#Crush_Villain
#লাবিবা_ওয়াহিদ
|| পর্ব ১৩ ||
কাকভেঁজা হয়ে বাসায় ফেরায় আম্মুর বকাও কম খেলাম না। পাক্কা ২০মিনিট ঝাড়লো। আরও দিতো কারণ আমি ভেজা অবস্থায় আছি যদি ঠান্ডা লেগে যায় তাই চুপ করে গেলো। আর এমনিতেও ঠান্ডায় আমার কাঁপা-কাঁপি অবস্থা। বেশি কিছু না বলে রুমে চলে আসি আর সোজা ওয়াশরুমে চলে যাই।
★
আয়াফের চোখে শুধু সানিয়ার বৃষ্টিতে ভেজার মোমেন্ট টা ভাসছে। পারছে না সানিয়ার ভাবনাগুলো একসাইডে রাখতে। ফোনে একটা নাম্বার অপলক ভাবে দেখছে আয়াফ। নাম্বার টা আর কারো না সানিয়ার। যাহির যেদিন সানিয়ার ফুল ডিটেইলস বের করেছিলো ওইদিন যাহির নাম্বারটাও এনে দিয়েছিলো সেই থেকে নাম্বারটা আয়াফের কাছে তবে কখনো ফোন দেয়ার ইচ্ছা বা প্রয়োজনবোধ করেনি। আজ কেন যেনো মনটা এই নাম্বারটার দিকে বেশ টানছে আর মস্তিষ্ক দূরে সরে যেতে বলছে। আয়াফ একপ্রকার দোটানায় পরে আছে কি করবে সে ভেবে ভেবে কনফিউশনে চলে গেছে। মন এবং মস্তিষ্ক উভয়ের সাথে দীর্ঘসময় যুদ্ধ করে শেষে সে ডায়ালে ক্লিক করে কল দিলো। রিং হচ্ছে,
জোহান তখনই চকলেট খোঁজার জন্য সানিয়ার র্যমে ঢুকে। তখনও সানিয়া শাওয়ার নিচ্ছে এবং শাওয়ায়ের তালে তালে গাইছে, “পাপা কেহতে হে বাডা নাম কারেগা, ক্রাশ ভি কেহতি হে মেরে জান বানেগা?”
“ডিপ ডিপ বারসা পানি,
মিরকিব্যারামের হয় যে চুউউউল~কানি,
লা লা লা… আজরাইল কা…..”
এসব আজাইরা মার্কা গান শুনে জোহান বিরবির করে বলে,”এর থেকে তো হিরো আলমের এ ফর আপেল বি ফর বল গানও ভালো। ছ্যাঁহ দুইটাই এক প্রজাতির ইয়াক!”
এমন সময়ই সানিয়ার ফোন বাজার শব্দ হলো। জোহান ভ্রু কুচকে এদিক সেদিক ফোন খুঁজে দেখলো টেবিলের উপরে ফোন। জোহান ঝটপট ফোন হাতে নিয়ে দেখে নাম্বার সেভ করা নেই এর মানে নিশ্চয়ই অপরিচিত নাম্বার। জোহান ফোন হাতে নিয়ে লম্বা একটা কাশি দিয়ে গলা ঝাড়লো তারপর রিসিভ করে একটানে বলা শুরু করলো,”ক্রিং ক্রিং,,লেট লতিফ লেট লতিফা শুনতে পাচ্ছেন আমায়? আমি হলাম জিপি মিউজিক রেডিও ডট কম আদারওয়াইজ আই এম জোহান ইউর জম ইউর টমটম! কি উদ্দেশ্যে ফোন করেছো জানিনা তবে ফোন যেহেতু দিয়েছো সেহেতু আমার একটা গান শুনতেই পারো তো শুরু করি, এহেম এহেম!
“ওহে হিল পাহাড়
ওপারে ঝিল পাহাড়,
ট্রাপের ড্রাম কালার’
ট্রুং ট্রুং বাজে.. ইয়োহো!!”
– স্টপ স্টপ স্টপ!(চেঁচিয়ে)
– আহ মাঝে কেন আটকালে? ধুর গান গাওয়ার মুড নাই নষ্ট করে দিলা।
কন্ঠে বেশ ভালো বুঝেছে এটা কোনো ছোট পিচ্চি। উফফ এই পিচ্চি তো ভারি ডেঞ্জারাস! এইটুকু সময়তে মাথা খারাপ করে ফেললো উফফ।
আয়াফ সাথে সাথে ফোন কেটে দেয়। এদিকে জোহান হ্যালো হ্যালো করতে লাগে। ঠিক তখনই সানিয়া ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসে এবং জোহানের হাতে নিজের ফোনে কারো সাথে কথা বলতে দেখে বলে,”কিরে তুই আমার ফোন দিয়ে কার সাথে কথা বলছিস?”
জোহান তখনই পিছে ফিরে বলে,”কে জানি কল করেছিলো আমি রিসিভ করলাম হঠাৎ-ই জেটে দিলো।”
আমি ফোনটা জোহানের হাত থেকে নিয়ে ফোন চেক করতে করতে বলি,”কে ফোন দিয়েছিলো?”
– জানিনা নাম্বার সেভ করা ছিলো না।
আমি ডায়াললিস্টে ঢুকে দেখ ইএকটা আননোন নাম্বার। কে এটা আগে তো কখনো এই নাম্বার থেকে কল আসেনি।
– ওপাশে কে ছিলো?
– মানে?
– মানে মানুষটা কে ছিলো ছেলে না মেয়ে অথবা নাম পরিচয় জানিস কিছু?
জোহ্না মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলে,”না আমি-ই তো কথা বলেছি সে কিছু বলেনি তবে হ্যাঁ সে ছেলে ছিলো আর কন্ঠটাও বেশ সুন্দর!”
আমি ভ্রু কুচকে তাকালাম। কোন ছেলে আবার আমাকে ফোন করবে? জোহানকে রুমে পাঠিয়ে দিয়ে আমি ভাবতে লাগলাম। সারাদিনে আর সেই নাম্বার থেকে ফোন আসলো না।
এভাবেই দিন যেতে লাগে কিন্তু এই নাম্বারের মালিক কে তা এখনো জানতে পারিনি। মাঝে মধ্যে কলও আসে এই নাম্বার থেকে তবে আমি হ্যালো বলার পরেই কেটে দিতো। কাহীনি বুঝিনি কে এই হাদারাম? আস্তে আস্তে পরিক্ষার দিন ঘনিয়ে আসে আমিও আর মাথা ঘামাই না এই নাম্বার টাম্বার নিয়ে কারণ এগুলা নিয়ে ভাবতে গেলে পরিক্ষায় গোল্লা মারবো। পরিক্ষার সময়েও সেই নাম্বার থেকে কল আসেনি একবারও। আয়াফকেও দেখতাম না শুধু এইটুকু শুনেছি ফাইনাল ইক্সাম নিয়ে সে দৌড়ের উপ্রে ছিলো। শেষে হাজারো প্যারার সাথে পরিক্ষার সমাপ্তি ঘটলো।
আজ রেজাল্ট দিবে তাও ভার্সিটি যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছি। এমন সময়ই হঠাৎ কেউ পেছন থেকে হাত দিয়ে আমার চোখ ধরে ফেলে। আমি ভ্রু কুচকে “কে, কে” বলে উঠি। হাত ধরে বুঝলাম এটা কোনো মেয়ে। আমি চোখ ছাড়িয়ে পিছে ফিরে অবাক হয়ে যাই।
– সারপ্রাইজ!!!
বলেই রুহি আমাকে ঝাপটে ধরলো। আমিও খুশিতে জড়িয়ে ধরি রুহি কে। রুহি আমার খালাতো বোন এবং আমার এক বছর জুনিয়র। আমি হেসে বলি,”অওওও ইয়ায়ার ওয়াট এ সারপ্রাইজ! তুই কখন এলি আর তোরা না চট্টগ্রাম থাকিস তোকে খালামনিরা একা ছাড়লো?”
– নাহ আমরাও এসেছি।(খালামনি রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলে)
আমি খালামনিতে দেখে রুহিকে ছেড়ে খালামনিকে জড়িয়ে ধরি।
– খালামনি কেমন আছো?
– ভালো আছি রে মা তুই কেমন আছিস?
– আমিও ভালো তা হঠাৎ!
– তোকে সারপ্রাইজ দিবো বলেই হুট করে আসা আর শুনলাম আজ নাকি তোর রেজাল্ট দিবে?
– হ্যাঁ খালামনি সেইটা নিয়েই ভয়ে আছি গো।
– পাগলি! ভয়ের কিছু নেই আমি জানি আমার মামনিটাহ ভালো রেজাল্টই করবে।
আমি মিষ্টি হাসি দিলাম।জোহান আমাদের কথার মাঝে এসে বলে,”যাহ বাবা আমার আদর কি সব আপুকেই দিয়ে দিবা?”
– ওরে বাবাতাহ আয় তো দেখি।
ব্ললেই খালামনি হাটু গেড়ে বসে জোহানকে জড়িয়ে ধরে। আমি আর রুহি হাসছি। জোহান গাল ফুলিয়ে বলে,”তোমাদের হিংসে হচ্ছে আমাদের ভালোবাসা দেখে তাইতো? জ্বলো জ্বলো হিংসায় জ্বলে পুড়ে ছাই হও।”
আমি হেসে বলি, “এখন আমাদের নয় তোর জ্বলার কথা ভাই।”
– আমি কেন জ্বলবো?
– কারণ তুই একটু আগে তুই নিজেই জ্বলছিলি।
বলেই আমি হেসে দেই সাথে রুহি, খালামনিও যোগ দেয়। জোহান নাক,গাল ফুলিয়ে চলে যায়। আমি হাসি থামিয়ে বলি,”আচ্ছা তোমরা থাকো আমি যাই লেট হয়ে যাচ্ছে।”
রুহি বলে,”কই যাচ্ছো?”
– ভার্সিটি। আজ রেজাল্ট দিবে তো তাই যেতেই হবে।
– আমিও যাবো।
– কিন্তু…
– প্লিজ আপু আমাকেও নিয়ে চলো প্লিজ প্লিজ প্লিজ!
– ওকে খালামনি নিয়ে যাবো?
খালামনি সম্মতি জানায়। রুহি এক লাফ দিয়ে ইউয়াহু বলে ওয়াশরুম চলে যায়। এতোটা পথ জার্নি করে এসেছে তাই একটু ফ্রেশ হয়ে নেয়। তারপর একসাথে বেরিয়ে পরে দু’জন মিলে। ভার্সিটির সামনে আগেই আলিজা আর রোজা দাঁড়িয়ে ছিলো তাই আমরা সহজেও ওদের পেয়ে গেলাম। আমাদের দেখতে পেয়ে আলিজারা আর রোজা এগিয়ে আসে। আমার পাশে রুহিকে দেখে ওরা ঠিক চিনতে পারলো না তাই বলে,”ও তোর কে হয়?”
– আমার খালামনির মেয়ে রুহি।
রুহি হাত নাড়িয়ে মুচকি হেসে বলে,”হাই আপুরা তোমাদের সাথে পরিচয় হতে পারি?”
– হ্যাঁ নিশ্চয়ই আমি আলিজা।
– আমি রোজা।
– রুহি বুঝলি ওরা দুইজনই আমার সব থেকে কাছের বান্ধুবি। তবে আলিজা একটু বেশি।
রুহি মুচকি হাসে। এভাবে আরও কিছুক্ষণ পরিচয় হলো। তারপর আলিজা বলে,”হ্যাঁ রে শুনেছিস এবার বড় করেই রেজাল্ট ঘোরে করা হবে।”
– কি বলিস?
– হ্যাঁ ভেতরে আয় আর দেখ কি বিশাল আয়জন।
– চল।
বলেই আমরা ভেতরে ভার্সিটির পেছন দিকে গেলাম। বেশ বড় জায়গায় নরমাল ডেকোরেশন করা হয়েছে। একটা স্টেজ করা হয়েছে আর তার সামনের বড় খালি জায়গায় অনেকগুলো চেয়ার। এতো স্টুডেন্ট এর জন্য চেয়ার কম পরে যাবে। সামনে ভি আই পি সোফা সেটা করা আর স্টেজের এক জায়গা স্পিচ দেয়ার জন্য রাখা হয়েছে আর অপর পাশে সোফা সেট করা। আগেই অনেক মানুষ এসেছে এবং সবাই চেয়ার দখলও করে ফেলেছে তাই রোজা, আলিজা, রুহি বা আমি কেউ-ই বসার সিট পেলাম না অথচ ভি আই পি সিট গুলো দেখো কিভাবে খালি পরে আছে। ইশশশ কেন যে ভি আই পি মানুষ হলাম না। হলে তো পায়ের উপর পা দিয়ে আরামসে হেলান দিয়ে বসতে পারতাম। রুহি মুখ গোমড়া করে বলে,”সব চেয়ার ফিলআপ! এখন কি পুরো ফাংশন দাঁড়িয়েই দেখতে হবে?”
– কিছুই করার নেই দাঁড়িয়েই দেখ।
– তবে যাই বলিস না কেন আমার কিন্তু অনেক পছন্দ হয়েছে ভার্সিটিটা আর এই নরমাল ডেকোরেশনই কতোটা গর্জিয়াস লাগছে উফফফ। কি কিউট! আমি তো ডিসাইড-ই করে ফেলেছি আমি এই ভার্সিটিতেই এডমিশন নিবো।
আলিজা বলে,”ট্রাই করতে থাকো এডমিশনের তাহলে তো আমরা একসাথেই থাকবো।”
– কথাটা মন্দ বলোনি আপু।
– ওহ প্লিজ তুমি আপু বলিও না। একবছর সিনিয়র জুনিয়রে কিছু আসে যায়না।
– এই কথাটা ওকে প্লিজ বোঝা ওয় বেশিরভাফ সময়েই আমাকে আপু ডাকবে। ইউ নো এই “আপু” ডাকটা ওর মুখ থেকে শুনলে কেমন বেহেনজি বেহেনজি টাইপ ফিল হয় অথচ আমি এখনো নিষ্পাপ শিশু!
– হাহ! কে যে নিষ্পাপ আর কে যে ভন্ড সেটা সবাই ভালো করে জানে।
কারো কন্ঠ শুনে আমি আৎতকে পিছে ফিরি। পিছে ফিরে দেখি আয়াফ ফিল্মি হিরোদের মতো স্টাইল করে পকেটে দুই হাত ঢুকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার সেই কিলার লুকটা যেনো আমার বুকে গিয়ে বিধলো কাটার মতো।
চলবে!!!
(গঠনমূলক মন্তব্যের প্রত্যাশায় রইলাম)