#Mr_সাইকো_লাভার
#লাবিবা_ওয়াহিদ
“পার্ট ২৯”
,
,
,
ফারান গাল ফুলিয়ে বলে, “মরিচ আর মুড়ি!!! এই মেয়ে আমি এগুলা খাবো??
নিশা- খাইলে খান না খেলে বিদায় হন।
ফারান মরিচের দিকে তাকিয়ে একটা শয়তানি হাসি হাসলো। তারপর নিশা এক টান দিয়ে নিজের পাশে বসিয়ে দুটো মরিচই গান টিপে মুখে ঢুকিয়ে দিলো। নিশা নিজেকে ছাড়ানোর বৃথা চেষ্টা করতে লাগে। ফারান ছাড়তেই নিশা দৌড় দেয় ওয়াশরুমের দিকে। এদিকে ফারান হাসছে। নিশা মরিচ গুলো ফেলে রেগে বোম হয়ে ফারানের সামনে আসে আর চিল্লিয়ে বলে,” সমস্যা কি আপনার আমায় না জ্বালালে কি আপনার পেটের ভাত হজম হয়না?”
ফারান- আরও আমায় এসব দেও! ভালো কথার কদর নেই। ভালো করে নাস্তা বানিয়ে আনতা এসব কিছুই হতো না।
নিশা- আমি কেন বানাবো? দুনিয়ায় মানুষের কি অভাব পড়সে?
ফারান- দুনিয়ার মাঝে আমার একটাই বউ সেইটা হলে তুমি তাই তুমিই বানাবা। তাড়াতাড়ি যাও আমার জন্য স্যান্ডুইচ বানিয়ে আনো নইলে খবর খারাপ আছে।
নিশার মন চাচ্ছে নিজের চুল নিজেকেই ছিড়তে। এই লোক টারে তো সাইকোর নোভেল দেওয়া উচিত। এভাবে কেউ জ্বালার উপর রাখে? নিশাকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ফারান বলে,”কি হলো এখনো এভাবে দাঁড়িয়ে আছো কেন? যাবা নাকি আনিলাকে ডেকে উঠাবো। আনিলা যদি তোমার সাথে আমাকে তোমার বাসায় দেখে তখন কি হবে ভাবতে পারছো?”
ফারানের কথায় নিশা ঢোক গিলে তারপর কিছু না বলে কিচেনে চলে যায়। কোনোরকমে একটা ডিম ভেজে দুই পাউরুটির মাঝে রেখে সেটায় মেয়োনিস আর টমেটো সস দিয়ে বানিয়ে ফেলে। ব্যাস তৈরি ফারানের স্যান্ডউইচ।
স্যান্ডউইচ টা নিয়ে নিশা ফারানের সামনে রাখে। ফারান আগ্রহী হয়ে ভেতর টা চেক করে তারপর গম্ভীর হয়ে বলে,”ডিমের উপরে তোমাকে মেয়োনিস, টমেটো সস দিতে কে বললো?”
নিশা- এতোই যখন গাফিলতি তাহলে নিজে বানিয়ে খেতেন। যেমনে দিসি সেভাবে খেয়েই বিদায় হন যত্তোসবম
ফারান- কি দজ্জাল মেয়ে রে বাবা ওহ সরি ‘বউ’ হবে।
নিশা- আপনার ভাগ্য ভালো মরিচের স্যান্ডুইচ করে দেইনাই।
ফারান- দিলে তো তোমাকে দিয়েই গিলাতাম। সে যাইহোক কি আর করার পেটের দায়ে খেতেই হবে।
ফারানের কথায় নিশা ভেংচি কাটলো। ফারান চুপচাপ খেয়ে চলে গেলো। নিশাও যেনো হাফ ছেড়ে বাচে। এভাবেই দিন যেতে লাগলো। ধীরে ধীরে নিশার ১ম সেমিস্টারের পরিক্ষা চলে আসলো। নিশার পরিক্ষার জন্য ফারান পরিক্ষার এক মাস আগে থেকেই নিশাকে জ্বালানো বন্ধ করে দিয়েছে। ফারান চায় নিশা ভালো রেজাল্ট করুক তাই তেমন নিশাকে ডিস্টার্ব করে না। নিশাও যেনো হাফ ছেড়ে বাচে ফারান না জ্বালানোয়। কিন্তু নিশা কেন যেনো ফারানের ডিস্টার্বস গুলা মিস করে। কিন্তু নিজেকে এসব থেকে ঝেড়ে ফেলে পড়ার দিকে মনোযোগ দেয়। নিশার মা বাবা প্রায়ই ফোন করে পরিক্ষা সম্পর্কে টিপস দেয়। তাদের কথা মতোই নিশা একেক স্টেপে পড়াশোনা চালিয়ে যায়।
নিশার পরিক্ষা খুব ভালোভাবেই শেষ হলো। সে খুব খুশি এতো ভালো পরিক্ষা দিতে পেরে। আনিলা রিদিও মোটামোটি। ওদেরও নিশা টুকটাক হেল্প করেছে। পরিক্ষা শেষ হওয়ার পরেরদিনই অদ্রি সকল কে একসাথে মিট করতে বলে। নিশা, আনিলাও রাজি হয় মিট করবে বলে। সেদিন বিকালে,,,
নিশা আজ নিল কালারের লং টপস,ব্লেক জিন্স আর মাথায় মিষ্টি কালারের হিজাব পড়েছে। চোখে আইলেনার, আর ঠোটে সামান্য লিপজেল। এতেই নিশাকে যেনো অপরূপ লাগছে। নিশার হঠাৎ নথের দিকে খেয়াল গেলো। নথ টার দিকে চোখ বুলিয়ে নিশা এক মুহূর্তের জন্য অন্য ভাবনায় চলে গেলো।
‘সে যে বিবাহিত। যখন তার মায়ের কাছে থাকতো তখন আশেপাশে কারো বিয়ে হলে শুনতো বিয়ের পর মেয়েদের নাকে নথ পড়তে হয়। কিন্তু কি কারণে সেটা নিশা জানেনা হয়তো কোনো কুসংস্কার।’
নিশা সব মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে আনিলাকে নিয়ে বেরিয়ে গেলো। প্রায় ১ঘন্টার মাঝে দুজনে গুলশানের একটা নামকরা রেস্টুরেন্ট এ চলে আসে। সেখানে কিছুদিন আগে তৌহিদ আফ্রিদি, রাফসান আর সালমান এসে ভ্লোগ করে গিয়েছিলো। সত্যি ফোনের চেয়ে সামনাসামনি আরও অনেক সুন্দর। নিশার তো সেইরকম হাসি পাচ্ছে তৌহিদ আফ্রিদিদের স্পাইসি নুডুলস এর চ্যালেঞ্জ মনে করে।
নিশা- আনু তোর মনে আছে?
আনিলা- মনে থাকবে না সারাজীবন মনে থাকবে। সে যাইহোক কখনোই ওই এক লাখ টাকা জিততে পারতাম না সেটা নিশ্চিত।
আনিলার কথায় নিশা হেসে দিলো। তারপর দুজন আরও একটু এগোতেই দেখলো অদ্রি কাকে কল দিতে দিতে নিশা আর আনিলার দিকেই আসছে। নিশা মুচকি হেসে অদ্রিকে ডাক দিতেই অদ্রি নিশাদের দিকে তাকায়। এতোক্ষণ খেয়াল করেনি অদ্রি।
অদ্রি- ওহ ফাইনালি তোরা এসেছিস আমি তোদের জন্যই সামনে এগোচ্ছিলাম! কিন্তু রিদি কোথায়?
রিদি-(পেছন থেকে) এইযে আমিইই!!
আনিলা নিশা পিছে তাকালো। রিদি নিশাদের কাছে আসে তারপর অদ্রি নিজের বুকিং করা জায়গায় ৩জনকে নিয়ে গেলো। নিশা কিছুটা দূরে সুরমা কালারের টিশার্ট পড়া ছেলেটির দিকে অবাক চোখে তাকায়। ছেলেটি আর কেউ নয় ফারান। নিশা ফারানকে দেখে আরেকদফা ক্রাশ খায়। কতোদিন পর সে ফারানকে দেখলো তাও এমন কিলার লুকে।
-“আচ্ছা এই ফ্যালফ্যাল টা মুখে কি মাখে? দিনদিন শুধু সুন্দরই হয়। আগের চেয়ে বেশ ফর্সা হয়ে গেছে। কই আমি তো জীবনেও এতো সুন্দর হলাম না। আচ্ছা এই বজ্জাত টা কি মুখে কিছু মাখে হয়তোবা, নইলে এতো সুন্দর কেমনে হয় কোনো ছেলেমানুষ!!
নিশা এসবই ভাবছিলো আনিলা ধাক্কা দিতেই ধ্যান ভাঙ্গে। তারপর নিজেকে স্বাভাবিক করে ফারানদের দিকে যায়। কিন্তু সমস্যা হলো ফারানের পাশের চেয়ার টাই খালি আর সব সবাই দখল করে বসে আছে। নিশা এখন পড়েছে অস্বস্তিতে কি করে বসবে সে ফারানের পাশে? অদ্রি নিশাকে বসে থাকতে দেখে বলে,”কি হলো এভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেন বোস।”
নিশা মাথা নাড়ায়। তারপর কিছু না ভেবে ফারানের পাশেই বসলো। ফারান নিশার দিকে না তাকিয়েই একটা খোচা মেরে কথা বললো।
ফারান- জানি জানি সব মেয়েরা আমার পাশে বসার জন্য পাগল আর সুযোগ পেলে তো কথাই নেই।
নিশা চোখ রাঙিয়ে ফারানের দিকে তাকালো কিন্তু ফারান নিশার দিকে এখনো তাকায়নি। সে তো ফোনে গেম খেলতে ব্যস্ত। নিশার তো মন চাচ্ছে এক লাথি দিয়ে চেয়ারসহ ফারানকে ফেলে দিতে। কিন্ত আফসোস এতো মানুষের সামনে এসব করতে পারবে না। ফারান ফোনের দিকে তাকিয়েই টেবিল থেকে কফি নিয়ে কফিতে এক চুমুক দিয়ে বলে,”সব মেয়েরা আমায় চোখ দিয়ে গিলে খায় কেন বুঝিনা।”
নিশার রাগ যেনো আরও বেড়ে গেলো। নিশা কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না রাগে। পরে নিজেকে সামলে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,”আসলে হয়েছে কি আবর্জনায় মাছি একটু বেশিই ভনভন করে।”
নিশার কথা শুনে ফারানের মুখ থেকে কফি সব ফুত করে বেরিয়ে গেলো। নিশা ফারানের অবস্থা দেখে শয়তানি হাসি দিলো। আদন অবাক হয়ে বলে,”কি হলো ব্রো কফি এভাবে ফেললি কেন?”
ফারান- সরি আসলে নওমি কল দিলো তো হঠাৎ তাই।
নিশার মনে পরে গেলো সেইদিনের কথা। ভাবতেই নিশা মাথায় হাত দিলো।
নিশা-(সেদিন তো ওই মেয়ে কে বলেছিলাম যে এই বজ্জাত টা আমার হাসবেন্ড। সেদিনের কথা এভাবে সত্যি হবে কখনো ভাবিনি। তবে আগে তো ভুলেই গেছিলাম ওই মেয়ে ওনার গার্লফ্রেন্ড ছিলো। পেয়েছি আইডিয়া!!)
ভেবেই নিশা শয়তানি হাসি দিলো। এবার আদ্র বলে,”ওয়ায়ায়াট!! ওই মেয়ের এখন আবার কি চাই?”
ফারান- আই ডোন্ট নো।
(সবাই হয়তো ভাবছেন ফারান মিথ্যা বলছে। কিন্তু সত্যি সত্যিই নওমি তাকে ফোন দিয়েছে।)
আফনাদ- এর কিছু না কিছু ব্যবস্থা করতেই হবে।
আনিলা- আচ্ছা এই নওমি টা কে?
নিশা- ফারান ভাইয়ার গার্লফ্রেন্ড মেয়বি।
ফারান নিশার মুখে “ভাইয়া” শুনে সেইরকম চটে গেলো। আবার ওই নওমিকে গফ বলার কারণে আরও বেশি।
রিদি- ওওও আচ্ছা তা ফারান ভাইগা জানালেন না যে?
আদন রিদিকে থামিয়ে দিয়ে বলে,”আরেহ কিসের জিএফ ওইটা তো ফাউল মেয়ে গায়ে পড়া স্বভাব।”
আদ্র- ওই থার্ড ক্লাস মেয়ে কে আমার একদম সহ্য হয়না।
আফনাদ- আমারও। আর ফারান তো কখনো ওই মেয়েকে পাত্তাও দেয়নি।
অদ্রি- আমিও শুনেছিলাম কিন্তু কিছু মাস ধরে দেখছি না ওই ঢংগি কে। ওই মেয়ে তো আমারই ব্যাচমেট।
আদ্র- আই থিংক কোনো লালন গীতির পাল্লায় পড়ে দেশছাড়া হয়েছে।
নিশা সবার কথা শুনে অবাকের উপর অবাক হচ্ছে। তার মানে কি নওমি ফারানের জিএফ ছিলো না? তাহলে ওইদিন সেসব কথা গুলো নিশা শুধু শুধু বললো?
নিশা- আমি তো সেদিন এই আপুটাকে ফারান ভাইয়ার গলা ঝুলে থাকতে থুক্কু হাগ করতে দেখলাম।(ডাহা মিছা কথা)
ফারান আরও রেগে গেলো।
ফারান- ওই মেয়ে ভাইয়া ডাকা বন্ধ করো নইলে তোমায় উঠিয়ে আছাড় মারবো।
আদ্র- ওম্মা তাই? তা নিশা তোকে ভাইয়া ডাকছে বলে তুই এতো চেতছিস কেন?(ভ্রু কুচকে)
ফারান- আমার ভাইয়া ডাক শুনতে ভালো লাগে না।(আরে হারামি বউয়ের মুখে ‘ভাইয়া’ ডাক শোনা টা কতোটা বুকে লাগে তা তুই বুঝবি না।)
নিশা তো মিটমিট করে হেসেই চলেছে ফারানের এমন মুখ দেখে। সেই শিক্ষা হয়েছে এই ফারানের।
আদন- ওহ ওইটা মেয়বি ফারান কে পটাতে গিয়ে হয়তো।
অদ্রি- আচ্ছা এসব কথা ছাড়ো যেজন্য আমি আর আফনাদ তোমাদের ডেকেছি…
আদন- হুম বলে ফেলেন।
অদ্রি এবার লজ্জা পেলো তারপর আফনাদকে খুচিয়ে ইশারা করে বলে যেনো আফনাদ ব্যাপার টা সবাইকে বলে। আফনাদ গলা ঝেড়ে বলা শুরু করে।
আফনাদ- আসলে আমার আর অদ্রির মধ্যে যে রিলেশন ছিলো সেটা মা কি করে যেনো জেনে যায়। তারপর অদ্রির ফুল ডিটেইলস বের করে বাবাকে রাজি করিয়ে আমারই অগোচরে তারা অদ্রির বাসায় প্রস্তাব নিয়ে যায়।
,
,
,
,
,
চলবে!!!