#Mr_সাইকো_লাভার
#লাবিবা_ওয়াহিদ
“পার্ট ১৩”
.
.
.
নিশা বিকালে ছাদে বসে চিপস খাচ্ছে আর আকাশের দিকে তাকিয়ে আনমনে ভাবছে।
নিশা- আমার সাধের রিং টা ওই বজ্জাত টার জন্য ফেলে আসতে হলো। মন তো চাচ্ছে ব্যাটাকে থাপ্রিয়ে সোজা করে দেই। আবার নাচের সময় আমায় কি ধমক গুলাই না দিলো মনে হলো ওনার কেনা সম্পদ আমি তোরে না কাল কফির সাথে….এক মিনিট সেইরকম একটা বুদ্ধি পেলাম। এখন কাল দেখ তোকে কিভাবে জব্দ করি।
বলেই শয়তানি হাসি দিলো নিশা। এমন সময় আফিয়া পেছন থেকে বলে,”নিশুপু তুমি কাকে জব্দ করার কথা বলছো??”
নিশা মুচকি হেসে আফিয়াকে নিজের কোলে বসিয়ে বলে,”এক দুস্টু ভাইয়াকে বুঝলে। সে তোমার নিশুপুকে খুব বিরক্ত করে তাই তাকে জব্দ করবো।”
আফিয়া- তাহলে ওই দুস্টু ভাইয়া ঢিশুম ঢিশুম দিবা। তুমি না পারলে আমার ফিফু ভাইয়াকে বলবা সে ঢিশুম ঢিশুম দিয়ে দিবে।
নিশা মুচকি হেসে বলে,”আচ্ছা ঠিকাছে বলে দিবো কেমন?”
আফিয়া- হুউউউম জানো তোমার পুডিং আমার ফিফু ভাইয়াকেও খাইয়েছি সে তোমার খুউউউউউব তারিফ করেছে।
নিশা- ওওও আচ্ছা তাইইইই!!!
আফিয়া- হুম তাই এখন চলো না ওই ফুল গাছ গুলো তে পানি দেই!
নিশা- না না যদি বিল্ডিং এর মালিক কিছু বলে?
আফিয়া- আরে নিশুপুউউ তুমি শুধু শুধু ভয় পাচ্ছো এই ফুল গাছ গুলো তো আমারই।
নিশা- তাইইই??
আফিয়া- হুম চলো চলো।
তারপর নিশা আর আফিয়া মিলে ফুল গাছে পানি দিতে থাকে।
এইদিকে ফারান ল্যাপটপ এ কি যেনো করছে আর কিছুক্ষণ পরপর কফি খাচ্ছে। এমন সময়ই ইয়াসা আসে এবং বলে,
ইয়াসা- কি রে তুই আফিয়ার সাথে দেখা করিস নি?
ফারান- করেছিলাম কালকে কেন?
ইয়াসা- বারে আমার দেখতে ইচ্ছা করে না ইসসস কতোদিন হয়েছে দেখিনা মামুনি টাকে।
ফারান- তো যাও দেখা করে আসো আমি এইদিক সামলাচ্ছি।
ইয়াসা- কেন তুই সঙ্গে যাবি না?
ফারান- না আমি অন্য আরেকদিন যাবো এখন বিজি।
ইয়াসা- আচ্ছা তবে হ্যাঁ রাতের খাবার বাইরে থেকে করে নিস আমি আজ আফিয়াদের বাসায় থাকবো আর তোর বাপির জন্য বুয়া রেঁধে রেখেছে সে খেয়ে নিবে।
ফারান- বাপি বাসায় খেলে আমি বাইরে খাবো কেন?(অবাক হয়ে)
ইয়াসা- তুই তো নবাব বুয়াদের রাধা খাবার খাস না তাই বাইরে গিয়েই খাবি।
ফারান- ও মাম্মা তোমার কি মনে হয় আমি এতোটাই খারাপ।
ইয়াসা- সেটা তুই ভালো জানিস।
বলেই ইয়াসা চলে গেলো। ফারান সেদিকে আর ধ্যান না দিয়ে আবার ল্যাপটপ এ মন দিলো। হঠাৎ ফারানের ফোন আসলো ফারান এপাশ থেকে “হ্যালো” বলতেই ওপাশ থেকে কে যেনো কি কি বলে তাতে ফারান একটা ডেবিল হাসি দেয় তারপর কল থেকে ব্লেক জ্যাকেট টা নিয়ে বেরিয়ে যায়।
এদিকে নিশা আফিয়ার পিছে দৌড়াতে দৌড়াতে ইয়াসার সাথে গিয়ে ধাক্কা খায় আর দুজনই পরে যায়। দুজনকে পড়তে দেখে আফিয়া হেহে করে হেসে বলে,”হিহিহি মামি মনি আর নিশুপি একসাথে পড়ে গেছে।”
নিশা সামনে তাকিয়ে দেখে একজন মহিলা। তাই তাড়াতাড়ি করে উঠে ইয়াসাকে উঠালো।
নিশা- আপনি ঠিক আছেন আন্টি আপনার লাগেনি তো? আফিয়া এক গ্লাস পানি নিয়ে আসো তো।
নিশার কথামতো আফিয়া চলে গেলো। ইয়াসা এক ধ্যানে ভ্রু কুচকে নিশার দিকে তাকিয়ে আছে আর ভাবছে,”মেয়েটাকে কোথায় যেনো দেখেছি। এতো চেনা চেনা কেন লাগছে?”
নিশা- কি ব্যাপার আন্টি?
ইয়াসা- হুম না কিছু না আমি ঠিক আছি আমায় নিয়ে ব্যস্ত হতে হবে না।
এমন সময়ই আফিয়া পানি নিয়ে আসে। ইয়াসাকে পানিটা দিয়ে আফিয়া টেনে টুনে ওর বাসার ভেতরে চলে যায়। নিশা আর যায়না সে নিজের বাসায় চলে যায়। এদিকে ইয়াসা সোফায় বসে পানি খেয়ে আফিয়ার মাকে বলে,”আচ্ছা আফিয়ার সাথে যে খেলছিলো সে কে ছিলো?”
আফিয়া- ওটা তো নিশুপি ছিলো মামিমনি।
আফিয়ার মা- হ্যাঁ কিন্তু কেন?
ইয়াসা- নিশু?(অবাক হয়ে)
আফিয়ার মা মাথা নাড়ায়। ইয়াসা তখনই ফোন নিয়ে মাইশা মানে নিশার মাকে কল দেয়। হ্যাঁ ঠিক ধরেছেন ইয়াসাই মাইশার সেই বান্ধুবি। মাইশা ফোন রিসিভ করে বলে,
মাইশা- আরে ইয়াসা যে কেমন আছিস?
ইয়াসা- সেসব পরে হবে আগে এটা বল তোর মেয়ে কি ঢাকায় আছে?
মাইশা- হ্যাঁ ঢাকাই তো গেছে অনার্স কমপ্লিট করতে কিন্তু কেন?
ইয়াসা- কিইইইহ তোর মেয়ে ঢাকায় এসেছে আর তুই আমাকে এখন বলছিস।
মাইশা- আরে জানাবো জানাবো করে জানানোই হয়নি। এখন বল জানলি কি করে?
ইয়াসা- সেসব পড়ে এখন বাই পরে কথা বলছি।
বলেই ইয়াসা ফোন কেটে দিলো তারপর আফিয়ার সাথে নিশার বাসার দিকে যায়। নিশা আর আনিলা তখন টিভি দেখছিলো। কলিংবেল এর শব্দে আনিলা এসে দরজা খুলে। আফিয়ার সাথে এক মহিলাকে দেখে কিছুটা অবাক হয়।
আনিলা- ভেতরে আসুন।
আনিলার কন্ঠ শুনে নিশাও লিভিং রুম থেকে চুলের খোপা করতে করতে বলে,”কে এসেছে রে আনিলা?”
বলেই দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে সেই মহিলাটা(ইয়াসা)। ইয়াসা এখন ভালোভাবে নিশাকে পর্যবেক্ষণ করতে থাকে টানা টানা চোখ, ধবধবে ফর্সা, গোলাপের পাপড়ির ন্যয় ঠোটজোড়া, সামান্য হাসলেই গালে টোল পরে, পুরো চেহারা মায়ায় ভর্তি। এক কথায় অসাধারণ যে কাউকে পাগল করে ছাড়বে। নিশা একটা হাসি ঝুলিয়ে বলে,”আন্টি আপনি আমার বাসায়?”
ইয়াসা- তুমি কি মাইশার মেয়ে??
ইয়াসার মুখে মাইশা শুনতেই নিশা টাস্কি খেয়ে যায় এবং বলে,”হ…হে…হ্যাঁ কিন্তু আপনি আমার মাকে চিনলেন কি করে?”
ইয়াসা মুচকি হেসে বলে,”আমি ইয়াসা চৌধুরী তোমার মায়েএ বেস্টফ্রেন্ড।”
নিশা জিবহায় কামড় দিয়ে বলে,”ও আচ্ছা। আসুন ভেতরে এসে বসুন। আনিলা কিছু খাবারের ব্যবস্থা কর।”
তারপর ইয়াসার সাথে অনেক গল্প করে নিশা। ইয়াসাও অনেক জমানো গল্প বলে তারপর নিশার মায়ের সম্পর্কেও বলে।
নিশা- আচ্ছা আন্টি আপনি আমায় চিনলেন কি করে?
ইয়াসা- তোমার ডান গালের ছোট তিল আর তোমার হাসিটার কারণে। তোমার হাসি আর তিল টা পুরোই মাইশার মতো।
নিশা- ওহ।(মুচকি হেসে)
রাতে,,
ফারান শুয়ে আছে হঠাৎ পকেটে হাত যেতেই পকেট থেকে একটা রিং বের করে দেখতে থাকে। হ্যাঁ এটা সেই রিং যেটা নিশা ফারানের থেকে বাচতে নিচে ফেলে দিয়েছিলো। ফারান একটা কাগজ উঠাতে গিয়ে রিং টা পায় এবং দেখেই চিনে ফেলে যে এটা নিশার। ফারান রিং টার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলতে লাগে,”আচ্ছা এই মেয়েটার প্রতি আমার ফিলিংস কাজ করে কেন? কি আছে এই মেয়েটার মাঝে যার কারণে বারবার আমাকে নিশার প্রতি টানে? কেন ওয়াই? এতো কেন ভালো লাগে এই মেয়েকে। এই মেয়ে তো আমার শত্রু একে তো কঠিন শাস্তি দেওয়ার কথা কিন্তু কেন পারিনা আমি? কেন বড় বড় রিভেঞ্জ নিতে পারিনা এই মেয়ের থেকে।”
এগুলোই ভাবছে ফারান রিং টার দিকে তাকিয়ে। তারপর কখন যে ঘুমিয়ে পড়ে সে নিজেও জানেনা।
সকালে,,
নিশা ভার্সিটিতে এসেই পার্কিং প্লেসে যায় আর খুঁজে খুঁজে ফারানের বাইক পায়না। তারপর হর্ন পেতেই নিশা লুকিয়ে পড়ে একটা পিলারের পিছে। একটু উঁকি দিতেই দেখে ফারান আসছে। ফারান বাইক সাইডে ব্রেক করে মাথার হেলমেট টা খুলে তারপর হেলমেট সামনে থাকা হেলমেট সেল্ফ টায় রাখে। তারপর সেখান থেকে চলে যায়। ফারান চলে যেতেই নিশা আড়াল থেকে বেড়িয়ে আসে তারপর ভাবতে থাকে ওর বাইকটার কি করা যায়। ভাবার আগেই ক্লাসের সময় হয়ে যায় তাই নিশা ক্লাসে চলে যায়।
একেবারে ক্লাস আর প্র্যাক্টিস শেষ করে ফারানের আসার আগেই পার্কিং এ গিয়ে সেফটিপিন দিয়ে আস্তে করে টায়ার লিক করে পালিয়ে যায়। এদিকে ফারান কোনো কিছু না জেনেই বাইক নিয়ে বেরিয়ে যায় কিন্তু রাস্তাতেই হঠাৎ বাইকের টায়ারে প্রব্লেম হয় যার ফলে ফারানের এক্সিডেন্ট হয়!!
,
,
,
,
,
চলবে!!!