#সম্পর্কের_মায়াজাল
#ফারজানা_আফরোজ
#পর্ব_১৮
—” কি করলাম আমি? খুন কেন করবে?”
শুভ্রতার সব অলসতা এক নিমিষেই শেষ হয়ে গেল স্পন্দনের রাগান্বিত ম্যাসেজে। সে ভেবে পাচ্ছে না কেন স্পন্দন তাকে খুন করার হুমকি দিলো? জানা মতে স্পন্দনের সব কাজ ও করে ফেলেছে। কোনো প্রকার বিরক্তিত-কর কাজ করেনি। ভদ্র মেয়ের মতো কাজ শেষ করে বিশ্রাম করছে তাহলে খুনের হুমকি কেন? শুভ্রতা আর না ভেবে ফোন দিল স্পন্দনের নাম্বারে……
স্পন্দন ফোন ধরেই বলল…..
—” হ্যালো।”
—” স্যার, ফোনে ব্যালান্স খুব সামান্য অনুগ্রহ পূর্বক যদি ফোনটা ব্যাক করতেন তাহলে খুব ভালো হতো।”
স্পন্দন ফোন কেটে শুভ্রতাকে ফোন দিলো….
—” কি বলতে চাও তাড়াতাড়ি বলো।”
—” আমাকে খুন করার হুমকি কেন দিলেন? আমি এক্ষুনি জিডি করবো আপনার নামে থানায়।”
—” তুমি আমার পকেট থেকে পাঁচ হাজার টাকা চুরি করেছ কেন? জানো, আজ কত খুঁজেছি টাকা গুলো।”
মাত্র পাঁচ হাজার টাকার জন্য খুনের হুমকি শুভ্রতা ভাবতে পারেনি। যে ছেলে এত টাকা ইনকাম করে সেই ছেলে কি-না পাঁচ হাজার টাকার জন্য বউ খুন করবে? ভাবা যায় এইগুলো? বউ বন্ধক মুভির থেকেও ভয়ানক একটি কথা। শুভ্রতা গলা ঝেড়ে বলল…..
—” টাকাটা আপনার দরকারের জন্যই নিয়েছিলাম।”
—” আমার কি এমন দরকার ছিলো?”
—” রাস্তায় অ্যাকসিডেন্ট করেছিলেন মনে আছে? তখন আপনাকে নিয়ে সিএনজি তে উঠে হসপিটালে গিয়েছিলাম। ওই সিএনজি ড্রাইভারকে পাঁচ হাজার টাকা দিয়েছি।”
—” তোমার কি মাথায় সমস্যা আছে? আমার বাসা থেকে অফিস আসলেও তো পাঁচ হাজার টাকা ভাড়া হবে না আর তুমি কয়েক মিনিটের রাস্তার জন্য এত্ত টাকা দিয়ে এসেছো।”
—” বকাবকি করবেন না। মাসের শেষে আপনার টাকা দিয়ে দিবো। মনে করুন টাকাটা ধার নিয়েছি।”
—” তোমাকে আর কি বলবো শুধু বাসায় আসো আজ দেখাচ্ছি তোমাকে।”
স্পন্দন ফোন কেটে দিলো। বেচারি শুভ্রতা বড্ড ভয় পাচ্ছে বাসায় যেতে। অফিস ছুটি হওয়ার টাইম চলে এসেছে। ভাবতে ভাবতে বেচারি ঠিক করলো আজ বাবার বাসায় চলে যাবে। বাবা মার জন্য মনটা এমনিই খুব খারাপ। এখন ওইখানে গেলে স্পন্দনের বকা খেতে হবে না আবার বাবার মায়ের সাথে দেখাও করতে পারবে। যেই ভাবা সেই কাজ। কাগজ পত্র গুছিয়ে হাত ব্যাগ নিয়ে সোজা অফিস থেকে বের হয়ে রিক্সা নিলো। অনেকটা পথ যেতেই রাস্তায় সমুদ্রকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে শুভ্রতা রিক্সা থামিয়ে সমুদ্রকে ডাক দিলো….
—” এই সমুদ্র….?”
সমুদ্র শুভ্রতাকে দেখে কিউট করে হাসি দিলো। শুভ্রতা রিক্সা থেকে নেমে ভাড়া দিয়ে সমুদ্রের কাছে চলে গেলো……
—” তুই এইখানে? গার্লফ্রেন্ডের জন্য বুঝি ওয়েট করছিস? শালা কতদিন ধরে বলছি দেখা করা দেখা করা কিন্তু মিথ্যা বলে ধামা চাপা দিচ্ছিস আজ তো ভাবী দেখেই যাবো।”
—” আমার মুন্ডু দেখবি। কতবার বলেছি এই প্রেম ভালোবাসা আমাকে দিয়ে হবে না। তোদের কথা শুনে জীবনে একটা প্রেম করছিলাম পরে কি হলো? গার্লফ্রেন্ড আমাকে তার এক্স বানিয়ে চলে গেলো। আমার দ্বারা প্রেম ভালোবাসা হবে বলে মনে হয় তোর?”
—” তা অবশ্য ঠিক। একটা গার্লফ্রেন্ড যে ছেলে সামলাতে না পারে সে আবার প্রেম করবে। তোর থেকে নাদু অনেক ভালো ডবল সেঞ্চুরি করে ফেলেছে মেয়েটা।”
—” হাহাহা শুন ওর তো ব্রেকআপ হয়ে গেছে। ”
—” জানা কথা ব্রেকআপ যে হবে। নতুন কিছু বল।”
—” তুই এইখানে কি করছিস? দুলাভাই কোথায়?”
—” বাসায় যাবো রে। উনাকে বললে দিবে না তাই লুকিয়ে যাচ্ছি।”
—” দুলাভাই তো দেখছি বউ পাগল হয়ে গেছে। আচ্ছা শোন,তোর জন্য আম্মু আমের আচার রেখেছে। অনেক বলছিলো তোর শশুর বাড়িতে দিয়ে আসার জন্য কিন্তু উনারা কি মনে করবে তাই যাই নি। যেহেতু এখন তুই তোর বাসায় যাচ্ছিস আমি আর নাদু সকালে ওইখানে যাবো।”
—” আমার শশুর শাশুড়ি খুব ভালো রে। কিছু মনে করবেন না উনারা। কেন এসেছিস এইখানে?”
—” আর বলিস না নাদু বায়না ধরেছে সে না-কি ফুলের বাগান করবে তাই আসলাম ফুল কিনতে।”
—” প্রেম করার চেয়ে বাগান পরিচর্যা করা ভালো। বাট এইখানে তো কোনো ফুল দেখতে পাচ্ছি না।”
—” ফুল সব বিক্রি হয়ে গেছে। চল বাসায় চলে যাই আরেকদিন কিনবো।”
—” ওকে চল।”
সমুদ্র আর শুভ্রতা আরেকটি রিক্সা ঠিক করলো। দুই বেস্ট ফ্রেন্ড বাদাম খাচ্ছে আর কথা বলছে। সমুদ্র ছেলেটা অন্য রকম। যে বয়সে ছেলেরা প্রেম করে, মেয়েদের পিছনে দৌড়ায় সে বয়সে সে এখনও প্রেম করতে পারছে না। শুভ্রতা আর ওদের ফ্রেন্ড-রা মিলে যেও একটা ঠিক করেছিলো কিন্তু সমুদ্র মেয়েটিকে সময় না দিয়ে, কোথায় ঘুরতে না যেয়ে, আলাদা কথা না বলে, এক কথায় বয়ফ্রেন্ডের তালিকায় পরে না সে এই জন্য মেয়েটি তাকে বয়ফ্রেন্ড নামক শব্দটির আগে এক্স লাগিয়ে দিয়ে চলে গেছে।
শুভ্রতা বাবার বাসায় আসার পথে মিষ্টি ও কিছু ফল কিনে নিয়ে গেলো। দরজার কাছে এসেই কলিং বেল বাজাতে লাগলো। শুভ্রতার মা মিসেস রেহেনা বেগম দরজা খুলে নিজের বড় মেয়েকে দেখে জাপটে ধরলেন….
—” বিয়ের পর মাকে এইভাবে ভুলে গেলি তুই? জানি মান অভিমান হয়েছে আমাদের প্রতি এই জন্য এইভাবে ভুলে যাবি? ”
—” আম্মু যদি ভুলেই যেতাম তাহলে কি আর আসতাম। এখন কি আমি বাহিরে দাঁড়িয়ে কথা বলবো?”
—-” আয় মা ভিতরে আয়। তোর আব্বু এক্ষুনি চলে আসবে।”
শুভ্রতা বাসার ভিতরে এসে নিজের বাড়ি ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলো। মনে হচ্ছে কয়েক বছর পর সে এসেছে এই বাড়িতে। ছোট বেলার স্মৃতি, ছোট থেকে বড় হওয়া সব কিছুই এই বাড়ি থেকে হয়েছে। আম্মু যখন বকা দিতো তখন মনে মনে ভেবেছি, কেন যে এখনও ছোট আমি কবে বড় হবো, কবে বিয়ে হবে, কবে শশুর বাড়ি যাবো, কিন্তু আজ সব স্বপ্নই পূরণ হয়েছে তবে ছোট বেলার মধুর মুহূর্ত গুলো ধরা ছোঁয়ার বাহিরে চলে গেছে। ইসসসসসস আবারো যদি ছোট বেলায় ফিরা যেতো খুব খুব ভালো হতো।
—” ওই শুভ্রু কি ভাবছিস এত?”
—” কিছু না আম্মু। আচ্ছা আম্মু সাধনার সাথে কথা হয়েছে তোমাদের?”
মিসেস রেহেনা সাধনা নামটি শুনে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলেন। উনার চোখ দুটি ছলছল হয়ে আছে। বুঝা যাচ্ছে না রাগের কারণে চোখে পানি না-কি মেয়ের কোনো খুঁজ না পাওয়ার জন্য চোখে পানি। আঁচল দিয়ে চোখ মুছে শুভ্রতাকে বললেন……
—” সাধনার কথা তোর বাবার সামনে বলবি না। সাধনার নাম উনি শুনতে চান না। তুই তো জানিস না তোর বিয়ের পর যখন তোকে তোর শশুর বাড়িতে পাঠানো হয়েছে তার পরেই তোর আব্বুর ছোট্ট এক হার্ট অ্যাটাক হয়ে গেছে। উনি সাধনার নাম শুনলে রেগে যান। আমি চাই না সাধনার জন্য উনার কিছু হয়ে যাক।”
শুভ্রতা মায়ের মুখে এমন কষ্টকর কথা শুনে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল……
—” আমাকে বললে না কেন? বিয়ের পর বুঝি আমি পর হয়ে গেছি। আমাকে এত সহজে পর করে দিলে তোমরা?”
—” নতুন বিয়ে তাই টেনশন দিতে চাই নি। শোন, ফ্রেশ হয়ে আয় কিছু খাবার খেয়ে আড্ডা দিবো। বাই দা ওয়ে স্পন্দন কোথায়? আর তোর জামা কাপড় কোথায়? ঝগড়া করে কি এসেছিস?”
—” আম্মু তোমাকে শিক্ষিকা মানায় না গোয়েন্দা গিন্নী মানায়। আসতে না আসতেই পুলিশের মতো প্রশ্ন ছুড়ে মারছ। নিজের বাড়িতে কি এখন আর আসতে পারবো না?”
—” হইছে মা আমার যা ফ্রেশ হয়ে আয়।”
শুভ্রতা নিজের রুমে ঢুকলো। কতদিন পর নিজের রুমটাকে দেখছে সে। শুভ্রতা যেখানেই ঘুরতে যেতো সে রাতে থাকতো না। ওর না-কি নিজের রুম ছাড়া ঘুম আসে না। এই সেই শুভ্রতা আজ কতগুলো দিন নিজের রুম ছাড়া অন্য কোথায় ঘুমাচ্ছে। শুভ্রতা ফ্রেশ হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে শুয়ে রইলো। মিসেস রেহেনা বেগম কিছুক্ষণ ডেকে চলে গেলেন।
—-” আচ্ছা স্পন্দন স্যার কি এখন আমাকে খুঁজবে? উনার অনুমতি ছাড়াই চলে আসছি। আর উনি কেমন মানুষ গো মাত্র পাঁচ হাজার টাকার জন্য বউকে খুন করার হুমকি দেয়। যদি এখন পাঁচ লক্ষ টাকা নিতাম তাহলে হয়তো খুন করেই ফেলতো। সাধনা কি খুশি তার স্বামীর সাথে । কত খেয়াল রাখে ওর স্বামী আর আমার স্বামী তো শুধু টাকার হিসাব করে। ”
শুভ্রতার কথা এক নিমিষেই বন্ধ হয়ে গেল। স্পন্দন ফোন দিয়েছে। ভয়ে ভয়ে ফোন রিসিভ করে কাঁপা গলায় বলল……
—” আসসালামু আলাইকুম স্যার। ”
—” ওলাই-কুম আসসালাম। কোথায় আছো তুমি?”
—” বাসায় চলে আসছি।”
—-” কোথায়? আমি তো তোমাকে বাসায় খুঁজে পাচ্ছি না।”
—” আসলে স্যার, আমি আমি আমার বাবার বাসায় চলে আসছি।”
—” তুমি কি আমার কোনো কথা শুনবে না বলে ঠিক করে রেখেছ। এখন আমি রাতে ঘুমাবো কিভাবে?”
—” আমি চলে আসার সাথে ঘুমানোর কি সম্পর্ক?”
—” তোমাকে বলে লাভ নাই। শুনো, গাড়ি পাঠাচ্ছি চলে এসো।”
—” সরি স্যার, আমি কিছুদিন থাকবো এইখানে। চিন্তা করবেন না আমি এইখান থেকেই অফিসে যাবো।”
—” তুমি আসবে না তাই না?”
—” উহু।”
—” ওকে কিছু বলবো না তোমাকে। যা খুশি তাই করো। বায়।
স্পন্দন রাগ দেখিয়ে ফোন কেঁটে দিলো। শুভ্রতার পেটে তেলাপোকা দৌড়াদৌড়ি করছে ক্ষুধায়। ফোনটা রুমে রেখে মায়ের কাছে চলে গেলো শুভ্রতা…..
—” আম্মুউউউউ ।”
—” ক্ষুধা লেগেছে তাই তো?”
—” জানলে কিভাবে?”
—” আমার পেট থেকে তুই হয়েছিস তোর পেট থেকে হইনি।”
শুভ্রতাকে খাবার বেড়ে দিয়ে মিসেস রেহেনা শুভ্রতার কাছে বসলেন….
—-” শুভ্রু তোর কি স্পন্দনের সাথে সব ঠিক হয়ে গেছে? স্পন্দন কি তোকে মেনে নিয়েছে? ”
—” হুম সব ঠিক আছে। আম্মু তুমি এত সুন্দর করে কিভাবে রান্না করো ঘ্রাণ পেয়েই অর্ধেক পেট ভরে গেছে।”
—” ওইসব বাদ দে। তোর ননদ কি যেনো নাম ওহ্ সন্ধ্যা ও কি তোর সাথে মিস বিহেভ করে?”
—” নাহ আম্মু ও খুব ভালো। তুমি কি জানো সন্ধ্যা অসুস্থ?”
—” হ্যাঁ শুনেছি তোর আব্বুর কাছ থেকে যে মেয়েটা প্রতিবন্ধী।”
—” হুম। আম্মু ওই চিংড়ি মাছটা এইদিকে দেও।”
শুভ্রতা তৃপ্তি করে খাবার খাচ্ছে। মিসেস রেহেনা বেগম মেয়ের খাওয়া দেখছে। ছোট মেয়েটাকে বড্ড মিস করছেন উনি। কথায় আছে না, দুনিয়ার সব কিছুই বদলাতে পারে, কিন্তু মায়ের ভালবাসা কখনো বদলাবার নয়..!! হোক সন্তান অবাধ্য তবুও তো মা তিনি। জোয়ান হেরিস বলেছেন-” সন্তানেরা ধারালো চাকুর মত।তারা না চাইলেও মায়েদের কষ্ট দেয়। আর,মায়েরা তাদের শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত সন্তানদের সাথে লেগে থাকে।”
শুভ্রতা খাবার শেষ করে মায়ের সাথে বেশ কিছুক্ষণ গল্প করলেন। মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে ও। মিসেস রেহেনা বেগম মেয়ের চুলে বিলি কেটে দিচ্ছেন। শুভ্রতার মাথায় কত চিন্তা ছিলো। সাধনার সন্তানের চিন্তা, স্পন্দনের চিন্তা, ফায়াজ নামক উটকো ঝামেলার চিন্তা কিন্তু এখন মায়ের কোলে মাথা রাখার পর সব চিন্তা এক নিমিষেই উধাও হয়ে গেল। মায়ের কোল যে কত বড় জিনিস তা একজন যোগ্য সন্তান ছাড়া আর কেউ জানে না । শত চিন্তা আপনার মাথায়, একবার মায়ের কোলে মাথা রাখেন দেখবেন সব চিন্তা দূঢ় হয়ে যাবে । দুনিয়ার যেখানেই যান না কেন মায়ের কোলে যে শান্তি তা কোথাও খুজে পাবেন না ।
—” আম্মু , আব্বু কখন আসবে?”
—” এইতো এসে যাবে।”
—” তোমার সারাদিন বাসায় একা থাকতে খারাপ লাগে না?”
—” লাগে তো মা খারাপ।সকালে স্কুলে গিয়ে ক্লাস করে এসে সারাদিন বাসায় একা থাকতে হয়। তোদেরকে বড্ড মিস করি। জানিস এখন বাসায় বসে বসে বই পড়ি,টিভি দেখি এইসব করেই দিন চলে যাচ্ছে।”
—” আব্বুকে কত করে বলেছি এত কাজ না করতে তবুও কেন করছেন উনি?”
—” আগে তো তুই ছিলি তোর আব্বুর এত কাজ করতে হয় নি। আমার তোর আর তোর আব্বুর টাকা দিয়ে খুব ভালোই চলে গিয়েছে আমাদের সংসার কিন্তু তোর বিয়ের পর এখন কি আর তোর টাকা নিতে পারি আমরা বল?”
—” কেন বিয়ের পর কি মেয়েরা পর হয়ে যায়? বাবা মায়ের জন্য কিছু করতে পারে না তারা? শুনো আম্মু, একজন ছেলে সন্তান তার বাবা মায়ের জন্য যা কিছু করতে পারে একজন মেয়ে কেন পারবে না? ওরা ছেলে বলে সব অধিকার ওদের একার না-কি? আমি আগেও যেমন তোমাদের দায়িত্ব নিয়ে এসেছি ইনশাআল্লাহ যতদিন বেঁচে থাকবো নিবো। এই নিয়ে আর কোনো কথা শুনতে চাই না আমি।”
শুভ্রতার মা মেয়ের কথায় আর কিছু বললেন না। রাতে শুভ্রতার বাবা আসার পর ইচ্ছা মতো বকেছে শুভ্রতা। শুভ্রতার বাবা মেয়ের বকা খেয়ে হাসলেন কিছুক্ষণ। শুভ্রতা বুঝিয়ে সুঝিয়ে এত রাত পর্যন্ত কাজ করতে মানা করেছে।
রাতে শুয়ে আছে শুভ্রতা। আজ ঘুমটা আসতে অনেক কাঠ খড় পুড়া-তে হচ্ছে শুভ্রতাকে। এতদিন স্পন্দনের বুকে ঘুমিয়ে বাজে একটা অভ্যাস হয়ে গেছে তার। কিছুতেই ঘুম আসছে না চোখে। বার বার ফোন নিয়ে স্পন্দনের নাম্বারে ডায়াল করতে গিয়েও করছে না।
ইগো এমন একটি শব্দ যার জন্য মানুষ যা নয় সে তাকে তাই মনে করে। নিজের আত্মসম্মান হল, নিজের সত্যিকার যোগ্যতার প্রতি বিশ্বাস। কিন্তু ইগো হল, নিজে যা নন – নিজেকে তাই মনে করা। ইগো শব্দটির জন্য কত কত বিশ্বাস,ভালোবাসা,প্রেম,বিয়ে ভেঙ্গে গিয়েছে।ইগো সম্পূর্ণ মানুষ কোনো কিছু জানলে তা স্বীকার করবেন না কাওকে বলবেন না এমনকি জানার চেষ্টাও করবেন না। ইগো কে বড় রেখে সম্পর্ক নষ্ট করবে।ইগো সম্পূর্ণ মানুষ বড় হওয়ার আগেই নিজেকে বড় ভাবতে শুরু করে ।
শুভ্রতা এইটুকু ম্যাসেজ লিখে স্পন্দনকে দিতে গিয়ে দিলো না। বার বার মনে সংকোচ হচ্ছে এই ম্যাসেজ দেওয়া কি ঠিক হবে? স্পন্দন যেমন ছেলে রাগ করে হয়তো খারাপ কিছু করে ফেলবে। মনের কথাটুকু মনে রেখেই ম্যাসেজ ডিলেট দিয়ে শুয়ে পরলো শুভ্রতা……
।।
।।
।।
—” মুগ্ধ তুমি কিসের বিজনেস করো?”
মুগ্ধের বুকে শুয়ে আছে সাধনা। সাধনার প্রশ্নে মুগ্ধ জবাব দিলো…..
—” এত রাতে এমন প্রশ্ন কেন? কেউ কি জিজ্ঞাসা করেছে?”
—” তোমার স্ত্রী আমি । তোমার অনাগত সন্তানের মা এইটুকু তো জানার অধিকার আছে তাই না?”
—” আমার বিজনেস বুটিকসের। দেশী বিদেশী বুটিকস বানানো হয়।”
—” ওহ্ আচ্ছা।”
—” হুম। ঘুমিয়ে পড় আগামীকাল চেকআপ করতে হবে তোমার।”
—” ওকে। ”
।।
।।
শুভ্রতা ঘুমের মাঝে খুব অস্বস্তি বোধ করছে। অস্বস্তি বোধটা খুব বেশি লাগছে তার কাছে। ঘুম থেকে উঠে পানি খুঁজতে গিয়ে……..
চলবে…….