এগুলো নিছক ই স্বপ্ন।
আদি প্লিজ আমাকে একটু বুঝো তোমার বাচ্চার মা হতে চলেছি আমি।
তোকে আমি স্পর্শ পর্যন্ত করিনি আমার বাচ্চা হবে কোথা। আমাকে মিথ্যা বুঝাতে আসবি না।
আদি বিয়ে করেছি আমরা বাচ্চাটা তোমার আমাকে দয়া করো। তুমি ইরা আপুকে বিয়ে করো আমার কোনো সমস্যা নাই শুধু বাচ্চাটাকে তোমার পরিচয়ে বড় করো।
অন্যের পাপ আমার ঘাড়ে চাপাতে বয়েই গেছে। তোর জন্য শান্তিতে থাকতে পারবো না তাই সিম বন্ধ করে দিচ্ছে।

আদি প্লিজ আমার কথা শুনো। কলটা কেটে দিলো। আমার ভালোবাসার মানুষটা অন্য করো সাথে আছে ভাবতে ই আমার কলিজাটা ছিড়ে যাচ্ছে। চিৎকার করে কাদতে ইচ্ছে করছে।

৬.
হঠাৎ দরজায় নক করলো। আসতে পারি।
তাকিয়ে দেখলাম অর্ণব। হে আসুন।
হাতে অনেকগুলো ব্যাগ। এই ব্যাগগুলোতে আপনার প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র আছে। আরো কিছু লাগলে আমাকে বলতে পারেন। আমাকে আর কোনো কথা না বলতে দিয়ে উনি চলে গেলেন।

ব্যাগগুলো খুলে দেখলাম। আমার অনেকগুলো ড্রেস, লিপস্টিক, চুড়ি, কাজল,চুল বাধার ক্লিপ। অবাক এতো কিছু লাগে অর্ণব জানে কীভাবে।

একটা রেড কালারের ড্রেস পড়ে বাহিরে গেলাম। খাবার টেবিলে সবাই বসে আছে আপু জিজ্ঞেস করলো। পরী আমি তোমাকে এই ড্রেস দেইনি তাহলে এইগুলো কোথা থেকে তোমার কাছে ও তো কোনো ড্রেস ছিলো না।

আমি এনে দিয়েছি আপু।ওহ্ ভালো তো আমার কাজ কমে গেলো। দেখলি তো আমার সাথে শপিং এ গেলি আর কেমন উপরকার হলো। বউকে ও সব জিনিস কিনে দিতে পারবি। দুজন হাসতেছে।কিন্তু আমি ভাবতেছি যে করে ই হক আমাকে ডক্টরের কাছে যেতে ই হবে।।।

পরের দিন সকালে পার্সটা নিয়ে চুপিচুপি বেড়িয়ে পড়লাম। অর্ণব আর ইরা আপু অফিসে গেছে এটা ই আমার কাছে বেস্ট সুযোগ বলে মনে হয়েছে।

হসপিটাল এসে একটা নার্সকে অনেক রিকোয়েস্ট করে শুধু একটা টেস্ট করালাম বাচ্চাটা আছে নাকি নাই দেখার জন্য। ডক্টর দেখানোর মতো টাকা আমার কাছে নেই।।।

নার্সটা টেস্টের রিপোর্ট দেখে বললো রেজাল্ট নেগেটিভ। মানে বাচ্চাটা নষ্ট হয়ে গেছে। যে বাচ্চাটার জন্য এতো কিছু এখন বাচ্চাটা ই হারিয়ে ফেললাম। ঐদিন আল্লাহ কেনো বাচিয়ে রেখেছিলো আমার বাচ্চা নেই তো আমার ও বাচার কোনো অধিকার নেই।

হঠাৎ পিছনে কারো স্পর্শ পেলাম। ঘুরে তাকাতে ই দেখলাম ইলা আপু। ভয় হচ্ছে খুব এখন কী উওর দিবো আমি আপুকে।

চলবে