আসক্তিময়_ভালবাসা পর্ব-২১

0
3305

#আসক্তিময়_ভালবাসা
#Part_21
#Writer_Asfiya_Islam_Jannat

আনিশা দীর্ঘ নিশ্বাস নিয়ে দরজার দিকে চলে যায়। দরজার খুলার সাথে সাথে যাকে দেখতে পায় তাকে তার মাথায় বাজ পড়ে। চোখ দুইটো রসগোল্লার মত বড় হয়ে যায়। এই বুঝি বেড়িয়ে আসবে। হুট করেই কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমতে শুরু করে। ভয়ে ঢোক গিলতে থাকে। মনের মধ্যে অজানা ভয় জমতে শুরু করে। সে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,

— আপনি এইখানে?

সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মহিলাটি একটু কাঠ কাঠ গলায় বলে,

— হ্যাঁ আমি এইখানে। কেন তোমার এইখানে আসা বারণ নাকি?

— না! না! আন্টি সেটা মিন করেনি।

— জানাই আছে তুমি কি মিন করেছ।

এই বলে তিনি ভেংচি কাটেন। আনিশা সাথে সাথে মাথা নুয়ে মনে মনে বলে,

— এ আবার কি চায় এখন? সব কথাই তো মানছি তার। ডা. মারুফের কাছ থেকে তো যথেষ্ট দূরত্ব বুজিয়ে রেখেছি, তাকে অবহেলা করছি, বার বার ফিরিয়ে দিচ্ছি। তাহলে আবার নতুন কি ড্রামা করতে এসেছেন উনি।

এমন সময় সেই মহিলাটি গলা একটু উঁচু করে বলে,

— আজব তো! আমাকে কি আজ দরজার বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখবে নাকি? বাড়িতে মেহমান আসলে বুঝি তোমরা এমনই করো? ভদ্রতা শিখ নি?

আনিশা চট জলদি বলে উঠে,

— সরি আন্টি! খেয়াল করি নি। ভিতরে আসুন।

ওই বলে দরজা থেকে একটু দূরে সরে দাঁড়ায়। মহিলাটি বাসার ভিতর ঢুকে চারদিক তাকিয়ে একবার ভালো মত দেখে নেয়। মাঝারি আকারের ফ্ল্যাট। দরজা থেকে ৬ হাত দূরেই ডান দিকে একটি রুম আছে। একটু সামনে এগুলেই ড্রয়িং ও ডায়নিং একসাথে। সামনের দিকে সোফা আর টিভির ট্রলির উপর টিভি রাখা। এর মাঝে ছোট একটি সেন্টার টেবিল। এর থেকে ৪-৫ হাত দূরেই খাওয়ার টেবিল। তার থেকে কিছু হাত দূরেই শোকেস। যেটাতে বিভিন্ন ধরনের কাঁচের জিনিস সাজানো। ডায়নিং এর পশ্চিম দিকে আরেকটি রুম। তার সাথে দেয়াল ঘেষে একটু ভিতরের দিকে আরেকটা রুম। উত্তর দিকে রান্নাঘরের দরজাটি। মহিলাটি চারদিকে চোখ বুলিয়ে সোফার দিকে চলে যান। আনিশা দরজা লাগিয়ে তার পিছু পিছু যায়। মহিলা সোফায় বসতেই আনিশা জিজ্ঞেস করে,

— আন্টি কি নিবেন? ঠান্ডা বা গরম

মহিলাটি সরু চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বলে,

— যাক তাহলে সামান্য হলেও মেনারস আছে। তা আমাকে এক গ্লাস পানি দিলেই হবে।

আনিশা দৌঁড়ে শোকেসের দিকে যায়। ওইখান থেকে ভালো দেখে একটা গ্লাস বের করে রান্না ঘরের দিকে যায় তা ধোয়ার জন্য। আনিশার মা রোকসানা বেগম তখন ভাত ঝরানোর জন্য বসিয়েছেন। নিজের হাত কাপড়ে মুচতে মুচতে বলেন,

— কে এসেছে রে মা?

আনিশা গ্লাস ধুতেধুতে বলে,

— পরে বলছি। আপাতত কিছু নাস্তার ব্যবস্থা করো তো।

রোকসানা বেগম সরু দৃষ্টিতে তার দিকে তাকায়। অতঃপর কেমন খচখচ করতে করতে নাস্তায় দেওয়ার মত বাসায় কি আছে তা দেখতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। আনিশা দ্রুত খালি গ্লাসটি পানিভর্তি করে একটা ট্রেতে নিয়ে যায় সেই মহিলার কাছে। আনিশা তার সামনে গিয়ে পানিভর্তি গ্লাসটা এগিয়ে দেয়। মহিলাটি গ্লাসে একটি চুমুক দিয়ে বলেন,

— তোমার বাবা-মা কোথায়? বাসায় আছে তো?

সাথে সাথে আনিশা ভয়ে জমে যায়। সে ভয়ার্ত চোখে সেই মহিলার দিকে তাকায়। মনে মনে,

— বাবা-মাকে কেন চাইছেন তিনি? কি করতে চাইছেন তিনি? আমার মনে অশান্তি সৃষ্টি করে কি তার মন ভরে নি যে এখন বাসা পর্যন্ত এসে পড়েছেন? আর কি চাই এই মহিলার যার জন্য একদম আমার বাসা পর্যন্ত এসে পড়েছেন তিনি।

অতঃপর মহিলার কর্কশ কন্ঠ কানে আসতেই আনিশা নিজের ভাবনার জগৎ থেকে বেড়িয়ে আসে।

— কি জিজ্ঞেস করছি? তোমার বাবা-মা বাসায় আছে?

আনিশা কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে,

— জ্বী আছে।

— যাও তাদের ডেকে নিয়ে আসো তাদের।

আনিশা ঢোক গিলে করে বলে,

— কেন জানতে পারি?

— বিয়ের দাওয়াত দিতে এসেছি তাদের। আর কিছু?

সাথে সাথে আনিশার বুক মোচড় দিয়ে উঠে। মনে পড়ে যায় মারুফের সেই কথাটি, ” এখন তো তোমার পিছে ঘুরছি বলে দাম দিচ্ছ না। আমার ভালবাসার উপলব্ধি করতে পারছো না। যেদিন হারিয়ে যাব সেইদিন বুঝবে আমার ভালবাসাটা।”
তার মানে কি সত্যি ডা. মারুফ আনিশার থেকে দূরে চলে যাচ্ছে? হারিয়ে ফেলছে চিরতরে জন্য? বিয়েটা কি ডা. মারুফের? তারই কি দাওয়াত দিতে এসে তার মা।

আনিশার রীতিমতো হাত-পা কাঁপা-কাঁপি শুরু হয়ে গিয়েছে। বুকের বা পাশে হাল্কা চিনচিন ব্যথা করছে। কেন করছে তার কারণ জানা হয়েও অজানা। দম বন্ধ হয়ে আসছে আনিশার। শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে। মহিলাটি এবার গলা খেঁকিয়ে বলে,

— কি হলো দাঁড়িয়ে আছো কেন? যাও ডেকে নিয়ে এসো।

আনিশা কোন মতে নিজেকে সামলিয়ে নেয়। অতঃপর কিছু বলতে যায় তার আগেই আনিশার বাবা ইসমাঈল সাহেব ঘর থেকে বেড়িয়ে আসেন। অতঃপর সোফায় বসা আগন্তুক ব্যক্তিকে দেখে চমকে উঠেন। অতঃপর সে নিজেকে সামলে নিয়ে সামনে এগিয়ে এসে কুশল বিনিময় করে বলে,

— জ্বী আপনি কে? আপনাকে ঠিক চিনলাম না।

মহিলাটি একটু হেসে বলে,

— জ্বী এখনই জানতে পারবেন। তার আগে যদি আপনি নিজের স্ত্রীকে একটু ডাকতেন। দুইজনের সাথেই আমার কিছু কথা আছে।

ইসমাঈল সাহেব চোখের মোটা ফ্রেমটা ডান হাত দিয়ে ঠিক করে সুক্ষ্ম দৃষ্টিতে মহিলাটির দিকে তাকান। মাঝবয়েসী একজন মহিলা। পরনে তার অতি সুন্দর ও দামী একটি জামদানী শাড়ি। মাথায় সিল্কের কাপড়ের হিজাব। হাতে দুইটি মাঝারি সাইজের সর্ণের চুড়ি। নাকে ছোট একটা সর্ণের নোসপিন। বিড়ালছানা চোখে কাজল দেওয়া ও ঠোঁটে কড়া রঙের লিপস্টিক। মুখে হাল্কা বয়সের ছাপ পড়েছে। ইসমাঈল সাহেব একটু নড়েচড়ে দাঁড়িয়ে ডাকতে শুরু করেন,

— আনিশা মা শুনছো? এইদিকে একটু এসো তো।

অপর দিকে থেকে কোন সারাশব্দ না পেয়ে ইসমাঈল সাহেব আনিশাকে বলে,

— মা যা তো। তোর মাকে ডেকে নিয়ে আয়।

আনিশা ভয়ে একদম জমে আছে। হাত-পা নাড়তে পারছে না। সে কোন মতে মাথা দুলিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতেই দেখে রোকসানা বেগম হাতে ট্রে নিয়ে এইদিকে আসছেন। সম্ভব নাস্তা নিয়ে আসছেন। তা দেখে আনিশা আর আগায় না। রোকসানা বেগম ঠোঁটের কোনে চওড়া এক হাসি ঝুলিয়ে নাস্তার ট্রে-টা সেন্টার টেবিলে রাখেন। অতঃপর সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে সুতি শাড়ির আচলটা আরেকটু টেনে নিজের মাথার ঘুমটা ঠিক করে নেন। কুশল বিনিময় করার জন্য বলে,

— আসসালামু আলাইকুম আপা! ভালো আছেন?

— ওয়ালাইকুম আসসালাম। আলহামদুলিল্লাহ! আপনারা দাঁড়িয়ে আছেন কেন বসুন?

ইসমাঈল সাহেব সম্মতি জানিয়ে পাশের সিঙ্গেল সোফায় বসে। রোকসানা বেগম সেই মহিলার পাশেই দূরত্ব বুজিয়ে রেখে বসে। ইসমাঈল সাহেব গলা ঝেরে বলে,

— জ্বী বলুন কি বলবেন?

মহিলাটি ইতস্তত করে বলে,

— কথাটা একান্তই আপনাদের সাথে। তাই বলছিলাম কি এইখানে কোন ছোট মানুষ না থাকলে ভালো হয়।

ইসমাঈল সাহেব কিছুক্ষণ মহিলাটির দিকে ছোট ছোট চোখে তাকিয়ে রয়ে আনিশার দিকে তাকান। অতঃপর নরম সুরে বলেন,

— মা যাও তুমি ভিতরে যাও তো। দরকার হলে আমি তোমায় ডাকবো নে কেমন?

আনিশা কোন মতে মাথা দুলিয়ে নিজের টলমল পায়ে রুমের দিকে অগ্রসর হয়। দরজা পর্যন্ত আসতে আসতেই সে শুনতে পায়,

— জ্বী আমি শায়েলা আহমেদ। ডা. মারুফ আহমেদ এর মা। আপনার মেয়ে যে মেডিক্যালে পড়ে সেই মেডিক্যালেরই একজন সার্জেন ও। আমি আসলে….

এরপর আর শুনা গেল না। রুমে এসে আনিশা ধপ করে চেয়ারে বসে পড়ে। তার শরীর থরথর করে কাঁপছে। দাঁড়িয়ে থাকার মত নুন্যতম শক্তি তার মধ্যে নেই। তা না হলে দাঁড়িয়ে থেকে হয়তো কথাগুলো শুনা যেত। আপাতত আনিশা এইসব নিয়ে ভাবছে না। সে ভাবছে মারুফের কথা। সত্যি কি সে বিয়ে করছে? তার থেকে কি সত্যি দূরে চলে যাচ্ছে?
না আর ভাবতে পারছে না সে। আনিশা পড়ার টেবিলে মাথা হেট করে চোখ বন্ধ করে রাখে। কিছু ভালো লাগছে না। সব আজ বিষাদময় লাগছে।

বেশ কিছুক্ষণ পর রোকসানা বেগম আনিশার রুমে আসে। মেয়েকে পড়ার টেবিলে মাথা হেট করে থাকতে দেখে তার পাশে গিয়ে দাঁড়ান। মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকেন। মাথায় কাউরো কোমল হাতের স্পর্শ পেয়ে আনিশা মাথা তুলে উপরে তাকায়। অতঃপর রোকসানা বেগমকে দেখতে পেয়ে স্থির হয়ে বসে৷ রোকসানা বেগম ইতস্তত স্বরে বলে,

— মা তোর কি কোন নিজস্ব পছন্দ আছে? মানে কাউকে কি তুই ভালবাসিস?

রোকসানা বেগমের এমন কথা শুনে প্রথমে আনিশা চমকে উঠে। বিস্ময় ভরা চোখে তাকিয়ে থাকে তার মায়ের মুখ পানে। অতঃপর নিজেকে সামলে জিজ্ঞাসুক দৃষ্টিতে তাকায় আর বলে,

— এমন কেউ নেই মা। কিন্তু হঠাৎ প্রশ্ন করলে কেন বলতো?

রোকসানা বেগম প্রশান্তির নিঃশ্বাস নিয়ে বলেন,

— তোর জন্য সম্বন্ধ এসেছে। ছেলে নাকি ডাক্তার আর তোদের মেডিক্যালেরই সার্জেন। ভালো ফ্যামিলি। ছেলেও দেখতে মাশাল্লাহ। আমার আর তোর বাবার বেশ পছন্দ হয়েছে। কিন্তু আমরা তাদের এখনো স্পষ্ট কিছু জানাই নি। আগে তোর সম্মতি নেওয়া দরকার বলে জানিয়েছি তাদের।

আনিশা বিস্মিত চোখে তাকিয়ে বলে,

— কিন্তু মা আমি তো..

রোকসানা বেগম কথার মাঝে ফোড়ন দিয়ে বলে,

— জানি মা তুই এখন বিয়ে করতে চাইচ্ছিস না। পড়ালেখা শেষ করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাচ্ছিস আগে। আমারও এই একই কথা বলেছি। তারা বলেছে আপাতত আকদটা করে রাখতে চায়। অতঃপর তোর পড়ালেখা শেষ হওয়ার পরই বড়সড় করে বিয়ের অনুষ্ঠান করে তোকে তুলে নিয়ে যাবে।

আমি নিজের কানকে বিশ্বাস করাতে পারছি না। এইসব কি বলছে মা। এইটা কখনোই সম্ভব না। আনিশা ভয়ার্ত কন্ঠে বলে,

— সম্বন্ধটা কে এনেছে?

— ছেলের মা নিজেই এসেছে সম্বন্ধটা নিয়ে। ছেলের নাকি তোকে আগে থেকেই পছন্দ করে। তাই মাকে দিয়ে সম্বন্ধ পাঠিয়েছে। এখন তুই রাজি হলেই আমরা তাকে হ্যাঁ বলতে পারি। আর খোঁজ নিয়ে দেখতে পারি। তা তুই কি বলিস?

আনিশা হ্যাবলার মত ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে। কি বলবো বুঝতে পারছি না। গলায় শব্দগুলো দলা পাকিয়ে আসছে। মনে মনে বলছি,

— এ কিভাবে সম্ভব। যে মহিলা আমাকে সামান্য পরিমাণ পছন্দ করে না। আমাকে নিজের ছেলের থেকে দূরে সরিয়ে রাখার জন্য কতভাবে চাপ দিলেন। সে স্বয়ং এসেছে তার ছেলের বিয়ের সম্বন্ধ নিয়ে। কিভাবে কি?

মাথা একদম ফাঁকা হয়ে আছে। মুখ দিয়ে শব্দ বের হচ্ছে না। এইদিকে রোকসানা বেগম অনবরত আনিশাকে জিজ্ঞেস করেই চলেছে। আনিশা কোন মত নিজেকে সামলিয়ে বলে,

— আমার কোন সমস্যা নেই মা। তোমরা যা ভালো বুঝো তাই করো।

রোকসানা বেগম যেন এই কথাটির প্রত্যাশায় ছিলেন। তা তার প্রশস্ত হাসি দেখেই বুঝা যাচ্ছে। রোকসানা বেগম মেয়ের কপালে চুমু খেয়ে খুশি মনে বাইরে চলে যান। আনিশা সেখানেই হ্যাবলার মত বসে রয়। অতঃপর রুমে শায়েলা বেগম প্রবেশ করেন। তাকে দেখার সাথে সাথে আনিশা দাঁড়িয়ে যায়। পাশেই তাকিয়ে দেখে বিছানা একদম অগোছালো। তার মধ্যে এখনো নিশু ঘুমাচ্ছে। বিছানার এক কোনে শুকনো কাপড় গুলো রাখা। আনিশার মাথা নুয়ে আসছে এমন পরিবেশ দেখে। শায়েলে বেগম আনিশার সামনে এসেই ওর ডান হাতটা চেপে ধরে উঠায়৷ সাথে সাথে আনিশা চমকে উঠে। আজ যেন তার চমকানোর দিনই। ক্ষণে ক্ষণে চমকে উঠছে সে। শায়েলা বেগম নিজের হাতে থাকা মোটা সর্ণের বালাটি ওর হাতে পড়িয়ে দিতে থাকেন আর বলেন,

— তোমার মনে নিশ্চয়ই প্রশ্ন উঠেছে যে, হুট করে আমি তোমার জন্য নিজের ছেলের জন্য সম্বন্ধ কেন নিয়ে আসলাম? আমি তো তোমায় পছন্দই করি না। তাই তো!

আনিশা মাথা দুলায়। শায়েলা বেগম বালাটা পড়িয়ে দিয়ে মৃদু কন্ঠে বলেন,

— আসলেই আমি কখনো তোমাকে নিজের ছেলের বউ হিসাবে মেনে নিতে পারতাম না। কেন না তোমার ক্লাস আর আমাদের ক্লাস মিলে না। কিন্তু ছেলে যে আমার তো তোমায় পাগলের মত ভালবাসে। আমি দেখেছি তোমার জন্য ওর ছটফট করাটা। তোমার প্রতি ওর পাগলামি গুলো। ও যে তোমায় না পেলে মরে যাবে। ওর এই পাগলামোর জন্যই আমায় মানতে হলো।

জানো ছোট থেকে এই পর্যন্ত ও আমার কিছু চায় নি। কেন না আমি সবসময়ই ওর চাওয়ার আগে ওর ইচ্ছা পূরণ করেছি। যার জন্য ওর চাওয়ার কখনো প্রয়োজনই পড়ে নি। এই প্রথম ও আমার কিছু চেয়েছে। কি চেয়েছে জানো? ও তোমায় চেয়েছে আমার কাছে। আমার কোলে মাথা রেখে ফুঁপিয়ে কেঁদেছে তোমার জন্য। বড় হওয়ার পর থেকে আমি ওকে কাঁদতে দেখেনি। সবসময় হাসি খুশি থাকতে দেখেছি। তো বুঝতেই পারছো ওর চোখে এক ফোঁটা জল আমায় কত পুড়িয়েছে। অবশেষে হার মানতে হলো ওর সামনে। তাই তো আজ আমি এইখানে। কি করবো মা তো। নিজের চাওয়াকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে ছেলেকে তো শেষ হয়ে যেতে দেখতে পারি না তাই না?

আনিশার কি হলো কে জানে। সে জিজ্ঞেস করে বসে,

— আপনি কি আমায় মেনে নিতে পারবেন?

— ছেলের খুশির জন্য আমি সব করতে পারি। সেখানে তোমাকে মেনে নেওয়া কোন বিষয়ই না। আর আমার মতে আমার ছেলের পছন্দ খারাপ হবে না। তা তোমার কাছে শুধু একটাই অনুরোধ আগে আমাদের মাঝে যে কথা হয়েছে তা যাতে মারুফ না জানতে পারে। না হলে বেশ কষ্ট পাবে।
প্রথম আমি বুঝতে পারি নি ও তোমায় এত ভালবাসে। যদি বুঝতে পারতাম তাহলে হয়তো এমন করতাম না। কিন্তু কি করবো তখন সমাজের স্ট্যাটাসের কথাই আমি বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলাম। আর ভেবেছিলাম তোমার সাথে ওর সুখী হবে না। কিন্তু আমি ভুল ছিলাম।

সে যাই হোক! পারলে আমার অনুরোধটা রেখ। আর আগে তোমাকে এইভাবে ধমকানোর জন্য সরি।

আনিশা হাল্কা হেসে বলে,

— আপনি আমার গুরুজন। এইভাবে সরি বলে আমায় ছোট করবেন না। আমার আপনার প্রতি কোন অভিযোগ নেই। আপনি আমায় মন মেনে থেকে মেনে নিলেই আমি খুশি। আর আপনি চিন্তা করবেন না কথাটি আমি মারুফকে বলবো না।

শায়েলা বেগম হাল্কা হেসে চারপাশে তাকিয়ে বলে,

— একটু গোছগাছ হতে শিখ। আমার ছেলে কিন্তু বড্ড অগোছালো।

আনিশা লজ্জায় মাথা নুয়ে নেয়। শায়েলা বেগম আর কিছু না বলে চলে যায়। আনিশা আবার ধপ করে চেয়ারে বসে পড়ে। তার যেন এইসব বিশ্বাসই হচ্ছে না। সব তার কাছে এক সুন্দর স্বপ্নের মত মনে হচ্ছে। ঠিক এমন সময় আনিশার ফোন টুংটাং শব্দ করে উঠে। আনিশা ফোন হাতে নিয়ে দেখে মারুফের মেসেজ। অনুশোচনা আর লজ্জায় সে মেসেজটি পড়তে দ্বিধাবোধ করছে। কেমিন জোড়তা কাজ করছে। অতঃপর সব জোড়তা ভুলে সে মেসেজটি ওপেন করে। মেসেজটি পড়ার সাথে সাথে আনিশার মুখে মিষ্টি হাসি ফুটে উঠে। মারুফ লিখেছে,

” এখন আমার থেকে কোথায় পালাবে শ্যামলতা? চিরদিনের জন্য তো আমার পিঞ্জারাতে বন্দী হতে চলেছ। এইতো আর কিছু প্রহর বাকী। এরপরই তুমি না চাইতেও হয়ে যাবে,

এই শ্যামের শ্যামলতা। ❤️ ”

#চলবে