Crush Villain Part-26

0
7644

#Crush_Villain
#লাবিবা_ওয়াহিদ
|| পর্ব ২৬ ||

সানিয়া ফোনের উপর ফোন দিয়েই চলেছে আয়াফকে কিন্তু আয়াফের ফোন সুইচড অফ। ৩ জন মিলে মেইন রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে। একটা বাস তো দূরে থাক একটা খালি সিএনজি পর্যন্ত পাচ্ছে না। এখন যাবে কি করে সেটাই ভাবছে। এদিকে আয়াফকেও ফোনে পাচ্ছে না। পেলেও হয়তোবা সে এসে পিক করতো তাদের।আলিজা ফোনে কথা বলছে, “তাড়াতাড়ি আসো আমরা আমাদের বাসার মোড়েই আছি।”

বলেই আলিজা ফোন রেখে বলে,”দোস্ত চিন্তা করিস না নীলসহ সবাই আমাদের এখান থেকেই পিক করে নিয়ে যাবে।”

– কিন্তু আয়াফ কেন ফোন ধরছে না?

ওদের কথার মাঝেই দুইটা প্রাইভেট কার ওদের সামনে এসে দাঁড়ায়। প্রথম গাড়ির সামনের গ্লাস খুলে নীল বলে উঠে,”তাড়াতাড়ি উঠো তোমরা!”

সানিয়া দেখলো পিছে আরও একটা গাড়ি এসে থামলো সেটায় আবরার আর মানিশা আছে। মাঝের টায় যাহির, তিনয় আর নিশি। সামনের টায় শুধুই নীল। তিনজন একসাথে নীলের গাড়িতে বসে পরে।যতো দ্রুত পৌঁছাতে পারে ততোই ভালো। প্রায় ২০ মিনিট লেগেছে ওদের রোজার বাসায় আসতে। এসে দেখে বাড়িটা কেমন যাকঝমক যেনো বিয়েবাড়ি। অনেক মানুষ যাওয়া আসা করছে। ভেতরে ঢুকে দেখে আয়াফ একজন মধ্যবয়সী লোকের সাথে তর্ক করেই চলেছে। লোকটাকে দেখে সানিয়ার চিনতে অসুবিধা হলো না। কারণ লোকটাই রোজার বাবা। আয়াফের পোশাক কালকের রাতেরই পোশাক যেনো পালটানোর সময় হয়ে উঠেনি তার৷ অদূরেই রোজা কনে সাজে অঝোরে কেঁদেই যাচ্ছে। আয়াফ বলে,”আপনি গুরুজন বলে রোজার সাথে এমন একটা দুশ্চরিত্র ছেলের সাথে বিয়ে দিতে পারেন না!”

– আমি কি করবো না করবো সেটা তোমার থেকে জেনে নেবো না আয়াফ বাবা। তোমার বাবা আমার যতোই বস হোক না কেন রোজা আমার মেয়ে। আর আমি বাবা হিসেবে আমার মেয়ের কোনটায় ভালো আর কোনটায় খারাপ সেটা নাহয় আমি দেখবো।

– আপনি ওর বাবা হলেও ও আমার বোন আর…

– ব্যাস আয়াফ বাবা ব্যাস! অনেক দয়া দেখিয়েছো আমাদের উপর আর দয়া দেখানো লাগবে না। আমরা গরিবরা আজ আছি কাল নেই তাই আমাদের চিন্তা আমাদেরই করতে দাও।

রোজার বাবার সাথে আয়াফ পারলো না। দূরে রোজার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সে কিছুই করতে পারছে না। আয়াফ ভোরে বাসায় ফিরতেই তার মায়ের থেকে সবটা শুনে এখানে দৌড়ে আসে। সেই থেকেই এখনো আয়াফ এখানে। এখন আয়াফ জেনেশুনে কি করে ওই নেহাল নামক চরিত্রহীন ছেলের সাথে নিজের আদরের বোনের বিয়ে দিতে পারবে? সে পারবে না রোজার জীবন নষ্ট হতে দেখতে।

হ্যাঁ নেহালের সাথেই রোজার বিয়ে হচ্ছে। রোজাকে অতিরিক্ত ডিস্টার্ব করায় রোজা রেগে সেদিন দুইটা চড় দিয়ে দিয়েছিলো। চড়ের ঘা নেহালকে পশুতে পরিণত করে ফেলেছে। তাই সে রোজাকে টেনেটুনে রোজার বাড়িতে নিয়ে রোজার বাবা মায়ের পায়ের সামনে ধাক্কা দিতে ফেলে বলে,”আপনার মেয়ে কখন কোথায় কি করছে খবর রাখেন? এই সেই ছেলের সাথে টাইম স্পেন্ড করে, ঘুরাঘুরি করে এমন কি দেখলাম এক ছেলের সাথে একটা বিল্ডিং এ ঢুকছে। জানেন আপনাদের মেয়ে আমার সাথেও মেশার চেষ্টা করেছে এবং আমিও ওর সাথে মিশেছি। এখন আপনাদের সিদ্ধান্ত আপনারা আপনাদের মেয়েকে কি করবেন।”

এসব শুনে রোজা হতবাক হয়ে যায়। কিসব ভুলভাল আজেবাজে কথা বলছে এই নেহাল। রোজার মা রাগে, ক্ষোভে, ঘৃণায় রোজার চুলের মুঠি ধরে ইচ্ছামতো মারধোর করে। রোজা বারবার বলেছিলো “মা আমাকে মেরো না আমি এসব কিছুই করিনি বিশ্বাস করো!” কিন্তু না রোজার মায়ের কান অব্দি কিছুই যায়নি। রোজার বাবা সব শক্ত চোখে দেখছিলো। নেহাল এসব দেখে আড়ালে একটা পৈশাচিক হাসি দেয়। রোজার মা তাকে এতোটাই মেরেছে যে রোজা মার খেয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফ্লোরে পরে থাকে৷ রোজার মা ক্লান্ত হয়ে রোজার সামনে বসে নিঃশব্দে কাঁদতে লাগে। নেহাল হঠাৎ-ই প্রস্তাব দেয়,”আপনারা যদি অমত না করেন তাহলে কালই আমি ওকে বিয়ে করবো ওর কুকর্ম জেনেও। বিশ্বাস করেন ওকে ভালোবেসে আগলে রাখবো বাকিটা আপনাদের সিদ্ধান্ত।”
বলেই নেহাল চলে আসছিলো এমন সময়ই নেহালকে পিছু ডেকে রোজার বাবা বলে উঠেন,”আমরা রাজি আছি। কালই ধুমধাম করে তোমাদের বিয়ে হবে।”

নেহাল শয়তানি হাসি দিয়ে পিছে না ফিরেই বলে,”আয়োজন শুরু করুন আসবো কাল আপনাদের জামাই হতে।”

বলেই নেহাল চলে গেলো। এরপর থেকে নেহালের কোনো খবরই পাওয়া যায়নি।

বিকাল ঘনিয়ে সন্ধ্যা হয়ে আসলো এখনো নেহাল বিয়ে করতে আসেনি। এ নিয়ে আত্নীয়-স্বজন, প্রতিবেশীদের কানাঘুষা শুরু হয়ে যায় রোজাকে নিয়ে। রোজা কাঁদতে কাঁদতে এখন পাথরের ন্যায় বসে আছে। রোজার বাবা উতলা হয়ে আছে নেহাল কেন আসছে না এই ভেবে। হ্যাঁ সেই সকাল সাড়ে দশটা থেকে এখন সন্ধ্যা। নেহাল এখনো আসেনি। সানিয়া বাসায় জানিয়ে দিয়েছে সে এখন রোজার বাসায় এসেছে তাই তার বাসা থেকে আর খোঁজ নেয়নি। আয়াফ তাচ্ছিল্যের সুরে বলে,”এবার দেখলেন তো আপনার সেই সোনার টুকরা জামাই আসলো না, এখন? এখন কি করবেন? একদিনের একটা ছেলে এসে উল্টো পাল্টা বলে গেলো আর আপনারা এসব বিশ্বাসও করে রোজার উপর এতোটা অত্যাচার করলেন। বাহ এই আপনারা রোজার বাবা মা এতোটাই আপনাদের দায়িত্ব ওর প্রতি!”

রোজার বাবা নিজের নিচ কাজের জন্য মাথা নিচু করে ফেললেন। এদিকে পাড়া-মহল্লার এবং আত্নীয়স্বজনের উল্টো পাল্টা কথা তিনি নিতে পারছেন না। তিনি ছলছল চোখে আয়াফকে বলে,”এখন আমরা কি করবো বাবা? আজ মেয়েটার বিয়ে না হলে যে কখনো ওকে বিয়ে দিতে পারবো না। এমনিতেও মেয়েটাকে নিয়ে সবাই কিসব আজেবাজে মন্তব্য করা শুরু করেছে।”

– সেটা আপনার আগে ভাবা উচিত ছিলো চাচা। কিন্তু না আপনি আমাদের কথা শুনেছেন আর না রোজার। নিজের কপাল নিজে চাপড়ান সাথে রোজার জীবনও নষ্ট করে দেন।

রোজার পাশে থাকা রোজার মা ডুকরে কেঁদে উঠে। কি-ই না অত্যাচার করেছে দুইদিন ধরে তাও ওই একটা ছেলের কারণে। এমন সময়ই আরাভ জুরাইজ এসে হাজির। তাকে দেখে আয়াফ হেসে বলে,”আরে পিতাজি আপনি এসেছেন? দেখে যান আপনার বোনের কলিজার টুকরা কিসব অকাজ করে গিয়েছে।”

এখানের পরিস্থিতির কথা শুনে আরাভ জুরাইজ এমনেই দুশ্চিন্তায় শেষ এখন আয়াফের কথা শুনে তার গায়ে কাটা দিয়ে লাগলো। আয়াফ আবার বলে,”অন্যায় করা এবং অন্যায় সহ্য করা একই অপরাধ যা আপনি এই কয়েকটা বছর ধরে করে যাচ্ছেন। কি যেনো বলছিলেন আপনার সেই ভাগিনা মেন্টালি সিক! এতোই যদি ওর মেন্টালি প্রব্লেম তাহলে ওরে বাইরে বাইরে কেন ঘুরতে দেন? দেখতে পাচ্ছেন কতোগুলো মেয়ের জীবন, পরিবার শেষ হয়ে যাচ্ছে। আজ দেখুন না রোজার জীবনটা নিয়ে কিভাবে খেললো!”

আরাভ জুরাইজ দূরে রোজার দিকে তাকালো। রোজার শুকনো মুখ দেখে আরাভ জুরাইজের বুক চিনচিন করে উঠলো। নিজের মেয়ের মতো ভালোবাসে রোজাকে তার এই অবস্থা সহ্য করতে পারছে না। এখন সে সবটা ক্লিয়ার করে ফেলেছে এবং বুঝেছে নেহালকে বাইরে বের করিয়ে সে কতোটা অন্যায় করে ফেলেছে। মুহূর্তে-ই আরাভ জুরাইজের চোখ মুখ লাল হয়ে উঠলো।

সানিয়া আগে এসব হিস্ট্রি না জানলেও সারাদিনে নীল, তিনয়, যাহির এবং মানিশার থেকে সব শুনেছে। শুধু সানিয়া নয় আলিজা আর রুহিও। সানিয়া মন থেকে ঘৃণা করে অনেকটা ঘৃণা করে ওই নেহালকে।রোজার বাবা বলে উঠে,”আচ্ছা এই ছেলেকে পরে দেখা যাবে কিন্তু আমার মেয়ে? মেয়েটার জীবন যে নিজ হাতে নষ্ট করে দিলাম!”

– কিছুই নষ্ট করেননি!(আয়াফ)

– মানে?(অবাক হয়ে রোজার বাবা)

– আজ বিয়ে হবে।(আয়াফ)

– কি বলছো তুমি বাবা? কে বিয়ে করবে রোজাকে?(রোজার বাবা)

আয়াফ আড়চোখে যাহিরের দিকে তাকালো। তারপর বলে,”নীল একটা শেরওয়ানীর ব্যবস্থা কর কোনো প্রশ্ন করিস না!”

আয়াফের কথামতো ঘন্টাখানেকের মাঝে নীল একটা শেরওয়ানী নিয়ে আসে। কেউ কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না আয়াফ ঠিক চাইছে টা কি?

আয়াফ শেরওয়ানী হাতে নিয়ে বলে,”যাহির এটা পরে রেডি হয়ে আয়।”

– হোয়ায়াট! আমি? কিন্তু কেন?

– কারণ রোজাকে তুই বিয়ে করবি!

– পাগল নাকি তুই?

– তুই রোজাকে মন থেকে পছন্দ করিসনি? সত্যি বলবি!

সাথে সাথে যাহির চুপসে গেলো। কি বলবে সে আয়াফ তো আগেই তার মনের কথা জেনে গেছে।

– বল হ্যাঁ কি না?

– হ্যাঁ কিন্তু…

– যেহেতু চাইতি এখন এই সুযোগ হাতছাড়া কেন করবি তুই? পরিস্থিতি আজ রোজার পক্ষে না থাকলেও তোর পক্ষে আছে তাই এই সুযোগ হাতছাড়া করে বোকামি করিস না।

যাহির কিছুক্ষণ ভেবে শেরওয়ানী নিয়ে নীল আর তিনয়ের সাথে একটা রুমে চলে গেলো। রোজার বাবা অবাক হয়ে বলে,”এই ছেলে আমার মেয়েকে বিয়ে করবে?”

– হ্যাঁ চাচা। যাহির আমার বন্ধু এবং অনেক ভালো ছেলে। আজকালকার যুগে ওর মতো ছেলে হাতছাড়া করা বোকামি। ওর মা নেই, ওর বাবা ফরেইনে থাকে তাই এখানে ও একাই থাকে। চিন্তা করবেন না রোজার ভালোই হবে।

রোজার বাবা দীর্ঘঃশ্বাস ছেড়ে বলে,”তুমি যা ভালো বুঝো তা-ই করো আমি আর কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে মেয়ের জীবন বিপদে ফেলবো না।”

বলেই রোজার বাবা আর মা ক্ষমা চেয়ে নেয় রোজার কাছে। রোজা প্রথমে চুপ থাকলেও পরে বাবা মাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়।

অবশেষে সব আত্নীয় এবং পাড়া প্রতিবেশীর মুখে চুনকালি লাগিয়ে রোজা আর যাহিরের বিয়ে সম্পন্ন হলো। ওদের বিয়ের কাজ মিটতেই আয়াফ নীল আর তিনয়কে বললো যেনো সানিয়া, রুহি আর আলিজাকে নিজেদের বাসায় পৌঁছে দেয়। ওরাও আয়াফের কথামতো তাই করলো। আয়াফ তার বাবার পাশে দাঁড়িয়ে বলে,”আজ বাধা দিও না আজ আমি নেহালের ব্যবস্থা করবোই।!”

আরাভ জুরাইজ কিছু বললো না শুধু এইটুকুই বলে,”আমাকেও তোর সাথে নিয়ে চল!”

আয়াফ সম্মতি জানালে বাপ বেটা মিলে কোথায় যেনো চলে গেলো।

নেহাল এবং একটা মেয়ে অন্তরঙ্গ অবস্থায় একটা রুমে। এমন সময়ই দরজা ঠাস করে খুলে ঢুকলো আয়াফ, আরাভ জুরাইজ আর তাদের পেছনে পুলিশ। এই অবস্থা আরাভ জুরাইজ একদমই আশা করেনি তাই সে জলদি করে ঘৃণায় পিছে ফিরে দাঁড়ায়। নেহাল চটজলদি মেয়েটাকে ছেড়ে শার্ট পড়তে পড়তে বেক্কলের মতো এক্টিং করার চেষ্টা করে বলে,”বাবা, আয়াফ তোমরা এখানে আর পুলিশ কেন?”

আয়াফ হেসে বলে,”মানে ব্রো সিরিয়াসলি এই অবস্থাতেও তুই পাগল হওয়ার এক্টিং করছিস? তোর খেলা শেষ নেহাল এখন যা ডান্ডা পেটা খেতে রিমান্ডে যা।”

নেহাল ভয়ে সুযোগ বুঝে পালাতে নিলেই আয়াফ তাকে ধরে ফেলে এবং বলে,”আরে আরে পালাচ্ছিস কোথায়? তোর যে এখনো অনেক শাস্তি পাওয়া বাকি। অনেক গেম খেলেছিস এখন তোর সব গেম ওভার! অফিসার আপনাকে অনেক প্রমাণ দিয়েছি এন্ড এখন নিজে সচোক্ষে দেখে নিলেন আর কোনো প্রমাণ লাগবে?”

অফিসার অগ্নিদৃষ্টিতে নেহালের দিকে তাকিয়ে আছে। একটা ছেলে এতোটা নিচ হতে পারে তার জানা ছিলো না। নেহাল হুংকার ছেড়ে বলে,”আমি তোকে ছাড়বো না আয়াফ তোকে হাতের কাছে পেলে খুন করে ফেলবো!”

– আমাকে পরে দেখিস আগে এটা বল তুই এতোদিন পাগল হওয়ার এক্টিং কেন করেছিস?

নেহাল হেসে বলে,”যাতে তোর এই বুড়ো বাপ আমায় কিছুই বলতে না পারে! কারণ আমি জানতাম তোর বুড়ো বাপ কোনো কালেই তোকে আমার ক্ষতি করতে দিতো না!”

আরাভ জুরাইজ বেশ ভালো বুঝতে পারছে সে কতো বড় অপরাধ করেছে। রেগে নেহালের গালে দুইটা চড়ও লাগিয়ে দেয়। কিছু বলার আগেই পুলিশ টেনে হিঁচড়ে ওকে নিয়ে যায়। আরাভ জুরাইজ কপালে হাত দিয়ে ভাবতে লাগে কতো বড় ভুলটাই না করেছে সে যার প্রতিটা কর্মফল এখন সে হাতেনাতে পাচ্ছে।

চলবে!!!

(গগঠনমূলক মন্তব্যের প্রত্যাশায় রইলাম)