Psycho_behind_the_mask Part-02

0
3928

#Psycho_behind_the_mask🎭
#Part_2
#Writer_Nusrat🌺

কলিংবেল বাজার সাথে সাথে দরজা খুলে দিলো আরিশা৷ রিফাতের পরিবারের সবাই দাঁড়িয়ে আছে৷ আরিশা সালাম দিয়ে সবাইকে ড্রয়িং রুমে নিয়ে গেলো৷ সবার সাথে কুশল বিনিময় করার কিছুক্ষন পর আরিশার একটা কাজ পড়লো কাজটা হলো ওর আপুকে সবার সামনে নিয়ে আসা৷
আরিশা ওর বোনকে সবার সামনে নিয়ে আসলো৷ মেঘলাকে দেখে সবারই পছন্দ হয়েছে৷ ছেলের পছন্দের তারিফও করছেন৷ রিফাতের মা মেঘলার আঙুলে একটা আংটি পড়িয়ে দিলেন৷ আর ঘোষণা দিলেন সাত দিন পর বিয়ে৷ উনারা উনাদের ঘরের লক্ষীকে তারাতাড়ি নিয়ে যেতে চান৷ মেঘলার বাবাও জানালেন তাই হবে৷
★★★
আরিশা তো সেই লেভেলের খুশি৷ নিজের বোনের বিয়ে বলে কথা৷সে তার ব্যালকনিতে বসে আপেল খাচ্ছে আর গুনগুন করে গান গাইছে৷

“এই যে কি খাচ্ছো তুমি আমাকে একটু দিবা৷

পিচ্চির কন্ঠ শুনে পাশে তাকালো আরিশা৷ রিফাতের বোনের ৫ বছরের ছেলে কথাটা বলেছে তাকে৷

“কী হলো দিবা আমায়৷
.
কি দিবো তোকে৷
.
তুমি যা খাচ্ছো৷।
.
আমি তো আপেল খাচ্ছি৷ তুই আপেল খাবি৷
.
হ্যা আমি আপেল খাবো৷ আমার না আপেল খুব ভালো লাগে৷ এতটাই ভালো লাগে মন চায় গাছ সহ খেয়ে ফেলি৷
.
ইয়া আল্লাহ তুই এতো রাক্ষস৷ শুন আপেল খেলে দাঁত পড়ে যায়৷
.
না আমার পড়েনা আমি খাইতো৷ কত খেয়েছি৷ এই দেখো একটা দাঁতও পড়েনি৷ (দাঁত দেখিয়ে)
.
অন্য কারো আপেল খেলে তোর দাঁত পড়বেনা কিন্তু আমার আপেল খেলে তোর দাঁত পড়ে যাবে৷
.
ইয়া আল্লাহ বলো কী৷ না ঠিকাছে দরকার নেই তোমার আপেল তুমিই খাও৷
.
এইতো গুড বয়৷ এখন যা এখান থেকে৷
.
আন্টি আমি তোমার একটা জিনিস নিয়েছি৷
.
কী নিয়েছিস তুই৷
.
তোমার চকলেট৷
.
কীহ?? কোথায় থেকে?
.
ড্রয়ার থেকে৷
.
তোর এতো বড় সাহস৷ তুই আমার ড্রয়ারে হাত দিয়েছিস৷ দাঁড়া,,,
আরিশার দাঁড়া শুনে ছেলেটা এক দৌড় মারলো ভয়ে৷

★★★★
দেখতে দেখতে মেঘলার বিয়ের দিন চলেই আসলো৷ সকাল হতেই সাজগোছ শুরু করে দিয়েছে আরিশা৷ যেন বিয়েটা তার বোনের নয় তার হচ্ছে৷ মেঘলা শুধু গালে হাত দিয়ে আরিশাকেই দেখে যাচ্ছে৷ আরিশাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিলো মেঘলার কী লাগে না লাগে সেসব দেখার জন্য৷আরিশা উল্টো মেঘলাকে ফরমাস দিচ্ছে এটা আনো ওইটা আনো৷আরিশা এমন সাজ শুরু করেছে যেন এক বছরেও শেষ হবেনা৷মেঘলা বেচারী অর্ধ পাগল হয়ে বসে আছে৷ মেঘলাকে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে আরিশা একটা ভেঙচি কাটলো৷

“শুন আপু বিয়েটে যেমন তোমার হচ্ছে তেমন আমার বোনেরও হচ্ছে৷ তোমাকে তো ভালো করে একজনেই দেখবে কিন্তু আমাকে কতজনে দেখবে জানো৷ তাইতো এমন সাজ দিচ্ছি৷
.
সাজ সাজ ভালো করে সাজ৷
★★★
প্রায় তিন ঘন্টা পড় সব রেডি হয়ে গেছে৷ কনে সাজানোও শেষ৷ এখন শুধু বর আসার পালা৷ আরিশা মুখ ত্যাড়া ব্যাকা করে সেলফি তুলছে৷
বর এসেছে বর এসেছে শুনে তারাহুরো করে গেটের কাছে চলে গেলো আরিশা৷ সেখানে কতগুলো কাজিনকে নিয়ে দাড়িয়ে আছে৷ দাঁড়িয়ে আছে বললে ভুল হবে সবাই দাঁড়িয়ে আছে শুধু সে চেয়ারে বসে আছে৷ আর বরযাত্রীরা ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে৷

আরিশার ভাব দেখে বর পক্ষের একটা ছেলে দাঁত কেলিয়ে বললো,,আপনি কী মহারানী আর আমরা কী আপনার অভাগা প্রজা৷ যাদের সব কিছু দুর্ভিক্ষে কেড়ে নিয়ে নিঃস্ব করে দিয়েছে আর আপনি তাদের এনেছেন সব কিছু ফিরিয়ে দেওয়ার জন্যে৷
.
উহু একদম না৷ আগে টাকা বেড় করেন তারপর ঢুকবেন৷তা না হলে নট এলাউ্ড৷
.
কিসের টাকা৷
.
গেটের টাকা৷ এত কষ্ট করে যে বেলুন দিয়ে গেট সাজালাম৷
হঠাৎ আরিশার চোখ পড়লো একটা ছেলের উপরে৷ যে লাল পাঞ্জাবি পড়েছে হাতাও ফোল্ড করে রেখেছে৷ ফর্সা কপালে সিল্কি চুল গুলো পড়ে আছে৷ ছেলেটা ফোনে কথা বলতে বলতে গেটের দিকেই আসছে৷ খুব মনোযোগ দিয়ে দেখছে আরিশা তাকে৷ ছেলেটা গেটে আসতেই আরিশা সবার দিকে এজবার তাকিয়ে বললো থাক টাকার দরকার নেই৷ আমি যাচ্ছি৷ কথাটা বলে আরিশা দৌঁড়ে চলে এলো৷ ছেলেটাকে দেখার পড় থেকে কেমন যেন এক অজানা অনুভুতি উকি দিয়েছে ওর মনে৷ যেটা আর কোনদিন হয়নি৷

আরিশা ওর ভাবনা কদম গাছে ফেলে অতিথিদের আপ্যায়ন করার ব্যবস্হা হয়ে পরেছে৷ কারও কিছু লাগবে কী না সেটার তদারকি করছে৷

দেখতে দেখতে মেঘলার বিদায়ের বেলাও চলে এসেছে৷ সবাই কাঁদছে শুধু আরিশা ছাড়া৷ তা না কাঁদারও কারণও আছে৷ সে তার বোনের সাথে বোনের স্বামীর বাড়িতে যাবে৷

🌷🌷🌷🌷
বোনের শশুড় বাড়িতে এসে রাতে সোফায় বসে বসে টিভি দেখছে আরিশা৷ একেকটা ফানি সিন দেখছে আর হাসতে গাসতে গড়িয়ে পড়ছে৷ যেন তাকে হাসির প্রতিযোগিতায় দেওয়া হয়েছে৷ সে ভুলেই গেছে এটা যে তার বোনের শশুড় বাড়ি৷ উপর থেকে এক জোড়া চোখ খুব গভীর ভাবে দেখে যাচ্ছে আরিশাকে৷
আরিশাকে হাসতে দেখে রিফাতের বোনের ছেলে নিহান আসলো ওর কাছে৷

আন্টি এভাবে হেসোনা৷

আরিশা হাসি থামিয়ে ব্রু কুচকে বললো,,কেনো হাসলে কী হবে৷

হাসলে তোমার দাঁত পড়ে যাবে৷

হাসলেও দাঁত পড়ে যানতাম না তো৷

হ্যা পড়েতো৷ আপেল খেলে যেমন দাঁত পড়ে তেমনি হাসলেও দাঁত পড়ে৷ অন্য কারো টিভি দেখে হাসলে দাঁত পড়বেনা কিন্তু আমাদের টিভি দেখে হাসলে দাঁত পড়ে যাবে৷

আরিশা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে নাহিনের দিকে এত ছোট চেলে কী সুন্দর আমার কথা আমাকেই ফরিয়ে দিচ্ছে৷ আমার মনে হয় একে পেটে থাকা কালীন সময়েই এক্সট্রা ট্রেনিং দিয়েছে৷ তাই তো এতো পাকনা৷

ওই পাকনা এটা তোর বাপের টিভি নাকি৷ আমি আমার জিজুর টিভি দেখেছি তোর বাপের টিভি দেখি নাই৷ যা ভাগ এখান থেকে উগান্ডা কোথাকার৷

হাসির আওয়াজ পেয়ে উপরে তাকালো নাহিন আর আরিশা৷ সিঁড়ির রেলিঙে হেলান দিয়ে দুই হাত ভাজ করে হাসছে একটা ছেলে৷ আরিশা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে এটাতে সেই ছেলে যে ছেলেকে গেইটে দেখেছিলো সে৷ ছেলে মানুষর হাসি এতো সুন্দরও হয়৷ আরিশা মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে৷ ছেলেটি আরিশার দিকে একবার তাকিয়ে দেখে চলে তার রুমে৷

“ওই পাকনা এ কে রে৷
.
“এটাতো ছোট মামা আরিয়ান৷
.
“ওহ্ তাই৷
.
হ্যা
.
আচ্ছা এখন যা৷ একটু হাসতে দে আমায়৷ আরিশা আবারো টিভির দিকে তাকিয়ে হাহা হেহে করে হাসছে৷ আর নাহিন ওর দিকে বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে আছে৷
★★★★
বিকেলে নাহিনকে নিয়ে ছাঁদে দাঁড়য়ে আছে আরিশা৷ সে ফুল গাছ থেকে একটা একটা ফুল তুলছে আর কানে গুজছে৷
নাহিন ওকে বার বার না করছে ফুল যেন না ছিঁড়ে৷

ওই সামান্য ফুলইতো ছিঁড়ছি তাতে কী এমন মহা ভারত নষ্ট হয়ে গেছে না করচিস কেনো৷ আমি না তোদের বাড়ির মেহমান৷ মেহমানদের সাথে কেউ এমন ব্যবহার করে৷

আালে কালা ছোট মামায় মারে তাকে যে মামার গাছের ফুল ছিঁড়ে৷

ফার্স্ট এটা কালা নয় খালা হবে আর সেকেন্ড আমাকে খালা নয় আন্টি ডাকবি৷ বুজেছিস৷

আরিয়ান কে ছাঁদে দেখে দৌড়েঁ পালিয়ে গেলো নিহান৷ আরিশা ব্যাপারটা বুঝতে পারলো না৷ পিছনে তাকিয়ে দেখলো আরিয়ান দুই হতা পকেটে ঢুকিয়ে ব্রু কুচকে আরিশার দিকে তাকিয়ে আছে৷ আরিয়ান এক পা এক পা করে এগিয়ে আসছে আরিশার দিকে৷ আরিশার বুক ডিপ ডিপ করছে৷ আরিয়ান কাছে আসাতে না৷ আরিয়ানের যদি কিছু হয় সেটা ভেবে৷ এপর্যন্ত যারা আরিশাকে বাজে কথা বলেছে বাজে দৃষ্টিতে তাকিয়েছে তাদের অবস্থা খুব খারাপ হয়েছে৷ আর এখন তো আরিয়ান এগিয়ে আসছে ওর কিছু হবে নাতো৷

চলবে♥️