Crush Villain Part-23

0
7882

#Crush_Villain
#লাবিবা_ওয়াহিদ
|| পর্ব ২৩ ||

আয়শা চুপিচুপি খুবই সাবধানে বাসা থেকে বেরিয়ে সিঁড়ির দিকে দিলো এক দৌড়! কোনোদিকে না তাকানোর ফলে জোহানের সাথে ধাক্কা খেয়ে দুইজন একসাথে ছিটকে এদিক সেদিক ফ্লোরে পরে গেলো। জোহান কোমড়ে হাত দিয়ে রাগি স্বরে বলে,”কোন চুন্নি রে আমার কোমড় কোম্পানির হাড় ভাঙলো?”

বলেই সামনে তাকালো এবং দেখলো আয়শা। আয়শা ততক্ষণে উঠে দাঁড়িয়েছে। জোহান রেগেমেগে বলে,”ওই ফইন্নি চোখে দেখোস না? এটা কি আকাশপথ পাইসোস যে এমন অলেম্পিকের মতো দৌঁড়াস!”

– জোহান তোরে আমি আগেও বলসি আমি তোর অনেক সিনিয়র তাই ভদ্রভাবে কথা বলবি!

জোহান উঠে দাঁড়িয়ে নিজের প্যান্ট ঝাড়তে ঝাড়তে বলে,”তুই কি আমার আপুর সমান?”

আয়শা ডানে বামে মাথা নাড়িয়ে না বলে।

– তো? তুই আমার থেকে ৫ বছরের সিনিয়র তো কি হইসে আমি এভাবেই তোর সাথে কথা বলবো।তোর মতো মাথামোটা এতো বড় কেন যে হলো তাই বুঝে পাই না।

আয়শা ঠোঁট উলটে দাঁড়িয়ে আছে। জোহান আয়শার ভাবভঙ্গি দেখে বিরক্ত হয় তাই বিরক্তিসুরে বলে,”এভাবে কেন দৌঁড়াচ্ছিলি?”

মুহূর্তেই আয়শার চেহারা ভাব বদলে যায়। সে কিছুটা লজ্জাসুরে বলে,”জানিস ভাইয়া আমাদের বাসায় একটা সুন্দর ছেলেকে এনেছে তাকে দেখে আমি ফিদা হয়ে গেছি।”

জোহান ভ্রু কুচকে বলে,”এইটার সাথে দৌড়ানের কি কাজ?”

– আরেহ লজ্জায় থাকতে পারছিলাম না বাসায় তাই তোদের বাসাতে যেতে নিচ্ছিলাম।

জোহান কি যেনো ভাবনা চিন্তা করলো। তারপর বলে,”চল তো দেখি কোন কিউট ছেলে আসছে যে এই জোহানের থেকেও হ্যান্ডসাম!”

বলেই জোহান আয়শার সাথে ওদের বাসার দিকে যেতে লাগে।

মিসেস সেলিনা খাবারের ট্রে টা আয়াফের সামনে রাখলো। আয়াফ তখন ফোনে গেমস খেলছিলো মিসেস সেলিনাকে দেখে সে ফোনটা পকেটে পুরে একটা মিষ্টি হাসি দিলো। মিসেস সেলিনাও মৃদ্যু হেসে এদিক সেদিক তাকিয়ে দেখলেন তার ছেলে আছে কিনা? না নেই এ-ই সুযোগ আয়াফের সাথে ভাব করার।

– নেও বাবা পিঠা খাও আমার নিজের হাতের তৈরি।

– ওহ ধন্যবাদ।

বলেই পিঠায় হাত দিতে যাবে তখনই হঠাৎ বলে উঠে,”আচ্ছা আন্টি আপনি যখন হাতে বানিয়েছিলেন এর আগে কি হাত ধুয়েছিলেন?”

মিসেস সেলিনা থতমত খেয়ে বসে রইলো। কি বলবে কি করবে তার ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গেছে। এই সময়ে এমন অদ্ভুত একটা কথা বলবে মিসেস সেলিনা ভাবতেও পারছে না। আয়াফ পিঠা ছেড়ে অন্য স্নেক্স খেতে লাগে। মিসেস সেলিনা নিজেকে সামলে বলে,”তা বাবা তুমি কি করো?”

– প্রেম করি।(ডাইরেক্ট জবাব)

মিসেস সেলিনা চোখদুটো বড় বড় করে ফেলে। এই ছেলের লাজ লজ্জা বলতে কি কিছু নেই? নাহ বড়লোক বাবার ছেলে এমন তো হতেই পারে তবে ব্যাপার না পরে সব ঠিক হয়ে যাবে। এসব ভেবে নিজেকে স্বান্তনা দেয় মিসেস সেলিনা। আবারও হাসিমুখে বলে,”তা এখন কোথা থেকে আসলে?”

– এক গার্লফ্রেন্ডের সাথে মিট করে আপনাদের এখানে আসলাম। আগের মতোই স্বাভাবিক ভাবে উত্তর দিলো আয়াফ।

মিসেস সেলিনা আবারও বোকা বনে গেলো তবে সে কিছুতেই হাল ছাড়বে না বলেই ঠিক করে রেখেছে। মিসেস সেলিনা আবার বলে,”তা বাবা আমার মেয়েটাকে তোমার কেমন লাগে?”

আয়াফ খাওয়া থামিয়ে ভ্রু কুচকে বলে,”আপনার কোন মেয়ে?”

– ওইযে যে দরজা খুলে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলো?

– ওহ ওইটা বুঝি আপনার মেয়ে?

– হ্যাঁ!(উত্তেজিত কন্ঠে) দেখেছো আমার মেয়েটা কতো সিম্পল সু…

-(বলতে না দিয়ে) আসলে আমি তো ভেবেছিলাম আপনাদের বাসায় কাজ করে।

আয়াফদের কথার মাঝে সাজেদ ফ্রেশ হয়ে ড্রইংরুমে আসছিলো তখন এসব শুনে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে সে। হাসতে হাসতেই বএল,”যা বলেছো ভাই!”

মিসেস সেলিনা রাগি দৃষ্টিতে সাজেদের দিকে তাকিয়ে আছে। শেষে কিনা তারই বাড়িতে এসে কেউ এভাবে তাকে আর তার মেয়েকে এমন মারাত্তক অপমান করবে ভাবতে পারেনি। রেগে হনহন করে ভেতরে চলে গেলো মিসেস সেলিনা। সেলিনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আয়াফ ডেবিল হাসি দেয়।

মেইন দরজা আস্তে করে খুলে শুধু মাথা বের করে জোহান লিভিংরুমে উঁকি দিদয়ে চলেছে। আর তার উপরে আয়শা। জোহান ভ্রু কুচকে খুঁজতে খুঁজতে আয়াফকে দেখে দরজাটা ধরাম করে খুলে আয়াফের দিকে দিলো দৌড়! আর দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো আয়শা। পুরো খোলার কারণে বেচারী হুমড়ি খেয়ে পরে গেলো। জোহান সোজা গিয়ে আয়াফের গলা জড়িয়ে ধরে বলে,”আয়াফ ভাইয়া তুমি কেমন আছো?”

– আরে শালাবাবু ইয়ে মানে জোহু! আমি তো জোস আছি তুমি কেমন আছো?(হেসে)

– আমিও ভালো।

সাজেদ ভ্রু কুচকে বলে,”জোহান তুই আয়াফ ভাইকে চিনিস? আর আয়াফ ভাই?”

– ও হ্যালো আমি চিনবো না তো কি তোমার কুটনি মা চিনবে? ওই বুড়ী জানো আজও আমার আপুকে অনেক কথা শুনাইসে?

সাজেদ অবাক হয়ে বলে,”বলিস কি রে?”

– তো কি? আমার মার কাছে আমার আপুর নামে যা নয় তাই বলেছে এমন কি আপুকেও অনেক কিছু বলেছে যার জন্য আপু সারাদিন ধরে কান্না করেছে।

এই কথা শুনে আয়াফের বুকটা ধুক করে উঠে। এই মহিলারে উচিত শিক্ষা দিতে পারলে ভালো হতো। সাজেদ মুহূর্তেই রেগে যায় এবং নিজের বোনকে ডাকে,”আয়শা?”

আয়শা উঠে দৌড়ে হাঁপাতে হাঁপাতে বলে,”জ্বী ভাইয়া?”

– সানিয়াকে ডেকে আন?

– সাজেদ ভাইয়া আমি গিয়ে আপুকে ডেকে আনি তোমার বোন তো পুরোই মাথামোটা এরে কোন কাজ দিয়ে লাভ হবে না বরং গরবোর হবে।

– আচ্ছা তুই-ই যা।

জোহান অনুমতি পেতেই বাসা থেকে বেরিয়ে যায়। সাজেদ তার বোনকে নিজের ঘরে পাঠিয়ে দেয়। আয়ায় এই ফাঁকে বলে,”সাজেদ একটা কথা বলতাম!”

– হ্যাঁ বলো ভাইয়া।

– আসলে….

আয়াফ যে সানিয়ার পরিচিত এবং আজকের ঘটনা কিছুটা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সাজেদকে বুঝিয়ে দিলো।

– তাই সানিয়ার গায়ে আমার জ্যাকেট দেখে তোমার মা সানিয়াকে যা নয় তাই বলেছে।

এবার যেনো সাজেদের রাগ আসমানে চড়ে গেলো। আয়াফ বুঝেছে তার যা হওয়ার হয়ে গেছে এখন এখান থেকে জলদি কেটে পরতে হবে। আয়াফ ব্যস্ততা দেখিয়ে তাড়াতাড়ি বাসা থেকে চলে গেলো। আজ তো সাজেদ বাসায় তুলকালাম বাধিয়ে ছাড়বে যা বোঝা গেলো।

আমি টেবিলে বসে বইয়ের দিকে একমনে তাকিয়ে মনোযোগ দিয়ে পড়ার চেষ্টা করছিলাম এমন সময়ই জোহান দৌড়ে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে বলে,”আপু চল সাজেদ ভাইয়া তোকে ডাকছে!”

– কেন?(ভ্রু কুচকে)

– আয়াফ ভাইয়া এসেছে তাই।

– হোয়াট! আয়াফ আসছে মানে কি?

– আরে হ্যাঁ আসছে তো তুমি চলো।

বলেই টেনেটুনে বাসা থেকে বেরিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামতে লাগে। জোহান কি যেনো একটা ফেলে এসেছে বলে উপরে চলে গেলো। আমিও নিচে নামতে নামতে হঠাৎ কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে নিচে পরে যাচ্ছিলাম তখনই কেউ আমায় ধরে ফেলে। সামনে চোখ মেলে তাকাতেই দেখলাম আয়াফ দাঁত কেলিয়ে তার সামনে দাঁড়িয়ে! আয়াফকে দেখে আমি তাড়াতাড়ি তার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে দূরে সরে দাঁড়ালাম তারপর মৃদ্যু সুরে বলি,”চোখ কি পকেটে ঢুকিয়ে হাঁটেন?”

আয়াফ পকেট থেকে ফোন বের করে বলে,”আমার পকেটে তো ফোন আছে তুমি চোখ কোথায় পেলে?”

– তাহলে ধাক্কা দিলেন কেন?

– প্রমাণ কি?(ভ্রু কুচকে)

– উফফ আপনার সাথে কথা বলাই বোকামো রখন এটা বলেন এখানে কি করতে আসছেন?

– তোমার সম্মানিত চাচীকে টাইট দিতে আসছি। সাহস কম না তোমাকে ওইসব আজেবাজে কেন বলবে?

আমি অবাক হয়ে তাকাই আয়াফের দিকে। সে জানলো কি করে চাচীর ব্যবহার? আর তার চেয়ে বড় কথা আমার জন্য সে এসেছে? এটা কেমন মোহ তার আমার প্রতি? আগে তো সে আমায় সহ্যই করতে পারতো না এখন এতো কেয়ারিং কোথা থেকে উদয় হলো? তার সাথে আমার কিসের সম্পর্ক স্ট্রেঞ্জ!

– কি হলো কি ভাবছো?

– আপনি জানলেন কি করে…

– সব বলার প্রয়োজন হয়না কিছু কথা অপ্রকাশিত থাকা ভালো।

বলেই আয়াফ চোখ টিপ মারে আমাকে। তারপর উপরের দিকে একবার তাকিয়ে বলে,”তা আমার শশুড়বাড়ি নিয়ে যাবা না? জামাই আদর পেতেউচগে করে তো!”

“আপনার শশুড়বাড়ি গাঙ্গে গেছে সেখানে গিয়ে খুঁজেন এখানে আপনার শশুড়বাড়ি নেই।”

– ওহ তাই বুঝি? সাজেদের বোনের কি যেনো নাম…

– আয়শা?

– ইয়াহ আয়শা! মেয়েটা খুব কিউট ভাবছি ওরেই বউ করে এখানে একটা শশুড়বাড়ি করে ফেলবো!

মুহূর্তেই মাথায় রক্ত চেপে যায়। দৌড়ে আয়াফের কলা চেপে বলি,”ওই বলদটাই আপনার পছন্দ হলো? দুনিয়াতে কি মেয়ের অভাব পরসে? এই বিল্ডিং এ কোনো সুন্দর মেয়ে নাই সো আপনার এই বাড়ির জামাই হওয়ার সখ জীবনেও মিটবে না!”

– তো তুমি কি পেত্নি?

– আবার কথা ঘুরান!

– কই কথা ঘুরালাম সত্যিটাই তো বললাম! তুমি-ই তো বললা এই বিল্ডিং এ সুন্দর মেয়ে নাই তাই হয়তো তুমি পেত্নি!

– আমি বলসি আমি বাদে!!

– উহু তুমি এটা বলোনি!

– ধ্যাত্তেরি মাকরশার জ্বালের মতো কথা প্যাচান অসহ্য!

বলেই চলে আসতে নিচ্ছিলাম ওমনি পেছন থেকে আয়াফ আমার হাত ধরে বলে,”তুমি জানো তুমি কতোটা সুন্দর? তোমার রাগি চেহারা, হাস্যোজ্জ্বল মুখ সবটাই আমার মনে খড়ন করে আছে। তুমি কি জানো তোমায় “সানি” ডাকার পর নিজের মাঝে কতো শান্তি অনুভব করি? তাইতো তোমায় ভালোবেসে ডাকি,”সানি!”

আমি হা করে চোখ বড় করে তাকিয়ে আছি। আয়াফ টেডি স্মাইল দিয়ে একটা চোখ টিপ দিয়ে চলে গেলো। আর আমি সেখানেই খাম্বার মতো করে দাঁড়িয়ে আছি। আয়াফের কথাগুলো কানে যেনো রেডিওর মতো এখনো বেজেই চলেছে। অনেকক্ষণ পর নিজের ধ্যান ফিরতেই আমি উপরে চলে যাই।

আয়াফ হাসতে হাসতে গাড়ি চালাচ্ছে। তখন সানিয়াকে ইচ্ছা করেই সে ধাক্কা দিয়েছিলো তাইতো সানিয়া তার প্লান মাফিক হুঁমড়ি খেয়ে পরতে নিচ্ছিলো।

ঘুমানোর আগে মায়ের সাথে টিভি দেখছিলাম এমন সময়ই বাবা এসে মাকে বলছে,”বড় ভাইয়ের বাসায় কেমন চেঁচামেচি হচ্ছে ভাড়াটিয়া রা বললো।”

– কি নিয়ে আবার চেঁচামেচি হবে আবার?(নিলুফা)

– কি জানি।

জোহানও তখন অন্য সোফায় বসে ছিলো। যখন চেঁচামেচির কথা শুনে তখনই মাঝে মাঝে বাম হাত ঢুকিয়ে বলে,”ওই মহিলা যে আপুকে বকেছিলো তাই ভাইয়া আর জেঠু মিলে চাচীমার গুষ্টি উদ্ধার করে ছাড়ছে।”

ভ্রু কুচকে বাবা বলে,”সানিয়াকে কিছু বলেছিলো নাকি?”

মা একবার আমার দিকে তাকিয়ে বলে,”হুম। তোমার ভাবী তো সারাক্ষণ আমার মেয়ের পিছেই পরে থাকে৷ আজও বিনা দোষে বকেছে আমাদের মেয়েকে।”

– ওহ তাহলে সে জন্যই হয়তো তাদের বাসায় ঝামেলা হয়েছে। যাক ব্যাপার না ভাই-ই ভাবীকে যা বলার বলবে আর মা(আমাকে) তুমি মন খারাপ করিও না তোমার চাচীর কথায় কেমন?

আমি মুচকি হেসে মাথা নাড়ালাম। বাবাও উত্তরে মৃদ্যু হেসে চলে গেলো নিজের ঘরের দিকে। আমি আবারও টিভি দেখায় মনোযোগ দিলাম।

চলবে!!!

(গঠনমূলক মন্তব্যের প্রত্যাশায় রইলাম।)