পরিণীতা পর্ব-০৩

0
3409

#পরিণীতা
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ৩

৭.
এ বাসায় এসেছি কেটে গেলো সাতদিন। ঐদিন ইলা আপু ডক্টর দেখিয়ে বাসায় নিয়ে এসেছিলো। শরির খারাপ এর বাহানা দিয়ে বেচে গেলাম ঐদিন। কিন্তু একদিন তো সব জানতে পারবে কারন সত্য কখনো চাপা থাকে না। এতো আপন করে নিলো মানুষগুলো তাদের ভালোবাসার মূল্য রাখতে পারবো তো। বার বার এই প্রশ্নগুলো মনের মধ্যে উকি দিচ্ছে।।।

আরে আপামনি আপনি এইখানে।

রহিমার কন্ঠ শুনে আটকে উঠলাম। আরে রহিমা আপা এতো জোরে কেউ ডাকে নাকি। আপামনি কতো দিন না করলাম আপনে আমারে আপা বইলা না ডাকতে, আমি তো আপনের ছোট।
আচ্ছা ঠিক আছে মুচকি হেসে উওর দিলাম।
আপামনি আপনাকে ইলা আপামনি যাইতে কইছে।

আচ্ছা যাও আসতেছি।
না আপনাকে সাথে করে নিয়া যাইতে কইছে।
আচ্ছা চলো।
আপামনি আমি আর উনি কালকে আসবো না।
কেনো রহিমা আর উনিটা কে।
এই খাটাশ অনিমেষ। একটু সমস্যা আপামনি তাই আরকি।
ওহ আচ্ছা।
দুজনে কথা বলতে বলতে ইলা আপুর রুমে গেলাম।

আরে পরী চলে এসেছো। কতক্ষণ যাবৎ আমি আর অর্ণব তোমার জন্য অপেক্ষা করছি। শুনো কাল থেকে তুমি অর্ণব এর সাথে অফিসে যাবে।

অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম। কেনো আপু?আর আমি তো বেশি লিখাপড়া করিনি মাত্র উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছি।

হে সমস্যা নাই সামনে ভর্তি হয়ে নিবে ভার্সিটিতে। এখন তো অফিসে যেতে কোনো সমস্যা নাই। অর্ণব এর পি.এ হয়ে তো থাকতে পারবে।

এই চিকনেচামিলি আমার পি.এ হবে??

কে চিকনেচামিলি একটু জোরে ই বললাম।

দেখলে তো আপু যার কথা তার গায়ে ঠিক ই লাগেছে।
কী আমি চিকনেচামিলি।
অন্য কেউ এখানে আছে বলে তো মনে হচ্ছে না। যেই চিকন কবে জানি বিড়াল মাংসের পিস ভেবে কামড়ে নিয়ে যায়।

এইটুকু বলে হাসতে হাসতে অর্ণব রুম থেকে চলে যায়। পরীর মুখটা দেখার মতো অবস্থা ছিলো।। ইলা দুজনের কান্ড দেখে হাসতেছে।

৮.
রোজ রাতে ই অদিকে কল দেয় কিন্তু আদির ফোন অফ। সিম বন্ধ করে রেখেছে। যে আদি পরীর সাথে কথা বলার জন্য কনকনে শীতের মধ্যে ও বাসার সামনে রাত দুইটা পর্যন্ত দাড়িয়ে ছিলো ঐ আদি আজ কথা না বলার জন্য ফোন অফ করে রেখেছে। ভাবতে ই কতো কষ্ট পাচ্ছে পরি। নিজের ভালোবাসার মানুষটির সাথে অন্য মেয়েকে দেখা পৃথিবীর সব থেকে বড় কষ্ট মনে হয়। নাহ্ এসব ভাবলে আর চলবে না ঘুরে দাড়াতে হবে পরীকে আল্লাহ তো বাচিয়ে রেখেছে। একটা সুযোগ ও দিয়েছে নিজেকে তৈরি করার জন্য উচিত শিক্ষা দিবে আদিকে। কিন্তু চাইলে ও কী ভুলা যায় নিজের অতীতকে।
.
সকাল বেলা উঠে রেডি হতে হবে আর আজকে রহিমা অনিমেষ, আসবে না। ইলা আপু কোনো রান্না পারে বলে ও মনে হচ্ছে না তাই উঠে নিজে ই যা পারি রান্না করে নেই।
কিচেনে ডুকতে ই দেখি অর্ণব ও কিচেনে।

কী হলো আপনি কিচেনে যে।
আফিসের মিটিং আছে।দ্রুত রেডি হয়ে নিন।
আপনি কী রান্না করতে পারেন নাকি কিচেনে আসছেন যে।
না পারলে ও আপনার থেকে ভালো পারি চিকনেচামিলি।
এই আপনি আমাকে আবার চিকনেচমিলি বলছেন।
হে তো কি হইছে। বস হই আপনার মনে রাখবেন।
কী খাবেন বলুন আমি রান্না করে দিচ্ছি।
আমি নিজের কাজ নিজে করতে জানি।

আমি আর কথা না বাড়িয়ে। ফ্রিজ থেকে ডিম বের করে বেজে নিলাম। ডিমটা প্লেটে রাখার সাথে সাথে অর্ণব নিয়ে নিলো।
এই আপনি আমার ডিম নিলেন কেনো।
আমি জানতাম মুরগির ডিম হয়। আপনার ও যে ডিম হয় তা জানা ছিলো না।
রাগে প্লেটা টান দিয়ে নিয়ে আসলাম। এভাবে দুজন টানাটানি করতে করতে প্লেট এর খাবার নিচে পড়ে গেলো। দুজন ই দুজনের দিকে তাকিয়ে আছি।
কী করলেন এটা খাবারটা ফেলে দিলেন।
আপনি ই তো টেনে ফেলে দিলেন।আমাকে রেগে থাকতে দেখে অর্ণব বাহিরে চলে গেলেন। আমি ও আর রাগে খাবার না খেয়ে ই রেডি হয়ে নিলাম।
বেশ কিছু ক্ষন পর দরজায় নক করতেছে কেউ মনে হচ্ছে তাই দ্রুত গিয়ে দরজা খুলে দেখলাম অর্ণব।

-সরুন এতো মোটা হয়ে দাড়িয়ে আছেন কেনো

-আমাকে কী রুমে ডুকতে দিবেন না।

-আরে আজব তো মোটা হয়ে আবার দাড়িয়ে থাকে কীভাবে।

-এই যে খাবার আনলাম। খেয়ে নিন।
আমি খাবোনা।

-তাহলে অফিসে ও নিয়ে যাবো না। ইলা আপুকে বলবো আপনি যেতে চাননি।

-আমি কখন যেতো চাইনি।
-তাহলে খেয়ে নিন।
.
অফিসে আসার পর সবার সাথে ই পরিচিত হয়ে নিলাম। অর্ণব অফিসে অনেক রাগি মোড নিয়ে থাকে দেখে ই বুঝা যাচ্ছে।

হঠাৎ ফোনে মেসেজ আসলো, আদির নম্বর থেকে মেসেজ দেখে কাউকে কিছু না বলে ই বেড়িয়ে পড়লাম একটা রিক্সা নিয়ে।

চলবে