Mr_সাইকো_লাভার পর্ব-২২ ( ধামাকা নং ০২)

0
4683

#Mr_সাইকো_লাভার
#লাবিবা_ওয়াহিদ
“পার্ট ২২”(ধামাকা নং ২)
.
.
“তেরি বারিশে…
ভিগায়ে মুঝে….
তেরি হাওয়ায়ে
বাহায়ে মুঝে…..।”

নিশা- রাখেন আপনার গরিলা কন্ঠের গান। এমনেই এই জঙ্গলে আটকিয়ে পড়েছি কই বের হওয়ার রাস্তা খুঁজবেন তা না।

ফারান- তো কি করবো তোমার জন্যই তো আমি ফাঁসলাম আর রাস্তা তুমি খুঁজো না আমায় কি নিজের বডিগার্ড পাইসো যে তোমার কথায় উঠবো বসবো?

নিশা- হইসে অনেক বলসেন আমারই ভুল আপনাকে কিছু বলাটা।

বলেই নিশা যেই সামনে এগোবে ফারান হাত ধরে আটকিয়ে বলে,”ওই মেয়ে ওইদিকে কই যাচ্ছো আরো গভীরে গিয়ে বাঘের খাবার হওয়ার ইচ্ছা আছে নাকি?”

বাঘের কথা শুনে নিশা ভয়ে তাড়াতাড়ি ফারানের পিছে এসে লুকায়। তারপর কাপা কাপা গলায় বলে,”এ… এ.. এখানে বাঘ আছে?”

ফারান- থাকলেও থাকতে পারে তাই সাবধান। আমাদের খুব কেয়ারফুলি সামনে এগোতে হবে।

নিশা- কিন্তু আমরা কোন পথ দিয়ে এসেছিলাম?

ফারান এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে সূর্য অস্ত যাচ্ছে।

ফারান- আই থিংক পশ্চিম দিকেই যাওয়া উচিত সেখান দিয়েই তো এসেছিলাম।

নিশা- তাহলে চলুন তাড়াতাড়ি সন্ধ্যা হয়ে গেলে তো সর্বনাশ!

তারপর দুইজন আস্তে আস্তে পশ্চিমের দিকে যেতে থাকে। সন্ধ্যা যতই ঘনিয়ে আসছে নিশার মনে যেনো ততোই ভয় তাড়া করে বেড়াচ্ছে। যখনই সূর্য অস্ত গেলো তখনই ফারান আর নিশা ঝুনঝুনির আওয়াজ পেলো। ফারান আর নিশা একে অপরের দিকে তাকালো।

ফারান- তুমি শব্দ করেছো?

নিশা- না তো আমি কেন করতে যাবো।

ফারান- তাহলে?

– এই তোমলা কে এই বনে কি কলচো?

একটা পিচ্চির কন্ঠ শুনে ফারান নিশা সামনে তাকায় এবং দেখে একটা বাচ্চা ছেলে কিরকম পোশাক পড়া আর দেখতেও অদ্ভুত। ছেলে টার পিছে আরও মানুষ এসে জড়ো হলো। নিশা ফারানের বুঝতে বাকি রইলো না এরা পাহাড়ি অধিবাসী। বাংলাও স্পষ্ট না তাদের। নিশা হেসে বলে,”আসলে আমরা জঙ্গলে পথ হারিয়ে ফেলেছি আমাদের সাহায্য করুন।”

অধিবাসী গণ নিশাদের ভালো করে দেখে তারপর একজনকে কি যেনো বললো বলার পরপরই সেই একজন দৌড়ে কোথায় যেনো চলে গেলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেই লোকটি একজন বৃদ্ধ কে নিয়ে আসে। বৃদ্ধটিও অদ্ভুত দেখতে। তিনি নিশা আর ফারানের সামনে এসে দাঁড়ায় এবং স্পষ্ট শুদ্ধ ভাষায় বলে,”স্বাগতম তোমাদের। তোমরা কি এখানে পথ হারিয়ে ফেলেছো?”

নিশা- জি দাদু এখন আমরা এখান থেকে যাওয়ার রাস্তাও পাচ্ছি না।

– ও আচ্ছা সমস্যা নেই আজ রাতটা তোমরা আমাদের সাথে থাকতে পারো। আমরা চাকমা নৃগোষ্ঠী। আজ রাতটা এখানে থেকে কাল আমরা নিজে গিয়ে তোমাদের পৌঁছে দিয়ে আসবো।

নিশা আর ফারান একে অপরের দিকে তাকায়। ফারান বলে,”কিন্তু দাদু আমাদের আজ রাতের বাস করে ঢাকায় যাওয়ার কথা ছিলো এখন যদি না যাই বাস ধরা সম্ভব হবে না।”

বৃদ্ধ টি গম্ভীর হয়ে বলে,”এখন জঙ্গল সুরক্ষিত নয়। যাওয়ার পথে যেকোনো ধরণের বিপদ ঘটতে পারে। চিন্তা করিও না কাল সকাল ৮টার মধ্যে ঢাকার বাসে চলে যেতে পারবে। কিন্তু আমার মতে এখন যেও না”

দুজন কিছুক্ষণ ভেবে বলে ঠিক আছে কালই তারা যাবে।

এইদিকে,,

আফনাদ- কিরে ফারান কে ফোনে পেলি?

আদ্র- না সুইচড অফ বলছে।

আনিলা- নিশারও তো একই অবস্থা এখন কি করবো?

অদ্রি- দুজন একসাথেই উধাও তার মানে দুজন একসাথেই আছে।

রিদি- আমারও তাই মনে হচ্ছে। ওরা কোনো বিপদে পড়েনি তো?

আদন- নিশা যদি ফারানের সাথে থাকে তাহলে আর চিন্তা করিও না ওদের কিছুই হবে না। এখন চলো সবাই বাস ছাড়ার সময় হয়ে গেছে।

আনিলা- আমরা কি ওফের ছেড়েই চলে যাবো?

আফনাদ- উপায় তো আর দেখছি না। আল্লাহ ভরসা ওদের কিছু হবে না এখন চলো সবাই।

তারপর ৬জনই হাজার চিন্তা নিয়ে বাসে উঠে পড়ে।

রাতে,,,

– আচ্ছা নিশা আপু ঢাকা তে কি ইয়ায়ায়ায়ায়া বড় বড় দালান?

নিশা- হুম ইয়ায়ায়ায়া বড় বড় দালান।

– জানো আমার সেগুলা দেখতে খুব ইচ্ছে করে।

নিশা- তাই? তো চলো আমাদের সাথে।

– না না আম্মা আব্বায় লাগ কলবে।

পিচ্চি ছেলে আর নিশার দুস্টু মিষ্টি কথোপকথন ফারান দূর থেকে দেখছে। এমন সময় বৃদ্ধটা রুমে এসে বলে,”তুমি আর তোমার স্বামী মিলে এই রুমটায় থাকবে কেমন?”

নিশা- স্বামী মানে?(অবাক হয়ে)

ফারান- দাদু আমরা স্বামী স্ত্রী নই।

– কিইইই তাহলে তোমরা আমাদের এখানে আশ্রয় পাবে না।

নিশা আর ফারান অনেকটাই ভয় পেয়ে গেলো। পাশে থেকে একজন লোক বলে উঠে,”আমাদের এখানে পরপুরুষ এর সাথে কোনো মেয়ে থাকাটাই অবৈধ। এর শাস্তিস্বরূপ তোমাদের চাবুক মেরে আমাদের গ্রাম থেকে বের করে দেওয়া হবে।(রাগাম্বিত কন্ঠে)

নিশা আর ফারান চোখ বড় বড় করে একে অপরের দিকে তাকালো আর ভাবতে থাকে দুজন কোন বিপদের মধ্যে পড়লো। যেই লোক গুলো দুজনের দিকে তেড়ে আসতে থাকে ওমনি আরেকজন বৃদ্ধা মহিলা এসে ওদের থামায়।

– থামো ওদের চাবুক মারা লাগবে না।

– কিন্তু এছাড়া আর কোনো উপায়ই তো দেখছি না।

– আছে উপায়।

সবাই মিলে বলে,”কি?”

– এদের দুজন কে বিয়ে দেয়া হোক তাহলেই তো ওদের সম্পর্ক টা বৈধ তে পরিণত হবে।

নিশা এতোক্ষণে বুঝতে পেরেছে বিষয় টা। সবাই ভাবছে ফারান এবং নিশার মধ্যে অবৈধ সম্পর্ক আছে। কিন্তু এদের চাইলেও নিশা বুঝাতে পারবে না।
সবাই বৃদ্ধার কথায় খুশি হয়। শুরু হয় বিয়ের তোড়ঝোপ। কেউই ফারান এবং নিশার অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজনবোধ করছে না তারা নিজের মতোই কাজ করে যাচ্ছে। নিশা ধপ করে পাটিতে বসে পড়ে।

নিশা- শেষ পর্যন্ত কিনা নিজের ইজ্জত বাচাতে এই ফ্যালফ্যাল কে বিয়ে করতে হবে?(চিন্তিত সুরে)

ফারান বাইরের দিকে তাকিয়ে কয়েকবার ঢোক গিলে ভাবে,”শেষ পর্যন্ত কি না চাবুক খাওয়ার ভয়ে এই মরিচ টাকে আমার বিয়ে করে লাইফ হেল করতে হবে? ওয়াই আল্লাহ কেন এখানে আসতে গেলাম?”

এরকমই নানান চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে দুইজনের মাঝে। কিছুক্ষণ পরপরই কিছু লোক এসে ফারানকে অন্য রুমে নিয়ে যায় আর নিশাকে সাজাতে কিছু মেয়ে আসে। নিশা অতি শোকে পাথর এমন অবস্থা। মেয়েগুলো এটা সেটা বলে খুব হাসাহাসি করছে আর নিশাকে সাজাচ্ছে। নিশার কোন দিকেই খেয়াল নেই।

শেষে ইসলাম রীতিতেই ওদের বিয়ে সম্পূর্ণ হলো।(তারা আগে থেকেই নিশা এবং ফারানের ধর্ম জেনে নিয়েছিলো) দুইজনের মুখে একদম চুল পরিমাণও হাসি নেই। কি থেকে কি হয়ে গেলো। জীবনটা তাদের কোথায় গিয়ে দাঁড়ালো কি আছে তাদের পরবর্তী জীবনে?

রাতে নিশাকে কিছু একটা রুমে রুমে এসে বসিয়ে দিয়ে গেলো। ঘরটা বাঁশ দিয়ে তৈরি আর
চারপাশে বিভিন্ন ফুল দিয়ে সাজানো। নিশার এগুলা মন চাচ্ছে ছিড়ে ফারানের মুখে ছুড়ে মারতে। এমন সময়ই ফারানকে রুমে ধাক্কিয়ে ঢুকিয়ে দিলো তারপর বাইরে থেকে লাগিয়ে তারা চলে গেলো। নিশা ফারান কে দেখতে রেগে বলে,”খবরদার আমাকে টাচ করার চেষ্টা করবেন না যদি করেন তাহলে আপনার হাত কেটে আপনার আরেক হাতে ধরিয়ে দিবো।”

ফারান- তোমার এতো সাহসও নাই আমার হাত কাটার মতো আর কি বললে তোমায় টাচ করবো? হাসালে তোমার মতো জঙ্গলি পেত্নির প্রতি আমার কোনো ইন্টারেস্ট নেই ওকে যত্তোসব। এই ফারান চৌধুরির চয়েজ এতো লো না।

নিশা- তাহলে বিয়ে করসেন কেন?

ফারান- আমি কই ইচ্ছা করে করেছি নাকি? সব তোমার দোষে হইসে।

নিশা- না আপনার দোষ!

ফারান- কি করে আমার দোষ হলো?

নিশা- আমি জঙ্গলে ঢোকার আগে আটকালেন না কেন?

ফারান- তো কি পায়ের উপর পা তুলে বসে ছিলাম? তুমিই তো আস্ত একটা বয়ড়া কতো করে ডেকেছি শুনোই নি। কানে কি ঠাডা পড়সিলো? (রেগে)

নিশা আর কিছু বলে না নিজের ভুলের জন্য যে আজ তার এই পরিণতি সেটা নিশা বেশ ভালো বুঝতে পারছে। ফারান নিশার দিকে একবার তাকিয়ে জানালার পাশে ঢেলান দিয়ে বসে। নিশা ঘরটার চকিতে গিয়ে বসে আর বারবার এদিক সেদিক করে। ফারান বাহির টা দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়ে সেভাবেই বসে। নিশা খেয়াল করে দেখে ফারান ঘুমিয়ে পড়েছে। চকি তে থাকা কাথা টা নিয়ে নিশা আস্তে করে ফারানের পাশে বসে কাথাটা জড়িয়ে দিলো তারপর নিজে চকিতে গিয়ে শুয়ে পড়ে।
,
,
,
,
,
,
চলবে!!!

(গঠনমূলক মন্তব্যের প্রত্যাশায় রইলাম ধন্যবাদ)