#Crush_Villain
#লাবিবা_ওয়াহিদ
|| পর্ব ২১ ||
আবরার শান্ত দৃষ্টিতে মানিশার দিকে কিছুক্ষণ তাকুয়ে থাকে তারপর বলে,”তাহলে যখন আমি প্রস্তাব রাখলাম তখন কেন রাজি হলে না? আর এখন কি এমন হলো যে এতো সহজে রাজি হয়ে গেলে?”
মানিশা সাথে সাথেই মাথা নিচু করে ফেলে। তারপর বলে,”আমি চাইনি আপনি আমার মতো একজন ধর্ষিতা কে বিয়ে করে নিজের লাইফ হ্যাল করুন! আমি চাইনি আমার গায়ে লাগা কলঙ্ক আপনার গায়ে লাগুক! আপনি পূর্বে অনেক কষ্ট করেছেন কি করে পারতাম আপনার খুশিতে জল ঢেলে দিতে? আপনাকে দেয়ার মতো আমার কাছে কিছুই অবশিষ্ট নেই।”
আবরার নিজেকে শান্ত করে মানিশার পাশে গিয়ে বসে তারপর দুইহাত দিয়ে মানিশার দু’গাল ধরে মাথা উচ্য করে। তারপর নিজের কপালে সাথে মানিশার কপাল লাগিয়ে চোখ বুজে ফেলে। মানিশাও চোখ বুজে আবরারের নিঃশ্বাসের শব্দ শুনতে থাকে। আবরার ঠান্ডা কন্ঠে বলা শুরু করে,”আমার পাশে যখন কেউ ছিলো না তখন আল্লাহ আমার পাশে কাউকে দাঁড়ানোর জন্য তোমায় আমার কাছে পাঠিয়েছিলো। তুমি আমায় সঙ্গ দিয়েছো, বন্ধুত্বপূর্ণ একটা মিষ্টি সম্পর্ক উপহার দিয়েছিলে, তুমি আমায় সাহস জুগিয়েছিলে সরলতার পিছের রূপটা আমার সাথে যারা অন্যায় করেছে তাদের দেখাতে, তাদের বিরুদ্ধে উঠে দাঁড়াতে, ভরসা জুগিয়েছে নিজের প্রতি, চিনিয়েছো এই স্বার্থপর দুনিয়া। কি করে তোমাকে জীবনসঙ্গী না করে থাকি বলো? তোমার মতো করে কেউ-ই কখনো আমায় বুঝেনি। তুমি আমারটাকা প্যসা খুঁজোনি! যদি খুঁজতে তাহলে সেই ঢিলা ফতুয়া পরিধান করা অবস্থায় আমার পাশে দাঁড়াতে না। আর তোমার অতীত! তুমি ধর্ষিতা তো নিজের ইচ্ছায় হওনি তোমাকে জোর-জবরদস্তি করা হয়েছিলো! আর তোমার অতীত কি তা আমি কখনো জানতে চাইনি আর জানতেও চাইবো না! আমি শুধু আমার আগামীদিন গুলো তোমার সাথে কাটাতে চাই! আমরা পবিত্র বন্ধনে জড়াতে চাই। ভালোবাসি যে আমি তোমায়! বড্ড ভালোবেসে ফেলেছি দয়া করে নিজের অতীত আমাদের মাঝে টেনে এসে আমায় দূরে সরিয়ে দিয়ো না। বড্ড কষ্ট হয়।”
মানিশা ছলছল দৃষ্টিতে আবরারের দিকে তাকিয়ে কাঁপা কাঁপা এবং মৃদ্যু গলায় বলে,”আ.. আই লা.. লাভ… ইউ আবরার!”
আবরারও আস্তে করে বলে,”আই লাভ ইউ টু, আই কান্ট লিভ উইদাউট ইউ!”
★
অবশেষে মানিশা এবং আবরারের বিয়ে সম্পূর্ণ হয়। তাদের বিয়ের সাক্ষি ছিলো মানিশার সকল বন্ধুরা সাথে সানিয়া, আলিজা আর রোজা। তখন নেহাল মানিশাকে ফোন করেছিলো। নেহাল বলেছিলো,”ওহ বেইবি আই এম ওয়েটিং ফর ইউ ডার্লিং! ভার্সিটি থেকে বের হও আজই আমরা দুজন মিলে এঞ্জয় করবো! কাম বেইবি কাম!”
এই কথাতেই মানিশা ভয় পেয়ে যায় তাই সে আবরারকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। কিছুদিন পর মানিশা আর আবরার হেসে হেসে কথা বলতে বলতে যাচ্ছিলো ওমনি নেহাল মানিশার সামনে এসে রাগান্বিত কন্ঠে বলে,”আমি বলেছিলাম না আমার সাথে মিট করতে এখন আবার কোন নাগর নিয়ে ঘুরছো তুমি?”
নাগর কথাটায় আবরারের রাগ চেপে বসে। সে বেশ ভালোভাবে বুঝে নেয় এটাই নেহাল আর তার জীবনসঙ্গিনীর কালো অতীতের বড় কারণ! আবরার সাথে সাথে নেহালের ডান চোখ বরাবর গুসি দেয় আর নেহাল ছিটকে পরে চোখে হাত দিয়ে। মানিশা আবরারকে থামিয়ে দেয়। তাই সে নেহালের গায়ে হাত না তুলে চেঁচিয়ে বলে,”মাইন্ড ইউর ল্যাঙ্গুয়েজ! উই আর হাসবেন্ড ওয়াইফ সো মুখ সামলে কথা বলবি! আর তোর মুখ থেকে কি-ই বা এক্সেপ্ট করা যায়। এনিওয়েস! তোরে যদি ওর ধারে কাছেও দেখি না তাহলে তোরে শেষ করে দিতে দু’বারও ভাববো না চলো মানিশা!”
বলেই আবরার মানিশার হাত ধরে টেনে নিয়ে অন্যদিকে চলে গেলো। নেহাল সেখানে বসেই চোখে হাত বুলাতে বুলাতে হেসে বলে,”নো চিন্তা বস! মার খাওয়ার ইচ্ছা নাই আমার তার চেয়ে বরং আরেকটা ফুল খুঁজে নিবো! আর এমনিতেও তোমার ফুলের মধু খাওয়া আমার শেষ!”
বলতে বলতেই সামনে তাকায় এবং দূরে দেখে রোজাকে। রোজাকে দেখে মুচকি হাসলো নেহাল! অনেকদিন ধরে রোজাকে পটানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে নেহাল কিন্তু কিছুতেই এই মেয়ে পটছে না। কি যে করবে কে জানে। আপাতত তার বাসায় যাওয়া উচিত ভেবেই নেহাল নিজের ফ্লাটের দিকে রওনা হলো।
ফ্লাটে ঢুকে দেখে আরাভ জুরাইজ সোফায় বসে আছে। নেহাল আরাভ জুরাইজকে দেখে মুচকি হাসে তারপর বলে,”আরে ডেড! তোমার ওই অকর্মা ছেলেকে ছেড়ে হঠাৎ আমার কাছে আসলে যে? ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিলো নাকি?”(হেসে)
– শাট আপ নেহাল! এন্ড আমি তোমার বাবা নই কয়বার বলবো?
– তো আমার মা মারা যাওয়ার পর আপনি কেন এতো আমার খাতির করেন? নিশ্চয়ই আপনি আমার বাবা সো… যাইহোক যতোই মিথ্যা বলুন না কেন আমি জানি আপনি-ই আমার বাব!
আরাভ জুরাইজ একটা দীর্ঘঃশ্বাস ছাড়েন। এই ছেলেকে আজ অব্দি বুঝাতে পারলো না সে তার মায়ের আপন ভাই সম্পর্কে তার মামা লাগে। কিন্তু এই ছেলেও যে নাছোড়বান্দা আরাভ জুরাইজকেই তার বাবা ভেবে বসে আছে। নেহাল হেসে বলে,”আচ্ছা ডেড তোমার ওই অহংকারী বউ কি তোমার সম্পত্তি লুফে নিয়েছে? নিতেও পারে স্বাভাবিক!চলো বাপ বেটা মিলে ওই বাড়ি আক্রমণ করি কি বলো?”(হেসে হেসে)
– নেহাল!!
বলেই আরাভ জুরাইজ হাত উঠালো কিন্তু চড় মারতে পারলেন না। চড় মারার আগেই তার চোখের সামনে তার নিষ্পাপ বোনটার চেহারা ভেসে উঠেছে। নেহাল আগের মতোই হেসে হেসে বলে,”আমি জানি তো তুমি আমায় মারতে পারোনা কারণ তোমার ১ম বউয়ের একটামাত্র ছেলে বলে কথা! যাইহোক আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি তারপর দুই বাপ বেটা মিকে ওই বাড়ি আক্রমণ করবো! জাস্ট টেন মিনিট ডেড!”
বলেই নেহাল দৌড়ে নিজের ঘরে চলে গেলো। আরাভ জুরাইজ ধপ করে সোফায় বসে ভাবতে লাগে নেহালের মেন্টালি প্রব্লেম দিনদিন বেড়েই চলেছে। তার একটাই কারণ ছোট থেকে সে অনেক একাকিত্ব সময় কাটিয়েছে ভালোবাসা বলতে কারো কাছেই পায়নি। অতিরিক্ত একঘেয়ে থাকায় আজ তার এই অবস্থা। তার অজান্তেই নেহাল আরাভ জুরাইজকে বাবা ধরে বসে আছে তার ফলে আরাভ জুরাইজের ওয়াইফ এবং আয়াফের প্রতি আরও তীব্র ক্রোধ তার ব্রেইনে আরও বেড ইফেক্ট ফেলেছে। আরাভ জুরাইজ নেহালকে কিছু বলেনা কারণ সে নিজেই সাইকোলোজিস্ট এবং নেহালের চিকিৎসা তিনি নিজ হাতে করছেন।
এসব ভেবেই দীর্ঘ একটা শ্বাস নেয় আরাভ জুরাইজ। জানেনা নেহাল আদৌ সুস্থ হবে কিনা কারণ এখন নেহালের মেন্টালি প্রব্লেম সীমানার বাইরে চলে গেছে।
★
– আলিজা!
– জ্বী ভাইয়া কিছু বলবেন?
– তোমার সাথে সানিয়াকে দেখছি না যে? আজ কি আসেনি?
– নাহ।
– কেন?(ভ্রু কুচকে)
– আসলে ভাইয়া সানিয়ার ছোট থেকেই একটা স্বপ্ন ছিলো যে সে নিজের একটা লাইব্রেরি থাকবে। এন্ড তার কাজ গত ৭মাস আগে ধরেছিলো। কাজ এখন প্রায় শেষের দিকেই ছিলো কিন্তু……
– কিন্তু.?
– হুট করেই কিছু সমস্যার কারণে লাইব্রেরির কাজ বন্ধ হয়ে যায়। তার জন্য সে খুব ডিপ্রেসড! নিজেকে ঘরবন্দি করে রেখেছে তাই আজ ভার্সিটি আসবে না।
– ওহ আচ্ছা ঠিক আছে তুমি যাও ক্লাসে।
আলিজা সম্মতি জানিয়ে চলে গেলো আর আয়াফ সেখানে দাঁড়িয়ে কি যেনো একটা ভাবলো তারপর সানিয়াকে কল করলো!
বেলকনিতে বসে নিজের গাছগুলোতে হাতবুলাচ্ছি মন খারাও করে। হঠাৎ ফোন আসলো। আমি উঠে দাঁড়িয়ে রুম থেকে ফোন আনতে গেলাম। ফোনের শব্দ “ক্রাশ ভিলেইন” নামটা ভেসে উঠতেই আমার মাথায় রাগ চড়ে বসলো। এর জ্বালায় কি একদিনও ভার্সিটি অফ করতে পারবো না অসহ্য! তবে আজ যতো যাইহোক আমি কিছুতেই বাসা থেকে বের হবো না হুহ! মিগের মুল্লুক পাইসে নাকি আমাকে এএএহ তার এক দুই কথার থ্রেডে বুঝি ভার্সিটি চলে যাবো? একদমই না!!
এভাবে প্রায় কয়েকবার ফোন করলো কিন্তু আমি রিসিভ করলাম না। হুট করেই টুংটাং শব্দ হলো আমি ফোন হাতে নিয়ে দেখলাম ভিলেইন টার মেসেজ। মেসেজে ক্লিক করে দেখি ভিলেইন টার থ্রেড! যা লিখেছে তা হলো,”Jodi aj Varsity na asho tahole tomar basay giye tule anbo mone rekho!!”
আমিও ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে নিজের মনে মনে ভাবি, এএএএহ আইসে আমার থ্রেডওয়ালা। তোমার থ্রেডে আমি ভয় পাইনা চান্দু তাই এইসব কইয়া লাভ নাই হুহ! আবার আরেকটা মেসেজে বললো,”5 Min er moddhe tmr phn ba msng a ‘Hea’ jeno shunte pai nyto…..janoi to ki korbo!”
এবারও দেখেও না দেখার ভান করে ফোনটা টেবিলের উপর রেখে বেলকনিতে এসে নিজের গাছের ফুলগুলো থেকে নকে ঘ্রাণ নিতে থাকি। এভাবে অনেকক্ষণ কেটে যায় হঠাৎ গাড়ির হর্ন কানে আসে আর আমি চট করে উঠে দাঁড়াই। বেলকনির রেলিং ধরে নিচের দিকে তাকাতেই দেখতে পেলাম আয়াফের গাড়ি। এর মানে কি সত্যি সত্যি-ই চলে আসছে আল্লাহ! এখন কি হবে মা বা আমার শ্রাদ্ধেয় চাচিরা যদি দেখে ফেলে কেলেঙ্কারি ঘটে যাবে। হঠাৎ-ই ফোন বাজার শব্দ কানে আসতেই দৌড়ে রুমে আসি এবং ফোন রিসিভ করি। আয়াফ সাথে সাথে বলে,”তোমার বাড়ির নিচে পর্যন্ত তো চলে আসলাম এখন কি উপরে এসে শাশুড়ীকে এসে সালাম দেবো!”
– ওই একদম না আর খবরদার আমার মাকে শাশুড়ী বলবেন না!
– আজিব আমি কখন বললাম তোমার মা আমার শাশুড়ী? আমি তো বললাম যে…
আমি কপাল চাপড়ে বলি,”হইসে আপনার এই ফালতু লজিক শোনার ইচ্ছা বা সময় কোনোটাই আমার নাই!”
– তাহলে তাড়াতাড়ি আসো নয়তো জানোই তো আমি কি জিনিস! যা বলি তা আমি করেই ছাড়ি!
আমি ফোন কেটে রাগে ফসতে লাগলাম! হঠাৎ মাথায় আইডিয়া আসে তারপর শয়তানি একটা হাসি দিয়ে মেসেজ করে বলি,”আপনি যান আমি আসছি!”
তৎক্ষনাৎ মেসেজ আসলো,”Tomake niyei ami zabo!”
– আচ্ছা তাহলে এই গলি থেকে বেরিয়ে রাস্তার মোড়ে গিয়ে দাঁড়ান কারণ এখানে আমার কোনো রিলেটিভ আমাকে আপনার সাথে দেখলে সমস্যা হতে পারে।
– Okay as your wish!
আমার মুখে এক চিলতে হাসি! এই ভিলেনটার দফারফা করেই আমি ছাড়বো আজ নয়তো আমার নাম সানিয়া নয়!
আমি বেলকনি থেকে উঁকি দিয়ে দেখলাম ভিলেনটা চলে যাচ্ছে নাকি? হ্যাঁ সে যাচ্ছে ইয়েস!
চলবে!!!
(গঠনমূলক মন্তব্যের প্রত্যাশায় রইলাম।)