প্রেমপ্রদীপ পর্ব-৪৭+৪৮

0
2285

#প্রেমপ্রদীপ
Part–47
#Arishan_Nur (ছদ্মনাম)

বিয়েটা হয়েই গেল সমুদ্র আর আয়নার
এতো এতো আপনজনের ভালোবাসা ও দোয়া পুজি করে আগামী দিনের জন্য হাটা শুরু করল তারা। আয়নার মুখের হাসি আর চোখের কোনে লেগে থাকা সুখই জানান দিচ্ছে সে কতোটা সুখী!

সমুদ্র স্টেজে বসে থেকে আয়নার সঙ্গে ছবি তোলায় ব্যস্ত থাকলেও এর ফাকে ফাকে সবার দিকেই চোখ রেখেছে সে।

শ্রাবণের প্রতি রাগ লাগছে তার। সমুদ্রের একমাত্র শালিকার পেছনে লাইন মারার ট্রাই করছে মেবি৷ আলিয়া যেদিকে যায় শ্রাবণ ও সুরসুর করে আলিয়ার পেছনে হাটছে।কিন্তু আলিয়ার কাছ থেকে পাত্তা পাচ্ছেনা।

পিউ বারবার ফোনে কি যে করছে।কাউকে ফোন দিচ্ছে মেবি।

স্টেজ থেকে সবই দেখছে সে। বাবা-মা গেস্টদের সঙ্গে কথা বলছে।

মা, ফুপু আর তার শ্বাশুড়ি মা একসাথে একই রকম শাড়ি পড়ে সিরিয়ালি দাঁড়িয়ে ছবিও তুলল। সবই লক্ষ্য করছে সে।আলিয়ার জন্য দশ হাজার টাকা এনেছে সে৷ কিন্তু আলিয়া গেট ধরেনি। ও নাকি হালকা সিক। টাকাটা বেচে গেল তার।

অনুষ্ঠান শেষের দিকে। সবাই বিদায় নিয়ে চলে যেতে লাগলো। সমুদ্র রাও ফিরে যাবে নতুন বউ নিয়ে৷।

বিদায় বেলায় আয়না বাবাকে জড়িয়ে ধরে কেদে দিল। নানা-নানি,মা, আলিয়া সবার কাছে থেকে বিদায় নিয়ে কাদতে কাদতে গাড়ি তে উঠল সে।

আলিয়া বাহির থেকে বলে উঠে, আপা! আমরা কালকেই আসব তোমার সঙ্গে দেখা করতে৷

শ্রাবণ পেছন থেকে বলে উঠে, আসিয়েন বেয়াইন সাহেবা।

আলিয়া বিরক্ত হলো। পিউ বলে উঠে, ভাবী ডু নট ক্রাই।

সমুদ্র মৃদ্যু হেসে গাড়ি তে উঠল। গাড়িতে উঠতেই তার মনে পড়ে, পিউকে জিজ্ঞেস করা উচিত ছিল কাকে সে ফোন দিচ্ছিল বারবার!

গাড়ি সাইসাই করে যেতে লাগলো। রাতের ঢাকা প্রায় সময়ই ফাকা থাকে। সমুদ্র আয়নার হাত চেপে ধরে বলে, আয়ু! কান্নাকাটি করো না দোহাই লাগে। তুমি কাদলে আমার একদম ভালো লাগেনা গো!একটু হাসো তো৷ দেখি হাসলে তোমায় কেমন লাগে?

আয়না মুচকি হেসে সমুদ্রের হাত চেপে ধরে বলে, তুমি কি আজীবন আমার সঙ্গে থাকবে?

সমুদ্র জানালার কাচের দিকে তাকিয়ে বলে, তুমি যতোদিন আমার সঙ্গে থাকতে চাইবে আমি তোমার সঙ্গে থাকব। কিন্তু তুমি যদি যেতে চাও আমি আটকাব না!

আয়নার বুক ধুক করে উঠে। সে কেপে উঠে কাদো গলায় বলে, কেন আমি তোমাকে ছেড়ে যাব? আর যেতে চাইলে তুমি কেন যেতে দিবে? আটকাবে না কেন?

সমুদ্র আয়নার নিকটে এসে বলে, আটকানোর শক্তি যে নেই। আমাকে সৃষ্টিকতা কেবল ধরে রাখার ক্ষমতা দিয়েছেন!

আয়নার চোখ ফেটে পানি ঝড়তে লাগে। সমুদ্র ঝট করে তার চোখের জল মুছে বলে, এরপর থেকে তোমার চোখে পানি দেখতে চাই না।

পিউ গাড়ি তে বসেও রঙ্গনকে ম্যাসেজ করতে লাগলো, আসলা না তাহলে? এতোবার বললাম আসার জন্য! কেন আসলে না তুমি? ওয়েট করছিলাম তোমার জন্য।

রঙ্গন সিন করল না। পিউ ক্ষেপে গিয়ে বলে, এতো ভাব কেন তোমার? বেয়াদব ছেলে কোথাকার৷ আর কোন দিন আমার সামনে আসবে না।

পিউ বসেছিল আবেগের পাশে। আবেগ প্রশ্ন করে, কি হয়েছে পিউমণি? কি করছো ফোনে?

পিউ তড়িঘড়ি করে ফোন রেখে বলে, কিছু না। বাবা। এমনি আজকের প্রোগ্রামের ছবি দেখছিলাম।

আবেগ উল্লাস প্রকাশ করে বলে, দেখি, আমাকেও কয়েকটা ছবি দেখাও তো মা।

পিউ দ্রুত তাদের ফ্যামিলি পিক গুলো বাবাকে দেখাতে শুরু করল। আবেগ মনোযোগ দিয়ে ছবিগুলো দেখছে। একটা ছবি তার মনে ধরেছে৷ এই ছবিটা ওয়াশ করে এনে তার মানিব্যাগে রাখবে।

সমুদ্র আর আয়নার বাসর সাজানো হয়েছে ছাদের চিলেকোঠায়। ইভেন্টের লোকরাই তাদের আসবাবপত্র দিয়ে সাজিয়ে দিয়েছে।চমৎকার ভাবে সাজানো হয়েছে। সম্পূর্ণ ছাদ লাইটিং করা হয়েছে। মরিচবাতির আলোয় ছাদটাকে ভিন দেশীয় লাগছে।

সমুদ্র আর আয়নাকে নিয়ে শ্রাবণ, পিউ আর আয়েশা ঢুকল ছাদে।

পিউ আর আয়েশা আয়নাকে রুমে ঢুকিয়ে দেয়। রুমটাও বেশ সুন্দর কিরে সাজানো। কোন লাইট নেই। মোমের আলোয় রুমটা আলোকিত হয়ে আছে। পঞ্চাশটা মোম জ্বালানো হয়েছে রুমে। বিছান পাতাতো হয়েছে। ফ্লোরিং বিছানায়। তার উপর লাল গোলাপের পাপড়ি৷

আয়নাকে বসিয়ে দিয়ে তারা চলে গেল। পিউ আর আয়েশা যেতেই আয়না আলিয়াকে কল দেয়। তারা ঠিকমতো পৌছেছে কিনা জেনে নিলে স্বস্তি পাবে সে।

এদিকে শ্রাবণ সমুদ্র কে ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছেনা। তার এক কথা, টাকা দিতে হবে নাহলে ভেতরে ঢুকে যাবে না। পিউ আর আয়েশাও শ্রাবণের সঙ্গে তাল মেলাচ্ছে। কিন্তু সমুদ্র নাছোড়বান্দা। সে কিছু তেই টাকা দিবে না।

— ভাইয়া টাকা না দিলে তোমার বাসর হবে না। (শ্রাবণ)

সমুদ্র ভ্রু কুচকে বলে, আশ্চর্য! আমার বাসায় আমি টাকা কেন দিব?

শ্রাবণ জোড়াজুড়ি করতেই আছে, হুট করে সমুদ্র তার কানে কানে ফিসফিস করে বলে, তোমার আব্বাজানকে বলে দিই?

শ্রাবণ থমথমে গলায় বলে, কি বলিতে চাচ্ছেন?

— তুমি আমার একমাত্র শালিকার সঙ্গে লাইন মারার চেষ্টা করছিলে?

শ্রাবণের মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেল। সে আমতাআমতা করে বলে, তোমার টাকা তোমার পকেটে রাখো।

সমুদ্র হেসে কিছুটা জোড়ে বলে, তোমাদের সবাইকে আমি বুফ্যে খাওয়াব। তাও আবার লে মেরিডিয়ানে। এবার পথ ছাড়ো বাছা রা!

শ্রাবণ রা নিচে চলে গেল।সমুদ্র ছাদের গেট লাগিয়ে দেয়।এদের ভরসা নাই।হুট করে আবার যদি ঢুকে পড়ে?

সে গুটিগুটি পায়ে আয়নার দিকে অগ্রসর হলো।আয়না হাত-পা গুটিয়ে জড়সড় হয়ে বসে আছে।

সমুদ্র খুকখুক করে কেশে বলে উঠে, মিসেস, সমুদ্র? কেমন আছেন?

আয়না চোখ তুলে তাকালো সমুদ্রের দিকে।ইশ! সমুদ্র কে দেখে যেকেউ তাকে কোন রাজপুত্র ভেবে ভুল করবে। আয়না অপলক নয়নে তার দিকে তাকিয়ে আছে।

সমুদ্র তার পাশে বসে বলে, আজকের পর থেকে তো এই দুচোখের কেবল আমিই থাকব।চাইলে এই রজনীতে অন্য কাউকে দেখে নিতে পারেন।

আয়না কাঠ গলায় বলে, আমার আর কাউকে দেখার প্রয়োজন নেই।

— আয়ু তুমি তো দেখি আমার প্রেমে মাতোয়ারা হয়ে গেলে এক্কেবারে!

আয়না মাথা নিচু করে ফেলে।এই ছেলেটা তাকে এত্তো লজ্জা দেয় কেন?

আয়নার গাল গুলো লাল হতে লাগলো। সমুদ্র খেয়াল করল, আয়না বিয়ের সাজেই এখনো আছে।

সে বলে উঠে, আয়ু? রুমের ডেকোরেশন কেমন হয়েছে?

— খুব সুন্দর। মনে হচ্ছে আমরা আচীনপুরে আছি।

সমুদ্র হোহো করে হেসে বলে, অচীনপুর টা আবার কই? নোয়াখালির পাশে নাকি বরিশালের পাশে? হু?

সমুদ্রের কথা শুনে আয়না নাক ফুলালো।অচীনপুর বলতে রুপকথার জগতকে বুঝিয়েছে সে।

সমুদ্র বলে উঠে, এক কাপ চা বানাও তো!

আয়না হতভম্ব হয়ে যায়।এই মুহূর্তে সে চা কোথায় গিয়ে বানাবে? নিচে গেলে সবাই কি ভাববে? নতুন বউ বাসর ছেড়ে চা বানাতে এসেছে! হায় হায়! এমন হয় নাকি কোন দিন?

সমুদ্র আহ্লাদী কন্ঠে বলে।,কি হলো যাও? আমার জন্য চা বানাবে না?

আয়না বলে উঠে, এখন কিভাবে বানাব? নিচে গেলে সবাই খারাপ ভাববে না?

সমুদ্র স্মিত হেসে বলে, আসো আমার সঙ্গে।

সে আয়নাকে নিয়ে ছাদের শেষ ভাগে যায়।সেখানে একটা খড়ির চুলা সেট করে রাখা আছে।সঙ্গে একটা পাতিল ও। পাশেই বোতলে করে গরুর দুধ রাখা।

আয়না হেসে দিল। এইসব সমুদ্রের প্রি প্লান তাহলে!

সে ঝুকে বসে চা তৈরির প্রস্তুতি নিতে লাগলো। কিছুক্ষনের মধ্যে চা বানানো হলে সে কাপে ঢেলে সমুদ্রকে দিলো।

সমুদ্র চায়ে চুমুক দিয়ে বলে, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ চা এটা!

আয়না ফিক করে হেসে দেয়।সমুদ্র তার হাতে থাকা কাপ এগিয়ে দিল আয়নার দিকে।

আয়না কোন ধরনের আপত্তি না করে চায়ে চুমুক দিল।সত্যি অনেক মজা হয়েছে চা।

আয়না যেই দিক দিয়ে চা খেয়েছিল, কাপের সেই অংশ দিয়ে চায়ে চুমুক দিতে লাগে সমুদ্র।

এরপরে আয়নাকে টেনে নিয়ে এলো ছাদের মধ্যখানে।ছাদেও একটা ফ্লোরিং বিছানা পাতা।

সে ধপ করে বসে পড়ে এবং আয়নাকেও বসিয়ে দেয়।দুইজন দুইজনের দিকে তাকিয়ে আছে।

সমুদ্র বলে, আসো, শুই।এখানে শুয়ে পড়লে মজার এক দৃশ্য দেখতে পাবে।

আয়না এবং সে ফ্লোরে পাতানো বিছানায় শুয়ে পড়ে।

আয়নার চোখ জুড়িয়ে যেতে লাগে। খোলা আকাশে মরিচবাতির হলুদ আলো চোখ ধাধানো দৃশ্য যেন! সেই সাথে ফাগুনি হাওয়া যুক্ত হয়েছে।

কালো আকাশে উজ্জ্বল তারা রা মিটিমিটি হাসছে। কি অসাধারণ দৃশ্য এটা! যা বলার বাহিরে।

সমুদ্র তার দিকে ঘুরে তাকিয়ে বলে, তোমার জন্য স্পেশাল একটা জিনিস আছে?

আয়না উত্তেজিত হয়ে বলে, কি?

সমুদ্র একটা কাচের জার বের করল।এই কাচের জার বা পাত্রের ভেতরে অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র চিরকুট। লাল,নীল, সাদা, বেগুনি, হলুদ বিভিন্ন রঙের কাগজের ছোট চিরকুট ।

সমুদ্র বলে উঠে, এগুলো সব আমি নিজের হাতে লিখছি কিন্তু লেখা গুলো আমার না। আমি কোন সাহিত্যক না কাজেই তোমার জন্য কবিতা লিখতে অক্ষম। ৩৬৫ টা চিরকুট আছে এতে।জানো এটা আমাদের জেলির বোয়াম। জেলি শেষ হয়ে গিয়েছিল কিন্তু বোয়ামটা ফেলা হয় নি। সেটা কালকে নিজ হাতে ধুয়ে তোমার জন্য এই স্পেশাল গিফট তৈরি করেছি।

আয়না অবাক হয়ে কাচের জারটা হাতে নিল।তার হাত কাপছে।তার মনে হচ্ছে এর মধ্যে কাগজ না বরং হরেক রকমের ভালোবাসা ভরে দিয়েছে সমুদ্র।

চলবে।

#প্রেমপ্রদীপ
Part–48
Arishan_Nur (ছদ্মনাম)

ভোরের আযান দিতেই সজাগ হয় সমুদ্র। পাখির কিচিরমিচির আওয়াজে তার ঘুম ভেঙে গেলেও আয়ুর ঘুম ভাংগেনি। সে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। সমুদ্র অপলক নয়নে আয়নাকে দেখতে থাকে। ইশ! মেয়েটাকে কি যে রূপবতী লাগছে না!

যদিও বা কালকে থেকে সে কেবল আয়নাকেই দেখে গেছে! তাও মন ভরেনি। সে হাত গুটিয়ে কনুই বালিশে চেপে হাতের পাতায় মাথা ঠেকে খানিকটা উচু হয়ে আয়ুকে দেখতে লাগলো। মেয়েটার শাড়ি এলোমেলো হয়ে আছে। তারা দুজনেই ছাদের মাঝখানে খোলা আকাশের নিচেই ঘুমিয়ে পড়েছিল। সমুদ্রের এখন কিছুটা শীত শীত লাগছে।সে মাথা নিচু করে আয়নার গালে চুমু খেল। এরপর আয়নার শাড়ির আচল ও ঠিক করে টেনে দিল। মেয়েটা কি আরামে ঘুমাচ্ছে৷ কিন্তু এখানে আর বেশিক্ষন থাকা যাবেনা। মানুষ জন কিছু ক্ষন পরই উঠতে শুরু করবে৷ ওলরেডি সকাল হতে শুরু করেছে৷ আর দেরি করা যাবে না একদম ই। শ্রাবণ উঠার আগে যেতে পারলে ভালো। শ্রাবণ বড্ড দুষ্টু। বেসাইজ কথা বলে দেয়। মাঝেমধ্যে সেজন্য লজ্জা লাগে। আর আজকে তো বাসর রাতের পরেরদিন। আজকে লজ্জা লাগাটা দ্বিগুন হয়ে গেছে।

সমুদ্র দেখল, আয়নার চুল গুলোও এলোমেলো হয়ে আছে।

সে আয়নার চুলগুলো তে হাত বুলাতে বুলাত আয়নার কানের কাছে মুখ নিয়ে তাকে ডাকতে লাগে, এই আয়ু! উঠো!

আয়না নড়েচড়ে উঠে। সমুদ্র স্মিত হেসে আয়নার ডান গালে আরো একটু চুমু দিল। আয়না সম্ভবত টের পায়নি।

সমুদ্র একাধারে তাকে ডেকেই চলছে যতোক্ষন অব্দি উঠে না আয়ু। ।

আয়না সমুদ্রের ডাকে চোখ খুলতেই চমক খায়। সমুদ্র তার মুখের সামনে মুখ এনে নিচু।হয়ে বসে আসে। তাকে দেখতেই সমুদ্র এক গাল হেসে বলে, গুড মর্নিং ডিয়ার।

আয়ু একটা হাই তুলে বলে, গুড মর্নিং।

— চলো নিচে যাই৷

আয়নার হুশ ফিরল। তারা তো ছাদে। সে ততড়িঘড়ি করে উঠতে গিয়ে সমুদ্রের মাথার সঙ্গে তার মাথায় বাড়ি খেল।

সে বিচলিত হয়ে বলে, এক্সট্রিমলি সর‍্যি।

–ইটস ওকে। গেট আপ৷

আয়না দাড়াতেই তার আচল খুলে পড়ল। সমুদ্র এই দৃশ্য দেখে থ খেয়ে যায়। তার মধ্যে বিদ্যুৎ প্রভাবিত হতে লাগে। সে চোখ সরাতে গিয়েও।চোখ সরালোনা। আয়নাকে এই অবস্থা তেও অতিমাত্রায় মনোমুগ্ধকর লাগছে। তার জায়গায় অন্য কেউ থাকলে তাকে খুব বিশ্রি দেখাত!

আয়না দ্রুত শাড়ির আচল ঠিক করে মাথা নিচু করে ফেলে। সমুদ্র খুব স্বাভাবিক গলায় ।বলে,আসো।

আয়না সামনে পা বাড়ালো সঙ্গে কাচের জারটা নিতে ভুললোনা।

আয়না ছাদের বাইরে এসে সিড়িঘরে ঢুকতেই সমুদ্র তাকে কোলে তুলে নেয় এবং আদুরে গলায় বলে, আজকে থেকে আমাদের নতুন পথচলা শুরু! আমি চাই সব যেন ভালো হয়! আমার রাগ সম্পর্কে একটা কথাই বলব, আমি৷ রেগে গেলে তুমি ঠান্ডা থাকবা। চুপ থাকবে। অপর পক্ষ চুপ থাকলে আমার রাগ পড়ে যায়৷

সমুদ্রের দুই হাতের স্পর্শ পেয়ে আয়নার কেমন যেন লাগলো। সে শিউরে উঠল।

তিনতলা আসতেই সমুদ্র তার কপালে ভালোবাসার পরশ একে দিয়ে কোল থেকে নামালো। বেল বাজায় সে। না জানি কে গেট খুলবে? বাবা? নাকি ফুপু?

সমুদ্র কে ভুল প্রমানিত করে গেট খুলে দিল মা। মাকে দেখে সমুদ্রের বেশ লজ্জা লাগতে আরম্ভ করে।

কিন্তু মাকে দেখে মনে হচ্ছে তার মধ্যে কোন প্রতিক্রিয়া নেই। সমুদ্রের ছাদে বাসর করে ভোরে বাসায় ফেরা যেন খুব সাধারণত একটা ব্যাপার৷

সে বলে উঠে, বাবু চা দিব?

সমুদ্র মিনমিন করে বলে, না। না। লাগবে না৷

রোদেলা ছেলেকে বলে, তোমার রুমের বিছানার চাদর বদলে দিয়েছি। যাও গিয়ে রেস্ট নাও তোমরা। দশটার দিকে উঠে নাস্তা করবে।

— আচ্ছা৷

বলে সমুদ্র আয়নাকে নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে রুমে ঢুকে গেট লাগিয়ে দিল।

সমুদ্রের লজ্জামাখা মুখ দেখে রোদেলা হেসে দিল। ছেলেটা এতো লজ্জা কেন পাচ্ছে ? আরে! যার ই বিয়ে হবে তারই বাসর হবে। এটা খুবই নরমাল একটা ব্যাপার। বোকা বাবু তার! তার ছেলেটার লজ্জা মাখা মুখ টাও কতো সুন্দর! রোদেলা এক বিন্দু বাড়িয়ে বলছে না।

★★★
রঙ্গন পরদিন সকালে পিউয়ের ম্যাসেজ সিন করল। পিউয়ের ম্যাসেজ গুলো পড়ে সে না হেসে পারলো না! পিউয়ের সব কাজ-কর্মেই রঙ্গন আকৃষ্ট হয়৷

মেয়েটা কত্তো কিউট—আনমনে বলে উঠে রঙ্গন।

তারপর পিউকে ম্যাসেজ পাঠায়, তুমি ঠিক বলেছিলে আমি হলাম গিয়ে একটা কুত্তা। আসলে শুধু আমি না। সব পুলিশ কুত্তা। কারন কি জানো? আমরা কুত্তার মতো এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় আসামী ধরতে দৌড়াই। কুত্তারা ঘেউ ঘেউ আওয়াজ করে ছুটে আর আমরা সাইরেন বাজিয়ে ছুটি –এই যা তফাত। সর‍্যি! আসার ইচ্ছা ছিল কিন্তু ছুটি পাইনি। মহারানীর যদি রাগ বা ব্যস্ততা কমে উনি কি এই প্রহরী কে একটা কল দিতে পারবেন?

সে ফোন রেখে দিল। এরপর উঠে দাড়ালো। এতোক্ষণ শুয়ে ছিল সে। পিউকে একটা মিথ্যা বলেছে । সে অফিসের কাজে আসেনি। এসেছে আব্বুর কাছে৷ এই লোকটাকে আব্বু বলতে ইচ্ছে করেনা তাও বলতে হয় রঙ্গনকে। কারন আব্বু বা বাবা শব্দের অলটারনেটিভ কোন ওয়ার্ড ডিকশনারি তে নেই।

কিছু কিছু কাজ অনিচ্ছা সত্ত্বেও করা লাগে৷ রঙ্গন গাজীপুর এসেছে বাবার সঙ্গে দেখা করতে। সম্পূর্ণ অনিচ্ছায় এসেছে সে।

মাসের শুরু। এমনি সে আসত বাবাকে মাসের খবর দিতে। কিন্তু কালকে অনুষ্ঠানে যাবে জন্য অফিস থেকে আগেভাগে ছুটি নিয়ে বাসায় ফিরতেই বাবার ফোন আসে৷ সে ফোন করে জানালো, সে নাকি মরে যাচ্ছে। আর বাচবে না।

দূর থেকে বাবার মুখে এমন কথা শুনে বেশ ঘাবড়ে যায় রঙ্গন। পাচ দিন ধরে বাবার কোন খবর নেয়নি সে। হুট করে অসুস্থ হলেও তার জানার উপায় ছিল না। সে সব ফেলে গাজীপুর রওনা দেয়। গাজীপুরে তার বাবা একটা তিন রুমের বাসা ভাড়া নিয়ে থাকে। এই বাসা ভাড়ার টাকা ও রঙ্গনকে আলাদা ভাবে দিতে হয়। হাজার বার বাবাকে বলেছে রঙ্গন, তিন রুমের বাসা ভাড়া নেওয়ার দরকার নাই। অযথা টাকা খরচ হচ্ছে। একটা ছোট বাসায় ভাড়া থাকলেই পারো৷ কিন্তু নাহ উনি বেকে বসেন। তার নাকি ছোট বাসায় থাকতে ভালো লাগেনা। দমবন্ধ লাগে। আর তিম রুমের বাসা এজন্যই নিয়েছে যেন ছেলে আর ছেলের বউ এসে থাকতে পারে। রঙ্গন কালকের আগের দিন অব্দি কোন দিন এই বাসায় এক রাত কাটায়নি। কালকেই এখানে ফাস্ট ঘুমালো। সে সবসময়ই দিনে আসে, দিনে যায়। কালকে সন্ধ্যায় এসে দেখে বাবা একদম সুস্থ মানুষ। টিভিতে বড় আগ্রহ নিয়ে খেলার হাই লাইটস দেখছে৷

রঙ্গনের মেজাজ খুব খারাপ হলো। সে এক দফা চিৎকার ও করল। তখনি তার সৎ বোন রুম থেকে বেরিয়ে এলো৷

এই মেয়েকে দেখলেও রঙ্গনের মেজাজ খারাপ হয়৷ তার সৎ বোন তাকে প্রচুর ভয় পায়। তার ভয়ে তটস্থ থাকে। ভয় পাওয়ায় ই কথা! তার টাকার উপর মেয়েটার ভবিষ্যৎ। সে টাকা দেওয়া অফ করে দিলেই মেয়েটার লেখাপড়া তো বন্ধ হবেই হবে। তিন বেলা খাবার খাওয়ার ই ঠিক থাকবে না। কিন্তু রঙ্গন এমন কিছুই করবেনা। সে টাকা দিয়ে যাবে যতদিন তার সৎ বোনের কোন গতি হচ্ছেনা।

রঙ্গনের সৎ বোন রুশা চিৎকার-চেচামেচির আওয়াজে বেরিয়ে এসে কেদে দিল।

রঙ্গনের বাবা বিচলিত না হয়ে রুশাকে উদ্দেশ্য করে বলে, তোর ভাই আসছে। যা ভালো কিছু রান্না কর। কালকে গোশত কিনে এনেছি না? রান্না বসা।

রঙ্গন বিরস মুখে বলে, কোন দরকার নাই। আমি এখনি রওনা দিব। এই রুশা! রান্না বসাতে হবে না। যাও পড়তে বস।

রুশা মাথা নাড়িয়ে চলে গেল।

রঙ্গন তার বাবাকে রাগ দেখিয়ে বলে, আব্বু তুমি তো একদম সুস্থ আছো৷ কেন এভাবে মিথ্যা বলে আমাকে এতো দূর থেকে ডেকে আনলে?

তার বাবা ছোটবাচ্চাদের মতো ভীত মুখে বলে, আমি ঠিক নেই রে! আমার অনেক অসুখ!

— কি অসুখ তোমার?

— কালকে রাতে খুব বাজে একটা স্বপ্ন দেখছি। স্বপ্নে দেখলাম, আমাকে কয়েকটা লোক টেনে-হিচড়ে একটা অন্ধকার জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে, এরপর আমার গায়ে বড় একটা দা দিয়ে
কোপ মারলো।

রঙ্গন রাগান্বিত গলায় বলে, এইজন্য তোমার মনে হচ্ছে তুমি মারা যাবা? এই ফালতু রিজনে আমাকে ডেকে এনেছো?

–ইয়াং ম্যানে! এতো রেগে যাচ্ছো কেন? অবশ্য তোমার বয়সে আমার ও খুব রাগ ছিল। এই বয়সে রক্ত গরম থাকে।

সে ঝাঝালো কন্ঠে বলে, রক্ত এতোই গরম ছিল যে পরনারীতে আসক্ত ছিলেন।

রঙ্গনের বাবার মুখ-চোখ লাল হতে লাগলো। তাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে সে প্রচুন্ড রেগে যাচ্ছে। বাবা যেমনই হোক না কেন, সে চায় তার সন্তানরা তাকে যথাযথ সম্মান করবে। কিন্তু তার ছেলে তাকে কথায় কথায় অপমান করে।

সে নিজের রাগ কন্ট্রোল করে বলে, বাবা রে খুব ভয় পেয়ে গেছি! কালকে ঘুম ভাংগার পর থেকে এই দুই চোখের পাতা এক করতে পারিনি একবারো।

রঙ্গন কটাক্ষের হাসি হেসে বলে, এইসব আজাইরা চিন্তা বাদ দেন। কার এতো সময় আছে আপনাকে মারার জন্য এতো প্লানিং করবে? আপনি কি মন্ত্রি না মিনিস্টার?

তার বাবা গলা খাকিয়ে বলে উঠে, আমি মন্ত্রী-মিনিস্টার না কিন্তু একসময় থাইল্যান্ডের বড় কোম্পানি তে একাউন্টটিং টেরিটোরি অফিসার ছিলাম।

রঙ্গন বিরক্ত মুখ নিয়ে বলে উঠে, ওই অফিস থেকে বহু আগে আপনাকে গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দিসে। কাজেই এখন আর আপনার কোন ভ্যালু নেই সো এইসব চিন্তা বাদ দেন। আমি চলে যাচ্ছি। আজকে সাথে টাকা আনিনি। দুই-তিন দিনের মধ্যে মাসিক খরচ বিকাশে পাঠিয়ে দিব৷

রিশাদ খুব করুণ গলায় বলে, আব্বা! আজকে খেয়ে গেলে হয় না? রুশার আজকে জন্মদিন। ও খুব করে চাচ্ছিল আজকে যেন তুমিও আমাদের সঙ্গে ডাল-ভাত খাও।

রঙ্গন থমথমে খেয়ে গেল। আজকে তার বোনের জন্মদিন? সামান্য ভুল বলেছে সে,নিজের বোন না, সৎ বোন হয় রুশা তার।

রঙ্গন চুপচাপ সোফায় বসে পড়ে। টিভিতে খেলা চলছে। ইন্ডিয়া ভারসেস পাকিস্তান। হাইলাইট সম্ভবত। ভিরাট কোহলি ছয় মারলো একটা। বান্ডারি ক্রস করে চলে গেল। স্টেডিয়ামের চারদিকে থেকে হৈচৈ। কোন দিকেই মন নেই তার৷ অসহ্য লাগছে তার।

রিশাদ আগ্রহ নিয়ে খেলা দেখতে দেখতে বলে উঠে, দেশের অবস্থা কি?

— আমি কিভাবে জানব?

–আশ্চর্য! তুমি জানবে নাতো কে জানবে? তুমি হচ্ছো দেশরক্ষায় নিয়োজিত। তোমার কাছে ই সব খবর পাওয়া যাবে। যাইহোক আমি করোনা ভ্যাকসিন নিতে চাচ্ছি। আমাদের এই দিকে অনেকেই প্রথম ডোজ নিয়ে নিয়েছে। রুশা বুঝেনা কিভাবে রেজিষ্ট্রেশন করতে হবে। আমাকে ভ্যাকসিন দেওয়ার একটা ব্যবস্থা করে দাও।

রঙ্গন হতাশ হলো। সামনে থাকা ব্যক্তির মধ্যে লাজ-লজ্জা বলে কি কিছু ই নেই? কত অবলীলায় সে তার সঙ্গে কথা বলছে। যেন কিছু ই হয়নি। বাবা কি ভুলে গেছে সে একসময় তাকে আর তার গর্ভবতী মাকে ফেলে রেখে বিদেশে চলে গিয়েছিল। কি দুর্দিন গেছে তাদের। কোন টাকা পাঠাত না। সেও পাঁচ বছর বয়সের একটা বাচ্চা ছেলে। তার মা।সাত মাসের অন্তঃসত্তা ছিল তখন। পরিবার কে টাকা না পাঠিয়ে দিনের পর দিন বাইরে ছিল। খোজ পযন্ত নিত না সে।
সে ছোট করে দম ফেললো।

প্রকৃতির প্রতিশোধ বলেও কিছু একটা আছে বোধহয়! তার বাবাকে থাইল্যান্ড ব্র‍্যাঞ্চ থেকে বের করে দেওয়া হয়। রঙ্গন কারনটা জানে না। এখন যা বুঝে তাহলো নিশ্চয়ই দুই নাম্বারি কিছু করেছিল। দেশে ফিরে তার বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করে। ততোদিনে রঙ্গনের মা মারা গিয়েছিল। প্রথম বউ মারা যাওয়ার পর আবার বিয়ে করে রিশাদ। এই ঘরে এক কন্যা সন্তান আসে। রিশাদ আর রিশাদের দ্বিতীয় স্ত্রী বাসে করে কোথায় জানি যাচ্ছিল, তখন বাস এক্সিডেন্ট করে উনি মারা যান আর রিশাদ পঙ্গু হয়ে যায়। হুয়িল চেয়ার ছাড়া চলতে পারেনা। বাবার যখন এক্সিডেন্ট হয় রঙ্গন ততো দিনে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল৷ কাজেই রুশার কোন কষ্ট করতে হয়নি।

কিছুক্ষন পর রুশা উকি মারল। রিশাদ বলে উঠে, আয় মা। এদিকে আয়। বস আমাদের সঙ্গে। তোর কি সিরিয়াল দেখার সময় হয়ে গেছে?

রুশা ভয়ে মায়হা ঝাকালো। সে প্রতিদিন টিভিতে একটা সিরিয়াল দেখে। সেটা না দেখলে তার কিছু ই ভালো লাগে না। রিশাদ রিমোট রুশার হাতে ধরিয়ে দিল।

রুশা চ্যানেল বদলালো। সিরিয়াল চলতে লাগলো।

রঙ্গন টিভিতে নজর দিতেই চমকে গেল। টিভির স্ক্রিনের মেয়েটা পিউ না? সে চোখ কচলে নিল। নাহ পিউ না। কিন্তু পিউয়ের মতোই এই মেয়েটার ও গাল গুলো ফোলা ফোলা।

সে মোবাইল বের করে রুশাকে টেক্সট দিল। টিভি দেখতে দেখতে রুশা টেক্সট টা পড়ে ফেলে। সেখানে লেখা, Happy birthday.

রুশার খুব আনন্দ লাগলো। ভাইয়াকে সে খুব ভালোবাসে। খুব মানে খুব! কিন্তু ভয় ও পায়। ভাইয়া অকারণেই তাকে বকে। অবশ্য বকার ই কথা! সে তো স্টুডেন্ট ভালো না। কলেজে উঠেও নিউটনের তিনটা সূত্র ও ঠিকমতো পারেনা।

★★★

শ্রাবণ তার বাবার সামনে দাড়িয়ে আছে। হাতে জব জয়েনিং লেটার। সে লেটারটা বাবার হাতে দিয়ে বলে, আব্বু আমি এই অফিসে নিজ যোগ্যতায় জব অফার পেয়েছি। পড়শু দিন থেকে এই অফিসে জয়েন করব৷

শ্রাবণের বাবা শৌখিন সাহেব কিছুট তব্দা খেয়ে যান। এই অফিসের সুনাম সে বহুবার শুনেছে। তার বিশ্বাস ই হচ্ছে না শ্রাবণ এখানে জব অফার পেয়েছে। শ্রাবণের রেজাল্ট তো খুব একটা ভালো ছিল না তাও কিভাবে পেল এই অফার?

তিনি গম্ভীর মুখে বলে, তাহলে কালকে থেকে তুমি আমার ঢাকার অফিসে বসতে পারো। এস পার দ্যা কন্ডিশন!

শ্রাবণ হেসে দিলো এবং বলল, সর‍্যি আব্বু। এই অফিসেই আমি জব করব। আমার জন্য তোমার অফিসে যে পোস্টটা রেখেছিল কান্ডলি অন্য কাউকে দিয়ে দাও।

— আমার নিজের ছেলে থাকতে অন্য কেউ কেন সিইও হবে? আজব!

শ্রাবণ বলল, আমার কোন শখ নাই তোমার অফিসে বসার৷ তুমি তোমার মাথা নষ্ট কন্ডিশন গুলো নিজের পকেটে রাখবে।

শৌখিন সাহেব রেগে গেলেন। তিনি ভ্রু কুচকে শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে থেকে বলে, তোমার ফুপু জানালো, তুমি নাকি আয়েশার সঙ্গে বাজে ব্যবহার কর?

— মিথ্যা৷ ওর সঙ্গে আমি কোন ধরনের ব্যবহার ই করিনা। ফুপু মিথ্যা বলছে৷

— উনি খামাখা মিথ্যা বলতে যাবে কেন?

— কারন ওনার স্বভাব কিছুটা পাশের বাসার আন্টির মতোন। সবকিছু তেই ভেজাল পান তিনি।

শ্রাবণের বাবা পুনরায় তব্দা খেয়ে যান৷ তিনি নিজেকে সামলে নিয়ে বলে, মামা বাসায় আর কত দিন থাকবে? বাসায় ফিরে আসো তুমি আর তোমার মা।

— উহু। আমি এখন ঢাকায় মাকে নিয়ে থাকব। আমরা আর চিটাগং যাচ্ছিনা। মামা বাসায় এই মাসটা থেকে পরের মাসে আশেপাশে কোন ফ্লাটে ভাড়া উঠব।

— এই একমাস তোমার ফুপুর বাসায় থাকো?

শ্রাবণ কঠিন গলায় বলে, না।

— আচ্ছা। শোন। আমি আরো তিন দিন ঢাকায় থাকব। কিন্তু এখানে না। তোমার ফুপুর বাসায়। ভাই আসবে আজকে। কিছু অফিশিয়াল কাজ ও আছে।

— যাও তুমি। কিন্তু আম্মু আমার সঙ্গে থাকবে।

শৌখিন বলল, এতো বড় হয়েও মা ছাড়া থাকতে পারো না কেন তুমি?

শ্রাবণ পালটা জবাবে বলে, বুড়া হয়েও তুমি বৌ ছাড়া কেন থাকতে পারো না?

শৌখিন সাহেব একেবারে নির্বাক হয়ে গেল। তার ছেলেটা আসলেই একটা বেয়াদব। আপা ঠিকই বলে।

কিছুক্ষন পর শৌখিন চা-নাস্তা খেয়ে আবেগের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বোনের বাসায় চলে গেল।

তখন বিকেল। আসরের আযান দিতেই আয়নাকে দেখতে তার বাসা থেকে সবাই চলে আসলো। মূহুর্তের মধ্যে বাসার পরিবেশে আনন্দ বিরাজ করতে লাগলো। একে তো নতুন বউ থাকায় এমনি সবার মধ্যে আনন্দ ভাব। তার উপর পিউ আর আলিয়া একসঙ্গে হলে গল্পের আসর যেন জমে যায়।

শ্রাবণ সুযোগ বুঝে আলিয়ার পাশে বসে পড়ে বলে, কিরে পিউ? আলিয়া এলে তুই তো আমাকে ভুলেই যাস। বাই দ্যা ওয়ে, আলিয়া তুমি এখন কেমন আছো?

আলিয়া উত্তর দিলো, ভালো আছি৷

শ্রাবণ কল্পনা ও করেনি আলিয়া তার সঙ্গে কথা বলবে! শ্রাবণ তো মনে মনে অনেক খুশি! যাক বরফ তাহলে গলছে। বরফ গলানোর জন্য তাপ তো সে দিচ্ছেই। আলুভর্তা এখন গললেই হিলো। শ্রাবণ মাঝে মাঝে আলিয়াকে আদর করে আলুভর্তা বলে ডাকত!

তখনি ড্রয়িং রুমে সমুদ্র আর আয়না প্রবেশ করে। আয়না লাল রঙের জামদানী একটা শাড়ি পড়েছে। সমুদ্রের পরনে পাঞ্জাবি। দুইজনই হাসি হাসি মুখ করে ভেতরে এসে নানা-নানি আর মামা-মামীকে সালাম দিল৷

শ্রাবণ মনোযোগ দিয়ে আয়নাকে দেখে পিউকে বলে উঠে, এই! ভাবীর চুল ভেজা কেন রে?

আলিয়া ও পিউ দুইজনই তার দিকে কড়া চোখে তাকায়।

শ্রাবণ দাত বের করে বলে, আই হেইট মাই মাইন্ড!

চলবে।