#আড়ালে_আবডালে
#পর্ব_১৮
#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
___________________
রিং হতে হতে ফোনটা কেটে যায়। এরকম একবার, দু’বার, তিনবার হয়। নিহি ফোন রিসিভ করে না। শুধু চুপচাপ ফোনের দিকে তাকিয়ে বসে থাকে। আর ভাবতে থাকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমানের থেকে দূরে যেতে হবে। তিনবারের পর আর ফোন আসেনি ঐ নাম্বার থেকে। আছরের নামাজ মসজিদ থেকে পড়ে বাড়িতে ফিরে আমান। আমানকে দেখে নিহি বলে,
“কল এসেছিল।”
“কার?”
“আপনার।”
“কী বলল?”
“রিসিভ করিনি আমি।”
“কেন? রিসিভ করতেন।”
“কারো পার্সোনাল কল আমি রিসিভ করি না।”
“পার্সোনাল কল? কী করে বুঝলেন?” ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করে আমান।
“জান দিয়ে নাম সেভ করা যখন, তখন অবশ্যই পার্সোনাল কলই হবে?”
আমান হাসে। বলে,
“মানুষটা স্পেশাল। তবে পার্সোনাল না। ওয়েট।”
বালিশের পাশ থেকে ফোন নিয়ে আমান নাম্বারটিতে কল ব্যাক করে। রিং হচ্ছে। আমান লাউডস্পিকারে দেয়। নিহি চলে যাওয়া ধরলে আমান নিহিকে আটকে দিয়ে বলে,
“শুনে যান।”
যাওয়ার রাস্তা আমান বন্ধ করে রেখেছে। তাই বাধ্য হয়ে নিহি বসে থাকে। ওপাশ থেকে কল রিসিভ হওয়ার পর আমান সালাম দেয়।
“আসসালামু আলাইকুম আম্মু।”
‘আম্মু!’ আম্মু ডাক শুনে নিহি আকাশ থেকে পড়ে। তার মানে যাকে নিহি গার্লফ্রেন্ড ভেবেছিল আসলে সে গার্লফ্রেন্ড নয়। মা! নিহি মনে মনে তওবা কাটে। না জেনে, আগেই ভুলভাল ভাবার জন্য। নিহির রিয়াকশন দেখে আমান হেসে ফেলে। ঐ পাশ থেকে সালামের উত্তর নিয়ে আমানের মা বলেন,
“কেমন আছো? ফোন ধরোনি কেন? মায়ের যে কত টেনশন হয় বোঝো না?”
“স্যরি আম্মু। আমি নামাজ পড়তে গিয়েছিলাম।”
নিহির যা শোনার তা শোনা হয়ে গেছে। তাই আমানকে সরিয়ে নিহি বাইরে চলে আসে। উল্টা-পাল্টা ভাবার জন্য নিজেই নিজেকে বিড়বিড় করে গালি দেয়। আবুল খেয়াল করে বলে,
“আপামুনি মনে মনে কী কন?”
“কিছু বলি না আবুল ভাই। আপনার কাজ শেষ?”
“হ। আমি এহন যামুগা। টুকটুকির লেইগা বইসা আছি।”
“একটু আগেই না দুজনে ঝগড়া করলেন?”
উত্তরে আবুল সব কয়টা দাঁত বের করে হেসে বলে,
“আমরা ঝগড়া করি আবার একটুপর মিইলা যাই। তাছাড়া আপনেরে তো কথা দিছি আর ঝগড়া করমু না।”
ওদের কথার মাঝে টুকটুকি কাজ শেষ করে চলে আসে। মাথায় কাপড় দিতে দিতে বলে,
“আপাজান যাইগা। আল্লাহ্ বাঁচায় রাখলে আবার কালকে দেখা হইব।”
নিহি হেসে বলে,
“ঠিকাছে। সাবধানে যেয়ো। আল্লাহ্ হাফেজ।”
টুকটুকি আর আবুল চলে যাওয়ার পর নিহি দরজা আটকে দেয়। পাশের রুমে গিয়ে বসে থাকে। আমান ফোনে কথা বলা শেষ করে নিহিকে ডাকে। ডাক শুনেও নিহি চুপ করে বসে থাকে। নিহি যে ইচ্ছে করেই ডাকের উত্তর নিচ্ছে না সেটা আমান বুঝতে পারে। তাই নিজেই ঘর থেকে বের হয়ে আসে। নিহি যে ঘরে বসে আছে সেই ঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বলে,
“চোরের মতো লুকিয়ে আছেন কেন?”
নিহি তেলেবেগুনে ক্ষেপে গিয়ে বলে,
“লুকাব কেন? তাও আবার চোরের মতো! আমি কী চুরি করেছি?”
“কিছু চুরি করেননি। শুধু চোরের মতো হাভভাব শুরু করেছেন।”
নিহি কিছু বলার জন্য প্রস্তুত হতেই আমান থামিয়ে দিয়ে বলে,
“ওয়েট। ঝগড়া কিন্তু আমি করব না। যাই হোক, কনফিউশন দূর তো?”
“কীসের কনফিউশন?”
“এইযে আমার জান কে নিয়ে।”
নিহি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে,
“আপনার জান আপনার মা না হয়ে গার্লফ্রেন্ড হলেও বা আমার কী? এনিওয়ে, ভুল ভাবার জন্য স্যরি।”
“এখন আমাকে কি ইট’স ওকে বলতে হবে?”
“ইচ্ছে হলে বলবেন। আর ইচ্ছে না হলে বলবেন না।” কপাল ভাঁজ করে বলে নিহি।
নিহির মুখভঙ্গি দেখে আমান হাসে। নিহি আরো বিরক্ত হয়। আমান বলে,
“ওয়েদার সুন্দর আজ। চলেন ছাদে যাই।”
নিহি চোখ দুটো ছোট ছোট করে বলে,
“হোয়াট! কী বললেন? ওয়েদার সুন্দর? ছাদে যাব আপনার সাথে?”
“এগুলোই তো বললাম মনে হয়।”
“হাহ্! আপনার স্বামী স্বামী ফিলিংস আসলেও আমার বউ বউ ফিলিংস আসে না।”
কথাটা বলে নিহি খাট থেকে নামে। আমানকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময় আমান বলে,
“এগুলো আবার কেমন ফিলিংস?”
নিহি না তাকিয়েই বলে,
“জানি না।”
আমান নিহিকে আর বিরক্ত করে না। রুমে চলে যায়। নিহি ড্রয়িংরুমে বসে বসে টিভি দেখে। মনটা একটুও ভালো লাগছে না। টিভি দেখতে দেখতেই সন্ধ্যা হয়ে যায়। আজান দিচ্ছে শুনে নিহি টিভি বন্ধ করে সোফাতেই বসে থাকে। মায়ের সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছে করছে খুব। তিতির বিকেলে আজ কার সঙ্গে কার্টুন দেখল? ভাবির সঙ্গে গল্প করার জন্য মনটা কাঁদছে। বাবার কি রাগ কমেছে? এত প্রশ্ন মনের মধ্যে অথচ একটা ফোন দেওয়ার সাহস হচ্ছে না। আমান অজু করে এসে দেখে নিহি গালে হাত দিয়ে বসে আছে আনমনে। ভেজা হাতে গাল থেকে হাতটা সরিয়ে দেয়। হুট করে কাজটা করায় নিহি বিরক্ত নিয়ে তাকায়। কিন্তু আমান নামাজ পড়তে যাচ্ছে বিধায় কিছু বলে না। আমান জিজ্ঞেস করে,
“নামাজ-কালাম নাই? মুসলিম আপনি?”
“কেমন ধরণের প্রশ্ন এসব? অবশ্যই মুসলিম আমি।”
“তাহলে আজান দেওয়ার পরও টিভির সামনে কেন? অজু করে নামাজ পড়তে বসেন।”
নিহি চিবিয়ে চিবিয়ে বলে,
“রাগ দেখাতে চাই না। তাও আপনি রাগিয়ে ছাড়েন। সমস্যা কী আপনার? চোখে দেখতে পান না? কাল থেকে যে এক পোশাক পরে আছি দেখেছেন আপনি? গোসল করা হয়নি আমার। এই অবস্থায় নামাজ পড়ব কীভাবে? আপনার পাঞ্জাবি পরে?”
“ইচ্ছে থাকলে আমার পাঞ্জাবি পরেই নামাজ পড়তেন। ইচ্ছে শক্তিটাই আসল। আপনার যদি ইচ্ছে থাকত তাহলে আপনি এই ছোট কারণটাকে ইস্যু করতেন না।” শান্তভঙ্গিতে কথাগুলো বলে আমান নামাজ পড়তে চলে যায়।
.
মাগরিবের নামাজ পড়ে আমান মার্কেটে যায়। রেডিমেড কিছু জামা-কাপড় কিনে নিহির জন্য। তার মধ্যে সুতী শাড়িই কেনে সবচেয়ে বেশি। মোট ছয়টা শাড়ি, তিনটে থ্রি-পিছ, একটা সুয়েটার কিনে। জামা-কাপড় কেনা শেষ হলে কসমেটিক্সের দোকানে যায়। আইলাইনার, কাজল, লিপস্টিক, লোশন,মেরিল, পাউডার, শ্যাম্পু, তেল, সাবান, কন্ডিশনার আর হাতের চুড়ি কেনে। সব কেনাকাটা শেষ করে বাড়িতে ফিরে। নিজের কাছে এক্সট্রা যে চাবি ছিল ঐটা দিয়েই দরজা খুলে ভেতরে যায়। বাড়িতে নিহিকে খুঁজেও পাওয়া যাচ্ছে না। শেষমেশ বেডরুমে লেপ সরাতেই দেখতে পায় নিহি গুটিসুটি হয়ে লেপের ভেতর শুয়ে আছে। একটুখানি হয়ে শুয়েছে যে বোঝাই যায়নি লেপের মধ্যে কেউ আছে। তারচেয়েও বেশি অবাক হয় নিহিকে দেখে। কারণ নিহির পরণে আমানের পাঞ্জাবি আর ট্রাউজার। আমানের প্রচুর হাসি পাচ্ছে নিহিকে দেখে। নিহি তো ঘুমে কাঁদা। আমান ডাকে।
“নিহু, এই নিহু।”
নিহি ঘুম জড়ানো কণ্ঠে উত্তর নেয়,
“হু।”
“উঠুন।”
“পরে।” ঘুম জড়ানো কণ্ঠে আবার উত্তর দেয় নিহি।
আমান এবার লেপ, বালিশ সব সরিয়ে ফেলে। নিহি শীতে আরো গুটিসুটি হয়ে শোয়। আমান হাল ছাড়ে না। নিজের ঠান্ডা হাত নিহির গালের ওপর রাখতেই নিহি লাফ দিয়ে ওঠে। ঘুম তো উড়ে গেছে। কিন্তু নিহির চোখেমুখে এখন প্রচণ্ড রাগ। আমান এতক্ষণ হাসলেও নিহির রাগ দেখে থেমে যায়। ভয় পাওয়ার ভান ধরে বলে,
“আমি ভয়ে পেয়েছি।”
নিহি চোখ পিটপিট করে তাকায়। ঘুমের রেশ কাটেনি এখনো। মাথা ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে বলে,
“ঘুমে বিরক্ত করলে খামচি দিয়ে মেরে ফেলব।”
আমান শব্দ করে হেসে হেসে বলে,
“খামচি দিয়ে বুঝি মেরেও ফেলা যায়?”
নিহি বিরক্তস্বরে বলে,
“উফফ!”
আমান বলে,
“আচ্ছা আর বিরক্ত করছি না। আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন।”
“ঘুমাব।”
“হ্যাঁ, ঘুমাবেন। তার আগে ফ্রেশ হয়ে আসুন। আপনার জন্য কিছু জিনিস এনেছি। দেখুন পছন্দ হয় কী-না।”
“পরে দেখব।”
“না, এখনই।”
“বিরক্ত করবেন না তো।”
“আচ্ছা করব না। তাও ফ্রেশ হয়ে আসুন।”
আমানের সঙ্গে তর্ক করতে করতেই নিহির ঘুম চলে যায়। মনে মনে আমানকে গালি-গালাজ করতে করতে ওয়াশরুমে যায় ফ্রেশ হতে। আমানের বডি ফিটনেস ভালো। তাই নিহির গায়ে আমানের পাঞ্জাবি প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশিই ঢিলে হয়েছে। আমান অনেক কষ্টে হাসিটাকে চাপিয়ে রাখছে। নিহি ফ্রেশ হয়ে আসার পর আমান জিজ্ঞেস করে,
“আমার পাঞ্জাবি পরেছেন কেন?”
“আপনি তখন কী বলেছেন মনে নেই?” অন্যদিকে তাকিয়ে বলে নিহি।
আমান মৃদু মৃদু হাসে। জিজ্ঞেস করে,
“গোসল করেছেন?”
“হু। নামাজও পড়েছি।”
“লক্ষী মেয়ে।”
নিহি কিছু বলে না। আমান প্যাকেটগুলো নিহির দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,
“দেখুন।”
নিহি প্যাকেট থেকে সব বের করে। অবাক হয়ে বলে,
“এত শাড়ি?”
“বিয়ের পর মেয়েদের শাড়িতেই সুন্দর লাগে।”
“আপনি আবারও বিয়ে নিয়ে সিরিয়াস!”
“জীবনে বিয়ে কয়বার হয়?”
“ছাড়ুন! মেয়েদের এত কসমেটিক্স চিনেন কীভাবে?”
“চিনতে হয়।”
“আগে গার্লফ্রেন্ডের জন্য কিনেছিলেন?”
“গার্লফ্রেন্ড কোনোকালেই ছিল না। এসব কিনিওনি এর আগে। আজই প্রথম। মায়ের সঙ্গে মাঝে মাঝে শপে যেতাম। তখন মা এসব কিনত আর বলত, ‘চিনে রাখ। বিয়ের পর বউকে কিনে দিতে হবে তো!’ সেই থেকেই মাথায় গেঁথে রয়েছে।”
“ওহ। আপনার মা জানে?”
“কী?”
“আমার কথা।”
“এখনো না। আগে আপনার মা কী সিদ্ধান্ত নেয় সেটা শুনি। তারপর জানাব।”
“যদি আপনার ফ্যামিলি আমায় মেনে না নেয়?”
“হোয়াটএভার! আমি একজন প্রতিষ্ঠিত ছেলে। পরিবারের ওপর ডিপেন্ডেন্ট নই আমি। নিজের বউকে নিজের উপার্জনে খাওয়ানোর এভিলিটি আমার আছে।”
“ভালো।”
“হুম। আপনি পোশাক পাল্টে নিন। আমি অন্য রুমে যাচ্ছি।”
________________________
পরেরদিনও নিহি কলেজে আসে না। উপমা একাই যায় কলেজে। উপমাকে একা দেখে আপনা-আপনি কপালে ভাঁজ পড়ে অনলের। কালও নিহিকে ছুটির সময় দেখেনি। আজও উপমা একাই এসেছে। অনল উপমার কাছে গিয়ে জানতে চায়,
“নিহি কোথায়?”
অনল নিহির খবর জানতে চাইছে শুনে অবাক হয় উপমা। কিন্তু সেটা প্রকাশ না করে রাগ নিয়ে বলে,
“তা দিয়ে আপনি কী করবেন?”
অনল উপমার প্রশ্নের জবাব দেয় না। আবার জিজ্ঞেস করে,
“নিহি আসবে না আজ?”
“না, আসবে না।”
“অসুস্থ?”
“জানিনা।”
“প্লিজ বলো।”
“কী ব্যাপার বলুন তো? হঠাৎ ওর খবর জানার জন্য এমন উতলা হয়ে পড়েছেন কেন? নতুন কোনো রিভেঞ্জ নেওয়ার ফন্দি এঁটেছেন নাকি?”
অনল এবার নিরবে ফ্যালফ্যাল করে উপমার দিকে তাকিয়ে থাকে। আর কিছু না বলেই সেখান থেকে চলে যায়। বিরক্তিতে উপমার মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে, ‘যত্তসব।’
কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে পায়চারি করছে অনল। পাশেই বসে আছে সাকিব, সুমাইয়া, লিসা আর মিলন। অনেকক্ষণ যাবৎ বসে বসে অনলের অস্থরিতা দেখছে। অনল ভেবেই পাচ্ছে না এত অস্থির কেন লাগছে ওর? কার অনুপস্থিতি এত পোড়াচ্ছে। সাকিব এগিয়ে এসে বলে,
“অস্থির লাগছে দোস্ত?”
“বুঝতে পারছি না রে।”
“নিহির কথা ভাবছিস?”
সাকিবের মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলে,
“কখনোই না। বাই দ্যা ওয়ে, আমি ইরার কাছে যাচ্ছি। ওর সঙ্গে দেখা করলেই সব অস্থিরতা কেটে যাবে। বাই।”
অনল চলে যাওয়ার পর তাচ্ছিল্যভাবে হাসে সাকিব। সঙ্গে সুমাইয়াও। সুমাইয়া সাকিবের উদ্দেশ্যে বলে,
“গাধাটা এখনো বুঝতে পারছে না কার অনুপস্থিতিতে ‘ও’ এত অস্থির। ঠিক মানুষকে না খুঁজে ভুল মানুষের কাছে যাচ্ছে অস্থিরতা কমাতে। ছেড়ে দে। সময় হলে একাই বুঝবে সব।”
.
.
টিং টং করে বেশ কয়েকবার কলিংবেল বাজার শব্দ পেয়েছেন নিজাম ইসলাম। তমা তখন রান্না করছিল। সালেহা বেগম নিজাম ইসলামের পাশে বসে টেলিভিশন দেখছে। কলিংবেল বাজার শব্দ তিনিও শুনেছেন। কিন্তু ইচ্ছে করেই দরজা খুলে দেননি। নিজাম ইসলাম পত্রিকা পড়ছিলেন। বারবার কলিংবেলের শব্দে তার মনোযোগ নষ্ট হচ্ছে। নিহির বিষয় নিয়ে কথা বলতে গেলেই নিজাম ইসলাম সালেহা বেগমকে এড়িয়ে চলছেন। মূলত এজন্যই এখন সালেহা বেগমও প্রতিশোধ নিচ্ছেন। সেটা নিজাম ইসলামও খুব ভালো করেই বুঝতে পারছেন। পত্রিকার এক পাতায় চোখ বুলিয়ে আর না পেরে নিজেই দরজা খুলতে যান। দরজা খুলে দেখেন লাল সুয়েটার পরা এক বাচ্চা ছেলে। নিজাম ইসলামকে দেখে বাচ্চাটি থতমত খেয়ে যায়।
“কাকে চাও?” জিজ্ঞেস করেন নিজাম ইসলাম।
ছেলেটি কিছুক্ষণ চুপ থেকে অকপটে বলে,
“আঙ্কেল স্কুলে যাচ্ছিলাম আমি। খুব পানি পিপাসা পেয়েছে। একটু পানি খাওয়াবেন?”
“ওহ, আচ্ছা। ভেতরে আসো।”
নিজাম ইসলাম ছেলেটিকে ভেতরে নিয়ে আসেন। তমার উদ্দেশ্যে বলেন,
“বৌ মা এক গ্লাস পানি দিয়ে যেও তো।”
এরপর ছেলেটির দিকে তাকিয়ে বলেন,
“তুমি বসো।”
ছেলেটি সোফায় বসে এদিক-ওদিক তাকিয়ে কাউকে খুঁজছে মনে হচ্ছে। হয়তো নিহিকেই খুঁজছে। নিজাম ইসলাম আবার পত্রিকা পড়ায় মনোযোগ দেয়। তমা পানি নিয়ে আসে। ছেলেটিকে দেখে বলে,
“তুমি?”
“জি। আঙ্কেল আমার জন্যই পানি আনতে বলেছিলেন। দিন পানি দিন।”
তমা দেওয়ার আগেই পানির গ্লাসটা নিয়ে এক ঢোক পানি পান করে। হাতের উল্টো পিঠে ঠোঁটের ওপর লেগে থাকা পানিটুকু মুছে বলে,
“আপু দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে যান। আমি চলে যাব।”
নিজাম ইসলামের দিকে তাকিয়ে বলে,
“ধন্যবাদ আঙ্কেল।”
ছেলেটার ছটফটানি দেখে তমা অবাক হয় ভীষণ। দরজার কাছে যেতেই ছেলেটি ফিসফিস করে বলে,
“আপনি নিহি আপুর ভাবি না?”
তমা কপাল কুঁচকে বলে,
“হু। তুমি কে?”
ছেলেটা ব্যাগ থেকে একটা খাম বের করতে করতে বলে,
“আমার নাম বলা বারণ। এই চিঠিটা নিহি আপুকে দিয়ে দেবেন।”
“তোমার নিহি আপু এখানে থাকে না।”
ছেলেটি অবাক হয়। জিজ্ঞেস করে,
“তাহলে কোথায় থাকে?”
“ঠিকানা বলা যাবে না। আচ্ছা এটা বলো, এই চিঠিগুলো কে দেয়? বললে আমি তোমায় চকোলেট কিনে দেবো।”
ছেলেটি হেসে বলে,
“এই চিঠিগুলো কে দেয় তা না বলার জন্য আমি ভাইয়ার কাছে যা চাই, তাই-ই পাই। আচ্ছা, আমি তাহলে এখন থেকে আপনাকেই দেবো চিঠিগুলো। আপনি নিহি আপুকে দিয়ে দেবেন।”
এরপর এক দৌঁড়ে সিঁড়ি থেকে নামতে থাকে।
“আরে শোনো!” তমার ডাকের কোনো সাড়াশব্দ না দিয়েই চলে যায় ছেলেটি।
.
সকাল ১১টা
ফজরের নামাজ পড়েই ঘুমিয়েছে আমান। আর উঠেনি। অফিসেও যায়নি আজ। নিহি সঙ সেজে বসে রয়েছে। কাজ করার মতো কোনো কাজ নেই। সব কাজ আবুল আর টুকটুকি করছে। নিহি শুধু সোফায় বসে বসে ওদের কাজকর্ম দেখছে। আমান হাই তুলতে তুলতে ব্রাশ হাতে ড্রয়িংরুমে আসে। নিহির দিকে তাকিয়ে বলে,
“এভাবে বসে আছেন?”
নিহি বিরক্ত নিয়ে বলে,
“আপনার সমস্যাটা কী হ্যাঁ? আমি যা করি তাতেই আপনার সমস্যা?”
“সমস্যার কথা কখন বললাম?”
“ছাড়ুন। নিজের কাজে যান।”
“আপাতত কোনো কাজ নেই আমার। আমার পি.এ এসে পড়বে। সে আসলে আমার ঘরে পাঠিয়ে দিয়েন। আমি ফ্রেশ হতে যাচ্ছি।”
আমান চলে যাওয়ার সময় নিহি বলে,
“হ্যাঁ, আপনার কামলা দেওয়ার জন্যই তো আমি এখানে বসে আছি।”
আমান ভ্রু কুঁচকে ফিরে একবার নিহির দিকে তাকায়। তারপর ব্রাশ করতে করতে ওয়াশরুমে চলে যায়। নিহি আগের মতোই আবার চুপচাপ বসে থাকে। কিছুক্ষণের মাঝেই কলিংবেল বাজে। নিহি যাওয়ার আগেই আবুল দৌঁড়ে গিয়ে দরজা খুলে দেয়। নিরব আবুলকেই জিজ্ঞেস করে,
“স্যার বাসায় আছেন?”
“হ, ঘরেই আছে।” আবুলের উত্তর।
নিরব ড্রয়িংরুমে এসে একবার নিহির দিকে তাকায়। তারপর আমানের ঘরে চলে যায়। একটা মানুষ বাড়িতে এসেছে। তাকে নাস্তা-পানি দেওয়া উচিত। আমানের ওপর রাগ করে থাকলে চলবে না। তাই নিহি কিচেনে গিয়ে নিরবের জন্য চা বানিয়ে আনে। চা রেখে আসার সময় নিরব ড্যাবড্যাব করে নিহির দিকে তাকিয়ে থাকে। আমতা আমতা করে জিজ্ঞেস করে,
“আপনি কে? না মানে, আপনাকে তো এর আগে কখনো দেখিনি।”
“আমিও তো আপনাকে আগে কখনো দেখিনি।”
নিরব এবার দাঁত বের করে হাসে। হাসতে হাসতে বলে,
“আপনি ভীষণ রসিক মানুষ।”
“দাঁত না কেলিয়ে চা খান। নয়তো ঠান্ডা হয়ে যাবে।”
নিরবের দাঁত কেলানো চওড়া হাসিটা বন্ধ হয়ে যায় নিহির কথার ধরণে। কিছুক্ষণ পর আবারও দাঁত বের করে হেসে হেসে বলে,
“বললেন না তো আপনি কে?”
“আমার ম্যাম।” ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে উত্তর দেয় আমান।
নিরব মাথা চুলকে বলে,
“আপনার ম্যাম মানে স্যার? তাহলে আমার কী?”
উত্তরে নিহি বলে,
“ঘোড়ার ডিম! আমি কারো ম্যাম নই। আমি নিহি।”
“কিন্তু উনি কে স্যার?” প্রশ্ন করে নিরব।
আমান অকপটে বলে,
“আমার স্ত্রী।”
নিহি চকিতে ফিরে তাকায় আমানের দিকে। এত অকপটে স্বীকারোক্তি কেন উনার? এত সহজে কী করে সব মেনে নিলেন উনি?
চলবে…
#আড়ালে_আবডালে
#পর্ব_১৯
#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
___________________
আমানের কথা শুনে নিরব বড় বড় ঢোক গিলে। অবিশ্বাসের চোখে একবার আমানের দিকে তাকায় আবার আরেকবার নিহির দিকে তাকায়। আমান টাওয়াল দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বিছানার ওপর বসে। টাওয়ালটা বিছানার ওপর রেখে ফাইলগুলো হাতে নিয়ে বলে,
“কোনটায় সাইন করতে হবে?”
বিছানার ওপর ভেজা টাওয়াল রেখেছে বলে নিহি রেগে যায়। টাওয়ালটা হাতে নিয়ে আমানকে ধমক দিয়ে বলে,
“খাইচ্চরা কামকাজ!”
টাওয়াল নিয়ে হনহন করতে করতে নিহি বারান্দায় চলে যায়। নিহির ধমক খেয়ে আমান নিহির চলে যাওয়ার পথে বোকার মতো তাকিয়ে থাকে। এদিকে নিরব একটার পর একটা শকড খেয়েই চলেছে। বারান্দায় টাওয়ালটা মেলে দিয়ে আমান ও নিরবকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে নিহি রান্নাঘরে চলে যায়। নিরব কাচুমুচু হয়ে প্রশ্ন করে,
“সত্যিই কি উনি আপনার ওয়াইফ স্যার?”
নিরবের কথায় ধ্যান ভাঙে আমানের। নিহির ধমকের প্রভাব প্রয়োগ করে নিরবের ওপর। পিঞ্চ মেরে বলে,
“না, না। জুলাপাতি খেলার জন্য জামাই-বউ সেজেছি। খেলা শেষ হলেই বাড়ি চলে যাবে।”
নিরবকে কথা শুনিয়ে আমান ফাইলগুলো চেক দেওয়ায় মন দেয়। আমানের পিঞ্চ মেরে বলা কথাগুলো বুঝতে সামান্যতম ক্লেশ পেতে হয় না নিরবকে। পাল্টা কোনো প্রশ্ন করতেও সাহসে কুলাচ্ছে না। আবার স্যার কাউকে না জানিয়েই বিয়ে করেছে এই বিষয়টাও নিরবের বিশ্বাস হচ্ছে না। সব কেমন যেন পেটের মাঝে গুলিয়ে যাচ্ছে। আমানের মন ভালো করতে নিরব প্রশ্ন করে,
“স্যার চা খাবেন? বানিয়ে আনব?”
নিরবের সরলতা দেখে আমান হেসে ফেলে। মূলত নিরবকে এজন্যই আমানের এত ভালো লাগে। এবং অন্য সব এমপ্লয়িদের চেয়ে নিরবকে আলাদা চোখে দেখে। আমানকে হাসতে দেখে মনে সাহস ফিরে পায় নিরব। আবার জিজ্ঞেস করে,
“স্যার আনব?”
আমান ফাইল দেখতে দেখতে হেসে হেসেই বলে,
“চা বানাতে হলে লোক আছে আমার। তুমি বানাবে কেন?”
“কী যে বলেন না স্যার! আপনার জন্য চা বানাতে পারলে আমার ভালো লাগবে।”
আমান আড়চোখে একবার দরজার দিকে তাকায়। এখান থেকে ড্রয়িংরুমের অনেকটা অংশ দেখা যায়। নিহি যেখানে দাঁড়িয়ে আছে সে জায়গাটা স্পষ্ট। আমান নিহিকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলে,
“বুঝলে নিরব, তোমার মতো করে কেউ বোঝে না। আমায় চা বানিয়ে দেওয়া যে সৌভাগ্যের বিষয় সেটাও সবার বোধগম্য হয় না।”
আমানের কথা পরিষ্কার শুনতে পেয়েছে নিহি। দাঁতে দাঁত চেপেও রাগকে কন্ট্রোল করা যাচ্ছে না। এই লোকটার সমস্যা কী হ্যাঁ? না, সমস্যাটা আসলে কী? পেছনে না লেগে থাকলে লোকটার যেন বদহজম হয়! আমান মুখ টিপে টিপে হাসছে। পরিস্থিতি সুবিধার ঠেকছে না নিরবের। নিরবের ভাবভঙ্গি দেখে আমান বলে,
“যেকোনো সময় বোম ফুটতে পারে। সাবধানে থেকো।”
আমানের বলতে দেরি, নিহির তেড়ে যেতে এক সেকেণ্ডও সময় লাগে না। নাক ফুলিয়ে চোখ দুটো ছোট ছোট করে যত রাগ আছে সব ঢেলে বলে,
“আমি কেন বানাতে যাব চা? আমার কী ঠ্যাকা পড়ছে? একজন মানুষ থাকতেন বাসায়। তার জন্যই তো দুজন মানুষ কাজের জন্য রেখে দিছেন। তাহলে আমি কেন চা বানাতে যাব?”
নিহির রাগে একটুও পরিবর্তন এলো না আমানের। ও চুপচাপ ফাইল দেখছে। তাও মনোযোগ দিয়ে। বেচারা নিরব সব গিলেছে নিহির দিকে তাকিয়ে। আমান আগের ভঙ্গিতেই বলে,
“দেখেছ নিরব, আমার বউ কত সংসারী? এখনই আমার টাকা-পয়সা নিয়ে কত ভাবছে।”
“স্যার, কেন সেধে সেধে বোম ফুঁটাতে যান?” বিড়বিড় করে অসহায় ভঙ্গিতে বলে নিরব।
নিহি আমানকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই আমান টুকটুকি আর আবুলকে ডাকে। আমানের এক ডাকেই দুজন সঙ্গে সঙ্গে হাজির। আবুল বলে,
“কন ভাইজান।”
হাতের ফাইলটা বন্ধ করে আমান সোজা হয়ে বসে। ওদের দিকে তাকিয়ে বলে,
“তোদের আপামনি যে তোদের চাকরী খেয়ে দিতে চাচ্ছে সে খবর কি তোরা রাখিস?”
আমানের কথা শুনে নিহি বড় বড় চোখ করে তাকায়। কী রকম মিথ্যাবাদী ভাবা যায়? আমান আবার বলে,
“আমি একা মানুষ হয়ে তোদের দুজনকে কাজে রেখেছি বলে তোদের আপামনির রাগ হয়েছে। টাকার হিসেব করছে।”
আবুল আর টুকটুকি দুজনেরই মনঃক্ষুণ্ণ হয়। টুকটুকি মাথা নত করে অসহায়ভাবে বলে,
“আপনেরে অনেক ভালা ভাবছিলাম আপাজান। আপনে যে আমগোর চাকরী খাইতে চাইবেন এইটা আমরা আশা করি নাই।”
“হ আপামুনি। এই কামডা আপনে কেমনে করতে পারেন?” টুকটুকির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বলে আবুলও।
“এসব মিথ্যে। আমি এমনভাবে কিছু বলিনি। বিশ্বাস করো। আমি কেন তোমাদের চাকরী খেতে যাব?” বিশ্বাসের সুরে বলে নিহি।
আমান এবার হো হো করে হেসে ফেলে। নিহির আরো রাগ বেড়ে যায়। নিহি বলে,
“দেখেছ, দেখেছ? কীভাবে হাসতেছে এখন? আপনি একটা ফাজিল লোক।”
আমান তবুও হাসে। এদিকে নিহি যে এমনকিছু বলেনি তা আবুল আর টুকটুকিকে বিশ্বাস করানোর জন্য উপায় খুঁজছে। নিরবকে দেখতে পেয়ে বলে,
“এইযে ক্যাবলা ভাই, আপনিই বলুন আমি কী এমনকিছু বলেছি?”
নিরবের চোখ দুটো লাড্ডুর মতো হয়ে যায়
আমানের হাসি আরো বেড়ে যায়। এবার হাসিতে যোগ দেয় আবুল আর টুকটুকিও। নিরব ডানে, বায়ে তাকিয়ে অসহায়ের মতো নিজের দিকে আঙুল তাক করে বলে,
“আপনি কি আমাকেই ক্যাবলা বললেন ম্যাম?”
“আরে হ্যাঁ, আপনাকেই বলেছি।” দৃঢ়তার সঙ্গে বলে নিহি।
নিরব এবার অসহায়ের মতো আমানের দিকে তাকায়। হাসতে হাসতে আমানের চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে গেছে। নিরবকে চুপ থাকতে দেখে নিহি বলে,
“কী হলো? চুপ করে আছেন কেন? বলুন।”
নিরব আহতভাবে বলে,
“আমি জানিনা ম্যাম।”
“জানিনা বললে তো হবে না। আপনাকে বলতেই হবে। বলুন বলছি।”
“বলব না ম্যাম।”
“সাধে কি আর আপনার নাম ক্যাবলকান্ত দিয়েছি? আসার পর থেকে দেখছি উনাকে প্রতিটা কথায় কথায় স্যার ডাকছেন। এখন আবার আমায় প্রতিটা কথায় কথায় ম্যাম ডাকছেন। দেখতে তো যথেষ্ট হ্যান্ডসাম। তাহলে এমন ক্যাবলকান্ত কেন আপনি?”
“এটাকে সম্মান বলে ম্যাম।” কণ্ঠে আহতের সুর নিরবের।
“তাই? গার্লফ্রেন্ডকে কী বলেন? গফ, গফ?”
নিরব এবার ন্যাকীসুরে আমানের দিকে তাকিয়ে বলে,
“স্যার!”
আমান হাসি থামিয়ে নিহিকে বলে,
“বেচারাকে আর পঁচাবেন না প্লিজ। ও অনেক ভালো ছেলে।”
“মোটেও না। ভালো হলে সত্যটা আবুল আর টুকটুকিকে বলত।”
“আচ্ছা বেশ। আমিই বলে দিচ্ছি।”
এরপর আবুল আর টকটুকির দিকে তাকিয়ে বলে,
“তোদের আপামনি তোদের চাকরী খেতে চায়নি। আমি মজা করে বলেছি।”
“এখন বিশ্বাস হলো? তখন তো আমার কথা শুনলে না।” অভিমানিসুরে আবুল আর টুকটুকিকে কথাটা বলে নিহি অন্য ঘরে চলে যায়। আবুল আর টুকটুকিও যায় নিহির রাগ ভাঙাতে। আমান যাওয়ার পথে তাকিয়ে তৃপ্তির হাসি হাসে। গুমোট বাড়িটা হাসিখুশিতে পরিণত হয়েছে। বাড়ির প্রতিটা আনাচেকানাচে এঁটে যাচ্ছে হাসি, মান-অভিমানের ছোঁয়া।
নিরব প্রশ্ন করে,
“স্যার কীভাবে কী হলো? লুকিয়ে কেন বিয়ে করেছেন?”
“কীভাবে যে কী হলো নিজেও বুঝিনি। তবে মন বলেছে, যা হয়েছে ভালোই হয়েছে। আমি এমনিতেই হাসি-খুশি মানুষ। কিন্তু জীবনটাকে আরো বেশি রঙিন করতে আল্লাহ্ নিহুকে পাঠিয়ে দিয়েছে। ও’কে নিয়ে আমার কোনো সমস্যা নেই। আমি চাই জীবনের বাকিটা সময় ও আমার সাথেই থাকুক। কিন্তু নিহুটা চায় না আমার সঙ্গে থাকতে। সরাসরি বলে দিয়েছে চলে যাবে।”
“আপনি কিছু বলেননি স্যার?”
“বলেছি। থেকে যেতে বলেছি।”
“যদি থাকতে না চায়?”
“তবে মুক্ত করে দেবো। নিহু আমার কাছে একটা ছোট্ট সুন্দর পাখির মতো। যে হঠাৎ করেই আমার জীবনে উড়ে চলে এসেছে। তাই বলে কি আমি ও’কে শক্ত শিকলে আঁটকে রাখব? কখনোই না। আমি ও’কে আগের মতোই মুক্ত করে দেবো। যদি ওর মনে হয়, ভরসা করার মতো যোগ্য মানুষটা আমি, তাহলে নিহু পাখিটা আমার কাছেই ফিরে আসবে। আমি না হয় সে পর্যন্ত আকাশপানে তাকিয়ে অপেক্ষার প্রহর গুণব।”
“বড়-ই কঠিন আপনার ভালোবাসা স্যার।”
“তোমাদের কাছে হয়তো কঠিন। কিন্তু যেদিন নিহু পাখিটা চাইবে সেদিন সব ভালোবাসা ও’কে উজার করে দেবো। নিহু কিন্তু সেদিন তোমাদের মতো বলবে না, আমার ভালোবাসা কঠিন। ও বলবে, নরম। সবচেয়ে নরম ভালোবাসাটাই আমি।”
“আর বলবেন না স্যার। মেয়ে হলে প্রেমে পড়ে যেতাম ঠিক।”
“ইডিয়ট!”
নিরব হাসে। সঙ্গে হাসে আমানও।
.
.
গায়ে সুয়েটার, শাল জড়িয়ে সোফায় পা তুলে বসে টিভিতে গান দেখছিল আর শুনছিল নিহি। আবুল আর টুকটুকিও ওর সঙ্গে টিভি দেখছে। গান হচ্ছে শাহরুখ খান আর মাধুরীর ‘হামকো হামেসে চুরালো।’ গানের চেয়ে আবুল আর টুকটুকির কথাই বেশি হচ্ছে। আবুল মাধুরীর বিশাল বড় ফ্যান আর টুকটুকি শাহরুখ খানের। দুজনেই গল্পজুড়ে দিয়েছে দুজনকে নিয়ে। নিহি নিরব শ্রোতা হয়ে দুজনের কথা শুনছে। আমান ঘরে বসে অফিসের কাজ করছিল। নিহির ফোন বাজছে। ফোনের স্ক্রিনে লেখা ‘উপমা’। ফোনটা ঘরেই ছিল। আমান ঘর থেকেই ডাকে,
“নিহু আপনার কল এসেছে।”
নিহি উঠে দাঁড়ানোর জন্য প্রস্তুত হতেই আবুল বলে,
“আপামুনি আপনে বসেন। আমি ফোন নিয়া আইতাছি।”
“যান।” হেসে বলে নিহি।
আবুল দৌঁড়ে গিয়ে ফোন নিয়ে আসে। ততক্ষণে প্রথম কল কেটে গিয়েছে। দ্বিতীয়বার আবার কল করেছে উপমা। এবার ফোন রিসিভ করে নিহি। উপমা ধমক দিয়ে বলে,
“কোথায় থাকিস বাল! প্রথমবার ফোন দিয়ে তোরে পাই না ক্যান?”
“জামাইর বাড়ি!” অস্ফুটস্বরে বলে নিহি।
উপমা জিজ্ঞেস করে,
“কী? কার বাড়ি বললি?”
“কিছুনা। কলেজ কখন ছুটি হলো? কোথায় আছিস?”
“মাত্রই ছুটি হয়েছে। রিক্সায় আছি এখন। আচ্ছা তুই কলেজে কেন আসিস না বলতো?”
“বলব। তোকে আমার অনেককিছু বলার আছে। কিন্তু ফোনে বলা যাবে না। আমি তোকে আপুর বাড়ির ঠিকানা দেবো। তুই আসতে পারবি?”
“তা পারব। কবে আসব বল?”
“সম্ভব হলে কালকেই।”
“আচ্ছা কালই আসব। আমিও তাহলে কাল কলেজে যাব না। তোকে ছাড়া একা একা ভালো লাগে না।”
নিহি হাসে। জিজ্ঞেস করে,
“দীপ্ত কেমন আছে রে?”
“ইশ! কী ঢং। একবারও জিজ্ঞেস করেছিস আমি কেমন আছি? দীপ্তর কথা ঠিকই জিজ্ঞেস করলি। আমি কে? আমি তো আর কেউ না।”
“হয়েছে বলা? দম নে একটু বাপ!”
“হুহ।”
“তুই এত হিংসুটে কবে থেকে হলি?”
“তোর জন্যই তো হয়েছি। আগে তো ছিলাম না। তুই কেন আসলি আমার জীবনে?”
“কীসব অদ্ভুত প্রশ্ন করছিস উপমা?”
“বাল! জানিনা। ভালো লাগে না তোরে ছাড়া। তুই তাড়াতাড়ি ফিরে আয়। না, শোন। কালকে তো আমি যাবই। আমি গিয়ে তোকে নিয়ে আসব। তুই কিন্তু বারণ করতে পারবি না। লক্ষী মেয়ের মতো আমার সঙ্গে চলে আসবি। ঠিকাছে?”
নিহির আনন্দ হয় খুব। আনন্দেও বুকের মাঝে কেমন করে ওঠে। মেয়েটা এত কেন ভালোবাসে? যখন কলেজ থেকে চলে যাবে তখন কী করে থাকবে? বোকা মেয়ে! এত ভালোবাসার দাবী কি আমি রাখি? নিহিকে চুপ থাকতে দেখে উপমা বলে,
“তোকে যেই কারণে ফোন করেছি, তা বলতেই তো ভুলে গেছি।”
“বল।”
“আজকে অনল ভাইয়ার সঙ্গে কথা হয়েছে।”
“কী কথা হলো?”
“সেই এসে কথা বলেছে। তোর কথা জিজ্ঞেস করল। তুই কেন কলেজে আসিস না জানতে চাইল। আমিও কড়া কড়া কথা শুনিয়ে দিয়েছি।”
“পরে?”
“পরে আর কিছু বলেনি। চলে গেছে।”
নিহি একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। কিছুক্ষণ মৌন থেকে বলে,
“বাদ দে। তার কথা শুনতে ভালো লাগে না। বাড়িতে গেছিস?”
“এইযে রিক্সা থেকে নামলাম এখন।”
“আচ্ছা ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নে। তারপর রেষ্ট নে কিছুক্ষণ। আর কালকে কখন আসবি বল?”
“সকালের দিকেই আসব।”
“আচ্ছা। রাতে কল দিবোনি।”
“আচ্ছা। আল্লাহ্ হাফেজ।”
“আল্লাহ্ হাফেজ।”
ফোন কাটার পরও নিহি একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। আবুল জিজ্ঞেস করে,
“আপনের বন্ধু ফোন দিছিল আপামুনি?”
“বান্ধবী।”
“আপনের চোখে পানি আইছিল ক্যান? হেয় কি বকছে?” জিজ্ঞেস করে টুকটুকি।
নিহি চোখের কার্ণিশে হাত দিয়ে বলে,
“কই? কেঁদেছিলাম নাকি?”
“হ। আপনে বুঝেন নাই। বকছিল হেয়?”
নিহি হেসে বলে,
“আরে না। ও আমায় বকবে কেন? কলেজে আমার সবথেকে কাছের বান্ধবী ও। ওর নাম উপমা। অনেক ভালোবাসে আমায়। এজন্যই বোধ হয় ইমোশোনাল হয়ে পড়েছিলাম।”
“আপনে মানুষটাই জানি কেমন আপামুনি। আপনেরে চিনি দুইদিন হইব। আমরাই তো আপনের মায়ায় পইড়া গেছি।”
আবুলের সঙ্গে টুকটুকিও বলে,
“হ আপাজান। আবুল কিন্তু এইটা ঠিক কথা কইছে।”
নিহি মৃদু হেসে বলে,
“এত অল্পতেই কারো মায়ায় পড়তে নেই গো। পরে চলে গেলে তখন কষ্ট লাগবে।”
“এহ্! কই যাবেন আপনে? আপনেরে কুনোখানে যাইতে দিমু না।”
নিহি এবারও হাসে। হেসে হেসে বলে,
“কাল উপমা আসবে। আমায় নিয়ে যাবে বলেছে।”
“নিয়া যাইব ক্যা? আপনের বিয়া হইছে ঐ আপায় জানে না?” জিজ্ঞেস করে টুকটুকি।
উত্তরে নিহি বলে,
“না, জানে না। এজন্যই কাল ও’কে আসতে বলেছি। সব বলব কাল।”
“যাই হোক, আপামুনি আপনি কিন্তু যাইবেন না।”
নিহি এবারও হাসে। রহস্যজনক হাসি। কথা তো ওদের দেওয়া যাবে না। নিহি জানে না সামনে ওর জন্য কী অপেক্ষা করছে। আর কী-বা আছে ওর ভবিষ্যতে। তবে যাই হোক না কেন, সবকিছুর জন্যই নিহি এবার নিজেকে প্রস্তুত রেখেছে।
.
সন্ধ্যার দিকে আবুল আর টুকটুকি সব কাজ শেষ করে বাড়িতে চলে গেছে। নিহি এখন বাড়িতে একা। আমানও বাইরে গেছে। তমা ফোন দিয়েছিল। সুন্দর করে সেজেগুজে ভিডিওকলে আসতে বলেছে। সবাই নাকি কথা বলবে। নিহি আবদার ফেলতে পারেনি। পরিবারকে তো আর কিছুই দিতে পারেনি। একটু হাসিমুখে না হয় কথাই বলুক। হালকা গোলাপী রঙের একটা সুতী শাড়ি পরেছে এখন। আমানই এনে দিয়েছিল। মুখে হালকা প্রসাধনী আর চোখে গাঢ় করে কাজল দিয়েছিল। আমান তখন বাইরে থেকে এসে বিছানায় হাত-পা ছড়িয়ে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়ে। নিহি যে আয়নার সামনে বসে সাজছে সেটা খেয়ালই করেনি। খাটের সঙ্গে হেলান দিয়ে বসতে গিয়ে নিহির মুখোমুখি হয়েছে। ড্রেসিংটেবিল খাটের পাশেই রাখা। আমান মুগ্ধতার দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। আমান নিজের দিকে তাকায়। সাদা টি-শার্টের ওপর ব্লু ডেনিম জ্যাকেট পরেছে। আর কালো প্যান্ট। নিহির দিকে তাকিয়ে বলে,
“কালো বা সাদা, নীল শাড়ি পরতে পারেননি?”
নিহি ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে,
“কেন?”
“তাহলে আমার সঙ্গে ম্যাচিং হয়ে যেত।”
“ঢং!” মুখ বাঁকিয়ে বলে নিহি।
আমান হাসে। জিজ্ঞেস করে,
“হঠাৎ এত সাজগোজ?”
“জামাইর জন্য সাজছি। কোনো সমস্যা? নিহির বাঁকা উত্তর।
আমান খুশিতে গদগদ হওয়ার অভিনয় করে বলে,
“না, না। আমার জন্যই যখন সেজেছেন তখন আমার সমস্যা কেন হবে?”
নিহি আমানের দিকে সোজা হয়ে বসে বলে,
“শুনুন, ওভার স্মার্ট সাজার চেষ্টা করবেন না।”
“আমি তো এমনিতেই ওভার স্মার্ট, কুল, হ্যান্ডসাম ছেলে। আর কী চেষ্টা করব?” নিজের চুলের মাঝে হাত চালাতে চালাতে বলে আমান।
নিহি কিছু বলতে গিয়েও থেমে যায়। ভালো করে আয়নার দিকে তাকাতে গিয়ে দেখতে পায় এক চোখের কাজল একটু লেপ্টে গেছে। শাড়ির আঁচলের কোণা দিয়ে লেপ্টে যাওয়া কাজলটুকু মুছে নেয়। আমান গালে হাত দিয়ে নিহির দিকে তাকিয়ে থাকে। বুকের বাম পাশে হাত দিয়ে বলে,
“হায়ে! এই, আমায় তোমার চোখের লেপ্টে যাওয়া কাজল বানাবে? চোখে স্থান না পেলেও তোমার শাড়ির আঁচলে রয়ে যাব।”
“সরেন তো। আপনার মতো আমার মনে এতো রং-তামাশা, প্রেম নাই।”
আমান খালি গলায় গান শুরু করে,
“প্রেম জেগেছে আমার মনে, বলছি আমি তাই। তোমায় আমি ভালোবাসি। তোমায় আমি চাই। উরি, উরি বাবা! কী দারুণ!”
শেষের লাইনটা এমন হাস্যাত্মকভাবে বলেছে যে নিহি না হেসে আর পারে না। আমানের নিজেরও হাসতে হাসতে অবস্থা খারাপ। আমানের হাসির জন্য আরো হাসি পায় নিহির। পেটে হাত দিয়ে হাসে। হাসতে হাসতে চোখের কোণা বেয়ে পানিও চলে আসে। আমান হাসি থামিয়ে মুগ্ধ নয়নে দেখে নিহিকে। মেয়েটা সবসময় এরকম হাসলে কী এমন ক্ষতি হয়ে যায়? আমানকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে আকস্মিক নিহির হাসি বন্ধ হয়ে যায়। আয়নার দিকে সোজা হয়ে বসে চুল ঠিক করে। এবার আমান আবেদনময় দৃষ্টিতে তাকিয়ে গান শুরু করে,
“Gori ae, tu kinni gori ae
Tu zameen pe chaand ki jodi hai
Buri ae, badi buri ae
Duniya ki neeyat chhoriye
Nazar na lag jaaye jaanu
Thought yeh ghabraye saanu
Nazar na lag jaaye jaanu
Thought yeh ghabraye saanu.”
নিহি একবার আমানের দিকে তাকিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নেয়। উঠে যাওয়ার সময় পেছন থেকে এসে নিহির কাঁধে হাত রাখে আমান। আয়নার দিকে তাকিয়ে ‘নজর না লাগুক’ কথাটায় হাত দুটো যেমন করে আয়নায় নিহিকে দেখে তেমন করে বলে,
“Nazar na lag jaaye jaanu
Thought yeh ghabraye saanu
Nazar na lag jaaye jaanu
Thought yeh ghabraye saanu.”
নিহি আমানকে সরিয়ে সেখান থেকে সরে যায়। টেবিলের ওপর থেকে ফোন নিয়ে তমাকে ভিডিও কলে ফোন করে। আমান তখনও নিহির দিকে তাকিয়ে আছে। নিহি চিবিয়ে চিবিয়ে বলে,
“এভাবে তাকিয়ে থাকবেন না। আমার অস্বস্তি লাগে।”
আমান বিছানার ওপর চিৎ হয়ে শুয়ে বুকের মাঝে একটা বালিশ জড়িয়ে ধরে। পরক্ষণেই বালিশটাকে বুকে জড়িয়ে হাতের কনুইতে ভর দিয়ে হাতের ওপর মাথা রাখে। নিহির দিকে তাকিয়ে আবার গায়,
“মন বোঝেনা, বোঝেনা, বোঝেনা
মন বোঝেনা, বোঝেনা, বোঝেনা…
পড়ছে কেন বিনা মেঘেই বাজ
পদ্য লেখা আমার তো নয় কাজ,
চাইছি দিনে অল্প দেখা তোর
পাল্টে দিতে আমার গল্পের মোড়
কিছুতেই উপায় মেলে না!
ওহ হো হো…
মন বোঝেনা, বোঝেনা, বোঝেনা
মন বোঝেনা, বোঝেনা…”
নিহি আমানের দিকে তাকিয়ে আছে। এদিকে যে তমা ভিডিও কল রিসিভ করেছে খেয়ালই করেনি। তমাও শুনতে পাচ্ছে আমানের গান। তিতির কথা বলতে গেলে তমা তিতিরকে ইশারায় চুপ থাকতে বলে। পাশেই রয়েছে সালেহা বেগম আর নীলম। ওরাও শুনছে আমানের গান।
আমান বালিশ কোলে নিয়ে বসে এবার। বালিশের ওপর হাত রেখে গালে হাত রাখে। নিহির দিকে তাকিয়ে বাকিটুকু গায়,
“রোজ বিকেলে আঁতর ঢেলে
তোকে সাজাবই।
মেলায় যাব রিক্সায় চড়ে,
বসবি পাশে তুই।
বন্দি আছে হাজার আশা
বুকের মাঝে দেখ;
একটু চিনে নিলেই হব
দুজন মিলে এক।
তবু স্বপ্নেরা মুখ তোলে না!
ওহ হো হো…
মন বোঝেনা, বোঝেনা, বোঝেনা
মন বোঝেনা, বোঝেনা…”
আচমকা ফোনের দিকে তাকাতেই নিহি চমকে যায়। সবাই গভীর মনোযোগ দিয়ে তাকিয়ে আছে নিহির দিকে। নিহি কিছু বলতে গেলে তমা ইশারায় নিহিকে কিছু বলতে বারণ করে। এদিকে এখন নিহির অস্বস্তি লাগা শুরু হয়েছে। আমানের গান গাওয়া শেষ হতেই ফোনের ওপাশ থেকে সবাই হাত তালি দেয়। নিহি হেডফোন নেয়নি। তাই সবার হাত তালির শব্দ আমানও শুনতে পায়। বড় বড় চোখ করে নিহির দিকে তাকিয়ে আবার ভ্রু কুঁচকে ফেলে। আস্তে আস্তে বলে,
“তারা লাইনে ছিল?”
নিহি হেসে ফেলে। হেসে হেসে মাথা দুলিয়ে উপর-নিচ করে। যার অর্থ ‘হ্যাঁ।’ আমান কিছুটা লজ্জা পায়। মাথার পেছনে হাত দিয়ে মাথা মৃদু নত করে চুলকায়। তারপর রুম থেকে চলে যায়।ফোনের ওপাশে তমাই আগে কথা বলে,
“এত সুন্দর করে গান গায়! আমান না?”
নিহির উত্তর,
“হুম।”
“কোথায় সে? ফোনটা দাও তাকে। কথা বলি।”
“বাইরে গেছে।”
দরজার পাশেই আমান দাঁড়িয়ে ছিল। নিহির কথা শুনে দৌঁড়ে ভেতরে এসে বলে,
“না, আছি আমি।”
নিহি আচমকা ভয় পেয়ে যায়। রাগী দৃষ্টিতে তাকায় আমানের দিকে। আমান সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ করে না। নিহিকে চাপিয়ে নিহির পাশে বসে। সালেহা বেগমকে সালাম দেন,
“আসসালামু আলাইকুম মা।”
“আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া।” নীলমকে সালাম দেয়।
“আসসালামু আলাইকুম ভাবি।” তমাকেও সালাম দেয়।
তিতিরের দিকে তাকিয়ে হাত নাড়িয়ে বলে,
“হ্যালো প্রিন্সেস।”
সবাই হাসিমুখে আমানের সালামের উত্তর দেয়। আমানের সৌজন্যতা, আচার-আচরণ দেখে তারা মুগ্ধ হয়। তিতির বলে,
“হ্যালো হ্যান্ডসাম আঙ্কেল।”
আমান শব্দ করে হেসে বলে,
“একদম নিহুর মতো হয়েছে।”
নিহি আড়চোখে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আমানের দিকে তাকায়। তমা বলে,
“ঠিকই বলেছেন।”
আমান নিহির দিকে তাকিয়ে বলে,
“ওভাবে তাকিও না জানু। মরে যাব।”
নিহি থতমত খেয়ে যায়। একবার ফোনের দিকে তাকায়। আরেকবার আমানের দিকে। সালেহা বেগম এদিক-সেদিক তাকাচ্ছেন। ভাব এমন নিচ্ছেন যেন তিনি কিছু শোনেননি। নিহি দাঁত কিড়মিড় করে বলে,
“কী যা তা বলতেছেন? মা আছে ওপাশে।”
তমা আর নীলম মুচকি মুচকি হাসছে। তিতির মুখে হাত দিয়ে শব্দ করে হাসছে। আমান তিতিরকে উদ্দেশ্য করে বলে,
“ভাবি আপনার মেয়েটার হাসিও একদম নিহুর মতো। ভাইয়া শুনেন, আমার একটা ছেলে হলে আপনার মেয়েকে আমার ছেলের জন্য নিয়ে আসব। রহিম-রুব্বান হয়ে যাবে হয়তো বয়সের জন্য। এইটা কোনো ব্যাপার না।”
নিহি এবার আর রাগকে কন্ট্রোল করতে পারে না। সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে আমানের পিঠে কিল বসিয়ে ফোন নিয়ে বারান্দায় চলে যায়। বারান্দার দরজাও আটকে দেয়। ফোনের ঐপাশে সবাই হতবাক। আমান কুঁজো হয়ে পিঠে হাত বুলিয়ে বলে,
“নিহু!”
চলবে…
[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ।]