#পরিণীতা
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ৭
১৪.
প্রত্যেকটা মানুষ এর জীবনে ই কিছু অতীত থাকে যা সবাইকে বলতে চেয়ে ও বলা যায় না।কিন্তু পরিণীতা তোমাকে আামর সব বলতে ইচ্ছে করছে কারন টা পরে বলবো। অর্ণব আমার চাচাতো ভাই। অর্ণব এর জন্মের এক বছর পর অর্ণব এর মা মারা যায়। আমার আম্মু অর্ণবকে লালন পালন করে। আমি তখন চার বছরের ছিলাম। নিজের ভাই এর মতো ই ভাবতাম। অর্ণব এর মা মারা যাওয়ার পর অর্ণব এর জন্য শুধু আমার চাচ্চু বিয়ে করে কিন্তু যা ই হক দিন শেষে সৎ মা তো সৎ ই হয়।বিয়ের পর কয়েক দিন অর্ণব এর সাথে ভালো ই ছিলো। কিন্তু ভালো টা আর বেশি দিন ভালো থাকলো না।অর্ণব এর ছোট একটা ভাই যখন পেটে আসে শুরু হয় অবহেলা। তারপর থেকে আমার আম্মু ই সব।
এটা আমাদের গ্রামের বাড়ি। অর্ণব তার বাব মায়ের কাছে যায় না। মাকে মা বলে ও ডাকে না। কিন্তু নতুন চাচি খুব করে চায় অর্ণব যেনো মায়ের মতো ই আচরণ করে। কিন্তু অর্ণব দেখতে ই পারে না ওদের কে। কোনো কাজ ছাড়া বাবার সাথে ও কথা বলে না।
অর্ণব আমাকে অনেক সম্মান করে তাই তো অফিসের সব কিছু আমার হাতে। আমাকে নিয়ে তার যত অবদার একবারে বাচ্চাদের মতো করে। কিন্তু অনেক বেশি রাগ। যা অর্ণব কন্ট্রোল করতে পারে না।আমার ভাইটার যখন মন খারাপ থাকে তখন নিজের মায়ের কবরের পাশে চলে আসে ঢাকা থেকে।
ইলা আপু কথা শুনে থ হয়ে আছি। আমি জানতাম অর্ণব মনে হয়ে ইলা আপুর আপন ভাই। যা ই হক ভাই তো।। ইলা আপু কথাগুলো বলে চলে গেলো। তার মানে অর্ণব এর আরো ভাই বোন আছে।।।।।।।।।।।
★★★★★★★★★★★★
বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি। সন্ধ্যা হবে প্রায় সন্ধ্যাতারা ফুল গাছে ডালগুকো বেশ সৌন্দর্য নিয়ে ই ছড়িয়ে আছে। অনেকগুলো কলি আছে আবার অনেকগুলো ফুল ফুটে গেছে। দেখতে বেশ ভালো লাগছে। তার পাশে ই হাসনাহেনা গাছে ফুলের সুভাষ ছাড়াচ্ছে। পরিণীতা একমনে গাছগুলোর দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ চুলের মধ্যে টান অনুভব হতে ই হালকা জোরে চিৎকার দিয়ে উঠে।
–আরে এতো জোরে চেচাচ্ছেন কেনো।
অর্ণবকে দেখে চুখগুলো বড় করে তাকিয়ে আছে পরিণীতা।
— অমন রসগোল্লা মতো করে তাকিয়ে আছেন কেনো। আমাকে এইখানে আশা করেননি বুঝি।
পরিণীতা মাথা নাড়িয়ে না করে দেয়।
–দেখতে তো খুব ই ইনোসেন্ট। তা কজনের মাথা খেয়েছেন এ পর্যন্ত।
–আগে কজনের খেয়েছি তা জানি না। এখন আপনারটা খেতে ইচ্ছে করছে।
–তাই নাকি
এটা বলে ই অর্ণব দুই হাত দিয়ে বারান্দার গ্রিলের মধ্যে পরীর দুহাত আটকে দেয়।
–হুম ম্যাডাম প্লিজ এখন মাথাটা খান প্লিজ।
অর্ণব অনেকটুকু এগিয়ে গিয়ে এই কথাটা বললো। পরী অন্যদিকে মুখ করে তাকিয়ে থাকে। কিন্তু অর্ণব এর পারফিউমের গন্ধটা বেশ সুন্দর। অর্ণব এর হাতে একটা আংটি দেখা যায়। যা আদির হাতে ও দেখেছিলো। পরী শুধু আংটিটা দিকে ই তাকিয়ে আছে। খুব গভীর মনোযোগ দিয়ে দেখছে। আংটিটার দিকে একদৃষ্টি তাকিয়ে থেকে ভালো অনেকক্ষন। পরক্ষণেই ই মনে হলো এতো ভাবার কী আছে এই রকম আংটি তো যে কারো হতে পারে। এই আংটির চিন্তা মাথা থেকে জেরে ফেলে দিলো।।।।।।
পরীকে এভাবে ভাবতে দেখে পরীর চুলে আবার টান দেয়। এবার ভয় পেয়ে পরী অর্ণব এর দিকে তাকায়।
–আসো একটু গল্প করি। সময় যাচ্ছে না।
এই সময় ই আবার ফোন বেজে উঠলো।
–এই যে জিএফ কল দিছে। এইবার সময় যাবে।
পাল্টা কোনো উওর না অর্ণব কথা বলতে বলতে চলে যায়। পরীর ও তো একজন কথা বলার মানুষ ছিলো অনেক ভালোবাসতো তাকে, খুব তো চাইছে ভুলে যেতে কিন্তু তাও কী পাড়েছে ভুলে যেতে। দিন শেষে তো একটা ই কথা মনে পড়ে অনুভূতি গুলো বার বার জানান দিয়ে যায় ধোকাটা খুব বড়সড় আকারে ই ছিলো যা হৃদয় খুব বড় যায়গাতে ই ক্ষত করেছে। ভুল মানুষকে ভালোবেসে ভালোবাসাকে ঘৃনা করার মতো মানুষ পরী না তাও ব্যর্থর গল্পটা তো বার বার ভালোবাসা টাকে কাঠগড়ায় দাড় করাচ্ছে।।।।।
১৫.
পরী রুমে শুয়ে আছে। মনটা বড্ড খারাপ। আদি নামটা যে মাঝে মাঝে বড্ড পোড়ায়।খুব জোরে চিৎকার করে কান্না করতে ইচ্ছে করে কিন্তু বার বার এই কথাটা মাথায় রাখতে হয় যে আমি কারো আশ্রিতা।
–আসবো নাকি।
অর্ণবর কন্ঠ স্বর শুনে কম্বলের ভেতর থেকে মুখ বের করে পরী।।
বেডের উপর বসে বলে অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন ছিলো আপনার আসবেন নাকি। বেডের পাশে এসে মনে হলো আপনার যে করো রুমে ডুকতে হলে পারমিশন নিতে হয়।
–আমি এতো তেতো কেনো।
অর্ণব এর এমন প্রশ্নের কারণ পরী খুজতেছে।
–তেতো সাথে চিনি মিশান মিষ্টি লাগবে।
–হে চিনি মিশাতে ই এসেছি।
–কী।
–আমার একটা কথা রাখবেন।
–কী।
—রাখবেন তো।
–হে বলুন।
–চলুন নদীর ঘাটে যাই। ঐখানে উপরে যে বসার স্থান আছে ঐখানে বসে কথা বলি আমরা।
পরী পুনরায় কম্বলের ভেতরে ডুকে বলে যাবো না। কতক্ষণ পর অর্ণব এর কোনো শব্দ না পেয়ে পরী ভেবে ছিলো চলে গেছে। তাই কম্বল সরাতে ই অর্ণব মুখ চেপে ধরলো। কোলে তুলে নিয়ে নদীর ঘাটে চলে গেলো। বাসা থেকে মাত্র দুই মিনিট লাগে। বাসার সামনে ই নদী।
পরীকে নদীর পাড়ে এনে অর্ণব ছেড়ে দেয়।
–যাও যাও এখন বাসায় ডুকলে ই বলবো, তুমি আমার রুম থেকে ডেকে এনেছো।
–আপনি মিথ্যা বলবেন।
–আমার সাথে না বসলে তো বলবো ই।আমি যা বলি তা শুনো কিছু বলবো না।
অর্ণব আর পরীর গিয়ে বসলো। নদীর পানি কেমন চাদের আলোয় চিকচিক করছে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু অল্প কুয়াশার কারনে দেখা যাচ্ছে না।
–এই শীতের মধ্যে এইখানে নিয়ে আসলেন কেনো।
–আচ্ছা তুমি বসো আমি চাদর নিয়ে আসছি।
–নাহ্ অসম্ভব আমি একা থাকবো না।
বলে ই পরী অর্ণব এর হাত জরিয়ে ধরে।। এভাবে হাত জরিয়ে ধরে পরী অর্ণব এর দিকে তাকিয়ে মুহুর্তে ই হাত ছেড়ে দেয়।
–না আমাকে একা রেখে যাবেন না। আমাকে নিয়ে যান।
–নাহ তাহলে আসো দুজন এক চাদরের নিচে। তুমি অর্ধেক আমি অর্ধেক।
উপায় না পেয়ে অর্ণব এর কথায় রাজি হয়ে গেলো।
অর্ণব বসে বসে অনেক কথা বলছে। কিন্তু পরী ঘুমিয়ে পড়লো। আস্তে আস্তে মাথাটা অর্ণব এর কাধে রাখলো। স ইচ্ছাতে না। ঘুমের ঘোরে। অর্ণব পরীকে দেখে মুচকি হাসছে। এতো দ্রুত কেউ ঘুমাতে পারে নাকি।
এমন সময় পেছনে কয়েকজন মুরব্বিদের দেখতে পেলো।
–মাইয়া নিয়া তামাশা করো নাকি।
–শহরের মতো এতো ঢলাঢলি গ্রামে নিষেধ।
এতো জোরে জোরে কথা বলতেছিলো যে পরীর ঘুম ভেঙ্গে যায়। মিনিট দুয়েক লেগে যায় ঘটনা বুঝতে।
–আপনারা ভুল বুঝছেন।
–আমাদের শিখাইতে আইসো না। যা দেখলাম তারপর আবার ভুল।
পরী ও হাত জোর করে বলতে লাগলো। কিন্তু কেউ ই কথা শুনলো না। অর্ণব উপায় না পেয়ে ইলাকে কল দেয়।
–যা হইছে আমরা সব ভুলে যাবো কিন্তু
–আরে কী করলাম আর কীসের কিন্তু।
–তোমারে এই মাইয়াকে বিয়া করতে হইবো।
চলবে