Crush Villain Part-10

0
9409

#Crush_Villain
#লাবিবা_ওয়াহিদ
|| পর্ব ১০ ||

আয়াফ রাগ ফুসছে। তার আশেপাশে অনেকগুলো কাগজের ছোট ছোট টুকরো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে যেনো সে কোনো এক কাগজের বাগানে অবস্থান করছে। আয়াফের চোখ মুখ কপাল ভয়ংকর রাগে লাল হয়ে আছে। কপালে কয়েকটা রগ স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। আয়াফের থেকে কিছুটা দূরে অবস্থান করছে তার বন্ধুরা। সকলেই একটা কাগজের দিকে তাকিয়ে মুখ টিপে টিপে হাসছে। চাইলেও জোরে হাসতে পারছে না আয়াফ টের পেলে তাদের রক্ষা নেই।

কিছুক্ষণ আগের ঘটনা,,

আয়াফ বাধ্য হয়ে ম্যামের থেকে প্র‍্যাকটিক্যাল খাতাটা নেয়। খাতার অবস্থা দেখে তার চোখ চড়কগাছ। কিসব উল্টো পাল্টা এনাইম আঁকা আর কতো উক্তি। খাতাটা যেনো জগাখিচুরি আর হ্যান্ডরাইটিংও কতো বিস্রি। আয়াফ বুঝে উঠতে পারছে না এগুলো কে লিখেছে। ম্যাম চেঁচিয়ে বলে,”ওয়াট দ্যা হেল? কানে শুনোনি আমি কি বলেছি?”

ম্যামের কথায় শেষের পৃষ্ঠায় চোখ পরতেই আয়াফের মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পরে। এটা কি লেখা মাই গড! বেচে থেকে লেখা তো দূরে থাক আয়াফ কখনো মরে গেলেও এভাবে কাউকে লিখতো না শেষে কি না এমন ফাঁদে পরলো!!

– আয়াফ!! আই সে রিড ইট ইডিয়েট!(চেঁচিয়ে)

ম্যামের চেঁচানো আয়াফ বাধ্য হয়ে আস্তে করে বলে,

“আতা গাছে…”

– সাউন্ড লো করে না জোরে বলো!

আয়াফ চোখ গুলোতে ছোট ছোট করে ইয়াক মার্কা ফেস করে কিছুটা জোরেই বলে,

“আতা গাছে তোতা পাখি,
ডালিম গাছে মৌ!
এতো ডাকি তবু কথা…”

বলেই আয়াফ থেমে গেলো। ম্যাম আবার রেগে চেঁচিয়ে বলে,”ওয়াট! থামলে কেন কন্টিনিউ!”

আয়াফ আমতা আমতা করে বলে,

“কককওনা কেকেকেন বববউ!”

সবাই অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো সাথে আয়াফের বন্ধুরাও। হাসতে হাসতে একেকজন একেকজনের গায়ে গিয়ে পরছে। আয়াফ লজ্জায় মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। ম্যাম বলে,”স্টপ অল!”

বলতে সবাই থেমে গেলো। সবাই থামতেই ম্যাম আয়াফকে প্রচুর অপমান করলো যা আয়াফের বদহজম হয়ে থাকলো। বেচারা হাজারবার বলেও বোঝাতে পারলো না ম্যামকে যে সে এটা লেখেনি। এতো মানুষের সামনে এভাবে এসব নিয়ে কখনোই এতোটা অপমানিত হয়নি।

আয়াফদের ক্লাসের বাইরে থেকে উঁকি দিয়ে সবটা দেখলাম আর নিঃশব্দে হাসতে হাসতে মরে যাচ্ছি। আহারে বেচারা আরও লাগতে আসেন আমার সাথে এখন বুঝেন কেমন লাগে। আমি জানতাম আপনি আমার হ্যান্ডরাইটিং চিনেন তাই তো কৌশলে বাম হাতে লিখেছি যাতে ধরা না খাই। হি হি হি ঠ্যালায় ঠ্যালায় বেচারা ঘুঙুর ডুঙুর ঠুস!! যাইহোক অনেক বিনোদন নিলাম এখন আর পারবো না হাসি আটকিয়ে রাখতে।

ভেবেই সেখান থেকে দৌড়ে ভার্সিটির পেছন সাইডে চলে আসি। এখানে তেমন মানুষ থাকে না তাই এখানে ঘাসের উপর বসে মনখুলে হাসলাম। ফাইনালি এতোদিন পরে পারফেক্ট একটা রিভেন্স নিতে পারলাম।

এদিকে আয়াফ ক্লাস থেকে বেরিয়ে হলরুমে গিয়ে প্রতিটা কাগজ ছিড়ে ফেলে শুধু ওই কবিতার টাই যাহির লুকিয়ে রেখেছিলো। কাগজগুলো ছিড়েও যেনপ এক ফোটা শান্তি পাচ্ছে না আয়াফ। কিছুক্ষণের মাঝে মানিশা আর নিশি আসে। মানিশা নিশি এলোমেলো দেখে সব জানতে চাইলে তাদের দূরে নিয়ে যাহির সব খুলে বলে। এসব শুনে নিশি আর মানিশাও হেসে কুটিকুটি।

বর্তমান,

আয়াফ শুধু চিন্তা করছে তার প্র‍্যাকটিক্যাল খাতায় এগুলো কে করতে পারে। পরে মনে আসলো রোজার কথা। দ্রুত রোজাকে ডেকে পাঠালো। কিছুক্ষণের মাঝে রোজা চলে আসে সাথে আলিজাও। রুমের এমন ছড়াছড়ি দেখে দুজনেই অবাক হলো তবুও কিছু বললো না। আয়াফ রোজাদের দিকে ফিরতেই দুজনেই ভয়ে বরফ হয়ে গেলো কারণ আয়াফ আউট অফ কান্ট্রোল। আয়াফ শান্ত কন্ঠে বলে,”রোজা!”

রোজা কেঁপে উঠে বলে,”জজজজ্বী ভাইয়া!”

– খাতার হ্যান্ডরাইটিং গুলো কার?

রোজা হকচকিয়ে গেলো সাথে আলিজাও। কিসের হ্যান্ডরাইটিং এর কথা বলছে আয়াফ? রোজা আর আলিজাকে একে অপরের দিকে তাকাতে দেখে এবার আয়াফ কিছু রেগে হুংকার ছেড়ে বলে,”আই সেইড হু রোট দিস?”

– আপনি কোন হ্যান্ডরাইটিং এর কথা বলছেন আমরা কিছুই বুঝতে পারছি না।

তখনই নীল বলে,”তুমি ওকে প্র‍্যাকটিক্যাল করে দিয়েছিলে ফুলফিলড?”

– হ্যাঁ দিয়েছি তো।

– কাউকে দিয়েছিলে ওর খাতা?(আয়াফ)

– না তো, তবে হ্যাঁ আমার ক্লাস ছিলো বলে আমি সানিয়াকে দিয়ে পাঠিয়েছিলাম।

কেউ কিছু না বুঝলেও আয়াফ বেশ ভালো করে বুঝেছে এসব চোরাকারবার কার। আয়াফ ঠান্ডা গলায় বলে,”ওকে তোমরা যাও!”

দুইজন মাথা নাড়িয়ে চলে গেলো। আয়াফ বন্ধুদের আসছি বলে কোথায় যেনো চলে গেলো।

উফফ বুঝিনা এই মেয়ে দুইটা গেলো কই? কতোবার বললাম ক্লাস শেষ হলে কোথাও যাবি না ক্লাসের আশেপাশেই থাকবি তা না ঠিকই লাফাইতে লাফাইতে কোথায় চলে গেছে আর এদিকে আমি খুঁজতে খুঁজতে হয়রান! এদের মতো ফ্রেন্ডস থাকার চেয়ে না থাকাই ব্যাটার। কেউ কাউকে এমন কামলার মতো খাটায় আজিব!

এসবই বিরবির করে সিঁড়ির দিকে যাচ্ছিলাম হঠাৎ পেছন থেকে কেউ হেচকা টান দিয়ে একটা খালি অন্ধকার ক্লাসে নিয়ে গেলো। আমি চিৎকার দিতে নিতেই কেউ পেছন থেকে মুখ চেপে খট করে দরজা লক করে দেয়। এদিকে আমার ভয়ে কাঁপাকাঁপি অবস্থা। যেভাবে মুখ চেপে ধরেছে দম যেনো আটকে যাচ্ছে আর তার হাত থেকে কিছুতেই নিজেকে ছাড়াতে পারছি না। বেশ ভালো বুঝলাম কোনো ছেলে আমাকে এখানে এনেছে। ছেলেটা আস্তে আস্তে হাত আলগা করে। ছেলেটার বুকে আমার পিঠ ঠেকে থাকায় ছেলেটার গায়ের স্মেল পেতে লাগি। কেমন চেনা চেনা লাগছে। আমি ছেলেটার হাত মুচড়ে পিছে ফিরে তাকাই নিজেকে ছাড়িয়ে। আবছা আলোয় দেখতে পাই স্পষ্ট যে আমার সামনে আয়াফ! আয়াফের রক্তবর্ণ চোখ দেখে অটোমেটিক ভয়ে কাঁপতে লাগি সাথে অনবরত ঘামছি। আয়াফ এক পা এক পা করে আমার দিকে এগোচ্ছে আর আমক তার এগোনো দেখে পেছোচ্ছি। তাহলে কি সে জেনে গেলো যে আমি… ভেবে ঢোক গিললাম। আয়াফ রেগে শান্ত স্বরে বলে,”তোমার সাহস তো কম না তুমি এভাবে আমাকে ক্লাসের সবার সামনে অপমান করিয়েছো? তুমি জানো এর পরিনাম কতোটা ভয়ংকর হতে পারে? আর ইউ ইমাজিন? ”

আয়াফের শান্ত কন্ঠটাও কেন যেনো আমার গায়ে কাটা দিয়ে উঠছে। এই ছেলে কি আবার আমাকে থাপ্পড় দিবে নাকি মেরে ফেলে রেখে চলে যাবে? ওহ আল্লাহ তাহলে আমার ফিউচার জামাই নাতিপুতিকে কি তাহলে দেখতে পারবো না? নাহ আল্লাহ আমার এতো হায়াত কমিয়ে পৃথিবীতে পাঠাবে কেন? আমি এই ক্রাশ ভিলেন টার হাতে কখনোই মরতে পারবো না। নাহ কিছু তো একটা করতে হবে। থিং সানিয়া থিং!

এসব ভাবতে ভাবতেই ভিলেনটাকে ধাক্কা দিয়ে দরজার দিকে যেতে নিলেই আমাকে আবার খপ করে ধরে ফেললো। মন তো চাচ্ছে নিজের গালেই নিজে চড় লাগাই। ক্যান যে বলদামি করে নিজের এই ভিলেনটার হাতে ধরা দিলাম ধুর ধুর!

– পালাচ্ছো কোথায়?

– পালাবো মামামানে কি? আপনি আমাকে এখানে আনসেন কেন ছাড়েন আমাকে।

বলেই ছাড়াতে নিলে আমায় নিজের সাথে মিশিয়ে ফেলে আয়াফ। আয়াফের ভারি নিঃশ্বাস আমার মুখে আছড়ে পড়ছে। তার নিঃশ্বাসের শব্দ স্পষ্ট শুনতে পারছি। বেশ বোঝা যাচ্ছে অনেকটা রেগে আছে। এদিকে আমি বরফের মতো জমে গেলাম, ভারি ভারি নিঃশ্বাস ফেলছি। এই প্রথম কোনো পুরুষ আমার এতোটা কাছে কেমন ভিন্ন ফিলিং নাড়া দিচ্ছে নিজের মাঝে সাথে হাজারও অস্বস্তি। পরিবেশটা থমথমে হয়ে আছে। আয়াফ বলা শুরু করে,”কেন ওই ছেলের হাত ধরে ঘুরতে তার সাথে নাইট স্পেন্ড করতে খুব ভালো লাগে তোমার?”

আমি পুরো বোকা বনে গেলাম কিসব আজেবাজে বকছেন উনি মাথা কি পুরোই গেছে?

– মামামানে কিসব যা-তা বলছেন আপনি?

– সেইটা বাদ আগে বলো ওই হ্যান্ডরাইটিং গুলো তোমারই তাইনা?

যখন বুঝলাম অপরাধ অস্বীকার করে লাভ নেই নিজের শোধ তো তুলতে পেরেছি তাই নির্দ্বিধায় অন্য দিকে ফিরে বলে দিলাম,”হুম!”

সাথে সাথে আয়াফ রেগে হুংকার ছেড়ে উঠে। আমি তাকে ধাক্কা দিয়ে তার থেকে ছাড়িয়ে বলি,”আমাকে কি হাতের মোয়া পেয়েছেন আপনি? আপনি কি আমায় কম অপমান করেন নি? আমায় পুরো ক্লাসে এমনকি টিচারদের সামনে পর্যন্ত অপমান করেছেন। আপনার জন্য আমি এখনো কটুকথা শুনি, চরিত্র নিয়ে কথা উঠে আমার। আমি মেয়ে বলে কি মানুষ না? আপনারা টাকাওয়ালারাই কি শুধু মানুষ? ধৈর্যেরও একটা বাধ থাকে যেটা আপনি বারবার ভেঙে দিয়েছেন। প্লিজ লিভ মি এলোন আপনি আপনার মতো থাকুন আর আমাকে আমার মতো থাকতে দিন। আমার জাস্ট ভালো লাগে না এসব কাহীনি। ভার্সিটি পড়তে আসছি কথা শোনার জন্য নয়। আপনি আমাকে চড় দিয়েছেন অপমান করেছেন তাই আমি প্রতিশোধ হিসেবে আজ এইসব করেছি। এখন আমার প্রতিশোধ শেষ আপনি দূরে থাকবেন আমার থেকে। আই সে লিভ মি এলোন!(চেঁচিয়ে)

আয়াফ কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে আমার কথা শুনে। পরে একটা চিৎকার দিয়ে সামনে থাকা একটা চেয়ার মেঝেতে আছাড় মারলো। এতে আমি ভয়ে কেঁপে উঠি। আয়াফ কিছু না বলেই দরজা খুলে হনহন করে বেরিয়ে গেলো। আয়াফ চলে যেতেই আমি হাফ ছেড়ে বাচি। যাক আমার এইসব ডায়লগে এরে দমাতে পেরেছি এখন কোনো কাটা নাই আমার পথে।

ভেবেই আমিও ক্লাস থেকে বেরিয়ে গেলাম। এভাবেই প্রায় মাসখানিক কেটে গেলো। আয়াফ একবারের জন্যেও আমার সামনে আসেনি তবে ক্যাম্পাসে বা অন্যান্য জায়গায় বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে দেখতাম কিন্তু সে আমার দিকে ফিরেও তাকাতো না। কেন জানি খারাপ লাগে তবুও প্রকাশ করিনি। আমিও আমার বিন্দাস লাইফ ইঞ্জয় করছি। ইদানীং মিথিলাকে ক্লাসে দেখিনা কই যে গেলো কে জানে। সারাদিন পড়াশোনা নিয়ে বিজি থাকি এখন কারণ সামনেই সেমিস্টার ফাইনাল ইক্সাম। এখন ঠ্যাকায় অনেক প্রাইভেট কোচিংও পড়তে হয়। বহুত জ্বালা যাকে বলে প্যারাময় লাইফ। কোমড় পিঠ ধরে যায় বক্সে থাকতে থাকতে।

একদিন,

– জোহাইন্মা তোরে বললাম না আমার কোমড়ের উপর বসে আমার পিঠ মেসাজ করে দিতে?

– আমি পারবো না এগুলো করে দিলে কি দিবি তুই হ্যাঁ?

– বললাম তো ডেইরি মিল্ক দিবো তবুও দে ভাই তুই না আমার লক্ষি ভাই প্লিজ!!!

– হাহ তোর ওই ফোয়াইন্না ১০টাকা দামের ডেইরি মিল্ক তোর কাছেই রাখ আমার এসব লাগবে না।

– আরে ধুর কে বললো তোরে আমি ১০টাকার ডেইরি মিল্ক দিবো? বোর প্যাকেট দিবো সিরিয়াসলি!

– কচু দিবি তুই!

– কচু খাইতে চাইলে আম্মুকে বল তোরে ভেজে দিবে তখন খেয়ে নিস!

– ইন্সাল্ট করবি না একদম। না সর আমি পারবো না তোর এই আজাইরা কাজ করতে।

– তাহলে তোর সিক্রেট সব বাহির হইলো বলে।

জোহান কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,”মামামামানে?”

– ওইদিন তোর ইজ্জতহরণ পিক তুলে রাখসি আমি ভাইপো ওইটা তোর ক্লাসমেটদের দেখালে কেমন লাগবে ভাইপো?(চোখ টিপ মেরে)

জোহান ভয়ে আমার কোমড়ের উপর বসে আমার পিঠে ধুরুম ধারুম দিতে লাগে আর আমি আরামে চোখ বুজে আছি। বেশ বুঝতে পারছি আমাকে এভাবে কিল দিয়ে আমার রাগ ঝাড়ছে। অন্যদিন হএল এগুলা সব ওর উপ্রে গিয়ে পরতো কিন্তু আজ ক্লান্ত থাকায় এইসব কিল আমার বেশ দরকার। যারে বলে “মারের মেসাজ”

চলবে!!!

(গঠনমূলক মন্তব্যের প্রত্যাশায় রইলাম।)