#Game_2
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_৩২
নির্ঝর মেহেরিন’র হাত ধরে গাড়ির কাছে আসলো। অতঃপর হাত ছেড়ে দিয়ে মেহেরিন’র দিকে তাকিয়ে রইল। মেহেরিন নির্ঝরের গলা জরিয়ে ধরে বলল…
– রেগে আছেন নাকি!
– জিজ্ঞেস করছো না বলছো?
– আমি আবার কি করলাম?
– কি করো না তুমি। সব’ই তো করো। দুনিয়ার যতো আকাম সেটা তুমিই করে বেড়ায়!
মেহেরিন দাঁত বের করে হেসে..
– শুকরিয়া!
নির্ঝর রেগে মেহেরিন’র বাহু ধরে বলে..
– মজা করছো! কে বলেছিলো তোমায় ওর সাথে কথা বলতে হুম।
– ওই তো বললো কথা বলবে তাই গেলাম।
– ও বললো আর তুমিও চলে গেলো। যদি কিছু হয়ে যেত।
– হে ওয়েট আমি কোন অবলা নারী না যে আমাকে দিয়ে কিছু করে ফেলবে।
– আই নো দ্যাট মেহু পাখি! কিন্তু বোঝার চেষ্টা করো আমার ভয় করে তোমাকে নিয়ে। এই না কিছু হয়ে যায় তোমার। সারাদিন চিন্তায় থাকি আমি।
মেহেরিন নির্ঝরের নাকে টুকা দিয়ে বলে..
– এসব ভাবার জন্য আমার দা আর দি আছে। এছাড়াও আরো ৫ জন আছে। আপনার না ভাবলেও চলবে!
নির্ঝর মেহেরিন’কে ছেড়ে দিয়ে গাড়ির দরজা খুলে দিয়ে ওপর দিকে দরজা খুলে ড্রাইভিং সিটে বসে পরল। মেহেরিন বুঝতে পারল রেগে গেছে। গাড়ির দরজা ওর জন্য’ই খুলে রেখেছে। মেহেরিন গাড়িতে বসে বলল..
– আজ কি ক্লাস করবো না।
নির্ঝর কিছু না গাড়ি স্টার্ট দিল। মেহেরিন নির্ঝরের দিকে একটু ঝুঁকে তাকাল। হঠাৎ নির্ঝর ওর হাত ধরে গাড়ি ব্রেক করল। মেহেরিন কি হলো বুঝতে পারল না। নির্ঝর ফোনটা বের করে কিসব টাইপিং করে মেহেরিন’র হাতে দিল। মেহেরিন দেখল তাতে লেখা আছে..
– সিট বেল বাধো!
মেহেরিন মুখ ভেংচি দিয়ে হাত টা নির্ঝরের ফোনে দিয়ে দু হাত গুঁজে বসে রইল। নির্ঝর জানে তাকেই বাঁধতে হবে। সে মেহেরিন’র দিকে ঝুঁকে তার সিট বেল বাঁধতে লাগলো। একবারের জন্য মেহেরিন’র দিকেও তাকাল। মেহেরিন হেসে তাকে চোখ টিপ দিল। কিন্তু তাতে নির্ঝরের কোন ভ্রুপ নেই। সে আবারো আপন মনে গাড়ি স্টার্ট দিল। মেহেরিন এবার নিঝেই সিটবেল খুলে বসে রইল। নির্ঝর আবারো তার সিট বেল বেঁধে দিল। কিছুক্ষণ পর মেহেরিন আবারো সিট বেল খুল। নির্ঝর গাড়ি থামিয়ে আবারো সিট বেল বেঁধে দিল। মেহেরিন আবারো সেই একই কাজ আর নির্ঝরও কোন বিরক্ত ছাড়া সিট বেল বেঁধে দিল। মেহেরিনের এবার নিজেরেই বিরক্ত লাগতে লাগলো। সে চাইলো নির্ঝর বিরক্ত হয়ে তার সাথে কথা বলুক কিন্তু এবার সে নিজেই বিরক্ত বোধ করতে লাগলো। অতঃপর এবার সিট বেল খুলে সোজা নির্ঝর কোলে মাথা রাখল। অতঃপর মুখ উঁচু করে নির্ঝরের দিকে তাকাল। সে এখনো আগের মতোই গাড়ি চালাতে লাগল। মেহেরিন এবার গান গাইতে শুরু করল..
“কথা হবে দেখা হবে,
প্রেমে প্রেমে মেলা হবে
কাছে আসা আসি আর হবে না
চোখে চোখে কথা হবে,
ঠোঁটে ঠোঁটে নাড়া দেবে
ভালবাসা-বাসি আর হবে না
নির্ঝরের থিতুনি তে হাত রেখে..
শত রাত জাগা হবে,
থালে ভাত জমা রবে
খাওয়া দাওয়া কিছু মজা হবে না
হুট করে ফিরে এসে,
লুট করে নিয়ে যাবে
এই মন ভেঙে যাবে জানো না
আমার এই বাজে স্বভাব
কোনোদিন যাবেনা
আমার এই বাজে স্বভাব
কোনোদিন যাবেনা
হুট করেই নির্ঝর এবার হেসে দিল। অতঃপর নিচে তাকাতেই দেখল মেহেরিন এক গাল হেসে তার দিকে তাকিয়ে আছে। নির্ঝর এক হাত দিয়ে মেহেরিন এর কানের কাছে রেখে বলল..
– মেহু পাখি!
– রাগ ভেঙেছে আপনার!
নির্ঝর হেসে বলল..
– তুমি একজন যার ওপর আমি রাগ করে থাকতে পারি না।
– আমার উপর কেউই রাগ করে থাকতে পারে না। কারন আমি খুব সুইট!
– হাম চকলেট’র মতো!
– এবার বন্ধ করুন।
– হুম করলাম!
– আচ্ছা নির্ঝর আপনার পরিবারে কেউ নেই!
– আছে তো!
– কে কে আছে তারা কোথায় থাকে!
– আমার মা, একটা ছোট বোন আছে। তারা সবাই ব্যাংকক থাকে।
– আপনি কেন থাকেন না তাঁদের সাথে। আপনার তো তাদের দরকার নাহ!
– হাম তাই সেখানে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড কে রেখে এসেছি। আমার বিজনেস গান এসব কিছুর জন্য প্রায়’ই বাইরে থাকতে হয় বুঝলে। তাই তাদের খেয়াল রাখতে আমি আমার বেস্ট ফ্রেন্ড কে তাদের কাছে রাখি।
– আচ্ছা নির্ঝর আপনার বাবা!
নির্ঝর মুখে হাসি নিয়েই বলল..
– আজ থেকে ১০ বছর আগে উনি আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন!
মেহেরিন নির্ঝরের গালে হাত রাখল। নির্ঝর মেহেরিন’র গালে আলতো করে একটা চুমু খেল। মেহেরিন বলল..
– সরি, জানি অনেক কষ্ট পেয়েছেন। আমিও ১০ বছর আগেই আমার মা কে হারিয়েছিলাম।
– না ১১ বছর হতে চলল মেহু পাখি!
– সময় যে কিভাবে চলে যায় বুঝতে পারি না।
– হাম ঠিক বলেছো। এই বছর শেষ হতে চলল।
– হাম। আচ্ছা আপনার বোনের নাম কি নির্ঝর?
– তিশা চৌধুরী!
– ওও কিউট নেম।
– হাম! তো এখন কি বাসায় যাবা।
– না ঘুরবো!
– ঠিক আছে তুমি যা বলবে..
অতঃপর তারা দুজনেই মিলে সারাদিন ঘুরে ফিরে অবশেষে সন্ধ্যায় বাসায় ফিরার জন্য রওনা দেয়। দু একবার অবশ্য কথা হয়েছে অভ্র আর নির্ঝরের। মেহেরিন সারাদিন’ই ছোটাছুটি করতে থাকে আর নির্ঝর ওকে সামলাতে থাকে। একবার তো মেহেরিন ঝালমুড়ি একটু বেশি ঝাল দিয়ে খাওয়ায় ফলে তার মারাত্মক ঝাল লেগে যায়। অতঃপর একটা বাচ্চার আইসক্রিম নিয়ে খেয়ে তার ঝাল কমায়। বাচ্চার আইসক্রিম নিয়ে ফেলায় বাচ্চা জোরে জোরে কাঁদতে শুরু করে। অতঃপর নির্ঝর বাচ্চা টাকে ৩ টা আইসক্রিম কিনে দেয় অতঃপর বাচ্চা শান্ত হয়। কিন্তু তবুও মেহেরিন’র পাগলামি কমে না। সে আরো বেশি বেশি দুষ্টামি করতে থাকে।
গাড়ি এসে থামে খান বাড়িতে,
নির্ঝর তাকিয়ে দেখে মেহেরিন ঘুমে বিভোর। সে হেসে তাকে কোলে নিয়েই বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করে। বাড়ির সবাই তাদের এমন একসাথে দেখে অনেক অবাক হয় আবার খুশি ও হয়। অভ্র এসে নির্ঝর কে বলে মেহেরিন কে রুমে রেখে আসতে। নির্ঝর মেহেরিন কে রুমে নিয়ে এসে বিছানায় শুইয়ে দেয়। অতঃপর তার গায়ে চাদর টা টেনে দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখে অভ্র দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। অভ্র হেসে বলে..
– যাও ফ্রেশ হয়ে নাও। মেহেরিন মনে হচ্ছে খুব জ্বালিয়েছে তোমাকে আজ!
নির্ঝর হেসে বলে..
– না দা তেমন না।
অতঃপর নির্ঝর ফ্রেশ হবার পর সবাই মিলে খানিকক্ষণ বসে গল্প করতে থাকে।
.
নিশি’র শশুড়বাড়ি..
নিশি আর নিশান’র সবে বিয়ে হয়েছে তাই নিশি বেশি একটা খান বাড়িতে আসতে পারে না। তত’ই হোক এখন সে নতুন বউ তাই তাকে এভাবে হুটহাট করে বাড়ির বাইরে যাওয়া সবাই নিতে পারে না অবশ্য তার শশুর শাশুড়ি’র এতে সমস্যা নেই কিন্তু তবুও নিশি রিস্ক নিতে চায় না।
নিশি রান্না ঘরে কাজ করছিল তখন হঠাৎ করেই নিশান এসে তার কোমর জরিয়ে ধরে। হঠাৎ নিশানের ছোঁয়া পেয়ে কেঁপে উঠে নিশি। নিশান নিশি’র কানে ফুঁ দিয়ে বলে..
– জান পাখি!
– সমস্যা কি এমন করছেন কেন?
– তুমি আমাকে সময় দিচ্ছ না এটাই তো সমস্যা!
– ঢং
বলেই নিশানের পেটে গুঁতো মারে। নিশান আউচ বলে দূরে সরে যায়। নিশি হাতে খুন্তি টা নিয়ে নিশানের দিকে ঘুরে বলে..
– কাজ করছি ডিস্টার্ব করবেন ন বুঝলেন!
– তোমার দ্বারা রান্না বান্না হবে না বুঝলে তাই এসব খেটে লাভ নেই।
নিশি রেগে নিশানের দিকে এগিয়ে বলে..
– কি বললেন আপনি!
নিশান একহাত দিয়ে নিশি’র কোমড় জরিয়ে ধরল। অতঃপর তার হাত থেকে খুন্তি টা নিয়ে নিশি’র কপালের সাথে নিজের কপাল মিলিয়ে বলল..
– সত্যি’ই তো বললাম রান্না বান্না, ঘর সামলানো তোমার দ্বারা হবে না।
– তাহলে কি হবে শুনি!
নিশান হেসে নিশি’র নাকের সাথে নিজের নাক ঘষিয়ে বলল..
– তুমি শুধু আমাকে সামলাতে পারবে আর..
– আর..
নিশান নিশিকে ঘুরিয়ে ওর পিঠ নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়। অতঃপর নিশি’র কানে ফিসফিসিয়ে বলে..
– আমাদের বাচ্চাদের সামলাবে বুঝবে!
নিশি চোখ বড় বড় করে নিশানের দিকে ঘুরে তাকাল। নিশান তাকে একটা চোখ টিপ দিল।
– ছাড়ুন আমাকে, আপনার এই বাজে কথা শোনার টাইম নেই আমার কাছে!
– জান পাখি! আমাকেই তোমার টাইম দিতে হবে বুঝলে!
অতঃপর নিশান নিশি কে কোলে তুলে নেয়। নিশি বেশ কিছুক্ষণ ছটফট করতে থাকে। অতঃপর নিশান নিশি কে কোলে তুলে ঘরে নিয়ে যায়!
.
ক্যাট ডেসিন টেবিলে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াতে থাকে। হুট করেই কাব্য এসে তার কোমর জরিয়ে ধরে। ক্যাট খানিকটা কেটে উঠে। অতঃপর আয়ানার দিকে তাকিয়ে দেখে কাব্য তার ঘাড়ে কিসি দিচ্ছে। ক্যাট চোখ বন্ধ করে নেয়। কাব্য’র প্রত্যেকটা ছোঁয়া অনুভব করতে থাকে সে। অতঃপর কাব্য ক্যাট কে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেয়। অতঃপর তার ঠোঁটের দিকে আগাতে থাকে কিন্তু কাব্য তার ঠোঁটে কিস না করেই তার কোমর জরিয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকে। ক্যাট চোখ খুলে তাকিয়ে থাকে কাব্য’র দিকে। কাব্য খানিকটা দুষ্টুমি হাসি দিয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে…
– কি?
– কিস মি!
– কিহহ?
– হাম হাম সবসময় আমি কি কিস করবো নাকি আজ তোমার পালা দাও।
– পারবো না।
– কিহহ?
– যা শুনলে তাই পারবো না আমি। ছাড়ো আমায়।
কাব্য ক্যাট কে টেনে নিজের কাছে এনে বলে..
– কিস তো তোমাকেই করতে হবে জানু। নাহলে আজ আমি তোমাকে ছাড়ছি না।
ক্যাট মুখ অন্যদিকে দিকে ঘুরিয়ে নেয়। কাব্য তবুও তাকে ছাড়ে না। ক্যাট অসহায় ভাবে কাব্য’র দিকে তাকায়। কাব্য ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। ক্যাট বলে উঠে..
– আরে মেহেরিন!
কাব্য ক্যাট কে না ছেড়ে পিছনে তাকায়। ক্যাট সেই সুযোগে কাব্য’র গালে কিস করতে যাবে তখন হুট করে কাব্য তার দিকে ফিরে। অবশেষে কাব্য’র ঠোঁটে কিস টা লেগে যায়। ক্যাট ভেবাছেকা খেয়ে যায়। ক্যাট কাব্য কে ছাড়তে যাবে কিন্তু কাব্য উল্টো তাকে কিস করতে থাকে। ক্যাট কাব্য’র কলার জরিয়ে ধরে!
.
আরিশা আজ মারাত্মক রেখে আছে রোদ্দুর’র উপর। সে আজ ২০ মিনিট পর তাকে ভার্সিটি থেকে নিতে এসেছে। আর এই রাগে আরিশা আজ সারাদিন রোদ্দুর’র সাথে কথা বলে নি। রোদ্দুর অনেকবার চেষ্টা করেছে কিন্তু আরিশা বার বার তাকে ইগনোর করে যাচ্ছে।
রাতে সবাই ডিনার করার পর আরিশা তার রুমে আসে। রোদ্দুর রুমে এসে দরজা আটকে দেয়। আরিশা রোদ্দুর কে দেখে বই নিয়ে বসে পড়ে। রোদ্দুর আরিশা’র সামনে বসে তার দিকে তাকিয়ে থাকে। প্রায় এভাবে কিছুক্ষণ পার হবার পর আরিশা বলে উঠে..
– এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন আমার দিকে, হুম!
রোদ্দুর কথা বলে তার দিকে তাকিয়ে আছে। আরিশা বলে উঠে..
– আপনার সাথে আমার কোন কথা নেই।
রোদ্দুর এবার বলে..
– এই নিয়ে ১০৩ বার সরি বললাম। এখনও কথা বলবে না।
– না।
– আচ্ছা আমার কি দোষ বল, জ্যাম এ আটকে গেছিলাম তাই!
– ওহ আচ্ছা, জ্যাম এ আটকে গেছো না। তুমি কি ভাবো আমি কিছুই জানি না।
– আমি আবার কি করলাম!
– কি করো না বল হুম, নিশ্চিত কোন মেয়ের সাথে ছিলে তুমি।
– আরু তোমার কসম, আমি সত্যি জ্যাম এ আটকে ছিলাম।
– তাহলে ফোন কেন ধরোনি বল।
– আরে ওটা সাইলেন্ট এ ছিল।
– হ্যাঁ এখন তো এই কথাই বলবে, বলবে এটা ছিল বলবে এটা ছিল। কতো বাহানা তোমার। আর কি পারো তুমি হুম। বল আর..
বলার আগেই রোদ্দুর’র হুট করে আরিশা’র ঠোঁটে হালকা ভাবে কিস করে বলল..
– এটা!
– রোদ্দুর’র বাচ্চা তোমাকে তো!
– আরে বাচ্চা হতে এখনো অনেক সময় লাগবে.
– তোমাকে তো আমি..
বলার পর’ই তার পিছনে ছুটতে থাকে। দুজনেই এভাবে ছোটাছুটি করতে থাকে। অনেকক্ষন এভাবে ছোটাছুটি’র পর দুজনেই হাঁফিয়ে যায়। আরিশা হাঁপিয়ে গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে। রোদ্দুর’র এসে তার পেটের ওপর শুয়ে পরে। আরিশা বলে..
– এই সরো তুমি!
– সরবো কেন। আমার আরু,আমার বউ তার পেট, আমার মাথা তোমার কি?
– তুমি একটা গাধা!
– আর তুমি এই গাধার আরু!
একথা শোনার পর আরিশা হেসে উঠে। রোদ্দুর ও তার হাসি দেখে হাসতে থাকে।
.
নীলাশা রাইয়ান কে কোলে নিয়ে ঘুম পারাচ্ছে। তখন নীল এসে নীলাশার’র কপালে চুমু খেয়ে তার পাশে বসে পরে। নীলাশা নীলের দিকে ঘুরে পরে। অতঃপর নীলের বুকে তার মাথাটা হেলিয়ে দেয়। নীল হেসে তাকে জড়িয়ে ধরে বলে..
– রাইয়ান ঘুমিয়ে গেছে!
– অনেক কষ্টে ঘুম পাড়ালাম জানো!
– হায়রে এক বাচ্চা আরেক বাচ্চা কে ঘুম পারাচ্ছে।
– হাসছেন আপনি!
– হাসবো না তো কি করবো!
তাদের কথার আওয়াজে রাইয়ান আবারো জেগে গেল। সে জেগেই কাঁদতে লাগলো। নীলাশা অসহায় চোখে নীলের দিকে তাকাল। নীল হেসে রাইয়ান কে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে গেল। অতঃপর তাকে দোলাতে দোলাতে অনেক কষ্টে আবারো ঘুম পাড়ালো। অতঃপর তার দোলনায় তাকে শুইয়ে দিয়ে নীলাশা’র দিকে তাকাল। নীলাশা গুটিসুটি মেরে বিছানার এক কোনে ঘুমিয়ে আছে। নীল হেসে তার গায়ে চাদর টেনে দিল। অতঃপর তার কপালে আলতো করে একটা চুমু খেয়ে তাকে জরিয়ে ধরে ঘুমিয়ে পরল!
#চলবে….
#Game_2
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_৩৩
কয়েকদিন পর…
নির্ঝর কফি শপে বসে আছে। কোন কারন নেই এভাবেই সময় কাটানোর জন্য। হঠাৎ করে একটা মেয়ে এসে তার পাশে বসল। নির্ঝর মেয়েটার দিকে একবার তাকিয়ে অতঃপর কফি মগে চুমুক দিয়ে ফোনের স্কিনের দিকে তাকিয়ে রইল। মেয়েটা একটু একটু করে তার কাছে আসতে লাগল। নির্ঝরের এতে কোন ভাবান্তর নেই। সে তার মতোই বসে আছে। মেয়েটা এবার নির্ঝরের গা ঘেসে বসল। নির্ঝর এবারো কিছু বললো না। হুট করেই মেয়েটা নির্ঝরের বাহু তে হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরল। নির্ঝর ভ্রু কুঁচকে মেয়েটার দিকে তাকাল। মেয়েটা বাঁকা হাসি বলে..
– হেই হ্যান্ডসাম!
নির্ঝর কিছু না বলে মেয়েটার হাত সরিয়ে দিল। মেয়েটা আবারো তার হাত ধরতে গেলে নির্ঝর দাঁড়িয়ে গেল। অতঃপর বিল দিয়ে বেরিয়ে গেল কফি শপ থেকে। কফি শপ টা একটা শপিং মলে ছিল। নির্ঝর’র মুখে একটা কালো মাস্ক পড়ে নিল। সেলিব্রিটি হয়ে এভাবে একা একা ঘোরা ফেরা তার ঠিক না। নির্ঝর বের হয়ে একটা দোকানে গেল। এই মেয়েটা তার পিছু পিছু সেখানেও গেল। মেয়েটা হেঁটে এসে একটা শার্ট নিয়ে নির্ঝরের দিকে ধরে বলল…
– এটা পড়লে খুব হট লাগবে তোমাকে!
নির্ঝর মেয়েটার দিকে তাকাল। মেয়েটা হেঁটে হেঁটে নির্ঝরের অনেকটা কাছে আসল। নির্ঝর তবুও কিছু বলল। একসময় মেয়েটা আর নির্ঝরের মাঝে ২ ইঞ্চি’র তফাৎ হয়ে গেল। মেয়েটা নির্ঝরের আরো কাছে যাবার আগেই নির্ঝর মেয়েটার বাহু ধরে তাকে দূরে সরিয়ে দিল। অতঃপর পকেট থেকে টাকা বের করে মেয়েটার হাতে দিয়ে দিল। মেয়েটা অনেকটা অবাক হলো। অতঃপর নির্ঝর সেখান থেকে বেরিয়ে গেল।
নির্ঝর বের হবার পর’ই নিরব আসলো সেখানে। সে হেসে নিজের ক্যামেরায় বন্দী করা নির্ঝর আর মেয়েটার কয়েকটা ছবি তুলল। সব গুলো ছবিতে নির্ঝর আর মেয়েটা খুব ঘনিষ্ঠ ভাবে ছিল। এসব মেহেরিন দেখলে নির্ঝর আর তার সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাবে এটা ভেবেই নিরব বাঁকা হাসি দিল। এদিকে মেয়েটা রেগে বলে উঠে..
– এতো এটিটিউড ছেলেটার। আমাকে পাত্তাই দিল না বরং টাকা দিয়ে চলে গেল।
নিরব হেসে তার হাতে আরো টাকা দিয়ে বলল..
– তোমার কাজ কমপ্লিট এখন আসতে পারো আর হ্যাঁ নিজের মুখ বন্ধ রাখবে বুঝলে।
– তুমিও কি এখন টাকা দিয়ে আমাকে অপমান করছো।
– অপমান করার কি আছে। এটা তোমার পারিশ্রমিক। তুমি আমার কাজ করেছো তার জন্য এখন আসতে পারো!
বলেই নিরব চলে গেল। মেয়েটা কিছুক্ষণ টাকা গুলোর দিকে তাকিয়ে হেসে দিল।
নিরব একটা কফি শপে ঢুকে ক্যামের ছবি গুলো দেখতে লাগল। তখন হুট করেই তার হাত থেকে কেউ ক্যামেরা টা নিয়ে নিয়ে গেল। নিরব বিরক্ত হয়ে তাকিয়ে দেখে নির্ঝর তার পাশে বসা। সে একের পর এক ছবি দেখছে আর বাঁকা হাসছে। নিরব থতমত খেয়ে গেল। এখন কি হবে এটাই ভাবতে লাগলো। নির্ঝরের হাত থেকে ক্যামেরা টা নেওয়ার চেষ্টা ও করলো কিন্তু তখন নির্ঝরের গার্ড তাকে আটকে দিল। নিরব রেগে সেখানেই বসে রইল। নির্ঝর এবার খানিকটা হেলান দিয়ে বসে ছবি গুলো ডিলেট করে বলতে লাগল..
– ছবি গুলো খুব ভালো তুলেছো দেখছি। ভালো ফটোগ্রাফার হতে পারবে।
– আমার ক্যামেরা দাও।
– এই নাও!
নিরব ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে দেখে কোন ছবি নেই। নির্ঝর হেসে বলে..
– নিজেকে বেশি চালাক ভেবো না। মেহু পাখি শুধুই আমার। আমাকে আর তাকে আলাদা করার সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবে তোমার আর সেটা আমিই করবো মাইন্ড ইট!
অতঃপর নির্ঝর উঠে চলে গেল। নিরব রেগে ক্যামেরাটা জোরে আছাড় মারল। নির্ঝর তার প্ল্যান এতো সহজে ধরে ফেলবে এটা তার ধারনা বাইরে ছিল। কিন্তু এই বলে সে থেমে যাবে না আরো কিছু তো অবশ্যই করবে সে।
.
মেহেরিন শান্ত, অরনি আর বিড়াল বাচ্চা কে নিয়ে খেলছে। তাঁদের ঘরে এখন ৩ বউ রান্না বান্না করছে। নিহা কোটে গেছে আর আহিয়ান অফিসে। অভ্র আর নীলও অফিসে। নীলাশা রাইয়ান কে নিয়ে ঘুমাচ্ছে। মেহেরিন অনেকক্ষণ বসে বসে তাদের সাথে খেলল। অতঃপর একটু সোফায় হেলান দিয়ে বসল। ফোনটা তখন টুং টুং করে বেজে উঠলো। মেহেরিন ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে নির্ঝরের মেসেজ। এটা দেখেই মেহেরিন উঠে আনহা কে বলল..
– মিষ্টি ভাবী আমি বাইরে যাচ্ছি!
আনহা রান্না ঘর থেকে বাইরে এসে বলল..
– কোথায় যাচ্ছ?
মেহেরিন জুতার ফিতা বাঁধতে বাঁধতে বলল..
– নির্ঝর মেসেজ দিয়েছে বলেছে দেখা করতে!
– নিজেকে একবার আয়নায় তো দেখে যাও।
– কেন আমি দেখতে কি সুন্দর না।
– এটা কখন বললাম, কিন্তু আমি আজ পর্যন্ত এটা দেখলাম না কোন মেয়ে তার বফ এর সাথে দেখা করার আগে একবার আয়নায় নিজের মুখটাও দেখল না।
আনহা’র কথায় ক্যাট আর আরিশা’র হাসির শব্দ পাওয়া গেল। মেহেরিন ভ্রু কুঁচকে আনহা’র সামনে দাঁড়িয়ে বলল..
– দেখো আমাকে বলো ঠিক আছি কি না!
আনহা তাকে পা থেকে মাথা আবদি দেখে, একটা জিন্স আর হুডি পড়া। আর চুল গুলো কোন মতে ঝুটি করে ফেলেছে হয়তো অনেক তাড়াহুড়ো করে বেঁধেছে। আনহা বলে উঠে..
– একটু মেয়েলি পোশাক ও পড়তে পারো ননদিনী।
– আমি আগে কখনো পড়েছি যে আজ পড়বো।
– আগে কখনো তো এভাবেও কাউকে ভালোবাসো নি তাই না!
মেহেরিন তাকিয়ে দেখল পেছন থেকে ক্যাট আর আরিশা উঁকি দিয়ে তাকে দেখছে। মেহেরিন বলে উঠে..
– কিন্তু নির্ঝর তো আমাকে এই ভাবেই পছন্দ করে নাহ!
– থাক বোন তোমাকে বোঝানোর সাধ্য আমার নেই। কিন্তু চুল গুলো ঝুটি কেন করলে তোমার তো খোলা চুল’ই বেশি ভালো লাগে নাহ!
– এমনেই করলাম কিন্তু নির্ঝর পরে ঝুটি খুলে ফেলবে আমি জানি।
পেছন থেকে ক্যাট আর আরিশা বলে উঠে..
– ওহ আচ্ছা এই ব্যাপার!
– আচ্ছা টাঠা আমার দেরি হচ্ছে।
বলেই মেহেরিন দৌড়ে নিচে চলে এলো। আনহা হতাশা প্রকাশ করে ক্যাট আর আরিশার দিকে তাকাল। তারা দুজনেই ফিক করে হেসে দিল। মেহেরিন নিচে নেমে দেখল নির্ঝর গাড়ির ওপরে বসে ফোন টিপছে। নির্ঝর দুই হাত বাহু তে গুঁজে তার সামনে দাঁড়াল। নির্ঝর মেহেরিন’র উপস্থিত বুঝতে পেরে হেসে বলল..
– এসে গেছো মেহু পাখি!
– সকাল থেকে কোথায় ছিলেন?
– সকাল থেকে! ( গাড়ি থেকে নেমে ) আমার আরেক গফ”র সাথে ডেট করতে গিয়েছিলাম
– ওহ ভালো
বলেই মেহেরিন গাড়ির কাছে গেল। তখন নির্ঝর বলে উঠে..
– আজ গাড়িতে না বাইকে করে যাবো!
অতঃপর নির্ঝর বাইক নিয়ে মেহেরিন’র সামনে আসল। মেহেরিন হেলমেট পড়ে পেছনে বসতে যাবে নির্ঝর বলে উঠে..
– পেছনে না সামনে বসো!
– না সামনে আপনার গফ কে বসান।
নির্ঝর হেসে মেহেরিন’র হাত টেনে বলল..
– সামনে নির্ঝরের মেহু পাখি বসবে বুঝলে!
মেহেরিন মুখ ভেংচি দিয়ে সামনে এসে বসল। বাইক নির্ঝর’ই চালাবে কিন্তু মেহেরিন নির্ঝরের সামনে তার এমন ভাবে বসল যাতছ নির্ঝরের বুকে মাথা রাখা যায়। নির্ঝর’ই তাকে এভাবে বসতে বলল। মেহেরিন বসেও পরল তবে নির্ঝরের থেকে দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করল। নির্ঝর হেসে বাইক স্টার্ট দিল। অতঃপর বলতে লাগল…
– সামনে তোমাকে কেন বসতে বললাম জানো।
মেহেরিন তাকিয়ে রইল। নির্ঝর টেনে মেহেরিন কে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে বলল..
– যাতে আমার মেহু পাখি আমার বুকের মাঝে থাকো!
মেহেরিন মুখ ভেংচি দিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে রইল। নির্ঝর হেসে বলল..
– রাগ কি এখনো কমে নি!
মেহেরিন কিছুই বললো না। নির্ঝর বাইক নিয়ে একটা নদীর ধারে আসল। অতঃপর মেহেরিন কে নামতে বলল। মেহেরিন ও নেমে গেল। অতঃপর নির্ঝর হেলমেট খুলে মেহেরিন’র দিকে তাকাল। মেহেরিন ও নির্ঝরের দিকে তাকাল। নির্ঝর হেসে মেহেরিন’র চুলের ঝুটি টা খুলে ফেলল। বলল…
– তোমাকে খোলা চুলেই বেশ লাগে। চুল বেধো না কখনো!
অতঃপর তার চুল গুলো হাত দিয়ে এলোমেলো করে দিল। তার হাতে নিজের হাত মুষ্টিবদ্ধ করে। অতঃপর নদীর ধারে নরম ঘাসের উপর দুজনেই বসল। নির্ঝর টেনে মেহেরিন মাথা কে নিজের বুকের সাথে মিশাল। মেহেরিন চুপচাপ! নির্ঝর মেহেরিন’র মাথায় হাত দিয়ে বলল..
– আচ্ছা সরি!
মেহেরিন নির্ঝরের শার্টের বোতাম নিয়ে গুঁতাগুঁতি করতে লাগলো। নির্ঝর আবারো বলল..
– বললাম তো সরি! মেহু পাখি এখনো রাগ করে থাকবে। কথা বলো না।
– …
– আচ্ছা আর কখনো বলবো না এমন কথা।
-…
নির্ঝর মেহেরিন’র ঘাড়ে হাত রেগে তার মুখ নিজের দিকে ঘুরাল। অতঃপর নিজের কপালের সাথে তার কপাল ঠেকাল। দুজন ব্যতীত এখানে আর কেউ নেই। সূর্য ও অস্ত যাবে যাবে। পাখিরা দল বেঁধে তাদের নীড়ে ফিরে যাচ্ছে। অনেকক্ষন’ই দুজন এভাবে থাকল। অতঃপর নির্ঝর মেহেরিন’র কপালে একটা ডীপ কিস করে বলল..
– আমার অস্তিত্ব একমাত্র একমাত্র তুমি। শুধু তোমার বাস আমার এই মনে বুঝলে মেহু পাখি!
– ঢং!
– ঢং তোমার সাথে করতেই ভালো লাগে মেহু পাখি!
মেহেরিন নির্ঝরের চুল গুলো এলোমেলো করতে করতে বলল..
– একটা কথা বলি!
নির্ঝর মেহেরিন’র অবাধ্য চুল গুলো কানে গুঁজে দিয়ে বলল..
– বলো!
– আমাকে কি আপনার এরকম পোশাকে ভালো লাগে না।
– হঠাৎ এই কথা কেন?
– না সবাই বলে আমি নাকি মেয়েলি পোশাক পরি না।আমার না ভালো লাগে না।
– জ্বি না বলো তুমি ছোটাছুটি করতে পারো না তাই আর একটা কথা হলো আমি তোমার পোশাক দেখে প্রেমে পড়েনি তোমার প্রেমে পড়েছি তাই এটার কোন প্রভাব আমার উপর পরে না। তুমি শুধু আমার কিউটি মেহু পাখি বুঝলা!
মেহেরিন হেসে বলল..
– ওহ আচ্ছা তারপর…
– তারপর! ( হেসে ) তারপর আর কি? বিয়ের পর কষ্ট করে শুধু একদিন শাড়ি পরে আমাকে দেখিও তাহলেই হবে।
– না পারবো না আমি শাড়ি পড়তে পারি না।
– আচ্ছা আমি পড়িয়ে দেবো তাহলে হবে।
– কিন্তু আমি তো শাড়ি সামলাতে পারি না।
– থাক আমি সামলে নেবো তাহলে হবে!
মেহেরিন এবার নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে জোরে হেসে দেয়। নির্ঝর ওর গালে হাত রেখে বলে..
– তোমাকে নিজের করে রাখতে যা করতে হয় সব আমি করবো মেহু পাখি!
মেহেরিন নির্ঝরের ঘাড়ে মাথা রেখে বলে…
– দেখি আপনি কি কি করেন!
– দেখো!
অতঃপর দুজনেই সূর্য অস্ত যাওয়া অবদি সেখানে বসে থাকে। অতঃপর নির্ঝর আবারো মেহরিনকে নিয়ে বাইকে উঠে গেল ঝরে বুকে মাথা রাখল এবার আর হেলমেট পরলো না । কিছুদুর যাবার পর নির্ঝর বাইক থামিয়ে দিল। মেহেরিন বলে উঠে,
– কি হলো বাই থামালেন যে বাড়ি এসে পড়লাম নাকি?
– না
– তাহলে
– সামনে তাকাও
মেয়ের সামনে মেরে সামনে তাকানো অতঃপর অবাক হয়ে নির্ঝরকে বলল,
– মেলা
– হুম মেলা
– আমি যাবো সেখানে
– হুম মেহু পাখি চলো!
অথবা দুজনে মিলে মেলায় গেল যাবার আগে মেহরিনকে একটা মাস্ক দিল। দুজনই কালো রঙের মাস্ক পড়ে এলো মেহেরিন। অনেক মিলন মেলায় গিয়ে নাগরদোলা চড়তে যাওয়ার বায়না করল শুধু কি নাগরদোলা আরো অনেক কিছু এটা করবে না না হয় ওটা করবে নির্ঝর বেচারার বায়না রাখতে রাখতে হাপিয়ে গেল। অবশেষে মেহেরিন বলল..
– এই শেষ আমি শুধু একটা আইসক্রিম’র গোলা খাবো আর কিছু না।
– সত্যি তো!
– হ্যাঁ হ্যাঁ সত্যি সত্যি দুই সত্যি। কিনে দিন না।
নির্ঝর হেঁসে তাকে আইসক্রিম কিনে দিল। মেহেরিন এবার মাস্ক খুলে আইসক্রিম খেতে লাগল। এদিকে নির্ঝর মাস্ক খুলল পানি খাওয়ার জন্য। মেহেরিন আইসক্রিম খেতে খেতে এক পাশে এসে দাঁড়াল। একজন সেখানে রেশমি চুড়ি বিক্রি করছিল। মেহেরিন’র রেশমি চুড়ি গুলো দেখে বেশ লোভ হলো। সে নির্ঝর কে একথা বলার জন্য পেছনে ফিরে দেখে কয়েকটা মেয়ে নির্ঝরকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে। মেহেরিন আইসক্রিম খাওয়া বন্ধ করে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে নির্ঝরের দিকে। এদিকে নিজের মুখ থেকে মাক্স খোলার কারণে কিছু লোক চিনতে পেরেছে তারা সবাই নিজের সাথে ছবি তোলার জন্য ব্যস্ত হয়ে পরলো। এদিকে কোন গার্ড নিয়ে না আসায় নির্ঝর পরল বিপদে। এখানে সবচেয়ে বড় বিপদের কথা হলো তাকে ঘিরে ছবি তুলছে তাদের বেশ কয়েকজন’ই মেয়ে। তাকে এভাবে দেখলে মেহেরিন যে তার বারোটা বাজে সেটা তার অজানা নয়। মেহেরিন তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে নির্ঝর বেশ হেসে হেসে মেয়েগুলোর সাথে ছবি তুলছে আর মেয়েগুলো নির্ঝরকে ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে। মেহেরিন রেগে হাত থেকে আইসক্রিম ফেলে দিয়ে নির্ঝর এর কাছে যেতে লাগল। তখনই একটা মেয়ে নিজের কাঁধে হাত রাখতে যাবে, মেহেরিন তখন মেয়েটার হাত ধরে তাকে সরিয়ে দিল। সবাই এখন নির্ঝরকে ছেড়ে মেহেরিন’র দিকে তাকিয়ে রইল। মেহেরিন হুট করে এসে নির্ঝরের গলা জড়িয়ে ধরলো নির্ঝর চোখ বড় বড় করে মেহেরিন’র কান্ড দেখছে। মেহেরিন’র দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ দিল এখানে সে আরেকটা ধাক্কা খেলো। সবাই এখন তাদের কথা বলাবলি করছে মেহেরিন বলে ওঠে,
– কি করছেন এখানে এতো মেয়েদের মাঝে!
নির্ঝর থতমত খেয়ে গেল। এর মধ্যে একজন বলে ওঠে,
– মেহেরিন বর্ষা খান আর নির্ঝর চৌধুরী মেঘ একসাথে!
নির্ঝর হেসে বলে..
– এতো উত্তেজিত হবার কিছু নেই। She is my gf. My love and my would be wife. Ok guys.মনে হয় সবার এবার বুঝতে সহজ হলো।
নির্ঝরের কথা শুনে মেহেরিন হেসে তাকে ছেড়ে দিল। অতঃপর একজন বলে উঠে..
– তাহলে কি মেহেরিন বর্ষা খান আর নির্ঝর চৌধুরী মেঘ রিলেশন এ আছেন।
– হুম অবশ্যই! আচ্ছা আমাদের এখন যেতে হবে। আল্লাহ হাফেজ!
বলেই নিজের মেহেরিনের হাত ধরে নিয়ে গেল সবাই তাদের দিকে তাকিয়ে রইল। অতঃপর সোশ্যাল মিডিয়ায় খবর ছড়াতে লাগলো মেহেরিন বর্ষা খান আর নির্ঝর চৌধুরী মেঘ দুজনেই প্রেমে আবদ্ধ। খুব জলদি বিয়ে করছে তারা। খবরটা কারো ভালো লাগলো আবার কারো খারাপ লাগলো । তবে কথা খবরটা শুনে চোখের কোণে জল এসে ঠেকলেও ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটল। কারন একটাই তার ভালোবাসার মানুষটা নিজের ভালোবাসা পেয়েছে। এটাতেই অনেক খুশি সে।
তবে সেই লোকটা একথা শুনে খুশি না আবার তার খারাপ লাগেনি তার মনে শুধু এই চিন্তা,
– আচ্ছা এরপর কী হবে আমাদের প্রতিশোধ পূর্ণ হবে তো, নাকি নির্ঝর সব সময়ের মত এবারও আদুরী কে বাঁচানোর চেষ্টা করবো। যদি এমনই হয় তাহলে নির্ঝরকে বাঁচতে দেবে না। এত বছর পর যার জন্য প্রতিনিয়ত এতো কষ্ট পেয়েছি তাকে কোনভাবেই আমি বাঁচতে দেবো না। দরকার হলে মেহেরিন আর নির্ঝরকে আমি এক হতে দেবে না।
আরিশা রোদ্দুর কাব্য ক্যাট আরিয়ানে খবরটা প্রেমের পেছনে পড়ে গেল ইরান বলে ওঠে,
– বাহ বাহ এতো প্রেম এতো ভালোবাসা!
কাব্য বলে উঠে,
– নির্ঝর যে কতো মেয়ের মন ভাঙলো তা এই সোশাল মিডিয়াতেই দেখা যাচ্ছে।
রোদ্দুর বলে উঠে,
– মেহেরিন এর কথাটা কি না বললেই নয়। বেচারা ছেলেরা তো বিশ্বাস’ই করছে না এসব।
মেহেরিন ওদের কথায় কান দেয় না। নির্ঝর বলে উঠে,
– সবাই দেখি আমাদের প্রেমে নজর লাগিয়ে দিচ্ছে।
সবাই হেসে উঠলো।ক্যাট বলে..
– তোমাদের প্রেমে কাজলের ফোটা লাগিয়ে দেবো তাহলে হবে।
নির্ঝর কথাটা শুনে হেসে দেয়। এর মাঝেই নিশান আর নিশি খান বাড়িতে আসলো। তাদের দেখে সবাই খুশী। মেহেরিন বলে উঠে,
– আপি!
– আদুরী!
দুজন দুজনকে জরিয়ে ধরল। অতঃপর নিশান’র সাথে সবাই কুশল বিনিময় করল। মেহেরিন নিশান কে বলে উঠে…
– জিজু তুমি কিন্তু এবার আপি কিন্তু আপি কে রেখে যাবে।
– হাম ওকে রাখতেই এসেছি। ১ সপ্তাহ পর আমি লন্ডন চলে যাবো ডাক্তারি কোর্স কমপ্লিট করতে। নিশিকেও নিয়ে যাবো।
– নিয়ে যাবেন..
– হ্যাঁ গো শালিকা। আমার জান পাখি কে ছাড়া আমি থাকবো কিভাবে। তাই ১ সপ্তাহের জন্য ওকে রেখে গেলাম। বেশি বেশি ভালোবাসো বোনকে।
– কত দিনের জন্য যাবেন।
– ৪ বছর!
– কিহহহহ?
– হাম শালিকা!
– দা! আপি কে এতো দিন না দেখে আমি থাকবো কি করে।
নিশি মেহেরিন কে জরিয়ে ধরে বলে..
– আরে মন খারাপ করার কি আছে? ফোনে তো আমাদের কথা হতেই থাকবে। আর আমি তো আছি একসপ্তাহ।
– আপি!
বলেই নিশি কে জরিয়ে ধরল। অতঃপর টানা ১ সপ্তাহ তারা সবাই মিলে বেশ জমিয়ে আড্ডা দিল। অতঃপর নিশান নিশি কে নিয়ে চলে গেল!
#চলবে….