#Crush_Villain
#লাবিবা_ওয়াহিদ
|| পর্ব ১৫ ||
মানিশা এদিক-সেদিক শুধু আবরারকে খুঁজে চলেছে। হুট করেই আবরার মানিশার সামনে চলে আসাতে মানিশা কিছুটা ঘাবড়ে উঠে। আবরারকে দেখে সে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। আবরার বলে,”কাউকে খুঁজছিলেন?”
মানিশা মাথা নাড়িয়ে বলে,”আপনাকেই খুঁজছিলাম!”
– ওহ তাইনাকি?
– হ্যাঁ তাই। তা একটা কথা বলুন তো!
– জিজ্ঞেস করুন তাহলেই বলবো!(চোখের চশমা ঠিক করে)
– আপনি কি সবসময় এইরকম জোব্বা পাঞ্জাবি আর পাজামা পরে সব জায়গায় আশাযাওয়া করেন?
আবরার ম্লান হেসে মাথা নাড়ায়। মানিশ কিছুক্ষণ ভেবে বলে,”আমার সাথে এক জায়গায় যাবেন?”
– কোথায়?(অবাক হয়ে)
– শপিং এ।
– আপনার বন্ধুদের মধ্যে কাউকে নিয়ে যান।
– না আমি আপনার সঙ্গেই যাবো।
– ঠিক আছে চলুন।
মানিশা দেরি না করে আবরারের সাথে ভালো মানের একটা শপিংমলে গেলো। মানিশা গার্লস সাইডে না গিয়ে বয়েস সাইডে গেকো তা দেখে আবরার অবাক হয়ে গেলো তবুও কিছু বললো না। মানিশা একটা শোরুমে ঢুকে আর তার পিছে পিছে আবরারও। আবরার ঘুরে ঘুরে সবটা দেখছে কিন্তু তার মুখে একদমই রিয়েকশন নেই। মানিশা একটা শার্ট চুজ করে সেই শার্ট টা আবরারের পিছে লাগালো কিন্তু আবরার সাথে সাথে সরে গিয়ে বিস্ময়ের চোখে বলে,”আপনি আমার অইছে শার্ট রাখছেন কেন?”
– মাপ দেখবো তাই!
– আমার মাপ কেন?
– আপনাকে গি….
– না আমি নিতে পারিনা সরি জানিনা এটা বেয়াদবি হবে কিনা তবুও আমি এটা নিতে পারবো না।
– কিন্তু কেন?
– বলতে পারবো না আপনাকে।
বলেই চলে যেতে নেয় মানিশা আবরারকে আটকে বলে,”আরে কোথায় যাচ্ছেন? আসলে আমার এক ভাইয়ের বার্থডে আজকে তাই তার জন্য চুজ করতে এসেছি আর সে আপনার মতোই লম্বা চওড়া সুঠাম দেহের। আমার ওর মাপ নেই দেখেই আপনাকে সাথে করে এনেছি!”(মিথ্যা কথা)
আবিরার ভ্রু কুচকে বলে,”ওহ আগে বলবেন তো!”
মানিশা যেনো হাফ ছেড়ে বাচে। এই আবরার আসলেই অনেকটা বোকা। এর জীবন যে কি করে চলবে আল্লাহ ভালো জানে। তবে ব্যাপার না মানিশা যেহেতু তার জীবনে নতুন করে একজনকে পেয়েছে আবরারকে সে সবকিছু সম্পর্কে আইডিয়া দিবে। মানিশা একটা মেরুন কালারের শার্ট, ব্লাক জিন্স, ব্লাক শু, ব্লাক টাই এবং ধূসর রঙের একটা সানগ্লাস হাতে দিয়ে চেঞ্জিংরুমে জোর করে পাঠিয়ে দিলো আর এদিকে মানিশা ঘড়ি চয়েজ করছে। কিছুক্ষণ পর মানিশা সামনের মিররে আবরারকে দেখে হা হয়ে যায় এবং সে তৎক্ষনাৎ পিছে ফিরে তাকায়। আবরার সব পরেছে কিন্তু নিজের সেই পুরোনো চশমাই তার চোখে এতে তার বিরক্ত ধরে গেলো তবুও আবরারকে হিরোর থেকে কম লাগছে না। আবরার ভীতু চোখে এদিক সেদিক দেখছে আবার চশমা ঠিক করছে। মানিশা খেয়াল করে আবরারের টাই ঠিক নেই। তা দেখে মানিশা মুচকি হেসে আবরারের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। আবরার ইনোসেন্ট ফেস নিয়ে বলে,”এগুলো আমাকে কি পরিয়েছেন বলেন তো আর আমি এই টাই-টাও বাধতে পারছি না।”
মানিশা মুচকি হাসি দিয়ে একজন ছেলে শপকিপারকে ডেকে বললো যেনো সে আবরারের টাই-টা ঠিক করে দেয়। শপকিপারও সম্মতি জানিয়ে আবরারের টাই ঠিক করে দেয়। ছেলেটা চলে যেতেই আবরারের হাতে ঘড়িটা পরিয়ে দেয় তারপর তার পুরোনো চশমা খুলে সানগ্লাসটা পরিয়ে দেয়। এবং তার চুল গুলো হাত দিয়ে ঠিক করে দেয়। ব্যাস! এতেই আবরারকে দেখার মতো। মানিশা হা হয়ে দেখছে আবরারকে। আবরার বলে,”এভাবে আমায় কেন দেখছেন আমার মুখে কি কালি বা ময়দা লেগেছে?”
মানিশা ফিক করে হেসে দিয়ে বলে,”তা কেন লাগতে যাবে আপনার দিকে তাকাতে পারিনা?”
– জানিনা তবে আমার তাই মনে হচ্ছিলো।
– ওকে আমি আপনাকে দেখাচ্ছি আমি ঠিক কি দেখছিলাম।
বলেই আবরারকে টেনে আয়নার সামনে এনে দাঁড় করায়। আবরার নিজেকে নিজেই দেখে শকড! এটা কি সে নাকি অন্যকেউ একদম চেনা যাচ্ছে না। মানিশা পাশে থেকে মুচকি হেসে বলে,”নতুন আপনিটার সাথে নতুনভাবে পরিচিত হোন। সাধাসিধে হয়ে চলাটা বর্তমান দুনিয়ায় অনেক টাফ। নিজেকে শক্ত করে ফেলুন এবং ভেতরের নিজের অনুভূতি সম্পর্কে জানুন। কারো সামনে আপনি যদি নিজের দুর্বলতা প্রকাশ করেন সে অবশ্যই আপনার পিঠে ছুড়ি ঢুকাতে সময় নিবে না। সবাই আপনার সরলতার সুযোগ নেবে। মনে রাখবেন সবাই আপনার মতো ভালো মানুষ না, যে যেমন তার সাথে তেমনটাই ব্যবহার করুন। অন্যায় সহ্য করা এবং করা দুটোই সমান অপরাধ। আশা করি বুঝতে পেরেছেন?”
আবরার মনোযোগ দিয়ে মানিশার কথাগুলো শুনলো। যখন ছুড়িঘাতের কথা শুনলো তখনই মুখ গোমড়া করে ভাবে সত্যি-ই তো এতোটা দিন তার সরলতার জন্যই তাকে এতোটা দিন কতো যুদ্ধ করতে হয়েছে। নাহ এখন থেকে সে হারবে না এবং কাউকে তার সরলতা দেখাবে না। এমন কি নিজের মানুষদেরও না যারা এতোদিন তাকে কষ্ট দিয়েছে। মানিশা আবরারের দিকে তাকিয়ে আছে তার উত্তরের আশায়। আবরার তখনই সেখান থেকে সরে এসে কাউন্টারে গিয়ে বলে,”এসবকিছুর বিল কতো হয়েছে?”
কাউন্টার থেকে বিল জেনে নিয়ে তার বাটন ফোন দিয়ে কাকে যেনো তার একাউন্টে টাকা ট্রান্সফার করতে বলে। মানিশা অবাক হয়ে আবরারের দিকে তাকায়। মানিশা আবরার সম্পর্কে ভেবেছিলো কি আর করলো কি? আবরারের আরেকটা ফোন আসতেই সে এটিএম কার্ড দিয়ে বিক পে করলো সাথে আরও কিছু নিজের জন্য নিলো। তারপর মানিশাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ফোনের শোরুমে ঢুকে একটা ভালো মানের ফোন কিনে শপিং থেকে চলে এলো। মানিশা অবাক হয়ে বলে,”আপনি বুঝলেন কি করে আমি আপনার জন্যই এগুলো কিনতে চেয়েছিলাম!”
– আমাকে যতোটা বোকা ভাবো ততোটাও নই।
আবরারের এমন পরিবর্তন দেখে মানিশা যেনো আকাশ থেকে পরলো।
অনেকক্ষণ পর মানিশা বলে,”পার্টিতে যাবেন আমার সাথে?”
আবরার মাথা নাড়ায়।
★
ঘুম থেকে ওঠার পর থেকেই রুহি জ্বালিয়ে চলেছে পার্টিতে যাওয়ার জন্য আর ওদিকে আলিজা রোজা ফোন দিয়ে দিয়ে। ৩টা আমাকে পাগল করেই চলেছে। এদিকে মাকেও উল্টাপাল্টা বুঝিয়েছে এখন মাও জোর করছে সাথে খালামনিও। তো আর কি করার পার্টিতে যেতে রাজি হলাম। বিকালে আমি সাধারণ একটা কূর্তি পড়ে হিজাব পরে নিলাম। পার্টিতে যাওয়ার একদম মুড নেই তবুও আমি বাধ্য। ওদিকে রুহি ড্রেস দিয়ে পুরো বিছানা ভরে ফেলেছে। এতে প্রচুর বিরক্তি লাগছে। ১ঘন্টা লাগিয়ে একটা ড্রেস চয়েস করে পড়েছে এখন সে মেকাপে বিজি। এমন সময়ই হঠাৎ জোহানকে রেডি করে নিয়ে এসে বলে,”সানিয়া জোহানকেও সাথে করে নিয়ে যা।”
আমি অস্ফুট সুরে একপ্রকার চেঁচিয়ে বলে,”ওয়ায়াট!! পার্টিতে তোমার এই গুনোধর ছেলেকে নিয়ে যাবো হাউ?”
– তুই ওরে নিয়ে যাবি মানে নিয়ে যাবি ব্যাস!
– কিন্তু মা…
– কোনো কথা না তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিচে আয়।
জোহান দাঁত কেলিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আম্মুর সাথে চলে গেলো। এদিকে আমি রেগেমেগে বোম। রুহিকে রেগে বলি,”তুই কি বিয়ে করতে যাচ্ছিস যে এতো সেজে যাচ্ছিস?”
– উফ আপু এমন করো কেন শেষই তো হয়েছে প্রায়।
– অসহ্য!
পার্টিতে অবশেষে জোহানকে নিয়েই আসতে হয়েছে। আশেপাশে অনেক মানুষ আর পার্টিটা একটা ক্লাবে করা হয়েছে। রোজাকে দেখতেই রোজা আমাদের নিয়ে আরেকদিকে নিয়ে গেলো। সেখানে আয়ায়সহ সকলেই ছিলো আলিজাও। আয়াফকে দেখে আরেকদফা ক্রাশ খেলাম এই ছেলেটা এত্তো কিউট কেন? আয়াফ আমাকে দেখে মুচকি হেসে আমার সামনে এসে বলে,”ওয়েলকাম!”
আমি থ মেরে আগের জায়াগতেই দাঁড়িয়ে আছি আমার মুখে কোনো কথা নেই।
চলবে!!!
(গঠনমূলক মন্তব্যের প্রত্যাশায় রইলাম)