#প্রেমপ্রদীপ
part–34
Arishan_Nur(ছদ্মনাম)
আবেগ একটা ধমক দিতেই সমুদ্র পিউ চুপ হয়ে যায়। কারো মুখে আর কোন কথা নেই। দুজন কে শান্ত হতে দেখে আবেগ পিউকে উদ্দেশ্য করে বলে, পিউমণি? বড় ভাইয়ার সাথে কেউ এভাবে কথা বলে? বড় হয় না ও তোমার! সে সর্যি টু হিম।
পিউ মন খারাপ করলো।
সমুদ্র বাবার সাথে তাল মিলিয়ে বলে, একদম ঠিক! বড়দের কে কিভাবে সম্মান করতে এটা পিউ শেখেই নি কোন দিন!
এবার আবেগ সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে বলে, মোটেও না! আমার মেয়ে জানে কিভাবে বড়দের সম্মান দিতে হয়। তুমি কেন ওর সাথে উচু আওয়াজে কথা বলবে? ছোট্ট বোন হয় ও তোমার। সবসময়ই স্নেহ দিয়ে কথা বলবে
ও ভুল করলে ওকে সুন্দর করে বুঝাবা। রিকশাওয়ালাদের মতো চেচানোর তো কিছু দেখছি না আমি।
সমুদ্র মুখ ভোতা করলো। পিউ নরম গলায় বলে, সর্যি ভাইয়া।
সমুদ্রের তেমন কোন ভাবান্তর হলো না। সে নিজের রুমে ঢুকে গেট লাগিয়ে দিলো। এতে মনে মনে কষ্ট পায় পিউ।
আবেগ পিউকে নিয়ে ডাইনিং রুমে আসলো।
রোদেলা এতোক্ষণ দাঁড়িয়ে সবটাই দেখলো। এবারে তার নিজেকেই দোষী মনে হচ্ছে। সমুদ্রের তার উপর রাগ করাতে সে মোটেও কষ্ট পায় নি। বরংচ সে সমুদ্রের মনের ভেতরের ক্ষতটা দেখতে পাচ্ছে। ছেলেটা যে কষ্ট পেয়েছে অনেক তার জন্য! মায়েত জন্য কেদেছে অনেক। কিন্তু মা পারেনি তার বাবুকে সময় দিতে!
সমুদ্র রুমে গিয়ে মেজাজ খারাপ করর বসে রইল। রাতে কিছু খায় নি। সকালেও কিছু খাবে সে। যখন সে মনে মনে কষ্ট পায় সেই সময় নিজেকে বাহ্যিক ভাবে কষ্ট দিতে থাকে। যেন মনের কষ্টট কিছুটা হলেও কমে আসে। আজকে না খেয়ে থাকবে সে সারা দিন। তাহলে মনের মধ্যে যে আগুন জ্বলছে তা দপ করে নিভে যাবে।
সে রেডি হয়ে নিল। অফিস যাবে জন্য। আজকেই জয়েনিং। সব কাগজ ঠিক করে নিল।জয়েন করে সে ক্যান্সার ইনস্টিটিউট যাবে। বাবার রিপোর্ট গুলোও নিয়ে নিল সঙ্গে।
রুম থেকে বের হয়ে ড্রয়িং রুম পেরিয়ে মেইন দরজার কাছে যেতেই বাবার ডাক পড়লো।
সে থেমে গেল কিন্তু পেছনে না ঘুরে বলে, কি বাবা?
–আসো নাস্তা করো। তারপর যাও।
–খাব না।
–কেন? আজকে তো তোমার জয়েনিং ডেট। ঠিক মতো যাও। এভাবে যাচ্ছো কেন? ভালো দেখে একটা শার্ট পড়ে, ফরমাল ভাবে যাও।
সমুদ্র থেমেই আছে। বাবার কথা শেষ হওয়ার অপেক্ষায় আছে সে। শেষ হলেই বাইরে বেরিয়ে যাবে।
আবেগ আরো বলতে লাগলো, রোদেলা সমুদ্রের জন্য একটা শার্ট বের করে ইস্ত্রি করে দাও। সঙ্গে টাই ও বের করো।
রোদেলা সমুদ্রের প্লেটে খাবার বেড়ে দিয়ে বলে, আচ্ছা।
রোদেলা ছেলের রুমে গেল শার্ট বের করতে। এদিকে সমুদ্র কে জোড় করে খাওয়াতে বসানো হলো। সে না চাইতেও খেয়ে নিল।
আবেগ খেতে খেতে বলে, আমরা একটা পরিবার। আমাদের উচিত একসাথে থাকা। একে অপরের সাথে ঝগড়া করা বোকামি।
–যারা আমাদের ফেলে চলে যায়, তারাও কি পরিবারের অংশ আব্বু?
আবেগ সমুদ্রের দিকে তাকালো তারপর আস্তে করে বলে, তোমার আম্মু তো তোমাকে নিয়ে যেতেই চেয়েছিল বাবা। তুমি নিজ থেকে যেতে চাও নি। এখন কি আম্মুর দোষ আছে?
সমুদ্র কিছু বললোনা। সবাই মিলে তাকে একটা জিনিস ই বুঝাতে চাচ্ছে, তা হলো মা কোন ভুল করেনি। আসলেই কি সে ভুল করেনি?সবাই যেহুতু বলছে তাহলে হয়তোবা ভুল করেনি মা!
রোদেলা রুম থেকে বের হয়ে এলো। আবেগ সমুদ্র কে শাট চেঞ্জ করতে বলে। এবারো অনিচ্ছায় শাট চেঞ্জ করে বেরিয়ে যায়।
সমুদ্র যাওয়ার খানিক বাদে ইভানা আর শ্রাবণ চলে এলো। পিউয়ের মুখ গোমড়া দেখে শ্রাবণ তার কাছ থেকে সবটা শুনে নিল। শ্রাবণ আর ইভানা কেউই জানত না আবেগের ক্যান্সার ধরা পড়েছে। এই সংবাদ পাওয়া মাত্র দুজনই হতবিহ্বল।
ইভানা রোদেলার পাশে বসে আছে। রোদেলা চুপসে এক কোনে পড়ে থাকার মতোন বসে আছে। আবেগ রেডি হচ্ছে। সে নাকি অফিস যাবে।
ইভানা রোদেলাকে উদ্দেশ্য করে বলে, ভাবী? এখন কি করব আমরা?ভাইয়াকে ইন্ডিয়া নিয়ে যাব?
রোদেলা থমথমে গলায় বলে, তোমার ভাই কোথাও যাবে না। নিজের দেশেই চিকিৎসা করাবে। তার নিজের দেশের চিকিৎসকদের প্রতি অগাধ বিশ্বাস!
— সেকি! আজকাল বিদেশে কতো উন্নত মানের চিকিৎসা! ভাইয়া এমন কেন করছে? (ঘাবড়ে গিয়ে)
–কেন আবার? আমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য। বাচ্চাদের কথাও ভাবে না সে। বল কি করব এখন আমি? তুমি বুঝাও ওকে। এমন করে কি কোন লাভ হবে? বরং আমরা এতোগুলা মানুষ কষ্ট পাচ্ছি।
একদন্ড থেমে রোদেলা কেদে দিয়ে বলে, ইভু! ওর কিছু হয়ে গেলে আমি কি করে বাচব? আমিও মরে যাব রে ইভু৷
ইভানা রোদেলাক্ব সান্ত্বনা দিয়ে বলে, ভাবী তুমি শক্ত হও। এখন এই পরিবার তোমাকেই সামলাতে হবে৷
রোদেলা কেদে কেদে বলে, উহু। ওর পরিবার ও সামলাবে। আমি পারব না! এতো বড় দায়িত্ব একা নিতে আর কেনই বা নিব? ওকেই সব দেখতে হবে৷
— ভাবী। প্লিজ কান্না থামাও। সব ঠিক হয়ে যাবে।
রোদেলা আর ইভানা প্রায় সমবয়সী। রোদেলা আর আবেগের যখন প্রায় বিচ্ছেদ হওয়ার৷ তখন ইভানা ঢাকায় তাদের সাথে থাকত ছেলেক নিয়ে। ইভানা বিবাহিত ছিল। তখন ইভানার ও স্বামীর সাথে মনোমালিন্য চলত। তাই দুই বছরের ছেলেকে নিয়ে মায়ের বাড়ি এসে ছিল কয়েক মাস। রোদেলার সাথে ইভানার কখনো কোন সমস্যা ছিল না। ননদ হিসেবে ইভানা ভালোই ছিল। তবে ইভানা কিছুটা একা একা থাকতে পছন্দ করে। রোদেলা যখন বিদেশে পাড়ি জমায় সম্ভবত শ্রাবণ মাত্র কথা বলতে শিখেছে। তাকে মামা বলে ডাকত। আবেগ ও মামা রোদেলাকেও মামা! মামী বলতে পারত না!
★★
শ্রাবণ আর পিউ বসে আছে ছাদে। পিউ উদাস হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে। ভাইয়াকে কি তবে বলে দিব দাদির বলা কথাগুলো?
— আমার মনে হয়, It’s high time! এখন না বললে প্রবলেম বেড়েই যাবে। ভাইয়া আসলেই আমি সব বলে দিব। তুই থাকবি আমার সাথে?
— আচ্ছা।
শ্রাবণের ফোন বেজে উঠল। আননোন নাম্বার থেকে কল এসেছে। সে পিউয়ের সামনেই কল রিসিভ করে বলে, হ্যালো।
ওপাশ থেকে কেউ কথা বললো না। তবে পাশ দিয়ে গান বেজে উঠল, বন্ধু তিন দিন তোর বাড়িত গেলাম, দেখা পাইলাম না। ও বন্ধু তিন দিন! তোর বাড়িত গেলাম দেখা পাইলাম।
শ্রাবণ হ্যালো হ্যালো করছে৷ ওপাশে গান বেজেই চলছে। না পেরে সে বিরক্ত হয়ে কল কেটে দেয়৷
কিছুক্ষন পর সমুদ্র বাসায় ফিরলো। ক্যান্সার ইনস্টিটিউটে গিয়েছিল তারা। ডাক্তার বলেছে, বেশ কিছু টেস্ট করা হবে এরপরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে কেমোথেরাপি দিতে হবে কিনা।
বাসায় এসে রুমে যেতেই দেখে তার রুমে পিউ আর শ্রাবণ বসে আছে। দুইজনকে এভাবে দেখ্ব হচকচিয়ে যায় সমুদ্র।
শ্রাবণ পিউ মুখ চাওয়াচাওয়ি করে নেয়। তারপর শ্রাবণ গম্ভীর মুখে বলল, কথা আছে তোমার সাথে৷
সমুদ্র ঘড়ি খুলতে খুলতে বলে, বল৷
— মামীর কোন দোষ নেই কিন্তু! নানী সবসময়ই মামীর পেছনে পড়ে থাকত। আরো কিছু পারিবারিক কারনে মামী বিদেশে গিয়েছিল। তুমি তো শিক্ষিত তুমি বল! মামীর কি ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবা দোষ? নারী রা কি বাইরে গিয়ে চাকরি করতে পারবে না?
সমুদ্র বলল।,এখানে দোষ বা নিদোষের কিছু নেই। নারী হিসেবে হয়তোবা তিনি ঠিক। কিন্তু মা হিসেবে? কোন মায়ের কি উচিত তার বাচ্চাকে রেখে চলে যাওয়া? এখন তোমরা বলবা সে বাধ্য ছিল। দাদি বের করে দিয়েছে বাসা থেকে, বাবা গালি-গালাজ করেছে। সব বুঝলাম। তার সাথে অন্যায় হয়েছিল মানলাম। কিন্তু দাদি বললো আর সে চলে গেল? ঘর-সংসার আর ছেলের মূল্য এতো কম?
আর সে চলে গেল? ঘর-সংসার আর ছেলের মূল্য এতো কম? এখন তোমরা বলবে আমি তার সাথে যেতে চাইনি! এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা! তাকে যখন বাবা বেরিয়ে যেতে বলে, সেদিন সে একা আমাকে ফেলে চলে গিয়েছিল। হয়তো অভিমানে কিন্তু গিয়েছিল তো! সেদিন থেকে আস্তে আস্তে আমাদের মধ্যে দূরত্ব বাড়তে থাকে। আমি কিন্তু তার কাছে থাকতে যাইতাম। সে আমাকে ফেলে থাইল্যান্ড গেল। তিন মাস পরে এসে আমাকে নিয়ে যেতে চাইলে আমি বাবাকে রেখে যেতে রাজী হইনি। আমি সবই জানি। বাবা কিছু ই লুকায় নি আমার কাছ থেকে। এমন কি বাবা তাকে সন্দেহ ও করেছিল সব জানা আছে।তবুও আমার বিবেক তাকেই দোষী ভাবে। সর্যি হয়তোবা আমার মানসিকতা তোমাদের মতো এতো উন্নত না। গেয়ো আমি! তাই তাকেই দোষী ভাবি। আমার আবারো সবার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।
পিউ হতভম্ব। ভাইয়া সব জানত! তবুও এমন কেন করে?
★★★
অথৈ মেঘের পাশে এসে বসে বলে, আজকে দুপুরে এলে যে?
মেঘ হাসিমুখে বলে, আয়না রান্না করছে জন্য খেতে এলাম। একসাথে খাব। আর অফিসে কাজ নেই তেমন একটা৷
অথৈ বলে উঠে, শোন না একটা ভালো খবর আছে।
মেঘ উৎসাহ নিয়ে বলে, কি খবর?
— পাশের বাসার নতুন ভাড়াটে উঠেছে না?
–হুম তো?
— ঐ মহিলা ছাদে আয়নাকে দেখেছিল। তার নাকি আয়নাকে খুব পছন্দ হয়েছে।
মেঘ ভ্রু কুচকে ফেলে৷
অথৈ হাসিমুখে বলে, ওনার ভাই আছে। নিজের ভাই। প্রস্তাব দিয়েছে। কি করব রাজী হবো?আয়নার জন্য আলিয়ার দুইটা বিয়ের প্রস্তাব এসেও পাত্রপক্ষ না করে গেল। ইন্টার্ণ শেষ হয়ে গেলে ভালো প্রস্তাব পাওয়া যাবে না। শোন আমি বলি কি ওদেরকে আসতে বলি। দেখে যাক সমস্যা তো নেই।
–অথৈ তুমি কি সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষ?
–কেন? আমি কি করলাম?
— মেয়েটা ট্রমার মধ্যে ছিল। এখন কিছুটা ঠিক হচ্ছে আর তুমি এসব কি শুরু করে দিয়েছো। অশিক্ষিত নাকি তুমি!
অথৈ ফুসতে ফুসতে বলে, হ্যা আমি তো অশিক্ষিতই। শিক্ষিত তো তোমার মডার্ণ বোন! ঘর-সংসার ফেলে বিদেশে যায়! স্বামী-ছেলের চেয়ে চাকরি বেশি প্রিয়। তোমার বোন তো খুব শিক্ষিত।, সে তো মেয়ে নামে কলঙ্ক। আমি তো শিক্ষিত না। ইন্টারমেডিয়েট পাশ। তাও তোমার বোনের মতো বেহায়া না!
— চিৎকার করছো কেন? আর খবরদার রোদেলাকে নিয়ে একটা বাজে কথাও বলবে না।
চলবে।
#প্রেমপ্রদীপ
Part–35
Arishan_Nur (ছদ্মনাম)
— আম্মু এটা কি সত্য যে তুমি বিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও অফিসের সবাইকে বলেছিলে তুমি সিংগেল মাদার?
রোদেলা রুমে বসে কাপড় ভাজ করছিল। পেছন থেকে মেয়ের আওয়াজে এই প্রশ্ন শুনে কেপে উঠে সে। সে পেছন ঘুরে মেয়েকে দেখে নিল।
পিউ দাঁড়িয়ে আছে রুমের বাইরে। চোখে-মুখে আক্রোশ। ভাইয়ের সাথে পুনরায় একদফা কথা কথা কাটাকাটি করে এসেছে সে। সমুদ্র ভাইয়ের ভুল ধরিয়ে দিতেই সে বাজখাঁই গলায় বলে উঠে, তোমার মা যদি এতোটাই মহান হন তাহলে কেন সে অফিসে নিজেকে ডিভোর্সি বলে পরিচয় দিয়েছিলো? যাও প্রশ্ন করো তোমার প্রাণ প্রিয় মাকে। পুরো বাক্যজুড়েই ভাইয়া মাকে ছোট করেছিল।
তাই পিউ সহ্য করতে পারেনি৷ কিন্তু ভাইকেও পালটা জবাব দেওয়ার সাহস হচ্ছিলো না তার তাই সোজা মায়ের কাছে উত্তর নিতে এলো। কেন মা এই কাজ করেছে? আদৌ কি এমন কিছু ঘটেছে নাকি ভাইয়ার মনগড়া কথা এসব আগে যাচাই করতে হবে। তারপর একটা সিদ্ধান্ত নিবে সে।
রোদেলা পিউয়ের কথায় চমকে উঠে। পিউ একথা কিভাবে জানলো? কে বলেছে তাকে এসব গোপন কথা? আবেগের তো এসব বিষয়ে কথা বলার কোন প্রশ্নই উঠে না।
সে বিষ্ফরিত চোখে পিউয়ের দিকে তাকিয়ে রইল।
পিউ তার কাছে এসে বলে, মা! চুপ করে আছো কেন? আমার সব সহ্যের বাধ ভেঙে যাচ্ছে আর পারছি না। সব কিছু খোলাসা করো। যদি তুমি দোষী হও আমরা এই মূহুর্তে এই বাসা ছেড়ে চলে যাব। এখানে তোমার আমার কোন অস্তিত্বই নেই মা। ভাইয়া চায় না আমরা এখানে থাকি।তুমি আমাকে সব খুলে বলো। প্লিজ। মিথ্যা বলবে না মা।
রোদেলা হতাশ গলায় বলে, কি সত্য জানতে চাও?
— অফিসে কি তুমি নিজেকে ডিভোসি বলেছিলে?
রোদেলার মুখ ফ্যাকাসে হয়ে আসলো। সে হতাশ গলায় সত্যটা বলে দিয়ে বলে, হু৷
মায়ের মুখে হু শব্দটা শুনে পিউ আশাহত হয়। তার মানে ভাইয়ার রাগ করা জায়েজ আছে!
সে উত্তেজিত গলায় বলে, কেন? কেন? এতো বড় মিথ্যা বললে মা? হ্যাসবেন্ড থাকার পরও কেন নিজেকে ডিভোর্সি বলবে? এটা তো অন্যায় করেছো মা। ভাইয়া কি তবে ঠিক মা? এজন্য ই তাহলে ভাইয়া তোমাত উপর রেগে আছে আর রাগ কিরাটা তো জায়েজ আছে। ভাইয়াই তাহলে ঠিক। এমন জঘন্য কাজ কিভাবে করতে পারো তুমি?
রোদেলা ভাঙ্গা গলায় বলে, সবকিছু করার পেছনে একটা কারন থাকে, পিউ। কোনকিছু না জেনে উত্তেজিত হবে না। এমনি এমনি একজন বিবাহিত নারী নিজেকে ডিভোর্সি বলে না। আমি বাধ্য হয়ে বলেছিলাম।
— বাধ্য হওয়ার কি আছে মা? এখানে বাধ্য হওয়ার কিছু নেই। তোমার স্বামী, তোমার সংসার! এখানে তোমাকে কারো বাধ্য করার শক্তি নেই। যদি তুমি নিজ ইচ্ছায় কিছু না করতে চাও কারো সাহস নেই তোমাকে বাধ্য করার।
রোদেলা চাপা আর্তনাদ করে বলে, অফিসে আমি তখনও জয়েন করিনি,হাউস ওয়াইফ ছিলাম। তখন তোমার মামার ব্যবসার অবস্থা খুব খারাপ ছিল। খুব খারাপ বলতে ফকির হতে বসেছিল। পঞ্চাশ লাখ টাকা আত্মসাধ করার অভিযোগ তুলেছিল তার বিসনেস পাটনার।তোমার মামার কাছে কোন ক্যাশ ছিল না,সেভিংস ছিলো না। সবে মাত্র ব্যবসা দাড় করিয়েছে আর এমন বিপদে সম্মুখীন হলো। আমাদের মাথায় আকাশে ভেঙে পড়লো। তখন তোমার বাবার এতোও সার্মথ্য ছিল না এতো টাকা ক্যাশ আমাকে দিতে পারবে। এদিকে টাকা না দিলে তোমার মামার জেল-জরিমানা হবে। ব্যবসা লাটে উঠে গিয়েছিল। পরে এই অফিসে জব অফার পাই। সঙ্গে সঙ্গে রাজী হয়েছিলাম ৷ আমি যখন অফিসে কাজ করা শুরু করি, সেখানে ডিভোর্সিদের লোন দেওয়া হত। আমি তখন নিরুপায় ছিলাম। তোমার মামা অসহায় ছিল। কার কাছে সাহায্য চাব? কিভাবে কি করব? পুলিশি ঝামেলায় পড়া আমাদের মতো মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য আতঙ্ক। এজন্য নিরুপায় হয়ে নিজেকে ডিভোর্সি বলে পরিচয় দিয়ে লোন নিয়ে তোমার মামার দেনা শোধ করেছিলাম। তবে একবারে না। কিস্তিতে। এজন্য ই আমি বিদেশ গিয়েছিলাম। থাইল্যান্ড না গেলে আমি টাকা কোথাও পেতাম? বেতন না পেলে কিস্তির লোন শোধ করতে না পারলে, আমার ভাইয়ের অবস্থা কি হত? এসব ভেবে সমুদ্র কে রেখে যেতে হয়েছিল। আমি যদি না যেতাম টাকা শোধ করতে পারতাম না। তোমার মামার তখনো অবস্থা খুব খারাপ ছিল। এই ব্যাপারটা কেবল আমি আর মেঘই জানি। আর কাউকে জানাইনি আমরা যেহুতু সমাধান পেয়েছিলাম। তবে আমি আবেগকে সব সত্য বলে দিই কিন্তু পরে। আবেগ যখন প্রথম বার তোমাক দেখতে থাইল্যান্ড যায় তখন জানিয়ে দিই এর আগে আগে জানাই নি। এটাই আমার দোষ। এই ভুুুলটাই আমার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ালো।
–বাবার কাছেও তো সমাধান নিতে পারতে না? লুকাতে গেলে কেন?
রোদেলা দম ফেলে বলে, তোমার বাবার কাধের বোঝা হয়েই তো থাকলাম। এই ঘটনার আগে আগে তোমার নানা হার্ট এটাক করেছিল তখন যাবতীয় সব খরচ আবেগ দিয়েছিল। এজন্য আমাকে কিন্তু কম কথা শুনতে হয়নি, পিউ! দেড় মাসের মাঝে মেঘের এমন দুর্দশা হয়, তখন নিরুপায় হয়ে এই জবে ঢুকতে হয়। তখনি রিশাদের সঙ্গে পরিচয় হয়। রিশাদের পরিচিত আরেক ডিলারের কাছে দশ লাখ লোন নিয়েছিলাম। সেটাও পরিশোধ কিস্তিতে করেছি। এজন্য প্রতিমাসে সেখানে গিয়ে টাকা দিতে হত।জায়গা টা দূর হওয়ায় রিশাদ সঙ্গে যেত। আসা-যাওয়ায় বেশ খানিকটা সময় লাগত জন্য বাইরে লাঞ্চ করতে হত বাধ্য হয়েই।
পিউ হতবিহ্বল হয়ে চেয়ে আছে৷
রোদেলা আচল দিয়ে মুখ চেপে ধরে বলে, বুঝলি পিউ? আমরা মেয়েরা শুধু মাত্র রান্না করে ঘর সামলাবো। এটাই আমাদের কাজ। এর বাইরে যদি কিছু করি সমাজ দেখতে চাইবে না কেন করছি? এর পেছনে কারন কি কেউ জানতে চায় না! আমরা বড়ই অসহায়! এই কাজটা তোর বাবা করলে কেউ কিছু ই বলত না! কিচ্ছু বলত না রে! আমি করেছি এজন্য এটা পাপ! বিয়ের পর মেয়ের শ্বশুড়বাড়িরই সেবা করতে হবে। বাবা-মা ভাই তো পর মানুষ হয়ে যায়! ভাইকেও সাহায্যে করা যাবে না। তাহলেই তুমি নারী নামে কলঙ্ক! মা-বাবাকে দেখতে যাওয়ার আগেও অনুমতি নিতে হবে।
পিউ চুপ করে আছে। মায়ের কোন দোষ নেই। কিন্তু ভাইয়া! ওর ও তো দোষ নেই। বরঙ অন্যায় হয়েছে তার সাথে!
রোদেলা বলে উঠে, সমুদ্র আমার ছেলে। ও আমার উপর রাগ করবে , অভিমান করবে। এতে আমার কোন কষ্ট নেই।
পিউ তাকে জড়িয়ে ধরে বলে, আম্মু ভাইয়াকেও সঙ্গে নিয়ে আসতে তাইলেই আর কোন সমস্যা হত না। ও কষ্ট ও পেত না! একা একা মা ছাড়া থাকতে হত না ওকে৷
রোদেলা পরম আদরে আগলে নিল পিউকে আর বললো, আমি ভাবতে ও পারিনি সমুদ্র আমার সাথে থাকতে চাইবে না। ভেবেছিলাম তিন মাস সমুদ্র ফুপুর সাথে থাকবে, আম্মার সাথে থাকবে, আবেগ খেয়াল রাখবে। চাকরি পারমানেন্ট হতে হতে আমাদের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝি সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু থাইল্যান্ড থেকে আসার পর সব বদলে গেল। সমুদ্র আমাকে দেখতেই চাইত না। কথাও বলত না। আসবেই না আমার কাছে! থাইল্যান্ড যাওয়া তো বহু দূরের কথা৷ আমি কালেভাদ্রেও চিন্তা করিনি তোমাদের দাদি এতোটা বিষ ঢুকিয়ে দিবে সমুদ্রের মাথায়। সমুদ্র তো বাচ্চা মানুষ ছিল, যা বুঝাবে তাই বুঝবে৷
রোদেলাকে ছেড়ে দিলো পিউ তারপর কোমল গলায় বলে, ভাইয়া কি এই কথা জানে?
— না। সত্য জেনেও লাভ নেই। ওর রাগ এসবে ভাঙ্গবে না। আমি মারা গেলে তখন বুঝবে মা কি জিনিস! এর আগে তোমার ভাই বুঝতে চাইবে না তার মা তাকে কতো ভালোবাসে।
কথাগুলো অভিমানের সুরে বললো রোদেলা। ছেলের প্রতি অভিমান হচ্ছে তার। সমুদ্র কি সত্যি তাকে ঘৃণা করে? সমুদ্র কে কি সে আর কোন দিন আদর করে ওসেন বাবু বলে ডাকতে পারবে না?
★★★
সমুদ্র সিগারেট টানছে একধ্যানে বারান্দায় দাঁড়িয়ে। ভালো লাগছে না তার কিছুই। একে তো পরিবারে অশান্তি তার উপর বাবার জন্য চিন্তা হচ্ছে তার। সামনে তাদের জন্য কি অপেক্ষা করছে কে জানে? আজকে সিগারেট খেতেও বিৎঘুটে লাগছে তার! অসহ্য যন্ত্রনায় মন কাতরাচ্ছে। সে একমনে রাস্তার দিকে চেয়ে আছে। চারপাশে কি হচ্ছে কোন কিছু তে মনোযোগ নেই তার।
সমুদ্র সিগারেট ফেলে দিয়ে পা দিয়ে পিষে আগুন নেভালো। দুচোখ টলমল করছে তার। পিউয়ের সাথে মিসবিহেইভ করা ঠিক হয়নি। মেয়েটা কয়েকদিনের মেহমান, কিছু দিনই সাথে আছে তার বোন, এরপর তো সাত সাগর তের নদী পেরিয়ে মহা দূরে চলে যাবে। তখন তো আর দেখা করা সম্ভব হবে না। এভাবে ঘুম থেকে উঠে পুতুলকণ্যাকে দেখতে পাবে না সে।
সে হতাশার শ্বাস ফেললো। মায়ের ছুটি কবে শেষ? যতোদূর জানে তিনমাসের জন্য এসেছে । এক মাস শেষ। একচুয়ালি এক মাস চারদিন রানিং চলছে। তারপর মানে আর এক মাস ছাব্বিশ দিন থাকবে দেশে!
সমুদ্রের মায়ের কথা মনে পড়তেই খারাপ লাগলো। মায়ের সঙ্গে ও রুড বিহেইভ করে ফেলেছে। তারচেয়ে বড় হয়। সম্মান করা উচিত। সবসময় সম্মান করেই এসেছে। আজকে কি হলো হুট করে? মাথা বিগড়ে গেল তার! রাগের বশে মায়ের উপর সব ঝাঝ মিটালো। ভুল করে ফেলেছে সে। কিন্তু সে তো ক্ষমা চাইতে পারে না কারো কাছে।ক্ষমা চাইলে নিজেলে তুচ্ছ মনে হয় তার।
পিউ আর মায়ের কাছে কি একবার ক্ষমা চাইবে? যেহুতু দুইজনই মেহমান।আর মেহমানের সঙ্গে সর্বদা ভালো ব্যবহার করতে হবে। আজকে একুশে ফেব্রুয়ারি তারপর ও বাবা বাইরে গেছে। অফিস তো নেই আজকে! নিশ্চয়ই অন্য কাজে গেছে। বাবা থাকলে তার উসিলায় পিউয়ের সাথে কথা বলা যেত!
সমুদ্র দেরি না করে পিউকে খোজা শুরু করে।রান্নাঘরে কি যেন করছে পিউ। সে পিউয়ের দিকে এগিয়ে গেল। পিউ তাকে দেখেও কিছু বললোনা। এমন কি সৌজন্যের খাতিরে বিদেশি স্টাইলে হাসলোও না!
সমুদ্র বলে উঠে, তুমি কেন রান্না করছো? খালাকে বলো যা খেতে চাও সেটা বানিয়ে দিবে।
পিউ তার দিকে তাকালোও না, উত্তর ও দিলোনা।
সমুদ্র দম ফেললো। পিউ কি তার উপর রেগে আছে? নিজের প্রতি যখন কেউ রাগ করে তখন সমুদ্রের ভালো লাগে না! সে অন্যের উপর রাগ করবে, কিন্তু অন্য কেউ কেন তার উপর রাগ করবে?
সমুদ্র মিনিট দশেক রান্নাঘরের সামনে দাড়িয়ে থাকলো। পিউ কি রান্না করছে সেটা অবলোকন করে বোঝার চেষ্টা করছে সে। কিন্তু সক্ষম হলো না। নিশ্চয়ই আমেরিকান কোন খাবার হবে। সে মাছে ভাতে বাঙ্গালী। তিন বেলা ভাত খেয়ে বিকেলে চা খায়। তাই চিনলো না বিদেশি বোন কি বানাচ্ছে। পিউ কি তার জন্য রান্না করছে?
নাহ! সে এতোটাও গুরুত্বপূর্ণ কেউ না যে তার জন্য রান্না করতে হবে।
সমুদ্র হাটা ধরলো তার রুমের দিকে। বাসায় সবাই তার জন্য ডিস্টার্ব।
এক কাজ করলে কেমন হয়? সব ফেলে চিটাগং চলে যাক সে! তারপর ফোন বন্ধ করে থাকবে। সবাই তাকে খুজতে খুজতে মরিয়া হয়ে যাবে।
আর সে কোন এক মধ্য রজনীতে হীম শীতল বাতাসের মাঝে বলে উঠবে হিমুর মতো করে,
I am Nobody!
★★★
আয়না আয়নার সামনে বসে বসে নিজের প্রতিবিম্ব দেখছে। মা তাকে কোথায় যেন নিয়ে যাবে। বাসায় কাউকে এ বিষয়ে বলতে মানা করেছে সে। বলেছে মা মেয়ে যাবে। কাউকে কিছু না বলতে৷ আজকে আলিয়া নেই৷ একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে হাফ ডে হবে তার। বিকেলের আগেই চলে আসবে। আব্বু বলেছে, আজকে তারা ফ্যামিলি মিলে ঘুরতে বের হবে। সবাই একসাথে ঘুরবে। কেউ যেন আপত্তি না করে। বিকেলে বের হবে কিন্তু তারপর ও মা কেন বেলা বারোটার আগে নিয়ে যাচ্ছে বাইরে? নতুন সবুজ রঙের জামাটা পড়ে বের হলো সে৷
অথৈ মেয়েকে প্রশ্ন করে, একটু সেজে নে! ঠোঁটে লিপস্টিক দে৷
— আমার লিপস্টিক নেই মা।
— আলিয়ার রুমে আছে। যা মা লিপস্টিক দিয়ে আয়৷
আয়না অদ্ভুত ভাবে কিছুক্ষন চেয়ে থেকে আলিয়ার রুমে গিয়ে লিপস্টিক দিতে বসলো। একটুও ইচ্ছে করছে তার সাজতে! তাও মায়ের অবাধ্য হল না সে৷
লিপস্টিপ দিয়ে বের হলো আয়না। যাওয়ার আগে ফাতেমা বেগম প্রশ্ন করলো, কই যাস তোরা?
অথৈ জোর গলায় বলে, একটু সেলাইয়ের কাজে ক্লাইন্টের বাসায় যাচ্ছি। আয়নাকেও সঙ্গে নিয়ে যাব মা।
রিকশা চেপে মা-মেয়ে ক্লাইটের বাসায় যাচ্ছে। অথৈ উচ্চ শিক্ষিত না হওয়ায় বাসায়ই টুকটাক সেলাইয়ের কাজ করে হাতের খরচ সেরে ফেলে।
ক্লাইটের বাসায় ঢোকার আগে অথৈ ব্যতিব্যস্ত হয়ে বলে, আয়না মাথায় কাপড় দে।
বলে নিজেও মাথায় কাপড় দিল সঙ্গে আয়নার মাথায় নিজ থেকে কাপড় পড়িয়ে দিলো এবং বলল, বাসায় ঢুকে সবাইকে সুন্দর করে সালাম দিবি।
— কেন?
— আরে ওরা একটু ধার্মিক তাই সালাম দিবি।
— আচ্ছা মা।
গেট খুলে দিলো এক মধ্যবয়স্ক মহিলা। আয়না হেসে তাকে সালাম দিল।
তাদেরকে ড্রয়িং রুমে বসতে দিলো। টেবিলে আপেল, কমলা আর মিস্টি দিয়ে গেল খাওয়ার জন্য। অথৈ আয়নাকে বিড়বিড় করে বলে, কিছু মুখে দিবি না!
আয়না অবাক হয়ে যায়। এমনি সে অন্যের বাসায় তেমন খেতে পারেনা। আজকেও ইচ্ছা নেই খাওয়ার তার।
কিছুক্ষন পর দুইজন মহিলা এলো। তাদের কথা-বার্তা মোটেও ফরমাল লাগছে না আয়নার কাছে। দুইজনে মিলে যেন তার ইন্টারভিউ নিচ্ছে৷
হুট করে তাদের মধ্যে থেকে একজন মহিলা বলে উঠে, মা মাথার ওড়না টা সরাও তো দেখি তোমার চুল কতো লম্বা৷
আয়না তার মায়ের দিকে তাকালো। অথৈয়ের চোর ধরা পড়লে যেমন চেহারা হয়, সেরকম চেহারা হয়ে গেছে তার!
আয়না ওড়না সরায় মাথা থেকে।
মহিলাটা বলে উঠে, মাশাল্লাহ চুল তো খুব ঘন৷ তোমার আবার লম্বা ও। দামি শ্যাম্পু মাখো তাই না!
অপর মহিলা বলে উঠে,
মা একটু হেটে দেখাও তো!
★★★
আলিয়া লাঞ্চ ব্রেকে ক্যান্টিনে আসলো। ক্ষুধা লেগেছে। বাসায় ফিরতে চারটা হবে। এখন একটা দশ বাজে। এতোক্ষণ না খেয়ে থাকা যাবেনা। আজকে একুশে ফেব্রুয়ারি হওয়ায় ক্যান্টিনে তেমন কোন খাবার নেই। খালি সিঙ্গারা আছে। সে সিঙ্গারা খায়না। অগত্য হাসপাতাল থেকে বের হল। সামনে একটা রেস্টুরেন্ট আছে। রিজেনাবেল প্রাইসে খাবার পাওয়া যায়। সে রেস্টুরেন্টে গিয়ে খাবার অডার দিলো। প্যাকেট করে নিবে। তাই কিছুক্ষন অপেক্ষা করতে হবে জন্য টেবিলে গিয়ে বসলো।
আলিয়া চেয়ারে বসে ফোন বের করে নেট ব্রাউস করতে লাগলো । আচমকা শ্রাবণ এসে তার পাশে বসলো৷ আলিয়া চমকে উঠে ফোন টেবিলে ফেলে দিলো। আসলেই সে ভয়ানক ভাবে চমকে গিয়েছিল।
শ্রাবণ দাত বের করে হেসে বলে, ভয় পেলে নাকি!
আলিয়া বিরক্ত হয়ে গেল এবং কটমট করে বলে, এখানে কি? এভাবে কারো পাশে বসার মানে কি?যাও অন্য কোথাও গিয়ে বসো।
— এক্স জিএফের পাশে বসতেই পারি !
আলিয়া রাগে ফুসতে থাকে শ্রাবণ মুচকি হেসে একটা লাল গোলাপ টেবিলের উপর রেখে নরম গলায় বলে,
হ্যাপি ভালোবাসা ডে লাইট!
আলিয়া চোখ পাকালো। শ্রাবণ হোহো করে হেসে বলে, একুশে ফেব্রুয়ারিকে ছেলে-মেয়ে রা সেকেন্ড ভ্যালেন্টাইন্স ডে বানায় ফেলছে।
আলিয়া বিরক্ত হলো। মেজাজ খারাপ হচ্ছে তার।
শ্রাবণ এবারে একটা চকলেট বের করে দিলো আলিয়াকে। আলিয়াও মোটেও তাতে আগ্রহ না দেখিয়ে বলে, এসব দিয়ে কোন লাভ নেই। আমি এতো সস্তা না!
শ্রাবণ হতাশ হলো কিন্তু কিছু বললোনা। তখনই শ্রাবণের ফোন বেজে উঠল। সে ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে আবারো কালকের মতো গান বেজে উঠল,
অভদ্র হয়েছি আমি তোমারি প্রেমে! তাই কাছে আসো না, আরো কাছে আসো না!
ইশ কথা বলোনা, কোন কথা বলো না।
অভদ্র হয়েছি তোমারি প্রেমে।
শ্রাবণ বিরক্ত হয়ে বলে, হ্যালো কে? হ্যালো? হ্যালো?
আলিয়া হোহো করে হেসে বলে, তোমার কোন ক্রেজি লাভার হবে। হাহা৷
শ্রাবণ মুখ ভোতা করল।
আলিয়ার খাবার আসলে সে তা নিয়ে হাটা দেয়। শ্রাবণ তাকে ফলো করে মাঝরাস্তায় তার হাত খপ করে ধরে বলে, আই স্টিল লাভ ইউ আলিয়া।
আলিয়া প্রায় চেচিয়ে উঠে, তুমি আমার হাত ধরেছো কোন সাহসে? আর কত অসম্মান করবে? এতোবড় ক্ষতি করেও শান্তি মেলেনি? ছাড়ো বলছি।
শ্রাবণ হাত ছেড়ে দিলো।
চলবে।