💔#Divorce💔
Writer: Tahmina Toma
Part: 38
নিলাঃ (কী হলো জানি না,,,?? মায়ের পা জড়িয়ে ধরলাম,,,,) আমি আমার ভুল বুঝতে পারছি মা,,,, আমাকে মাফ করে দিন,,,,,(পা ধরে কান্না করতে লাগলাম,,,,)
নার্সঃ রোগীর জ্ঞান ফিরেছে,,,, আপনারা চাইলে দেখা করতে পারেন,,,,
নিলাঃ আমি দেখা করবো,,,,(চোখের পানি মুছে,,)
মাঃ না,,,
নিলাঃ প্লিজ মা,,,, এবারের মতো মাফ করে দাও,,,,
মাঃ ঠিক আছে,,, আরিয়ান যদি মাফ করে তাহলে আমিও মাফ করে দেবো,,,,
নিলাঃ(আরিয়ানের কেবিনে গেলাম,,,, চোখ বন্ধ করেই আছে এখনো,,মাথায় হাত রাখলাম,,,আর চোখ মেলে তাকালো,,) এখন কেমন লাগছে,,,??
আরিয়ানঃ হ,,,হুম ভালো,,,, তুমি ঠিক আছো,,,??
নিলাঃ হুম,,,,,,আমাকে এবারের মতো মাফ করে দাও প্লিজ,,,, আমি আর কোনো ভুল করবো না,,,(হাত জড়িয়ে কান্না করে,,,)
আরিয়ানঃ,,,,,,,,,,,
নিলাঃ প্লিজ আরিয়ান,,,,(কান্না করেই)
আরিয়ানঃ তুমি শুধু আমার সাথে অন্যায় করোনি,,, মা আর অন্তরার সাথেও করেছো,,,,, সবচেয়ে বেশি অন্যায় আমিই করেছি তবে তুমিও কিছু কম করোনি,,,,
নিলাঃ আ,,,আমি অন্তরার থেকেও মাফ চেয়ে নিবো,,,আগে তুমি মাফ করে দাও,,,,
আরিয়ানঃ ঠিক আছে,,,, এবারের মতো মাফ করলাম তোমায়,,,, তোমাকে মাফ করে হয়তো অন্তরার থেকেও একদিন মাফ পেয়ে যাবো আমি,,,
নিলাঃ (আজ নিলার আবার নতুন করে জন্ম হলো,,,)
ডক্টরঃ সরি মিস্টার আরিয়ান,,,, আপনার পা দুটো প্যারালাইজড হয়ে গেছে,,, আপনি হয়তো আর হাঁটতে পারবেন না কখনো,,,,
নিলাঃ আরিয়ান,,,,,,,,,, (বিস্ফুরিত কন্ঠে,,)
আরিয়ানঃ(চোখ বন্ধ করতেই চোখের কোন বেয়ে পানির বিন্দু গড়িয়ে গেলো,,,,) সত্যি বলেছিলো অন্তরা,,,, ওপরওয়ালার শাস্তির সীমারেখা হয় না,,,
ডক্টরঃ আরো একটা দুঃসংবাদ আছে,,,
আরিয়ানঃ বলে ফেলুন,,,, হারানোর আর কী বাকি আছে,,,??
ডক্টরঃ মিসেস নিলা দু-মাসের প্রেগনেন্ট ছিলেন,,,,
আরিয়ানঃ ছ,,ছিলেন,,,,,???
ডক্টরঃ উনার মাথায় আঘাত লাগার সাথে পেটেও লেগেছে,,, যার জন্য,,,,
নিলাঃ ক,,,কী,,,(ভয়ে ভয়ে)
ডক্টরঃ She has had a miscarriage and will never be a mother again,,,,,,,sorry,,,
(ডক্টর সব বলে মাথা নিচু করে চলে গেলেন,,, আরিয়ান পাথর হয়ে বসে আছে,,,, যেন অনুভূতিহীন হয়ে গেছে,,,,নিলা আরিয়ানের বুকে পরে চিৎকার করে কাঁদছে,,,)
নিলাঃ যে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে অন্তরাকে তোমার জীবন থেকে সরিয়েছিলাম আজ সত্যি হয়ে আমার কাছেই ফিরে এসেছে,,,(কান্না করতে করতে,,)
আরিয়ানঃ পাপ কখনো কাউকে ছাড়ে না,,,
,,,,,,
আরিয়ানঃ(সেদিন থেকে সব পাল্টে গেছে,,, নতুন এক নিলাকে আবিষ্কার করেছিলাম,,, দিনরাত আমার সেবা করতো,,, এই ঘটনার একবছর পর মা মারা যান,,,,,, আরিয়ানা আমাদের নিজেদের মেয়ে নয়,,, নিলার কথাতেই একটা এতিমখানা থেকে দত্তক নেওয়া হয়েছিলো,,, আরিয়ানার বয়স এখন চাঁর বছর,,,,, নিলার সেবায় আমিও এখন সুস্থ,,,, হাঁটতে পারি,,,,, কিছুদিন পরই পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যাবো ইনশাআল্লাহ,,,, তবু দিন শেষে মনে হয় কিছু একটা নেই,,,,,। তাও বলবো ভালো আছি অনেক,,,, অন্তরার সাথে যে অন্যায় করেছি এতটা ভালো থাকার অধিকারও হয়তো নেই আমাদের,,,,। )
আরিয়ানাঃ বাবা,,,,,,
আরিয়ানঃ কোথায় গিয়েছিলো আমার পরীটা,,,??
আরিয়ানাঃ খেলতে,,,,,,
আরিয়ানঃ শুধু খেললে হবে,,, খেতে হবে না,,?? না খেলে বড় হবে কীভাবে,,,??
আরিয়ানাঃ খাবো তো,,, তোমার সাথে,,,,
(আরিয়ানা আরিয়ানের গলা জড়িয়ে গালে চুমু খেলো,,)
নিলাঃ (বাকিটা জীবন যেন এভাবেই কাটাতে পারি,,, কখনো অন্তরার সাথে দেখা হলে ক্ষমা চেয়ে নেবো,,,, আর ধন্যবাদও দেবো,,,,)
,,,,,,
সিয়ামঃ মা,,,,,,,,
অন্তরাঃ কী হয়েছে,,, স্কুল ব্যাগ এখনো কাঁধেই,,, তবু এমনভাবে ডাকছো মনে হচ্ছে কতো সময় ধরে খুঁজে খুঁজে হয়রান হয়ে গেছো,,,
সিয়ামঃ তুমি জানো না,,, বাসায় এসে তোমাকে না দেখলে আমার একদম ভালো লাগে না,,,
অন্তরাঃ জানি তো,,, কিন্তু আগে ফ্রেশ তো হয়ে নেবে,,,,
সিয়ামঃ না আগে তোমাকে দেখবো তারপর ফ্রেশ হবো,,,,
অন্তরাঃ পাগল ছেলে,,,, দিনদিন বাপের মতো হয়ে যাচ্ছে,,,,,(কাঁধ থেকে ব্যাগ নিয়ে,,,)
সিয়ামঃ আমিতো চাই বাবার মতো হতে,,,, বাবার মতো তোমাকে অনেক ভালোবাসতে,,,,
অন্তরাঃ (সিয়ামের মুখটা হাতের আঁজলে নিয়ে কপালে একটা চুমু খেলাম,,) যাও ফ্রেশ হয়ে এসো আমি খাবার দিচ্ছি,,,
সিয়ামঃ ওকে,,,মা,,,??
অন্তরাঃ আবার কী,,,??
সিয়ামঃ সারা কোথায়,,,,??
অন্তরাঃ ঘুমিয়ে পড়েছে একটু আগে,,,
সিয়ামঃ ওহ্ আর বাবা কখন আসবে,,,??
অন্তরাঃ আজকে তো আসতে অনেক রাত হবে সোনা,,, তুমি আজকে একাই খেলো,,,,
সিয়ামঃ ওকে,,,(মন খারাপ করে,,,)
(সিয়াম চলে গেলো ফ্রেশ হতে আর অন্তরা সিয়ামের খাবার রেডি করতে চলে গেলো)
সিয়ামঃ বোনু,,,,,,,??ঘুমিয়ে পড়েছিস কেন,,,?? খেলবি না,,,??
অন্তরাঃ(হ্যাঁ সারা আমার মেয়ে,,,, আমার আর হৃদয়ের ভালোবাসার প্রতিক,,,,)
,,,,,,,,
হৃদয়ঃ অন্তরা,,,,, এই অন্তরা তুমি আমার ফোন কেন রিসিভ করোনি,,,,। তুমি জানো না তোমার ফোন রিসিভ করতে একটু লেট হলে আমার দম বন্ধ হয়ে আসে,,, ভয় করে,,,
(হৃদয়ের মা ভার্সিটিতে,,, হৃদয় আর রিয়াদ অফিসে চলে গেছে,,,, সিয়াম স্কুলে যায় এখন,,,, বাড়িতে অন্তরা একা,,,, অফিসে থেকে হৃদয় বারবার অন্তরাকে কল দিচ্ছে কিন্তু অন্তরা রিসিভ করছে না,,,। তাই বাসায় চলে এসেছে,,, সার্ভেন্টকে জিজ্ঞেস করলে বললো রুমে আছে,,, রুমে এসে দেখে অন্তরা ঘুমিয়ে আছে,,)
হৃদয়ঃ এদিকে আমি চিন্তায় মরছি আর এখানে মহারানী ঘুমাচ্ছে,,,, দাড়াও তোমার ঘুম বার করছি আমি,,,,
(কাছে গিয়ে অন্তরাকে কেমন নিস্তেজ লাগছে,,,)
অন্তরা,,,, এই অন্তরা,,,,ও তো অ,,অজ্ঞান হয়ে গেছে,,,,,। এই অন্তু কথা বল না,,,,৷ এমন মজা আমার ভালো লাগছে না,,,,। ভয় করছে আমার,,,,। (গ্লাস থেকে পানি নিয়ে চোখেমুখে দিলাম,,, তাও জ্ঞান ফিরছে না,,,। তাই কোলে করে গাড়িতে নিয়ে বসালাম,,,,, তাড়াতাড়ি হাসপাতালের নিয়ে যেতে লাগলাম,,,,) তোমার কিছু হলে আমার কী হবে অন্তরা,,,?? একবার ভেবেছো আমার কথা,,,,
(ছেলেদের কাঁদতে নেই,,,, কিন্তু হৃদয়ের চোখ থেকে টপটপ পানি পড়ছে,,,,, জীবনে কোনোদিন এতটা ভয় হয়তো পায়নি হৃদয়,,,,)
হৃদয়ঃ (অন্তরার হাত ধরে হাসপাতালের বেডের পাশে বসে আছি,,,, ডক্টর পাশে দাঁড়িয়ে রিপোর্ট দেখছে,,,)
ডক্টরঃ ভয়ের কিছু নেই,,,, এই সময় এমন একটু হয়,,,, খাবার দাবারের দিকে নজর রাখবেন,,,,,
হৃদয়ঃ এই সময় মানে,,,??
ডক্টরঃ আপনার ওয়াইফ ৩ মাসের প্রেগনেন্ট,,,,, মিষ্টি নিয়ে আসুন,,
(এটা শোনার পর হৃদয় পাথর হয়ে গেছে,,,,। কিছুই বুঝতে পারছে না,,,)
হৃদয়ঃ (না না মিথ্যে স্বপ্ন দেখে নিজেকে আর অন্তরাকে কষ্ট দিতে পারবো না,,,) আ,,,আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে,,,, অন্তরা কখনো মা হতে পারবে না,,,,
ডক্টরঃ কী বলছেন আপনি,,,?? রিপোর্টে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে উনি প্রেগনেন্ট,,,, ডক্টর আপনি নাকি আমি,,, কে বলেছে উনি মা হতে পারবে না,,,??
হৃদয়ঃ আ,,,,আপনি দয়া করে আবার টেস্ট করুন,,, আর এটা অন্তরাকে বলবেন না প্লিজ,,(এই কথাটা অন্তরা শুনলে ওর কষ্টটা আরো বেড়ে যাবে,,, আমি চাই না ও একটুও কষ্ট পাক,,,)
ডক্টরঃ ঠিক আছে,,,,, আপনার ইচ্ছে,,,, কিন্তু আমার রিপোর্ট কখনো ভুল হতে পারে না,,,
হৃদয়ঃ এই রিপোর্ট যদি সত্যি হয়,,, আমি কী করবো আমি নিজেই জানি না,,,??(অন্তরার মুখের দিকে তাকিয়ে,, শান্ত গলায়,,)
(ডক্টর চলে গেলো আবার টেস্ট করার ব্যবস্থা করতে,,,)
,,,,,
সিয়ামঃ মা,,,, আমি খেলতে যাচ্ছি,,,,
অন্তরাঃ আরে,,, খাবার খেয়ে নাও আগে,,,,
সিয়ামঃ টিফিন করেছি,,, এখন ক্ষিদে নেই,,, আজকে বাবা আসবে না,,, বন্ধুদের সাথে খেলতে হলে আগে যেতে হবে,,,, আমি আসছি,,,
অন্তরাঃ খাবার খেতে কতো সময় লাগবে,,,, খাবার না খেলে আমি কোথাও যেতে দিবো না বলে দিলাম,,,,
সিয়ামঃ তাহলে তাড়াতাড়ি খাইয়ে দাও,,,
অন্তরাঃ এদিকে আসো,,,,(সিয়ামকে খাইয়ে দিতে লাগলাম,,, একদম বাপের মতো বাস্কেটবল খেলার পাগল,,, হৃদয় আগে বাসায় আসলে বাপ ছেলে দুজনে খেলে আর আমরা মা-মেয়ে বসে দেখি,,, আজ হৃদয়ের আসতে লেট হবে বলেছে,,,,) ক্ষিদে নাকি পায়নি,,, এবার খাবারগুলো সব কোথায় গেলো শুনি,,,??
সিয়ামঃ তোমার হাতে খেলে,,,, ক্ষিদে না পেলেও খাবার একাই সাবার হয়ে যায়,,,
অন্তরাঃ সবসময় বাবাকে কপি করা,,,??(সরু চোখে তাকিয়ে)
সিয়ামঃ Because Dad is my role model,,,, I want to be like Dad when I grow up,,,,
অন্তরাঃ (সিয়ামের কথা শুনে মুচকি হাসলাম,,,) হুম
বাবার মতো একজন আদর্শ মানুষ হও,,,
সিয়ামঃ ওকে আমি আসছি,,, লেট হবে আমার,,,,
অন্তরাঃ ওকে,,,
(সিয়াম খেলতে চলে গেলে অন্তরা খাবার গুছিয়ে রুমে গিয়ে দেখে হৃদয় কল দিচ্ছে,,,)
অন্তরাঃ আল্লাহ,,, এ না আবার বাসায় চলে আসে,,, কেমন এক বদঅভ্যেস হয়েছে,,, ফোন রিসিভ করতে লেট হলেই বাসায় চলে আসবে,,, হ্যালো,,,
হৃদয়ঃ এতোক্ষণ কী করছিলে,,,?? এবার রিসিভ না করলে বাসায় চলে আসতাম,,,।
অন্তরাঃ আরে বাবা সিয়ামকে খাওয়ালাম,,,,
হৃদয়ঃ এই কে তোমার বাবা,,,??
অন্তরাঃ আমার না আমার বাচ্চার বাবা,,,হিহিহি,,,।
হৃদয়ঃ এইবার ঠিক আছে,,,,, তো আমার রাজপুত্র আর রাজকন্যা কী করছে,,??
অন্তরাঃ রাজপুত্র তার রাজকার্য করতে গেছে আর রাজকন্যা ঘুমের দেশে আছে,,,,
হৃদয়ঃ আর আবার বেবটা কী করে,,,??(রোমান্টিক গলায়)
অন্তরাঃ দুই বাচ্চার মা নাকি বেব,,,(মজা করে)
হৃদয়ঃ দিলে আমার রোমান্টিক মুডের বারোটা বাজিয়ে,,,, এখন মিটিংয়ে যাওয়ার আগে একটা মিষ্টি দাও,,,।।
অন্তরাঃ আবার,,,,
হৃদয়ঃ তাড়াতাড়ি করো,,, লেট হচ্ছে,,, নাহলে মিটিং ভালো হবে না,,,,
অন্তরাঃ যতোসব ঢং,,,,
হৃদয়ঃ লেট হচ্ছে,,,,,
অন্তরাঃ উম্মা,,(এর পাগলামি দিনদিন আরো বাড়ছে,,)
হৃদয়ঃ thanks you,,,,,
(হৃদয় ফোন রেখে দিলো,,,)
অন্তরাঃ এটা কোনো কথা,,,, কিসের বদলে ধন্যবাদ,,?? ভালোবাসি ভালোবাসি বলে আগে পিছনে ঘুরতো বিয়ের আগে আর বিয়ের পর শুধু তাকে ভালোবাসি বলো নিজে বছরে একবারও বলবে না,,,,(রাগ করে আবার মুচকি হাসলাম) ভালোবাসি না বলেও তার প্রতিটা কাজে প্রকাশ পায় কতটা ভালোবাসে,,,,, জীবনে এতো সুখ ছিলো কখনো কল্পনা করিনি,,,,। মেয়ের পাশে শুয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলাম,,, আর সেই দিনগুলোর কথা ভাবতে লাগলাম যখন প্রথম ওর আগমনের কথা শুনেছিলাম,,,,, বলে বুঝাতে পারবো না সেই অনুভূতি,,,,, মনে হয়েছিলো এ বুঝি মরা গাছে ফুল ফোঁটার মতো,,)
চলবে,,,
💔#Divorce💔
Writer: Tahmina Toma
Part: 39
অন্তরাঃ (যখন প্রথম ওর আগমনের কথা শুনেছিলাম,,,,, বলে বুঝাতে পারবো না সেই অনুভূতি,,,,, মনে হয়েছিলো এ বুঝি মরা গাছে ফুল ফোঁটার মতো,,)
,,,,,
(হৃদয় অন্তরার হাত ধরে পাশে বসে আছে,,,কেমন ভয় ভয় করছে,,, ইচ্ছে করছে ডক্টরের কথায় বিশ্বাস করতে,,,, কিন্তু ভয় হচ্ছে,, যদি মিথ্যে হয়)
হৃদয়ঃ (হঠাৎ অন্তরা নড়েচড়ে ওঠলো,,,।) অন্তরা,,,,
অন্তরাঃ ম,,,মাথাটা এতো ভার লাগছে কেন,,,??
হৃদয়ঃ তুমি একটু অসুস্থ তাই এমন লাগছে,,,।
অন্তরাঃ ক,,কী হয়েছে আমার,,,??
হৃদয়ঃ আরো না খেয়ে থাকো বেশি করে,,, তাহলে আর অজ্ঞান হয়ে পরে থাকবে না,,(রাগ করে)
অন্তরাঃ আমি অসুস্থ আপনি তাও আমার সাথে রাগারাগি করছেন,,,(ধীরে ধীরে চোখ খোলে হৃদয়ের দিকে তাকালাম,,,,। কিন্তু এটা তো আমাদের রুম নয়,,,। রুম দেখে চট করে ওঠে বসলাম,,,)
হৃদয়ঃ কী হলো আবার,,,??
অন্তরাঃ এটা কোথায়,,,, এটাতো আমাদের রুম নয়,,
হৃদয়ঃ এটা হসপিটাল,,,, অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলে,, কিছুতেই জ্ঞান ফিরছিলো না,,, তাই হসপিটালে নিয়ে এসেছি,,,,
অন্তরাঃ কিন্তু আপনার চোখমুখ এমন কেন লাগছে,,,??
হৃদয়ঃ ক,,,কই এমনই,,,,
অন্তরাঃ আপনি কী কান্না করেছেন,,,?? ছিহ্ ছিহ্ ছিহ্ হৃদয় চৌধুরী এতো ভিতু,,, বউ অজ্ঞান হয়ে গেছে দেখে কান্না করে দিয়েছে,,,,, (ব্যাঙ্গ করে,,,) আমি হৃদয় চৌধুরী কাউকে ভয় পাই না,,,(হৃদয়কে কপি করে)
হৃদয়ঃ অন্তরা আমি এখন একদম মজা করার মুডে নেই,,,,
অন্তরাঃ ওহ্ তাই বুঝি,,,,, একটু অজ্ঞান হয়েছি বলে এই হাল,,, যদি মরে যাই তখন কী করবেন,,,??
হৃদয়ঃ অন্তরা,,,,,,,,,,,(রেগে ধমক দিয়ে,,,)
অন্তরাঃ (উনার চোখেমুখে আমাকে হারানোর ভয় যেন জেঁকে বসেছে,,,, কিন্তু কেন,,,) সরি,,,,,
(আস্তে করে অন্তরা সরি বলতেই হৃদয় অন্তরাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো,,,)
হৃদয়ঃ কবে আমাকে বুঝবি তুই,,,,?? বলতে পারিস,,, আমার কষ্ট কী কোনদিন বুঝবি না,,,,??
অন্তরাঃ সরি,,,(আমিও উনাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম,,,)
নার্সঃ উহুম,,,,,,,
(নার্সের আসার শব্দে দুজন দুজনকে ছেড়ে বসলো)
নার্সঃ টেস্টের সব রেডি,,, রোগীকে নিয়ে যেতে হবে,,,
অন্তরাঃ আবার এসব করার কী আছে,,?? অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম এখন জ্ঞান ফিরেছে,,, বাসায় চলে যাবো,,,,
হৃদয়ঃ সিস্টার,,, কতো সময় লাগবে,,,,
নার্সঃ ইমারজেন্সি করা হচ্ছে তো,,, বেশি সময় লাগবে না,,,, আর রিপোর্টও আজই পেয়ে যাবেন,,
হৃদয়ঃ ওকে,,,, অন্তরা উনার সাথে যাও,,,,
অন্তরাঃ কিন্তু,,,,,,
হৃদয়ঃ আমি বলেছি যেতে,,,(কঠিন গলায়)
অন্তরাঃ (উনার ভয়ে আর কিছু বলতে পারলাম না,,,
নার্সের সাথে যেতে লাগলাম,,,)
,,,,
হৃদয়ঃ (অন্তরা আবার ঘুমিয়ে পড়েছে বেডে,,, আমি পাশে বসে আছি,,,, রিপোর্ট নিয়ে তারপর বাসায় যাবো,,,,। মাকে বলে দিয়েছি অন্তরা একটু অসুস্থ তাই ডক্টরের কাছে নিয়ে এসেছি,,,। অন্তরাও কিছু জানে না এখনো,,,,, এই অপেক্ষার প্রহর যেন শেষই হচ্ছে না,,,,।)
ডক্টরঃ মিস্টার হৃদয়,,,,,
ডক্টরঃ ই,,ইয়েস ডক্টর,,, (উত্তর দিতেও গলা কাঁপছে,,, কী আছে রিপোর্টে,,,?? অন্তরা মা হতে না পারলেও সমস্যা নেই,,,, সেটা আমি আগেই মেনে নিয়েছি,,, ওর যেনো কোন কিছু না হয় আল্লাহ,,,। ও আমার কাছে থাকলেই হবে আর কিছু চাই না,,,, আমার সন্তান আছে,,, আমার সিয়াম)
ডক্টরঃ আমার রিপোর্ট ভুল,,,,,
হৃদয়ঃ জানতাম আপনার রিপোর্ট ভুল ছিলো,,,,
ডক্টরঃ আমার কথাটা আগে শেষ করতে দিন,,,, আমি বলেছিলাম আমার রিপোর্টে কোন ভুল হতে পারে না,,,, সেটা প্রমাণ করার জন্য আমি বারবার টেস্ট করেছি,,, কিন্তু একই রিপোর্ট এসেছে,,, মিসেস চৌধুরী ৩ মাসের প্রেগনেন্ট,,,,
হৃদয়ঃ ক,,,কিন্তু এ,,এটা কীভাবে সম্ভব,,,,, (পাথর হয়ে,,)
ডক্টরঃ কেন,,,, আপনি খুশি হননি,,,,??
হৃদয়ঃ আপনি আর একবার যদি,,,,,
ডক্টরঃ আমি বারবার করেছি,,, একবার নয়,,,, বারবার করেছি,,,, কিন্তু আপনি বিশ্বাস কেন করতে চাইছেন না,,,,??
হৃদয়ঃ ত,,তার মানে আমি সত্যি বাবা হতে চলেছি আর অন্তরা মা,,,,??
ডক্টরঃ হ্যাঁ,,,, (মিষ্টি হেঁসে,,,,)
(হৃদয় কী রিয়্যাকশন দিবে বুঝতে পারছে না,,,?? স্তব্ধ হয়ে বসে আছে,,,। মানুষ যেমন অতি আঘাতে পাথর হয়ে যায়,,, হৃদয় আজ অতি আনন্দে পাথর হয়ে গেছে,,,,,, ডক্টর কিছুই বুঝতে পারছে না,,,,। বাচ্চার কথা শুনলে সবাই খুশি হয় কিন্তু হৃদয় কোন রিয়্যাকশন দিচ্ছে না,,,,। এক দৃষ্টিতে অন্তরার পেটের দিকে তাকিয়ে আছে,,,। ডক্টর কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে বসে থাকা হৃদয়ের দিকে তাকিয়ে কেবিন থেকে বের হয়ে যেতে গেলে ,,)
হৃদয়ঃ ডক্টর,,,,,,,
ডক্টরঃ জী বলুন,,,??
হৃদয়ঃ (কোনো কথা না বলে অন্তরার আগের রিপোর্টগুলো উনার হাতে দিলাম,,,, অন্তরার টেস্ট করাতে নিয়ে গেলে অন্তরার বাসা থেকে এগুলো আনিয়েছি,,, ডক্টর রিপোর্টগুলো নিয়ে দেখতে লাগলো,,,,)
ডক্টরঃ এটা কীভাবে সম্ভব,,,?? এই রিপোর্ট সম্পূর্ণ ভুল,,, উনাকে কোন অপারেশনই করা হয়নি,,, তাহলে এটা কীভাবে হতে পারে,,,??
হৃদয়ঃ এই রিপোর্ট ভুল,,,,,?? (অবাক হয়ে)
ডক্টরঃ সম্পূর্ণ ভুল,,,, আপনি এই ডক্টরের সাথে আবার যোগাযোগ করুন,,,, এমন একটা রিপোর্ট কেন দিয়েছে আমি বুঝতে পারছি না,,,,।
হৃদয়ঃ হুম,,,,(রাগে চোখমুখ লাল হয়ে গেছে হৃদয়ের,,,)
ডক্টরঃ উনার খেয়াল রাখবেন,,,,, প্রথমবার মিসক্যারেজ হওয়ার জন্য এইবার ঝুঁকি অনেক বেশি,,,, অনেক সাবধানে রাখতে হবে,,,,। উনাকে বেড রেস্টে রাখাই ভালো,,,, শরীরও অনেক দূর্বল,,
হৃদয়ঃ অনেক বেশি খেয়াল রাখবো ওর,,,
ডক্টরঃ হুম,,,,
(ডক্টর মিষ্টি হেঁসে বের হয়ে গেলেন,,,, হৃদয় অন্তরার দিকে তাকালো,,,, কী নিষ্পাপ মুখটা,,,,?? মিথ্যে অপবাদ দিয়ে ভেতর থেকে কতটা ভেঙে দিয়েছিলো মেয়েটাকে,,,,)
হৃদয়ঃ অ,,,অন্তরা এটা কী কোন স্বপ্ন,,,?? নিজের হাতে চিমটি কাটলাম,,,,না স্বপ্নতো নয়,,, নিজের কাজে নিজেই অবাক হচ্ছি,,,, আমার কী মাথা খারাপ হয়ে গেছে,,,?? অন্তরার কাছে গিয়ে পেটের ওপর থেকে জামা সরিয়ে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি,,,, hey,,, can you hear me,,,, You know you’re coming, I still can’t believe it,,,,The happiest man in the world seems to be himself today,,,,,,love you a lot,,,,,,(কোমর জড়িয়ে পেটে মুখ গুঁজে দিলাম,,,। চোখ থেকে টপটপ পানি পড়ছে নিজেই জানি না,,,)
অন্তরাঃ (পেটে গরম তরল পদার্থ অনুভব করতেই ঘুম ভেঙে গেলো,,, চোখ খোলে অবাক হয়ে গেলাম,,,, উনি চেয়ারে বসে বেডে আমার পেট জড়িয়ে আছে,,,,। কী হয়েছে উনার,,,??) ক,,,কী হয়েছে আপনার,,,??
হৃদয়ঃ (অন্তরার কথা শুনে ওর দিকে তাকালাম,,,)
অন্তরাঃ(উনাকে দেখে ভয় পেয়ে গেলাম,,,, উনার চোখে পানি কেন,,,?? কী হয়েছে,,,,??) কী হয়েছে আপনার,,,?? আপনি কাঁদছেন কেন,,,??
হৃদয়ঃ (কোন কথা না বলে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম অন্তরাকে,,,,।)
অন্তরাঃ আ,,,, আমার কিন্তু এখন ভয় করছে,,, কী হয়েছে বলুন আমাকে,,,??
হৃদয়ঃ (অন্তরাকে ছেড়ে ওর মুখোমুখি বসে চোখের দিকে তাকালাম,,, সত্যি ভয় পাচ্ছে ও,,,,। ওর হাতটা ধরে ওর নিজের পেটে রাখলাম,,,)
অন্তরাঃ(উনি আমার হাত পেটে কেন রাখলেন,,,, প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে উনার দিকে তাকালাম,,,)
হৃদয়ঃ এইখানে একটু একটু করে বড় হচ্ছে আমাদের ভালোবাসার প্রতীক,,,,(ফিসফিস করে)
অন্তরাঃ(উনার কথা শুনে পেট থেকে ছিটকে হাত সরিয়ে ফেললাম,,,,। উনি অবাক হয়ে আমার দিকে তাকালেন,,,,) মিথ্যে আশা দেবেন না,,,,, কষ্টগুলো দ্বিগুণ হয়ে যায়,,, এটা কখনো সম্ভব নয়,,,,,(ডুকরে কেঁদে ওঠে)
হৃদয়ঃ (অন্তরার মুখটা দুহাতের আঁজলে নিয়ে বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে দুচোখের পানি মুছে দিয়ে কপালে একটা কিস করলাম,,,) তাকাও আমার দিকে,,,,
অন্তরাঃ(উনার দিকে তাকালাম,,,, উনার চোখে পানি আর ঠোঁটের কোণে মিষ্টি হাসি,,,)
হৃদয়ঃ আমি কী এমন কিছু বলতে পারি যার জন্য আমার অন্তুর কষ্ট দিগুণ হতে পারে,,,,??
অন্তরাঃ(মাথা দুলিয়ে না বললাম,,,)
হৃদয়ঃ আমি যা বলছি সব সত্যি অন্তরা,,,,। তুমি মা হতে চলেছো আর আমি বাবা,,,,
অন্তরাঃ(উনাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ওঠলাম) কিন্তু এটা কীভাবে সম্ভব,,,??
হৃদয়ঃ (কিছু বললাম না,,, অনেক সময় কেঁদে অন্তরা একটু শান্ত হয়ে এসেছে তারপর বললাম,,,) তোমার আগের রিপোর্ট সব মিথ্যে ছিলো,,,,
অন্তরাঃ(অবাক হয়ে উনার দিকে তাকালাম) মিথ্যে,,,, কিন্তু কেন,,,??
হৃদয়ঃ এর উত্তর তো সেই ডক্টরই দিতে পারবে,,, তার থেকেই এর উত্তর আদায় করবো,,,,
অন্তরাঃ ত,,তারমানে সত্যি আমি,,,,,(পেটে হাত রাখলাম,,,, এই অনুভুতি প্রকাশ করার কোন শব্দ হয়েতো এখনো আবিষ্কার হয়নি,,,)
হৃদয়ঃ (অন্তরার ঠোঁটে ছোট করে একটা কিস করলাম,,,,) হুম সত্যি,,,,,,
,,,,,,
সারাঃ মা,,,,,,,,
অন্তরাঃ (সারার ডাকে ঘোর কাটলো,,, ওর দিকে তাকালাম,,, একদম হৃদয়ের কার্বন কপি,,,,, চোখ,, নাক,,, ঠোঁট,,, হাসি সব হৃদয়ের মতো,,,)
সারাঃ মা,,,,,,
অন্তরাঃ কী হয়েছে সোনা,,,?? ঘুম হয়েছে,,??
সারাঃ হুম হয়েছে তো,,,,, ভাইয়া কোতায়,,,,??
অন্তরাঃ( এখনো কিছু শব্দ বলতে পারে না সারা,,,,) ভাইয়া তো খেলতে চলে গেছে,,,,,
সারাঃ আমিও যাবো,,,,
অন্তরাঃ যেতে হবে না,,, ভাইয়া একটু পর চলেই আসবে,,, তুমি এখন চলো ফ্রেশ হবে,,,,
সারাঃ না আমি ভাইয়া যাবো,,,,,
অন্তরাঃ সারা,,,, জেদ কেন করছো,,,,??
সারাঃ আমি ভাইয়া যাবো,,,,,,
অন্তরাঃ(এই মেয়ের এতো জেদ কীভাবে হলো আল্লাহ জানে,,,, যা বলবে তাই হবে,,,। এখন তার ভাইয়ার কাছে না নিয়ে গেলে কিছুই করবে না,,,) চলো তোমার ভাইয়া কাছে,,,,
সারাঃ ইয়াহু,,,, চলো,,,,,
অন্তরাঃ(মেয়ের পাগলামি দেখে মুচকি হাসলাম,,,। ভাইয়ার জন্য পাগল একদম,,,,। সারা আর সিয়ামের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই আমার কাছে,,, মা হওয়ার স্বাদ সিয়াম আমাকে প্রথম দিয়েছে তাই সেই আমার প্রথম সন্তান,,,,)
,,,,,
জ্যোতিঃ এতো ঝামেলা ভালো লাগে না আমার,,,,, বাপ মেয়ে দুটোতেই আমার লাইফ হেল করে দিলো,,,, এই মেয়ে সারাদিন ক্যা ক্যা করবে কিন্তু খাবে না,,,,
(মেয়ের খাবার রেডি করছিলাম পেছন থেকে কেউ জড়িয়ে ধরলো,,,, খালি পেটে হাত রেখে চুলে মুখ গুঁজে দিয়েছে,,,,)
চলবে,,,