Mr_সাইকো_লাভার পর্ব-০৬

0
6014

#Mr_সাইকো_লাভার
#লাবিবা_ওয়াহিদ
“পার্ট ০৬”
.
.
ফারান রা যতোক্ষণে কেন্টিনে পৌঁছায় ততক্ষণে নিশা আর আনিলা ভার্সিটি থেকে চলেও যায়। ফারান নিশাকে না পেয়ে বলে,”শিট! লেট হয়ে গেলো।”

এইদিকে আনিলা এবং নিশা মলে গিয়ে নিশার ড্রেসের সাথে একটা ওড়না কিনে নিলো। মল থেকে বেরিয়ে নিশা বলে,”আজ ওই ধলা গাড়িটার জন্য আবার ওড়না কিনতে হলো শালা খচ্চর, তোর জীবনেও ভালো হবে না দেখিস।

এমন সময়ই ফারানের জড়োসড়ো কাশ উঠে গেলো। আদন তাড়াতাড়ি গিয়ে ফারান কে পানি দিলো আর পিঠে আস্তে আস্তে মারতে লাগে।

আদন- আর ইউ ওকে ব্রো?

ফারান পুরোটা পানি খেয়ে বলে,”হুম আই এম ফাইন।”

আফনাদ- কার বকা খাচ্ছিস যে এতো কাশ উঠলো?

ফারান- বকা মানে? আমার কাশির সাথে বকার কি সম্পর্ক?

আদ্র- আরে খাওয়ার সময় তোর যা কাশি উঠসে তার থেকে নিশ্চিত ভাবে বলা যাচ্ছে তোকে কেউ হাতের কব্জি ডুবিয়ে বকছে।

ফারান- রাখ তো এইসব পাগলের কথা বার্তা।

আর কেউ কিছু বলে না ফারান সহ সবাই চুপচাপ খেতে লাগে। এইদিকে নিশা আর আনিলা একসাথে বাসায় ফিরে ফ্রেশ হয়ে খাবার গরম কঅরে খেয়ে নেয়। খাবার সকালেই রেঁধে গিয়েছিলো ভার্সিটিতে। খাওয়া শেষ করতেই দুজন লিভিং রুমে গিয়ে টিভি ছেড়ে আরামসে দেখতে লাগে। চ্যানেল বদলাতে বদলাতে একটা নিউজ দেখতেই সাথে সাথে সেই চ্যানেল দেয়।

– আজ আরো দুটি লাশ উদ্ধার হয়েছে এবং এটাও জানা গেছে যে এরা ধর্ষক। এরকম একের পর এক ধর্ষকের লাশ দেখে ধর্ষণের হার অধিক হারেই কমছে বলে জানিয়েছেন পুলিশগণ।কে মারছে এভাবে তাদের তা এখন পর্যন্ত জানা যায়নি। আবার অনেকেই বলছে যে এমন করছে তাকে করতে দিন তার জন্যই দেশের মেয়েরা সুরক্ষা পাবে। তাই এই ধর্ষক হত্যার কেস বন্ধ করে দিতে চাইছে সাধারণ মানুষ।

নিশা- আরে ভাই এই নিয়ে কেসের কি আছে বুঝিনা। ওই লোক অন্যায় তো করছে না তাহলে তোদের এতো প্রব্লেম কিসের। মারছে তো ভালোই করছে তাইনা?

আনিলা- সেটাই তো। বুঝিস না ঘুষ খাওয়া কিছু পাবলিক আছে তাই…..থাক বলবো না

নিশা- তোর কথা আমি শুনতেও চাইনা ওকে?

আনিলা ভেংচি কাটে নিশার কথায়। এভাবেই দুই বান্ধুবির সারাদিন কেটে যায়।
পরদিন,,,

নিশা আর আনিলা একেবারে সময় মতো ভার্সিটি তে হাজির হয়। এবার আদন,আদ্র এবং আফনাদ নিশার সামনে এসে দাঁড়ায়। আদনকে দেখে নিশা বেশ চিনতে পেরেছে তাই রেগে বলে,

নিশা- কি হলো কালকের চড় টা কি ভুলে গেছেন যে আজ আবার দলবল নিয়ে আমার সামনে এসেছেন? লজ্জা শরম বলতে কি নেই নাকি থাকলে তো মনে হয়না বারবার এক কাজই করবেন।

আনিলা তো হা করে আদ্রর দিকে তাকিয়ে আছে। আর আদ্র আনিলার এমন চাওয়া দেখে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে ভাবতে লাগে,”এই মেয়েটা এমন চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে কেন আমায়?”

বলেই আনিলার মাথা থেকে পা পর্যন্ত একবার চোখ বুলিয়ে নিলো। তারপর আবার ভাবতে লাগে,”নাহ দেখতে খারাপ না। মোটামোটি ভালোই আছে দেখতে। সে যাই হোক এরে নিয়ে ভাবার টাইম নাই।”ভেবেই আদ্র আনিলার থেকে চোখ ফিরিয়ে নিলো। আনিলা তা দেখে ভেংচি কাটে।

– হয়েছে অনেক বকবক করেছো তুমি।

হঠাৎ এক কন্ঠ শুনতে পেলো নিশা এবং অনেক চেনা চেনা লাগলো কন্ঠটা। এমন সময়ই নিশাকে অবাক করে দিয়ে আদন,আদ্র এবং আফনাদের সামনে এসে দাঁড়ালো। নিশা তো ফারান কে দেখে অবাক হয়ে গেলো। ফারানও মাত্র নিশাকে দেখে। দুজন একসাথে বলে,

নিশা- আপনি!!!!!

ফারান- তুমি!!!!!!

দুজনের এমন অবস্থা দেখে সকলেই অবাক আর ভাবছে,”তাহলে কি এরা দুজন দুজনকে চিনে?”

ফারান- তুমি এখানে কি করছো?

নিশা- আপনি এখানে কি করছেন?

ফারান- আদন এই মেয়ে কে চিনিস?

আদন- না এই তো কাল আমায় চড় মেরেছে।

ফারান- ওয়ায়ায়ায়ায়াট!

রিদিও ঠিক সেই সময়ে আসে এবং নিশার সামনে দাঁড়িয়ে বলে, “সরি সরি ফারান ভাইয়া আমি নিশার হয়ে আপনার কাছে ক্ষমা চাইছি আপনি কিছু বলবেন না ওকে প্লিজ।”

নিশা রিদিকে টেনে বলে,”এই আমি এখনো তো কিছুই করলাম না তুই পাগলের মতো ক্ষমা কেন চাইছিস।

ফারান- ওওওওও আচ্ছা তোমার নাম নিশা। বাহ সাহস তো তোমার বেশ! আর আমারই ভাবার দরকার ছিলো চড় মারার মতো সাহস তুমি ছাড়া আর কারই বা হতে পারে।

নিশা- এই আপনার প্রব্লেম কি আমার পিছে লাগসেন কেন সেদিন থেকে? আপনার কুকর্মের জন্য আমি দুই রাত ঘুমাইনাই আর…..

এমন সময়ই নিশার ফারানের পিছে থাকা গাড়িটার দিকে খেয়াল গেলো।

নিশা- আচ্ছা ওই কার টা কার?

ফারান- অফ কর্স আমার! ওয়াই?

নিশা দাতে দাত চেপে রেগে বলে,”ও আচ্ছা তাহলে আপনিই তাহলে সকল নষ্টের মূল।”

বলেই ফারানের কলার চেপে ধরে। ফারান একবার কলারের দিকে তাকিয়ে আরেকবার নিশার দিকে তাকালো। নিশা প্রায় অনেকটাই কাছে ফারানের। ফারান মুগ্ধ নয়নে নিশাকেই দেখছে।

নিশা- শালা ইতর বান্দর হিটলারের নানা যেদিন থেকে আপনার সাথে দেখা হইসে সেদিন থেকে আমার একটা না একটা ঝামেলা লাগিয়েই রেখেছেন। সেদিন আমার ফোন ভেঙ্গেছেন, দুই রাত ঘুমের ১২টা বাজাইসেন আর কাল আমার ওড়না ছিড়েছেন। আপনাকে তো….

আর বলতে পারেনা আনিলা আর রিদি নিশাকে টেনে হিচড়ে ভেতরে নিয়ে যায় নইলে নিশার অবস্থা খারাপ করে ছাড়বে তারা। ফারান চুপচাপ নিশার কথা ভাবছে। সবাই শকড ফারানের এমন চুপ থাকা দেখে। আফনাদ তো এসে বলে,

আফনাদ- ওই মেয়ের এতো সাহস তোকে পুরো ভার্সিটির সামনে অপমান করলো। ওয়েট আমরা যাই আর এই মেয়ের একেবারে থেতলে দিয়ে আসবো।

বলেই আফনাদ দল সহ যেতে নিবে ওমনি ফারান হাত ধরে আটকে দেয় এবং ইশারায় না বলে। ফারান আশেপাশে তাকিয়ে দেখে সবাই চারদিকে জড়ো হয়ে আছে। ফারান রেগে চিল্লিয়ে বলে,

ফারান- ওয়ায়াট!? দেখা হইসে ড্রামা এখন যে যার কাজে যান ডিজগাস্টিং!!

ফারানের কথায় সবাই লজ্জায় যে যার কাজে চলে গেলো। আর ফারান ৩ বন্ধু কে নিয়ে নিজেদের আড্ডা খানায় চলে যায়।

নিশা- তোদের সমস্যা কি আমার ওড়না ওই শালার জন্য আমার কাল এতো মানুষের সামনে ওড়না গেলো আর তোরা আমায় তার থেকে টেনে নিয়ে আনলি?

রিদি- বইন তোর পা ধরি চুপ যা এদের সাথে লাগিস না কয়বার বলবো তোরে? প্লিজ কান্ট্রোল ইউরসেল্ফ। ওরা এতোটাও ভালো না যে তোর অপমান সহ্য করবে। ভাগ্য ভালো এখনো তোকে কিছু বলেনাই।

আনিলা- হ্যাঁ নিশু রিদি ঠিক বলেছে। আজ দেখলি না আবার আমাদের পথ আটকিয়েছে।

নিশা- তোরা কি শান্ত হতে বলছিস? আর তোদের এতো মুড়োদ নেই আমায় কিছু করার ওকে? মরুক বাচুক আমার কি?

বলেই রেগেমেগে লাইব্রেরি তে চলে গেলো। রিদি আর আনিলা মুখ কালো করে ভাবতে লাগে কি করবে এই নিশাকে নিয়ে।

এইদিকে আদ্র আদন এবং আফনাদ তো ফারানের মাথা খেয়েই ফেলেছে প্রশ্ন করতে করতে। প্রশ্ন গুলা হলো,”কে ওই মেয়ে,তুই কিভাবে চিনিস,এতো অপমানের পরেও কেন ছেড়ে দিলি ব্লা ব্লা ব্লা” ফারানের সব বিরক্তি লাগছে বলে ওদের বলে,”থাম তো ভালো লাগছে না এসব কথাবার্তা।”

আদ্র- না কেন থামবো তুই বল কি করে চিনিস ওই মেয়েকে।

ফারান- উফফফ আচ্ছা বলছি বাবা বলছি, সেদিন শপিংমলে গিয়েছিলাম এক মেয়ের সাথে দেখা করতে ওই মেয়ে আমায় জোর জবরদস্তি করে চেঞ্জিং রুমে নিয়ে যায় আর কিস করাতে বাধ্য করে। যেই কিস করবো ওমন সময়ই ওই মেয়ে আই মিন নিশা এসে হাজির হয় যার কারণে সেদিনের মতো বেঁচে যাই। থ্যাংক গড মেয়ে টা চলে আসছিলো নইলে তো সত্যি সত্যিই ওই ছ্যাসড়া মেয়েকে কিস করতাম।

আদন- তারপর তারপর?

ফারান- তারপর আর কি লিফটে উঠতে যেয়েও একবার দেখা হইসিলো আবার বিল পে করতে গিয়েও দেখা হয়েছে। আর আজ হলো। তবে মেয়ে টা অতিরিক্ত ঝাঝলংকা মাগো এমন চিল্লান চিল্লাবে কান থেকে নাক সব খেয়ে ফেলবে।

আফনাদ- হুম আসলেই এই মেয়ে ডেঞ্জারাস বাট আজ তোকে অপমানের পরেও ছেড়ে দিলি কেন।

ফারান- সেদিনের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলাম ইউ নো ওয়াট ফারান চৌধুরি কারো কাছে কৃতজ্ঞ থাকলে তা যথাযথ ভাবে পূরণ করে। সে যাই হোক নেক্সট টাইম থেকে কিছু করলে সোজা একশন। এনিওয়ে এখন চল ক্লাসে।

আদ্র- ক্লাস সেরে আবার আমাদের র‍্যাগিং তো করতে হবে। কাল তো করাই হয়নি।

আদন- হুম তা যা বলেছিস এখন চল।

তারপর চারজন মিলে নিজেদের ক্লাসে চলে গেলো।

এইদিকে,,
,
,
,
,
,
চলবে!!!